অফিসের ছুটি প্রায় আধ ঘন্টা আগে হয়ে গেছে। চুপচাপ একা একা নিজের ডেস্কে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে জান্নাত। যাদের নিজেদের গাড়ি আছে তারা অনেকে চলে গেছে। বাইরে ঝড় বৃষ্টি এখনও কমেনি।
সেই সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে। জান্নাতের একটু তাড়া ছিল বের হবার কিন্তু বের হবার জো নেই। বৃষ্টিতে কি করে বের হবে সেটাই বড় চিন্তা। ঘড়ি দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে, এর পরে বের হলে বাসায় পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। হটাৎ পেছন থেকে শুনতে পেল একটা ভারী গলা।
“কি ম্যাডাম এখনও বাড়ি যাননি?”
শশীকান্ত। ওদের অফিস পিওন। বাবা মা যেন খুঁজে খুঁজে নাম রেখেছিল লোকটার। যেমন কালো কুচকুচে তেমনি বিদঘুটে দেখতে। লোকটাকে দেখলেই কেমন যেন গা ছমছম করে উঠে।
জান্নাত অফিসের নতুন জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার। কত আর বয়স হবে, হয়তো ছাব্বিশ পেরিয়েছে। বরিশালের মেয়ে, দেখতে বেশ সুন্দরী বলা চলে, গায়ের রঙটাও বেশ ফর্সা। মেয়েটা অফিস জয়েন করার পর থেকে সিনিয়রদের কাজ যেন অনেকটাই কমে গেছে। যত ঝামেলা এখন জান্নাতের ঘাড়ে। জান্নাত পিছনে না তাকিয়েই হেসে জিজ্ঞেস করলো “তোমার খবর কি শশীকান্ত, তুমি এখনও অফিসে কেন?”
“কি করবো ম্যাডাম যা বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে কি আর বের হওয়া যায়? আপনার মতন আমিও বন্দী।
ম্যাডাম কি কফি খাবেন?’
-পেলে তো ভালোই হয়।’
হেসে উত্তর দিল জান্নাত, বেশ সুন্দর সাজানো দু’পাটি মুক্তার মতো সাদা দাঁত, আবার বাঁ দিকে একটা গজ দাঁত আছে যার জন্য হাসলে আরও চমৎকার লাগে।মুখটা গোল, পটল চেরা চোখ। বাঁকা ভুরু, মনে হয় প্রতিদিন প্লাক করে করে ধনুকের আকার নিয়েছে।
দুটো কফি কাপে কফি মেশিন থেকে কফি ঢেলে একটা জান্নাতে দিকে এগিয়ে দিলো শশীকান্ত। পিছনে না তাকিয়ে কফির কাপ নিয়ে, গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁট দিয়ে কাপে ছোটো চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করে “বাড়ি কখন যাবা শশীকান্ত?”
-এই তো ম্যাডাম আপনি বের হলেই আমি চলে যাবো।’
বৃষ্টি মনে হয় একটু কমে এসেছে। চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো জান্নাত। অফিসে দু’ চার জন থাকার কথা। হঠাৎ চমকে উঠলো জান্নাত কোথাও কেউ নেই! সব গুলো ডেক্স ফাঁকা। শশীকান্ত কোথায়?
কফি খাওয়ালো কে! ওকে ডাকতে যাবে তখনই চোখ পড়লো জিহ্বা বের করা রক্তাক্ত চোখে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছে শশীকান্ত। বিকট চিৎকার করে জ্ঞান
হারালো জান্নাত। চিৎকার শুনে বাসার সবাই জেগে উঠলো।