অভিশপ্ত বেডেরুম

অভিশপ্ত বেডেরুম

রাহুল ও মহিনীর বিয়ে হয়েছে প্রায় ১বছর হল। আজ তাদের একটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। রাহুল তাদের বাচ্চার নাম দেয় “আলভি”। মহিনীরও নামটা পছন্দ হয়েছে। ডাক্তার মহিনীকে এখনও বাড়ি যাবার জন্য অনুমতি দেননি,,,তাই মহিনীকে আজ রাত হসপিতালের বেডরুমেই কাটাটে হবে। মহিনী এবং রাহুল ডাক্তারের কথাই মেনে নিল,,,কারন তারা জানে কালকেই ডাক্তার ওদের বাড়ি যাবার জন্য অনুমতি দিয়ে দিবে।

রাত হয়ে গেছে,,, মহিনী তার বেডে ঘুমিয়ে রয়েছে,,, রাহুল মহিনীর পায়ের কাছে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে,,,আর ছোট্ট আলভি তার দোলনায় ঘুমিয়ে আছে। সবাই যখন গভীর ঘুমে মঘ্ন,,,,তখন মহিনীর ঘুম ভেঙে যায় এক শব্দের কারনে। মহিনী বেড থেকে সরাসরি বিছানায় বসে পড়ে এবং শব্দের উৎস খুজতে থাকে। ততক্ষনে আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়।

হঠাৎ ওর আলভির কথা মনে পড়ে।মহিনী দোলনার দিক তাকায় কিন্তু দোলনা ফাকা,,,দোলনায় আলভি নেই।মহিনী রাহুলকে ডাকে কিন্তু রাহুল শুনে না,,,অতঃপর মহিনী আর অপেক্ষা করতে পারে না এবং কাঁদতে শুরু করে আর ডাক্তার-নার্স,র রাহুল সবাইকে ডাকতে থাকে।কিন্তু কেউ ওর কথা শুনে না। সবাই এমন ভাবে ঘুমাচ্ছে যেন সহস্র বছরের ঘুম আজ এক রাতেই ঘুমাচ্ছে।

হঠাৎ শব্দটা আবার শুরু হয়,,,মহিনী চমকে উঠে। বেডরমের এক কোণে মহিনী একটি ছায়া দেখতে পারছে,,,ছায়াটা কিযেন করছে???মহিনী স্পষ্ট দেখতে পারছে না।কিছুক্ষণ ছায়াটার দিক তাকিয়েই রইল মহিনী। কিছুক্ষণ পর মহিনী বুঝতে পারল,ছায়াটা কি করছে!!! মহিনী আবার কেঁদে উঠল এবং ও বলতে থাকে কে তুমি,,,এগুলো কি করছো,,,আমার আলভির সাথে তুমি কি করছো,,, প্লীজ এমন করো না,,,প্লীজ,,, প্লীজ,,, প্লীজ….

রাহুলের ডাকে ঘুম ভাঙে মহিনীর। মহিনী ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।রাহুল জিজ্ঞাস করল “কি হয়েছে মহিনী,,,তুমি কি কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছ,,,ঘুমের ঘোরে কান্না করছিলে কেনো???” মহিনী সাথে সাথে দোলনায় তাকায়,না সব ঠিক আছে,,,আমার আলভি সুন্দর ভাবেই ঘুমাচ্ছে। মহিনী টেবিলে থাকা পানির গ্লাস থেকে দগ দগ শব্দ করে পানি পান করল।ও দেওয়াল ঘড়ির দিক তাকাল,,,এখন ৫:০০টা বাজে।
মহিনী এখন বুঝতে পারছে সে এতক্ষণ স্রেফ একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছে। একটি সুস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল মহিনী,,,কারন এটা শুধুই স্বপ্ন,বাস্তব না। রাহুল মহিনীকে আবার জিজ্ঞাস করল “কি হয়েছিলো তোমার???কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছিলে???” মহিনী রাহুলকে সব কিছু বলে,,,রাহুল মহিনীর কথা শুনে হেসে উঠে এবং বলে এগুলো শুধুই দুঃস্বপ্ন,,,এগুলো সত্য হবার নয়। মহিনী রাহুলের কথা শুনে বলে তোমার কথাই যেন সত্য হয়।
একাটু পর সবার কানে ভেসে আসল “ফযর” নামাযের আযান। নিস্তব্ধ হসপিতাল আবারো ব্যস্ত হতে শুরু করেছে।

আজ ডাক্তার মহিনীকে বাড়ি যাবার জন্য অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। মহিনী এবং রাহুল সবকিছু গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বাড়িতে গিয়ে তারা ফ্রেস হয়ে নিল,,,রাহুল বাহির থেকে খাবারের অর্ডার করেছে। দুপুরে তারা একসাথে টেবিলে খেতে বসেছে। রাহুল বল্ল এখন আমাদের একটি কাজের লোক দরকার, কারন তুমি এখন সব কাজ করতে পারবে না। মহিনীও রাহুলের কথায় সায় দিল।
রাহুল দুপুরের খাওয়া শেষেই কাজের লোকের খুঁজে বাহিরে বের হল।
রাত এখন ১১টা বাজে,,,এখনো রাহুল বাসায় আসে নি। মহিনী এখন আলভিকে কোলে নিয়ে বেলকুনির চেয়ারে বসে আছে এবং রাহুলের কথা ভাবছে। হঠাৎ দরজায় কে যেন ঠক-ঠক আওয়াজ করছে।
মহিনী ভাবে রাহুল হয়তো এসেছে। আবার ভাবল রাহুল কলিং-বেল না বাজিয়ে দরজায় ঠক-ঠক আওয়াজ করছে কেনো। এগুলো ভাবতে ভাবতে মহিনী দোরজা খুলে ফেল্ল। কিন্তু না,রাহুল আসে নেই,,,একজন বুড়ো মহিলা এসেছে।

মহিনী জিজ্ঞাস করল কে আপনি??? কাকে চান??? বুড়ো মহিলাটি তখন উত্তর দেয় যে, “রাহুল ওকে পাঠিয়েছে।” মহিনী রাহুলের কথা জিজ্ঞাস করলে বুড়ো মহিলাটি বলে সে জানে না।
মহিনী ভাবে রাহুল হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে,,,ও আর কিছু না ভেবে মহিলাটিকে ভেতরে আসতে দিল।
মহিলাটিকে মহিলার ঘর দেখিয়ে দিল মহিনী। কিন্তু মহিনীর কেনো যেন মনে হচ্ছে ও মহিলাটিকে আগেও কোথায় যেন দেখেছে।

রাত বেশি হওয়ার কারনে মহিনীও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে,,,আর ভাবছে রাহুল বোধহয় কোনো কাজে আটকে গেছে। আর এইটা প্রায় হয়। রাহুলের দেরিতে বাড়ি আসার বিষয়টা নতুন নয় তাই মহিনীও বেশি ভাবল না। কিন্তু ও ভাবছে কাজে আটকে গেলে বা বাড়িতে আসতে দেরি হলে রাহুলতো ওকে একবার হলেও ফোন করে জানিয়ে দেয়,,,কিন্তু আজ কেনো ফোন করছে না। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে মহিনী আলভিকে বকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে তা ও নিজেও বুঝতে পারে নি। হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দে মহিনী ঘুম ভেঙে যায়। ওর মনে হচ্ছে শব্দটা ঘর থেকেই আসছে,,, তাই ও শব্দের উৎস খুজতে লাগল।

এখন ও বুঝতে পেরেছে ও নিজের ঘরে নেই। ও এখন অন্য এক জায়গায়। ও জায়গাটা চিনার চেষ্টা করল,,,আর শব্দটাও ওর চেনা চেনা লাগছে। হ্যা!!! হ্যা!!! এইটাতো সেই হসপিতালের বেডরুম যেখান থেকে আজ সকালেই মহিনী বাসায় আসেছিল। কিন্তু ও এখানে আসল কিভাবে। এগুলো ভাবতে ভাবতে ও বেডরুমের এক কোণে সেই ছায়া দেখতে পায়। ছায়াটা যেন কি করছে,,,বুঝা যাচ্ছে না। হ্যা!!! এই ছায়াটা আর কেউ নয়,এইটাত সেই বুড়ো মহিলা যিনি আমার বাসায় কাজের জন্য এসেছিল। মহিনী এতক্ষণে বুঝে গেছে যে ওর সেই রাতের দুঃস্বপ্ন বাস্তব হতে চলছে।

না”’না”’ এটা সত্য হতে পারে না,এই স্বপ্ন বাস্তব হতে পারে না। এই স্বপ্ন যদি বাস্তব হয় তাহলেতো আমার আলভি……..মহিনী দোলনায় তাকায় কিন্তু আলভি সেখানে নেই। একটু পর ছায়াটি মহিনীর সামনে আসল।
এখন স্পষ্ট বুঝা যাছে ছায়াটি সেই বুড়ো মহিলাটির। মহিলাটি মহিনীর সামনে এসে ওকে বল্ল,” তুই অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছিস,,, তুইও আমার অভিশাপের স্বীকার হতে চলছিস,,, তুই জানিস না এইটা অভিশপ্ত বেডেরুম,,,,এই বেডেরুমেই আমাকে এবং আমার নবজাতক সন্তানকে টাকার লোভে খুন করেছে এই হসপিতালের ডাক্তাররা,,,,আমার আত্না এখনো মুক্তি পায় নি,,,,আমার আত্না এই হসপিতালের বেডেরুমেই আটকে আছে,,,তাই আমি প্রতিজ্ঞা করি যে এই বেডরুমে সন্তান জন্ম দিবে সে তার পরিবারকে হারাবে,,,আমি তার পরিবার শেষ করে দিব যেভাবে শেষ হয়েছিলো আমার পরিবার,,,এখন তুইও সব হারাতে যাচ্ছিস।

মহিনী অনেক কথা বলতে চায় কিন্তু ও কিছুই বলতে পারে না। ওর হাত-পা,মুখ যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আটকে রেখেছে। ও এখন কিছুই করতে পারছে না,শুধু তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে অশ্রু বর্ষন করছে। মহিলাটি(ছায়াটি) মহিনীর চোখের সামনে আলভিকে ছিরে ছিরে খাচ্ছে।
মহিনি এই জঘন্য এবং কষ্টদায়ক দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরেরদিন সকালে লোক-জন মহিনীদের বাড়ি সামনে বাগান থেকে রাহুলেত মৃত লাশ উধ্যার করে। মহিনীদের বাড়িতে প্রবেশ করলে এলাকার লোক-জন ঘরের এক কোণে রক্তাক্ত কতগুলো আঙুলের ছাপ দেখে এবং অন্যপাসে মহিনীকে চেতনাহীন অবস্তায় দেখে তারা হসপিতালে নিয়ে যায়। আজো মহিনীকে দেখা যায় হসপিতালের চারপাসে পাগলের মত ঘুরতে।
(সমাপ্ত)

 

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত