জর্জ বেস্ট: ফুটবলের গ্রিক দেবতা আকিলিস

জর্জ বেস্ট: ফুটবলের গ্রিক দেবতা আকিলিস

২৫ নভেম্বর। ফুটবলের জন্য শোকের একটি দিন। আসলে ফুটবলের জন্য নয়। বরং সমগ্র পৃথিবীর জন্যই। কারণ এই দিনে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন ফুটবল ঈশ্বরখ্যাত ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ থাকবে আরেকটি কারণে। দিনটিতে ইহজগত ছেড়ে গিয়েছিলেন আরেকজন কিংবদন্তি ফুটবলার। জর্জ বেস্ট। আজ থেকে পনের বছর আগে ২৫ নভেম্বর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছিলেন জর্জ বেস্ট।

১৭ বছরের তরুণ জর্জ বেস্ট

১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যানেজার ম্যাট বাসবির কাছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের স্কাউট বব বিশপের একটি টেলিগ্রাম আসে। বিশপ সেখানে লিখেছেন, “মনে হয় আমি তোমার জন্য এক জিনিয়াসকে খুঁজে পেয়েছি।“ টেলিগ্রামটি ছিল বেলফাস্টের ক্রেগাঘের জর্জ বেস্টকে নিয়ে। ইউনাইটেড তখনও বুঝতে পারেনি যে তারা কি এক অমূল্য রত্ন পেয়েছে। পরবর্তী দশকে বেলফাস্টের সেই চুপচাপ লাজুক ছেলেটি হয়ে উঠেছিল ব্রিটিশ ফুটবলের সবচেয়ে বড় নাম।

পেলের দৃষ্টিতে তিনি সেরা খেলোয়াড়। ম্যারাডোনার মতে মাঠে যাদু দেখানোর ক্ষেত্রে বেস্টের সাথে তার নিজের ভালোই সাদৃশ্য রয়েছে। শুধু নিজের প্রজন্মেরই নয়, বরং সমগ্র ফুটবল জগতের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে উপরের দিকে থাকবেন তিনি। বেকহাম- রোনালদোদের আগেও ফুটবল সুপারস্টার ছিলেন এই ব্যাক্তিটি। ইয়োহান ক্রুইফের মতে, “তার যা ছিল সেটা আর কারও ছিল না, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটা অর্জন করা সম্ভব নয়। নামের মধ্যেই রয়েছে তার উপাধি। জর্জ বেস্ট।

জর্জ বেস্ট

দারুণ ব্যালেন্স, বলের উপর দক্ষতা, মারাত্মক ফিনিশিং এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করে যাবার অসাধারণ ক্ষমতা- এসবগুলো গুণই ছিল বেস্টের মধ্যে। ফুটবল বিধাতা যেন নিজ হাতে ফুটবলীয় সব দক্ষতা দিয়ে নিজ হাতে গড়েছেন এই লোকটাকে। দক্ষতা এবং শক্তির দারুণ মিশেলে গড়া এমন ফুটবলার খুব কমই পেয়েছে ফুটবল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বেস্টকে তুলনা করা যায় গ্রীকদেবতা আকিলিসের সাথে। যেন ফুটবলের আকিলিস জর্জ বেস্ট। বল নিয়ে যখন এগিয়ে যেতেন নিজের ফুটবল স্কিল দেখিয়ে নির্মমভাবে পিছনে ফেলে যেতেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের। ক্ষিপ্রতার সাথে ডিফেন্সকে কাঁচকলা দেখিয়ে এগিয়ে যেতেন গোল অভিমুখে। কিন্তু ফুটবলের অন্যান্য ট্র্যাজিক হিরোদের মত এই ফুটবলারেরও রয়েছে একটি কালো দিক। ফুটবল মাঠে যেমন বল তার সঙ্গী ছিল, মাঠের বাইরে তার সঙ্গী ছিল অ্যালকোহল। অ্যালকোহলের জন্য অত্যধিক প্রেমই এই ফুটবলারের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরবর্তীতে।

ম্যাট বাসবির গুরুকুলে ডেনিস ল এবং ববি চার্ল্টনদের মত খেলোয়াড়দের নেতৃত্বে গড়ে উঠা শুরু হয় বেস্টের। বয়স যখন ১৭, এই নর্দার্ন আইরিশম্যান ২৬ ম্যাচে গোল করেন ছয়টি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে হয়ে উঠেন ইউনাইটেডের সেরা ত্রয়ীর একজন। ল এবং স্যার চার্ল্টনদের সাথে মিলে গড়ে তুলেন মারাত্মক আক্রমণভাগ। এরপরের মৌসুমে বেস্ট দলে কেবল নিজের জায়গাই পাকাপোক্ত করেননি, প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। তার খেলায় মাঠে ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস উঠে যেত। সেই মৌসুমে ৫৯ ম্যাচে গোল করেছিলেন ১৪টি।

১৯৬৫ থেকে ১৯৭২ সাল সময়টুকু ছিল বেস্টের ক্যারিয়ারের সেরা সময়। এসময় তার ফর্ম ছিল তুঙ্গে। রেড ডেভিলদের জন্য নিয়মিত গোল করা এবং করানো তার জন্য তখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তবে পরিসংখ্যান দেখে বেস্টের খেলার মর্ম বুঝা সম্ভব নয়। তার খেলার সৌন্দর্য ছিল মাঠে। গোলগুলো করতেন নিজের ড্রিবলিং দিয়ে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করে। প্রতিপক্ষ কখনো ছিল একজন, কখনোবা নয়জন। ১৯৬৫ সালে ইউনাটেডকে ফার্স্ট ডিভিশন টাইটেল জিততে সাহায্য করেন বেস্ট। পরের মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপে বেস্টের একক নৈপুণ্যে ইউনাইটেডকে ৫-১ গোলে হারিয়ে দেয় ইউনাইটেড, তাও তাদের নিজেদের মাঠে। এই ম্যাচের পর ইংলিশ প্রেস মিডিয়া তাকে ‘দ্য ফিফথ বিটল নামে অভিহিত করে। কিন্তু এই ম্যাচের পর হাঁটুর ইনজুরিতে পড়ে বেস্ট মৌসুমের বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলতে পারেননি। সেই মৌসুমে ইউনাইটেডও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ম্যাট বাসবির ইউনাইটেড আবার ফার্স্ট ডিভিশন টাইটেলের শীর্ষে উঠে আসে। ক্যারিয়ারের সেরা মৌসুম পার করে বেস্ট- ডেনিস ল- ববি চার্ল্টন ত্রয়ীর আক্রমণভাগ। এই ত্রয়ীর একটি ভাস্কর্য এখনও ওল্ড ট্রাফোর্ড স্টেডিয়ামের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সগর্বে।

১৯৬৮ সালটি বেস্টের জন্য ছিল স্বর্ণালী সময়। সেবছর ফুটবল রাইটার্স এসোসিয়েশন জর্জ বেস্টকে ঘোষণা করে ফুটবলার অফ দ্য ইয়ার হিসেবে। সবচেয়ে কমবয়সে এ এওয়ার্ড জেতার রেকর্ড করেন বেস্ট। এ বছর ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বেস্ট আরও জেতেন ব্যালন ডি অর। ততদিনে মিউনিখের প্লেন দুর্ঘটনার দশ বছর পেরিয়ে গেছে। নিজেদের সেরা কিছু ইয়াংস্টার এবং ম্যানেজারকে হারানো সেই দুর্ঘটনার পর ইউরোপিয়ান স্টেজে নিজেদের নাম সেভাবে তুলে আনতে পারছিল না ইউনাইটেড। জর্জ বেস্ট নিজ গুরু ম্যাট বাসবির ইউরোপ জয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ করেন।

১৯৬৮ সালে ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে জর্জ বেস্ট করেন ইউনাইটেডকে লিড এনে দেয়া গোলটি

ওয়েম্বলিতে সেই রাতে নব্বই মিনিট শেষে স্কোরকার্ড ছিল ১-১। অতিরিক্ত সময় শুরু হবার মাত্র তিন মিনিটেই ইউনাইটেডকে লিড এনে দেন বেস্ট। দারুণ এক দৌড়ে শক্তিশালী বেনফিকার ডিফেন্সকে ঘোল খাওয়ানোর পর সামনে ছিল কেবল গোলকিপার। অসাধারণ এক ডামি মুভ দিয়ে গোলকিপারকেও দেখিয়ে দেন আকাশ ভরা তারা। ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি গোল দুটি করেন ব্রায়ান কিড এবং ববি চার্ল্টন। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় ওল্ড ট্রাফোর্ডে মনে রাখার মত ঘটনা হিসেবে থাকবে বেস্টের গোলটিই। সেটি অবশ্য দুই বছর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে জিওফ হার্স্টের করা গোল দুটি বাদ দিলে।

“আমার স্বপ্ন ছিল বল নিয়ে গোলকিপারকে পাশ কাটিয়ে তারপর নিজের হাঁটু আর হাতের উপর ভর দিয়ে হেডে গোল দেয়ার এক স্মৃতিচারণে বলেন বেস্ট। মাত্র বাইশ বছর বয়সেই ক্লাবকে ইউরোপিয়ান কাপ জিতিয়ে বেস্ট বিশ্বকে জানান দেন যে তিনি কেবল নিজ দেশেই নন, বরং নিজ মহাদেশেও ‘বেস্ট’। সেই মৌসুম তিনি শেষ করেন ৫৩ ম্যাচে ৩২ গোল করে। এই গোল গুলো করেন তিনি একজন রাইট উইঙ্গার হয়েও।

১৯৬৮ সালে ইউরোপিয়ান ট্রফি হাতে জর্জ বেস্ট

পরিসংখ্যান-অর্জন এই সবই বলে দেয় যে দারুণ এক ক্যারিয়ারের শুরু হবে এখন। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। এরপর আর কোনো ট্রফিই জিতেননি বেস্ট দলের হয়ে, ব্যাক্তিগত এওয়ার্ড দূরে থাক। ২৬ বছর বয়সে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে ইউনাটেড থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। এরপর শুরু হয় বেস্টের যাযাবর জীবন। স্টকপোর্ট কান্ট্রি, কর্ক সেল্টিক, লস এঞ্জেলস আজটেকস, ফুলহাম, হাইবারনিয়ান, স্যান জোসে আর্থকোয়েকস, বোর্নমাউথ এবং ব্রিসবেন লায়ন্সের মত দলের হয়ে ক্যারিয়ারের বাকি দিনগুলো কাটাতে হয় তাকে। ১৯৬৮ এর সেই ফাইনাল জেতার পর একধরনের ক্লান্তি জেকে বসেছিল বেস্ট এবং তার দলের উপর।

১৯৬৯ সালে নিজেদের শিরোপা পুনরুদ্ধারে ব্যার্থ হয় ইউনাইটেড। লিগ শেষ করে পয়েন্ট টেবিলের ১১ নম্বর পজিশনে থেকে। মৌসুম শেষ বিদায় নেন স্যার ম্যাটস বাসবিও। বেস্ট পরে এক সাক্ষাতকারে বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল দলকে আমি একাই টানছি। যতই দিন আগায়, বেস্টের খেলা পড়তির দিকে যেতে থাকে। মাঠে তার সঙ্গী ববি চার্ল্টন এবং ডেনিস ল এর খেলায় ততদিনে বয়সের ছাপ বুঝা যাচ্ছিল। মাঠের বাইরে তার জীবন সুখকর ছিল না। বছরের প্রত্যেকটা দিনই মদ গিলতেন তিনি। মাঠের বাইরে অ্যালকোহল আর নারী ছিল তার সঙ্গী। এক অভিনেত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর জন্য ইউনাটেডের একটি ম্যাচও ছেড়ে দেন তিনি।

ম্যানচেস্টারের এক শহরতলীতে সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে একটি বাড়ি তৈরি করেছিলেন তিনি। বিপুল অর্থ খরচ করে। কিন্তু ভক্ত-পর্যটকদের উৎপাতে মাত্র তিন বছর সেখানে ছিলেন। এরপর ফিরে আসেন নিজের আগের ঘরে।

বাসবির বিদায়ের পর ইউনাটেডের দায়িত্ব নেন উইলফ ম্যাকগিনেস নামের এক কমবয়সী ম্যানেজার। নতুন ম্যানেজারের অধীনে এবং পুরাতন খেলোয়াড়দের বয়সের কারণে খেলা পড়তির দিকে থাকায় এর প্রভাব পড়ে বেস্টের খেলায়ও। লাল কার্ড খেয়ে ম্যাচ সাস্পেন্সনশন তার জন্য নিয়মিত হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭০ এর শুরুর দিকে রেফারির হাতে থাকা বলে লাথি মেরে চার সপ্তাহের জন্য মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। ব্যান থেকে ফিরেই আবার নিজের পুরাতন রূপে ফিরে আসেন।

এফএ কাপে নর্দাম্পটনের বিপক্ষে করেন ছয় গোল। দল জিতে ৮-২ গোলে। ১৯৭০ সালে স্যার বাসবি ম্যানেজার হিসেবে ফিরে আসেন। কিন্তু বেস্টের কোনো উন্নতি হয়নি তাতেও। দুর্ব্যবহারের জন্য কার্ড খেয়ে এফএ’র কাছে জরিমানা দিতে হয়। স্টামফোর্ড ব্রিজের এক এওয়ে ম্যাচ মিস করেন অভিনেত্রী কুজাকের সঙ্গে রাত কাটাবেন বলে। ফলে ইউনাইটেড তাকে দুই সপ্তাহের জন্য সাসপেন্ড করে। মাঠে তিনি নিজের খেলা খেলে গেলেও ইউনাটেডের কোনো উন্নতি দেখা যাচ্ছিল না। বেস্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে আর নয়। জানুয়ারিতে তিনি টানা এক সপ্তাহ ট্রেইনিংয়ে আসেননি মিস গ্রেট ব্রিটেন ক্যারোলিন মুরের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে।

পুরো মৌসুমে মাত্র দুই ম্যাচ হারা ইউনাইটেড সাত ম্যাচ হেরে বসল। পয়েন্ট টেবিলে নেমে গেলো নিচের দিকে। বেস্ট দলে ফিরে এলেন, হয়ে গেলেন দলের টপ স্কোরার এবং দল সেই মৌসুম শেষ করল ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে। পরের মৌসুমে তিনি ঘোষণা দিলেন তিনি ফুটবল থেকে অবসর নিবেন!

মুড সুইংয়ের ফলে নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে খুব দ্রুতই ফিরে এলেন বেস্ট। ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে প্রি-সিজনের ট্রেনিঙয়ে যোগ দেন। তার ব্যবহার দিন দিন অবনতির দিকে যেতে থাকে। ১৯৭৪ সালে নিউ ইয়ার্স ডে’তে ইউনাইটেডের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেন তিনি। এরপর আর কখনোই ইউনাইটেডের টেনিং্যেও আসেননি কিংবা তাদের হয়ে মাঠেও নামেননি। তার ইউনাইটেড ক্যারিয়ার শেষ হয় ৪৭০ ম্যাচে ১৭৯ গোল নিয়ে। মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই নিজের ফর্ম হারিয়ে ফেলেন বেস্ট কিন্তু অ্যালকোহলে তার আসক্তি তখন তুঙ্গে। ফুটবল ছেড়ে দেয়ার পর তার খ্যাতিও চলে যায়। কিন্তু অ্যালকোহল আসক্তি যায়নি, বরং বাড়ছিল। শেষ দিকে এসে লিভার ড্যামেজে ভোগার কারণে লিভার ট্রান্সপ্লান্টও করান। ট্রান্সপ্লান্টের ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার শরীরের অনেক অঙ্গ বিকল হয়ে যায় এবং ফুসফুসের ইনফেকশনে মারা যান তিনি।

কভেন্ট্রি সিটির বিপক্ষে জর্জ বেস্ট

মাঠের বাইরে উশৃঙ্খল জীবনযাপন করলেও মাঠে তিনি ছিলেন অদম্য। হার্ড এন্ড ফাস্ট ফিজিকাল ফুটবলের যুগে ড্রিবলিংকে বেস্ট দিয়েছিলেন অন্য রূপ। মাঠে নোবি স্টাইলস, পিটার স্টোরি, রন হ্যারিসদের মত খেলোয়াড়দের রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়াতেন নিজের ড্রিবলিং দিয়ে। ট্যাকল এড়িয়ে যাওয়া, ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করা, অসম্ভব অ্যাঙ্গেল থেকে শট নেয়া এগুলো ছিল বেস্টের খেলার অংশ। খেলার মাঠে বেস্টের দক্ষতার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ১৯৭৬ সালে বেস্ট ততদিনে নিজের সেরা সময় পার করে এসেছেন। তার জাতীয় দল নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের খেলা ক্রুইফের নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে। সাংবাদিক ম্যাচের আগে বেস্টকে প্রশ্ন করেন ক্রুইফের ব্যাপারে আপনার মতামত কি? বেস্ট বলেন, অসাধারণ। সাংবাদিক আবার জিজ্ঞেস করেন, “আপনার চেয়েও?। হাসতে হাসতে বেস্ট বলেন, “তুমি মজা করছো, তাই না? আমি বলি আজ রাতে কি হবে। আজ রাতের ম্যাচে আমি ক্রুইফকে নাটমেগ করবো।

জাতীয় দলের হয়ে খেলার সময় ক্রুইফকে নাটমেগ করেন বেস্ট

ম্যাচ শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাম উইঙয়ে বল পান বেস্ট। গোলমুখে আগানোর পরিবর্তে তিনজন ডিফেন্ডারকে পাশ কাটিয়ে বেস্ট এগিয়ে যান ক্রুইফের দিকে, যিনি কিনা তখন মাঠের ডান পাশে। প্রতিপক্ষের দিকে এগিয়ে ঘাড় হালকা ডানবাম করে বল বাড়িয়ে দেন ক্রুইফের দুপায়ের ফাঁক দিয়ে। বলের দখল আবার নিজ পায়ে নিয়ে ডান হাত উপরে তুলে তিনি যে ফুরিয়ে যাননি তা জানিয়ে দেন সবাইকে।

ইউটিউবে বল পায়ে বেস্টের উইং দিয়ে অসাধারণ দৌড়, ডিফেন্ডারদের অনায়াসে পেরিয়ে যাওয়া দেখে আক্ষেপ হয়। হয়ত অ্যালকোহলের ফাঁদে না পড়লে ফুটবল বিশ্ব আরও কিছুদিন দেখতে পেত সেরা এই খেলোয়াড়টিকে। ইউনাইটেড ভক্তদের আক্ষেপ তো এক্ষেত্রে আরও বেশি হবার কথা।

গল্পের বিষয়:
ইতিহাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত