আসলে ফেরাউনের লাশ কত লম্বা?

আসলে ফেরাউনের লাশ কত লম্বা?

আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে নবী মুসা আঃ এর যুগে তার প্রধান বিরুধিতা কারী ফেরাউন সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিলেন মুসা আঃ এর পিছু নিতে গিয়ে এবং তার লাশ এখনো নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তার লাশ নিয়ে আছে বেশ অনেক রকমের চমকপ্রদ আলিফ লায়লা সিরিজের মত নানা কাহিনী। যতটা জানা যায় সেটা ছিল রামেসিস ২ এর সময় কিন্তু তার পিছু ধাওয়া করা ফারাও ছিল সম্ভবত তার ছেলে মেরনেতাহ।

উপরে দেয়া লিংকটি থেকে ণিচের প্রবন্ধটি পোস্ট করলাম। আশা করি পাঠক বৃন্দ এ থেকে একটি ভাল ধারণা পাবেন।

মিশরে এসেছিলাম ২০০৬ সালের নভেম্বরে। এখানে আসার পর যে সমস্ত জিনিসের প্রতি আমাদের খুবই আকর্ষণ ছিল তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা আকর্ষণীয় ছিল অভিশপ্ত ফেরাউনের লাশ। যে, মুসা (আঃ) পিছু নিয়েছিল। মুসা (আঃ) আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তার হাতের লাঠি দ্বারা লৌহিত সাগরের পানিতে আঘাত করার সাথে সাথে সমুদ্রে রাস্তা হয়ে গেল। সে রাস্তা দিয়ে মুসা (আঃ) তার অনুসারীদেরকে সাথে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চলে গেলেন।

এরপর সমুদ্রে রাস্তা দেখে ফেরাউন তো মহাখুশি। এখনই সে তার দলবলসহ মুসা (আঃ) কে গ্রেফতার করতে পারবে। যেই কথা সেই কাজ। ফেরাউন নেমে পড়ল সমুদ্রের মধ্যকার শুকনো রাস্তায়। সমুদ্রের মাঝ বরাবর আসলে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পানি আগের অবস্থায় ফিরে গেল। এখন ফেরাউন হাবুডুবু খাচ্ছে। আল্লাহ ছাড়া তার আর তখন কোন সাহায্যকারী নেই যে তাকে বাচাতে পারে।

এতদিন যে লোকটা নিজেকে খোদা দাবি করে এসেছে সে এখন আল্লাহ তায়ালার দরবারে প্রার্থনা করা শুরু করে দিল।

কুরআনের ভাষায়:
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ – آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنْتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ – فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَة-

অর্থাৎ, আর আমি বনী ইসরাইলদেরকে সমুদ্র পার করে দিলাম। অতঃপর ফেরাউন ও তার দলবল বাড়াবাড়ি ও শত্রুতাবশতঃ তাদের পিছু নিল। অতঃপর যখন সে ডুবতে শুরু করল সে বলল: বনী ইসরাইলগণ যে সত্ত্বার উপর ঈমান এনেছে আমিও সেই সত্ত্বার উপর ঈমান আনলাম যিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই, আর আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলাম। এখন(এমন কথা বলছ)! এর আগে তুমি আমার নাফরমানী করেছ এবং তুমি ছিলে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি কারীদের অন্তর্ভুক্ত। আজ আমি তোমার দেহকে উদ্ধার করব(বাচিয়ে দেব) যেন তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্যে নিদর্শন হয়ে থাক। (সুরা ইউনুস: ৯০-৯২ আয়াত)

ফেরাউন ডুবে মারা যাওয়ার ঘটনা আপনাদের সবার জানা আছে। সে মারা যাওয়ার পর তার লাশ মমি করে রাখা হয়েছিল। সেটা এখন মিশরের রাজধানী কায়রোতে নীলনদের একেবারেই তীরে (৪০০-৫০০ গজ দূরে) তাহরীর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

যাহোক আমাদের সর্বাপেক্ষা আকর্ষণ ছিল তার লাশ দেখার। একদিন স্টূডেন্ট সিটির পক্ষ থেকে টুরের আয়োজন হল উক্ত জাদুঘরে। সেখানে গিয়ে আমরা মমি রুমে ঢুকলাম। অনেকক্ষন অভিশপ্ত ফেরাউনের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বুলিয়ে নিলাম।

তার উচ্চতা নিয়ে নাকি দেশে অনেকে অনেক রকম বলে থাকে। কেউ বলে ৬০ হাত কেউ নাকি আবার বলে ১২০ হাত। যাক, সে কথা বাদ দিলাম। আমরা বাস্তবে আসি। আমরা কয়েকবন্ধু লম্বালম্বি তার লাশের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। তার উচ্চতা হবে সর্বোচ্চ ৬ ফুট বা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির মত। এর বেশী না। অর্থাৎ, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশী লম্বা না।

অনেকে বলে থাকেন ফেরাউন ডুবে মারা গেছে নীলনদে। আসলে সে নীলনদে ডুবে মরেনি। সে ডুবে মরেছে সমুদ্রে (উপরের আয়াতেই সমুদ্রের কথা আছে)। আর তুরে সীনাই কিংবা ফিলিস্তিনের দিকে যেতে হলে লৌহিত সাগর বা রেড সি পার হতে হয়। অতএব, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, লৌহিত সাগরে ডুবেই ফেরাউনের সলীল সমাধি হয়েছে।

আর নীলনদ প্রস্থ খুব ছোট। নীলনদের উপরের সেতু দিয়ে পায়ে হেটে আপনি ৩ থেকে ৪ মিনিটে এপার থেকে ওপারে যেতে পারবেন।

গল্পের বিষয়:
ইতিহাস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত