ফুটবলে সর্বোচ্চ সম্মানজনক ব্যক্তিগত পুরস্কার হল ব্যালন ডি অর। প্রতি বছর একজন খেলোয়াড়ের হাতে তুলে দেয়া হয় এই ব্যালন ডি অর। ১৯৫৬ সাল থেকে দেয়া এ পুরষ্কারের তালিকা ঘাটলে দেখা যাবে বেশিরভাগ ব্যালনজয়ীই মধ্যমাঠ কিংবা আক্রমণ ভাগের খেলোয়াড়। এই ট্রফি জেতা এখন পর্যন্ত একমাত্র গোলকিপার লেভ ইয়াশিন। ১৯৬৩ সালে ব্যালন জিতেন তিনি। তারপর থেকে এমনকি তার আগেও কোনো গোলকিপার ব্যালন ডি অর পায়নি।
ফ্যাবিও ক্যানাভারো (ইতালি)
এই ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ২০০৫/০৬ মৌসুমের পারফরমেন্সের জন্য ব্যালন জিতেছে। সেই সিজনে জুভেন্টাসে বুফন আর থুরামের সাথে দারুণ এক জমাট রক্ষণভাগ তৈরি করেছিল এই ডিফেন্ডার। তাদের এই দারুণ ডিফেন্সের দরুন সে মৌসুমে টানা দ্বিতীয় বারের মত সিরি আ জিতে জুভেন্টাস।
ব্যালনজয়ী ফ্যাবিও ক্যানাভারো সোর্স
সেই বছরই অর্থাৎ ২০০৬ বিশ্বকাপে ইতালিকে নেতৃত্ব দেন ক্যানাভারো। তার নেতৃত্বগুণে আর রক্ষণে তার পারফরমেন্সে ফাইনালে যায় ইটালি এবং ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে জিতে নেয় সোনার তৈরি সেই ট্রফিটি। পরের বছর মাদ্রিদে যোগ দেন ক্যানাভারো এবং রোনালদিনহো এবং জিদানকে হারিয়ে জিতে নেন ফিফা বেস্ট প্লেয়ার এর খেতাব। সেই বছর ২৭ নভেম্বর ক্যানাভারো তৃতীয় ডিফেন্ডার হিসেবে জিতে নেন ব্যালন ডি অর। এখন পর্যন্ত ব্যালন জেতা তৃতীয় ডিফেন্ডার ক্যানাভারো।
ম্যাথিয়াস সামার (জার্মানি)
ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় মধ্যমাঠে খেলা সামারকে হঠাতই তৎকালীন বরুশিয়া ডর্ট্মুন্ড ম্যানেজার ওট্মার হিটজফিল্ড বলেন ডিফেন্সে সুইপার এর ভূমিকায় খেলতে। তখন ১৯৯৩/৯৪ মৌসুম চলছিল। ততদিনে মিডফিল্ডার হয়ে অনেক কিছু জেতা হয়ে গেছে সামার এর। স্টাটগার্টের হয়ে বুন্দেসলীগা এবং দুইটি ডিডিআর-ওবারলীগা এবং ডায়নামো ড্রেসডেন এর হয়ে একটি পোকাল কাপ। এই অবস্থায় এরকম সিদ্ধান্ত ছিল জুয়া খেলার মত। যাই হোক কোচ হিটজফিল্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নেন তিনি।
ব্যালন হাতে জার্মান খেলোয়াড় ম্যাথিয়াস সামার সোর্স
১৯৯৪/৯৫ এবং ১৯৯৫/৯৬ সিজনে টানা দুইটি বুন্দেসলীগা জেতা ডর্ট্মুন্ডের দলে সামারের অবদান ছিল অনেক বেশি। টানা দুই মৌসুমে সুপার কাপও জিতেন এই খেলোয়াড়। ৯৬ এর ইউরোতেও ভূমিকা পালন করেন তিনি। টুর্নামেন্টে দুই গোল করেন এবং ইউরোর প্লেয়ার অফ দ্যা টুর্নামেন্টের খেতাব পান। জার্মানিও সেবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়। তার এই দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য সে বছর ব্যালন ডি অর জিতে দ্বিতীয় ডিফেন্ডার হিসেবে নাম লেখান ইতিহাসের পাতায়।
ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার (পশ্চিম জার্মানি)
সর্বপ্রথম ও একাধিকবার ব্যালন ডি অর জেতা একমাত্র খেলোয়াড় ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। ১৯৭২ সালে স্বজাতি গার্ড মুলার এবং গান্টার নেটজারকে হারিয়ে ব্যালন ডি অর জিতেন বেকেনবাওয়ার। ১৯৭৬ সালেও একবার জিতেন তিনি।
ব্যালন জয়ী সর্বপ্রথম ডিফেন্ডার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার সোর্স
এই কিংবদন্তি ডিফেন্ডারকে ফুটবল ইতিহাসের সেরা ডিফেন্ডার বলা হয় অনেক সময়। ডিফেন্স জগতে এক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন তিনি। আধুনিক ডিফেন্সের যে সুইপার রোল,এর প্রবর্তক ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। বায়ার্নের হয়ে টানা তিনবার ইউরোপিয়ান কাপ জেতার পাশাপাশি জার্মানির হয়ে জিতেন ১৯৭৪ বিশ্বকাপ এবং ১৯৭২ এর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় জার্মান হিসেবে বেকেনবাওয়ার জিতে নেন ব্যালন ডি অর। ১৯৭৬ সালে দলের জন্য আরো বড় ভূমিকা পালন করে সে বছর ২৮ ডিসেম্বর জিতে নেন তার দ্বিতীয় ব্যালন। খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেয়ার পর ম্যানেজার হিসেবেও বিশ্বকাপ জিতে ফুটবলের ইতিহাসে সর্বপ্রথম একজন ক্যাপ্টেন এবং একজন ম্যানেজার হিসেবে বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড করেন।