অভিশপ্ত সে একদিনে

অভিশপ্ত সে একদিনে

সকালবেলা রোজকার মতোই তৈরী হচ্ছি কাজে বেরোবার জন্য . মনটার মধ্যে একটা অসম্ভব রকম তোলপাড় চলছে . চলবেই তো . আজই তো সেই দিন . 29 শে ফেব্রুয়ারি . আজই তো কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটার কথা .
আমার মাকে বহুবার বহু জোতিষী বলেছেন তার 50 তম জন্মদিনটা নাকি তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন হবে . তাই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি মা বারবার নিজের 50 তম জন্মদিনের কথা ভেবেই কেমন যেন শিউরে ওঠেন .
দেখতে দেখতে সত্যি আজ সেই দিনটা এসে পড়েছে আমাদের জীবনে . দুশ্চিন্তায় গত দুই রাত ঘুমাতে পারেন নি মা . আর আমিও . আসলে আমি সব সময় সব কিছুতেই অনেকটা বেশি ভয় পেয়ে যাই আর যথারীতি এইবারও তার ব্যত্যয় হয়নি .
গাড়ি স্টার্ট দিতে যাচ্ছি , এমন সময় ডাকটা উড়ে এলো
– ” বাবু ,একটু দাঁড়া . আমিও যাবো . আমায় একটু মন্দিরে ছেড়ে দিবি ” ?
আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম . মা এগিয়ে এলো .গাড়ির সামনের দরজা খুলে বসল আমার পাশে .
দেখলাম মা’র মুখটা থমথমে . এ. সি গাড়িতে ও মা ঘামছে দরদর .
– ” কি হয়েছে মা ” ? মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করলাম আমি .
– ” জানিস কাল রাতে হঠাৎ আধ ঘন্টার জন্য চোখ টা লেগে গেছিলো আর তখনি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখলাম তোর দাদা আর বৌদিকে নিয়ে ” .
– ” কি স্বপ্ন মা ” ? কাঁপা গলায় বললাম . আমি টের পাচ্ছি আবার আমার বুকের কাছে পাক দিয়ে উঠছে সেই আতঙ্কটা .
– ” দেখলাম যে বুবু অফিস যাচ্ছে আর ঠিক তখনি বড় একটা ট্রাকের সাথে ওর গাড়ি …” না আর বলতে পারলেন না . আর আমিও অনুভব করলাম একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেলো আমার শিরদাঁড়া বেয়ে .
আসলে আমি যে জানি এই বছরটা দাদার জন্য খুব খারাপ . ওর নাকি বড় দুর্যোগ আছে এই বছর .
– ” ও . এই ব্যাপার . তুমি দাদাকে ফোন করে নাও না মা . দাদা তো অনেক সকালে বেরিয়েছে . এতক্ষনে পৌঁছে গেছে নিশ্চয় অফিস ” . যথাসম্ভব নিজের উদ্বেগ চেপে রেখে বললাম .
– ” ফোন অনেকবার করেছি রে . কিন্তু ও ধরছে না ” . দুশ্চিন্তায় কালো দেখাচ্ছে মায়ের মুখটা
– ” আরে মা ,চিন্তা কর না. হয়তো ব্যস্ত আছে ” . মাকে শান্ত করতে চেষ্টা করলাম আমি . কিন্তু নিজের মধ্যে যে আস্তে আস্তে মাথা চাড়া দিচ্ছে সেই ভয়টা তা টের পেলাম ভালোই .
– ” আচ্ছা আমি করে দেখছি আর একবার ফোন ” . একহাতে স্টিয়ারিং চেপে অন্য হাতে মোবাইল নিয়ে দাদার নম্বর ডায়াল করলাম .
ক্রিং ক্রিং করে ফোন বাজছে .বাজতে বাজতে কেটেও গেলো একসময় .
দাদা তো সচরাচর এমন করে না . কখনো ফোন ধরতে না পারলেও রিং ব্যাক করে অল্প ক্ষণের মধ্যেই . তাহলে আজ কি হলো ?

আমার ভিতরের তোলপাড়টা আরও জোরদার হলো . তাহলে কি সত্যি দাদা ….
বুকের রক্ত চলকে উঠলো আমার . ব্যস্ত হাতে আর একবার ডায়াল করলাম দাদার নম্বর .
এবারও এক ব্যাপার . ফোন ধরলো না দাদা . মা দেখছি আতঙ্কে কুঁকড়ে যাচ্ছেন একটু একটু করে . আর সাথে আমিও .
পাগলের মত বার বার ডায়াল করতে লাগলাম দাদার নম্বর .
না আর মাথা কাজ করছে না আমার . আর মাথা কাজ করছিল না বলেই বোধহয় আমি বুঝতেও পারলাম না সামনে থেকে ধেয়ে আসা যমদূতের মত লরিটাকে পাশ কাটাতে হবে আমাকে .
না আমি বুঝতে পারলাম না . শুধু শুনতে পেলাম কান ফাটানো তীব্র একটা শব্দ , অনুভব করলাম তীব্র একটা ঝাঁকুনি আর ঠিক তখনি চোখের সামনে নেমে এলো শুধু একরাশ ঘন কালো অন্ধকার .
******
চোখ খোলার পরই বুঝতে পারলাম আমি একটা অচেনা জায়গায় শুয়ে আছি . বোধয় কোনো নার্সিং হোম . তবে খুব ভালো কোনো নার্সিং হোম মনে হলো না . একটু সস্তারই . কেমন যেন মলিন . মনে পড়ে গেলো আমারই অসাবধনাতায় ঘটে যাওয়া ওই বীভৎস এক্সিডেন্ট টার কথা .
আর অমনি ভয়ে দম টা বন্ধ হয়ে এলো আমার . মা কোথায় ? মা ও তো ছিলেন আমার সাথে গাড়িতে . আর আমায় এখানে আনলোই বা কে . কিন্তু কাকে জিজ্ঞাসা করবো এসব ? কাউকে তো আশেপাশে দেখতেই পাচ্ছি না .
– ” কেউ আছেন ? একবার একটু আসবেন দয়া করে “. একটু গলা তুলেই ডাকতে চেষ্টা করলাম .
আমার গলা পেয়েই বোধহয় ঘরে এলেন একজন অচেনা মহিলা .
– ” আমি মানে আমাকে এখানে কে আনল ” ? কোনোমতে প্রশ্নটা করলাম ওই মহিলাকে .
– ” আপনার গাড়ি এক্সিডেন্ট এর পর আমরাই নিয়ে এসেছি আপনাকে ” . অদ্ভুত ঘড়ঘরে স্বর মহিলার .
– ” আর আমার মা ? উনিও তো ছিলেন আমার সাথে “. প্রায় আঁতকে ওঠার মত করে বললাম আমি .
এবার একটু কালো দেখালো ওনার মুখটা .
মাথা নিচু করে বললেন
– ” ওনাকে আনিনি . কারণ ওনাকে এনে লাভ হতো না . উনি তো আর আপনার মতো ” …..
– ” কি বলছেন কি আপনি ?,না এটা হতে পারে না “. তীব্র আর্তনাদ করে উঠলাম আমি .
– ” আপনি প্লিজ শান্ত হন . দেখুন আমি বুঝতে পারছি . কিন্তু পরপারের হাতছানি তো এড়ানো পারে না কেউই . চিরকাল কে আর মা এর সাথে থাকতে পারে বলুন . তবে আপনি চিন্তা করবেন না . আমি আপনার বাকি বাড়ির লোকদের খবর দিয়েছি . তারা এসে যাবেন অল্প সময়ের মধ্যেই . ততক্ষন আমি রয়েছি আপনার সাথে . আমার নাম চিত্রা. আমি এখানকার কেয়ার টেকার ” .

– ” মা … মা …” ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি . আর ঠিক তখনি লক্ষ্য করলাম দরজার ওপার থেকে ঝট করে সরে গেলো একটা ছায়া শরীর .
– ” কে ওখানে ” ? বলেই দৌড় লাগলাম দরজার বাইরে . নিমেষে ভুলে গেলাম শরীরী সব ব্যাথা .
বাইরে এসে দেখতে পেলাম মূর্তিটাকে . আমার খুব চেনা . খুব কাছের . আমার মা .
কি অদ্ভুত লাগছে মাকে . কি ভীষণ আলুথালু . বিষন্ন .
আমি দৌড়ে যেতে গেলাম মায়ের কাছে . কিন্তু পারলাম না . তীব্র একটা ধাক্কা খেয়ে ছিটকে গেলাম . বুঝতে পারলাম একটা অদৃশ্য অথচ শক্ত আর দুর্ভেদ্য স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল দাঁড়িয়ে আছে আমার আর মায়ের মাঝে .
তা তো হবেই . আমি আর মা যে এখন আলাদা জগতের বাসিন্দা .

” না … না … না … ” যন্ত্রনা আর অসহায়তা মেশানো একটা বিকট চিৎকার বেরিয়ে এল . হঠাৎ আমার মাথার ভিতর কেমন যেন সব তালগোল পাকিয়ে গেলো . আমি হুট্ করে পাগলের মত এলোপাথারি একটা ছুট লাগলাম দানোয় পাওয়া শক্তির মত
শুনতে পেলাম থতমত খেয়ে চিৎকার করছে ঐ চিত্রা নামের মহিলা

– ” কি হলো ? আরে ! এভাবে দৌড়ে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছেন ? আপনার লোক জনেরা এল বলে ” .
চিত্রার কথায় কোনো দৃকপাত করলাম না আমি . আমাকে এক্ষুনি পৌঁছতেই হবে বাড়ি .
প্রায় ছুটতে ছুটতেই নার্সিং হোম চত্বর ছেড়ে বড় রাস্তায় এসে পড়লাম আমি .
ছুটছি এলোপাথাড়ি বাড়ির দিকে . আমাকে এক্ষুনি বাড়ি পৌঁছতে হবে . পৌঁছতেই হবে .

মনের ভিতরটা হুহু করছে আমার . এই ছিল তাহলে আমাদের অভিশপ্ত দিন , যার কথা ভেবে বহু বছর ধরে বারবার শিউরে উঠেছি আমরা সকলে বারবার .
তাহলে মায়ের পঞ্চাশতম জন্মদিনে মায়ের সাথেই এটা হবার ছিল !! তাও কিনা আমারই হাতে !
আর দাদা ! ও ঠিক আছে তো ? ও সকালে কেন ফোন ধরছিল না ? ও ফোন ধরছিল না বলেই তো ……
আতঙ্ক , ভয় , উদ্বেগ , কষ্ট সব মিলিয়ে একটা অসহ্য যন্ত্রণার অনুভূতি হচ্ছে আমার . উফফফ !! আমি কি করে সহ্য করবো এই কষ্ট ?

একটা কোলাহল এ একটু থমকে গেলাম আমি . ছুটতে ছুটতে কখন যেন বাড়ির কাছাকাছি চলেই এসেছি , সেটা খেয়ালই করিনি .
কোলাহল টা আমার বাড়ির দিক থেকেই আসছে . অনেক লোকজনের ভিড় আমার বাড়িটাকে ঘিরে .
বুঝতে পারছি সবাই শোক জ্ঞাপন করতেই এসেছে বোধহয় .
বুকে একরাশ যন্ত্রনা নিয়ে ভিড়ের ফাঁক ফোকর গলে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম .
সামনেই রাখা রয়েছে সাদা চাদরে আপাদমস্তক ঢাকা মৃতদেহটা .
আর ঠিক তার সামনেই বসে অঝোরে কাঁদছে দাদা . আর বৌদি সান্ত্বনা দিচ্ছে ওকে . যাক তাহলে দাদা অন্তত ঠিক আছে .
একটু দূরে চেয়ারে আচ্ছন্নের মত বসে রয়েছে বাবা . দু চোখ উপচে জল .
আমি এগিয়ে গিয়ে দাদার পাশে বসলাম . আলতো হাত রাখলাম ওর কাঁধে . এখন তো পরিবারের সকলকেই থাকতে হবে একে ওপরের পাশে .
না , দাদার যেন কোনো হুঁশ নেই . দেখতেই যেন পেলো না আমাকে . শুধু কেঁদেই চলেছে . সেতো স্বাভাবিক . আমি তো বুঝতে পারছি ওর বুকটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে আমারই মত .

– ” মুখটা এভাবে ঢেকে রেখেছে কেন গো ” ? কে যেন বললো ভিড়ের মধ্যে থেকে .
– ” আরে মুখ মাথা সবতো থেঁতলে গেছে শুনলাম . সত্যি ভাবাই যাচ্ছে না . ঘটনার দিন সকালেও তো দেখেছিলাম জলজ্যান্ত মানুষটাকে . ইস ! একই গাড়িতে তে তো ছিল দুজনে . একজন বাঁচলো আর একজন …. দু দিনেই যেন সংসারটা শ্মশান হয়ে গেলো গো ” …

পাড়ার রাখী কাকীর কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি . দুর্ঘটনার পর দুটো দিন কেটে গেছে . আর আমি কিছু টেরই পাইনি . অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম নার্সিং হোম !

– ” এবার তো বেরোতে হবে আমাদের . বিনয় দা আর যে দেরি করে লাভ নেই . কাঁচের গাড়ি ওয়েট করছে অনেকক্ষন ” . কথাগুলো বড় মামা বললেন বাবাকে. কিন্তু বাবা যেন পাথরের মূর্তি .
সবাই আস্তে আস্তে তুলছে দেহটা . আমিও হাত লাগলাম চোখ মুছতে মুছতে ..

– ” না .. না … নিয়ে যাবে না .. এটা হতে পারে না ” … হঠাৎ বাজের মত আছড়ে পড়লো আর্তনাদটা . আমি চমকে তাকালাম পিছন ফিরে .
মা এদিকেই ছুটে আসছে পাগলের মত মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ . চোখ মুখফোলা . গলায় আঘাতের চিহ্ন .

আমার সারা শরীরে ভয়ের স্রোত খেলে গেলো . এ কি দেখছি আমি ?
মা কি করে আসতে পারেন এখানে ? ও দুনিয়ার লোক এ দুনিয়ায় যে আসতে পারে না . আর কেউ যদি ও দুনিয়ায় চলে যাবার পর এখানে ফিরেও আসে তাকে যে কি বলে …….

ভয়ে কেমন সব গুলিয়ে গেলো আমার . বাইরে হঠাৎ কেমন যেন মেঘ করেছে বলে মনে হলো .

– ” একবার .. শেষবারের মত একটিবার দেখবো আমি “….

মা প্রায় উন্মাদিনীর মত ছুটে গেলো লাশের দিকে . কেউ কিছু করার আগেই এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো লাশের মুখের ঢাকা

– ” আআআ ” … একটা বীভৎস চিৎকার বেরিয়ে এলো আমার গলা চিরে .

উফফফ ! কি ভয়ানক কদর্য ওই লাশের থেঁতলে যাওয়া মুখটা . কিন্তু ওটা তো মা নয় . ওটা তো অন্য কেউ . তবে একেও চিনি আমি . অনেকবার দেখেছি আমি . দেখেছি আমার আয়নার ওপারে . হ্যাঁ , এই লাশটা তো আমারিই . চিনে নিতে ভুল হয়নি একটুও .

ভয় , আতঙ্ক সব মিশিয়ে একটা পাগলের মত অনুভূতি হচ্ছে আমার .

আরে !! এটা কি করে হতে পারে ? আমি তো এখানে জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে . তাহলে কি করে এটা আমার লাশ হতে পারে .

– ” আমি মরিনি . বেঁচে আছি . এই তো দেখো তোমরা “. গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলাম . কিন্তু কেউ শুনলেই না .

আমায় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে লাশ নিয়ে এগিয়ে গেলো সবাই .

আমি পাগলের মত ছুটে গেলাম . দাদার কনুই ধরে এক টান মারলাম .

– ” দাদা … দাদা শোন “….. না শুনলো না দাদা . বুঝতেই পারলো না কিছু .

পাগলের মত সবার সামনে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করলাম

– ” আমি বেঁচে আছি . বিশ্বাস কর . ”

– “দাদুভাই … ” হঠাৎ চমকে উঠলাম পিঠে চেনা হাতের স্পর্শে .
পিছন ফিরে তাকাতেই যেন হাই ভোল্টেজ শক খেলাম .

ঠাম্মি এসে দাঁড়িয়েছে . হাসছে মিটিমিটি . আর ঠিক পাশেই দাদু .

কিন্তু … কিন্তু এটা কি করে হতে পারে ? ঠাম্মি তো তিন বছর আগে মারা গেছিলো আর পাঁচ বছর আগে দাদু .

– ” তোমরা ?? তোমরা তো “…বিস্ময়ে মুখ থেকে কথা সরছে না আমার .

– ” আমরা যে তোকে নিতে এলুম রে … চিত্রার খবর পেয়ে “…

– ” আমায় নিতে এলে মানে ? চিত্রা কে ” ?

ফোকলা দাঁতে হাসছে এবার ঠাম্মি .

– ” ওরে চিত্রাকে ভুলে গেলি এর মধ্যে ? তোর সাথে আলাপ হলো যে … চিত্রাই তো ওপারের পৃথিবীর দরজার কেয়ার টেকার ” .

– ” এসব কি বলছো আজেবাজে “… চেঁচিয়ে উঠলাম আমি .

– ” তবে শোন , তোর মায়ের পঞ্চাশতম জন্মদিনের অভিশপ্ত ফারা মুক্তি ঘটেছে তোর মৃত্যু দিয়েই . সেদিনের সেই এক্সিডেন্ট টায় তোর মা বেঁচে গেলেও তুই মারা গেছিলি তখনই . সেই জন্যই তো চিত্রার লোকরা তোকে নিয়ে গেছিলো ওই দুনিয়ার দরজায় .
কিন্তু তুই আবার পালিয়ে এসেছিস . অবশ্য প্রথম প্রথম এমন হয় . আমাদের হত . এতো দিনের সংসার আর জগতের মায়া কাটান কি আর সহজ রে …. কিন্তু এবার যে ফিরতে হবে দাদুভাই ” .

হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ঠাম্মি আমার দিকে. সেই ছোটবেলার মত . আমিও আস্তে আস্তে বাড়িয়ে দিলাম নিজের হাত .

আমি ঠাম্মি আর দাদু এগোচ্ছি একটু একটু করে . শুনতে পাচ্ছি এখনো আকুলি বিকুলি করছে মা . ক্রমেই ফিকে হয়ে আসছে মায়ের কান্না আমার এগোনোর সাথে সাথে .
আমার সামনে দিয়েই হুশ করে চলে গেলো শববাহী গাড়িটা আমার লাশ নিয়ে .
আমি এগিয়ে চলেছি অজানা ঠিকানার দিকে , মরণের পরের জীবনটার দিকে .

পিছনে পড়ে রইলো আমার বাড়িঘর , পরিবার , স্বপ্ন আরও কত কিছু .

– ” কিরে ভয় করছে নাকি ” ? বললো দাদু .

– ” না ” . ছোট করে বললাম আমি . জানি সত্যি ভয় পেয়ে লাভ নেই . অনিবার্য এই ঠিকানায় যে একদিন পাড়ি লাগাতে হবে সবাইকেই .
মাত্র কয়েকটা দিনেরই তো অতিথি আমরা সবাই ওই পৃথিবী নামক জায়গাটার . তবু তারই মধ্যে কেন যে এতো খেয়োখেয়ি , হিংসাদ্বেষ কে জানে !!!

…………………………………………..  (সমাপ্ত)  …………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত