সাধারণত ফুটবলে ব্যাক্তিগত পছন্দের দিক দিয়ে আমরা এগিয়ে রাখি ক্রুইফ, রোনালদিনহো, রোমারিওদের মত তারকাদের। কারণ এই খেলোয়াড়দের গোল করার ক্ষমতা থেকেও বেশি যে ব্যাপারটা আমাদের ফুটবলের দিকে বেশি টানে, সেটি হলো তাদের ড্রিবলিং স্কিল। চুম্বকের মত পায়ের সাথে বল আটকে রেখে প্রতিপক্ষের একের পর এক খেলোয়াড়কে নিজের ড্রিবলিং স্কিল দিয়ে পরাস্ত করা কিংবা বল ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে ডিফেন্ডারকে হতভম্ব করে দেয়া অথবা প্রতিপক্ষের দুই পায়ের মাঝে দিয়ে বল নাটমেগ করে নিয়ে যাওয়া- ফুটবলারদের এই গুণগুলোর কারণেই সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা করতে বলা হলে এরকম কাউকেই আমরা বেছে নিব। কিন্তু এমনও খেলোয়াড় আছেন যারা বল পায়ে তেমন কারিকুরি না দেখিয়ে শুধুমাত্র গোলমুখে দাঁড়িয়ে বল জালে জড়িয়েই দলকে জিতিয়ে গেছেন। নিজের নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। এমন একজন খেলোয়াড় হলেন জার্মানির কিংবদন্তি স্ট্রাইকার জার্ড মুলার।
‘দ্য বম্বার’ খ্যাত জার্মান স্ট্রাইকার জার্ড মুলার
জার্ড মুলার ছিলেন জাত একজন স্ট্রাইকার, যার কাজই ছিল শুধু গোলপোস্টে বল ঢুকানো। নিজের এই কাজ সমগ্র ক্যারিয়ারে খুব নিষ্ঠার সাথেই করে গেছেন। জার্মানি ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে করেছিলেন বিশ্বজয়। গোলবারের সামনে তার এই দক্ষতার কারণে তার নাম ছিল ‘দ্য বম্বার।
ক্লাব ও দেশের হয়ে একের পর এক রেকর্ড ভাঙা এই জার্মানের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু হয় পনের বছর বয়সে টিএসভি ১৮৬১ নর্ডিংগেন ক্লাবের হয়ে। তাদের যুব দলে যোগ দেন মুলার। ওজন কম হবার কারণে তাকে দেখে খেলোয়াড় মনে হতো না। কিন্তু নিজের দ্রুতগতি দিয়ে সেই কমতি পূরণ করে দেন তিনি, তার উপর ক্ষীণকায় দেহ থাকা সত্ত্বেও এরিয়ালে তার দক্ষতা ছিল খুব বেশি।
টিএসভি ১৮৬১ নর্ডিংগেন ক্লাবের হয়ে জার্ড মুলার(বল হাতে খেলোয়াড়ের বাম পাশের জন)
১৯৬৩ সালে ১৮৬১ নর্ডিংগেন ক্লাবের মূল দলে ডাক পান তিনি। সিনিয়র দলের হয়ে প্রথম মৌসুমেই ক্ষুরধার স্ট্রাইকার হিসেবে সবার নজর কাড়েন। অভিষেক মৌসুমেই ৩২ ম্যাচে করেন ৫১ গোল। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ক্লাবগুলোর আগ্রহ বাড়ে এই পুঁচকে স্ট্রাইকারের প্রতি। কিন্তু বয়স কম হবার কারণে কোনো ক্লাবই তাকে দলের নেয়ার সাহস করছিল না। এমন অবস্থায় তার জন্য অফার আসে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে, ১৯৬৪ সালে। শোনা যায়, বায়ার্নের প্রেসিডেন্ট মুলারকে দলে চাইলেও কোচের তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। তবে শেষে ক্লাব প্রেসিডেন্টেরই জয় হয়। বায়ার্ন মিউনিখ দলে যোগ দেন অল্পবয়সী স্ট্রাইকার জার্ড মুলার।
শুনতে অবাক লাগতে পারে, মুলার যখন দলে যোগ দেন, বায়ার্ন তখন ছিল জার্মানির সেকেন্ড ডিভিশনের এক অখ্যাত দল। বাভারিয়ানদের হয়ে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের মত খেলোয়াড়ের সাথে খেলার সুযোগ হয় তার। তার ছোট পা এবং শক্তিশালী পেশীবহুল উরুর কারণে দলের কোচ শিক কায়কোভস্কি তাকে নাম দিয়েছিলেন ‘খাট মোটা মুলার। প্রথম দিককার ম্যাচগুলোতে তাকে মূল একদশে রাখতেন না কোচ। বেঞ্চেই কাটত তার বেশিরভাগ সময়। কিন্তু মাঠে নেমেই খুব দ্রুতই কোচকে বুঝিয়ে দেন যে তাকে এতদিন বেঞ্চে বসিয়ে রেখে কোচ আসলে ভুল করেছেন। অভিষেক মৌসুমেই নিজের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে বায়ার্ন দলকে মুলার সাফল্য এনে দেন। নিজের প্রথম মৌসুমেই দলের হয়ে ৩৩ গোল করে বায়ার্নকে তুলেন ফার্স্ট ডিভিশনে। সেই মৌসুমে বায়ার্ন শুধু দ্বিতীয় ডিভিশনের ডিভিশন চ্যাম্পিয়নই হয়নি, জিতেছিল নিজেদের ইতিহাসের প্রথম জার্মান কাপ।
ধীরে ধীরে জার্মান ফুটবলের ফার্স্ট ডিভিশনে বায়ার্নের যাত্রা সামনে আগাতে থাকে। ফার্স্ট ডিভিশনে বায়ার্ন নিজেদের খেলা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিল তারা কোনো দৈববলে কিংবা এক মৌসুমের জন্য ফার্স্ট ডিভিশনে আসেনি, এসেছে নিজেদের জায়গা দখল করে নিতে। বায়ার্ন দলের উন্নতির পাশাপাশি পরের মৌসুমটি মুলারের ক্যারিয়ারে আরেকটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেই মৌসুমে মুলারের দুর্দান্ত ফর্মে বায়ার্ন টানা দ্বিতীয়বারের মত জিতে নেয় জার্মান কাপ। তার উপর মুলারের গোলেই বায়ার্ন জেতে তাদের প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান শিরোপা। বায়ার্নের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ।
সেবছর পশ্চিম জার্মানীর জাতীয় দলে ডাক পান মুলার। ১৯৬৬ সালে তুর্কির বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে ডাক পেলেও জার্মানীর ২-০ গোলে জেতা সেই ম্যাচে তেমন ঝলক দেখাতে পারেননি নিজের খেলার। ফলে এরপরের প্রীতি ম্যাচগুলোতেও মূল একাদশে জায়গা হয়নি তার। তবে দেখাতে খুব বেশি সময় নেননি। এপ্রিল মাসে আলবানিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে চার গোল করেন জাতীয় দলের হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই। জাতীয় দল এবং ক্লাব- দুই জায়গাতেই নিজেকে সমানভাবে চেনাচ্ছিলেন তিনি। ঐ মৌসুমে যুগ্মভাবে বুন্দেসলিগার শীর্ষ গোলদাতা হবার পাশাপাশি মাত্র বাইশ বছর বয়সেই নির্বাচিত হন জার্মানির প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার।
১৯৬৯ সালে মুলার বায়ার্নকে এনে দেন সেই ট্রফি যার জন্য বুভুক্ষের মত অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিল তারা। বায়ার্নের প্রথম বুন্দেসলিগা ট্রফি।
ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকবার জিতেছেন বুন্দেসলিগা টপ স্কোরারে পুরষ্কার
১৯৬৯ সালেও পশ্চিম জার্মানির জাতীয় দলে তার জায়গা নিশ্চিত ছিল না। তবে জায়গা করে নিতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে দলে ডাক পান মুলার। দলে জায়গা পেয়েই নিজের জাত চেনানোর মিশন শুরু হয় মুলারের।
১৯৭০ বিশ্বকাপ ছিল মেক্সিকোতে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে রানার আপ ইতালির কাছে হেরে জার্মানী বিদায় নিলেও নিজের কাজ ঠিকই করে গেছেন মুলার। জার্মান দলের হয়ে দশ গোল করে জিতে নেন সেবারের গোল্ডেন বুট। জার্মানী দল উরুগুয়েকে হারিয়ে তৃতীয় হয় সেবারের টুর্নামেন্টে।
১৯৭০ সালে ব্যালন দি’অর জিতেন জার্ড মুলার
দেশের হয়ে তান্ডব চালানো মুলার ক্লাবেও অসাধারণ পারফর্মেন্স দেন। ১৯৭০/৭১ মৌসুমে ৩৯ গোল করে বাভারিয়ানদের এনে দেন আরও একটি ডিএফবি-পোকাল কাপ। জাতীয় দলে এবং ক্লাবে নিজের দারুণ পারফর্মেন্সের যথাযথ পুরষ্কারও পান তিনি। ইংল্যান্ডের ববি মুরকে পিছনে ফেলে মুলার জিতে নেন ১৯৭০ সালের ব্যালন ডি অর। ব্যালন ডি অর, গোল্ডেন বুট- এসবই ছিল মুলারের সাফল্যমন্ডিত ক্যারিয়ারের শুরু মাত্র। সামনে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আরও বিশাল কিছু। ‘ক্লিনিকাল স্ট্রাইকার টার্মটার সংজ্ঞা হয়ে উঠছিলেন মুলার।
১৯৭১/৭২ মৌসুমে মুলার জার্মানির ইতিহাসে নিজের নাম লিখেন নতুন করে। এই মৌসুমে এক রেকর্ড করেন তিনি। বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে তিনি গোল করেন ৪০টি। গড়ে প্রতি ম্যাচে গোল করেন একটির বেশি। তার এই রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি। সেবছর আরও একটি রেকর্ড করেছিলেন মুলার। ১৯৭২ সালে এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে সর্বোচ্চ ৮৫টি গোল করেন জার্ড মুলার। চল্লিশ বছর পর্যন্ত তার এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি(২০১২ সালে লিওনেল মেসি তার এই রেকর্ড ভেঙে দেন)।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে জার্ড মুলার
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সময়টা মুলারের জন্য ছিল স্বর্ণালী সময়ের মত। এই তিন বছরে বায়ার্নের হয়ে টানা তিনবার জিতেন বুন্দেসলিগা। ক্লাবের মতো সফলতার দেখা পান জাতীয় দলেও। ১৯৭২ সালে পশ্চিম জার্মানির হয়ে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে দুই গোল করে তাদের ১৮ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার জার্মানিকে কোনো মেজর ট্রফি জেতার স্বাদ এনে দেন। ১৯৭৩/৭৪ মৌসুমে বায়ার্নকে এনে দেন তাদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ।
ততদিনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে মুলারের নাম। ভক্তদের কাছে জার্ড মুলার এক ভরসার নাম। নিজের অসাধারণ এবং কনসিস্টেন্ট পারফর্মেন্স দিয়ে ভক্তদের আশার প্রতিদান দিয়ে গেছেন মুলারও, তাদের হতাশ করেননি। ১৯৭৪ সালে তিনি ক্যারিয়ারে অর্জন করেন এমন কিছু যা প্রতিটা ফুটবলারের স্বপ্ন।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে পশ্চিম জার্মানি ছিল হট ফেভারিট। একে তো ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন, তার উপর ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। জার্মানী জাতীয় দলের উপর প্রত্যাশার চাপ ছিল অনেক বেশি। মুলার, পল ব্রিটনার, বেকেনবাওয়ার সেই চাপকে চাপ হিসেবে না নিয়ে বরং নেন নিজেদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে।
১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ হাতে জার্ড মুলার
মুলার সেই টুর্নামেন্টে গোল করেন চারটি, যা ছিল দলীয় সর্বোচ্চ। ফাইনালে জার্মানী মুখোমুখি হয় টোটাল ফুটবল দিয়ে বিশ্বকে সম্মোহিত করে রাখা দল ক্রুইফের নেদারল্যান্ডের। তাদের ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় জার্মানী।
এই ম্যাচটি দ্য বম্বারের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় হয়ে থাকবে তিনটি কারণে। ফাইনালে দলের জয়সূচক গোলটি আসে মুলারের পা থেকে। এই গোলটি ছিল তার বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারের ১৪তম গোল, যা দিয়ে ফ্রেঞ্চ ফুটবলার জাস্ট ফন্টাইনের বিশ্বকাপ গোলের রেকর্ড ভেঙে দেন মুলার। এই রেকর্ডটি অক্ষত ছিল ২০০৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপের এই ম্যাচটি ছিল তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এর পর পরই মুলার জাতীয় দল থেকে অবসর নেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা গায়ে সেটিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৬২ ম্যাচে ৬৮ গোল করে বিশ্বসেরাদের তালিকায় নিজের নাম লিখে দেন দ্য বম্বার।
১৯৭৫ সালে মুলার বায়ার্নের হয়ে জেতেন আরও একটি ইউরোপিয়ান কাপ। নিজের গোলের ধারা আর দলের জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে পরের মৌসুমে টানা তৃতীয়বারের মত ইউরোপিয়ান কাপ জেতেন বায়ার্নের হয়ে।
১৯৭৯ সালে বায়ার্ন ছেড়ে যাবার আগে তাদের হয়ে আর কোনো শিরোপা জিততে পারেননি। তবে সত্তরের দশকের মাঝের সময়টাতে বায়ার্নকে ইউরোপিয়ান জায়ান্ট হিসেবে গড়তে যে ভূমিকা তিনি রেখে গিয়েছেন, বায়ার্ন ভক্তদের মনে এবং ক্লাবের ইতিহাসে আলাদা জায়গায়ই থাকবেন মুলার।
বায়ার্নের হয়ে তিনি ক্যারিয়ারে যা করেছেন তা রীতিমত দানবীয়ই বলা চলে। ৫৮৯ ম্যাচে করেছেন ৫৪২ গোল। লিগে করেছেন ৩৯৮ গোল যা এখন পর্যন্ত বুন্দেসলিগাতে সর্বোচ্চ। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৯ এর প্রতিটি মৌসুমে বুন্দেসলিগা শীর্ষ তিন গোলদাতার তালিকায় নাম থাকত তার। প্রতি মৌসুমে তার নামে গোল থাকত অন্তত ২০টি করে। বুন্দেসলিগার ইতিহাসে টানা তিন মৌসুমে (১৯৭১/৭২ থেকে ১৯৭৩/৭৪ মৌসুম) শীর্ষ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড কেবল মুলারেরই। জার্ড মুলার আর তার গোলগুলো না থাকলে আজও আমরা হয়ত সাবিনার স্ট্রাশার সেই কুঁড়েঘরেই পড়ে থাকতাম। জার্ড মুলারের একসময়কার সতীর্থ এবং বায়ার্ন মিউনিখ প্রেসিডেন্ট ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার।
বায়ার্নের হয়েই অবসরে যাওয়ার চিন্তাভাবনা ছিল তার। কিন্তু মাঠে আরও কিছুদিন বল পায়ে নিয়ে থাকার লোভ ছাড়তে পারেননি তিনি। তাই ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে বায়ার্ন ছেড়ে যোগ দেন উত্তর আমেরিকার ক্লাব ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সে। নিজের সেরা সময়টুকু পিছনে ফেলে আসার পরও মুলার আমেরিকার সেই ক্লাবে গড়ে প্রতি দুই ম্যাচে এক গোল করে করতেন। সেখানে তিন বছর কাটিয়ে নিজের বুটজোড়া তুলে রাখেন বিশ্বকাপজয়ী এই স্ট্রাইকার। ক্যারিয়ার শেষে তার অর্জন ছিল ৬৬৯ ম্যাচে ৫৮২ গোল। আন্তর্জাতিক লেভেলে তো তিনি অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন।
এক ফ্রেমে ‘দ্য বম্বার’ এবং ‘দ্য কাইজার সাথে ১৯৭৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের কোচ
প্রতিভাবান ফুটবলার বলতে আমরা যা বুঝি, তা কোনোভাবেই জার্ড মুলারের সাথে যায় না। তাকে দেখে অনেকে বলেছিলেন এই ছেলে কোনোভাবেই স্পোর্টসম্যান হওয়ার মত নয়। বল নিয়ে কারিকুরিও তেমন একটা দেখাতেন না। কিন্তু গোলবারের সামনে যখনই প্রয়োজন হত, তখনই তাকে পাওয়া যেত মাঠে। পেনাল্টি এরিয়ার ভেতর তাকে আটকানো রীতিমত দুঃসাধ্য ছিল। কঠিন ম্যান মার্কিংয়েও ডিফেন্ডারদের ঝটকা মেরে সরিয়ে দিয়ে গোল করতেন। বিদ্যুত গতির কারণে ডিফেন্ডারদের জন্য ছিলেন জলজ্যান্ত দুঃস্বপ্ন।
সবার সব সন্দেহকে ঝেড়ে ফেলে নিজের গতি এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ফুটবল মাঠ জয় করেছেন। ক্লাবের হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য প্রায় সব ট্রফি। দেশের হয়েও জিতেছেন ইউরোপিয়ান কাপ এবং বিশ্বকাপ। ব্যাক্তিগত পর্যায়েও জিতেছেন ব্যালন ডি অরও। অল্প বয়সে হয়েছিলেন জার্মানির সেরা খেলোয়াড়। একসময়ের নাম না জানা দল বায়ার্ন মিউনিখকে পরিণত করেছেন অন্যতম ইউরোপিয়ান পরাশক্তিতে। কিন্তু ফুটবলের বড় বড় মঞ্চগুলোতে সেভাবে উচ্চারিত হয় না তার নাম। কিন্তু তাতে থোড়াই অর্জনের পাল্লা কমে যাবে সর্বকালের অন্যতম সেরা এই স্ট্রাইকারের!