আমাদের গ্রামে রয়েছে এক ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি। বাড়িটার নাম ববিজয় চন্দ্র রায়ের বাড়ি। আমাদের বাড়ি থেকে বেশি দূরে না।তো যখন অবসর পেতাম তখন আমি, মিনা, মাহি, রাজু, সাজু আর রবি সেখানে খেলতে যেতাম। আমরা বেশি খেলতাম লুকোচুরি খেলা।
বাড়িটা তো অনেক পুরোনো।বাড়ির দেয়ালে হরেক রকমের গাছে পুরো জাপ্টে ধরেছে। ভেতরে বাদুড়, চামচিকার বাসা। একটা ভ্যাপসা গন্ধও আছে। দেয়ালে যেমন স্যাওলা জমে কালো হয়ে গেছে তেমনি আলো না যাওয়ার কারনে আধোঅন্ধকারও। সব মিলিয়ে একটা থমথমে পরিবেশ। এমন পরিবেশেই তো লুকোচুরি খেলার মজা।
অনেকে এই বাড়ি নিয়ে নানা কথা বলে। এখানে নাকি জমিদার বিজয়চন্দ্র রায়কে মাঝে মাঝে দেখা যায়।এই বাড়ির মন্দির কক্ষ থেকে নাকি মাঝে মাঝে কীর্তনের সুর ভেসে আসে। এই বাড়ির যে অরিজিন্যাল মালকিন, সেই ননী বুড়ি যে কিনা বিজয় চন্দ্র রায় এর জ্ঞাতি দিদুন ছিলেন তাকেও নাকি দেখা যায় এখানে মাঝে মাঝে।
সে যাকেই দেখা যাক না কেনো আমরা কখনো খেলতে এসে কাউকে দেখিনি এ পর্যন্ত। তাই আমাদের এবাড়িতে খেলাটাও কেউ আটকাতে পারেনি।
এবার আমরা ভাগাভাগি করলাম। চোর হল মিনা। আমরা সবাই লুকিয়ে পড়লাম। শর্ত হল এই বাড়ির বাইরে লোকোনো যাবে না। কিন্তু আমরা একটু মজা করার জন্যই ৫ জনে এই বাড়ির পাশে যে শান বাধানো পুকুর রয়েছে তার শিড়ির নিচে লোকালাম।
কিন্তু একি আমরা প্রায় আধা ঘন্টা ধরে এখানে আছি ও তো আমাদের খুজতে আসছে না। আর বাইরে থেকে দেখছি ও বার বার বাইরে এসে ১-১০০ পর্যন্ত গুনে গুনে যাচ্ছে। আমরাতো কেউ ওখানে নেই কে ওকে বার বার তুলি দিয়ে চোর বানাচ্ছে?
আমরা এবার চুপি চুপি ওর পিছু পিছু চললাম। কিন্তু কাউকেই দেখলাম না । ও এঘর থেকে ওঘর আমাদের খুজে চলেছে। ও এবার পেছন দিকে ফিরতেই আমরা দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম। কিন্তু পরে দেখি ও আমাদের সামনে হাজির আর ১ পিরিচ ২ পিরিচ করে সবাইকে গুনে ফেলেছে।
গুনার পর বলল, বাপরে বাপ তোরা এতখন আমাকে পুরো হয়রান করে ফেলেছিলি । প্রতিবারেই তুলো দিচ্ছিলি । এবার আমি চোর থেকে তো উঠতে পারলাম!! আমরাতো সবাই অবাক।আমরা বললাম, তোকে আমরা তুলো দিচ্ছিলাম??
মিনা বলল,হ্যা তোরাই তো। আমরা ওই যে তখন থেকে খেলছি না। ঠিক তখন থেকেই।শুনে তো আমাদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরবার উপক্রম। ভয়ে গায়ের লোমগুলো খাড়া হয়ে গিয়েছে। তখন মিনাকে কিছুই বললাম না। সবাই শান্ত ভাবে ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।
বাড়ি এসে ভয়ে কাউকেই বলিনি একথা । পরে যখন মিনা সব জানল ভয়ে তো ওর হার্ট ফেল করার কায়দা।আর কখনো খেলতে যায় নি ঐ ভূতুড়ে জমিদারবাড়িতে।