ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে,/ মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।/ তাথৈ তাথৈ থৈ দ্রিমী দ্রিমী দং দং/ ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে।/ দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী,/আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।/ সাজ রে সন্তান হিন্দু মুসলমান/ থাকে থাকিবে প্রাণ না হয় যাইবে প্রাণ। /লইয়ে কৃপাণ হও রে আগুয়ান,/ নিতে হয় মুকুন্দ-রে নিও রে সঙ্গে। জাগরণের গান। যার এমন গানে উত্তাল হয়েছিল বাংলা তিনি চারণকবি মুকুন্দ দাস।
‘হাসি হাসি পরবো ফাঁসী/ দেখবে জগৎ বাসী,/একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।’ ক্ষুদিরামের ফাঁসী উপলক্ষে রচিত এই অমর গানের স্রষ্টাও কবি মুকুন্দ দাস।
ব্রিটিশবিরোধী জাগানিয়া এমন সব গণসংগীত আজও প্রাণ ছুঁয়ে যায় মুক্তচিন্তার মানুষের। মুকুন্দ দাস এমন অনেক গান বানিয়ে, গান শুনিয়ে যেমন আন্দোলিত করেছিলেন স্বদেশিদের, বিপ্লবের ঝান্ডায় রসদ জুগিয়েছিলেন কবিতা নাটক যাত্রাপালায়, তেমনি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। উপমহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তার খ্যাতি।
চরনকবি মুকুন্দ দাসের ৭৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৩৪ সালের ১৮ মে গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে তিনি মারা যান। অন্ধ-কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে দেশ মাতৃকার সাধনায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করা চারণ কবির মৃতুবার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
তার পূর্বপুরুষেরা বিক্রমপুরের হলেও তিনি শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠেন বরিশালে। বরিশালের মানুষ হিসাবেই নিজেকে পরিচিত করেছেন।
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বরিশালে তুমুল ইংরেজবিরোধী বিক্ষোভ দেখা দেয়। মুকুন্দ দাস নিজে এই বিক্ষোভে অংশ নেন ও ইংরেজবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ করে এবং একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙ্গালীর জাতীয় জীবনে নূতন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন।
১৯০৪সালের দিকে কালিসাধক সোনাঠাকুর দ্বারা প্রভাবিত হন মুকুন্দ দাস। ১৯০৫ সালে রচনা করেন প্রথম পালাযাত্রা ‘মাতৃপুজা’।
ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে ১৯০৮ সালে গ্রেপ্তার হন মুকুন্দ দাস। জেল খেটে ১৯১১ সালের প্রথমভাগে দিল্লি কারাগার থেকে ছাড়া পান।
ভারতবর্ষের আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। দেশবন্দু চিওরঞ্জন দাস, প্রিয়ম্বদা দাস, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু তার গানে মুগ্ধ। নজরুল এসে দেখা করেন তার সঙ্গে। তিনি তাকে গান গেয়ে শোনান ও তার লেখা কয়েকটি বই উপহার দেন। মুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।
এ সময়ে বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালীমন্দিরের জায়গা কেনেন। যা এখন বরিশালে চারনকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি নামে পরিচিত।