আমাদেরই এক বন্ধু সিহাব গিয়েছিলো তার গ্রামের বাড়ি শ্রীপুরে।। সেখান থেকে এসে সে আমাদের এক রোমহর্ষক ঘটনা শোনালো।। ঘটনাটা ঐ গ্রামের এক মাঝবয়সী লোককে নিয়ে।। উনার নাম ছিল মন্নান মিয়াঁ।। ছিলো বলছি কারন লোকটা এখন জীবিত নেই।। সে যাই হোক, আমাদের এই ঘটনার মূল অংশ মন্নান মিয়াঁকে নিয়ে।। মন্নান মিয়াঁ শ্রীপুর গ্রামের স্থানীয় কেউ নন।। বছর পাঁচেক আগে গ্রামে এসেছিলেন ঘু…রতে ঘুরতে।। এ…রপর গ্রামের লোকজন তাকে পছন্দ করে ফেলে।। একটা ঘরও তুলে দেয়া হয় তার জন্য।। লোকটা খুবই মিশুক প্রকৃতির ছিল।। কারো যেকোনো সাহায্যে তাকে ডাকলেই সাড়া দিতো।। গত ২০০৯ সালের গ্রীষ্মের এর দুপুরে মন্নান মিয়াঁ মারা যায়।। লোকমুখে শোনা যায়, ঐদিন বাজার করে এসে মন্নান হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।। বারবার বলতে লাগে, রাস্তায় তার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে।। কিন্তু সেই খারাপ কিছুটা কি তা সে পরিষ্কার করে বলতে পারেনি।। তার আগেই সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।। তার লাশ সেদিনই দাফন করে দেয়া হয়।। গ্রাম্য রীতি অনুযায়ী, মানুষজন তাদের কবরস্থানে শুধু নিজেদের ফ্যামিলি মেম্বারদের জন্যই জায়গা রাখেন।। মন্নানের সেই গ্রামে কোন পরিচিত ছিল না বিদায় তার কবর দেয়া হয় রাস্তার পাশেই একটা বেল গাছের নিচে।। তার মারা যাওয়ার কারন কেও আবিস্কার করতে পারেনি।। হয়তো পারেনি।। আমি হয়তো বলছি কারন মূলত এখান থেকেই আমাদের কাহিনী শুরু হতে যাচ্ছে।।
আমার এক বন্ধুর নাম জাবেদ।। আমাদের মাঝে ও বলতে গেলে দুঃসাহসী।। জীবনের একটা বড় সময় সে প্যারানরমাল একটিভিটি নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছে।। বেচারার খুব কষ্ট যে, জিন-ভুত কিছুই কখনও তার দেখা হয়নি।। সিহাবের কাছে ঘটনাটা শুনেই সে লাফিয়ে উঠলো।। যে করেই হোক তাকে সেখানে জেতেই হবে।। এর পিছনে একটা বড় কারন ছিল সিহাবের শেষ কথাটি।। মন্নান মিয়াঁর কবরের রাস্তায় নাকি প্রায়ই রাতের বেলা কাউকে বসে থাকতে দেখা যায়।। কয়েকজন তো হলপ করে বলেছে তারা মন্নান মিয়াঁকে দেখতে পেয়েছে।। এরচেয়ে ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হল, মন্নান মিয়াঁর কবরের উপর নাকি একটা কুকুরকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।। কুকুরটা কোথা থেকে আসে, রাত শেষে কোথায় যায়, তা আজও কেউ জানতে পারেনি।। এমনকি দিনের বেলা কুকুরটাকে কেউ কখনো দেখেও নি।। প্রতি পূর্ণিমা রাতে কুকুরটা মন্নান মিয়াঁর কবরের পাশে বসে কাঁদে।। যারা রাতের বেলা গ্রামের বাজার থেকে আসেন তারা অনেকেই ঐ কুকুরকে দেখেছেন।। মন্নান মিয়াঁর কবর যেই রাস্তায় ঐ রাস্তাটা এখন প্রায় বন্ধের উপক্রম।। এই কথাগুলোই আসলে জাবেদের মাথাটা খারাপ করে দিলো।। সিহাবের এক কথা।। সে কোন অবস্থাতেই জাবেদ কে নিয়ে যাচ্ছে নাহ।। জাবেদ অনেকটা নাছোড়বান্দা পাবলিক।। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষমেশ সিহাবকে রাজি করলো যাওয়ার ব্যাপারে।। আমার নিজেরও যাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সেই সময় মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিলো দেখে যাওয়া সম্ভব হয়নি।। যাই হোক, জাবেদের প্ল্যান ছিল পূর্ণিমা রাতে উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা।। এতে কুকুরটার দেখা পাওয়া যাবে, পাশাপাশি ছবি তোলার জন্য ভালো আলোও থাকবে।।
বাংলা ক্যালেন্ডার দেখে সময় নির্ধারণ করে রওনা দিলো তারা।। তারা মানে, জাবেদ আর সিহাব।। সাথে আর ২জনের যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২ জনই যাওয়া বাদ করে দেয়।। পারিবারিক কিছু ঝামেলার কারনেই ২জনের যাওয়া বাতিল হয়ে যায়।। সে যাই হোক, জাবেদরা নির্দিষ্ট সময়েই গ্রামে পৌঁছায়।। আদর আপ্যায়নে তাদের বরন করে নেয় সিহাবের আত্মীয়স্বজনরা।। মোটামুটি ফ্রি হবার পর জাবেদ, সিহাবের ছোট কাকাকে খুলে বলে আসার আসল উদ্দেশ্য।। শুনে ছোট কাকা কিছুটা গম্ভির হয়ে যান।। শেষমেশ জাবেদ আর সিহাবের প্রবল অনুরোধের মুখে নতি স্বীকার করতে হয় তার।। যাওয়ার অনুমতি দেন তিনি কিন্তু সাথে তার দেয়া পরিচিত একজনকে নিয়ে যেতে হবে।। জাবেদ চাচ্ছিল একাই যেতে।। কারন এইসব ব্যাপারে বেশি মানুষ থাকলে নাকি “প্যাঁচ” লেগে যেতে পারে।। কিন্তু ছোট কাকার শর্ত একটাই।। হয় সাথে তার দেয়া গাইড যাবে নাহলে যাওয়া বাতিল।। অগত্যা জাবেদকে রাজি হতেই হল।।
সেদিন ছিল রবিবার।। সন্ধার পর পরই আকাশ উজ্জ্বল করে পূর্ণিমার চাঁদ উঠলো।। চাঁদের আলোতে চারপাশে যেনও আলোকিত হয়ে উঠলো।। বিপত্তি শুরু হল ঠিক তখনি।। সিহাব তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে দরজার চৌকাঠে ধাক্কা খেলো।। সাথে সাথে মাথা ধরে বসে পড়লো।। হাত সরাতেই দেখে গেলো ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে।। বাসা ভরতি মানুষের মধ্যে হট্টগোল বেঁধে গেলো।। একে তো গ্রাম অঞ্চল, তার উপর এখনও ফ্রিজ জিনিসটা এতোটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি।। সিহাবকে ধরাধরি করে নলকূপের পাড়ে নিয়ে যাওয়া হলে।। প্রায় ২০ মিনিট লাগলো রক্ত বন্ধ হতে।। এদিকে জাবেদ তো টেনশনে মারা যাচ্ছে।। শেষমেশ বুঝি যাওয়াটাই বাতিল হয়ে গেলো!! ঐ অবস্থায় সিহাবের পক্ষে যাওয়া একদমই সম্ভব ছিল নাহ।। কিন্তু জাবেদ কাকাকে বলে তার নিজের যাওয়া নিশ্চিত করে নিলো।। সাথে থাকবে গাইড রতন আলী।। (অনেকেই হয়তো ভ্রু কুঁচকাতে পারেন যে, চেনা নেই জানা নেই একটা ছেলেকে ঐ অবস্থায় তার বাসা থেকে কিভাবে বের হতে দিলো?? তাও যখন ছেলেটা তাদের অথিতি।। ভাই, জাবেদকে আমি চিনি।। সে যদি বলে সে যাবে তাহলে তাকে আটকানো কারো পক্ষেই সম্ভব নাহ।। এমনকি সে তখন নিজের বাবা মার কথাও শুনবে নাহ।।)
রতন আলী ঐ গ্রামের সবচেয়ে সাহসী মানুষদের মাঝে একজন।। ছোট কাকা রতনকে বুঝিয়ে দিলেন যেনও কোন অবস্থাতেই জাবেদকে ফেলে চলে না আসে।। গ্রামে ছোট কাকার ভালো প্রতিপত্তি ছিল।। রতন আলী নিজের বুকে চাপর দিয়ে বলল, সে কাউকে ভয় করে নাহ।। ভুতের ভয় তার নেই।। বরং শহুরে ভাইয়ের সাথে সেও আজকে দেখবে কিসের ভূত, কার ভূত!!
রতনের হাতে একটা ব্যাটারি চালিত টর্চ লাইট।। জাবেদ ঢাকা থেকেই একটা শক্তিশালী টর্চ আর একটা ভালো মানের ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে যায়।। ক্যামেরাটা গলায় ঝুলিয়ে, টর্চটা হাতে নিয়ে হাঁটতে লাগে সে।। পাশেই রতন আলী।। রতন তাকে গ্রামের বিভিন্ন ঘটনা জানাতে লাগলো।। কোন বাড়ির কে কবে কার হাতে খুন হয়েছে, কে কোথায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে এইসব।। জাবেদের বিরক্ত আর ভয় দুটোই লাগছিল( ভয় লাগার ব্যাপারটা আমার অনুমান, কারন সে যখন গল্পটা বলছিল তখন বলেছিল তার শুধু বিরক্ত লাগছিল আর অদ্ভুত একটা অনুভুতি হচ্ছিল।। আমি ধরে নিয়েছিলাম সেই অনুভূতিটা ভয়)।।
বাড়ি থেকে জায়গাটার দূরত্ব ২ মাইলের মত।। গ্রামের নিরবতায় নাকি ভূত দেখার টেনশনে কে জানে, জাবেদের ভীষণ বাথরুম চাপল।। রতন আলীকে সে টর্চটা ধরতে বলে নিজে গেলো একটা গাছের নিচে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে।। কাজ শেষ করে ফিরে এসে তারা আবার হাঁটতে লাগলো।। কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটার পর হটাৎ রতন আলী জাবেদ কে জিজ্ঞেস করে বসলো, মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে কতটা কি জানে সে।।
জাবেদ একটু চমকে গেলো।। কারন কিছুক্ষণ আগে যেই গলায় রতন আলী কথা বলছিল তার সাথে এখনকার গলা যেনও একটু অমিল লক্ষ্য করা যায়।। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে সে বোঝার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা কি আসলেই তাই নাকি তার দুর্বল মনের চিন্তা।। জাবেদ মন্নান মিয়াঁ সম্পর্কে যা জানত তা বলল রতন আলীকে।। শুনে রতন আলী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“মন্নান মিয়াঁ কেমনে মারা গেছে জানতাম চান??” (রতন আলীর কথা গুলো গ্রাম্য ভাষায় লেখা হল, আমি যখন গল্পটা শুনছিলাম তখন জাবেদও রতন আলীর কথা গুলো গ্রাম্য টানেই বলছিল।। এটা একটা রহস্য।। কারন জাবেদ ঐ গ্রামে মাত্র ২দিন ছিল।। তার পক্ষে এত ভালো ভাবে ভাষাটা রপ্ত করা সম্ভব নাহ।। যাকগে, আমরা গল্পে ফিরে যাই)
জাবেদ কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “কিন্তু সবাই যে বলে মন্নান মিয়াঁর মৃত্যুর কারন কেউ জানে নাহ!!”
রতনঃ “তারা জানে নাহ।। কারন মন্নান তাগর কাউরেই কইতাম চায় নাই।।”
জাবেদঃ “তাহলে তুমি কিভাবে জানো??”
রতনঃ “মন্নান আমার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড আছিল।।”
“মরার আগে কি তোমার সাথে তার কথা হয়??”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রতন বললঃ “আপনি আসল ঘটনা জানে চান??”
জাবেদের এই প্রথম গায়ে একটু কাঁটা দিয়ে উঠলো।। তবুও সে উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, তুমি যদি জানো তাহলে বলতে পারো।। আমার নিজেরও এটা জানার খুব ইচ্ছে।।”
(এরপর রতন আলী জাবেদকে যা বলল তা আমি একটু সাজিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম)
যেদিনের ঘটনা সেদিন সকালে মন্নান মিয়াঁ তার সপ্তাহের বাজার করতে যায়।। বাজারে পরিচিত মানুষজনের সাথে দেখা সাক্ষাত করে এবং নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে সে রওনা হয় বাসার দিকে।। পথিমধ্যে একটা কবর পড়ে ঐ রাস্তায়।। অনেকেই বলে ঐ কবরে নাকি মাঝে মাঝে এক বৃদ্ধকে দেখা যায়।। আবার অনেকে বলে ঐ কবর থেকে রাতের বেলা নানা রকম আওয়াজ আসে।। কে বা কারা কান্না করে, সেই আওয়াজ নাকি পাক খেয়ে খেয়ে বাতাসে ভাসে।। মন্নান মিয়াঁ এইশব ব্যাপারে তেমন পাত্তা দিতো নাহ।। সেদিন আসার পথে হটাৎ তার ভীষণ তৃষ্ণা পায়।। তার বাজারের ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খাওয়ার জন্য রাস্তার পাশেই বসে পড়ে সে।। এমন সময়ে একটা কালো কুকুর এসে তার পাশে বসে।। কুকুরটা দেখে একটু অবাক হয় মন্নান মিয়াঁ।। গ্রামে অনেকদিন যাবত আছে সে কিন্তু আগে কখনো এতো বড় কালো কোন কুকুর দেখেনি।। কুকুরটা মন্নানকে এক দৃষ্টিতে দেখতে থাকে।। হটাৎ মন্নানকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠে, “আমার কবরের পাশে বসে আছিস।। তোর সাহস তো অনেক বেশি দেখছি।।” মন্নান প্রথমে ভাবল তার শোনার ভুল।। সে ব্যাগ থেকে পানি বের করে চোখে মুখে পানি দিলো।। এইবার সে আর স্পষ্ট শুনতে পেলো কুকুরটা বলছে, “কিরে, ভয় পেলি নাকি??”
মন্নান মিয়াঁ এইবার পুরো ঘাবড়ে গেলো।। অনিশ্চিত বিপদের আশঙ্কায় সে তার হাতের পাশে পড়ে থাকা একটা গাছের ডাল নিয়ে ছুড়ে মারল কুকুরটার দিকে।। ডালটা সরাসরি গিয়ে লাগলো কুকুরটার মুখে।। একপাশ কেটে গিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো।। প্রচণ্ড রাগে গর্জে উঠলো কুকুরটা।। স্পষ্ট ভাষায় মন্নান কে বললঃ “তুই আমাকে আঘাত করেছিস।। এর পরিনাম তুই ভোগ করবি।।” এই বলে কুকুরটা ভয়ঙ্কর গর্জন করে মন্নান কে কামড়াতে আসলো।। কুকুরটার সাথে ধাক্কা লাগার সাথে সাথে মন্নান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।।
জ্ঞান হারান অবস্থায় মন্নান স্বপ্নে দেখে এক বুড়ো লোককে।। লোকটি প্রবল ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে মন্নানের দিকে।। মন্নান কে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো, “তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস।। আমাকে আঘাত করেছিস।। এর পরিনাম মৃত্যু।।”
মন্নান ভয়ে জড়সড় হয়ে বললঃ “আমি জানি না আপনি কে।। আপনাকে আমি আমার জীবনে আগে কখনো দেখিনি।। আমি কিভাবে আপনাকে আঘাত করবো??”
তখন লোকটি নিজের বর্ণনা দিল।।
“তান্ত্রিক” এই ব্যাপারটার সাথে হয়তো আমরা অনেকেই পরিচিত।। তান্ত্রিক তাদের বলে যারা তন্ত্র মন্ত্র নিয়ে থাকে।। এরা প্রায়ই গোরস্থান, শ্মশানঘাটে রাত্রি বেলা কালো জাদু চর্চা করে।। তান্ত্রিক মূলত খারাপ প্রকৃতির হয়।। এরা ক্ষমতার লোভে, বলতে পারেন অমরত্তের লোভে এমনকি মানুষ খুন করে তা দিয়ে তপস্যা করে।। ঐ লোকটি একজন তান্ত্রিক ছিল।। একবার মানুষ খুন করার অভিযোগে তাকে গাছের সাথে ফাঁস দিয়ে মারা হয়।। এরপর তাকে কবর দেয়া হয় গ্রাম থেকে দূরে একটা বধ্য এলাকায়।। সেই কবরটির কথাই একটু আগে আমরা বলেছিলাম।। যাই হোক, সেই তান্ত্রিক মারা যাওয়ার পরও তার আত্মা এখনও মানুষের ক্ষতি করার জন্য ঘুড়ে বেড়ায়।। তান্ত্রিকটা মন্নানের সামনে কুকুর বেশে এসে বসেছিল এবং মন্নান তাকে আঘাত করায় সে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়।।
এরপর হটাৎ মন্নানের ঘুম ভেঙ্গে যায়।। সে খুব খারাপ অনুভব করতে থাকে।। তার নিঃশ্বাসে সমস্যা হতে থাকে।। সেখান থেকে কোনোরকমে বাসায় যায় মন্নান।। এরপর আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।।
রতন আলী এতটুকু পর্যন্ত বলার পর হটাৎ কর্কশ শব্দে কাছেই কোথাও একটা পেঁচা ডেকে উঠে।। ঠিক সাথে সাথে চমকে উঠে জাবেদ শুনতে পায়, রতন আলী তাকে পিছন থেকে ডাকছে।। “ঐ ভাইজান, জলদি লন।। মুত্তে অতখন লাগায় নি কেও??”
জাবেদ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে অস্থির চিত্তে অপেক্ষা করছে রতন আলী।। আর সে নিজেকে আবিষ্কার করে সেই গাছটার নিচে, যেখানে সে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসেছিলো।।
আমাদের গল্প এখানেই শেষ।। এখন আপনাদের কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।।
প্রশ্নঃ সেদিন আসলে কি হয়েছিলো??
উত্তরঃ সেদিন কি হয়েছিলো তা আমি বলতে পারব নাহ।। একেজনের একেক রকম ধারণা।। সম্ভবত মন্নান মিয়াঁ এসে জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলো তার মৃত্যু রহস্য।। হয়তো বা এটা জাবেদের বিক্ষিপ্ত মনের কল্পনা।।
প্রশ্নঃ জাবেদ কি তারপর ও কবরটা দেখতে গিয়েছিলো??
উত্তরঃ জী নাহ।। জাবেদ সেই গাছের নিচেই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।। রতন আলী তাকে কাঁধে করে বাসায় নিয়ে আসে।।
প্রশ্নঃ জাবেদের এরপর কি হল??
উত্তরঃ জাবেদ এরপর একটানা ৪মাস অসুস্থ ছিল।। ডাক্তারদের ধারণা তার মেণ্টাল ব্রেক ডাউন হয়েছিলো।। ৪ মাস পর জাবেদ হসপিটাল থেকে ছাড়া পায়।।
প্রশ্নঃ মন্নান মিয়াঁর কবরটা কি এখনও আছে??
উত্তরঃ জী, কবরটা বহাল তবিয়তে আছে।। যদিও এই ঘটনার পর কবরের পথ তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং এরপর কোনোদিন কবরের কুকুরটাকেও আর দেখা যায়নি।। তবে এখনও মাঝে মাঝে পূর্ণিমা রাতে তার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়।।
প্রশ্নঃ তান্ত্রিক লোকের কবরটার কি হল??
উত্তরঃ সেই কবরটা নিয়ে আগে থেকেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছিল।। এই ঘটনার পর তা আরও বেড়ে যায়।। পড়ে শুনেছিলাম কবরটা মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং ঐ রাস্তাটুকু বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।। মানুষ পারত পক্ষে ঐ পথ মাড়ায় নাহ।।