সকালে উঠেই রাজিবের মন। খারাপ হয়ে গেল। আজ তার মা বাসায় নেই। তার মা তো “ওয়ার্কিং উইম্যান” তাই বাসায় কম থাকেন। তাও সে জানে যে তার মা যখন বাসায় আসবে তার জন্য চকলেট আর দুইটা হুইসেল নিয়ে আসবে। সে তো বলেই দিয়েছে। রাজিব উঠে তার বাবার কাছে গেল। “বাবা, মা তো কালই আসছে। তাই না?” “হ্যাঁ। কালই আসবে। তুমি গুড বয় হয়ে থাকছ না?”
“হ্যাঁ। থাকছি তো।” “তাহলে কেন আসবে না?” “আসবে তো। তুমি কেন পচা কথা বলছ?” রাজিবের বাবা হেসে দিলেন। ৯ বছর বয়সী এই ছোট বালকটির মায়ের জন্য অপেক্ষা বড়ই কষ্টকর। তিনি নিজে বুঝেন মায়ের থেকে দূরে থাকা কত কষ্ট। তার মাও তো তাকে ১০ বছর বয়সে রেখে চলে গিয়েছিলেন। “বাবা, তুমি কি ভেবে হাসছ?” “বলা যাবে না।” “থাক তোমার বলতে হবে না। মা এসে বলবে। মা সবার মনের কথা বুঝে।” তিনি আবারো হেসে দিলেন। রাজিব স্কুলে গিয়ে শান্ত ছিল। কিন্তু বাসায় এসে হঠাৎই তার মায়ের কথা খুব মনে পড়তে লাগল। মনে হতে লাগল মাকে ছাড়া সে ১ সেকেন্ডও থাকতে পারবে না। কিন্তু তাকে তো আরো ১৬ ঘন্টা থাকতে হবে। সে কি করবে! হ্যাঁ। সে ভোরে উঠে মায়ের প্রিয় আইস টি তৈরি করবে। তাহলে তার মা খুশি হবে! একই মুহুর্তে তার মাও চিন্তা করছিলেন ছেলেটার জন্য চকলেট নেওয়ার। তিনি কিনেও ফেললেন।
ভোরে রাজিবের মা বাসায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলেন। রাজিবও আইস টি তৈরিতে মেতে উঠল। রাজিবের মায়ের গাড়িটা যখন বাসা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তখন একটি দৈত্য, ট্রাকের ধাক্কা লাগল গাড়িতে। কারো কিছু হলো না। শুধু রাজিবের মায়ের মাথাটায় ধাক্কা লাগল। তিনি আশ্চর্য ভাবে জানালা দিয়ে ছিটকে বাইরে পড়লেন। আর আরো আশ্চর্যভাবে চিৎকার করলেন, “চকলেট কেউ নেন। নষ্ট হয়ে যাবে!” এটাই তার শেষ কথা ছিল। ওইদিকে রাজিব চা কাপে ভরে বসে আছে। কাউকে কাছে যেতে দিচ্ছে না। তাদের নিশ্বাসে চা গরম হয়ে যেতে পারে। বাকি অংশ আছে। তবে তা পাঠকের কল্পনার ওপর ছেড়ে দিলাম।