বাগান বাড়ি

বাগান বাড়ি

ঘড়ির কাটা যেন চলতে চাচ্ছে না ।
স্কুল মাঠে বসে আছে নাফিস আর হৃদয় ।
কিন্তু কারো শুন্যতা বিরাজ করছে তাদের মাঝে ।
অধীর আগ্রহে বসে আছে কারো জন্য ।
কিন্তু কে সে..? যার জন্য নিরবতার অবসন ঘঠছে না ।
ঐ তো আসছে বলল হৃদয় । গুরে তাকাল নাফিস,
জিশানের দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে রাখল সে ।
কিরে ব্যাঙের মত ফুলে আছিস কেন বলল জিশান ।
জিশানের দিকে তাকিয়ে উত্তর না দিয়েই বলল নাফিস
কয়টায় আসার কথা ছিল তোর…?
মানলাম একটু দেরু হয়েছে তাই বলে কি রাগ দেখাতে হবে…বসতে বসতে বলল জিশান ।
আচ্ছা বল কেন আসতে বললি (হৃদয়)
একটা ভুতুরে বাড়িতে যেতে হবে বলল জিশান ।
তুই বলছিস এই কথা (নাফিস)
কেন সন্দেহ আছে নাকি উৎসুকভাবে নাফিসের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল জিশান ।
অবশ্যই আছে , ভুত বলতে কিছু আছে নাকি..?তুই তো ভুতের গল্পও পড়িস না ভুত বিশ্বাস তো দুরের কথা আর সেই তুই কিনা বলছিস ভুতুড়ে বাড়ি..! বলল নাফিস ।
কেন তোরা কি ভুতে বিশ্বাস করছ নাকি? (জিশান)
অবাস্তব কে বিশ্বাস করবে কে..?বলল হৃদয় ।
অবাস্তব হলেও আমাদের সমাজে এমন বহু লোক আছে যাদের রাতের ঘুম হারাম হয় অবাস্তব এই ভুতের ভয়ে ।
তবুও ভাবলাম যাব। একবার দেখেই আসি না ভুত বেটা দেখতে কেমন হয় !! (জিশান)
আচ্ছা হঠাৎ তোকে এই ভুতের ঠিকানা কে বলল জিজ্ঞাসা করল নাফিস ।
গতকাল রাতেই পেলাম। অপরিচিত
নাম্বার থেকে ফোন আসল ।
ফোনটা ধরে কানে লাগানোর আগেই লম্বা একটা সালাম পেলাম । সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞাস করলাম কে তখন লোকটি আমাকে তার ঠিকানা দিল ।
লোকটির বাবার আমলের বিশাল একবাড়ি। তার ইচ্ছা ছিল একটা হোটেল করবন সেখানে । তাই বাড়িটাকে পরিষ্কার করতে লোক লাগিয়ে কাজ করালেন ।
কিন্তু সেই দিন থেকেই বাড়িটির ভিতরে অদ্ভুত সব কিছু ঘঠছে ।রাতে কেউ সেখানে গেলেই ২য় বার যাওয়ার সাহস পায় না ।তাছাড়া আরো অদ্ভুত কিছুও নাকি হচ্ছে ঐ বাড়িটায় । তাই আমাদের সেখানে গিয়ে একবার দেখে আসতে বলল লোকটা। একটানা কথাগুলো বলল জিশান ।
আচ্ছা লোকটি আমাদের ঠিকানা কোথায় পেল বলল হৃদয় ।
আমাদের ঠিকানা আমার মামা দিয়েছেন।।(জিশান)
তুই কি ভেবেছিস..? যাবি সেখানে..? (নাফিস)
লোকটি যখন এত করে রিকুয়েস্ট করেছে তখন তো যেতেই হয় (জিশান)
তাহলে আর দেরি কেন চল কাল সকালেই যাওয়া যাক উৎসুকভাবে বলল হৃদয় ।
আচ্ছা চল কালই যাব । আর মুনা ও রাফিকেও জানিয়ে দিছ। কাল সকালেই রওনা দিব, বলল জিশান ।
তারপর যে যার বাসায় চলে গেল ।
পরের দিন……
জায়গাটার নাম অম্বলপুর। আসতে আসতে অনেক বিকেল হয়ে গেছে স্টেশনে নামতেই জিশানের ফোনটা বেজে উঠল ।
স্যার আপনারা কোথায় …? বলল কলদাতা
এইত এইমাত্র গাড়ি থেকে নামলাম উত্তর দিল জিশান ।
একমিনিট স্যার আমি আসছি বলে ফোন কেটে দিল লোকটি ।
কিছুক্ষণ পর একজন লোক এসে হাজির হল জিশানদের সামনে ।
আপনি কি মি. জামাল…?আগন্তুক কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ম করল জিশান ।
হ্যা আমি…
কিন্তু আপনারা…. বলতে গিয়েও থেমে গেল জামাল সাহেব।
আমরা কি…?বলল নাফিস
না…মানে,ভেবেছিল আরো বড় কেউ হবেন কিন্তু আপনাদের দেখছি সবই ছেলেমানুষ…মুখ কাছুমাছু করে উত্তর দিল লোকটি।
সে পরেই দেখা যাবে… এখন চলুন বাসায় বলল জিশান ।
হ্যা চলুন চলুন ।
একটি টেক্সি দাড় করিয়ে উঠে পড়ল ওরা ।
বাড়ি পৌছাতে আরো বিশ মিনিট লাগল ।
এটা জামাল সাহেবের বাড়ি বাংলো টা এখান থেকে কিছুটা দূরে।
আপাদত জিশানরা এখানেই থাকবে রাতে বাংলোতে থাকতে দিলেন না জামাল সাহেব ।
ফ্রেশ হয়ে এল ওরা জামাল সাহেব ওদের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছেন ।
এসে বসল জিশান,নাফিস,হৃদয়,মুনা ও রাফি ।
রান্না কি আপনার স্ত্রী করেছে..? জিজ্ঞাসা করল রাফি.।
রাফির দিকে তাকিয়ে মৃদুসুরে হ্যা বলল জামাল সাহেব ।
খুব ভালই রান্না করতে পারে।
আচ্ছা আপনাদের বাড়িতে কে কে আছে..? হঠাৎ প্রশ্ম করল জিশান।।
বাড়িতে তেমন কেউ থাকে না।আমি দেশের বাইরে থাকতাম আর আমার স্ত্রী বাপের বাড়িতেই থাকত ।
কোন সন্তান আমাদের।
কিন্তু এবার ভাবছি আর যাব না দেশের বাইরে বাংলোটাকে ঠিক করে একটা হোটেল দিলে বাকি জীবনটা চলে যাবে ।
কিন্তু যেদিনই আমি বাংলোতে লোক পাঠায় ওটা পরিষ্কার করতে সেইদিন থেকেই বাংলোতে সমস্যা শুরু হয় ।
একদিন কাজ করতে করতে রাত হয়ে যায়। আমি নিজেই সেদিন সেখানে ছিলাম। রাত আট টা হবে, তখন হঠাৎ কোথা থেকে কান্নার সব্দ ভেসে আসছে।
পোড়া মাংসের গন্ধ নাকে লাগল। কিছুক্ষন পর একটা সাদা পোশাক উড়ে এসে আমার গায়ে পড়ে পরে কি একটা আমার পাশ দিয়েই দৌড়ে চলে যায়।।
ভয়ে সেদিনের পর আমি আর ঐ বাংলোতে যায় নি
এর মাঝে আমার ভাই ও আরো অনেক লোক গিয়েছিল সবাই একই কথা বলল ।
এমন হয়েছে যে রাতে কেউ ঐ রাস্তা দিয়ে হাটতে ও ভয় পায় ।
হালকা নাস্তা করে বেরিয়ে পড়ল বাংলোর উদ্দেশ্যে ।
পড়ন্ত বিকেল । সূর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়লেও একেবারে লুকাইনি ।
পশ্চিমের আকাশটাকে রাঙিয়ে এখনো আকাশে ভাসছে ।
পাখিরা পিরছে আপন বাসায় । হালকা বাতাস বইছে ।
সব মিলিয়ে এক রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে ।
বাংলো টা জামাল সাহেবের বাড়ি থেকে বেশু দূরে নয় ।
অনেক বড় এরিয়া নিয়ে বাড়িটা তৈরি করেছে। বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালিতে ভরা বাগান রয়েছে ।
মাঝখানে একটা দোতলা দালান । সামনে কাঠ-কাঠি পরে আছে । বাড়িটা বেশ মজারই।
কাজ থাকাই জিশানদের রেখে চলে গেল জামাল সাহেব। জিশানদের উপর ভরসা করতে পারেন নি উনি। উনার মতে এই ছোট্ট ছেলেগুলো কি করবে অযথা নিজেদের বিপদ ডেকে আনার আগে ছাইছিলেন বিদেয় করে দিতে কিন্তু এত রিকুয়েস্ট করে আবলেন যাভে বলে মনে হয়না তাই উনি ও কিছু বলেন নি।
চার দিক টা গুরে দেখল জিশান।
সন্ধ্যা হয়ে আসাই সেদিনের মত চলে গেল । তেমন কোন ক্লু পেল না।
রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল জিশান…সত্যিই কি এটা কোন ভুতের নাকি কেউ ভুত সেজে ভয় দেখাচ্ছে।
কেনই বা তা করবে এলাকার একজন সম্মানিত ব্যাক্তি জামাল সাহেব কেউ তার কাজে বাধাও দিচ্ছে না ।
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল জিশান।
সকালে ঘুম ভাঙল নাফিসের ঢাকে ।
নাস্তা করতে বসে আবার জিজ্ঞাসা করল জিশান
কেউ কি আপনার কাজে বাধা দিচ্ছে আংকেল…?
না তো এমন কেউ তো নেই । তাছাড়া আমার জায়গা আমি যা ইচ্ছা করব তাতে বাধা দেওয়ার জন্য কে আসবে ।
আচ্ছা আপনি এক কাজ করুন কাজের জন্য লোক ঠিক করে কাজ শুরু করে দিন ।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরল ওরা । আসার সময় ছাবিটা নিয়ে আসল জিশান।।
বাংলোতে এসে ভিতরে ডুকতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করে গুরে দাড়াল জিশান ।
জিশানের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে লোকটি জিজ্ঞাসা করল তোমরা কারা বাবা এলাকায় তো আর দেখিনি মনে হয়?
কিছু বলতে জাচ্ছিল নাফিস তাকে থামিয়ে দিয়ে জিশান বলল জি আমরা এখানে নতুন এসেছি কাকার বাড়িতে বেড়াতে ।
ও আচ্ছা এই বাংলো তে যাচ্ছ কিছু জানো কি বলল লোকটি ।
কি জানার আছে একটা বাংলো সম্পর্কে অবাক হওয়ার ভান করে বলল জিশান ।
এই বাংলোই ভুত আছে। গত কয়েক দিনে এখানে মানুষজন অদ্ভুত সব কিছু ঘঠতে দেখেছে। তাই একটু সাবধানে থেক বলে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল লোকটি।
পিছন থেকে ডাকদিয়ে বলে উঠল জিশান, আংকেল আপনার নামটা কি বললেন না তো..
আমার নাম জামশেদ ।বলেই হেটে চলে গেল।
অদ্ভুত লোকত হঠাৎ এসে হঠাৎই চলে গেল বলে ভিতরে প্রবেশ করল ওরা।
তালা খুলে ভিতরে ডুকল ওরা। সব গুলো রুম গুরে গুরে দেখল । বেশ অগোছালো সব কিছু ।
কাঠখড় সব ছড়িয়ে ছিঁড়িয়ো আছে।
ছাদের উপরে উঠে এল ওরা।
কিছুক্ষণ পর চারজন লোক বাংলোতে আসল সাথে জামাল সাহেব ।
লোকগুলো কে কাজে লাগিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল জামাল সাহেব, পিছন থেকে জিশানের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে গেল।
একসাথে বাড়ি যাওয়া যাক বলল জিশান।
আচ্ছা আংকেল জামশেদ কে..?
ঐ তো একটু পরেই ওর বাড়ি কেন কি হয়েছে ।
না তেমন কিছু না আজ দেখা হয়েছিল তাই আরকি।
পরদিন সকাল। জামাল সাহেবের উঠানে লোকজনের কোলাহল ।
চোখ কচলাতে কচলাতে বাইরে এল জিশান। কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে।
জিশান কে দেখেই এগিয়ে গেল জামাল সাহেব জিশানের হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল কাল যাদের কাজ করতে এনেছিলাম তাদের একজন বলেই উঠানের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।
চমকে উঠল জিশান। একটা মানুষকে এভাবে খুন করাও সম্ভব..?
কিছুক্ষন পর পুলিশ এল লাশটা নিয়ে চলে গেল।
জামাল সাহেব কে বলল আর জেন কোন লোককে ঐ বাংলোতে কাজের জন্য না আনে ।
গত রাতে ও জিশান ওখানে গিয়েছিল কিন্তু কিছুই তো দেখতে পাই নি ।
হাতের কাগজটির দিকে তাকাল সে।
খুলে দেখল ভিতরে লেখা : বাংলোটার কথা ভুলে যাও পরিত্যাক্ত হিসেবে ছেড়ে দাও ।
এর মধ্যেও হাসি ফুটল জিশানের মুখে ।
ভুতে তো আর চিঠি লিখতে যাবে না …..

সকালে নাস্তার টেবিল এসে বিষন্ন অবস্থায় পেল জামাল সাহেব কে ।
উনাকে শান্তনা দিতে জিশান বলে উঠল দেখুন আংকেল যা হবার হয়ে গেছে কিন্তু তার বিনিময়ে আমরা একটা ক্লু তো জানতে পারছি যে এটা কোন ভুতের কাজ নয় । আর যাই হোক ভুত তো আর চিঠি লিখতে যাবে না ।
তাহলে কেইস টা পুলিশের হাতে দিয়ে দিন উনিই বের করবেন বলল জামাল সাহেবের স্ত্রী রাবেয়া ।
পুলিশ তো একটা জামেলাই আছেই মৃত ব্যাক্তির মৃত্যুর রহস্য যে ওদেরই বের করতে হবে দেখি এর মাঝে যদি আমরা কোন সমাধান পাই বলল জিশান।
কাগজটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগল জিশান । কি করা যায় কোন ক্লুই তো মিলাতে পারছে না।
হঠাৎ তার চোখ গেল কাগজ টার ডান কোনাতে। কম্পিউটার দোকানের নামটা কাগজের কোনায় লেখাই আছে ।
নিজের আজান্তেই বলে পেলল অপরাধী যত বড়ই চালাক হোক একটা না একটা চিহ্ন রেখেই যায়।
জিশানের মুখে এই কথা শুনেই দাঁড়িয়ে গেল নাফিস আর হৃদয় ।
সমস্যার একটা কুল নিশ্চয় পেয়েছিস বলল নাফিস। হুম বলেই হাতে কাগজ টা নাফিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে রেডি হতে বলল ওদের।
পুরো বাজার তন্য তন্য করে খুজে ও দোকানটা খুজে পেল না ওরা জামাল সাহেবর কাছে গেলে তিনিও কোন ঠিকানা দিতে পারলেন না ।
হৃদয়ের কাছে সব শুনে কাগজটা নিল মুনা ।
নিজের ল্যাপটপ অন করেই মুখ কাল করে পেলল সে। দোকান টার সন্ধান পেয়েছে গুগল ম্যাপে কিন্তু তা তো ঢাকায়।
অবাক হল সবাই । ঘঠনা এখানের আর লেখাটা লিখানো হয়েছে ঢাকা থেকে বড়ই অদ্ভুত লাগছে এই কেইস টা বলল রাফি ।
যতই অদ্ভুত হোক আমাদের কে এখন ঢাকায় যেতে হচ্ছে ।
কাগজটা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ট্রেন দরল নাফিস আর জিশান ।
পরের দিন ঢাকাতে গিয়েই খুজে বের করল দোকান টা।
বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে দোকানটা খুজে পেতে কোন অসুবিধে হয়নি ওদের ।।
দোকানে গিয়েই অবাক হয়ে গেল ওরা কারন এই মাত্র দোকান থেকে যে বের হল সে আর কেউ নয় জামশেদ সাহেব ই।
এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি বলল জিশান।।
জামশেদ সাহেব কে লক্ষে রেখে হাটছে ওরা ।
একটা তিনতলা বিল্ডিং এ এসে উপরে উটতে লাগল। দোতলার ৩১ নাম্বার রুমটায় ডুকে গেল জামশেদ সাহেব ।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।
কম্পিউটার দোকানটায় গিয়ে দাড়াল ওরা ।
হাতে সময় কম তাই সোজা বলে দিল এক ঘন্টা আগে যে লোকটি আপনার দোকানে এসেছিল সে কি টাইপিং করিয়েছে?
কোন লোক..? আর আপনারা কারা? আপনাদের প্রশ্মের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নয় ।বলল দোকানদার লোকটি ।
আপনাকে কি বাধ্য করাতে বলছেন রেগে গিয়ে বলল নাফিস ।
বাইরে গিয়ে ইন্সপেক্টর ফারহান সাহেব কে ফোন দিল জিশান ।
মামা আপনার সাহায্য খুবই ধরকার।
আমি তো অনেক দূর আছি, তোমরা কোথায়..? বলল ইন্সপেক্টর ফারহান।
ঢাকায় এসে বিপদে পড়েছি । আপনি আসতে আসতে অনেক দেরি হবে তার চেয়ে আপনি ঢাকার পুলিসস্টেশনে ফোন দিয়ে আমাদের কথা বলে ।
দোকানের নাম বলতে ভুলল না জিশান।
আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিল ফারহান সাহেব।
জিশানদের এলাকার একজন সৎ পুলিশ অফিসার।
পনের মিনিট পর পাচজন পুলিশ এসে হাজির হল।
আমিই জিশান ।
কিছুই করার নেই বেচারা দোকানীর ।
কম্পিউটারের স্কিনে চোখ পরতেই তাড়াতাড়ি মুনা কে ফোন দিল জিশান তোরা সবাই ঠিক আছোস তো..?
ওপাশ থেকে কথার ধরন বুঝেই জিশান আতংকে উঠল।
সন্ধায় হৃদয় বাংলোতে গিয়েছিল এখনো পিরে আসে নি বলল মুনা।
কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রাখল জিশান ।
অপেক্ষা কর কিছুক্ষনের মধ্যে একটা চিঠি পাবি যাতে লেখা থাকবে ”
একজন কে নিয়ে গেলাম যদি তোমার ঐ গোয়েন্দা বাহিনী এখান থেকে না জায় তাহলে বাকি গুলো কেও হারাবে”।
আর শুন তোরা কোথায় যাওয়াত দরকার নেই বাসাই বসে থাক এমন কি জামাল সাহেব কেও বাইরে যেতে নিষেধ করল জিশান।
পুলিশ সব শুনে দোকানিকে নিয়ে গেল থানায় প্রয়োজন হলেই পাটিয়ে দিবে জামাল সাগেবের ঠিকানা দিয়ে দুই জন পুলিশ নিয়ে জামশেদ সাহেবের উদ্দেশ্যে গেল ওরা কিন্থ ৩১ নাম্বার রুমটি বন্ধ পেল ।
পুলিসস্টেশনের নাম্বার নিয়ে রাতেই রওনা দিল দুজন….
ট্রেন থেকে নেমে একটা গাড়ি নিয়ে বাংলোর সামনে গিয়ে থামল রাত তখন তিনটা।
গাড়িওয়ালার বাড়া চুকিয়ে দিয়ে ভিতরে ডুকল ওরা দুজন ।
গাড়িওয়ালা নিশ্চয় এই এলাকার নয় নইলে এত রাতে এখানে আসত না হাজার টাকার বিনিময়েও বলল নাফিস ।
ঠিক বলেছিস তুই কিন্তু এখন একটু সাবধান হো ।
আশা করি এত রাতে কেউ ভুতের ভয় দেখাবে না কিন্তু
ফাদ পেতে রাখতে তো পারে ।
এমন সময় মুনার ফোন পেয়ে একটু অবাক হলই দুজন ।
তোর কথা ঠিক প্রমান করে দিয়ে গেল একটু আগে কিন্তু
দুর্ভাগ্য বসত আমরা লোকটাকে দরতে পারে নি। বলল মুনা ।
তোদের দরতে হবে না এক্ষুনি ঘরে ডুক চিৎকার দিয়ে বলে উঠল জিশান ।
তখনই হঠাৎ মিউজিক শুরু হয়ে গেল।
শব্দটা অনুসরন করতে লাগল জিশান কিন্তু মিউজিক যে মাটির নিচ থেকেই আসছে ।
এমন সময় কিছু দূরে সাদা কিছু একটা দৌড়ে চলে গেল।
কিছুক্ষন পর আউউউ করে চিৎকার দিয়ে মাটিতে পরে গেল নাফিস……
দৌড়ে নাফিসে কাছে গেল জিশান । মাথায় আগাত লেগেছে ।
পকেট থেকে ফোন বের করে মুনা কে ফোন দিতে যাবে এমন সময় ইটের স্তুপের পাশ থেকে কেউ একজন দৌড় দিল । কিছু বুঝে উঠার আগে জিশানও ছুটল লোকটির পিছন পিছন ।
কিন্তু হঠাৎ গাছের শিকড়ের সাথে হোছড় খেয়ে পরে গেল সে । উঠে দাঁড়িয়ে লোকটিকে আর দেখা গেল না।
নাফিস কে নিয়ে জামাল সাহেবের বাড়িতে পিরল ।
পরদিন সকাল…..
এখনো কারো ঘুম ভাঙে নি ।
ইন্সপেক্টর ফারহান সাহেব কে ফোন দিল জিশান ।
আজকেই এখানে আসতে হবে বলে দিল।।
নাফিসের আগাতটা বেশি নয়, তবুও রেষ্ট নেওয়া দরকার ।
সকাল সকাল বেরিয়ে পরল জিশান ।
কাল রাতে যেখান থেকে লোকটিকে হাতের নাগালের বাইরে করেছিল সেখানে এসে থেমে গেল ও

পিছন থেকে কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরেছে ।
হাতটা গুরিয়ে সোজা লোকটির বুড়ির উপর ড্রাইভ করতে যাবে কিন্তু তার আগেই ধাক্কা দিয়ে নিচের গর্ততে ফেলে দিল ওকে ।
চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় থেমে গেল সে।
যা ভেবে ছিল তা তো হয় নি ।
একবারে সুস্থদেহে নিচে পড়ে আছে ও ।
দুটো লোক এসে হাত পা বেধে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে আসল জিশান কে ।
রুমটা অন্ধকার বসে আছে জিশান কিন্তু একা নয় তার পাশে হাত পা বাধা অবস্থায় হৃদয় ও রয়েছে ।
লোকগুলো নিশ্চয় এতক্ষনে চলে গেছে ।
মশারাও আজ খেপেছে,মনে হয় কত কালের শত্রুতা ওদের সাথে সব রক্ত চুষে নিবে যেন ।
যে ছেলে দুটি তোর হাত লা বেধে ছিল তাদের নাম রফিক ও কামাল অসহায় ভঙ্গিতে বলল হৃদয়।
তুই কি করে জানলি বল জিশান ।
ওদের কথা বার্তা শুনে বুঝলাম।এখানে এভাবে বসে থাকলে মশার কামড়েই মারা যাব । এই জাহান্নাম থেকে হতে হবে নাকি ।
ওদিকে
তন্য তন্য করে খোজা হচ্ছে জিশান আর হৃদয় কে। ফারহান সাহেব এসে গেছে ।
জামশেদ মিয়া কে পাওয়া যাচ্ছে না এলাকায় ।
দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে নাফিস ।
আমার পিছনে গিয়ে পকেট থেকে ছুরিটা বের কর বলল জিশান।।
একেতো নিজের হাত বাধা তার উপর আবার পিছনের দিকে তাই অনেক কষ্টে ছুরিটা বের করে সাবধানে বাধন টা কেটে দিল হৃদয় ।
দুজনেই উঠে দাড়াল ।
একসাথে সামনের দিকে পা বাড়াল ।
নাফিস কে একটা ফোন কর বলল হৃদয়।
এখান থেকে বের হয়ে করা**************
কথা শেষ হওয়ার আগেই কেউ বলে উঠল “কিন্তু সেই সুযোগ তোমাদের কে দিচ্ছি না”
বলেই দুটি মাঝ বয়সের ছেলে ছুটে এল ওদের দিকে।
বামদিকে গুরে নিজেকে দরতে আসা লোকটির পেটে ঘুসি টা বসিয়ে দিল জিশান ।
হৃদয় ঘুসি মারতে ব্যার্থ হলেও আত্বরক্ষা করতে পেরেছে ফলে লোকটি গিয়ে পড়ল পাশে রাখা মাটির স্তুপের উপর ।
আরো কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দুজনের হাত পা বেধে নাফিস কে ফোন দিল জিশান।
ওদের কে বাংলোতে আসতে বলে গর্তের মুখ খুজতে লাগলল ওরা ।
দু’জন বেরিয়ে এল গর্ত থেকে ।
ফারহান সাহেব কে দেখে খুশি হল জিশান।
লোক দুটো কে নিয়ে জামাল সাহেবের বাড়িতে গেল ওরা ।
রয়ে গেল শুধু জিশান।।
গর্তটার ভিতরে আবার ডুকল সে ।
উঠে আসার সময় পায়ের নিচে মাটির বদলে শক্ত কিছু লক্ষ করেছিল সে সবাই থাকায় এই বিষয়ে কিছু বলে নি সে ।

ভিতরে ঢুকে মাঝ বরাবর এসে দাড়াল জিশান।।
ওর মাথায় এখন বিভিন্ন প্রশ্ন আসতেছে। এই জিনিস টা ওর খুবই ভাল লাগে সমস্যা সমাধানের আগে নিজে ভেবে নেই কি হতে পারে।
ওর পায়ের নিচে শুধু মাটি নয় মাটির দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে একটা কাঠ কে আর তার উপর টোকা দিয়ে বুঝতে পারল নিছে গর্ত আছে ।
এখন সে ভাবছে কি থাকতে পারে এই গরতে নাকি অন্ধকার পাহাড়ের মত মাটির নিচেও ঘর আছে….?
এসব ভাবতে ভাবতে তুলে ফেলল কাঠ টা ।
নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ লালা হয়ে গেল জিশানের । ইয়াবার পেকেট দিয়ে গর্ত টা ভরাট করা।
পেকেট গুলো বস্তা ভরে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা দিল জিশান ।
****
জামাল সাহেবের উঠানে অনেক লোকের ভিড় ।
জিশান গিয়ে দাড়াল ফারহান সাহেবের পাশে ।
কিছুক্ষন পর রফিক ও কামালের সাথে জামশেদ সাহেব কে ও দাড় করানো হল।।
ততক্ষনে পুলিশ এসে হাজির হয়েছে ।
ফারহান সাহেব কে সেলুট করে আসামী তিনজনের হাতে হাতকড়া লাগিয়ে গাড়িতে তুলতে যাবে পিছন থেকে জিশান বলে উঠল চলে যে যাচ্ছেন মুল ঘটনা তো অজানায় থেকে গেল ।
সে সব থানায় গিয়েও করা যাবে বলল পুলিশ জসিম ।
সেটা যদি হয় তাহলে আসল অপরাধী যে খোলা আকাশের নিচে থাকার সুযোগ পেয়ে যাবে।
কি বলতে চাচ্ছেন খুলে বলুন ।
বসুন বসুন সবই বলছি।
তার আগে বলুন গত তিন মাসে যে ইয়াবা গুলো আটক তা তো এই থানাতেই ছিল এগুলা এখন কোথায় ?
সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জিশানের দিকে ।
ইতস্ততভাবে উত্তর দিল সেগুলো থানাতেই আছে..!সেগুলার তো এই কেইসের সাথে সম্পর্ক নেই অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
সম্পর্ক আছে বলেই তো বলছি আপনার কন্সটেবল কে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করুন ইয়াবা গুলো আছে কিনা…?
আলবাদ আছে আমি নিজে ওগুলা রেখেছি জোর গলায় বলল জসিম।
তাহলে এগুলা কি বস্তার মুখ খুলে ইয়াবাগুলো দেখাল জিশান । সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
কিছু বুঝতে না পেরে ফারহান সাহেব বললেন একটু খুলে বল না আর সহ্য হচ্ছে না যে।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল জসিম ।
ফারহান সাহেবের আদেশে চার পাশে গিরে দাড়াল পুলিশ।
জিশান বলতে শুরু করল ।
কেইসটা শুধু বাংলো নিয়ে নয় ।
জামশেদ সাহেব একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী ।
জসিম সাহেবের সাথে হাত করে ঢাকাতে তিনি তার ব্যবসা সুন্দর ভাবে চালাচ্ছিলেন ।
কিন্তু কয়েক মাস আগে জসিম সাহেব এই এলাকায় ট্রান্সফার হলে জামশেদ সাহেবের ব্যবসায় ব্যগাত ঘঠে ফলে তিনি এই এলাকায় চলে আসেন ।
এখানে এসে তিনি জসিম সাহেবের সাথে ঢিল করতে গেলে জসিম সাহেব উচ্ছ মুল্যে ইয়াবা গুলো বিক্রয় করে দেয় ।
অন্যদিকে রফিক ও কামাল দুজন জামাল সাহেবের শালা হন ।
বোনের সাথে কথা বলে তারা এই বাংলোটা দখল করতে চেয়েছিল ।
কারন সন্তান না হওয়ায় মিসেস রাবেয়া আর জামাল সাহেবের মধ্যে সম্পর্ক টা ভাল যাচ্ছে না তাই বাংলো টা দখল করে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি ।
কিন্তু ভয় দেখাতে গিয়ে ওই দিন কাজ করতে আসা লোকটির মৃত্যু হওয়ার পর যখন ওরা বাড়ি পিরছিল তখন জামশেদ সাহেব কে দেখে পেলেন ইয়াবা সহ । পুলিশ কে বলার কথা বলল জামশেদ ওদের কে এই ভয় দেখায় যে খুন করার কথা ও বলে দিবে।
তখন চোরে চোর মাসতুতো ভাই হয়ে যায়।
জামশেদ সাহেব তার ইয়াবা ঐ গর্তে রেখে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সাথে দেখা করতে যায় সাথে লেখাটা ছাপানো ও হয় ।
কিন্তু ঐ ব্যবসায়ীর সাথে হিসেব মিলাতে না পেরে এক পর্যায়ে চলে আসে জামশেদ সাহেন।
এর পর যখন আমরা ঐ লোকটার সন্ধান করে না পায় তখন চলে আসার সময় উনার সাথে দেখা হয়।।
পুলিশের ভয় দেখালে উনি সব কিছু বলতে বাধ্য হন ।
দুর্ভাগ্য বসত রাতেই উনি ট্রেন থেকে পালিয়ে যায়।
বলে থামল জিশান ।
গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হল রাবেয়া আর জসিম সহ অন্য তিনজন কেও ।
জামাল সাহেব এসে বললেন আমাকে ক্ষমা কর বাবা আমি তোমার কাচ থেকে এই বিষয়টা লুকিয়ে ছিলাম যে আমার স্ত্রীর সাথে আমার সম্পর্ক ভাল নয় কিন্তু সে যে এমন করবে তা ভাবিনি ।
তুমি আমার চোখ খুলে দিলে ।
জামাল সাহেব কে শান্তনা দিয়ে জিশান বলল আংকেল “আমরা যা সব সময় দেখি তা মুল রহস্য নয় মুল সহস্য তো সেটাই যেটা লুকিয়ে থাকে “যা সবাই দেখে না ।
জসিমের দিকে চেয়ে ফারহান সাহেব বলল যে ইউনিফর্ম টা গায়ে দিয়েছ তার সম্মান রাখতে পারলে না। সরকার তোমাদের কে দেশের শান্তি রক্ষার জন্য মাসে মাসে বেতন দিয়ে যাচ্ছে আর তোমরা সরকারের টাকা খেয়ে সরকারের ক্ষতি করে চলছ ।
মুনা গিয়ে রাবেয়া বেগম কে বলল আপনার অসুবিধার কথা অন্তত নিজের স্বামীর সাথে শেয়ার করতে পারতেন । উনি সমাধাম বের করে দিতেন । কিন্তু লোভ আপনাকে অন্ধকরে রেখেছিল । যার ফলে নিজের স্বামীর ক্ষতি করতে ও আপনার হাত কাপেনি ।
ওদের কে নিয়ে চলে গেল পুলিশ ।
জামাল সাহেবের কাছে বিধায় নিয়ে
ফারহান সাহেব কে নিয়ে
জিশানও চলল তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
………………………………………….(সমাপ্ত)……………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত