এইতো সেদিনের কথা।তবে দেখতে দেখতে এরি মাঝে চারটা বছর পার হয়ে গেল।সময়টা ছিল শীতকাল,দিনটা ছিল শনিবার।ভুতেদের কাছে শনিবারটা আবার শুভদিন।তাই এই শুভদিনে গেয়োভুত বেরিয়েছে একটা শুভকাজ করতে।শুভকাজ বলতে অতটা শুভ নয় যতটা আপনি ভাবছেন।ভুতেদের কাছে যেটা শুভকাজ সেটা মানুশদের কাছে মোটেও শুভ না।এই যেমন ধরেন মানুষদের ভয় দেখিয়ে ঘাড় মটকিয়ে মারা,আমাবস্যা রাতে একলা পথিককে ভুলভাল দেখিয়ে ডোবার মাঝে নিয়ে উলটো করে পুতে রাখা,কখনো আবার কাউকে নিয়ে কোন উচু গাছের মগডালে নিয়ে রেখে দেয়া আবার কখনো কোন জেলের সারারাতের অক্লান্ত পরিস্রম করে ধরে আনা মাছগুলি চুরি করে খেয়ে ফেলা……এসব হচ্ছে ভুতেদের শুভকাজ।
তবে গেয়োভুত আজ এমন কোন শুভকাজ করতে বেরোয়নি।সে বেরিয়েছে অন্য একটা শুভকাজ করতে যেটা কিনা ভুতেদের কাছেও ভয়ানক একটা বেপার।সে যাই হোক,গেয়োটা আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে গ্রাম থেকে শহরে এসে পৌছেছে।উদ্দেশ্য একটাই, তার আদরের পেত্নির সাথে দেখা করা।অনেক ভালবাসে সে পেত্নিটাকে।ভালবাসে বলাটা ঠিক হবেনা,কারন শহরে এসে পেত্নির নামে যেটা শুনেছে তার পর থেকে পেত্নির প্রতি তার ভালবাসাটা ঘৃনায় পরিনত হয়েছে।কতটাই ভালবাসত সে এই পেত্নিটাকে। পেত্নির সুচালো নাক ডিম্বাকৃতি চোখ কুলার মত মুখ আর পাটের আশের মত চুলগুলির দেখেই সে প্রেমে পরে গিয়েছিল।অনেক কষ্টে পেত্নির ভালবাসাটাও জয় করেছিল সে।পড়ালেখার নাম করে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিল পেত্নি।আর এখানে এসেই পালটে গেছে সে।এখানে এসে সে শহুরে এক নেতা ভুতের ছেলে গলাকাটা ভুতের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।পেত্নির ভার্সিটিতে এসে সবকিছু নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস হচ্ছিল না গেয়োটার।কিন্তু যখন দেখল তার সাধের পেত্নিটা তার চোখের সামনেই গলাকাটা ভুতের মাথাটা নইইজের হাতে নিয়ে জরিয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে তখন আর গেয়োভুত সেটা সহ্য করতে পারল না।তার মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগল,চারিদিকের সবকিছু ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।হ্যা ঠিকি ধরেছেন, একটু এদিক ওদিক হেলতে হেলতে মাটিতে পরে জ্ঞান হারাল সে।যখন সে জেগে উঠল ততক্ষনে সকাল হয়ে গিয়েছে।সুনসান নিরবতা চারিদিকে।কাউকে দেখা যাচ্ছে না,দেখা যাবেই বা কিভাবে…ভুতেদের স্কুল কলেজতো সব রাতের বেলায় খোলে।সুর্যের আলোতে ওদের একটু হলেও সমস্যা হয়।তাইতো দিনের বেলায় ওরা বটগাছ তেতুল গাছ আমগাছ জামগাছ গাবগাছে গিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকে।
মাথাটা এখনো ঝিমঝিম করছে গেয়োর।কোথায় আছে সে, উঠে বসল সে।তারপর সবকিছু মনে করার চেষ্টা করতে লাগল।একটু ভাবতেই সবকিছু মনে পড়ল তার।আর মনে পড়তেই রাগ চেপে গেল গেয়োর মাথায়।প্রতিশোধ,হ্যা প্রতিশোধ নিবে সে।বিশ্বাসঘাতক পেত্নিকে বাচতে দিবেনা সে,সাথে তার নতুন প্রেমিক গলাকাটা বেটাকেও খুন করবে।বেটা অন্যের ভালবাসার ভুত্নিকে নিয়ে ফুর্তি করবে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায়না।তাই দুইটাকেই মেরে প্রতিশোধ নেয়ার প্লান করল সে।আর এটাই এখন তার একমাত্র শুভকাজ।
কিন্তু এখন সে ওদেরকে কোথায় খুজে পাবে…!!! রাত নামার আগেতো ওরা আর এখানে ফিরে আসবে না।কিন্তু সন্ধ্যা হলেই যে শনিবার পেরিয়ে রবিবার চলে আসবে,তখনতো আর শুভকাজ করা যাবে না(ভুতেদের দিন শুরু হয় সন্ধ্যা থেকে আর পরদিন সন্ধায় আবার নতুন দিন শুরু হয়)।যা করার আজকের দিনের মদ্ধেই করতে হবে।তাই সে তার পেত্নিকে খুজতে বেড়িয়ে গেল।কিন্তু এত বড় শহরে খিছুতেই খুজে পাচ্ছিল না পেত্নিকে।হটাৎ কয়েকজন ছেলেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে দেখে তার মাথায় একটা প্লান এল।মানুষের রুপ ধারন করে সে ছেলেগুলির সিগারেট শেষ হবার অপেক্ষা করতে লাগল সে।ভুতেরা আবার আগুনকে সাংঘাতিক রকম ভয় পায়।সিগারেট শেষ হতেই সে ছেলেগুলির কাছে গেল এবং জিজ্ঞেস করল ভাই আমাকে একটু সাহায্য করতে পারবেন?আমি এই শহরে নতুন এসেছি,আমি একজনকে খুজে বেরাচ্ছি,আপনারা কি আমাকে তার ঠিকানাটা বঅঅলতে পারবেন?ছেলেদের মাঝে একজন বলে উঠল এই শহরের অলি গলির সবাইকেই আমরা চিনি।শুধু নামটা বলুন, আমরা আপনাকে তার বাসায় পৌছে দিয়ে আসব।
বলেনকি ভাই,আপনাকেইতো আমার দরকার ছিল।আচ্ছা আপনি কি বলতে পারেন পেত্নি কোথায় থাকে?(বোকা গেয়োটা রাগের মাথায় ভুলেই গেছে একটা মানুষ কখনো ভুতেদের খবর জানতে পারে না।তবুও হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে সে মানুষ্য ছেলেদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে)।
ছেলেগুলি হো হো করে হেসে উঠল।তারপরেও কষ্ট করে হাসি থামিয়ে ওদের থেকে একজন বলতে লাগল, আমি চিনি ওর বাসা।চলেন আমার সাথে।একথা বলে সে মানুষরুপি গেয়োটাকে নিয়ে একটা গলির চিপায় চলে গেল।পিছু পিছু বাকি ছেলেগুলিও আসল সেখানে।একসময় ছেলেগুলি গেয়োকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরল,তারপর ধারালো একটা ছুড়ি বের করে বলতে লাগল, এতক্ষনে নিশ্চই বুঝে গেছিস আমরা কারা।বাচতে চাইলে যা কিছু আছে দিয়ে দে।
দেখ তোমাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই।আমি বেড়িয়েছি একটা শুভকাজ করতে,ওই শুভকাজটা করার আগে আমি অন্য কোন শুভকাজ করতে চাইনা।আমাকে পেত্নির ঠিকানাটা বলে দাও আমি চলে যাব।
পেত্নিকে খুজে কি লাভ?তোর পেত্নিতো লিটনের ফ্লাটে গিয়ে মাস্তি করছে।তোরতো গলায় দড়ি দিয়ে মরা উচিত।তবে মরার আগে আমাদের একটু উপকারে লেগে যা।সজ্ঞে টাকা পয়সা যা কিছু আছে চুপচাপ বের করে দে নইলে কিন্তু…..
গেয়োটা ভাবল ওই গলাকাটা ভুতটার নামই তাহলে হয়তো লিটনের ফ্লাট হবে।ছেলেগুলি সত্যিই হয়তো তার পেত্নির ঠিকানা জানে।তাই সে বলতে লাগাল,দয়া করে আমায় লিটনের ঠিকানাটা দাও।লিটনকে আমার খুব প্রয়োজন।একটা শুভকাজ সারতে হবে ওর সাথে।
ছেলেগুলি এবার একটু রেগেই গেল।বেটা মস্করা করা হচ্ছে আমাদের সাথে?রাখ তোর মস্করা ছুটাচ্ছি আমরা…এই বলেই ছুড়ি নিয়ে একটা ছেলে ঝাপিয়ে পড়ল গেয়োর উপর।তারপর???
তারপরেরটা ইতিহাস।চিপাগলিতে পরে আছে চার চারটা নিথর দেহ।কেউ খুব নৃশংসভাবে খুন করেছে ওদের।প্রত্যেককে ঠিক একিভাবে হত্যা করা হয়েছে।সারা গায়ে কোন স্পট নেই শুধু ওদের মাথাটা উল্টোদিকে ঘুরানো।আর সবার চোখগুলিই বড়বড় হয়ে অনেকটা বেরিয়ে এসএএছে চোখের কোঠর ছেরে।নিশ্চই মরার আগে ভয়ানক কিছু দেখেছিল।যাক সে কথা, এইসব নিয়ে ভাবার সময় আমাদের নেই।যা ভাবার পুলিশ আর রাজনৈতিক দলদুটোই ভাবুক।পুলিশ টহলদারির নামে নিরিহ মানুষকে ধরে ধরে খুনের দায় দিয়ে নিজেদের পকেট ভারি করুক আর রাজনিতি আর মিডিয়া বলতে থাকুক ছাত্রলিগ বা ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে চার যুবকের মৃত্যু।চলুন আমরা গেয়োর কাছে ফিরে যাই।
সাংঘাতিক রকমের ক্ষেপে আছে গেয়ো।মন চাচ্ছে সআআমনে যাকে পাবে তাকেই মেরে ফেলতে।তবুও নিজের রাগটাকে একটু চেপে গেল সে,তার এখন বড় কাজ একটাই পেত্নি আর গলাকাটাকে খুজে বের করা।এসব ভাবতেই তার একটা কথা মনে পরল,ছেলেগুলির কাছ থেকে ঠিকানা নিতে না পারলেও গলাকাটা ভুতের নামটা জানতে পেরেছে সে। ‘লিটনের ফ্লাট’ বলেই কাচুমাচু করে একটা পিশাচিয় হাসি হাসল গেয়োটা।কি উদ্ভট নাম,ভুতেদের এমন নাম হতে পারে সেটা জানা ছিলনা গেয়োর।তবে নাম যখন জানতে পেরেছে তখন খুজে বের করতে দেরি হবেনা।তাই সে আবার কারো সাহায্য নিবে ভাবছে।তবে এবার সে আর কোন ঝামেলায় জরাতে চায়না।তাই সে একটু ভদ্র টাইপের কাউকে খুজতে লাগল এবং পেয়েও গেল।একটা ছেলে এদিকেই আসছে, সুন্দর ড্রেসয়াপের সাথে চোখে আবার চশমা লাগানো।আহা দেখলে মনে হয় এর থেকে ভাল ছেলে আর একটাও হতে পারেনা।গেয়োটা গিয়ে হাজির হল সেই ছেলেটার সামনে।এইযে ভাই শুনছেন একটা কথা জানার ছিল।আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন লিটনের ফ্লাট কোথায় থাকে?একবার গেয়োটার দিকে তাকিয়ে ছেলেটা আবার তার পথে হেটে চলে যেতে লাগল।
কি হল ভাই শুনছেন না আমি কি বলছি?
ছেলেটা এবার একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে তারপর নিচু গলায় বলতে লাগল, লিটনের ফ্লাট খুজছেন তো? আচ্ছা আমি বলব সেটা কোনদিকে তবে তার জন্য কিছু খরচা করতে হবে।
ইয়ে মানে খরচাটা আবার কি জিনিষ?গেয়োটা বলে উঠল
আরে ভাই বুঝেননা কেরে?দুই চারটা নোট পকেটে গউজে দিলেই দিয়ে দিব লিটনের ফ্লাটের ঠিকানা।
নোট?সেটা আবার কি?
ছেলেটা পকেট থেকে একটা ৫০০ টাকার নোট বের করে বলল, এই হচ্ছে নোট।এমন দুই চারটা দিলেই ঠিকানা পাবা।না হয় আমি চল্লুম, বলেই ছেলেটা হেটে চলে যেতে লাগল।
গেয়োর কাছে নোট নেই।কারন ভুতেদের টাকা পয়সার প্রয়োজন পরে না।সবকিছু চুরি করেই খায় ওরা।কিন্তু গেয়োর এখন টাকা দরকার।নয়তো লিটনের ফ্লাট বেটার ঠিকানাটা নেয়া যাবেনা।তাই সে চুপিসারে সেই ছেলেটার পকেট থেকেই টাকা চুরি করে নিল।তারপর ছেলেটাকে ডেকে বলল এই নাও টাকা।আমাকে লিটনের ফ্লাটের ঠিকানাটা দাও।
কচকচে নোটগুলি দেখে ছেলেটা ছুটে চলে এল মানুষরুপি গেয়োটার কাছে।কাছে আসতেই টাকাগুলি ছেলেটার দিকে এগিয়ে দিল গেয়োটা।টাকার দিকে হাত বাড়াতেই গেয়ো তার হাতটা পিছিয়ে নিল।আগে ঠিকানা বলেন তারপর টাকা।এতক্ষনে মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে গেয়োর।তাই সে ঠিকানা না নিয়ে টাকা দিবেনা।
ছেলেটা কি যেন ভাবল,তারপর জিজ্ঞেস করল.. আচ্ছা আপনি লিটনের ফ্লাটের ঠিকানা নিয়ে কি করবেন?লিটন আপনার কি হয়?(ছেলেটা ধরে নিয়েছে মানুষরুপি গেয়োটা তার ক্লাসমেট লিটনের কথা জিজ্ঞেস করছে)।
লিটনের ফ্লাট আমার ভালবাসাকে কেরে নিয়েছে।ওর সাথে আমার একটা শুভকাজ আছে।রাগান্বিত কন্ঠে কথাটা বলল গেয়ো।
গেয়োর কথা শুনে ছেলেটারও তার পুরোনো দিনের কথা মনে পরে গেল।লিটন কলেজের সবথেকে স্মার্ট ছেলে।আর কলেজের সব মেয়েই লিটনের উপর ক্রাশ খেয়ে আছার খেয়ে পরে।আর এই সুযোগটা কআআজে লাগিয়ে লিটনও মেয়েগুলির সাথে প্রতারনা করে যাচ্ছে।ভালবাসার ফাদে ফেলে অনেক কিছুই সে কেড়ে নিচ্ছে ওদের।এমনকি তার নিজের প্রেমিকাটাকেও ছারেনি লিটন।তাই লিটনের উপর ওর আগে থেকেই রাগ ছিল। কিন্তু লিটন খুব ক্ষমতাবান হওয়ায় কখনো কিছু বলার সাহস পায়নি সে।আজো আসার সময় দেখে এসেছে লিটন নতুন একটা মেয়ে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছে।নিশ্চই ওই মেয়েটাই এই লোকের গফ।আর সাতপাচ না ভেবে ছেলেটা গেয়োকে লিটনের বাসার সামনে নইইয়ে এল।তারপর বলতে লাগল লিটনকে যেন সে আচ্ছামত শিক্ষা দেয়।আরো বলে গেল লিটন তার পছন্দের মেয়েটাকেও ছারেনি,তাই তার নাম নিয়েও যাতে দুই চারটা উত্তম মাদ্ধম দেয় সেই রিকুয়েস্ট করতে লাগল ছেলেটা।
এই বিল্ডিংয়ের আঠার তলার ৫ নম্বর ফ্লাটে গেলেই লিটনকে পেয়ে যাবে।
কথাটা শুনে গেয়ো আর দেরি করল না।নোটগুলি ছেলেটার দিকে ছুড়ে ফেলেই ছুটতে লাগল সেই বিল্ডিংয়ের দিকে।
ছেলেটা টাকাগুলি তুলে নিয়ে ফিরে তাকাতেই দেখে লোকটাকে আর দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু এত তারাতারি এতটা পথ কি করে পাড় হতে পারে কেউ…!!! ভেবে পেলনা সে।সে যাই হোক আজ একঢিলে দুই পাখি মারতে পেরেছে ভেবে শিস বাজিয়ে হাটতে লাগল ছেলেটা।একেতো লোকটাকে ঠিকানা দিয়ে লিটনের উপর প্রতিশোধ নেয়াও হল আবার কিছু টাকাও পাওয়া গেল।একথা ভেবেই পকেটে হাত দিল ছেলেটা,আর হাত দিয়েই চমকে উঠল সে।পকেট তো একেবারে ফাকা।কিন্তু একটু আগেওতো কয়েকটা নোট ছিল তার পকেটে।নিজের হাতে থাকা থাকা নোটগুলির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল ছেলেটা।এই নোটগুলিইতো তার পকেটে ছিল।কিন্তু এটটা কি করে সম্ভব….!!! নোটগুলি কি করে ওই লোকটার কাছে গেল।
আরে ভাই সবি সম্ভব।এত না ভাইব্বা চলেন গেয়ো কি করতাছে তাই দেখি গিয়া।
বাড়িটার নিচতলায় দাঁড়িয়ে আছে গেয়োটা।ওর মুখটা হা হয়ে গেছে।ওর এমন অবস্তা দেখে মনে হচ্ছে ভুতেই যেন ভুতের দর্শন পেয়েছে।এটা আবার কোন ধরনের ম্যাজিক…!!!সারা জীবনে অনেক ম্যাজিক দেখেছে সে,কিন্তু এমনটা আগে দেখেনি সে।শহুরে মানুষ যে ভুতেদের থেকেও বেশী এগিয়ে গেছে সেটা জানা ছিলনা গেয়োর।কি হচ্ছে এসব….!!!! একটু পরপর ছোট একটা রুমের দরজা নিজে থেকেই খুলে যাচ্ছে, তারপর হুড়মুর করে কিছু মানুষ রুমটার ভেতর ঢুকে পরছে।রুমের দরজা নিজে থেকেই লেগে যাচ্ছে।একটু পরে আবার যখন দরজা খুলছে তখন সেই মানুষগুলিকে আর দেখা যাচ্ছে না,কোথায় যেন ভ্যানিস হয়ে গেছে তারা।তাদের পরিবর্তে অন্য চেহারার দুই চারজন বেরিয়ে আসছে।আবার কিছুলোক ভিতরে ঢুকছে তারপর দরজা বন্ধ হচ্ছে।আবার দরজা খুলতেই একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
কি..!!! ভাবছেন এটা আবার কোন ম্যাজিক??আরে ভাই লিফট দেখেন নাই কোনোদিন??প্রথমবার লিফট দেখেই গেয়োটা ভয় পেয়ে গেছে।তাই সে ওই দরজার ধারে কাছেও ঘেসলো না।সিড়ি বেয়েই আঠারো তলায় উঠে গেল সে।সেখানে গিয়েই পেয়ে গেল ৫ নম্বর রুমটা।বাতাসের সাথে মিসে গেল গেয়ো,তারপর ধুকে পরল ফ্লাটের ভেতর।এখানে রোমান্টিক মুভি চলছে ঠিকি কিন্তু সেই মুভির নাইকা অন্য কেউ,তার সেই পেত্নি নয়।তাছাড়া নায়ককেও চিনতে পারলনা সে।নিশ্চই ছেলেটা ভুল ঠিকানা দিয়েছে।একথা ভেবেই মন খারাপ করে বেরিয়ে পরতে যাচ্ছিল সে।কিন্তু মুভির নায়ক নাইকার কথাবার্তা শুনে সে বুঝতে পারল এরা স্বামি স্ত্রি নয়।নিশ্চই অন্য কারো ভালবাসার মানুসকে নিয়ে ওই বেটা এখানে মাস্তি করছে।রাগ চড়ে গেল গেয়োর মাথায়।একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল পুরো রুমটায়। তারপর সবকিছু নিস্তব্ধ।শুনশান নিরব চারিদিকে।
একটা মাঠের পাশের ঝোপের কাছে এসে বঅঅসে আছে গেয়োটা।শনিবারও শেষ হতে চলল,কিন্তু খুজে পেলনা সে তার পেত্নি আর লিটনের ফ্লাটকে।শুভকাজটা মনে হয় আর করা গেলনা আজ।একথা ভাবতে ভাবতে ঝিমুচ্ছিল গেয়োটা।বাতাসের মাঝে একটা চিরচেনা ঘ্রান ঘুরপাক খাচ্ছে।খুব তীব্র ভাবে ঘ্রানটা গেয়োর নাকে আছরে পরল।ঝিমুনি কেটে গেল তার।পেয়ে গেছে সে তার টার্গেট।সে ৫০০ ভাগ নিশ্চিত এটা তার পেত্নির চুলের ঘ্রানই। ঘ্রান শুকে শুকে এগিয়ে গেল সে…খুজে পেতে বেশী একটা সময় লাগল না।বটগাছের মগডালে লিটনের ফ্লাটের কোলে শুয়ে হাওয়া খাচ্ছে পেত্নি।রাগ আর সামলাতে পারলনা গেয়ো। সাত পাচ না ভেবেই হামলা করে বসল সে।আচমকা হামলায় কিছু বুঝে উঠার আগেই গলাকাটা ভুতের সবকিছু তছনছ করে দিল গেয়ো।তারপর পেত্নির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল কি অপরাধ ছিল আমার।কেন তুমি আমায় এভাবে ঠকালে?শুধু এইটুকু বলেই সে পেত্নিকে খুন করল।প্রস্নের উত্তর দেয়ার সময়টাও দিলনা পেত্নিকে।কারন গেয়ো ভাল করেই জানে এই প্রশ্নের উত্তর পেত্নির জানা নেই।ছেরেই যদি যাবি তবে ভলবেসেছিলি কেনো?ভালবাসার মুল্য যে দিতে পারেনা তার পৃথিবী থেকে যত তারাতারি সম্ভব চলে যাওয়া দরকার।
প্রতিশোধ নেয়া শেষ। তবুও গেয়োর মাথায় একটা দুশ্চিন্তা থেকেই গেল।মানুষ্মরলে যেমন ভুত হয় ঠিক তেমনি ভুতরা মরলেও আবার মানুষ হয়ে জন্মায়।তাই গেয়োর একটাই দুশ্চিন্তা এই পেত্নি আবার মানুষ হয়ে জন্মগ্রহন করে আবার কারো মন নিয়ে খেলা করবে।না এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবেনা।ওইরকম চেহারার যাকেই পাবে তাকেই খুন করবে গেয়োভুত।মনে মনে এমনি প্রতিজ্ঞা করল সে।
…….ওই ঘটনার আজ চার বছর হয়ে গেছে।আজো এই শহরের বুকেই ঘুরে বেরাচ্ছে সেই গেয়োভুত।কখনো কোন মানুষের রুপে আবার কখনো বাতাসের সাথে মিশে থাকছে সে।আজো চিপা গলিতে মাঝে মাঝেই কিছু অদ্ভুত ভাবে খুন হচ্ছে।আবার লিটনের ফ্লাটেও পাওয়া যাচ্ছে প্রেমিক যুগলের মৃতদেহ।এতদিন শহরে থেকে গেয়োভুত জানতে পেরেছে লিটনের ফ্লাট বলতে মানুষ কি বুঝায়।আজ হাজারো লিটনের ফ্লাটের সন্ধান আছে তার কাছে।সে সবসময় ওথ পেতে থাকে কখন আবার ফিল্মের শুটিং শুরু হবে আর কখন সে শুভকাজ করতে পারবে…!!!!গেয়োভুতের কাছে ওদের শাস্তি একটাই,আর তা হল মৃত্যু।
আজো গেয়োভুত মানুষের রুপ ধরে চিপাগলিতে ঘুরে বেরায়।আর কেউ চাকু ঠেকালেই হল।ব্যাস কবি সেখানে নীরব হয়ে যায়।
এমনি বেশ চলে যাচ্ছে গেয়োর দিনগুলি।প্রতিদিনই কোন না কোন নতুন শিকার পেয়ে যাচ্ছে সে।কিন্তু পাওয়া গেলনা একজনকে,তার পেত্নি।আজো মানুষ হয়ে ফিরে এলনা সে।আচ্ছা ভুতেরা মরলে মানুষ হয়ে আবার জন্মায়তো…..!!!!!
এই প্রশ্নের উত্তর কারো যানা নেই।
……..প্রেমিক ভাইদের বলছি,লিটনের ফ্লাটে যাচ্ছেন নাতো? সাবধান…!!!হয়তো সেখানেই কোথাও ঘাপটি মেরে বসে আছে গেয়োটা।
চিপায় চাপায় কাউকে চাকু ঠেকিয়ে সবকিছু কেরে নেয়ার আগে একবার ভেবে নিবেন যাকে আটকিয়েছেন সে আদৌ মানুষ তো…!!!
নাকি অন্য কিছু….!!!!!