দেখা

দেখা

কলেজের লাস্ট বেঞ্চে বসে থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে যেই মেয়েটা-কে দেখতাম আজ তার বিয়ে। আমাকে নেমন্তন্ন ও করেছে। হ্যাঁ ওই সেই মেয়ে যাকে দীর্ঘ তিন বছর ভালো বেসেছিলাম। কিন্তু কোনোদিন বলতে পারেনি। আর যাওবা বলবো তখনি একেবারে শেষ পর্যায়। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। কাল-কেই আমি এইজন্য সুইসাইড করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রাকেশ আমার বন্ধু, সে আমাকে এসে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো। আজ কাল কের থেকে আমি বাড়ির বাইরে। এখনো বাড়ি ফিরিনি। না যাই বাড়ির দিকে যাই। কিন্তু এ-কি মনের মধ্যকার খাঁচার পাখি আজ কেন অন্যদিকে উড়তে চাইছে। আমি বাড়ির দিকে পা বাড়াতে পারছিলাম না। নিজেকে সান্ত্বনা দিতে ঠিক করলাম যে আমি যাবো শেষবারের জন্য হলেও ” রূপালী ” কে দেখে আসবো। এই ভেবে উঠে পড়লাম মাঠের মধ্যে দিয়ে। আজ যে কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে তা কেবল আমি জানি।

বাঁচায়..বাঁচাও..

এই সন্ধ্যাবেলায় কে এইভাবে চিৎকার করছে? আরে ওইদিকে কাদের যেন দেখা যাচ্ছে।

একটু ভালোভাবে দেখলাম এই অন্ধকার মাঠের শেষের দিকে একটা মেয়ে দৌঁড়ে আসছে আর তার পেছনে চার-পাঁচ-টা গুণ্ডা। প্রথমে ভাবলাম এড়িয়ে যাই ব্যাপার-টা কিন্তু তারপর ভাবলাম ওই মেয়েটা হয়তো কারুর না কারুর গার্লফ্রেন্ড তাইনা এখন ওর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে ওর বয়ফ্রেন্ডের কি হবে।

এটা ভাবার পর এক দৌঁড় দিলাম ওই গুণ্ডা গুলোর দিকে। দৌঁড়ে গিয়ে মেয়েটার সামনে গেলাম। মেয়েটা আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। আমি ওই গুণ্ডা গুলোকে উদ্দেশ্য করে বললাম – কি লাভ দাদা, একজনের ভালোবাসা এইভাবে কেড়ে নিয়ে।

গুণ্ডা গুলো আমাকে ঠিকঠাক অন্ধকারের মধ্যে দেখতে পারছিলোনা। ওদের-ই মধ্যকার একজন আমার মুখে টর্চ এর আলো ফেললো।

তারপর জানিনা কেমন অদ্ভুত ভাবে বিকট একটা চিৎকার দিয়ে ওরা দৌঁড় দিলো।

তারপর তারপর কি হলো..তাড়াতাড়ি বলুন।

আমি – হ্যাঁ দাদা একটু দাঁড়ান বলছি। একটু নাক টেনে আবার বলা শুরু করলাম – এরপর আমি পেছন ফিরে ওই মেয়েটাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলতে গেলাম – ভয় পাবেন না। ওরা সবাই চলে গেছে।

মেয়েটা কেমন অবাক হয়ে বলে উঠলো – আরে তুই এখানে?

আমি বললাম – সরি, আপনাকে ঠিক চিনলাম না তো….

মেয়েটা বললো – আরে আমি পূজা।

আমি – একটু মনের মধ্যে কয়েক সেকেন্ডের জন্য একটা ঢেউ বয়ে গেলো তারপর মনে পড়লো – এ তো সেই বাংলা ডিপার্টমেন্টের পূজা।

আমি – কি রে তুই এখানে? কি করছিস।

পূজা – আমি কি করছি না করছি সে পড়ে বলবো ক্ষণ। কিন্তু তোর মুখ চোখে কাঁদা আর রক্তে মাখামাখি কেন?

আমি – আরে কাল একটু মদ খেয়েছিলাম রে। তারপর পড়ে গিয়েছিলাম কোথায় কে জানে। তারপর থেকেই বোধহয় আমার মুখমণ্ডলীর পরিবর্তন ঘটেছে।

আমরা দুইজনেই হেসে উঠলাম।

এবার পূজা বললো – আরে জানিস আমার বাবার প্রচণ্ড শরীর খারাপ। আমাকে এইজন্য বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এখন বিয়ে করলে আমার আর থার্ড ইয়ারের পরীক্ষা-টা দেওয়া হবেনা। আজ আমার বিয়ে এইজন্য আমি বাড়ি ছেড়ে ভেগেছি।

আমি – ধর….এটা উচিৎ কাজ করিস নি। তর বাবা-মার মনের উপর দিয়ে এখন কি চলছে বল তো?

পূজা – তখন চুপ করে বলে উঠে। জীবনে আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এইজন্য আমি আগে চাকরী করবো তারপর বিয়ে।

আমি – পূজার হাত-টা বেশ শক্ত করে ধরলাম। তারপর বললাম বাবা-মা-কে আর কষ্ট দিস না। চল আমি তোকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসি।

পূজা – কিছু না বলে নিজের মনে চলতে থাকলো আমার সাথে। ধীরেধীরে মাঠের মধ্যে দিয়ে হাঁট-তে হাঁট-তে আমরা মেইন রাস্তায় চলে এলাম। আমরা দুইজনে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি।

আমি – দেখ পূজা বাবা-মা-কে কষ্ট দিতে নেইরে। ওরা কি সামলাতে পারবে নিজেকে। তুই বিয়ে করবিনা। বাড়িতে বললে নিশ্চয় বুঝতো।
এই বলে পেছনে তাকালাম তখন দেখি পূজা রাস্তার মাঝখানে।

আমি – আরে ওখানে কি করছিস এপাশে আই শীগগির।

পূজা জোরে চেঁচিয়ে বললো – আমার আর এসে লাভ কি? আমিতো নিজের জীবন শেষ করে দিয়েছি। তুই ভালো থাকিস। আমার এই জীবনে অনেক আশা অপূর্ণ থেকে গেলো। তখনি একটা চার চাকার গাড়ি পূজাকে ভেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। কিন্তু একি পূজার তো কিছুই হলোনা।

তারপর কি হলো বলুন।
আমি নিজের ব্যাগ-টা পিঠে নিয়ে অমিত কে বললাম আপনার ট্রেন এসে গেছে।

অমিত – সে নয় বুঝলাম কিন্তু তারপরে কি হলো।

আমি – পূজাকে ওইভাবে দেখে চোখ থেকে জল বেয়ে পড়লো আমার। কিভাবে একটা মেয়ে যে কিনা নিজের স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো। তার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখে চলে গেলো। ভাবতে না ভাবতেই আমার গা-য়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। আমি দৌঁড় দিলাম পূজাকে ধরার জন্য। ওকে শেষ বারের জন্য হলেও ছুঁয়ে দেখতে চাইছিলাম। আমার তো কপাল পুড়েছে কিন্তু শুনেছিলাম পূজা নাকি কলেজের কোনো একটা ছেলের উপর ক্রাশ খায়। সেই ছেলেটা আর কেউনা আমার বন্ধু রাকেশ। যার হাতে কাল আমি মার খেয়েছি শুধুমাত্র সুইসাইড করতে যাচ্ছিলাম বলে। রাকেশের গার্লফ্রেন্ড-টা এভাবে চলে গেলো আমি নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এইজন্য দৌঁড়ে গেলাম ওকে ধরতে।

কিন্তু তখনি একটা লরি আমার সামনে এসে যায় আমি খেয়াল করিনি লরি-টাকে। আমি তখন ওই মুহুর্তে দৌঁড়ানোর উপায় ও ছিলোনা। তাই একেবারে সোজা টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর যা হলো আমি নিজেই স্তম্ভিত।

অমিত – কি হলো বলুন? তারপর কি হলো?

আমি বললাম – লরি-টা আমার উপর থেকে চলে যায়। কিন্তু আশ্চর্যর বিষয় আমার শরীরে এক বিন্দু কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হলোনা।

তারমানে আমি এতক্ষণ..আমি এতক্ষণ জীবনের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছি। আমাকেও কি মৃত্যু গ্রাস করেছে।

অমিতের এসব কথা শুনে চোখ তখন ছানাবড়া।

হঠাৎ ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ শুনে অমিত ঘুম থেকে উঠে পড়ে।

ওহহহহ তারমানে স্বপ্ন ছিলো।

ইসসসস। স্বপ্ন-টা কি দারুণ ছিলো। কিন্তু স্বপ্নের শেষ-টা দেখতে পাড়লাম না।

এরপর অমিত সেই রোজকার মতন দাঁত মেজে, ব্রেকফাস্ট করে চললো কলেজের উদ্দেশ্য। মনে বেশ একটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। কারণ অমিত প্রেম করেনা। তাই মারামারি, কাটাকাটি এসবের তার কোনো দরকার নেই। রাস্তায় তখন লাল সিগন্যাল ছিলো। এমন সময় একটা ডেডবডির গাড়ির দিকে চোখ পরে অমিতের।

অমিত ভাবে মানুষ বড়োই আজব এই আসে এই যায়। কিন্তু কার এমন দুর্দশা হলো মনে কৌতুক জাগে অমিত দোনোমনা করে এগিয়ে গেলো তখন সিগন্যাল হয়ে গেছে গাড়ি-টা নিজের গন্তব্য যাওয়ার জন্য তৈরি এমন সময় অমিতের চোখ পড়ে ওই ডেডবডির দিকে তাতে অমিত যা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় সে।

ধীরেধীরে গতি বাড়ানো গাড়ি-টার দিকে অমিতের চোখ পড়ে অমিত ওই ডেডবডির মুখের দিকে তাকায় আর ওই লাশ দেখে অমিতের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।

কারণ ওই লাশের দেখা মুখ আর তার স্বপ্নে দেখা হওয়া স্টেশনের সেই লোকের মুখ-টা পুরো এক।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত