পৌরসভার খাতায় পার্কের পোশাকি নাম একটা আছে। কিন্তু সেই নামে চিনবে না কেউ। তাই উহ্যই থাক। তাতে এ গল্পের বিশেষ ক্ষতি হবে না।
চৈত্রের ঝাঁঝা দুপুর। সারা কলকাতা ফুটিফাটা। পার্কের সামনে বাসস্টপে দাঁড়িয়ে জনাকয়েক মানুষ দরদর করে ঘামছে। পাশেই ফুটপাতে এক ছাতুওয়ালা পসার সাজিয়ে বসে আছে। ওই রোদে দাঁড়িয়ে দুপুরের খাওয়া সারছে কয়েকজন। দরদর করে ঘামলেও কেউ পার্কের দিকে পা বাড়ায়নি। রেলিংঘেরা পার্কের দশা হতশ্রী হলেও কিছু গাছপালা অবশ্য রয়েছে।
তলার সামান্য ছায়ায় জনা কয়েক করে মানুষের জটলা। ঘন হয়ে বসে মজলিস চলছে। ঝিমোচ্ছে কয়েকজন।
পার্কের পিছনে সরু গলির দিকে রোগা প্যাকাটি চেহারার এক ভবঘুরে গোছের মানুষ রেলিংয়ের ওধারে এসে দাঁড়াল। উসকোখুসকো ঝাঁকড়া চুল। গাল ভরতি কদিনের না কামানো দাড়ি। খালি গায়ে হাঁটুর উপরে ময়লা ধুতি। কাঁধে চিটে গামছা। সামনে আধশুকনো এক কলার খোসা নজরে পড়তে প্রায় আঁতকে উঠে পিছিয়ে গেল এক পা। তারপর সাবধানে তুলে দূরে ছুঁড়ে দিয়ে আড় চোখে তাকাল পার্কের দিকে। খানিক দূরে আধভাঙা গেট। সেদিকে না গিয়ে সাবধানে চারপাশে সামান্য চোখ বুলিয়ে উচ্চিংড়ের মতো তিড়িং করে এক লাফে রেলিং টপকে পার্কের ভিতর।
অদূরে এক ঝাঁকড়া বেলগাছ। জুলজুল করে সেদিকে খানিক তাকিয়ে বেজায় খুশিতে দু’পাটি দাঁত বের করে নিঃশব্দে এক ঝলক হাসল। গাছতলায় আধভাঙা এক বেঞ্চ। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল সেদিকে।
আহ্লাদে বেচারা কিছুই আর লক্ষ্য করেনি। কাছে গিয়ে বসতে যাবে‚ আঁতকে উঠে পিছিয়ে এল কয়েক পা। ‘আই বাপ!’
আধভাঙা হলেও বেঞ্চে এক বাবাজি গোছের মানুষ দিব্যি চিৎপাত হয়ে ঘুমোচ্ছে! ন্যাড়া মাথায় লম্বা টিকি। ডগায় কষে বাঁধা গাঁদাফুল। কপালে মস্ত এক সিঁদুরের ফোঁটা। কাছেই কোনও মন্দির বা আশ্রমের বাবাজি। প্যাকাটি পিছন ফিরে দৌড় লাগাতে যাবে‚ বেঞ্চে শুয়ে থাকা বাবাজি ফস করে চোখ মেলে তাকালেন।
‘কে রে হতচ্ছাড়া?’
‘এজ্ঞে আমি।’ বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে প্যাকাটি উত্তর দিল।
‘সে তো বুঝেছি। কিন্তু—।’
বাবাজির কথা শেষ হতে পেল না। প্যাকাটি প্রায় খাবি খেয়ে বলল‚ ‘এজ্ঞে কী বুঝলেন বাবাজি?’
বাবাজি ততক্ষণে বেঞ্চে উঠে বসেছেন। খরখরে চোখে সামনে প্যাকাটির দিকে তাকিয়ে কাঁধের তেলচিটে পৈতে আঙুলে জড়াতে লাগল। তাই দেখে প্যাকাটির দাঁত কপাটি প্রায় লেগে যাবার জোগাড়। নির্ঘাত ছু–মন্তর দেবে। বেচারা ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ধপ করে বসে পড়ল পায়ের কাছে। নাক–কান মুলে বলল
‚ ‘অপরাধ নেবেন না ঠাকুর। ঘাট হয়েছে। মুখ্যুসুখ্যু মানুষ। ক্ষ্যামা করে দেন।’
‘ফের মিছে কতা!’ পৈতে উঁচিয়ে তেড়ে উঠলেন বাবাজি ‚ ‘ব্যাটা কেলে–ভূতের পো! আমি কালীঘাটের ভটচার্য। কত ভূতের শ্রাদ্ধ করে ট্যাঁক ভরেছি। আমার কাছে ফাঁকিবাজি!’
‘অপরাধ নেবেন না ঠাকুর।’ প্যাকাটি ফের হাউমাউ করে উঠল‚ ‘সব মিছে কতা নয়।’
‘হতভাগা ‚ তাহলে কোনটা সত্যি শুনি?’
‘কেন মুখ্যুসুখ্যু বলিনি হুজুর? ক অক্ষরটাও আঁকা শিখিনি। হাওড়া ইস্টিশনে মোট বইতুম কিনা।’
‘তা বেশ তো ছিলি। এই অবস্থা কী করে হল?’
‘মিথ্যে বলব না ঠাকুর। কষ্ট হলেও ছিলুম ভালই। তা কপালে কী আর সইল! পেলাটফর্মে মুম্বাই মেল ঢুকছিল। কুলিদের হুড়োহুড়ি। তার মধ্যে কলার খোসায় পা হড়কে একেবারে লাইনের মাঝে। ব্যস‚ হয়ে গেল।’ কাঁধে চিটে গামছার খুঁটে চোখ মুছল প্যাকাটি।
‘কষ্ট পাসনি বাপু।’ বাবাজির গলাও যেন একটু ভারি হয়ে উঠল এরপর‚ ‘বরং ভালই হয়েছে বল? দিন গেলে স্রেফ এক শানকি ভাতের জন্য ছুটোছুটি। এখন দিব্যি আছিস! পেট ভরাবার দায় নেই।’
‘তা ঠিক বাবাজি।’ প্যাকাটির গলায় সামান্য খুশির ছোঁওয়া লাগলেও ভারি হয়ে গেল মুহূর্তে‚ ‘তবু সেও যেন ভাল ছিল। এখন যে ঝামেলা পড়িছি। আরও ভয়ানক!’
‘তা কোথায় থাকা হয় র্যাঁ?’ বাবাজির গলার স্বর হঠাৎ বেজায় খরখরে।
‘সেই কতাই তো বলতে যাচ্ছিনু গো।’
গামছার খুঁটে ফের চোখ মুছল প্যাকাটি।
‘কোতাও নয়। বিলকুল ভবঘুরে।’
‘হুঁ–হুঁ বাবা। ঠিক ধরেছি।’ চোখ পাকিয়ে গরগর করে উঠলেন বাবজি‚ ‘মুখ্যু হলেও দেখছি সহজ লোক নোস! জুতসই বেলগাছের খোঁজ পেয়ে ভরদুপুরে তাই হানা দিয়েছিস এখান?’
‘হেঁ–হেঁ।’ একরাশ দাঁত বের করে প্যাকাটি হাত কচলাল। ‘বাবাঠাকুরের চোখ বলে কতা! ফাঁকি দেবার উপায় আচে!’
‘সেটা বুঝেছিস তাহলে?’ গরগরে গলায় শুরু করলেও বাবাজি এরপর হঠাৎ মোলায়েম করে বললেন‚ ‘তা কলার খোসায় পা হড়কে ফটাস হবার পর থেকে এইভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছিস?’
‘না বাবাঠাকুর।’ বলতে গিয়ে গলা ধরে এসেছিল প্যাকাটির। ঝেড়ে নিয়ে ফের গামছার খুঁটে চোখ মুছল। ‘বেজায় এক ঠেক পেয়েছিলাম গো!’
‘তাই বুঝি?’ বাবাজির চোখ দুটো নেচে উঠল যেন।
‘হ্যাঁ গো ঠাকুর।’ পুরোনো কথা মনে পড়তে খুশিতে প্যাকাটির দু’পাটি দাঁত দু’দিকে কান পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছল। ‘গঙ্গার ধারে এক পোড়ো গুদাম।’
‘সে তো বেড়ে ঠেক রে!’
‘সে আর বলতে! একে তো সরকারি গুদাম। তায় কী করে দুর্নাম রটে যাওয়ায় রাতে তো ছার‚ দিনেও কেউ ধারেকাছে মাড়াত না। চাদ্দিকে ঝুলকালি ‚ মাকড়শা আর চামচিকে বোঝাই সে এক দারুণ আস্তানা গো! তা বাড়তে বাড়তে সংখ্যায় আমরাও হাজার দেড়েকে পৌঁছে গিয়েছিলুম। তবু সমস্যা হয়নি। সবাই কী যে মহানন্দে ছিলাম। দিনভর গঙ্গার হাওয়া। রাত বাড়লেই ভূতের কেত্তন।
ভূতের রাজা দিল বর।
দারুণ জবর এক ঘর।
সবাই গলা ছেড়ে গান ধ…।’
পুরোনো কথা মনে পড়তে আনন্দে স্থানকাল ভুলে গান জুড়েছিল প্যাকাটি। তবে বুঁজে এল একটু পরেই। গামছার খুঁটে ফের চোখ মুছে ধরা গলায় বলল‚ ‘কী মুখ্যু বলুন দিকি! নিত্যি দিন আনন্দে কেত্তন গাই। অথচ এদিকে শিরে সংক্রান্তি হয়ে রয়েছে! হায় হায়!’
‘সে আর বলিসনি। কলকাতায় এখন প্রমোটার–রাজ চলছে রে। পুরোনো বাড়ি সব ভেঙে লাট হতে লেগেছে। তা সে ঠেক প্রমোটারের খপ্পরে গেছে বুঝি?’
‘প্রেমোটার নয় বাবাঠাকুর।’ কাঁদো–কাঁদো গলায় প্যাকাটি বলল‚ ‘খোদ সরকার বাহাদুর। খেয়াল চাপল গঙ্গার ধারে কী নাকি ‘মিলমিল’ পার্ক হবে। ব্যস‚ পোড়ো গুদামের দফারফা হয়ে গেল। ছেনি হাতুড়ি নিয়ে শতখানেক কুলি–মিস্ত্রি বিনা নোটিসে এক সকালে ঝাঁপিয়ে পড়ল সাধের আস্তানার উপর। ধপা–ধাই শব্দে ছেনি আর ইয়া হাতুড়ি। যাকে বলে বিনা মেঘে বজ্রপাত! কী বলব‚ মুহূর্তে চারদিকে হাহাকার হয়ে গেল। হাতুড়ির ঘায়ে মরল কতক। বাকিরা বাপরে–মারে করে যে যেদিকে পারে ছিটকে পড়ল। কেউ গঙ্গা পার হয়ে ওপারে।’
‘তা তুইও তো ওপারেই যেতে পারতিস। মরতে ইদিকে রয়ে গেলি কেন?’
‘এজ্ঞে গিয়েছিলাম ঠাকুর।’ মাথা চুলকে প্যাকাটি জানাল‚ ‘জায়গা মেলেনি। সব ভরতি। তাই ফের এপারে। দিন কয়েক ইনিড (ইডেন) বাগানে। তা সেই বাগানও কি আর আচে? অদ্দেকের বেশি সাফ করে কবেই খেলার মাঠ! বাকি যেটুকুতে এখনও দু’চারটে পছন্দের গাছ টিকে আছে‚ সব ভরতি। অনেক চেষ্টা করেও ঠাঁই হয়নি।’
‘সেই থেকে এই ভবঘুরে অবস্থা?’ ভুরু কুঁচকে উঠল বাবাজির।
‘আজ্ঞে না ঠাকুর। অনেক খুঁজে নেকের (লেক) দিকে জবর এক শ্যাওড়া গাছের খোঁজ পেয়ে সেখানে আস্তানা গেড়েছিলাম।
তাতেও কি শান্তি আচে! হঠাৎ এক ষণ্ডা এসে দখল করার মতলব করেছিল। তা অনেক কষ্টে হটিয়েছিলাম তাকে। রোগা প্যাকাটি হলেও ইস্টিশনে ঢাউস ঢাউস মালপত্র বইতুম কিনা। পারবে কেন?’ গর্বে প্যাকাটির দু’পাটি দাঁত বিস্তৃত হয়ে ফের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেল।
‘তা সেই ঠেক ছাড়লি কেন আবার?’ ভুরু কুঁচকে বাবাজি জানতে চাইলেন।
‘ছাড়লাম কোতায় গো ঠাকুর!’ মাথায় হাত দিয়ে প্রায় হাহাকার করে উঠল প্যাকাটি। ‘দিন কয়েক পর সে গাছ এক কাঠের কারবারির নজরে পড়ে গেল যে! ইয়া মোটা গুঁড়ি কিনা। তারপর হপ্তা পার হবার আগেই নগদ ট্যাকায় সব সাইজ করে এক রাতে করাত–কুড়ুলে সে গাছ সাফ। সেই থেকে ফের ভবঘুরে। কলকেতায় আর থাকার উপায় নেই মোদের।’
‘তা যা বলেছিস।’ বাবাজি নিজেও সামান্য মাথা চুলকোলেন। ‘কলকাতায় সত্যিই তোদের আর থাকার উপায় নেই। এই তো দিন কয়েক আগে একজনের সঙ্গে দেখা।
মাত্র দিন কয়েক হল টেঁসেছে। তা ভেবেছিল
‚ নিজের হাতে তৈরি বাড়ি ‚ থেকে যাবে এক কোণে। তা ভাবাই সার। মাস পার হতে পায়নি। বউ–ছেলে কোত্থেকে জনা কয়েক তান্ত্রিক এনে বাড়িতে তুলকালাম লাগিয়ে দিল। কেজি কয়েক ঘি নাশ করে ঘরের ভিতর যজ্ঞিকুণ্ডু। বেচারা তার মধ্যেও দেরাজের ভিতর সেঁধিয়ে কোনক্রমে দম বন্ধ করে পড়ে ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ষণ্ডামতো একজন হঠাৎ
‘ভাগ হতচ্ছাড়া বেয়াদপ’ বলে হুংকার দিয়ে আগুনে কী কতকগুলো ধাঁ করে ছুড়ে দিল। ব্যস
‚ আর দেখতে হয়নি। বেজায় ছ্যাঁকা খেয়ে
‘বাপরে–মারে’ বলে সেই যে ঘর ছেড়ে পালিয়ে এসেছে‚ আর সেমুখো হয়নি। ছ্যা–
ছ্যা‚ নিজের বউ–ছেলের কিনা এই ব্যাবহার!’ একরাশ দুঃখ ঝরে পড়ল বাবাজির গলায়। কী কারণে ফস করে পিঠের উপর ধুতির কোনা খানিক টেনে দিলেন।
শুনে খানিক যেন ভরসা পেল প্যাকাটি।
বার কয়েক ঠোঁট চেটে মিনমিন করে বলল ‚ এই ভবঘুরে হয়ে আর যে সয় না ঠাকুর।
বেলগাছটায় আস্তানা পেলে বর্তে যাই।’
‘ব্যাটা বেলগাছ এখনো ভুলতে পারিসনি দেখছি! কিন্তু এখানে একটা রাত্তিরও থাকতে পারবিনি বাপু।’
‘কেন‚ কেন ঠাকুর?’ ভুরু কুঁচকে উঠল প্যাকাটির। ‘অন্য কেউ আছে নাকি? তা সেজন্য চিন্তা নেই। শ্যাওড়া গাছের দখল নিতে আসা সেই ষণ্ডাকে যখন হটিয়েছি
‚ এটাকেও পারব মনে হয়। শুধু বাবাঠাকুরের অনুমতির অপেক্ষা।’
‘তা নয় রে হতভাগা। বেলগাছের পাশে ল্যাম্পপোস্টে ইয়া এক বিজলিবাতি রয়েছে দেখিসনি? বিকেলের আগে থেকে পরের দিন সেই আটটা পর্যন্ত কটমট করে জ্বলতে থাকে। রাত হয় না রে!’
‘অ্যাঁ!’ শুনে প্রায় খাবি খেল প্যাকাটি। ‘সেই থেকে ভেবে রেখেছি এই বেলগাছেই আস্তানা নেব এবার। হায় হায়! কপালটাই খারাপ। সেই সুন্দরবনের দিকেই এবার যেতে হবে দেখছি। শুনেছি‚ সেখানে এখনো কিছু থাকার মতো গাছপালা আছে।’
‘এই একটা ভাল বুদ্ধি করেছিস।’ দুই চোখ হঠাৎ জুলজুল করে উঠল বাবাজির। কে বলে তুই মুখ্যু!’
‘বুদ্ধি আমার নয় ঠাকুর। এক মামদোর কাছে শুনেছিলুম। সে আবার শুনেছিল তার এক চাচার কাছে। কিন্তু হদিশ দিতে পারেনি। সেই থেকে খুঁজেই যাচ্ছি। সে ঠেক কোন দিকে জানেন নাকি?’
‘কালীঘাটের ভটচার্যি‚ আমি জানব না!’ বাবাজি একগাল হাসলেন। ‘ওদিক থেকে কত যজমান আসত পুজো দিতে।’
হঠাৎ গড় হয়ে ঠকাস ঠকাস করে বার কয়েক মাটিতে মাথা ঠুকল প্যাকাটি।
‘তাহলে অধমের প্রতি একটু দয়া হোক ঠাকুরের। বেঁচে যাই।’
‘শুধু তুই কেন? বাঁচি আমিও।’ শেষ কথাটা বাবাজি প্রায় স্বগতোক্তির মতো বললেন।
‘কী কইলেন গো ঠাকুর? শুনতে পেলুমনি কিচু।’ ভুরু কুঁচকে উঠল প্যাকাটির।
‘বলছি সুন্দরবন যাওয়ার হদিস।’ বাবাজি তাড়াতাড়ি বললেন ‚ ‘ভাল করে শোন এবার। স্টপেজে বাস আসবে একটু পরেই। সামনে লেখা‚ থুড়ি‚ ওসবে তো আবার লবডঙ্কা—।’
কথা শেষ হতে পেল না। হইহই চিৎকারে এক দঙ্গল ছেলে ক্রিকেট খেলতে ব্যাট আর স্ট্যাম্প হাতে খোলা গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকতে শুরু করল। আর তাই দেখে প্যাকাটির চুল আতঙ্কে খাড়া হবার জোগাড়।
‘বাপরে‚ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসতেছে! পিটিয়ে মারবে গো!’ বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে প্রায় উদভ্রান্তের মতো ছুটে পালাতে যাবে‚ কলার খোসায় পা পিছলে ধপাস। তারপর হাত–পা ছুঁড়ে পরিত্রাহি চিৎকার।
প্যাকাটির ওই অবস্থা দেখে বাবাজি হাঁফ ছাড়তে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ স্ট্যাম্প হাতে এক ছোকরা চেঁচিয়ে উঠল‚ ‘আরে‚ আরে সেই মিস্টীরিয়াস টিকিওয়ালাটা! সেদিন তাড়া খেয়ে বেলগাছে উঠেই ধাঁ হয়ে গিয়েছিল। ধর ব্যাটাকে।’
‘অ্যাঁ!’ বেজায় ঘাবড়ে গিয়ে বাবাজি পিছন ফিরে একবার তাকালেন। ছেলেদের সেই রুদ্রমূর্তি দেখে বুঝতে বাকির রইল না
‚ বাগে পেলে প্যাকাটি নয়‚ ছয় পেটাবে তাকেই।
‘বাপরে!’ বলে বাবাজি আর দেরি করল না। প্রায় ছোঁ মেরে প্যাকাটিকে বগলদাবা করে রেলিং টপকে ছুটল ঊর্ধ্বশ্বাসে।
ওদিকে হঠাৎ এই কাণ্ড দেখে প্যাকাটির চিৎকার ততক্ষণে থেমে গেছে। বাবাজির বগলে ঝুলতে ঝুলতে থতমত খেয়ে বলল‚ ‘ও ঠাকুর‚ তুমিও আমার দলের! বেলগাছের ব্রেহ্মদত্তি!’
‘নিকুচি করেছে ব্রেহ্মদত্তির।’ ছুটতে ছুটতে হাঁসফাঁস করে বাবাজি উত্তর দিলেন
‚ ‘সব সমান রে এখন। বিলকুল সমান।’
‘তা কোতায় যাচ্ছ গো ঠাকুর?’
‘কোথায় আবার? সেই সুন্দরবন। নিজের বউ–ছেলে বাড়ি থেকে ছ্যাঁকা দিয়ে খেদিয়েছে। জুতসই এক বেলগাছ পেয়েছিলাম। দেখলি তো ‚ তাও সইল না। কলকাতায় আমাদের আর ঠাঁই নেই রে।’
………………………………………………(সমাপ্ত)………………………………………………