প্রত্যাবর্তন প্রহেলিকা (ফিরে আসা রহস্য)

প্রত্যাবর্তন প্রহেলিকা (ফিরে আসা রহস্য)

রুপনগড়ে প্রায় ২৩ একর যায়গা জুরে আমার দাদুর বাড়ি। বাড়িটা অনেক পুরনো, চারিদিকে বিশাল পুরোন সব গাছ গাছালি দিয়ে ঘেরা বিস্তৃত বনভূমি, এককালে বনে নাকি বাঘ সিংহ ও দেখা যেত, এই বাড়ির পাশেই কিছুদূরে বিশাল এক দিঘি রয়েছে, সেই দিঘিতে শীতকালে প্রচুর অতিথি পাখি আসে, তার পাশেই লতাপাতায় আবৃত জরাজীর্ণ একটা পরিত্যক্ত বড়সড় মন্দির অবস্থিত,  আর এই পুরো বাড়ীর ২৩ একরের যায়গাটি উচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। বাড়ি বললে ভুল হবে, এটা অনেকটা প্রাসদের বা রাজমহলে মত দেখতে, ১১৩টার মত কক্ষ আছে পুরো মহল বাড়িটিতে। প্রতিটা কক্ষে নানান রকম এন্টিক সব আসবাবপত্র দিয়ে ঠাঁসা, যেনো একটা মিউজিয়ামের মত। প্রায় ৪১৩ বৎসর আগে তৈরি এই হিন্দু রাজমহল এটি।

১৯৪৭ এ দেশভাগের সময়, দাদু এই বিশাল বাড়িটা অনেক জায়গাজমি সহ খুব কম দামে এক হিন্দু পরিবার থেকে কিনে নেন। বাড়িটা সম্পর্কে অনেক অতিপ্রাকৃতিক কথা প্রচলিত থাকলেও দাদু এসব পাত্তা দেননি, তারপর থেকে এখানেই বসবাস শুরু করেন। আমার দাদুর ৩ ছেলে ও ৪ মেয়ে, মেয়েদেরকে দাদু ভালো জায়গায় বিয়ে দেন।  আর আমার আব্বু সবার বড় লন্ডনে পড়তে এসে এখানেই বিয়ে করে সংসার সাজান। এখানে এসেই আম্মুর সাথে পরিচয় হয় আব্বুর, আম্মুর বাবা আবার বাঙালী এবং লন্ডনে সিটিজেন প্রাপ্ত, সেই সুবাদে ওখনেই আব্বু আম্মুর পরিচয় হয়।পরে সম্পর্ক এবং বিয়ে হয়, আর তাদের আদরের একমাত্র মেয়ে আমি অধরা।

মেজো চাচ্চু ও সপরিবারে কানাডা থাকেন, আর ছোট চাচ্চু বছর বিশেক আগে কিভাবে যেনো অপঘাতে ওই বাড়িতেই মারা যান, অবশ্য তার লাশ ও পাওয়া যায়নি, শুধু তার পাঞ্জাবী টা দিঘির জলে পাওয়া গিয়েছিল জানা যায়। তাছাড়া ছোট চাচ্চুর মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে সবাই চুপ থাকে কেউ কিছু বলে না, সেটাও আরেক রহস্য।

যাইহোক আমি এবার ১৮ তে পা রাখলাম, সবে কলেজ এ উঠেছি।  সবাই বলে আমি নাকি দেখতে সোনালী বরণ ও ভীষণ সুন্দর, কিন্তু নিজের কাছে নিজেকে কেনো যেনো ভাল লাগেনা। হঠাৎ একদিন দেশ থেকে দাদুর চিঠি এলো আব্বুর কাছে, চিঠিতে জানতে পারলাম দাদু তার পরিবারের সবাইকে ওই প্রাসাদ বাড়িতে ডেকেছেন। পারিবারিক রিউনিয়ন (পূণর্মীলন) এর আয়োজন করবেন আরো অনেক বিনোদন হবে। দাদীও ও বাড়ীতেই চাচ্চু মারা যাবার বছর দুয়েক পর রহস্যজনক ভাবে মারা যান, আর এইদিকে দাদুর অনেক বয়স হয়েছে তাই পরপারে পাড়ি জমানোর আগে পরিবারের সবাইকে একবার দেখতে চান, আনন্দঘন কিছু মূহুর্ত কাটাতে চান।

আব্বু সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলো কারন তিনি দাদুকে যেমন শ্রদ্ধা করেন তেমনি ভয়ও পান। আব্বু আম্মুর বিয়ে দাদু মেনে নেননি, দাদুর ইচ্ছে ছিল বড় ছেলের বিয়ে নিজের পছন্দ মত মেয়ের সাথে মহা ধুমধাম করে করবেন। কিন্তু আব্বু তার সব আশা গুড়েবালী করে দেন আম্মু কে বিয়ে করে। সেই থেকে আব্বু ভয়ে আর দেশে যান নি, তাই এবার যখন দাদু চিঠি পাঠিয়ে যেতে বললেন আব্বু সাথে সাথে রাজি হয়ে যান, দাদুকে যেমন সবাই ভয় পান তেমন সন্মান ও করেন।

জীবনে প্রথম বারের মত দেশে যাচ্ছি, ফ্লাইট এ আব্বুর মুখে দাদু বাড়ির ঐসৈর্যের ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গল্প শুনতে শুনতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। গল্প শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারি নি। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখতে লাগলাম, কারা যেনো আমাকে বলছে জলদি এসো, আমাদের এ বন্দি দশা থেকে আমাদের মুক্ত করো, আর সহ্য হচ্ছে না, আর পারছি না আমরা, ওটার চলে আসার সময় হয়ে গেছে।

হঠাৎ আব্বুর ডাকে ঘুম ভাঙল আমার, আব্বু বলল এসে গেছি মামণী উঠো, আমি সিট বেল্ট বেঁধে নিলাম। আমাদের ফ্লাইট লেন্ড করলো হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে, বিমান থেকে নেমে ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে বেড়িয়ে এলাম। আব্বু বলল ওইত আমাদের গাড়ি, আমি অবাক হয়ে দেখলাম একটা কালো রঙের Chevrolet Bel Air 1955 এর দরজা খুলে শক্তপোক্ত, বিদেশী চেহারার একজন বাটলার এর পোশাকে, মধ্য বয়স্ক লোক মুখে কৃত্রিম হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমরা এগিয়ে যেতেই লোকটি যান্ত্রিক কন্ঠে বলল,
– আমি ডিয়ারস!!! আপনাদের নিয়ে যেতে এসেছি।
এই গাড়িটি পঞ্চাশ দশক সময়ের, বর্তমানে এটি একটি এন্টিক।
আমার দাদুর এরকম গাড়ী আছে ভাবতেই অবাক আর রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছে।
যাই হোক আব্বু তাড়া দিলো গাড়ীতে উঠার জন্য, আম্মু আব্বু আর আমি উঠে পরলাম, ড্রাইভার আমাদের লাগেজ পত্র উঠিয়ে নিয়ে Chevrolet 1955 টা স্টার্ট দিলো। চলতে লাগলাম শহরের পথ ধরে, আমি উইন্ডো সিটে বসে অবাক নয়নে সম্পূর্ন ভিন্নতর পরিবেশ পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছি নিজ স্বদেশের।
হটাৎ গাড়িটা শহরের যানজটপূর্ণ রাস্তা ছেড়ে হাইওয়ে পথ ধরলো, আমি তখনো বিমুগ্ধ চোখে চারপাশ দেখে যাচ্ছিলাম।
ঘন্টা তিনেক যাওয়ার পর আমরা একটা রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামলাম। বুঝলাম এখনেই লাঞ্চ করতে হবে, গাড়ী থেকে নেমে এলাম। খেয়াল করলাম আশেপাশে সবাই কেমন যেনো কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। যাই হোক পাত্তা না দিয়ে রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে আবার রওনা দিলাম। গাড়ি চলছে ত চলছেই, আরো ঘন্টা তিনেক পর আমরা হাইওয়ে ছেড়ে গ্রামের রাস্তায় প্রবেশ করলাম।

সে আরেক অপূর্ব দৃশ্য, মেঠো পথ, চারিদিক সবুজে ঘেরা গাছগাছালি, অজস্র পাখপাখালির কোলাহল, বিস্তৃ্ণ সবুজ রং ধানক্ষেত, ঝিলময় বিভিন্ন রকম পাখির আনাগোনা, বক গুলো মাছ ধরছে, অন্য পাখি গুলো পানি পান করছে। আমি আর সহ্য করতে না পেরে ব্যাগ খুলে ডি এস এল আর ক্যামেরাটা বের করে ছবি তুলতে লাগলাম গ্রামবাংলার অপূরুপ দৃশ্যের।

হটাৎ একটা ছায়া দেখতে পেলাম গাড়ির সাথে ছুটে চলছে। অবাক হয়ে তাকালাম আশেপাশে হয়ত কোন গ্রাম্য বাচ্চা ছেলে গাড়ির সাথে দুষ্টুমি করে ছুটে আসছে, কিন্তু না কই কেউ নেইত ওখানে, কিন্তু ছায়াটা এখনো ছুটে চলছে,  নাহ এ দেখার ভুল হতে পারেনা, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ওটা!!
একটু ভয় পেয়ে, ঘুরেই আব্বু কে জোরে ডাক দিলাম, ওটা দেখাবার জন্য। আব্বু ঘুরতেই ওটা যেনো গায়েব হয়ে গেলো।

যাক বাদ দিলাম ব্যাপার টা মাথা থেকে, হতে পারে মনের ভুল, তাছাড়া সারারাত ফ্লাইট এ ছিলাম, ক্লান্তিকর জার্নির কারনে হ্যালুসিনেশন হওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কিন্তু তখনি বিকট একটা শব্দ হলো!!!

পর্ব-২
কিন্ত তখনি বিকট একটা শব্দ হলো!!!
সাথে ফুসসসসস করে হাওয়া বের হবার শব্দ এলো। ড্রাইভার যান্ত্রিক গলায় বলল দুঃখিত স্যার গাড়ির চাকা পাংচার হয়েছে, স্পেয়ার টায়ার ও নেই।

এইদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো, আব্বু বলল এখন উপায়, রাস্তাও বেশী বাকি নেই হেটে গেলে সর্বোচ্চ ৩৫ মিনিট লাগবে, কিন্তু গাড়ি ভিতর যে পরিমান লাগেজ পত্র আছে তা আমাদের ৪ জনের পক্ষে বহন করে এতটা পথ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

ড্রাইভার বলল স্যার আপনারা চলুন, মহলের চাকররা এসে পরে ওগুলো নিয়ে যাবে। কিন্তু আব্বু রাজি হলো না, কারন অনেক দামিদামি জিনিসপত্র আছে লাগেজে। আব্বু অনেকদিন পড়ে দেশে ফিররেছেন তাই কম বেশি সবার জন্যই কিছু না কিছু নিয়ে এসেছেন। যাইহোক সিদ্ধান্ত হলো আম্মু ড্রাইভার এর সাথে প্রাসাদ বাড়িতে চলে যাবে, পরে চাকর রা আসলে আমি আব্বু তাদের সাথে যাবো। আম্মু চলে গেলো আমি আর আব্বু চাকরদের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।

আমি আবার ছবি তুলতে লাগলাম ঘুরে ঘুরে, পিছন থেকে আব্বু বলল মামনী বেশী দূরে যেওনা। কিন্তু ছবি তুলতে তুলতে আমি বেশ দূরে চলে এলাম, ঠিক তখনি রাস্তার পাশে অদূরেই সম্পূর্ন সাদা রঙের বড়সড় একটা তিতির পাখি দেখতে পেলাম, আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত শব্দ করছে। ছবি তোলার জন্য ওটার কিছুটা কাছে চলে গেলাম কিন্তু ওটা অদ্ভুত আবার শব্দ করে জঙ্গলের ভিতর চলে গেলো যেনো আমাকে ইশারায় ডাকছে ওটা।  আমিও পিছু নিলাম ওটার, কেমন যেনো আকর্ষন বোধ করলাম ওটার প্রতি। মনের অজান্তেই ক্যামেরা হাতে ওটার পিছু পিছু সালবনের আরো ভিতরে ঢুকে পরলাম আমি।
৫ মিনিট ওটাকে ফলো করার পর, হটাৎ করে একটা জরাজীর্ণ কুঁড়েঘরের সামনে এসে পড়লাম। এই জঙ্গলের মাঝে এমন ঘর দেখে বেশ অবাক হলাম আমি, মনে মনে ভাবতে লাগলাম এই ঘর আসলো কোথা থেকে?
আর এই গহীন জঙ্গলের মধ্যে এ ঘরে কে ই বা থাকে?
এইদিকে তিতিরপাখিটির পিছনে ছুটা ছুটি করে হাঁপিয়ে গিয়েছি আমি, বড্ড তেষ্টা পেয়েছে।
আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে ডাকতে লাগলাম
-এই যে কেউ শুনছেন, কেউ কি আছেন? (মনে মনে ভাবলাম আজব তো কেউ কোন সাড়া দিচ্ছে না)
আমি আবার ডাকলাম, এভাবে কিছুক্ষন ডাকা ডাকির পর কুঁড়েঘরের পেছন থেকে লাঠি ভর দিয়ে অদ্ভুতরকম সাজে এক বৃদ্ধা বেড়িয়ে এলো।
কাঁধে অদ্ভুত রকমের একটা ঝোলা, কিছু লতাপাতা বেরিয়ে আছে, বয়সকালে এই বৃদ্ধা অসম্ভব সুন্দরী ছিলো, তার চেহারার আদল দেখলেই বুঝা যায়। অবাক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধা আমাকে জিজ্ঞেস করলো।
-কে গো নাতনি তুমি, এইখানে কি চাও?
-আমার বড্ড তেষ্টা পেয়েছে একটু জল হবে?
বৃদ্ধা আমাকে একটি মাটির পাত্রে জল দিলো তারপর ঝোলা থেকে একটি পাতা বের করে ভিজিয়ে দিল জলে।
আমি পাত্রটি হাতে নিয়েই ঢকঢক করে পান করতে লাগলাম, এতো সুস্বাদু আর হাল্কা মিষ্টি জল আমি কোনদিনও পান করি নি। প্রান জুড়িয়ে গেলো আমার, মনে হলো যেনো আর কোনদিন আমার পিপাসা লাগবে না।

হটাৎ দেখলাম কোথা থেকে যেনো সেই তিতিরপাখি টি বৃদ্ধার কাছে এসে গায়ের সাথে গা ঘষতে লাগলো, আর অদ্ভুত আওয়াজ করতে লাগলো। যেনো কিছু বলছে বৃদ্ধা কে, বৃদ্ধা ঝোলা থেকে একটা কৌটা বের করে দানাদার কিছু দিলো ওটাকে, আয়েশ করে খাচ্ছে ওটা।
আমি খেয়াল করলাম এই তিতির টি অন্য তিতির দের মত না একটু ভিন্নতর, আকারে অনেক বড়, সাধারণত তিতির এত বড় হয় না আর দেখতেও ধবধবে সাদা। তবে তিতিরটা যেমন সুন্দর তেমনি আবার হিংস্রও দেখতে। তীক্ষ্ন ঠোঁট, ধারালো পায়ের নখ গুলো, আর চোখ গুলো নীল জ্বলজ্বল করছে। একটা শক্তিধর মানুষকে আহত করা এমনকি মেরেও ফেলতে পারবে এটা, আমি ধারনা করলাম।

তারপর বৃদ্ধা আমাকে জিজ্ঞেস করলো কি নাম আমার, কোথায় থাকি, আর কোথায় এসেছি???
আমি তার প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিলাম, তারপর আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো আমার দাদুর নাম কি?
আমি দাদুর নাম আর বাড়ির নাম বলার পরেই দেখলাম বৃদ্ধা চমকে উঠলো।
মনে মনে বিড় বিড় করে কি যেনো পড়তে থাকলো, আমি শুধু কয়েকটা শব্দ বুঝতে পারলাম যে, সময় ঘনিয়েছে, আগামী পূর্ণিমারাত!!!!
-এই যে কি হলো? কি বলছেন এসব?
খপ করে বৃদ্ধা হাত ধরলো আমার, তার চোখ গুলো ধক ধক করে জ্বলছে, আমার হাতের রেখা গুলো তিক্ষন দৃষ্টিতে দেখছেন। (আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, আর বৃদ্ধা এই দিকে পাগলের মত আচরন করে যাচ্ছেন)

অধরা!! অধরা!! অধরা!! হ্যা তিতি এইজন্যই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে, ও তোমাকে চিনতে পেরেছে।
হ্যা তুমি, তুমি সেই, তুমিই পারবে, পারতেই হবে তোমাকে।  আবার জন্ম হয়েছে তোমার, যুগে যুগে হবে, যতবার ওটা ছাড়া পাবে নরক থেকে ঠিক ততবার তোমাকে আসতে হবে। বধ করতে হবে ওটাকে, ফিরত পাঠাতে ওটাকে নরকে আবার, মুক্ত করতে হবে অতৃপ্ত দের, আমার অপেক্ষার দিন শেষ, তোমার দিন শুরু, রক্ষা করো নাহলে নির্বংশ।
-এই যে কি বলছেন এসব আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
বৃদ্ধা আমার হাত ধরে একটা গাছের নিচে নিয়ে গেলো, তিতি কে উদ্দেশ্য করে কি যেনো বলল।
তিতির টা দৌড়ে এসে তার তিক্ষন ধারালো পায়ের নখ দিয়ে এক জায়গায় মাটি খুরতে লাগল।
চোখের পলকে ২হাত মাটি খুরে ঠোঁট দিয়ে একটা রুপালি সাথে নীল রঙের কারুকাজ করা পুরনো একটি এন্টিক ধরনের ছোট বাক্স তুলে আনলো।
আর আমি অবাক কৌতুহলি নয়নে এসব আজব কাণ্ডকারখানা দেখে যাচ্ছি।
বৃদ্ধা আমাকে বসতে বলে নিজেও বসে পড়লো, বাক্সটি ছোট্ট তালাবদ্ধ।
বৃদ্ধা তার হাতের আংটি দিয়ে তালায় ছোঁয়া দিতেই তালা টি হাল্কা আলোকিত হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।
বাক্স খুলে একটি ছোট পাণ্ডুলিপি ও একটি পুরনো অনেক সুন্দর ডিজাইনের কারুকাজ করা চিকন চুড়ি বের করলো।
আমি মনে মনে ভাবলাম চুড়ি ত জোড়ায় হয় তাহলে আরেকটা কই?
বৃদ্ধা চুড়িটি আমার বা হাতে পড়িয়ে দিলো, পড়ানোর সাথে সাথে একটা সোনালী আলোর আভা আমার হাতে ছড়িয়ে পরে আবার মিশে গেলো। আর পাণ্ডুলিপি টা আমার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল পড়তে।
আমি কৌতুহলি হয়ে লিপি টা খুললাম!!
কিন্তু একি!!! এটা কি ভাষা আমিত পড়তে পারছি না, হতাশ হয়ে বৃদ্ধার দিকে তাকালাম আমি।
বৃদ্ধা মনে হয় বুঝলো আমার মনের কথা, মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওই আংটি টা খুলে আমার হাতে পড়িয়ে দিলো।
তারপর বলল এবার পড়ো, তার কথায় আমি আবার তাকালাম লিপিটার দিকে, হ্যা এবার পড়তে পারছি,
আজ থেকে প্রায় ৪৫০ বছর আগে এই রুপনগড় অঞ্চল এ……

অধরা!!!!!! ঠিক এইসময়ে পেছন থেকে বাবার উত্তেজিত কন্ঠ পেলাম। দেখলাম চারিদিক অন্ধকারময় হয়ে গেছে প্রায়।
কিন্তু আমি যেই গাছটার নিচে আছি সে যায়গা টা অল্পপরিসরে অদ্ভুত ভাবে আলোকিত হয়ে আছে।
অধরা!!!! আবার বাবার কন্ঠ পাওয়া গেলো খুব কাছে থেকে সাথে আরো অপরিচিত কয়েকজনের গলার আওয়াজ পেলাম আমি।
ফিরে তাকালাম আমি বৃদ্ধার দিকে, বৃদ্ধা আমার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
-আশীর্বাদ করি সফল হও, আমার সময় শেষ, আর তোমার শুরু, ভয় পেয়ো না আর ধৈর্য হারাবেনা হারালেই সব শেষ, এখন থেকে তিতি থাকবে তোমার সাথে ও রক্ষা করবে তোমাকে।
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো সে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ পেলাম আমি, তারপর আলত করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো, আর সাথে সাথে আমি তার কোলে গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলাম, আর নিজের ভেতর অদ্ভুতরকম পরিবর্তণ অনুভূত হতে লাগলো, যেনো নতুন করে জন্ম হচ্ছে আমার।
ঘুমিয়ে যেতে যেতে দেখলাম বৃদ্ধাটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো অথবা তার কিছু একটা অংশ আমার শরিরে মিসে গেলো।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত