কুয়াশায় ঘেরা রহস্য

কুয়াশায় ঘেরা রহস্য

পাঁচ বছর আগে সঞ্জয় বসু অন্ডাল ইয়ার্ডে বদলি হয়ে এলো…প্যাসেন্জার ট্রেনের গার্ড হিসেবে ! তারপর কোয়ার্টার পেতে..ফ্যামিলি কে নিয়ে আসা ! ফ্যামিলি বলতে…স্ত্রী মৌসুমী , আর একমাত্র মেয়ে গোপা ! ওদের কোয়ার্টারটা আগেকার দিনের সেই সেই ইংরেজ আমলের তৈরী ! উঁচু ছাদ …কাঁচের শার্সি দেওয়া খড়খড়ির বড়ো জানলা ! ….ওরা সাত আটজন ফ্যামিলি থাকে ! অনেকটা জায়গা জুড়ে এই রেল কোয়ার্টার ! চারপাশে গাছপালার সমাবেশ !

স্ত্রী ও মেয়ের খুব পছন্দ…. l তবে মুশকিল সঞ্জয়ের ডিউটি নিয়ে ! কখন শুরু আর কখন শেষ …তা ভগবানও জানেনা ! .কুড়ি বছর আগে ..এমনিতেই প্যাসেন্জার কাঠের গাড়ি গুলো অবহেলার স্বীকার ..l যারা মোটরম্যান ও গার্ড তাদেরও ভোগান্তির শেষ নেই ! সঞ্জয়কে কাক ভোরে উঠে…ছুটতে হয় ডিউটি দিতে ! ..অবশ্য কলম্যান এসে ডেকে দেয় ! কলম্যান বুদন বেশ বিশ্বস্ত …সরু লম্বা চেহারা …কালো গায়ের রং…সাদা ধবধবে দাঁতের পাটি সবসময় বেরিয়ে থাকে ! মনে হয় সারাক্ষণই হাসছে ! হাঁটু পর্যন্ত কোরা কাপড়ের ধুতি , আর গায়ে চড়ানো …রেলের দেওয়া নীল জামা !
…দরকার অদরকারে বাড়ির দোকান বাজারও করে দেয় ! মৌসুমী আর গোপাও বুদনকে পছন্দ করে !

…সবে শীতের শুরু…..এর মধ্যেই ঠান্ডাটা ভালোই পড়েছে ! তাছাড়া আছে কুয়াশার উপদ্রব ! কুয়াশার জন্যে ইতিমধ্যে ট্রেনের তিন চার ঘন্টা লেট শুরু হয়ে গেছে ! সঞ্জয়ের মেজাজটাও তাই তিরিক্ষে হয়ে আছে ! ডিউটি সেরে বাড়ি ঢুকতেই মাঝ রাত..আবার ভোরেই ছোট.. l বিকল্প লোকের অভাবে …কোন ছুটিও পাওয়া মুশকিল !

মাঝে মাঝে মনে হয়…চাকরিটাই ছেড়ে দেয় ! এদিকে গোপার পরীক্ষাও সামনে…এবার নাইন হবে ! শুক্রবার ছিল সেদিন , সঞ্জয় অফিসের বড়ো বাবুকে বললো ” স্যার..টানা দুমাস ডিউটি করছি , মেয়েটার পরীক্ষা …দুটো দিন ছুটি চাইছি…”
বড়ো বাবুর চোখ কপালে উঠলো ” ছুটি ? অন্য কিছু চাও দিতে পারি… l ”

” যেভাবে হোক ম্যানেজ করুন স্যার…” ….বড়ো বাবু লোকটা ভালো ! …ফোন টোন করে আসানসোল ডিভিশন থেকে একজন গার্ডের বন্দোবস্ত করলেন ! সে দুদিন কাজ চালিয়ে দেবে..শনি ও রবি ! …যাক , বাঁচা গেলো ! তবু দুটো দিন পরিবারের সাথে কাটানো যাবে !
রাতে বাড়ি ফিরে বলতে ওরাও খুশি হলো ! ….কিন্তু শুতে যাবার সময় বড়ো বাবুর ফোন এলো…বদলি লোক সোমবার আসবে…তাই কাল ভোর পাঁচটায় ডিউটিতে চলে আসতে হবে !…কি আর করা যাবে ?…রাগে ওর মাথাটা গরম হয়ে উঠলো !

…সঞ্জয় ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলো…ট্রেন একসিডেন্টে বুদন মারা গেছে ! ..ওর ছিন্ন ভিন্ন রক্তাক্ত দেহটা লাইনে পড়ে আছে…ওই অবস্থায় হাসছে l ￰ঘুমটা ভাঙার মুখে..কানে এলো বুদনের ডাক ” হেই বাবুজি , উঠ যাইয়ে ডিউটি কে সময় হো গয়া…” l ও ধড়মড় করে উঠে বসলো !

মৌসুমীও উঠে বসলো ! কল ম্যান বুদনের ডাক ওর কানেও গেছে ! তাড়াহুড়ো করে মুখটুখ ধুয়ে চা না খেয়েই বেরোলো ! ..বুদন নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল ! বাইরে এখনো হিমেল রাত…ভোরের আলো ফোটেনি ! ..কোয়ার্টার থেকে একটা ইঁটের শর্টকাট রাস্তা স্টেশন পর্যন্ত আছে ! দুজনেই হাঁটা শুরু করলো…l সঞ্জয়ের একটু আগে দেখা স্বপ্নটা মনে পড়লো ! …কি রকম একটা বাজে অনুভূতি শরীরে দেখা দিলো ? …ওটা জ্যান্ত বুদন তো ? …চারিদিকে কেউ কোত্থাও নেই ! ওরা দুজন শুধু হাঁটছে ! …ধুর , এসব কি ভাবছে ?….স্বপ্ন আবার সত্যি হয় নাকি ?…বাজে চিন্তা তাড়াবার জন্যে ও বললো…
“..বুদন, তুই আজ বেলায় বিবিজির কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজার করে দিস দিকিনি …” !
” জী …বাবুজি ! ” …স্টেশনের আলো দেখা গেলো !
অফিস ঘরে ঢুকে..দেখে বড়োবাবু চেয়ারে বসে ঢুলছে ! ওর ডাকে তাকালো …” কি ব্যাপার ? এতো জলদি ?…এখনো চারটে বাজেনি …তোমার রিপোর্ট করার সময়তো পাঁচটায় !” অবাক গলা ! …ঘড়িটা তো দেখা হয়নি..সঞ্জয়ের…l
বড়োবাবু ঘুম জড়ানো স্বরে বললো ” আমি তো বললাম ফোনে …সকালে কলম্যান ঘাসিয়াকে পাঠিয়ে দোব… ” !

“. ঘা — সি — য়া ” …সঞ্জয়ের মুখে বিস্ময় !

“…গতকাল সন্ধ্যের দিকে ঘাসিয়া দেশ থেকে ফিরলো দেখে…বুদন ছুটি করে দিন কয়েকের জন্যে দেশে গেলো ! এইতো রাত দুটোর গয়া প্যাসেঞ্জার টা ধরলো ll

…..বড়ো বাবুর কথা শুনে এই ঠান্ডা তেও সঞ্জয়ের কান গরম হয়ে উঠলো ! তাহলে ওকে কে ডেকে আনলো ? কথা বললো…এতখানি পথ একসঙ্গে এলো !..ওর মুখের রং বদলালো ! বড়ো বাবুও ওর মুখের ভাব লক্ষ্য করে বললো…
” তুমি বলছো বুদন ডেকে এনেছে ? ..আমার মনে হয় তুমি …ঘাসিয়াকে বুদন ভেবে ভুল করেছো !… ” — এই সময় পিছন থেকে ঘাসিয়ার গলার আওয়াজ পাওয়া গেলো …

” ..বাবুজী তো আ গিয়া , মেরে যানেসে পেহেলে ” এবার ওরা দুজনেই বোবা হয়ে গেলো ! সঞ্জয়ের স্বপ্নের কথাটা বার বার মনে পড়তে লাগলো !
” …স্যার , আমার মন বলছে , বুদনের খারাপ কিছু হয়েছে ! ..আপনি একটু খোঁজ খবর নিন ! ” ওর গলায় কাকুতি !
চিন্তিত মুখে উনি বললেন ” …তুমি বলতে চাইছো , বুদন আর বেঁচে নেই…তার মৃত আত্মা এসে দেখা দিয়েছে ?

” আমি নিশ্চিত নই…কিন্তু এতটা ভুল কোন মানুষের হয় ? ” …ঘাসিয়া গরম চা নিয়ে এলো ! ” গয়া প্যাসেঞ্জারে কোন একসিডেন্ট হয় নি তো ? “….
বড়ো বাবু চায়ের ভাঁড় মুখে নিয়ে ফোন তুললেন …” তার মানে গাড়ি এইসবে আসানসোল পেরোবে কি না সন্দেহ..যা কুয়াশা ” …খবর নিয়ে জানা গেলো , কোন দুর্ঘটনার খবর নেই …l …সঞ্জয় উঠে দাঁড়ালো…রেলের কাগজপত্র ব্যাগে ঢুকিয়ে …কুয়াশা ভরা স্টেশনে পা রাখলো …l
মাথায় এক রাশ চিন্তা নিয়ে কাজে চললো ! …কোন কিছু সঠিক উত্তর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না !
রাত্রে ফেরার সময় …শর্টকাট রাস্তাটা ধরতে গিয়ে একটা গা ছমছমে ভাব লাগলো ! …কুড়ি বাইশ বছর আগে…অন্ডালের বেশির ভাগ জায়গা খোলামেলা ছিল ! ও জোরে পা চালালো !
….বাড়ি ফিরে খাবার টেবিলে বসে ও বুদনের কথাটা বললো ! মেয়ে গোপাও বসে থাকতো এক সঙ্গে খাবার জন্যে ! গোপা অবাক চোখে জোরে বললো..
“…কি বলছো বাপি ? …বুদন কাকা এই বেলাতেও বাজার করে দিয়ে গেলো তো !! ” ..সঞ্জয় এরও খেয়াল পড়লো…ওই বলেছিলো , বাজার করার কথা !

মৌসুমী ভয়চকিত গলায় বললো ” তুমি কি গো ? …স্টেশন থেকেও একটা ফোন করে খবর দিতে পারতে ? …তাহলে বাজার করার জন্যে যখন এলো , আসল ঘটনাটা জানতে পারতাম …. ! ” ..ইস , সত্যি তো ! আসলে ওর মাথাটাই তখন কাজ করছিলো না ! এতক্ষনে তাহলে রহস্যের সমাধান হয়ে যেত !
গোপা খেতে খেতে বললো ” এমনও হতে পারে , ও রাতের ট্রেনে দেশ যায় নি ! ”

” ..তাহলে ও ডিউটি অফ করবে কেন ?…ও ছুটিই নেয় না….কাল সকালে ঘাসিয়াকে বলবো ওর খবর নেবার জন্যে… l …ভোরে আবার ডিউটি…মেয়ে শোবার আগে বললো ….বাপি , এখানে সার্কাস আসছে …পরীক্ষার পর নিয়ে যেতে হবে কিন্তু… l
ভোরেই ঘাসিয়ার ডাক কানে এলো ” …বাবুজী , উঠ যাইয়ে..টাইম হো গিয়া…” সঞ্জয় ড্রেস করে নিচে এলো সঙ্গে স্ত্রী ও এলো ! ঘাসিয়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাতে হাত ঘসছে …ঠান্ডা কাটাবার জন্যে !
” তুই আজ বুদনের খোঁজ নিবি একবার ”
” …কাল সাঁঝে বড়ো বাবু পাঠালো …ও দেশ চলা গেয়ি… ” — দুজনেই এ কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো ! সঞ্জয় স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো…শিশিরে ভেজা রাস্তা দিয়ে !

…মৌসুমীর বুকে ভয়ের ঝড় উঠলো ! বুদন তাহলে কোথায় ? ….রান্নাঘরের দিকে যেতে গিয়ে বাজারের ঝুড়িটার দিকে চোখ পড়লো ! একটা শীতল শিহরণ ছুঁয়ে গেলো সারা শরীরে ……..ll

…মৌসুমী চিন্তার সাগরে ডুবে যাচ্ছে…বুদন তার কাছ থেকে পয়সা নিলো ? বাজার করলো ? তাহলে কি ওটা বুদনের ভূত ছিল ?…গা টা শির শির করে উঠলো ! গোপা ঘুম থেকে উঠে মায়ের মুখে শুনে বললো ” তোমরা নিশ্চিত হচ্ছো কি করে ? দেশেও তো চলে যেতে পারে ? ”

” ..যদি দেশেই যাবে…তাহলে কে এলো ? ”
স্টেশনে গিয়ে সঞ্জয় বড়োবাবুকে …বুদনের বাজার করার কথাটা বলতে…ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো ,
” কি বলছো হে ?…এতো বড়ো ভাবনার কথা..সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে..” চশমা খুলে কাঁচ মুছলো !
” দেখি ঘাসিয়াকে বলে , ও দেশে পৌঁচেছে কি না…খবরটা আনতে পারে কি না ? ”

সঞ্জয় আর দেরী না করে ব্যাগ নিয়ে আধো অন্ধকারে …কুয়াশায় ঢাকা অন্ডাল স্টেশনে পা দিলো !..এরপর দুদিন বদলির লোক আসাতে ছুটি পেলো ! এদিকে লোকের অভাবে ঘাসিয়াকেও দেশে পাঠানো যাচ্ছে না ! ওর বিষয়টা যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে…সস্তিও পাওয়া যাচ্ছে না !
…কাজে জয়েন করলো সঞ্জয় ! …এই দু দিনে বুদনের চিন্তা খানিকটা কমেছে …নানাবিধ কাজের মধ্যে !
… সেদিন সঞ্জয়ের ডিউটি পড়লো…ধানবাদ …দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনে ! …বড়োবাবু ওকে অফিস ঘরে ডেকে চুপি চুপি বললো ” আজকে একটু এক্সট্রা দায়িত্বের কাজ তোমায় দিচ্ছি..ধানবাদ থেকে টিকিট বিক্রির কিছু টাকা ওরা আজকেই দুর্গাপুরে পাঠাতে চায়…এদিকে ওদের কাছে আর.পি.এফ নেই ! …ওরা একটা লোহার বাক্সে করে টাকাগুলো তোমার গার্ড কামরায় তুলে দেবে ! …সাবধানে আনবে ” একদমে কথাগুলো বলে থামলো ! …সঞ্জয় এর আগেও একবার এই কাজ করেছে !

” ভয় নেই….তোমার সঙ্গে ঘাসিয়াকেও দিচ্ছি ! ” কাজ বুঝে নিয়ে ও বেরিয়ে গেলো ! ..ঘাসিয়া কেও সঙ্গে নিলো !
….ফেরার সময়…ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লো ধানবাদ থেকে…সবুজ আলো দেখিয়ে সঞ্জয় দরজাটা টেনে দিলো ! …সন্ধ্যে ছটা দশ ! শীতটাও অতি তীব্র আকার ধারণ করেছে !…এর মধ্যেই ঠান্ডা কোর্ট , সোয়েটার ভেদ করে শরীরে কামড় বসাচ্ছে …l ঘাসিয়া এক কোনে জবুথবু হয়ে টাকার লোহারবাক্সের ওপর বসে ! কলকাতা থেকে এখানে ঠান্ডার তারতম্য অনেক ! এর মধ্যেই সন্ধ্যে তার ছায়া বিস্তার করে …অন্ধকারকে দু হাত তুলে আহ্বান জানাচ্ছে !

সঞ্জয় বন্ধ কাঁচের জানলার ভেতর দিয়ে বাইরে আবছা পৃথিবীকে দেখছে…l মনে ￰মনে বুদনের চিন্তাটা ঝিলিক দিচ্ছে…l মুখ ফিরিয়ে ঘাসিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো ” …তুই কালই দেশ চলে যা..বুদনের খবরটা নিয়ে আয় ..বড়োবাবুকে বলে তোর ছুটি করিয়ে দোব ” ও ঘাড় নাড়লো ! সঞ্জয় বড়ো লম্বা খাতাটা টেনে নিয়ে স্টেশনের সময়সূচির ওপর চোখ রাখলো ! …গাড়ি এখন মাঝারি গতিতে চলছে…l
…ও জানে সময় যত গড়াবে …কুয়াশাও ঘন হবে , গাড়ির গতিও ততো কমবে !

….রাজ্যের ভয় সঞ্জয়কে জড়িয়ে ধরলো…বুদনের চোখ দুটো আলো পড়ে জ্বলজ্বল করছে…ও মুখে কি একটা বলছে ..বোঝা গেলো না ! ..ভেতরে ঢুকে এসে দরজাটা জোরে বন্ধ করে , লক করে দিলো ! …একেই হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ..তারওপর এইরকম পরিবেশে ওই দৃশ্য ! মনে হচ্ছে ভয়ে হাত পা পেটের মধ্যে সেঁধিয়ে যাবে !

” বাুজী কেয়া হুয়া ? …” ঘাসিয়ার গলা ! এদিকে গাড়িও একদম দাঁড়িয়ে পড়লো !
” …বাহার মে বুদন খাড়া হ্যায়..” …ঘাসিয়ার মতো শক্ত সমর্থ লোকের মুখেও ভয়ের ছায়া পড়লো ! এইসময় দরজায় …ঠকঠক করে শব্দ হলো ! সঞ্জয় আর ঘাসিয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে…দরজা খুললে , বুদনের কি রূপ ওরা দেখবে বুঝতে পারছে না !!! …বুদনের প্রতি ভালোবাসা , এ কদিনে ভয়ে রূপান্তরিত হয়ে গেছে !
….দরজায় শব্দ ….ক্রমশ বাড়ছে ! …মনে হচ্ছে ভেঙে ফেলবে ! বুদন ইচ্ছে করলে এমনিতেই ঢুকে পড়তে পারে , দরজা ঠেলার প্রয়োজন কি ?

বাইরে থেকে এবার কর্কশ শব্দ ভেসে এলো…” দরওয়াজা খোল , নেহি তো তোড় দেঙ্গে ” ! এবার দরজায় শাবলের আঘাত পড়লো… l ..ওরা বুঝতে পারছে না , বাইরে কি ঘটছে ? দু একজনের গলাও পাওয়া যাচ্ছে ! ওরা কান খাড়া করলো…” জলদি কর্…সিগন্যাল হো যায়গা ! .. ..উসকে পেহলে রুপেয়া লেকে ভাগ্না হোগা ”
…এবার অন্য ভয় ওদের গ্রাস করলো ! ডাকাতি করতে এসেছে , কোন ভাবে খবর পেয়েছে …টাকা যাচ্ছে !
ওয়াকিটকিতে ড্রাইভারকে খবর দেবার আগেই দরজার লক টা ভেঙে গেলো ! …মুখে গামছা জড়ানো দুটো লোক , হাতে পাইপ গান নিয়ে ভেতরে ঢুকে এলো.. l আর দুজন লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে..ওদের হাতে শাবল আর রামদা ! ভেতরের দুজনের.. চোখ লোহার বাক্সের ওপর পড়লো..l সঞ্জয়ের বুক শুকিয়ে গেলো…বাধা দিতে যাওয়া মানেই , মৃত্যুকে ডেকে আনা !

এই সময় ও দেখলো …লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের ওপর, কম্বল খুলে বুদন চিতা বাঘের মতো লাফিয়ে পড়লো ! একজন কোন রকমে নিজেকে ছাড়িয়ে..সজোরে হাতের শাবল টা বুদোনের মাথায় বসিয়ে দিলো ! ও মাথা ধরে লাইনের ওপরেই আছড়ে পড়লো ! …সঞ্জয় কিছু বোঝার আগেই ঘটনাগুলো সিনেমার মতো ঘটে যেতে লাগলো !

…বুদনের ওই অবস্থা দেখে …ঘাসিয়ার মাথায় খুন চেপে গেলো ! যতই হোক দেশওয়ালি ভাই.. l ..সামনের পাইপ গান ধরা দুজনকে , অবিশ্বাস্য ভাবে দুহাতে তুলে ছুঁড়ে অন্ধকার লাইনের ওপর ফেললো ! তারপর এক লাফে নিচে ওদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো…l …ওই চারজন ওর শক্তি আর ক্ষিপ্রতা দেখে…কয়েক মিনিটের মধ্যেই অন্ধকারে গা ঢাকা দিলো !
ঘাসিয়ার গলার আওয়াজে সঞ্জয়ের হুঁশ ফিরলো ” … বাবুজি, বুদন কো জলদি হাসপাতাল লে যানে হোগা…বেচারি বেহুঁশ হো গিয়া..” …ওরা দুজন ধরাধরি করে রক্তাক্ত অজ্ঞান বুদনকে ওই ছোট্ট কামরায় তুললো !

তার মানে…ও মরেনি ! …সঞ্জয় ক্ষিপ্র হাতে ফোন তুলে….ড্রাইভারকে সব জানালো ! …আসানসোলকে ডাকাতির চেষ্টা …ঘাসিয়ার ডাকাত তাড়ানো …বুদনের আহত হওয়া…সব কিছু জানাতে …ওরা ব্যবস্থা নিলো !
…সামনের সিগন্যাল সবুজ হলো ! ঘাসিয়া বললো……” বাবুজি , হামি ওর কামরায় যাচ্ছি ! ওর সামান আছে জরুর..” ও নেমে গেলো ! ট্রেন ছেড়ে দিলো !
ফাস্ট এড বক্স থেকে…ডেটল , তুলো নিয়ে ওর মাথাটা প্রাথমিক ভাবে ব্যান্ডেজ করে দিলো সঞ্জয় ! রক্ত পড়া অল্প কমলো ! …একটু বাদেই ওর জ্ঞান ফিরলো ! তাকালো… l

…তারপর ওর মুখ থেকে সব শুনে ….সঞ্জয় বোবা হয়ে গেলো !!! …..বুদন সেদিন রাতের গাড়ি ধরতে পারে নি ! তাই ভোরে ওকে ডেকে দিয়ে…সকালে ওদের বাজার করে , বেলায় বাস ধরে দেশে চলে গিয়েছিলো ! …কিন্তু দেশে গিয়ে জানতে পারে…আগের রাতে বাড়িতে অশান্তি হওয়ার জন্যে , …ঘাসিয়া গলায় দড়ি দেয় ! …ঐসব ঝামেলা মিটিয়ে বাসে চেপে ধানবাদে এসে এই ট্রেন ধরে l

….আজও …এই তেইশ বছর বাদে , সঞ্জয় বুঝে পায়না …মৃত্যুর পর কি সব শেষ ? …না , তারপরও কিছু থাকে ???

………………………………………….(সমাপ্ত)…………………………………………

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত