আমার আবার বরাবরের গরম গরম বাতিক ছিল। একটু গরম হলেই ছাওয়া চাই, হাওয়া চাই। হাঁসফাঁস অবস্থা। কিন্তু কি জানি কেন, বয়স বাড়ছে বলেই বোধহয়, আজকাল আর তেমন গরম করেনা। বরং শীতের কাঁপুনি প্রতি বছর একটু একটু করে বেড়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে হাতকাটা সোয়েটার পরতুম, এখন সেখান টুপি আর জ্যাকেট চাপাই। সারা রাত গায়ে কম্বল নিয়ে ঘুমোতে পারি, যেটা আগে পারতুম না। এবার শীত অবিশ্যি কমসমের ওপর দিয়েই গেল। কদিন হলো “বসন্ত এসে গেছে” বলে ফোনে অনেক মেসেজ আর ছবিও পেয়ে চলেছি। তবে আমাদের এখানের শীত আর কতটুকু? যেতে হয় দার্জিলিং কি সিমলা। শীত বলে শীত? বাপরে! হাড়ের ভেতর মজ্জা পর্যন্ত জমিয়ে দেয়। আমার বাঙালি ধাতে এর চেয়ে বেশী ঠান্ডা কল্পনা করা অসম্ভব। তাই ভাবি, যেখানে শূন্যের নিচে ৩৫-৪০ ডিগ্রি নেমে যায় থার্মোমিটারের পারা, সেখানে কেমন পারা অনুভুতি হয়!
হিমাঙ্কের ৩৫ বা ৪০ ডিগ্রি নিচে কেমন লাগে খোলা মাঠে অন্তহীন বরফের স্তুপে খাঁজ কেটে ঘাপটি মেরে বসে অপেক্ষা করতে? যেখানে দিনের পর দিন মেলেনা গরম খাবার। গরমই বা বলি কেন? মেলেনা কোনো রকমের খাবার দাবার। পর্যাপ্ত গরম জামাকাপড়, জুতো, কিচ্ছুটি নেই। প্রথম মহাযুদ্ধ চলছে। রুশ-জার্মান ফ্রন্টলাইন। ১৯১৭ সাল। শীত এসে পড়ছে দোরগোড়ায়। সামনে ৫০০ মিটার দুরে বসে আছে ভারি অস্ত্রে সজ্জিত শক্তিশালী দুর্ধর্ষ জার্মান সেনা। তার রাইফেল আর কামানের নিশানায় লক্ষ্য রেখে চলেছে এ পক্ষের মাথাগুলো। গর্তের ফাঁকে এতটুকু নড়াচড়া দেখাগেলেই মাথায় ঢুকে যেতে থাকে গরমাগরম বুলেট। উত্তরে পালটা চালাবার মত গুলিবারুদও নেই। এদিকে ছড়াচ্ছে মহামারি। যতজন গুলি খাচ্ছে, তার চার গুন বেশী লোক মরছে মড়কে। দেখা নেই সেনা অফিসারদের। অভিজাত কুলজাত রুশ অফিসারকুল। তারা বহু পেছনে কোথাও অফিসারদের জন্যে বরাদ্দ তুলনামুলক ভাবে আরামদায়ক জায়গায় আগুনের পাশে বসে মানচিত্র দেখছে, আর ভদকায় চুমুক দিতে দিতে মুন্ডুপাত করে চলেছে ওই সামনের ট্রেঞ্চে বসে থাকা চাষাভুষোর ব্যাটাদের। যাদের জোর করে ধরে আনা হয়েছিল সেনাবাহীনিতে লোকের অভাব মেটাতে। মুন্ডুপাত করে চলেছে দেশের মধ্যে বেড়েওঠা চাকরবাকর – চাষামজুরদের বেয়াড়াপনার অরাজকতা আর তাদের ক্ষেপানো গুটিকতক লোকজনের। ওদিকে শত্রুপক্ষ বহুগুন শক্তিশালী ও উন্নত অস্ত্রভান্ডার, তালিম, খাবার, গরম কাপড় সমেত প্রস্তুত। এমন অসম অবস্থা, অথচ যুদ্ধ চলছে। দেশের ওপর আক্রমন চালাচ্ছে বিদেশী হানাদার। তাকে রুখতেই হবে। তার পরে দেশের ভেতরের অন্য সমস্যার কথা আসতে পারে। সামনের ট্রেঞ্চের মুখ্যু চাষাগুলো এসব বোঝেনা, তারা চায় যুদ্ধটা শেষ হোক। রোজই দু চারটে করে পালানোর খবর আসছে। ধরাও পড়ছে অনেকে। শাস্তি একটাই। সোজা ফায়ারিং স্কোয়াড।
আজ থেকে ৯৯ বছর আগে। রুশী সম্রাট, মানে জারকে সরিয়ে মার্চ মাসে গদিতে বসেছেন আলেকজান্ডার কেরেনস্কি। মার্কিনি ধাঁচের গনতন্ত্রের প্রবক্তা। রুশ পার্লামেন্ট বা দুমাতে দুবেলা চলছে আগুন ধরানো বক্তৃতা। রাশিয়ায় তখন রাজনৈতিক দলের ছড়াছড়ি। জন রীডের “দুনিয়া কাঁপানো দশদিন” বইতে সে সময় রাশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর ঠিকুজি-কুলুজির একটা লম্বা তালিকা পড়তে গিয়ে আমার দাঁত ছরকুটে যাবার দাখিল। কোথায় লাগে নয়া দিল্লির গোলপানা বাড়ি? হেথায় পঞ্চাশ হলে সে আমলে রাশিয়ায় একশো পঞ্চাশখানা রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী হবে হয়ত। আর দুমায় ঢুকে সবাই দুম ফটাস করে দেশ ভক্তির বোমা ফাটিয়ে চলেছে আগুনে বক্তৃতা দিয়ে। “পড়ি গেল কাড়াকাড়ি। কে বা আগে প্রান (বক্তৃতা), করিবেক দান, তারি লাগি তাড়াতাড়ি”। তবে হানাদার জার্মান ফৌজ ছাড়াও আরো এক বিভিষন ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। কিছু দেশদ্রোহী বিদেশের দালাল। তারা চায় যুদ্ধ থামিয়ে সন্ধি হোক। ওই হানাদার খুনে জার্মানদের সঙ্গে সন্ধি? যাদের সঙ্গে যুদ্ধে গত ৩ বছরে প্রায় তিরিশ লক্ষ রুশ মারা গেছে? কভি নেহি। উচিত শিক্ষা দিতে হবে। খেদিয়ে তাড়াতে হবে জার্মানদের রুশ ভুমি থেকে। অস্ত্র নেই? খাবার নেই? গরম জামা নেই? তালিম নেই? আমরা আছি। গরম গরম কথা বলে মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম জাগাবো। “হোলী রাশিয়া” কখনো মাথা নোয়াবে না। পবিত্র আইকনের সামনে জীবন-মরনের শপথ নিয়ে আরো মুখ্যু চাষাভুষো ধরে এনে ফৌজে ঢুকিয়ে ফ্রন্টে পাঠাবো। আর যে দেশদ্রোহী বিভিষনগুলো সন্ধির কথা বলে, তাদের ফাটকে পোরো। ওদের ঐ জঘন্য বলশী কাগজ টাগজ সব বন্ধ, আর ওদের সভা সমিতির ও কোনো অনুমতি নেই। বলশেভিক সংগঠন নিষিদ্ধ। আর এই সঙ্গে আছে ছারপোকা ইহুদিরা। ওরা আমাদের ধর্ম মানেনা। নিয়ম কানুন মানেনা। “হালায় ইহুদিরে কাইট্যা ফালাইমু”। জারের শাসন রাশিয়ার তেরোটা বাজিয়ে গেছে। এর পর “জনগন”কে বোঝাতে হবে, বর্তমান যত কষ্টের আর নষ্টের গোড়া ওই ইহুদি আর বলশেভিক দালালগুলো। যারা আমাদের সুরে কথা বলবে, শুধু তারাই স্বাধীন। বাকিদের কোনো দরকার নেই। নিকুচি করেছে গনতন্ত্রের।
কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও সব কিছু কেঁচে গেল। অকর্মন্য আর বাকতাল্লা সর্বস্য কেরেনস্কির সরকারকে দেখে বোঝা গেল, ক্ষমতা সামনে পড়ে রয়েছে। তাকে হাতে তুলে নিতে হবে। তবুও খেটে খাওয়া মানুষের সংগঠন বা সঙ্ঘ, যেগুলোকে রুশ ভাষায় ডাকা হয় সোভিয়েত বলে, সেখানে একটু যেন দ্বিধা। সোভিয়েত মানেই বলশেভিক নয়। সেখানেও আছে নানা দল। নানা মত। পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েতের অধিবেশন বসেছে স্মলনী ইন্সটিটিউটের বিশাল বাড়িতে। ঝলঝলে কোট পরা টাকমাথা বেঁটে লেনিন উঠে দাঁড়িয়ে মুঠো করা হাত তুলে বোঝালেন, সমস্ত ক্ষমতা সোভিয়েতের হাতে। তারাই নির্নায়ক শক্তি। কেরেনস্কি সরকারের অস্তিত্ব বা প্রয়োজন কোনোটাই নেই। পেত্রোগ্রাদ সোভিয়েত সাড়া দিলো সেই ডাকে। মুটে-মজুর, চাকর-বাকর, গাড়োয়ান, চাষা, মালী, ফ্রন্ট থেকে পালানো সেপাই, জাহাজী মাল্লা আরো দুনিয়ার যত গোমুখ্যু আনপড় গাঁট আছে, সবাই মিলে কেরেনস্কির প্রাসাদ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে মন্ত্রিদের বের করে দিলো। শুনেছি কেরেনস্কি নাকি দেশের মানুষের কাছে অগ্নিবর্ষী ওজস্বি কন্ঠে আবেদন রাখছিলেন যাতে তারা যুদ্ধের জন্যে দেশের জন্যে আরো আত্মত্যাগ করে, খাজনা-ট্যাকশো ঠিকঠাক দেয়। লাইন বেঁধে নিয়ে যাওয়া একদল বন্দিকে দেখে, গুপিগায়েন-বাঘাবায়েন ছবিতে হাল্লার এক উটওয়ালাকে বাঘা জিজ্ঞেস করেছিল – “হ্যাঁগো, এদের পেয়াদায় ধরেছে কেন?”। উটওয়ালা জানিয়েছিল, এরা খাজনা দেয়নি রাজাকে। ইয়া আলি !! তাজ্জব কি বাত!! “কেন? খাজনা দেয়নি কেন?” সে তো দেশদ্রোহ। উটওয়ালা উত্তর দিয়েছিল – “আরে, যে রাজা খেতে দেয়না, তারে খাজনা দেবে কিসে?”। ইশকুল কলেজ বিশ্ববিদ্যাসমুদ্র না পেরোতে পারে, কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষ সার বুঝেছিল – যে রাজা খেতে দেয়না, তাকে খাজনাও দেওয়া নেই। বরং দেওয়ার আছে ঘাড় ধাক্কা। কড়া পড়ে যাওয়া, কালিঝুলি মাখা হাতের ঘাড় ধাক্কা খেয়ে কেরেনস্কি কেটে পড়লেন তখনকার রুশ রাজধানী পেত্রোগ্রাদ থেকে। পেত্রোগ্রাদ হলো সেন্ট পিটার্সবার্গ। অধম, সে শহরকে মনে মনে চিরকাল লেনিনগ্রাদ বলেই ডাকবে।
শ্রীমান আলেকজান্দার কেরেনস্কি – “আমি কিন্তু ফিরে আসচি সিপাই-সান্ত্রি নিয়ে, এসেই মজা দেকাব্। আচ্চা করে ধোলাই দেবখনে” বলে সেই যে গেলেন, আর রাশিয়া মুখো হলেন না। এদেশ ওদেশ ঘুরে, বিলেত ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া হয়ে শেষে সাগরপারে রূপনগর, নিউ ইয়র্ক সিটিতে গিয়ে থানা গাড়লেন। এদিকে পেত্রোগ্রাদের ডাকে একে একে সাড়া দিলো দেশের অন্যান্য সোভিয়েত। প্রতিষ্টা হলো সোভিয়েত রুশ সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। ১৯২২ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এই সোভিয়েত রাশিয়া থেকেই প্রতিষ্ঠা হয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সংঘ (Union of Soviet Socialist Republic)। সে যাই হোক। সেবারের শীতকাল, মানে ১৯১৭-১৮ সাল নিয়ে গপ্প হচ্ছিল। খামোখা ২২-২৩ টেনে লাভ নেই। সোভিয়েত সরকার তো হলো, কিন্তু এদিকে সামনে ঘোর সমস্যা। ওত পেতে বসে রয়েছে হানাদার জার্মান বাহিনি। সেই সময় সোভিয়েত সরকারের না আছে ট্যাঁকের জোর, না আছে সুসজ্জিত রনকূশল জার্মান মিলিটারির সঙ্গে মহড়া নেবার ক্ষমতা। কৃষক-শ্রমিকের সরকার তৈরি হয়েছে শুনে, আর যুদ্ধ থামানোর বলশেভিক প্রতিশ্রুতিতে দলে দলে চাষির ছেলেরা পরিখা ছেড়ে, ফ্রন্টলাইন ছেড়ে ঘরের পথে পা বাড়ালো। আর তাদের অফিসাররা পা বাড়ালো প্যারিস, লন্ডন, বার্লিন বা নিউ ইয়র্কের রাস্তায়। কয়েক হপ্তায় যেন পুরোনো হোলি রাশিয়া অভিজাত অভিশাপ মুক্ত হলো। নভেম্বরে ক্ষমতায় এসেই যুদ্ধ থামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সন্ধির শর্ত আলোচনার জন্য। ঠিক হলো সীমান্ত শহর ব্রেস্ত লিতোভস্কে সন্ধি নিয়ে আলোচনা হবে, এবং চুক্তি সাক্ষর হবে। কিন্তু সেখানেও বিস্তর গন্ডগোল। জার্মানরা ডাকাতে শর্ত চাপাতে চাইল। অনেক এলাকা তারা দাবী করে বসল। লেনিন তবুও সন্ধির পক্ষেই মত দিলেন। এদিকে সোভিয়েত নেতাদের মধ্যে কিছু অতি-বাম উপদল ছিল। অতি-বাম উপদল কি বস্তু, তা আশাকরি বাংলাভাষী মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে না, বিশেষ করে তাঁরা যদি পশ্চিমবাংলার মানুষ হন, ঘটি-বাঙাল নির্বিশেষে। এই নেতাদের হিসেবে, জার্মানি,অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি,বুলগেরিয়া এই সব দেশ গুলোতে রুশ ধাঁচে বিপ্লব হলো বলে। পাকা ফলটির মত টুসটুস করছে বিপ্লব। পাঁজি-পুঁথিতে ভাল দিনক্ষন দেখে দুড়ুম করে বিপ্লবের ডিম ফেটে এই দেশগুলোতে লাল ঝান্ডা উঠে যাবে। সত্যি বলতে কি, এই দেশগুলোতে শ্রমিক আন্দোলন খুব শক্তিশালী হয়েও উঠেছিল। কিন্তু তীব্র শ্রেনীসংগ্রাম দানা বেঁধে উঠে, প্রতিক্রিয়াশীল শাসককে উপড়ে ফেলে, এবং অভিজাত ও পুঁজিপতিদের খেদিয়ে দিয়ে শাসন ক্ষমতা হাতে নেবার মত ক্ষমতা সে আন্দোলন তখনো অর্জন করেনি। সোভিয়েত পক্ষ থেকে যাঁরা ব্রেস্ত চুক্তিতে সই করতে গেলেন, নিকোলাই বুখারিন, কার্ল রাদেক এবং শ্রীমান লিওন ত্রতস্কি, এই তিনজনেই বলশেভিকদের ভেতর বামপন্থি উপদলের নেতা এবং বিশ্ববিপ্লবের স্বপ্নে বিভোর। ফলতঃ কিছু নরম গরম বিতন্ডার পরে চুক্তি সই না করেই তিনজন ফিরে এলেন ব্রেস্ত থেকে, এবং মহা বিপর্যয় ঘনিয়ে এলো সোভিয়েত রাশিয়ায়।
লিওন ত্রতস্কি ১৯১৮র ১০ই ফেব্রুয়ারি সর্বসমক্ষে ঘোষনা করলেন “যুদ্ধু টুদ্ধু আর করবুনি জার্মানির সঙ্গে, কিন্তু সন্ধি-শান্তি এসবও কিচ্ছুটি হবেনি”। লিওন ত্রতস্কি বুদ্ধিজিবি মানুষ, অনেক ভেবে চিন্তেই বলশেভিকি ঢংএ বলেছিলেন কথাটা। যদিও কালিঝুলিমাখা “আনপড়” পোড়খাওয়া বলশেভিক তিনি নন। বলশেভিক পার্টিতে তিনি যোগ দেন বিপ্লবের মাত্র কয়েক মাস আগে। তাঁর এই ঘোষনা বলশেভিক সোভিয়েত রাশিয়া বুঝলোনা। যুদ্ধও হবেনা, আবার সন্ধি-শান্তিও হবেনা। তার মানেটা ঠিক কি? যাই হোক। মজুর চাষার বলশেভিক রাশিয়ার কথা ছাড়ুন। কিন্তু তুখোড় ক্ষুরধার বুদ্ধির জার্মানরাও কিস্যু বুঝলোনা এই কথার মানে কি। তারাও হতভম্ব। তবে মোদ্দাকথা, কি করতে হবে এর পর, এটা একজন ভালোই বুঝলেন। তিনি জার্মান পক্ষ থেকে ব্রেস্ত শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া প্রাশিয়ান জেনারেল ম্যাক্স হফম্যান। প্রাশিয়ানরা হলো জার্মান রাজপুত। তলওয়ারের ভাষাটা তারা বরাবর ভাল বোঝে। ১৮ই ফেব্রুয়ারি জার্মান ফৌজ দুরন্ত আক্রমন শুরু করল রুশি ফ্রন্টলাইনের ওপর। একে অনেক সৈনিক বাড়ি ফিরে গেছে লাইন ছেড়ে। নেহাত অসুস্থ, আহত আর সামান্য কিছু রুশ সৈনিক তখনো ট্রেঞ্চে বসে আছে বাকিদের ছেড়ে যাবেনা বলে। এরকম অসম অবস্থায় যুদ্ধ হয়না। হয়ওনি। মাত্র কয়েকদিনের ভেতরেই জার্মানরা প্রায় বিনা বাধায় হেঁটে হেঁটে পৌঁছে গেল পেত্রোগ্রাদের কাছাকাছি। রাশিয়ার বিপ্লবী রাজধানীর দোরগোড়ায়। কিছুতেই ভেবে পাওয়া গেলনা, সুশিক্ষিত, অস্ত্রসজ্জিত জার্মান ফৌজকে কি করে থামানো সম্ভব। এমন সময় দেখা গেল পাড়ার মোড়ে মোড়ে কাঠের কাক্স, পিপে এসবের ওপর বলশেভিক নেতারা ছোটো ছোটো জমায়েত করছেন। এই যেমনটা আমাদের এখানে সন্ধ্যেবেলা হয় মাঝে মাঝে।
অভিজাত পেত্রোগ্রাদের উপকন্ঠে ভিবর্গ মহল্লা। বস্তি বলাই ভাল। মজুর বস্তি। বলশেভিকদের সূতিকাগার বলা চলে। এখানেই পাড়ার মোড়ে মোড়ে বলশেভিক নেতারা ব্যাখ্যা করলেন অবস্থা কতটা খারাপ। বিপ্লবি রাজধানীর উপকন্ঠে এসে হাজির হচ্ছে হানাদার জার্মান বাহিনি। বেশীক্ষন কথা বলার দরকার হলোনা। মহল্লার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো কালিঝুলি মাখা মজুরের দল। গায়ে তাদের পুরোনো কালচে হয়ে যাওয়া চামড়ার কোর্তা আর মাথায় সেই চামড়ার টুপি। পায়ে ছেঁড়াখোঁড়া কারখানায় পরার জুতো। বাঁ হাতে কনুইয়ের ওপর একটা করে লাল ফেট্টি বাঁধা। পাড়ার মোড়ে মোড়ে নাম লেখা শুরু হলো লাল রক্ষীদের। যাদের কিছু সামরিক অভিজ্ঞতা আছে, অথবা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা সৈনিক, এমন লোকের হাতে ছোটো ছোটো স্কোয়াড তুলে দেওয়া হতে লাগল। দশ থেকে পনের জন লোক। যার বাড়িতে যা অস্ত্র আছে, তাই নিয়েই এলো। সরকারি অস্ত্রাগার থেকেও পাওয়া গেল কিছু রাইফেল, গুলি, সামান্য কিছু ম্যাক্সিম মেশিনগান। দলনেতা সৈনিক দেখিয়ে দিলেন, কেমন করে গুলি ভরে রাইফেলে, বেয়নেট কিভাবে লাগায়, গ্রেনেডের ফিউজ কি ভাবে খুলতে হয়, কেমন ভাবে ছুঁড়ে দিতে হয় শত্রুর দিকে। মেশিন গানের নিশানা কি ভাবে ঠিক রাখে, জল কোথায় ভরে, গুলির বেল্ট কিভাবে রাখে। কেমন করে বোঝা যায় শত্রু হাজার মিটার দূরে, ছশো মিটার দূরে, নাকি দুশো মিটার দূরে নিশ্চিত পাল্লার মধ্যে। সারি বেঁধে পুরুষ, মহিলা সবাই হেঁটে চলল বরফে ঢেকে যাওয়া রাস্তা দিয়ে। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা সামান্য খাবার দাবার, রাইয়ের কালো রুটি, ভাগ করে খেলো সবাই। মাঝে মাঝেই বলশেভিক স্বেচ্ছাসেবকের হুঁশিয়ারি – “সাবধান কমরেড, ভদকা একেবারেই নয়, সজাগ থাকুন, শত্রু সামনেই”। বহু বছরের কঠোর শ্রমে অভ্যস্ত শরীরগুলো এগিয়ে গেল দ্রুত পায়ে। সামনের দিকে। যেখানে জার্মান কামান তাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে। মৃত্যু তাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে। ইতিহাসের সন্ধিক্ষনে, অমরত্ব তাদের জন্যে অপেক্ষা করে আছে।
পায়ের নিচে মচমচ করে বরফ ভাঙছে, মাথার ওপর ঝুরঝুর করে বরফ ঝরছে। ঝড়ের মত রক্ত জমিয়ে দেওয়া হাওয়া ফেলে দিয়ে চাইছে ঠেলে। কিন্তু পেটাই লোহার মত শক্ত, লাল রক্ষী মজুরের সারি এগিয়ে চলল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ক্রনস্তাদ নৌঘাঁটি থেকে আসা নাবিকেরা, অল্প পরিমানে কিছু ছাত্র, কিছু দলছুট সৈনিক এবং খুব কম পরিমানে হলেও, সামান্য কয়েকজন অফিসার, রাজনৈতিকভাবে বলশেভিকপন্থী না হয়েও যাঁরা বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে “দেশপ্রেমিক” হয়ে দেশ ছেড়ে পালাননি। তিন দিন টানা হেঁটে চলার পর ২২শে ফেব্রুয়ারি দিগন্তে দেখা গেল গির্জার উঁচু চুড়ো। ছোট্ট পশকোভ শহর। স্থানীয় লোকজন পালাচ্ছে শহর ছেড়ে। জার্মান বাহিনি এসে পড়েছে। লাল রক্ষীরা বরফ খুঁড়ে তার ভেতরে পজিশন নিলেন। । জার্মান ফৌজ রুশি সেনাকে দলাইমলাই করে এসেছে। তাদের চোখে রুশি ফৌজ তখন হাসির খোরাক। তারা দেখলো সামনে রুশি ফৌজও নয়, কিছু অসামরিক লোকজন বন্দুক বাগিয়ে বসে। যাদের খুব সম্ভবতঃ কোনো সামরিক শিক্ষা নেই। এদের পেছনে বেশী গুলিও ব্যায় করতে হবার কথা নয় তাদের হিসেবে। এক দুটো গুলি খেলে বাকিগুলো এমনিই পালাবে। সেই মত জার্মানরা দুলকি চালে এগোলো ২৩ তারিখ সকাল বেলা। কিন্তু লড়াই হলো প্রায় সমানে সমানে। আর তাজ্জব কি বাত্, একটা লোকও নিজের জায়গা ছেড়ে ভয়ে পালালোনা। মনোবল তাদের অটুট।
প্রতিটি পরিখা, মেশীনগান ঘাঁটি ঘুরে ঘুরে বলশেভিক নেতারা মনোবল আর সাহস যুগিয়ে চলেছেন। নিজেদের গুলিতে অপরাজেয় জার্মানদের পড়ে যেতে দেখে লাল রক্ষীদের মনোবল বাড়ছে। বাড়ছে রোখ। বাড়ছে জেদ। নিজেরা মরে যেতে যেতে তাঁরা প্রমান করে যাচ্ছেন হানাদার জার্মানরাও মরনশীল। নিজেদের পক্ষের প্রতিটি ফোঁটা রক্ত দিয়ে শহীদেরা দামী করে যাচ্ছেন মাটিকে। এ মাটি কমরেডের রক্তে ভিজেছে। অন্যের অধিকারে যাবার কোনো অধিকার আর নেই এই মাটির। দুপক্ষেই হতাহত অনেক। আহতদের পেছনে নিয়ে এসে শুশ্রুষা ভার নিলো স্থানীয় গাঁয়ের বুড়োবুড়িরা। বুকে হেঁটে বাচ্ছারা নিয়ে গেল কার্তুজের বাক্স, মর্টারের গোলা কিম্বা মেশিনগানের গুলির বেল্ট। কখনো বা সামান্য এক টুকরো রুটি। নিজে না খেয়ে কৃষক বাড়ির শিশু খাবার তুলে দিলো লড়াইয়ে থাকা লাল রক্ষির মুখে। কোথা থেকে এল এই মানসিক শক্তি? কেমন ভাবে তৈরি হলো এই হার না মানা মনোভাব? দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের মধ্যেই অঘটন ঘটতে শুরু হলো। সেই প্রথমবার জার্মান ফৌজি কম্যান্ড বুঝতে পারল এই শক্ত প্রতিরোধ ঠেলে এগিয়ে যাওয়া যাবেনা। য়ার যাওয়া গেলেও এত জার্মান সৈন্য মারা যাবে, তাতে পরে আর এগোনো সম্ভব হবে না, দখল করা জমি দখলে রাখা যাবেনা। পশ্কোভ থেকে জার্মান বাহিনি পিছু হটে গেল। সেই প্রথম বারের মত। আর লাল রক্ষীরা? না রক্ষী নয় আর। ফৌজ। লাল ফৌজ। একটা লাল ফেস্টুনের ওপর আঁকাবাঁকা অক্ষরে কেউ লিখে এনেছে রাবোচি ক্রেস্তইয়ানস্কায়া ক্রাসনোয়া আর্মিয়া – শ্রমিক কৃষকের লাল ফৌজ। কোনো দেশ নয়, জাতি নয়, ধর্ম নয়। এ ফৌজ শ্রমিক কৃষকের নিজের, দুনিয়ার প্রথম শ্রমিক কৃষকের নিজের প্রতিরোধ বাহিনির। সদ্য জ্বলে ওঠা সমাজতান্ত্রিক শিখার সলতেকে রক্ষা করবে এরাই। আজ ২৩শে ফেব্রুয়ারি, জন্ম হলো লাল ফৌজের। ২৩শে ফেব্রুয়ারি, লাল ফৌজের জন্মদিন।
এহেন সোভিয়েত প্রতিরোধের মুখে পড়ে জার্মানরা সন্ধি আলোচনা আবার শুরু করতে রাজি হলো। যদিও তার আগের কয়েকদিনে জার্মান বাহিনি আরো অনেকখানি এলাকা দখল করে নিয়েছিলো। ইউক্রেনের আধখানা, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, সব ছেড়ে দিতে হল সোভিয়েত রাশিয়াকে। লেনিন মেনে নিলেন চুক্তি। অনেক রক্ত ঝরেছে। আর নয়। পূর্ব রনাঙ্গনে যুদ্ধ শেষ হলো ৩রা মার্চ, ব্রেস্ত সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে। শৈশবে, নিজের জন্ম মুহুর্তে লাল ফৌজ, বহুগুন শক্তিশালী আগ্রাসী শত্রুকে তার নিজের ক্ষমতা বুঝিয়েছিল। বুঝিয়েছিল অস্ত্র লড়েনা, লড়ে সৈনিক, আর তার মনোবল। অনেক শক্তিশালী আদর্শে পুষ্ট লাল ফৌজ রক্ষা করেছে তার মাটি, সমাজ, মানুষকে। সাম্রাজ্যবাদী কাইজারের স্বার্থে লড়তে আসা জার্মান সেনা কোনোমতেই সেই আদর্শবাদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারেনি। এঁটে উঠতে পারেনি আরো ২৫ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। যাদের একদিন শাষক ও তার প্রচারযন্ত্র দেশদ্রোহীর তকমা দিয়েছিল, তারাই শেষে রক্ষা করল দেশের মাটি। আজও যখন শুনি প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রযন্ত্র কিছু মানুষকে দেশদ্রোহী তকমায় দেগে দিচ্ছে, তখন বার বার মনে পড়ে প্যাকিং বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে ভিবর্গ মহল্লায় লেনিনের লাল রক্ষিদের প্রতি আবেদন।
সামনেই ২৩শে ফেব্রুয়ারি। লাল ফৌজের ৯৯ তম জন্মদিন। লাল ফৌজ, গোটা পৃথিবীর খেটে খাওয়া মানুষের ফৌজ, প্রতিরোধ বাহিনি। খেটে খাওয়া মানুষের স্বার্থ রক্ষা করা নিরাপত্তা বাহিনি। তার না আছে কোনো দেশ, না আছে কোনো বর্ণ, জাতী, ধর্ম। ৯৯ বছরে পা রাখা লাল ফৌজকে জানাই অনেক অনেক অভিনন্দন। লাল ফৌজি চেতনা জেগে থাকুক খেটে খাওয়া মানুষের বুকের ভেতর। আগামী আরো বহু বহু বছর ধরে।
পরিশিষ্ট
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আঁতলামোটা বেড়েই চলেছে। সব লেখার সঙ্গে একটা করে পরিশিষ্টের লেজুড় জুড়ে দিচ্ছি আজকাল। কেন বাওয়া? এমনি লিখে হয়না? আবার পরিশিষ্ট লিখতে হবে? কিন্তু বিশ্বাস করুন, এই পরিশিষ্ট না লিখে পেটের মধ্যেটা কেমন যেন কুটকুট করছিল। এদিকে আমি লিখছি লাল ফৌজের জন্মদিন নিয়ে, আর ওদিকে আমার দেশের মাটিতে কত কি সব ঘটে চলেছে। ওপরের ঘটনার ৯৯ বছর পরে যখন দেখি, দেশপ্রেমিক আর দেশদ্রোহী, বিদেশের দালালের সেই তর্ক উঠে আসছে আমার দেশের মাটিতে। এবং যখন দেখি, সেই বিতর্কেই ভেতরে নিতান্তই সস্তা প্রচারের লোভ, তখন আবার ও নিশ্চিত হই, শ্রেনীচেতনা ছাড়া প্রগতিশীল রাজনীতি কিছুতেই সম্ভব নয়। এসব দেখে মনে হচ্ছে দেশটা যেন কারোর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি। কত সহজে একপক্ষ, অন্যপক্ষকে দেশদ্রোহীর তকমা দিচ্ছে। আবার দেখি অন্যপক্ষের ছাত্রছাত্রিরা স্লোগান দিচ্ছে সৈয়দ গিলানীর নামে, যে কাশ্মিরী হুরিয়াত নেতা মনে করেন তাঁর শরীরে “ভারতীয়” রক্ত নেই। ভারত রাষ্ট্রের সংবিধান ও তার ভিত্তির মূলে রয়েছে জাতী-ধর্ম-বর্ণের উর্ধ্বে এক বহুত্ববাদী সমাজ ব্যবস্থা। দ্বিজাতীতত্ত্বের বিরোধীতা করে ভারতের সৃষ্টি। নাহলে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হতো। গিলানী দ্বিজাতী তত্ত্বের সমর্থক। তাঁদের নামে জয়ধ্বনী কখনো ভারত রাষ্ট্রের ধারনা ও তার সংবিধানের সঙ্গে খাপ খায়না। আবার অন্যদিকে সেই “হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান”। যে গেরুয়াতন্ত্র অন্য একদল ভারতীয়কে “অভারতীয়” দেগে দেয় শুধু ধর্মবিশ্বাসের বা ভাষার কারনে, সে তন্ত্রও একান্তভাবেই ভারত রাষ্ট্রের মূল ভিত্তির পরিপন্থী। সেও সেই দ্বিজাতীতত্বের কথাই বলে।
ধাঁধা লাগে, তাহলে কে, কাকে, কেন দেশদ্রোহী বলছে? যখন দেখি, এই বিতর্কে মুখোমুখি হয়ে অস্ত্র সানানো দু পক্ষের মধ্যেই স্পষ্ট কোনো ধারনা নেই, তারা কোন পক্ষে এবং কেন। যখন দেখি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষিত ছাত্রছাত্রিরাও শুধুমাত্র কিছু আবেগের বসে ঝান্ডার রঙ ধরে স্লোগান দিচ্ছে, এর পেছনে দুদন্ড সময় দিয়ে একটু ভাবনা চিন্তা ও নিজেদের মধ্যে সুস্থ বিতর্কে সময় দিচ্ছে না, যখন দেখি পুরো ঘটনাগুলোই যেন টিভি ক্যামেরার সামনে ঘটার জন্যেই, মুখ দেখানোর জন্যেই, খবরের কাগজে নাম তোলার জন্যেই, তখন মনে হয়, আমাদের বড্ড দরকার কতগুলো কাঠের প্যাকিং বাক্স, কয়েকজন ঝলঝলে জামাকাপড় পরা লোক, যারা সেই বাক্সর ওপর উঠে ডাক দেবে খেটে খাওয়া মানুষকে, আর খেটে খাওয়া মানুষগুলো হাতে বা মাথায় কালচে হয়ে যাওয়া যেমন তেমন কিছু লাল ফেট্টি বেঁধে রাস্তায় হাঁটবে আর ওই নাটুকে, রঙ্গমঞ্চ মার্কা রাজনীতির প্রতিবাদে স্লোগান দেবে “ও রাজনীতি রঙ্গময় – এ দেশ কারোর বাপের নয়”। খেটে খাওয়া সাধারন ভারতীয়কে যে রক্ষা করবে, তার নাগরিক অধীকার, তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তার বহুত্ববাদী সমাজ ও রাষ্ট্রের ধারনাকে যে রক্ষা করবে, সে দেশপ্রেমিক? না কি যে জাত ধর্মের ভিত্তিতে ভারতের কিছু মানুষকে দেগে দেবে অভারতীয় বলে, অথবা যে ভারত ভেঙ্গে টুকরো করতে চাইবে, যারা ভারত রাষ্ট্রের মূল ভাবনার বিরোধীতা করা মানুষদের নামে জয়ধ্বনীদেবে তারা দেশপ্রেমিক? চাইব, মহল্লায় মহল্লায় বেরিয়ে আসুক খেটে খাওয়া ভারত বাসীর লাল রক্ষি বাহিনি। আর প্রতিরোধ করবে ছদ্ম দেশপ্রেমিক, থুড়ি দেশদ্রোহীদের।