আমি অনয়। অতি সাধারন সাধা সিধে ভুলে ভালা। কারও আদর, ভালবাসা, স্নেহ কপালে না জোটলেও একটুও অপুর্ণতা নেয় পাওয়ায় অবহেলা। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা চাকরি করি। কোন ছেলে মেয়ে নেই। আরে আমার তো বউ ই নেই ছেলে মেয়ে আসবে কোথা থেকে। বিয়েই তো করিনি। আমি তো ব্যাচেলর। আজকাল যে কি হয়েছে আমার সব কেমন জানি গুলিয়ে যাচ্ছে।
ভার্সিটি, ক্লাস, পড়াশুনা চাকরি সবকিছু মিলে যেন এক রোবটিক জীবন। এই রোবটিক জীবনে একটু বিনোদন শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তহীনতা দুর করতে মেডিসিনের ন্যায় কাজ করে। তাইতো একটু সময় পেলেই বেরিয়ে পরি প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে। যদিও সচারাচর যাওয়ার সুযোগ হয় না বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় কক্সবাজারে। কুয়াকাটায় গিয়ে কাছ থেকে দেখা হয় না সূর্যের উদয় আর অস্ত যাওয়া। মাঝে লোকমুখে সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনেই মনে প্রশান্তি নেই। প্রকৃতির সব সৌন্দর্য নুয়ে পড়া হিমছড়িতে যাওয়ার মত সৌভাগ্য হয় না। অদেখায় রয়ে যায় অকৃত্রিম অপরুপ মহিমায় সাজানো ম্যানগ্রোভ বন। যা আমাদের কাছে সুন্দরবন নামে অতি পরিচিত। দৃষ্টি পড়েনা কোন পার্ক বা উদ্যানে। এর জন্য আর্থিক অবস্থা যতটা দায়ী তার চেয়ে বেশী দায়ী সময়। যা আমাদের অনুকুলে নেই। নেই বললে ভুল হবে। কখনো অনুকুলে ছিলই না। সর্বদায় সময়ের অবস্থানটা ছিল প্রতিকূলে। আমরা চিড়িয়াখানায় বন্দি খাচার পাখির মত। বেরোনোর জন্য ডানা ঝাপড়ায়। কিন্তু কখনোই বের হতে পারি না।
তাই বন্ধের দিনে সপ্তাহের জমানো কাজ সেরে একটু সময় পেলে বেরিয়ে পড়ি চারপাশটা একটু ঘুরে দেখতে আর মনের ক্লান্তিহীনতাকে একটু হ্রাস করতে। গত শুক্রবার আমরা বের হয়েছিলাম চারপাশটা একটু ঘুরে দেখবো বলে। আমি আমার রোমমেট, বাসার মালিকের ছেলে আর ভাতিজাসহ মোট ছয়জন। আমরা যেখানে থাকি সেখান থেকে আড়াই কি.মি. দুর দিয়ে বয়ে গেছে এক ছোট নদী। নদীর তীরে দাড়ালে নদীর বুক থেকে বেসে আসা হিম শীতল বাতাস হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। নদীর যেদিকেই তাকায় চোখ জুড়িয়ে যায়। স্থানে স্থানে জেলেদের মাছ ধরা, মাঝে মাঝে নদীর বুকের উপর দিয়ে মালবাহী ট্রলারের বয়ে যাওয়া আর ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নৌকা নিয়ে খেলা করা আমাদের আনন্দের মাত্রাটা দিগুন করে তোলে। সেদিনও আমাদের গন্তব্যের জায়গা ওই নদী। আমাদের দুই পা কে বাহন বানিয়ে এগিয়ে চলেছি আমাদের গন্তব্যের দিকে। কিছুদুর যাওয়ার পর আমাদের পানি পিপাসা পায়। একটু সামনেই একটা পানির ট্যাব দেখতে পেয়ে আমরা সেদিকেই যাচ্ছিলাম। পানির ট্যাব থেকে একটু সামনে গিয়ে রাস্তা বাক নিয়ে চলে গেছে। বিপরীত দিক থেকে যদি কেউ আসে তাহলে দেখার উপায় নেই। আমরা আপন মনে এগিয়ে চলেছি পানির ট্যাবের দিকে।
কিছুদুর অগ্রসর হতেই হঠাৎ খেয়াল করলাম আট থেকে নয়জনের একটা মেয়ের গ্রুপ পানির ট্যাবের কাছে এসে হাজির। ওরা হাত পা ধুয়তেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাত্র খেলাধুলা করে এসেছে। আমাদের খেয়াল করেছে কিনা জানি না। তাই আমরা ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। ওরা চলে গেলেই আমরা যাব। কিন্তু হায় আল্লাহ একি প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে তাদের যাওয়ার কোন নিশানা নেই। তাই বাধ্য হয়েই একটু এগিয়ে গেলাম। আমাদের মধ্যে থেকে এক ছোটভাই আরেকটু এগিয়ে তাদের একজনকে বলল আপু আপনারা যদি একটু সরে দাড়াতেন তাহলে আমরা একটু পানি খেয়ে চলে যেতাম। কিন্তু মেয়েটি যে উত্তর দিল তা শুনে হতবাক না হয়ে পারলাম না। মেয়েটি দেখতে ছিল অমায়িক।
তার কাজল কাল চোখ, গোলাপী ঠোট, লম্বা কেশ আর ফর্সা গায়ের রং সবকিছু মিলে যেন এক অপ্সরী। কিন্তু তার বলা উত্তর গুলো ছিল এমন, “”ওই তোরা সর ছোট বাবু গো পানি খাইতে দে নইলে মইরা যাইবো”” বলেই সবার প্রাণ উজাড় করা হাসি। তার এই এহেন অরুচিকর মন্তব্য শুনে ছোট ভাই জিজ্ঞাসা করলো আপু আপনি কোন ক্লাশে পড়েন। তার অকপট জবাব “”তার আগে আপনি কন আপনি কোন ক্লাশে পড়েন””। ছোট ভাই বলল আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। সাথে সাথে মেয়েটির উত্তর “”আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, আর অ্যা ইয়ার ইউ আর টু জুনিয়র দেন মি””। আমি মেয়েটির কথা শুনে প্রায় বাকরুদ্ধ। বিশ্বাস করেন মেয়েটি বড়জোর ক্লাশ এইট কিংবা নাইনে পড়ে। মনে হয় না মেয়েটি এস এস সির গন্ডি পেরিয়েছে। ততক্ষনে আমাদের পানি পিপাসা উবে গেছে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে আমরা সামনের দিকে পা বাড়ায়। তাদের অতিক্রম করতেই কানে ভেসে আসছে আমাদের ব্যঙ্গ করে তাদের করুন হাসি। যেন ভৌতিক সিরিয়ালে দেখা শয়তানদের জিরক্স কপি।