জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম অবদান

জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম অবদান

মুসলিম ইতিহাসের পাঠ যারা করেছেন তারা বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের সোনালী দিনগুলোর জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের কথা উল্লেখ করে থাকেন। যদিও বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের আবিষ্কারে মুসলিম জাতির ব্যাপক সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ার কারণে মুসলিম তরুণ-যুবারা এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন।

বিস্তারিতভাবে উল্লেখ না করে কেউ যখন দাবি করে বসেন আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানের ১০০০ বছরের অবদান আছে তখন অনেকেই জানতে চান সেই ১ হাজার বছরের মুসলিমদের বিজ্ঞানের কোন্‌ কোন্‌ ক্ষেত্রে অবদান ছিলো?

যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিমদের অতীত-বর্তমান অবদানের কথা জানেন তারা সম্মিলিতভাবে এই হীনমন্যতা দূর করে ভবিষ্যতকে নতুন করে বিনির্মাণ করতে সচেষ্ট হবেন বলে আমার বিশ্বাস। এ বিষয়ে তথ্যগত ভুল সংশোধন করে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা জরুরী।

ইসলামী সভ্যতা যে বিশ্বের উন্নতির সর্বক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও আবিষ্কারের জনক, তা এক ঐতিহাসিক সত্য।

রসায়নে মুসলিম অবদান

দেখুন রসায়ন বা কেমিস্ট্রি কাদের হাত দিয়ে আবিষ্কৃত হয়েছে? এই রসায়নের ইতিহাসে যার নাম সর্ব প্রথমে আসবে তিনি আর কেউ নয় তিনি হচ্ছেন– আল জাবির। ছোটখাটো আবিষ্কারের ফিরিস্তি দিতে গেলে তো লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাবে, তাই বিশেষ বিশেষ আবিষ্কারের উল্লেখ করে শেষ করতে চাই এই লেখা। প্রস্তর নিক্ষেপ যন্ত্র, বারুদ, বন্দুক, কামান তো মুসলিমরা করেছিলো। যুদ্ধের উন্নত কৌশল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তারাই প্রথম আরবি ভাষাতে বই লিখেছিল বিশ্ববাসীর জন্য। সে বইটির নাম ‘আলফুরুসিয়া ওয়াল মানাসিব উল হারাবিয়া’।

ভূগোল ও অন্যান্য বিষয়ে

প্রথম ভূ-মানচিত্র এঁকেছিলেন যারা তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। ৬৯ জন মুসলিম ভূগোলবিদ পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তা আজো এক পরম বিস্ময়! এই মানচিত্রের নাম ‘সুরাতুল আরদ’ যার অর্থ হচ্ছে বিশ্ব আকৃতি।

এক্ষেত্রে  ইবনে ইউনুসের অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমা মণ্ডল নিয়ে গবেষণার ফলকে ইউরোপ মাথা পেতে মেনে নিয়েছিল। আর মুসলিম ফরগানী, বাত্তানী ও আল খেরজেমি প্রমুখের ভৌগলিক অবদান তো স্বর্ণমণ্ডিত বলা যায়।

কম্পাস যন্ত্রের যিনি আবিষ্কারক তিনিও মুসলিম ছিলেন, যার নাম ইবনে আহমদ।

পানির গভীরতা এবং স্রোত মাপার যন্ত্রও মুসলিম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেছিলেন, যার নাম আবদুল মজিদ।

বিজ্ঞানের উপর যে বৈজ্ঞানিক ২৭৫টি বই লিখেছিলেন তিনি আর কেউ নয় তিনি মুসলিম বিজ্ঞানী আলকিন্দি।

আর প্রাচীন মুসলিম বৈজ্ঞানিক হাসান, আহমদ, মুহাম্মদ সম্মিলিতভাবে ৮৬০ সালে বিজ্ঞানের একশত রকমের যন্ত্র তৈরির নিয়ম ও ব্যবহার প্রণালী এবং তার প্রয়োজন নিয়ে বই লিখে রেখে গেছেন।

আজকের বিশ্বে বিজ্ঞানের যে বিশেষ শাখা নিয়ে তুমুল বিতর্ক সেই বিবর্তনবাদ এবং বিবর্তনবাদের জনক বলে যে চার্লস ডারউইনের কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে, সেই পশু-পাখি, লতা-পাতা নিয়ে ডারউইনের আগেও যিনি কাজ করে গেছেন তিনিও মুসলিম বিজ্ঞানী যার নাম আল আসমাঈ; বর্তমান কোন মানুষ তার লেখা সে সময়ের গবেষণামূলক বইকে অস্বীকার করতে পারবেন না। তার জন্ম ৭৪০ খৃঃ, মৃত্যু ৮২৮ খৃঃ।

আজ যে চিনি মানুষ তার প্রয়োজনে ব্যবহার করছে সে চিনিও মুসলিমরা আবিষ্কার করেছিল। চিনিকে আরবরা সুক্কার বলে, সেই সুক্কার ইউরোপে সুগারে রূপান্তরিত হয়, আর ভারতে এই চিনির নাম ছিল শর্করা।

ভূতত্ত্ব সম্পর্কে বিখ্যাত বই ‘মুজাম আল উবাদা’ লেখক হচ্ছেন মুসলিম ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ।

তুলা থেকে প্রথম তুলট কাগজ আবিষ্কার করেন আরেক মুসলিম আবিষ্কারক- ইউসুফ ইবনে উমার। এই আবিষ্কারের মাত্র ২ বছর পরে বাগদাদের কাগজের কারখানা তৈরি করা হয়েছিল।

আর মুসলিম বৈজ্ঞানিক জাবির ইবনে হাইয়ান তো ইস্পাত তৈরি, ধাতুর শোধন, তরল বাষ্পীয় করণ, কাপড় ও চামড়া রঙ করা, ওয়াটার প্রুফ তৈরি করা, লোহার মরিচা প্রতিরোধক বার্নিশ, চুলের কলপ, লেখার পাকা কালি আবিষ্কার করে বিজ্ঞান জগতে তার স্মৃতি অমর হয়ে আছে।

ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড থেকে যিনি প্রথম কাঁচ আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিও মুসলিম বৈজ্ঞানিক আর রাজী। ইংরেজদের ইংরাজি শব্দে ঐ বৈজ্ঞানিকের নাম আজো Rezes লেখা আছে।

তিনি একদিকে যেমন ছিলেন ধর্মীয় পণ্ডিত তেমন করে অন্যদিকে ছিলেন গণিতজ্ঞ ও চিকিৎসা বিশারদ। সোহাগা, পারদ, গন্ধক, আর্সেনিক ও সালমিয়াক নিয়ে তার লেখা গবেষণা উল্লেখযোগ্য। পৃথিবীতে প্রথম পানি জমিয়ে বরফ তৈরি তারই অক্ষয় কীর্তি। এর পরেই ইউরোপ বরফ তৈরির কারখানা তৈরি করেছিল।

পৃথিবীখ্যাত গণিত এবং চিকিৎসা বিশারদ ওমর খৈয়ামের কথা সর্বজনবিদিত। তিনিও মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষের সুফল লাভ করে এত বড় পণ্ডিত হতে পেরেছিলেন।

এমনিভাবে নাসির উদ্দিন আল-তুসী, আবু সিনার বা ইবনে সীনার নাম এবং তাদের অবদান সর্বজনবিদিত।

পৃথিবীর প্রথম মানমন্দিরের আবিষ্কারক ছিলেন হাজ্জাজ ইবনে মাসার এবং হুনাইন ইবনে ইসহাক।

পৃথিবীর ১ম মানমন্দির তৈরি হয় ৭২৮ খৃঃ, ২য়টি ৮৩০ খৃঃ। ২য় মানমন্দির জন্দেশ পুরে, ৩য়টি বাগদাদে আর ৪র্থটি দামেস্কে। তা তৈরি করেন মুসলিম খলিফা আল মামুন।

পৃথিবীর প্রথম বীজ গণিতের জন্মদাতা মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারিজমি। তিনি ভারতকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন যার নাম কিতাবুল হিন্দ। অংক বিভাগে শূন্যের মূল্য অমূল্য এবং এর অসীমতা। এই শূন্য [০] আবিষ্কার তার বলে দাবি করা হয়। ‘হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালা’ বইটি তার বিরাট অবদানের কথা মনে করিয়ে দিবে।  শুধু তাই নয় তিনি জ্যোতির্বিদও ছিলেন। খলিফার অনুরোধে আকাশের মানচিত্রও তিনি এঁকেছিলেন এবং একটি পঞ্জিকার জন্ম দেন। তাকে সরকারী উপাধি দেয়া হয়েছিল ‘সাহিব আলজিজ’।

আর ইতিহাস গবেষণায় তো মুসলিম ঐতিহাসিকদের অবদানের কথা বাদ দিয়ে পৃথিবী অচল। আজ যে ভারতীরা তাদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করার মত উপাদান পেয়েছেন সেই উপাদান তারা পেতেন না যদি না তাদের ইতিহাস মুসলিম ঐতিহাসিকগণ লিপিবদ্ধ করে যেতেন। তবে এই ক্ষেত্রে ইংলিশ ঐতিহাসিকদের অবদানও কম নয়। তবে মনে রাখতে হবে ইতিহাসের স্রষ্টা মুসলিম, ইংলিশরা তার অনুবাদক। এই সত্য যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করেন তারা কখনও অস্বীকার করতে পারবেন না।

বিশ্বের ইতিহাস রচনার অঙ্গনে সোনালি শাহজাদারা হলেন আলবিরুনী, ইবনে বতুতা, আলী বিন হামিদ, বাইহাকী, উৎবী, কাজী মিনহাজুদ্দিন সিরাজ, মহীউদ্দিন, মুহাম্মদ ঘোরী, জিয়া উদ্দিন বারণী, আমীর খসরু, শামসী সিরাজ, বাবর, ইয়াহিয়া বিন আহমদ, জওহর, আব্বাস শেরওয়ানী, আবুল ফজল, বাদাউনি, ফিরিস্তা, কাফি খাঁ, মীর গোলাম হুসাইন, হুসাইন সালেমি, সইদ আলী প্রমুখ।

যে ইতিহাসের বইগুলো তারা লিখে গেছেন—

তারিখই সিন্ধু, চাচা নামা, কিতাবুল-ইয়ামিনি, তারিখই মাসুদী, তারিখই-ফিরোজশাহী, তারিখুল হিন্দ, তা’জুম্মাসির, তবকত-ই-নাসিরি, খাজেনুল ফতওয়া, ফতওয়া উস সালাতিন, কিতাবুর-রাহলাব, তারিখই মুবারক শাহী, তারিখে সানাতিনে আফগান, তারিখে শেরশাহী, মাখজানে আফগান, আকবর নামা, আইনি আকবর, মুনতাখাবুত তওয়ারিখ, মুন্তাখাবুল লুবাব,ফতহুল বুলদান, আনসাবুল আশরাক ওয়া আখবারোহা, ওয়ুনুল আখইয়ার, তারিখে ইয়াকুব, তারিখে তাবারী, আখবা্রুজ্জামান, মারওয়াজুজ জাহাব, তামবিনুল আশরাফ, কামিল, ইসদুল গাবাহ, আখবারুল আব্বাস, কিতাবুল ফিদ-আ, মুয়াজ্জামুল বুলদান।

জ্ঞানকে প্রকাশ ও প্রচারের আদিমতম বাহন ছিল কলম। এর পর এল কলমের দ্বারা বই লিখে তাতে জ্ঞান সংরক্ষণ প্রক্রিয়া। পরবর্তী ধাপে গ্রন্থাগার তৈরি, পাঠশালা, বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা। মুসলিমদের সভ্যতায় এই বিষয়গুলো কতটুকু অগ্রসর ছিলো, আসুন এ বিষয়টি দেখা যাক।

ইসলাম মুসলিমদের জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়। বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন অবশ্যকর্তব্য’ ‘যে জ্ঞান অর্জন করে তার মৃত্যু নাই’, ‘চীন দেশে যেতে হলেও সেখানে গিয়ে জ্ঞান অর্জন করবে’ ‘সমস্ত রাত্রির প্রার্থনার চেয়ে এক ঘণ্টা জ্ঞান চর্চা করা উত্তম ‘যে জ্ঞানীকে সম্মান করে সে রাসূল (সা.) কে সম্মান করে’।

আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশের বাস্তবায়ন তাঁর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল।

নবীর (সা.) মৃত্যুর ১১৮ বছরের মধ্যে ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা তথা স্পেন থেকে আরম্ভ করে ভারতের সিন্ধু নদ পর্যন্ত ইসলামী সভ্যতার বিকাশ লাভ হয়েছিল।

মুসলিমরা শুধু দেশ জয় করে ক্ষান্ত হয়ে থাকেনি বরং বিজিত এলাকায় পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে গবেষণায় উৎসাহিত করেছেন, গ্রন্থাগার গড়েছেন, গ্রন্থাগারসমূহকে নতুন পুরাতন গ্রন্থ পুথি-পুস্তকে পরিপূর্ণ করেছিলেন। তাই সালেনা, কার্ডোভা, বাগদাদ, কায়রোতে গড়ে উঠেছিল বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ।

উমার (রা.)-এর ১০০ বছর পর বাগদাদের প্রথম লাইব্রেরি নির্মিত হয়। উমাইয়াদের আমলে ব্যাকরণ লেখা, ইতিহাস লেখা, স্থাপত্য বিদ্যার অগ্রগতি শুরু হয়।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) যখন ইন্তেকাল করেন তখন বড় এক উট বোঝাই বই রেখে গিয়েছিলেন। আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, তখন আমাদের আজকের মত বই সংগ্রহ করা এত সহজ ছিলো না। কারণ সে সময়ের বিইগুলো সবই ছিল হাতে লেখা।

আবু হুরাইরা (রা.) বহু বই রেখে গিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সা.) তরবারির খাপেও অনেক বইয়ের উপকরণ সংরক্ষণ করে গিয়েছিলেন। এই তো ৫০/৬০ বছর আগেও লোকে বাঁশের চোংগার মধ্যে বই সংরক্ষণ করতেন।

বই-পুস্তক সংগ্রহ করা মুসলিমদের জাতীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বন্দরে বন্দরে লোক প্রস্তুত থাকতো কোন নতুন লোক এলেই তার কাছে পাওয়া নতুন বইয়ের অনুলিপি তৈরির জন্য। অনুলিপি তৈরি করে মূল বই বাহককে ফেরত দেওয়া হতো। আর কেউ যদি মূল বই বিক্রয় করতে চাইতো তাহলে যথার্থ মূল্য দিয়ে কিনে নেয়া হতো।

আব্বাসীয় খলিফা মামুন বাগদাদে ‘দারুল হিকমাহ’ নামে যে বিজ্ঞান কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন তাতে সে যুগেই প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়েছিল। সেই বিরাট গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ছিলেন পৃথিবীর বুকে বীজ গণিতের জন্মদাতা মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারিজমি। তিনি ভারতকে নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন যার নাম ’কিতাবুল হিন্দ’। গণিতে শূন্যের আবিষ্কারকও তিনি বলে দাবি করা হয়। ‘হিসাব আল জাবর ওয়াল মুকাবালা’ বইটি তার বিরাট অবদানের কথাই জানান দেয়।

আল মুকাদ্দাসি একজন পর্যটক ছিলেন। তিনি সিরাজ শহরে এমন একটি লাইব্রেরি ভবন তৈরি করেছিলেন, তখনকার পৃথিবীতে যার দ্বিতীয় নজির ছিল না।

‘The Bible, the Quran and Science’ গ্রন্থে ডঃ মরিস বুকাইলী উল্লেখ করেন, ‘অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানকে অনেক ঊর্ধ্বে তুলে ধরে। যখন খ্রিষ্টীয় জগতে বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছিল, তখন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বহুসংখ্যক গবেষণা ও আবিষ্কার সাধিত হয়। কর্ডোভার রাজকীয় পাঠাগারে ৪ লাখ বই ছিল। ইবনে রুশদ তখন সেখানে গ্রীক, ভারতীয় ও পারস্য দেশীয় বিজ্ঞানে পাঠদান করতেন। যার কারণে সারা ইউরোপ থেকে পণ্ডিতরা কর্ডোভায় পড়তে যেতেন, যেমন আজকের দুনিয়ায় মানুষ তাদের শিক্ষার পরিপূর্ণতার জন্য আমেরিকা যায়।

‘ইসলাম ও আরবি সভ্যতার ইতিহাস’ বইতে ওস্তাভলি বোঁ লিখেছেন, ‘ইউরোপে যখন বই ও পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব ছিল না, অনেক মুসলিম দেশে তখন প্রচুর বই ও পাঠাগার ছিল। সত্যিকার অর্থে বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ’য় ৪০ লক্ষ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লক্ষ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ৩০ লক্ষ বই ছিল। অপরদিকে মুসলমানদের সময়ে কেবল স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০ হাজার বই প্রকাশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে বইয়ের কদর নেই, বই প্রকাশের বিষয়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অপ্রতুল। অথচ ইউরোপের একটি ক্ষুদ্র দেশ গ্রিসে বছরে ৫০০টির মতো বই অনুবাদ হয়ে থাকে।

সে সময়ে মুসলিমদের তৈরি আর যে সকল বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো সেগুলো হচ্ছে – গ্রানাডা, টলেডো, মার্সিয়া, আলমেরিয়া, সেভিল, ভ্যালন্সিয়া কাদজে বিশ্ববিদ্যালয়। এইগুলোই হচ্ছে আজকের ইউরোপ আমেরিকার জগত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদাতা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তখন স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি এমনকি জার্মানির জ্ঞান-বিজ্ঞান সাধকদের চুম্বকের মত টেনে নিয়ে যেত।

মুসলমানদের অতীত ইতিহাস বই পড়ার ইতিহাস। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস। অতীত ইতিহাস থেকে প্রেরণা নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানে পুনরায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য আজ সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। কারণ আল কুরআনে বার বার জ্ঞানচর্চার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই মুসলমানদের জন্য জরুরি ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ ব্যবহারিক জীবনের যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই পড়ার প্রতি আন্তরিকতার সাথে অগ্রসর হওয়া সময়ের প্রবল প্রয়োজন।

গল্পের বিষয়:
ইতিহাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত