আমার দাদি প্রায় আমাদের ভাইবোনদেরকে নানা গল্প বলতেন। সেদিন আমারা সবাই দাদির কাছ থেকে গল্প শোনার বায় না করলাম। দাদির চারিদিকে ঘিরে বসলাম আমি, মিনা, মাহি,কনা,রুনা,ছবি,মৃধা,স্নিগ্ধা,রাজু সাজু আর রবি। আমরা সবাই চাচাতো ভাইবোন।
যাইহোক দাদি বলতে শুরু করলেন। তাল আর তেতুল গাছের কাহিনী। দাদির আমলের পুরোনো লোকেরা সবাই বলে তাল তেতুলে নাকি কথা কয়। দাদি আমাদেরকে তার বাপের বাড়ির পুকুরপাড়ের তাল আর তেতুল গাছের গল্প বললেন।
দাদির বাপের বাড়ি পার্বতীপুর। আগে সেখানে এলো মেলো ছড়ানো কিছু বাড়ি আর গাছ গাছালি ছাড়া বাকি সব ছিল পুকুর আর জঙ্গল। দাদিদের বাড়ির পাশেও ছিল একটা পুকুর। পুকুরটার নাম ছিল তাল পুকুর। অনেক বড় পুকুর ছিল এটা। কিনারাতেই ঠাই দেওয়া ছিল কষ্টকর। আর মাঝে তো কোনো কথাই নেই।
এই পুকুরের পাশে একই জায়গাতে একটি তালগাছ আর একটি তেতুল গাছ ছিল। সম্ভবত তালগাছটির গোড়ায় তেতুলের আটি পড়ে সেখানে একটা তেতুল গাছ জন্মেছিল। এই গাছদুটো হাজার ঝড়েও ভাঙতো না। পুকুরপাড়ের অন্য গাছগুলো ঝড়ে কেমন নুইয়ে পড়ত কিন্তু এই তাল আর তেতুল গাছের কখনো কোনো সমস্যা হত না। একবার দাদিদের বাড়ির পাশের এক বউ ঠিকদুপুরে এই পুকুরে কাপড় কাচতে এসেছিল। সে নাকি তখন তাল আর তেতুল গাছের কথা শুনতে পেরেছিল। সেতো ভয়ে হাউ মাউ করে কাদতে কাদতে বাড়ি দৌড় দিল।
আবার এমনও হয়েছে কেউ কেউ রাতদুপুরে আর দিনদুপুরে কোনো সাদা পোষাক পরা মেয়েকে দেখেছে এই গাছদুটোর আড়ালে যেতে। পরে অদৃশ্য। আবার কখনো কখনো কৃষকরা এই পুকুরপাড়ের পথ দিয়ে যাবার সময় তাল আর তেতুল গাছের মধ্যে কথপোকথন শুনতো। তারা নাকি গল্প করতো,হাসতো।
দাদির এসব কথা শুনে আমাদের মনে পড়ে গেল জমিদার বাড়ির ঐ ভূতুড়ে পুকুরের কথা। ওখানেওতো তাল আর তেতুল গাছ একসাথে রয়েছে!!!