গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম ফাল্গুন এর শেষ দিকটায়।তখনো গ্রামে খুব শীত।মামা বাড়িতে গিয়েছিলাম।মামা বাড়ি থেকে ২০মিনিট এর দূরত্বেই আমার খালার বাসা।নানু আমায় তার বাসায় রেখে বললেন কাল এসে নিয়ে যাবে।রাত কিছুটা বাড়তেই লক্ষ করলাম আমার ফোনটা আমি মামা বাড়িতেই রেখে এসেছি।খালাকে বললেও বলবে কাল সকালে নিয়ে আসবে।আর এখন রাত মাত্র ৯:৩০।আমি গিয়ে চলে আসতে পারবো।খালাকে বললাম আমি একটু উঠনে ঘুরে ফিরে আসি।বাইরে জোসনা আছে আধা ঘন্টার মাঝেই চলে আসবো।খালা আমার সাথে তার ছোট ছেলেকে নিতে বললেন আমি বললাম আরে উঠনেই তো।শুধু তোমার ফোনটা দেও।হাতে থাক।
খালার ফোনটা নিয়ে নানু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হলাম।বাচ্চা থেকেই আমি বেশ সাহসী।আর এই সময় পথে লোক ও পেয়ে যাব।কিছুটা যেতেই আশাপাশে ঝি ঝি পোকার শব্দ।আর মনে হচ্ছে আমার পিছন পিছন কেউ হাটছে।পিছনে তাকাতেই কেউ নেই।মোবাইলের আলোয় সামনের পথ পরিস্কার।পথের পাশেই ছোট একটা নদী।নদীতে কাউকেই দেখা যাচ্ছেনা। আমি না চাইতেও আমার সব শরীর ঘেমে যাচ্ছে।বাইরে এতো বাতাস তবুও এমন গরম লাগার কারন আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।কেউ নেই আশেপাশে।কোন আলো নেই।হঠাৎ করে ফোনের আলোটাও নিভে গেলো। এখন শুধু চাঁদের আলোয় পথ পাড়ি দেয়ার বাকি।আমি এমন জায়গায় এসে পরেছিলাম খালার বাসা আর মামার বাসা দুটোই সমান দূরত্ব।এখন ফিরে যেতেও পারছিনা।কেন যেন এই প্রথম খুব ভয় করছে।হঠাৎ ই খেয়াল করলাম আশেপাশের সবকিছু নিরব শুধু পাশের একটি গাছ নড়ছে খুব।বাতাস নেই ঝড় নেই তবুও বেশ নড়ছে।আমি ঠায় দাড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছি।মনে হচ্ছে গাছটা আমার উপর ভেঙে পরবে।বার বার কি বিকট শব্দে উপর থেকে মাটিতে কিছু একটা পরছে বাগানের ভিতর।আমি শুধু শব্দ পাচ্ছি তবে তা দেখতে পাচ্ছিনা।তার মানে নানু বলতো ভুত অনেকসময় মানুষ কে আঘাত করে এটা কি সেটা!আমি এক পা ও আগাতে পারছিনা।হঠাৎ গাছ টা ৪৫ডিগ্রী বেকে আরেক গাছের সাথে মিশে গেল।আমার ক্রমাগত কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল।আমি তবুও সরতে পারছিনা।এর মাঝেই কেউ একটা আমার কাছে দৌড়ে এসে আমায় ধাক্কা দিয়ে চলে গেল।আমি মাটিতে লুটিয়ে পরলাম।উঠে আমিও ভয়ে দৌড়াতে লাগলাম।আমি খেয়াল করলাম আমার পিছনেও কেউ দৌড়ে আসছে।আমি থামছিনা।মনে হচ্ছে আমি থামলেই আমায় মেরে ফেলবে।কিছুদূর যেতেই নদীর ঘাটে ছোট খাটো নৌকা রাখা।নৌকাতে সিগারেট হাতে কাউকে দেখতে পাচ্ছি।নিশ্চই মাঝি।আমি উঠে বসলাম উনি নৌকা বৈঠা দিয়ে চালানো শুরু করলো।আমি অনেকক্ষণ পর স্থির হয়ে বললাম ধন্যবাদ আমায় বাঁচালেন আসলে আমায় ভুত তাড়া করেছিল।আপনি না থাকলে আমি মরেই যেতাম। লোকটা কোন কথা বলছেনা।আমার আবার ভয় হতে শুরু করলো।আমি আবার বললাম আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?উনি কোন উত্তর দিচ্ছেনা।নৌকায় ভাপসা গন্ধ আসছে।বুঝলাম আমার আর বুঝি বাচার পথ নেই।এই মনে হয় আমার শেষ যাত্রা। এর মাঝেই লোক টি ফেস ফেস করে বলে উঠলো কিরে কতগুলা মারছোত?নতুন গুলা আলাদা রাখ।পুরানগুলা পইচা গেছে।একসাথে রাখলে খাইতে পারুম না।আগে নতুন গুলা খামু তারপর পুরানগুলা শুকায়া খামু।ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বার বার।তার মানে মানুষ মেরে ভুত ও শুটকি বানিয়ে খায়!এটা ভুতের নৌকা আর আমি এখানেই এসে পরলাম।
আমি সাহস করে বললাম ওই তুই নৌকা ঘাটে নিবি?তোর মতন কত শয়তান আমি দিন রাত চিবায়া খাই তুই জানিস?
লোকটা ওমাগো বলে চেঁচিয়ে পানিতে ঝাঁপ দিলো।ভুত…ভুত করে চিল্লাছে পানিতে নেমে।ভাবলাম উনি ভুত হলে চেঁচাবেনা।পায়ের কাছে একটা টর্চলাইট পেলাম।ওনার দিকে মারতে দেখি না উনি আমাদের মতন ই মানুষ। আমি চেঁচিয়ে বললাম ভাই ভয় নাই আমি মানুষ। উঠে আসেন।
উনি কোন ভাবেই উঠতে চাইছেনা।নদীর পাড়ে বসে কেউ ওস্তাদ বলে ডাকছে।আর পানিতে থাকা লোক বলে তুই দাড়া আমি আস্তাছি।আমারে ভুতে ধরছে রে।দোয়া পড় তাড়াতাড়ি। উনি সাঁতরেই পাড়ে গেলেন।আমি নৌকার বৈঠা দিয়ে নৌকা পাড় এ নিলাম।
দুজন পাড়ে দাড়িয়ে কাঁপছে। আমি লোকটাকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম তার মানে আপনারা খুনি?ভুত নন?মানুষ মেরে নৌকায় রাখেন?
পানিতে ভিজে যাওয়া লোকটি থরথর করে কাঁপছে। পাশের লোকটি বলে ওস্তাদ এই মনে হয় সেই লোক যে আমার সুপারির বোস্তা নিয়ে পালাইছে।ওস্তাদ আমার লুঙ্গীটাও মাটিতে পরে গেছিলো আর তাও নিয়া গেছে।তাড়াতাড়ি দিতে কন আর কতক্ষণ কচু পাতা পরে থাকবো!
ওই লোকটি কোন কথাই বলছেনা।খালি বলছে আমার ফোন আর হেডফোনটা নদীতেই পরে গেলরে।আমি এখন গান কি দিয়া শুনুমরে!এর মাঝেই নানুর ডাক দেয়ার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমি উঠে নানুর দিকে তাকিয়ে আছি।অনেকক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমি এতোক্ষন স্বপ্নে দেখছিলাম।নানুরে সব বলার পর জিজ্ঞেস করলাম যে সব ই তো বুঝলাম,ওই গাছে ওই সুপারি চোর ছিল।সে সুপারি নিচে ফেলরে ছিল।এক গাছ থেকে আরেক গাছে ঝুকে গেল।আবার নৌকায় সুপারি পচে গন্ধ ও আসছিল।আমি মাঝিকে যখন জিজ্ঞেস করলামম সে উত্তর দেয়নি কারন তার কানে হেডফোন ছিল।তবে ওই লোকের সুপারি,লুঙ্গি কে নিতে যাবে?তাহলে কি ভুত ছিল?
নানু হেসে হেসে বলে ওটা চোরের উপর কেউ বাটপারি করছে।প্রথম যে তোমারে ধাক্কা মেরে ফেলে দিছিলো সেই আসলে নিছে।
#ভাবলাম আমার নানু একজন জিনিয়াস। তারে কে ডি পাঠক নাকি গোয়েন্দা উপাধি দিবো!