প্রতিদিনের মতো আজও সন্ধ্যার সময় আম্মুর হাতের গরম গরম কফি খেয়ে ফোন গুতাচ্ছি।এখন আপাতত পড়াশুনা নেই তাই ফোন হয়েছে সময় কাটার সাথী। আম্মু এক গাল বকে চলে গেলো। আমার নাকি খেয়ে কাজ নেই সারা দিন শুয়ে থাকা আর ফেসবুক চালানো। কোনো কথা কানে না নিয়ে ফেসবুকে গল্পে মজে গেলাম।খুব গান শুনতে ইচ্ছে করছে তাই হেডফোন কানে দিয়ে প্রিয় গান গুলোর মধ্যে একটা শুনতে লাগলাম। গল্প ছেড়ে এবার গানে মন চলে এসছে,,,,,তুমি আমার মনের মানুষ মনেরি ভেতর,,,হেব্বি লাগছিল গানটা সাউন্ড একটু বাড়িয়ে দিলাম।একবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আম্মু টেবিলে কি যেন রেখে আমাকে কিছু একটা বলে দরজা লাগিয়ে চলে গেলো।ঘাড় উঁচু করে দেখলাম বাটিতে পায়েস রেখে গেছে।ভাবলাম হয়তো পায়েস খাবার কথায় বলে গেলো। গান শুনতে শুনতে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।জাগা পেয়ে দেখি ফোনে গান বেজেই চলেছে।রাত ১২ টা বেজে গেছে।আম্মু ও নেই পাশে।
ভাবলাম বাথরুমে গেছে। তাই নড়েচড়ে আবার শুয়ে পরলাম।তখনি মনে হলো সন্ধ্যা রাতে আম্মু পায়েস রেখেছিল এখন উঠে খায়।উঠে দেখি পায়েসের বাটি ফাকা।মাথার মধ্যে চিড়িক করে উঠল রাগে।নিশ্চয় আম্মু না হয় বিড়াল খেয়ে ফেলছে।টিন সেট বাড়ি আমাদের। চালে কিছু পরলে বোঝা যায়।মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসছে প্রথমে বড় বড় বৃষ্টির ফোটা পরতে লাগলো। অনেকক্ষণ হয়ে গেলো আম্মুর কোনো নাম গন্ধ নেই।কয়েকবার আম্মু আম্মু করে ডাকলাম। কোনো সাড়া নেই।পাশের ঘরে দাদী আছে দাদীকেও ডাকলাম উত্তর নিলো না।গ্রামের বাড়ি গ্যাসে রান্না করলেও জ্বালানী কাঠ খড়ি দিয়ে রান্না করার জন্য আম্মু উঠানেরর এক পাশে একটা মাটির চুলা পেতেছে।বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাবে বলে আমি নিজেই উঠে গেলাম চুলা ঢাকার জন্য।অন্য দিন হলে বাইরে বের হই না।কারণ আমাদের বাড়ির সামনে কবরস্থান। আমার ঘরের দরজা খুললেই সোজা গিয়ে কবরস্থানের ভিতরে চোখ যায়।ইট দিয়ে আমাদের বাড়িরর সামনের দিকে হাফ পাচিল করা। তবুও বারান্দা থেকে দেখা যায় কবরস্থান। আম্মু যেহেতু বাথরুমে আছে সেই সাহসে বাইরে এলাম একবার চোখ গেলো কবরস্থানের দিকে।পাশের মসজিদ থেকে লাইন করে তিন দিকে তিনটা ফিউজ দিয়েছে কবরস্থানে।তিন দিন আগে এক লোক মারা গেছে ক্যারেন্টের আলোয় নতুন কবর ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। সেদিকে আর না তাকিয়ে সোজা চুলা ঢাকলাম তখনি চোখ গেলো বাথরুমের দিকে। বাথরুমে দরজার নিচে ফাকা দিয়ে আলো দেখা যায়।কিন্তু আলো নেই।তার মানে আম্মু বাথরুমে নেই।কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগলো। আম্মুর রুমে তাকিয়ে দেখি তালা দেওয়া।সাথে সাথে দাদীর রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি দাদীর রুমেও তালা ঝুলছে।এক নিমিষে যেন চারিদিক থেকে ভয় এসে জেকে ধরলো আমাকে।মনে হচ্ছে এক লাফে ঘরে চলে যায়।বার বার আল্লাহ আল্লাহ বলতে বলতে বারান্দায় উঠে এলাম। রুমে ঢুকতে যাবো ঠিক তখনি কিছু একটা ফুটে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম অনেক জরে।বুকের মধ্যে ধক করে উঠল পিছে তাকিয়ে দেখি কবরস্থানের বাম পাশের বাল্ব নিভে গেছে।মনে হচ্ছে আম্মু বলে চিৎকার দেয় একটা। কিন্তু আগেপিছু না ভেবে রুমে ঢুকে গেলাম। দরজা লাগাতে যাবো তখনি দেখি আম্মু একটা ঝাটা (ঝাড়ু) হাতে গেট খুলে বের হয়ে গেলো। গেটের বাইরে কিছু শুকনা কাঠ পাচিলের সাথে রোদে দেওয়া ছিল তাই হয়তো আম্মু সেগুলো আনতে গেলো। একা একা গেলো ভয় পেতে পারে ভেবে আমি ফোনের আলো জালিয়ে আম্মু আম্মু বলে ডাকতে ডাকতে আম্মুর কাছে গেলাম।গিয়ে দেখি আম্মু কাঠের কাছে না কবরস্থানের গেট খুলে ভিতরে যাচ্ছে।আমি বার বার আম্মু কে ডাকছিলাম আম্মু ঐদিকে কই যাও। কিন্তু কোনো সাড়া না দিয়ে ভিতরে নতুন কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আমি যে এত ভিতু অথচ এখন একটু ও ভয় লাগছে না কারণ আমার আম্মু আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।আমিও গিয়ে আম্মুর পিছে দাঁড়ালাম। আর আম্মু বকতে লাগলাম।
,
যে লোকটা মারা গেছে এই লোক কি তোমার বাপ হয় যে এতো রাতে ঝাটা হাতে কবরের কাছে ভুত তাড়াতে আইছাও আম্মু।কখন থেকে ডাকছি তাকাচ্ছাও না।কি হইছে আম্মু তোমার।
,
আমি এতো কথা বললাম অথচ আম্মু এক কথার ও জবাব দিলো না।অন্য সময় যদি আমি আমার নানুভাইকে নিয়ে কিছু বলি তো আম্মু আমার বংশ ধুয়ে দেয়।মনে মনে ভাবলাম আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আম্মু এমন করছে তাই একটু রেগেই আম্মু কে বকে দিলাম আর বললাম তুমি থাকো আমি চলে গেলাম।বলেই আমি কয়েক ধাপ সামনে আগাতেই আবার তখনকার মত ফিউজ ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার আওয়াজ পেলাম আর একটু অন্ধকার হয়ে এলো চারিদিক। পিছে তাকিয়ে দেখি নতুন কবর পুরা অন্ধকারে দেখে গেছে।আম্মু কেও দেখা যাচ্ছে না।আমি এবার খুব ভয় পেয়ে গেলাম।ঘামতে শুরু করেছি।ফোনের আলো ফেললাম কবরের দিকে দেখি কেউ নেই আম্মু ও নেই।হঠাৎ দম করে আগুন জ্বলে উঠল কবরের ঠিক মাঝখানে।ভয়ে খুব জোরে চেঁচাতে লাগলাম মনে হচ্ছে আল্লাহ এখন আমাকে এখানেই অজ্ঞান করে দাও যাতে আর কিছু দেখা না লাগে।আগুন একবার জ্বলছে আর একবার নিভছে আমি একপা দুপা করে পিছাচ্ছি আর চেঁচাচ্ছি আম্মু আম্মু বলে।তখনি হুরমুর করে একটা গর্তে পরে গেলাম।বুঝতে বাকি রইলো না যে পুরানো কবরের মধ্যে পরে গেছি।চারপাশ কেমন ঝাপসা হয়ে আসছিল।মাথা ঘুরতে লাগলো তারপর আর কিছু মনে নেই।কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানিনা আস্তে আস্তে যখন জ্ঞান ফিরছিল তখন মনে হচ্ছিল কেউ আমার পা ধরে টানাটানি করছে চোখ বন্ধ করেই এক ঝটকায় পা ছাড়িয়ে নিলাম আর চেঁচাতে লাগলাম। তখন কানে ভেসে আসছিল ছোট কাকার কন্ঠ। আমাকে ডাকছিল কাক।
,
কাকা ; ঝুম ঝুম বাবা তাকা দেখ আমি অনি।
,
আম্মুর গলাও শুনতে পেলাম।চোখ খুলে দেখি আমি আমার ঘরে বিছানাতে।পাশে আম্মু,দাদী, কাকা,ডাক্তার, মসজিদের ইমাম আর পাড়া প্রতিবেশীরা ঘিরে রেখেছে আমাকে।এতো খন যে আমার পা টানাটানি করছিল তিনি হলো ডাক্তার।পায়ে অনেক কেটে গেছে সেগুলো ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল।আম্মু কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম।গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।আম্মু জিজ্ঞেস করলো আমি রাতে কবরস্থানে কেন গিয়েছিলাম।আমার চিল্লানী শুনে মসজিদের ইমাম সাহেব বেরিয়ে আসে পাশের বাড়ির লোকজন ও এসে আমাকে ভাঙা কবরের মধ্যে থেকে তুলে বাড়িতে আনে।রাতের সব কথা আমি সবাই কে খুলে বলি। আম্মু এক ধমক লাগিয়ে দিলো। আমি কিছু না বুঝে কেঁদে ফেললাম।
,
আম্মু ; তোকে যে বার বার ডেকে বললাম আমি আর তোর দাদী তোর ছোট দাদীকে দেখতে গেলাম অনি ঘরে আছে।তুই দরজা লাগিয়ে পায়েস খেয়ে ঘুমিয়ে পর।আমরা রাতে ওখানেই ছিলাম।
,
আম্মুর বকুনির মধ্যেই দাদী ফোড়ন দিলো।
,
দাদী ; কথা কি কানে যায়, যায় না তো কানের মধ্যে ঐ ডুগডুগির মেশিন দিয়ে রাখলে দুনিয়ার কথা কি করে শুনবে।।
,
সবাই কে থামিয়ে দিয়ে ইমাম সাহেব সবার উদ্দেশ্য করে বলে গেলো। এই কবরস্থান থেকে একটু সাবধান থাকতে। কারণ অপঘাতে মরা (মানে গলায়দড়ি, বিষ খাওয়া মরা) কবরস্থানের পাশে খালি ভিটায় মাটি দেওয়া হয়েছে।অনেক সময় অনেক বার অনেকেই খারাপ আত্মাদের পাল্লায় পরে এই কবরস্থানে ভয় করেছে।
যদিও কবরস্থান পবিত্র জায়গা তবুও অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে যায়।
,
,
…………………………………………….সমাপ্ত………………………………………….
গল্পের বিষয়:
ভৌতিক