শেষ টিউশনিটা তাড়াতাড়ি শেষ করে ইমন একবার আকাশের দিকে তাকাল। আজকে ভালোই ঢালবে মনে হয়। এখন আগেভাগে বাড়ি পৌঁছোতে পারলে রক্ষে। ছাতাটা বাগিয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল টিউশনি বাড়ি থেকে। বড়রাস্তায় উঠেই বুঝতে পারল একটা বড়সড় ঝড় আসতে চলেছে। ইমন আরো দ্রুত পা চালাতে লাগল। এখন রাত আটটা। ঝড়ের জন্যই হয়ত, অন্যদিনের মত আজকে রাস্তায় তেমন লোকজন নেই। শীতের রাতের মত নিস্তব্ধ, শুনশান। শুধু ফুটপাথের লাইন ধরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো ভেপার লাইটগুলি কেমন যেন হলুদ কুশায়ার জন্ম দিয়েছে। তার মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে অন্ধকার ঢুকে এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। ইমন অঙ্কের টিচার । কাব্যি করার শখ বা পারদর্শীতা কোনোটাই তার নেই। আর এই অসময়ে তার একটাই চিন্তা – ঝড়বৃষ্টির আগে বাড়ি ফিরতে হবে। পথ তো কম নয়।
উলটোদিক থেকে এর মধ্যেই ঝোড়ো হাওয়া ধেয়ে আসা শুরু হয়ে গেছে প্রচণ্ড গতিতে। ইমন এই ভয়টাই পাচ্ছিল। কোথা থেকে যেন প্লাস্টিক ব্যাগ, শুকনো পাতা নিয়ে এসে তার দিকেই ছুঁড়ে ফেলছে পৃথিবী। ইমনের চোখেও কিভাবে যেন একটা বালির টুকরো ঢুকে গেল। চশমা খুলে চোখ মুছে ইমন আবার হনহন করে হাটা শুরু করল।
একটু হাঁটার পরে ইমন বুঝতে পারল যে সে আর কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছে না। চারিদিকে ধুলো আর ঝোড়ো হাওয়া এলোমেলো ভাবে ছুটে চলেছে। নিজের থেকে একফুট দূরত্বটাও তার কাছে অজানা এখন। ইমনের মনে হল সে যেন একটা সাইক্লোনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে যেখান থেকে বেরোনোর পথ তার আর জানা নেই। অগত্যা নিজের দুহাত দিয়ে যতটা পারে ধুলো আটকাবার চেষ্টা করে আন্দাজে পা ফেলে ফেলে এগোতে লাগলো।
কতক্ষণ ধরে যে সেই ঝড়ে হেঁটেছে , তা সেই নিজেই জানে না। যখন চোখ মেলে তখন অদ্ভুতভাবে ঝড় একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। একেবারে শান্ত, স্তব্ধ পরিবেশ তার চারিদিকে। বরং মনে হল শূন্যতাটা যেন বড্ড বেশিই এখানে – কোনোভাবেই মনে হচ্ছে না যে একটু আগেই প্রবল ঝড় হচ্ছিলো। ইমন বেশ অবাকই হলো। এবং সেই বিস্ময়ের মাঝেই আরেকটা জিনিস যেটা সে লক্ষ করলো সেটা হল – পথ হারিয়েছে। একটি চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে একলা। রাস্তার চারদিকে চারটে ভেপার লাইট মোড়ের মাথাটাকে অস্বাভাবিক একটা হলুদ আলোর উজ্জ্বল্যে ভরিয়ে তুলেছে। এত তীব্র সেই আলো যে ঠিক নিজেকে একমুহুর্তের জন্য তার অন্ধ মনে হল। চোখ প্রায় বুজে আসছিল তার, এমন সময় সে কোনোমতে তাকিয়ে দেখল দূর থেকে একজন আগন্তুক তার দিকেই ছুটে আসছে। লোকটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। মাথায় কাউবয় টুপি, গা ঢাকা রয়েছে লম্বা ওভারকোটে। লোকটা দূর থেকে হাত বাড়িয়ে ইমনকে দাঁড়ানোর ইশারা করতে করতে তার দিকেই ছুটে আসতে লাগল। ইমন দাঁড়িয়ে রইলো।
লোকটা এখন অনেকটাই কাছে এসে পড়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার! লোকটা নিজের গতি কিন্তু একটুও কমায়নি। সে কি ইমন দেখতে পাচ্ছে না? নাকি তার কোনো অন্য মতলব আছে। ইমন নিজের ছাতাটা শক্ত করে চেপে ধরলো। লোকটা কাছে এসে থামল না।উলটে, ইমনের কাছে এসেই সে তাকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নাক ঘেঁষে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। ইমন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পড়ে গেলো রাস্তায়। তার চশমাটা ছিটকে গেল ফুটপাথের এক কোণে। সে রে রে করে চেঁচিয়ে উঠল লোকটার উদ্দেশে। কিন্তু কোথায় লোক? সে তো প্রাণপনে দৌড়তে দৌড়তে চলে গেছে অনেকদূর এবং শেষমেশ অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে। ইমনের কোমরে চোট লেগেছে। সে হাত বাড়িয়ে নিজের চশমাটা তুলে নিয়ে চোখে পড়ে নিল। না ভাঙ্গেনি। নিজের প্যান্টের পকেটটাও একবার হাতড়ে দেখে নিলো। নাহ, মানিব্যাগও ঠিকই আছে। তাহলে লোকটা তাকে ধাক্কা মারলো কেন? তবে কি কেউ তাকে তাড়া করছিল? ইমন পিছনের রাস্তাটায় উকি মারল। কই, সেটাও তো একেবারে নির্জন, অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে বাকি রাস্তাগুলির মতই। ইমন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো মোড়ের মাথায়। চারদিকের আলোয় এখন তাকে ঘিরে চারটি ছায়া তৈরী হয়েছে।
ইমন আবার ধীরে ধীরে হাটতে লাগল। কিছুক্ষণ হাঁটার পরে রাস্তা চিনতে পারল। এইদিকটায় অনেকদিন আসেনি বলে প্রথমে চিনতে পারেনি। কবরস্থানের পিছনের রাস্তার মোড়ে গিয়ে সে উঠেছিল। এখান থেকে বড়রাস্তা আরো মিনিট দশেক। এক অদ্ভুত খচখচানি নিয়ে ইমন সেদিকেই এগিয়ে গেলো।
দরজার গ্রীলটার তালা ক্যাঁচ খুলে গেল। ইমন ঘরে ঢুকল। একদম ঘরে ঢোকার মুখেই এমন বৃষ্টি নামল যে প্রায় অনেকটাই ভিজে গিয়েছে নিমেষে। ছাতাটা বাক্সে রেখে ঘরের লাইটটা জ্বালতেই ওর ভিতরটা কেমন যেন কেঁপে উঠল ।।
জ্বর আসছে নাকি? হতেও পারে, অসময়ে ভিজলে জ্বরের আর দোষ কি? ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াতেই তার মনে হল পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে তার। খুব কাছে ঘাড়ের কাছে একটা নিশ্বাসের মত বাতাস খেলে গেল যেন। বরফের মত ভীষণ ঠান্ডা, যেন সূচের মত গিয়ে বিঁধল পাজরে। ইমন ঝট করে পিছনে তাকাল কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই কাউকে দেখতে পেলেন না। সেখানে এক অদ্ভুত শূন্যতা হাঁ করে রয়েছে আর কাঠের জানলাটা বার বার বাড়ি খাচ্ছে ঝড়ে। ইমন একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েই গেলো বটে। আজ তার কী হয়েছে কে জানে! চোখ বলছে এক আর মন বলছে আর এক! জানলাটা বন্ধ করে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে টেনে নিয়ে এগিয়ে গেলো ঘরের দিকে। কিন্তু রকেট কোথায়? অন্যদিন তো দরজার শব্দ পেলেই রকেট মিউ মিউ করতে করতে পায়ের কাছে এসে গা ঘষে। আজকে কোথায় গেল ইমনের একমাত্র সঙ্গী? তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বসার ঘরে আসতেই আবিস্কার করলো রকেটকে। বাবু সোফার ওপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। সোফায় বসতেই সে এক গভীর বিরক্তি নিয়ে উঠে গেল গা ঝাড়া দিয়ে।
_“ কি রে রকেট? আজকে যে কাছেই আসছিস না একদম। কি হয়েছে?”
রকেট দূর থেকেই জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো তার মনিবের দিকে। একবার ম্যাও শব্দ করে আবার মেঝেতেই শুয়ে পড়ল মনমরা হয়ে।
ইমন নিজে ওর কাছে গিয়ে তার কালো ঘন লোমে হাত বুলিয়ে বলে, “ শরীর খারাপ নাকি? খিদে পেয়েছে? দাঁড়া এক্ষুনি তোর জন্য দুধ নিয়ে আসছি।”
রকেট মেঝেতেই বসে ঝিমোতে লাগলো। ইমন রান্নাঘরে ঢুকল দুধ গরম করতে।স্যাতস্যাতে পুরোনো দিনের রান্নাঘরে আলোটা খুব কম।দুধের মধ্যে চামচ নাড়তে নাড়তে সে ভাবলো আজকে এই আবহাওয়াটাই কেমন যেন ডিপ্রেসিং। কোমরে হাল্কা ব্যাথাও করছে তার। দুধ গরম হতেই একটা প্লেটে ঢেলে নিয়ে এলো রকেটের কাছে।
তারপর টিভিটা চালিয়ে নিউজ দেখতে বসে গেলো।খুব অদ্ভুত গুমোট লাগছে এই ঘরের ভিতরে আজ। বেশ একটানা টিভি দেখতে দেখতে তার মাথা ঝিম ধরে গেল। টিভিটা অফ করে সে উঠতে যাবে এমন সময় তার খেয়াল হল টিভির কাঁচের ওপর থেকে কিছুর একটা প্রতিবম্ব দ্রুত সরে গেল। যেন ইমনের সঙ্গে আরেকটা কিছু সোফা ছেড়ে উঠল। চোখদুটো কি একেবারেই অকেজো হয়ে গেল? ইমনের হয়ত একটু ঘুমের দরকার। কেন যেন আজ নিজের ঘরটাই কেমন অন্যরকম লাগছে তার কাছে। নিজের মাথাব্যাথাকে দোষ দিয়ে সে খেতে বসলো।এমনিতে একা মানুষ – দুটো রুটি আর একটা ওমলেটেই চালিয়ে নেয় বেশির ভাগ দিন। মাঝে মাঝে মনুদের দোকান থেকে তরকা টরকা নিয়ে ঢোকে। আজও মেনুতে অন্যথা হয়নি। কিন্তু সে ভীষণ আনমনা হয়ে রয়েছে। এমনিতে, খাবার সময় তার দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে তার খুব অস্বস্তি হয়। আজকেও সেরকমই একটা অস্বস্তি হচ্ছে।সে আন্দাজ করলো, রকেট নিশ্চই নিজের দুধটুকু চেটে তার পিছনে বসে তার দিকে চেয়ে আছে। ইমন ঘাড় ঘোরালো। একটা লম্বা কিছু যেন সাঁ করে সরে গেল তার পিছন থেকে। রকেট তো নেই এখানে! ধুর, কিসব ভাবছে সে শুধু শুধু! ডিনারটা মোটামুটিভাবে সেরে ইমন শুতে গেলো। এমন সময় টিভির পাশে রাখা মেহগনি টেবিল থেকে তার প্রিয় চীনামাটির ফুলদানীটা পড়ে গিয়ে ঝনাঝন শব্দে ভেঙ্গে গেল।এই নির্জন বাড়ির ফাঁকা ঘরে, আওয়াজটা যেন ব্জ্রপাতের মত শোনালো। ইমন নিজেও চমকে উঠল। আশ্চর্য! ফুলদানীটা হঠাত এভাবে পড়ে গেল কেন? হাওয়া নেই, বাতাস নেই, রকেটও তো আশেপাশে নেই। তার অসাবধানতায়ও তো এই কাজ হয়নি! সে কোথায় আর টেবিল কোথায়! মুখোমুখি দাঁড়ালে পনেরো হাত দূরে। তাহলে? ইঁদুর হল নাকি ঘরে? কিন্তু সেটাও তো প্রায় অসম্ভব। রকেটের মত চোস্ত শিকারী থাকতে ইঁদুর আসবে কোত্থেকে? ইমন ভাঙ্গা টুকরো গুলি জরো করতে লাগলো। নীচু হয়ে টেবিলের তলা থেকে কাঁচের টুকরোগুলি বের করতে গিয়ে হঠাত তার চোখ পড়ল রকেটের দিকে। সে কেমন মুখ খিঁচিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে একটু দূরেই, গায়ের সমস্ত লোমই খাড়া হয়ে গিয়েছে একদম।
ইমন হেসে ফেললো। ভয় পেয়েছে রকেট বাবাজী।
-“কিছু হয়নি রে রকেট, এই ফুলদানীটা পড়ে গিয়েছিল শুধু। কিরে , সত্যি করে বল তুই ভাঙিসনি তো!”
রকেটের জ্বলজ্বলে দুটো চোখ তখনও পিছনের দেয়ালের ওপরেই আটকে গেছে। সে মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করছে তখন থেকে। ইমনের কোনো কথাই যেন তার লম্বা কানদুটোয় ঢুকছে না। রকেটের এরকম অস্বাভাবিক ব্যবহার এই প্রথম দেখলো জীবনে।বেচারা অবোলা জীব , চাইলেও মুখ ফুটে কিছু বোঝাতে পারে না। ইমন দেখলো পিছনের দেয়ালে তো কিছুই নেই।শুধু ফাঁকা দেয়ালের ওপরে ইমনের নিজের ছায়াটা পড়েছে আর ওপরের দিকে একটা টিকটিকি হেঁটে বেড়াচ্ছে। এই দেখেই রকেটের এত্ত ভয়! উফ! বেড়ালটাকে আর মানুষ করা গেল না। ইমন কাঁচগুলি ফেলে দিয়ে শুতে গেলো।
এমনিতেই তার খুব টায়ার্ড লাগছে আজ। আর বিছানাটাও যেন তাকে টানছিল। এত আরাম নিজের বিছানাতে সে আগে পেয়েছে কি না মনে করতে পারলো না। অল্প সময়ের মধ্যেই সে ঘুমিয়ে কাদা একেবারে।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুতেই ইমনের বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। এত অলস মানুষ তো সে নয়। কিন্তু তার সারা শরীরটা কেমন যেন অবশ লাগছে। কেউ যেন তাকে বিছানায় টেনে ধরে রেখেছে। অবশেষে নিজের সঙ্গে খানিক যুদ্ধ করেই উঠে পড়লো। রকেট সোফায় তখনও কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। ইমন দরজা খুলে দুধ আর খবরের কাগজটা আনতে গিয়ে বেশ অবাক হলো। কাল রাতের দুধটা সেরকমই পড়ে আছে রকেটের প্লেটে। রকেট কাল কিছু খায়নি তার মানে। ওর কি তাহলে শরীর টরীর খারাপ হল?
ইমন সকালের মত জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লো রোজকার মত টিউশনি বাড়িতে। রাস্তায় চড়া রোদ। কালকের কোমরে ব্যাথাটা আজকে একটু কম । ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাত বলা নেই কওয়া নেই , সে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়লো রাস্তার ওপরে। আর তক্ষুনি একটা ট্যাক্সি সাঁ করে বেড়িয়ে গেল তার সামনে থেকে। মাত্র এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলেই সে আজ চাকার নীচে চলে যেতো।
ইমন সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে চিৎকার করে , “ কে ধাক্কা মারল আমাকে?”
কিন্তু কেউ তো নেই ফুটপাথে। দূরে একটা পানওয়ালা দোকান থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ইমনের মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা দিয়েছে। উফ, কি সাঙ্ঘাতিক! সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলো।নিজের বুকের ঢিবঢিবানিটাই যেন ঢাকের শব্দের মত স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। নাহ, আজ আর টিউশনি বাড়ি গিয়ে লাভ নেই। মাথাটাথা কাজ করছে না তার।
বাড়ি ফিরে অনেকক্ষণ গোজ হয়ে বসে রইলো।তাকে দেখেই রকেট আবার লোম খাড়া করে দাঁড়িয়ে আছে দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে।কি হয়েছে ওর কে জানে! ও কি কিছু বলতে চাইছে তাকে? শুধু জ্বলজ্বলে চোখে স্পষ্ট একটা ভয় লেগে থাকে আর ঘরঘর শব্দ করে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে। ইমনের মনে কেমন যেন একটা কুডাক ডাকতে লাগল।
দুদিন হল ইমনের বাড়িতে আর মন টিকছে না।অথচ রাস্তায় বেরোতেও ভয় পাচ্ছে আজকাল। এর অবশ্য অনেক কারণও রয়েছে। তবে সেই কারণ কতটা যুক্তি সঙ্গত সে বিষয়ে নিজেরই সন্দেহ রয়েছে, তবে এ ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চিত যে সেই ঝড় বৃষ্টির রাত থেকে কিছু যেন গোলমেলে ঘটনা ঘটে চলেছে তার সঙ্গে। সে ভালো করেই জানে সে খুব সাবধানী মানুষ। এত দুর্ঘটনা প্রবণ তো সে ছিলো না আগে!আজকাল রাস্তায় বেরোলেই তার মাঝে মাঝে তার পা আর সরছে না মাটি থেকে। আবার কখনো কখনো পিঠে ধাক্কা অনুভব করছে। এছাড়া আজ কদিন ধরেই বাড়ির জিনিস পত্র নিজের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছে, কোনোকিছুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেগুলি মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। তার ওপরে রকেট ভীষণ এক অস্বাভাবিক ব্যাবহার শুরু করেছে। অন্যদিন সে ঘুমিয়ে থাকে মনমরা হয়ে, আজকে যেন সে ভীষণ হিংস্র হয়ে উঠেছে। নিজের পায়ের কাছে ঘুরে ঘুরে দেখছে আর মাটিতে আঁচড় কেটে চলেছে সমানে।
ইমনের মনে হচ্ছিল, এসব কি সত্যিই হচ্ছে নাকি সে পাগল হয়ে যাচ্ছে? আজকাল কোথাও বসলে বা শুলে তার মনে হয় যেন আর নড়তে চড়তেই পারছেন না। কেউ যেন তাকে সোফার মধ্যে টেনে ধরে রাখছে পিছন থেকে। এসবের কোনো ব্যাখা খুঁজে পাচ্ছে না ইমন। হঠাত করে এরকম অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে তার সঙ্গে?
ডাক্তারের কাছে একবার যেতেই হবে তাকে। হয়ত দীর্ঘদিন একা থাকতে থাকতে কোনো কঠিন মানসিক বিকার দেখা দিয়েছে তার মধ্যে। ডিনার টেবিলে বসে খেতে খেতে এইসব কথাই সে ভাবছিল। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরে তার নিজেকে আর একা মনে হচ্ছে না।জিবনে এই প্রথমবার তার মনে হচ্ছে এই ঘরে আরো অনেকে থাকে তার সঙ্গে। সবসময় কেউ একজন যেন তার সঙ্গেই রয়েছে – এমনই এক অনুভূতি ক্রমশ জাঁকিয়ে বসেছে তার মনে। কেউ যেন তাকে ও রকেটকে সবসময় চোখে চোখেই রেখেছে। এই যে সে এখন খেতে বসেছে, তার শুধু মনেই হচ্ছে না বরং সে আলবাত জানে এখন সে একা নয়। এই ঘরেই কোনো এক তৃতীয় ব্যক্তির উপ্সথিতি অনুভব করছে এই মুহুর্তে। সে খুব কাছেরই কেউ হয়ত। এত কাছের আর কেউ হতে পারে না পৃথিবীতে। সে জানে সে তাকে দেখছে, খুব কাছ থেকেই।মাঝে মাঝে তার নিশ্বাস এসে পড়ে তার কাঁধে, পিছন ফিরতেই কাউকে দেখতে পায় না। আবার কখনও কখনো সে যখন চেয়ারে বসে বই পড়ে তখন তার পিছনে একটা আলো ছায়ার খেলা চলে বলে মনে হয়, কিন্তু ইমন কোনওদিনই নিজে দেখতে পায়নি। তবু তার মনে হয় এসব। এবং রকেটও বুঝতে পারছে সেটা। তবু সে কিছুতেই মানতে চাইছে না। তার যৌক্তিক মন কিছুতেই তার এই অনুভূতিতে সায় দিতে পারছে না।
পরেরদিন সকালে উঠে ইমন প্রথমেই যে বীভৎস ঘটনার সাক্ষী হলো তাতে তার কোনো সংশয়ই রইল না যে তিনি ঠিকই আন্দাজ করেছিল। তার র্যাশনাল মন সায় না দিলেও তার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় ঠিকই সায় দিয়েছিল। তার বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠল।ঘুম ভেঙ্গে বসার ঘরে বেড়িয়ে আসতেই সে একটা সাঙ্ঘাতিক আর্তনাদ করে বসে পড়েছিল চৌকাঠের ওপরেই। তার দৃষ্টি তখনও সোফার ওপরে কুন্ডলী পাকিয়ে পড়ে থাকা রকেটের দিকেই নিবদ্ধ।ওর সারা গায়ে নখের আঁচড়, কামড়ের ক্ষত। কালো লোমশ শরীরে শুকনো রক্তের দাগ লেগে আছে। নিস্পন্দ মার্জারটা পড়ে রয়েছে, ঘাড় ভেঙ্গে গিয়েছে তার। তার বিস্ফোরিত নীল চোখদুটী হাঁ হয়ে রয়েছে মনিবের দিকে। আপাতভাবে দেখে মনে হচ্ছে অন্য কোনো একটা বিড়ালের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে জখম হয়ে মৃত্যু হয়েছে রকেটের। কিন্তু অন্য কোনো পশু কোথা থেকে আসবে এই ঘরে?
ইমন ডাক্তারের কাছে যাবার প্রসংগ মুলতুবি রেখে আপাতত দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে পড়েছে। নিজের প্রিয় রকেটের মৃত্যুতে সে যতটা না শোকাহত তার চেয়ে অনেক বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এমন সময় নিজের মোবাইল ফোনটা বের করে সে ফোন লাগাল তার এক পরিচিত মানুষকে । বহুদিন আগেকার এই বন্ধু মানুষটিই একমাত্র এখন তাকে বাঁচাতে পারে। ডক্টর কায়েছ আহমেদ কিরন – প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর। ইমন নম্বর ডায়াল করে ফোন কানে চেপে বসে রইল। দুবার রিং হতেই ডক্টর কিরনের গলা ভেসে উঠলো ওই প্রান্ত থেকে।
-“ হ্যালো ইমন, কতদিন পর! কেমন আছিস!”
-“হ্যা কিরন, একটা গভীর সমস্যায় পড়ে তোকে ফোন করেছি। আমাকে তুইই ছাড়া আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না এই মুহুর্তে।“
-“দাড়া দাড়া, ইউ মিন, তুই কোনো অলৌকিক ঘটনা এক্সপিরিএন্স করছিস? একটু খুলে বল।“
ইমন মোটামুটি সেই ঝড়ের রাত থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেয়। সবকিছু শুনে কিরন কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।
ইমন অধৈর্য হয়ে আবার বলতে থাকে, “ চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল কিরন!”
, “ হুম ভাবছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে। আমি একটা কিছু মেছো গন্ধ তো পাচ্ছিই। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। তুই একটু অপেক্ষা কর। আমি তোকে বিকেলের মধ্যে ফোন করে জানাচ্ছি। এই ব্যাপারে আমারও একটু পড়াশুনোর দরকার আগে।”
ইমন হতাশ হয়ে ফোন কেটে দিল। সারাদিন নিজের ঘরে বসে রইল মন খারাপ করে। রকেটের দেহটা স্পর্শ করার সাহসও হচ্ছে না তার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ফোন এলো তার মোবাইলে।ডক্টর কিরন।
ইমন ফোনটা ধরতেই ওপার থেকে জোর গলায় কিরন বলে উঠল, ” শোন ইমন। তোকে এখন কিছু কথা বলি সেগুলো মন দিয়ে শোন। আপাতত ঘরেই থাক, খবরদার একা বেরোবি না একদম। ঘরের সব লাইট অফ করে দে। এবং দরজা জানলা বন্ধ করে যতটা সম্ভব ঘরটা পুরো অন্ধকার করে ফেল। তারপর ওয়েট কর আমার জন্য, আমি আসছি ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। আর হ্যাঁ আমি এলেও খবরদার একদম আলো জ্বালাবি না ঘরের। ঘরের দরজা ভেজিয়ে রাখ।আমি এসে ঢুকে পড়ব ঠিকসময়ে।“
ইমন ঘামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। সে কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল, “ কিন্তু ঘর অন্ধকার করে কেন? কিছু সিরিয়াস ব্যাপার নাকি?”
কিরন ধমক দিয়ে বলে, “যা যা বললাম একদম মুখ বন্ধ করে রিলিজিয়াসলি ফলো করে যা। নাহলে কিন্তু খুব বিপদ। প্লিজ , ইমন কোঅপারেট কর। তোর ভালোর জন্যই বলছি। বাকিটা এসে বলব। এখন রাখছি।“
কিরন ফোন কেটে দেয়। ইমন তাড়াতাড়ি সমস্ত আলো নিভিয়ে ফেলে ঘরের। এবং দরজা জানলা আটকে অন্ধকার ঘরে মৃত বেড়ালের দেহ আগলে বসে থাকেন। এই অন্ধকার যেন তাকে গিলতে আসছে। একটা হাল্কা দুর্গন্ধ সারা ঘরে লেগে রয়েছে। ভয়ে তার সমস্ত গা শিউরে উঠছে। আল্লাহর কাছে সে প্রার্থনা করতে লাগল, কিরন যেন তাড়াতাড়ি চলে আসে।
একঘন্টার মধ্যেই দরজায় একটা শব্দ শোনা গেল। ইমনর দেহে যেন প্রাণ এলো।এই একঘন্টা যে সে কী ভাবে কাটিয়েছে তা সে নিজেই একমাত্র জানে। একটা ভয়ঙ্কর মৃত্যুভয়ের সঙ্গে সে খেলা করেছে। প্রতি মুহুর্তে তার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা হিমেল স্রোত বেয়ে চলছিল।
নিজের জায়গাতে বসে অন্ধকারের মধ্যেই হাঁক পাড়লো, “কিরন নাকি?”
দরজাটা সামান্য ফাঁক করে কিরন ঢুকে বল্লো, “ হ্যাঁ আমিই। আর চিন্তা করিস না।“
ইমন অন্ধকারের মধ্যেই একটা চেয়ার এগিয়ে দিল। কিরন একটু হাঁপ ছেড়ে বলে, “ অনেকদিন পরে র্যাশ ড্রাইভ করে এলাম তো, তাই হাঁপিয়ে পড়েছি। তাই একটু জিরিয়ে নিলাম। এবার আসল কথায় আসা যাক তাহলে…”
ইমন বলে, “ হ্যাঁ সবটুকু পরিস্কার করে বল তো।”
– “ দ্যাখ তুই সেদিন চারমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলি। সেখানে চারদিক থেকে আলো এসে পড়েছিল। আর তখনই একটা লোক এসে তোকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। তুই পড়ে যাস এবং তারপর থেকেই এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। তাই তো?”
-“ঠিক!”
-“ হুম, তারপর তোর বাড়িতে নানারকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে, যেমন তোর বিড়াল দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকত লোম খাড়া করে। এই ঘরের নানা আসবাব পত্র নিজে থেকেই পড়ে ভেঙ্গে যেত ইত্যাদি।এমনকি তুই নিজেও অনুভব করেছিস যে রাস্তায় বেড়োলে কেউ তোকে ধাক্কা মারত, বিছানায় কেউ যেন তোকে টেনে ধরে রাখত ইত্যাদি। আর আজকে সকালে তোর বিড়াল নিজেই মারা যায় অন্য কোনো এক বিড়ালের মত প্রাণীর হাতে।“
-“ হ্যাঁ,এসব তো তোকে আমি ফোনেই বললাম।“
-“হ্যাঁ সব শুনে আমার ঠিক কি মনে হয়েছে জানিস? তোকে একটা অদ্ভুত ছায়া কব্জা করেছে। ইংরেজীতে একটা শব্দ বলা হয় “টু পোসেসড বাই ইভিল স্পিরিটস”। মানে হল গিয়ে , আত্মাদের দ্বারা ভর করা। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মানুষের শরীরটাকে কব্জা করে থাকে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া… “
-“তার মানে তুই বলতে চাইছিস আমাকে ভূতে পেয়েছে?”
-“উহু! তোকে না। তোর ছায়াকে। হ্যা ঠিকই শুনেছিস। তোর শ্যাডোকে। সেদিন রাত্রে কোনো স্পিরিট এসে কব্জা করে তোর ছায়াটিকে। আর তারপর থেকেই তোর ছায়া আসলে তোর ছায়া থাকে না। সে আসলে অন্য কেউ হয়ে এতদিন তোর সঙ্গে বসবাস করছিল।মনে আছে সেদিন আচমকা টেবিল থেকে ফুলদানী পড়ে যাবার ঘটনাটা? তুই হয়ত টেবিলের কাছে ছিলিস না, কিন্তু তোর ছায়াটা পড়েছিল সেই ফুলদানীর ওপরে। আর এই ছায়াকে তুই সাধারণ ছায়া ভাবিস না। এই ধরণের স্পিরিটরা নিজেদের ঘনীভূত করতে পারে আবার একদম বাতাসের মত ফিনফিনেও করতে পারে। তাই ঘরের মধ্যে হাঁটাচলা করার সময় যে যে বস্তুর ওপরে তোর ছায়া পড়েছে, সেই বস্তুগুলি পড়ে গেছে তার ধাক্কাতে। বিছানার মধ্যেও তোকে টেনে রাখত সে, আবার রাস্তাতেও এই ছায়াই তোকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল।“
-“এসব কি বলছিস তুই! আমার তো কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না। আচ্ছা, তাহলে রকেটকে কে মারল?”
-“গুড কোয়েশ্চন! আসলে কি জানিস, পশুদের একটা আলাদা সেন্স করার ক্ষমতা থাকে। কোনো কিছু অস্বাভাবিক ঘটলেই ওরা সবার আগে টের পায়। তাই রকেট দেয়ালের দিকে চেয়ে থাকতো লোম খাড়া করে। কারণ সেই দেয়ালে ও তোর ছায়াটাকে দেখতে পেত। এবং আমার বিশ্বাস সেই ছায়া নানারকম প্রানীর আকার ধারণ করত দেয়ালের ওপরে। তাই ও ভয় পেত। আসলে এই ছায়াগুলি কিন্তু এক শরীর থেকে আরেক শরীরে অনায়াসে যেতে পারে। আর এরা প্রচন্ড শক্তিশালী হয়ে পড়ে যখন এরা আলো পায়। কারণ যত জোরালো আলো থাকবে তত শক্তিশালী ছায়া সৃষ্টি হবে। তাই তোকে আমি ঘরের আলো সব নিবিয়ে দিতে বলেছিলাম। কারণ অন্ধকারে ছায়া উৎপন্ন হয় না। তোর শরীর থেকে গত রাতে ছায়াটা বেড়িয়ে গিয়ে তোর বিড়ালের ছায়ার রূপ নেয়। আর তাকে মারার চেষ্টা করে। তোর বিড়াল তাই বারবার মাটির দিকে আচড় কাটছিল কারণ সে তার নিজের ছায়ার সঙ্গেই লড়াই করতে চাইছিল।কিন্তু শেষমেষ নিজের ছায়ারই ধারালো নখ ও দাঁতের কাছে ওকে হার মানতে হল।”
ইমন বলে উটে, “ আ-আমাকে বাঁচার পথ বলে দে কিরন। আমি কিভাবে মুক্তি পাব এই ছায়ার থেকে?”
কিরন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ”কাজটা শক্ত তবে অসম্ভব নয়।“
-“ কি ভাবে?”
-“কি ভাবে আবার! যেভাবে পেয়েছিলিস একে, সেভাবেই। এমন কোনো জায়গা যেখানে প্রচুর আলো চারিদিক থেকে আসছে। সম্ভবত সেখানে একাধিক ছায়ার সৃষ্টি হয় বলেই ছায়ারা কনফিউজ হয়ে পড়ে। আর সেরকমই একজায়গায় যদি কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা যায় তাহলে এই ছায়া চলে যাবে তার শরীরে। আর তুই বেঁচে যাবি। যদিও তাকে বয়ে বেড়াতে হবে এই ছায়ার অভিশাপ। এছাড়া এর থেকে আর কোনো মুক্তিই নেই।“
* * * *
সেদিন সন্ধ্যেবেলা চাদর মুড়ি দিয়ে ইমন অনেকক্ষণ বসে ছিল অন্ধকার গলিটার মুখে। একটু দূরেই চার রাস্তার মোড়। সেখানে চারদিক থেকে আসা চারটি হলুদ আলোর নীচে যেন এক মায়াবী পরিবেশ দেখা দিয়েছিল। এমন সময় সে দেখল দূর থেকে হেঁটে আসছে এক পদাতিক। ইমন আর সময় নষ্ট করলেন না। সে গলি ছেড়ে বেড়িয়ে এসে দৌড়তে লাগল আলোর দিকে।
-“ও ভাইয়া, একটু দাঁড়ান, একটু দাড়ান প্লিজ।“, ইমন চিৎকার করে উটে।
ভদ্রলোক থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন সেই হলদে আলোর নীচে। পিছন ফিরে চেয়ে দেখলেন , ইমন তার দিকে ছুটে আসছে আর হাতের ইশারায় তাকে থামতে বলছে। ভদ্রলোক অপেক্ষা করতে লাগলেন।