মরণখেলা: ২.১০ কিউটের পিছনে পানিতে আলোড়ন

মরণখেলা: ২.১০ কিউটের পিছনে পানিতে আলোড়ন

২.১০ কিউটের পিছনে পানিতে আলোড়ন

কিউটের পিছনে পানিতে আলোড়ন তুলল প্রপেলার, সাদা ফেনার সাথে উথলে উঠল রাশ রাশ টুকরো বরফ। নির্দেশ দিলেন ক্যাপটেন, ধীরে ধীরে পিছু হটল জাহাজ। খানিকটা নেমে থেমে গেল আবার, এঞ্জিনের শক্তি বাড়ানো হলো। আরও জোরে ঘুরল প্রপেলার, এঞ্জিনের বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠল ব্রিজ। উল্টোদিকে আবার গতি সঞ্চার হলো, ধীরে ধীরে বরফের ঢাল থেকে নেমে আসছে আইসব্রেকার।

সবশেষে পানিতে নামল বো, ছলাৎ করে লাফিয়ে উঠল পানি। বে-টা এতই ছোট, জাহাজ ঘোরাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না। পিছু হটে সরু ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে হবে।

বে-র দুই বাহুর মাঝখানে পৌঁছে গেল কিউট, কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই ফাঁকটা গলে সাগরে পড়ল ওরা। ডেক কাপছে, রেইল ধরে বো-র দিকে এগোল রানা। মাথার ওপর আপাতত কোন কুয়াশা নেই। চাদের আলোয় ভাসমান বরফের টুকরো দেখা গেল পানিতে। ধীরে ধীরে জাহাজ ঘুরিয়ে নিলেন ক্যাপটেন। সামনে ঘন কুয়াশা রয়েছে, আধ মাইল দূরে। রানার পাশে বো-র কাছে এসে দাঁড়াল নিয়াজ। এই জেদের কোন মানে হয়? এখনও এগোচ্ছি, বার্গের সাথে থাকলেও এগোতাম। কাফম্যানকেও বিরক্ত মনে হলো। আচ্ছা, এই আলোক সজ্জার কি দরকার ছিল বলতে পারো?

ক্যাপটেনের নির্দেশে জাহাজের সব কটা আলো জ্বেলে দেয়া হয়েছে। পোর্ট, স্টারবোর্ড, আর বো-র দিকে সার্চলাইটের চোখ ধাঁধানো আলো ফেলা হয়েছে। ক্যাপটেনের ধারণা, এভাবে আলো জ্বেলে এগোলে, তার সাথে যদি অবিরাম ফগ-হর্ণ বাজতে থাকে, রুশ জাহাজগুলো ধাক্কা দেয়ার কোন অজুহাত খুঁজে পাবে না।

কিউটে মেরিলিন চার্ট আর ইভেনকো রয়েছে, আর কোন। অজুহাত দরকার আছে ওদের? যাই ঘটুক না কেন, রিপোর্ট করার উপায় নেই যখন?

কিন্তু রানার কথা কানে তোলেননি গোল্ডম্যান। তাঁর যুক্তি, অন্ধকারে রুশ জাহাজগুলোকে পাশ কাটাবার চেষ্টা করলে পরে কর্নেল বলটুয়েভ বলার সুযোগ পাবে, সংঘর্ষের জন্যে আমেরিকানরাই দায়ী, কুয়াশার জন্যে কিউটকে তারা দেখতে পায়নি।

চোখে নাইট-গ্লাস তুলে দূরে তাকাল রানা।

কিছু দেখছ? উদ্বেগের সাথে জানতে চাইল নিয়াজ।

শুধু পানি। আর কুয়াশা।

কিছু দেখছেন? ব্রিজ থেকে নিঃশব্দে নেমে এসে রানার আরেক পাশে দাঁড়াল কাফম্যান। আপনার যা চোখ, আবার মাস্তুলের ওপর উঠলে পারতেন।

ঘাড় ফিরিয়ে মাস্তুলের দিকে তাকাল রানা। আশি ফুট উঁচুতে, ক্রস-ট্রীর ওপর একজন বসে রয়েছে, ফার হুডের তলায় হেডসেট। ক্যাপটেনের নির্দেশে ওখানে উঠতে হয়েছে বেচারাকে। কিউটের সামনে কোন বাধা দেখলে সাবধান করবে। না, ধন্যবাদ। আবার! তাছাড়া, কুয়াশার ভেতর দেখার আছেটা কি?

স্টার্নের কাছে, স্টারবোর্ড সাইডে কারলি ফ্লোট আছে, নিচু গলায় বলল কাফম্যান। এক্সপ্লোসিভ কেবিনের পাশেই। চাবিটা মি. মুখার্জিকে দিয়ে রেখেছি।

ধন্যবাদ।

সাহায্যের দরকার হলে, হিগিন আছে, গলা আরও খাদে নামিয়ে বলল ক্যাফম্যান। সবাই মিলে লঞ্চটাকে নামাতে পারব।

হিগিন?

ফ্লোটের কাছে লুক-আউট পয়েন্টে ডিউটি দিচ্ছে।

ঠিক আছে।

আমাকে বলবেন, ঠিক কি করবেন বলে ভাবছেন আপনি, মি. রানা?

ভয় দেখিয়ে ভাগিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব, পরিষ্কার করে কিছু বলল না রানা।

ক্যাপটেন এখনও কিছু জানেন না, জানলে আমার চাকরি নট হয়ে যাবে, রানার কানে কানে বলল কাফম্যান।

আইসবার্গ অ্যালিতে মরার চেয়ে বেকার হয়ে বেঁচে থাকা ভাল নয়?

.

কিউট আলাদা হয়ে যাচ্ছে, বলল কর্নেল। পাইলটের তোলা ছবিতে যে আইসবার্গটার কোলে উঠে পড়েছিল, সেটা থেকে নেমে আসছে।

রিগার ব্রিজে, রাডারস্কোপ-এর হুডের সামনে ঝুঁকে রয়েছে বলটুয়েভ, স্কোপের সবুজাভ আভায় উদ্ভাসিত হয়ে রয়েছে তার মুখ। কামানো মাথাটাও সবুজ রঙে চকচক করছে।

কত দূরে? অস্থিরতা চেপে রেখে জিজ্ঞেস করল জুনায়েভ।

হুড থেকে মুখ তুলে ব্রিজের অপর প্রান্তে তাকাল বলটুয়েভ। তার দিকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্যাপটেন ট্রাভকিন, হাত দুটো পিছনে এক হয়ে আছে, সারা শরীর আড়ষ্ট। এবার আপনি এঞ্জিন স্টার্ট দিতে পারেন, ক্যাপটেন, হাঁক ছাড়ল কর্নেল। এখন থেকে রাডারের সাহায্যে নজর রাখব ওটার ওপর। এবার হুডের সামনে ঝুঁকে জুনায়েভের প্রশ্নের উত্তর দিল, মাঝরাতের। মধ্যে-আশা করি মাঝরাতের মধ্যেই সমস্ত ঝামেলা চুকে যাবে।

.

আইসবার্গ অ্যালি ধরে দক্ষিণ দিকে চলেছে কিউট। ঠাণ্ডা দুধের মত পানি কাটছে বো, হাফ পাওয়ারে চালু রয়েছে এঞ্জিন। জাহাজের প্রতিটি আলো জ্বলছে। আরও একটা সুবিধে করে দেয়া হয়েছে কর্নেল বলটুয়েভকে, কিউটের শক্তিশালী ফগহর্ন করুণ সুরে বাজছে বিরতিহীন।

হর্নের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসছে শুনে চিন্তিত। হলো রানা। তারমানে কুয়াশার ভেতর নিশ্চয়ই কোথাও আইসবার্গ আছে।

নির্দয় ঠাণ্ডার মধ্যে বো-র কাছে দাঁড়িয়ে আছে চারজন। মাঝে। মধ্যে লুক-আউট পয়েন্টগুলোর কাছ থেকে ঘুরে আসছে তিনজন, শুধু রানা নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ছে না। চোখে নাইট-গ্লাস, হাত। দুটো ব্যথা হয়ে গেল। পিছনে পায়ের আওয়াজ।

আপনার কফি, মি. রানা।

পিছনে হিগিনকে নিয়ে আবার হাজির হলো কাফম্যান। ফ্লাস্ক। থেকে অ্যালুমিনিয়ামের মগে তরল আগুনের মত কফি ঢালল হিগিন। তাড়াতাড়ি চুমুক দিল রানা, এরইমধ্যে ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে। হিগিনকে তার পোস্টে পাঠিয়ে দিল কাফম্যান। নিয়াজকে কোথাও দেখা গেল না। ক্যাপটেনের সাথে কথা বলে এলাম, বলল কাফম্যান। বললেন, ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তিনি।

তবু ভাল যে সন্তুষ্ট একজনকে পাওয়া গেল।

যাই বলুন, বিপদের কোন আভাস এখনও…

সব বিপদই কি আগাম নোটিশ দিয়ে আসে? ঝাঁঝের সাথে জিজ্ঞেস করল রানা। কফি শেষ করে কাপটা কাফম্যানের হাতে ধরিয়ে দিল ও, নাইট-গ্লাস তুলল চোখে। লেন্সে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ব্যথা করছে চোখ। সাগরের একধারে সরু একটা চ্যানেল। দেখা গেল, চাদের আলোয় সম্পূর্ণ সমতল আর শান্ত, প্রায় এক মাইল লম্বা। দুদিকে ভাসমান বরফের টুকরো গিজগিজ করছে। চ্যানেলের শেষ মাথাটা ঢাকা পড়ে আছে ঘন কুয়াশায়। পোর্ট সাইডে প্রকাণ্ড একটা আইসবার্গ, ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে। মাথার দিকে কুয়াশা নেই, টেবিলের মত সমতল ছাদ। স্টারবোর্ডের দিকে শুধু ভারী কুয়াশা, সাদাটে মেঘের মত আকাশ থেকে সাগর পর্যন্ত ঝুলে আছে, লম্বায় চ্যানেলটাকে ছাড়িয়ে গেছে।

রানা সেদিকে নাইট-গ্লাস ঘোরাতে কাফম্যান বলল, ওদিকে কুয়াশা ছাড়া দেখার কিছু নেই।

রেডিও-জ্যামিং কি আগের মতই স্ট্রং?

বেশি।

অর্থাৎ উৎসের খুব কাছে চলে এসেছি আমরা।

সামনেটা বোতলের ঘাড়ের মত সরু-চ্যানেলের একদিকে সমতল ছাদ নিয়ে দৈত্যাকৃতি আইসবার্গ, আরেক দিকে গাঢ় কুয়াশার নিচ্ছিদ্র স্তর। কোর্স সামান্য একটু বদলে দুই বিপদের মাঝখানে থাকার চেষ্টা করল জাহাজ। বিনয়কে নিয়ে বো-র কাছে। ফিরে এল নিয়াজ। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দৌড়াতে শুরু করল বিনয়, শরীর গরম রাখার চেষ্টা। দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার আওয়াজ শুনে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল ওরা। ব্রিজে ঢুকল কাফম্যান। রানার দিকে তাকিয়ে আছে নিয়াজ। ধীরে ধীরে নাইট-গ্লাস ঘুরিয়ে আবার স্টারবোর্ডের দিকে তাকাল রানা। ওদিকে সিকি মাইলের। মধ্যে চলে এসেছে কুয়াশা। বোতলের গলায় যখন ঢুকবে কিউট, কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যাবে ওরা।

কি ওটা? আঁতকে উঠল নিয়াজ। স্টারবোর্ডের দিকে, অনেকটা দক্ষিণে?

সচল পাচিলের মত জিনিসটা, কুয়াশার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। নিয়াজ বলার আগেই ওটাকে দেখতে পেয়েছে রানা। পরিচিত শত্রু, আগের সেই গোস্ট বার্গটা।

বোতলের গলায় ঢুকে পড়েছে কিউট। পোর্ট বো-র দিকে এগিয়ে আসছে সমতল ছাদ নিয়ে আরেক দৈত্য। কুয়াশার ঘন স্তরের দিকে তাকাল রানা। নিজের অজান্তেই শিউরে উঠল ও। কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে এল রিগার বো, তেড়ে এল ওদের দিকে যুদ্ধ-জাহাজের মত।

.

আমেরিকান জাহাজটা দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে আমাদের ডান দিকের কোর্স ধরে…

কাজেই রেডি হোন, ট্রাভকিনকে নির্দেশ দিল কর্নেল বলটুয়েভ।

কুয়াশার ভেতর দিয়ে এগোচ্ছে রিগা। ঝুঁকে আবার রাডার স্কোপে চোখ রাখল ট্রাভকিন। কিউটের এগিয়ে আসা লক্ষ করছে। সে। সময়ের নিখুঁত হিসেব দরকার হবে। ঠিক মুহূর্তটিতে কুয়াশা থেকে বেরুতে হবে জাহাজ নিয়ে, তা না হলে ব্যর্থ হবে সে। কোর্স ঠিক রাখো, হেলমসম্যানকে নির্দেশ দিল।

মন্থরবেগে এগোচ্ছে রিগা। সময়ের হিসেবে, কুয়াশা থেকে বেরুলেই সামনে পড়বে কিউট। রাডারস্কোপে ঝুঁকে থাকতে থাকতে পিঠ ব্যথা হয়ে গেল ট্রাভকিনের, দরদর করে ঘামছে সে। পিছনে কর্নেল বলটুয়েভের উপস্থিতি আড়ষ্ট করে তুলছে তাকে।

আমি চাই কিউটের ঠিক মাঝখানে অঁতো মারবে রিগা, ঢালাও হুকুম দিল কর্নেল।

রাডারস্কোপে ট্রাভকিন দেখল, কুয়াশা আর আইসবার্গের মাঝখানে, সরু বোতলের গলায় ঢুকছে কিউট। অস্থিরভাবে পায়চারি শুরু করল কর্নেল।

জাহাজ খোঁড়াচ্ছে কেন? ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল সে। আরেকটু জোরে ছোটাতে পারেন না?

কুয়াশা থেকে আগেভাগে বেরুলে ওরা সাবধান হয়ে যাবে, ভারী গলায় বলল ক্যাপটেন। আপনি কি তাই চান?

অন্ধকারে এগোচ্ছে রিগা, কোন আলো জ্বালা হয়নি। কুয়াশা চুইয়ে ক্ষীণ যে-টুকু চাঁদের আলো নামছে তাতেই সামনেটা খানিকদূর দেখতে পাচ্ছে বলটুয়েভ। এঞ্জিনের তেমন কোন আওয়াজ নেই, মৃদু গুঞ্জন শোনা যায়। সাগর সম্পূর্ণ শান্ত।

স্পীড যা আছে তাই থাক, নির্দেশ দিল ট্রাভকিন।

এভাবে কতক্ষণ? জানতে চাইল কর্নেল।

যতক্ষণ দরকার।

চেহারায় আক্রোশ ফুটে উঠলেও চুপ করে থাকল কর্নেল। নেভিগেশন সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই তার। অস্থিরতা বোধ করার কারণ, তার ইচ্ছে প্রথমবারই ধাক্কাটা লাগা চাই। ধাক্কা। লাগলে কি ঘটবে, কল্পনার চোখে দেখার চেষ্টা করল সে। ষোলো। হাজার টন ভার নিয়ে কিউটের ওপর চড়াও হবে রিগা। রিগার বাঁ। দিকে থাকবে কিউটের বিচ্ছিন্ন স্টার্ন, ডান দিকে তোবড়ানো বো। কোন্টা আগে ডুববে? কিউটের পিছনটা, না সামনেটা?

কর্নেল! ব্রিজের পিছনে চলে যান! শক্ত করে রেইল ধরে। থাকুন!

ক্যাপটেনের কথামত তাই করল কর্নেল। হেলমসম্যান, কর্নেলের নিজের লোক, আরও জোরে আঁকড়ে ধরল হুইল। ব্রিজের সামনে কুয়াশা, সেদিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকল। বলটুয়েভ। কুয়াশা পাতলা হয়ে আসছে দেখলেই বুঝতে হবে। সামনে কিউট আছে। রিগার একেবারে বো-র সামনে দেখা যাবে ওটাকে। ভাবল, বানচোত ট্রাভকিন স্পীড বাড়ায় না কেন?

রাডারস্কোপের সামনে থেকে সরে এল ট্রাভকিন, শক্ত হাতে। টেলিগ্রাফের হাতল ধরল। হাফ স্পীডের নির্দেশ দিল সে। তারপরই আবার ছুটে গেল স্কোপের দিকে। কোর্স ঠিক রাখো।

জানালার সামনে দিয়ে ম্লান একটু আলো সরে গেল।

এঞ্জিনের আওয়াজ হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় কুয়াশার ভেতর একটা আলোড়ন উঠল। ঘামের ধারা চোখে নেমে আসছিল, দ্রুত হাত ঝাপটা দিয়ে সেটা মুছল কর্নেল। কিউটের ফগহর্নের আওয়াজ পরিষ্কার শোনা যাচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে এখন। সরাসরি সামনের দিক থেকে আসছে।

রাডারস্কোপে চোখ রেখে নিঃশব্দে বিড়বিড় করছে ক্যাপটেন ট্রাভকিন। অকস্মাৎ সামনে থেকে উঠে গেল কুয়াশার পর্দা।

চাঁদের আলোয় ভেসে গেল ব্রিজ। নাক বরাবর সামনে চোখ ধাধানো আলো। কিউট।

প্রচণ্ড ঝাঁকি খেলো রিগা, আকস্মিক গতি পেয়ে ছুটল। আইসব্রেকারের খোল দ্রুত এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। দুহাতে রাডারস্কোপ ধরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ট্রাভকিন, চোখ দুটো বিস্ফারিত। সময়ের হিসেবে তার কোন ভুল হয়নি।

স্পীড বাড়াও! স্পীড বাড়াও!-নিঃশব্দে আবেদন জানাচ্ছে। ট্রাভকিন। ধ্যানমগ্ন হয়ে পড়ল সে। আশা, কিউটের ক্যাপটেন তার আকুল আবেদনে সাড়া দেবে।-স্পীড বাড়াও! সরে যাও সামনে থেকে! প্লীজ, প্লীজ!

স্পীড আগেই বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্যাপটেন গোল্ডম্যান। কুয়াশা থেকে রিগাকে বেরুতে দেখেই নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রিগা সোজা ছুটে আসছে, সরাসরি আঘাত করবে কিউটের মাঝখানে। ব্রিজের পিছন থেকে দৃশ্যটা ভালভাবে দেখতে না পেলেও উল্লাসে উত্তেজনায় ছটফট করছে বলটুয়েভ।

একেবারে শেষ মুহূর্তে মনে হলো, কিউট রক্ষা পেল না। আইসব্রেকারের মাস্তুল রিগার সামনে দেখা গেল, ব্রিজ ছাড়িয়ে গেছে। কোর্স না বদলে রিগার পথেই থাকল কিউট, গতি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।

ফুল স্পীড! ফুল স্পীড! ভয়েস পাইপে অনবরত চিৎকার করছেন গোল্ডম্যান।

কিউটের মাঝখানে নয়, পিছনে আঘাত করতে যাচ্ছে রিগা। কিউটকে এই স্পীডে পাবে, কর্নেল আশা করেনি। আইসব্রেকারের। পিছনে উথলে ওঠা পানির দিকে বেকুবের মত তাকিয়ে থাকল সে। চোখের পলকে রিগার বো-র সামনে থেকে স্যাঁৎ করে সরে গেল কিউটের স্টার্ন। এক ছুটে স্টারবোর্ড সাইডে চলে এল ট্রান্সকিন। রেইল ধরে ঝুঁকে পড়ল সে।

ব্রিজের মেঝেতে পা ঠুকল কর্নেল বলটুয়েভ, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে। গেছে তার। আপনি একটা অকর্মার ধাড়ি! এরপর আমি কমান্ডে। থাকব। রাগে দিশেহারা, কি করবে বুঝতে পারছে না। পায়চারি শুরু করল সে, তারপর ছুটে এল ক্যাপটেনের দিকে-মারবে।

প্রকাণ্ড দেহটাকে দুহাত দিয়ে ঠেকাল ট্রাভকিন, তারপর জোরাল একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল এক পাশে। একহারা লোকটার গায়ের জোর দেখে তাজ্জব বনে গেল কর্নেল।

দাঁতে দাঁত চেপে গাল পাড়ল ট্রাভকিন, আপনি একটা। মাথামোটা আহাম্মক-দেখছেন না, আইসবার্গে ধাক্কা খাচ্ছি!

ঝট করে সামনে তাকাল বলটুয়েভ। আতঙ্কে দুপা পিছিয়ে এল সে। জানালা জুড়ে মাথাচাড়া দিয়ে রয়েছে সমতল ছাদ নিয়ে। একটা দৈত্যাকৃতি আইসবার্গ।

ভরাডুবি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার, বুঝতে পেরে দুহাতে মুখ ঢাকল বলটুয়েভ।

.

কিউটের স্টার্নে ছিল রানা।

মনে হলো সংঘর্ষ ঠেকাবার উপায় নেই। শেষ মুহূর্তে ধারণা হলো, রিগার বো কিউটের প্রপেলার গুঁড়িয়ে দিয়ে যাবে। পরমুহূর্তে দেখা গেল, প্রপেলারের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল বো, মাত্র কয়েক গজের জন্যে মিস করল টার্গেট।

বার্গের সাথে ধাক্কা খাবে, পাশ থেকে বিড়বিড় করে উঠল নিয়াজ।

এসো, প্রার্থনা করি।

স্টার্নে দাঁড়িয়ে নিস্পলক তাকিয়ে থাকল ওরা। শেষ রক্ষার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করল রিগার ক্যাপটেন, রিসার্চ শিপের পিছনে টগবগ করে ফুটতে শুরু করল পানি। ঘুরে যাচ্ছে জাহাজ, কিন্তু তা সত্ত্বেও সম্মুখগতি রোধ করা সম্ভব হলো না। এই লাগল, এই লাগল ভাব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেন অলৌকিক ভাবে রিগার বো সম্পূর্ণ ঘুরে যাবার সময় পেল, সংঘর্ষ হলো না।

তারমানে বিপদ কাটল না। গম্ভীর হয়ে উঠল রানার চেহারা। নিয়াজ, বিনয়, আর হিগিনকে কয়েকটা নির্দেশ দিয়ে সোজা ব্রিজে উঠে এল ও।

পিছনের জানালার কাছ থেকে ঘাড় ফেরালেন গোল্ডম্যান। আপনার কথাই ঠিক, মি. রানা। রিগা আমাদের ডোবাবার চেষ্টা করল।

আবার করবে। দৌড় প্রতিযোগিতায় আপনি ওদের সাথে পারবেন না।

প্রশ্নই ওঠে না। ম্লান দেখাল ক্যাপটেনকে। কিউটের টপ স্পীড মাত্র ষোলো নট।

কাজেই যদি সম্ভব হয়, ওটাকে থামাতে হবে, ঠিক? কিউট, ক্রু, ইভেনকো রুস্তভ, আর ডকুমেন্টের কথা ভাবতে হবে আপনাকে।

এক্সপ্লোসিভের ব্যাপারটা কাফম্যান আপনাকে জানিয়েছে? হঠাৎ জানতে চাইলেন গোল্ডম্যান।

চোখে অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকল রানা, কথা বলল না।

আপনার ধারণা, আমার জাহাজে কি ঘটছে না ঘটছে আমি জানি না, মি. রানা?

রিগাকে থামাতে হবে, ক্যাপটেন, আবার বলল রানা।

যদি হয়, আমি হয়তো ভুল করে লগ বুকে ব্যাপারটা লিখব। রানার দিকে একদৃষ্টে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন ক্যাপটেন। তারপর মাত্র দুটো শব্দ উচ্চারণ করলেন, স্টপ হার!

কারলি ফ্লোট একটা ভেলা, কোন কারণে জাহাজ থেকে সবাইকে নেমে পড়তে হলে পানিতে ভাসানো হয়। একশো পাউন্ড। জেলিগনাইট, ডেটোনেশনের জন্যে তার জোড়া লাগিয়ে তোলা হলো ফ্লোটে। জায়গা মত ফিট করা হয়েছে টাইমার মেকানিজম, বিস্ফোরণের জন্যে দশ মিনিট মেয়াদ বেঁধে দিয়ে অ্যাডজাস্ট করা। হয়েছে-তবে বন্ধ রাখা হয়েছে ঘড়ি, চালু করা হয়নি। ফ্লোটটাকে এখন বিস্ফোরণােন্মুখ মাইন বলা যেতে পারে।

পানিতে লঞ্চ নামাবার সময় জাহাজের গতি কমাতে হলো। সিদ্ধান্তটা স্নায়ু বিদীর্ণ করার জন্যে যথেষ্ট। কারণ, এখনও অনেকটা দূরে হলেও, আবার ধাওয়া করে ওদের ধরতে আসছে। রিগা।

মাঝখানের দূরত্ব প্রতি মুহূর্তে এমনিতেই কম ছিল, এখন আবার স্পীড কমাতে হলো কিউটকে।

শুধু যে পিছনে বিপদ তাই নয়, ব্রিজ থেকে সামনে তাকালেও মনে ভয় ধরে যায়। স্টারবোর্ডের দিকে এখনও গাঢ় হয়ে রয়েছে। কুয়াশার স্তর, আধ মাইল দূরের গোস্ট বার্গটাকে আবছা করে রেখেছে। পোর্ট সাইড আরও ভয়াবহ দৃশ্য উপহার দিল, সার সার আইসবার্গ আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে পরিষ্কার পানি নিয়ে লম্বা হয়ে থাকা চ্যানেলটাকে সরু করে রেখেছে। আরও সামনে, নাক বরাবর, চ্যানেলের দুই পাশে, বিশাল দুই আইসবার্গ টাওয়ার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দলবদ্ধ আইসবার্গগুলোর মাঝখান দিয়ে পথ করে নিয়ে এগোতে হবে গোল্ডম্যানকে।

ওভারটেক করতে কি রকম সময় নেবে রিগা? কাফম্যানকে জিজ্ঞেস করল রানা।

দশ মিনিট-আন্দাজে বলছি।

গম্ভীর গলায় নিয়াজ বলল, আমার আন্দাজ পাঁচ মিনিট। স্টারবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ভুরু কোঁচকাল সে। ক্যাপটেন কোর্স বদল করছেন-লাইন দিয়ে দাঁড়ানো বার্গগুলোর কাছে সরে যাচ্ছে। জাহাজ।

তাই যেতে বলেছি, বলল রানা। কিউট আর গোস্ট বার্গের মাঝখানে যতটা সম্ভব চওড়া চ্যানেল থাকা দরকার।

যাতে রিগা চওড়া অংশটা বেছে নিতে বাধ্য হয়? ক্যাপটেনের কি মাথা খারাপ হয়েছে…!

তাহলে আমারও মাথা খারাপ হয়েছে। এসো, লঞ্চে নামা যাক।

ডেভিট কেবৃলে ঝুলছে লঞ্চ। একজন ক্রুকে নিয়ে পাশেই অপেক্ষা করছে হিগিন। রানার পিছু পিছু একে একে লঞ্চে চড়ল বিনয় আর নিয়াজ।

মি. রানা, এখনও আপনি বলেননি ঠিক কি করার কথা ভাবছেন। রিগার বো-র তলায় ফাটাবেন ওগুলো? কিন্তু তা…

তা সম্ভব নয়, কাফম্যানকে বলল রানা। ফুল স্পীডে আসছে রিগা, বো-র তলায় জেলিগনাইট রেখে আসবে কে? ফর গডস। সেক, দেরি না করে পানিতে নামান আমাদের! এভাবে সময় নষ্ট করলে মরতে হবে, মারতে হবে না।

সময় কম। অথচ কাজগুলো জটিল, সময়সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ। উইঞ্চ ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে পানির দিকে নিচু করা হলো লঞ্চ। সচল জাহাজ থেকে সাবধানে নামতে হবে পানিতে। কেবৃলের শেষ। মাথায়, শূন্যে, জাহাজের পাশে, ঝুলতে লাগল লঞ্চ। নামছে, কিন্তু। খুব ধীরে।

ওদিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে রিগা। কুয়াশার ভেতর ঝাপসা, বিশাল একটা অশুভ আকৃতি। ফুল স্পীডে আসছে, এঞ্জিনের আওয়াজ পেল ওরা। তাগাদার ওপর তাগাদা দিচ্ছে রানা, তাড়াতাড়ি, তাড়াতাড়ি!

পানিতে নেমে দুলতে লাগল লঞ্চ, জাহাজের বো থেকে ঢেউ। উঠছে।

এবার ফ্লোটটাকে নামাতে হবে। মুখ তুলে তাকাল ওরা, এরই মধ্যে নামতে শুরু করেছে ফ্লোট। সবাই জানে, নামাবার সময় ফ্লোট যদি জাহাজের গায়ে বাড়ি খায়, জেলিগনাইট বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা কম-কম, তারমানে সম্ভাবনা আছে। এ-ধরনের দুর্ঘটনা একেবারে যে ঘটে না তাও নয়।

এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে নেমে আসছে ফ্লোট। জাহাজের উঁচু কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্রুরা, একটু একটু করে রশি ছাড়ছে তারা। হঠাৎ একজনের হাত থেকে ফসকে গেল রশি। কাত হয়ে পড়ল ফ্লোট।

ব্যাটা বলটুর লোক! প্রচণ্ড রাগে প্রলাপ বকল নিয়াজ। আমাদের মারতে চায়।

চরম বিপদের মধ্যেও মানুষ হাসতে পারে, প্রমাণ করল রানা।

কাত হয়ে গিয়ে দুলতে লাগল ফ্লোট, জাহাজের খোলে দড়াম দড়াম বাড়ি খেলো। যে-কোন মুহূর্তে বিপজ্জনক কার্গো ছিটকে পানিতে পড়তে পারে। লঞ্চে, ওদের মাথার ওপর পড়লেই বা কার কি করার আছে!

ধৈর্য হারিয়ে পিছন দিকে তাকাল রানা। রিগা কোর্স বদলে চ্যানেলের চওড়া অংশে সরে যাচ্ছে। কিউটের স্টারবোর্ড সাইডে পজিশন নেবে ওটা। খোদার দোহাই, তাড়াতাড়ি করো!

প্রার্থনা মঞ্জুর হলো, চোখের পলকে। শূন্য থেকে খসে পড়ল ফ্লোট। সরাসরি ওদের মাথার ওপর নামছে।

মাথা থেকে তিন ফিট ওপরে ঝাঁকি খেয়ে থামল সেটা, এখনও কাত হয়ে আছে। এরপর নামার গতি আগের মত শ্লথ, এক ইঞ্চি এক ইঞ্চি করে। ধীরে ধীরে সিধে হলো আবার।

নিরাপদেই নেমে এল ফ্লোট। ঘড়ি চালু করল বিনয়। গোস্ট বার্গ যখন ধাক্কা দেয়, ঘড়িটা বন্ধ ছিল, সেজন্যেই বোধহয় নষ্ট হয়নি ওটা। লঞ্চের সাথে আগেই বাঁধা হয়েছে ফ্লোটটাকে। এঞ্জিন স্টার্ট দিল রানা, হুইল ধরে কাফম্যানের উদ্দেশে চিৎকার করল। উইঞ্চ কে খুলে নেয়া হলো। দ্রুত এগোল লঞ্চ, ক্রমশ দূরে সরে এল জাহাজের কাছ থেকে, হেলেদুলে পিছু নিল ফ্লোট।

পিছন ফিরে রুশ রিসার্চ শিপের দিকে তাকাল নিয়াজ। আমরা বোধহয় দেরি করে ফেলেছি!

শান্ত সাগর, সগর্জনে ছুটল লঞ্চ, সোজা গোস্ট বার্গের দিকে। যাচ্ছে। কিউটের পথ থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে ওরা, এগোচ্ছে। রিগার সামনের পথ লক্ষ্য করে। ভাগ ভাগ হয়ে যাচ্ছে কুয়াশা, ওদের টার্গেট গোস্ট বার্গের খাড়া পাচিল ধীরে ধীরে উন্মোচিত হলো। বিশাল একটা মহাদেশের মত তার বিস্তার।

বার্গের আরও কাছাকাছি পৌঁছে অদ্ভুত একটা দৃশ্য দেখল। রানা। বার্গের গোড়ায়, ভিতের কাছে বড়সড় একটা গুহা রয়েছে। গুহার ভেতরটা অন্ধকার, চাঁদের আলো ঢুকছে না। আলো ঢুকছে না, কিন্তু তীব্রগতি স্রোত তুমুল শব্দে ভেতরে ঢুকছে। রানা উপলব্ধি করল বার্গের ভেতর, পেটের মাঝখানে একটা লেক তৈরি হয়েছে। তড়িঘড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল ও।

আরও কাছাকাছি যাব আমরা-ফ্লোটটাকে ছেড়ে দেব আইসশেলফের কিনারায়।

রানার চেয়ে আরও জোরে চিৎকার করল নিয়াজ, অনেক দূরে। চলে এসেছি, ফিরব কিভাবে? কিউটকে যদি ধরতে না পারি?

সে ঝুঁকি নিতেই হবে, বলল রানা। টানেলটা দেখছ? মুখে ছেড়ে দেব ফ্লোটটা। বার্গের ভেতর ঢুকে যেখানে খুশি ফাটুক।

রানার প্ল্যানটা সাদামাঠা, কাজ হলেও হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। দুদুবার ধসে পড়া থেকে বেঁচে গেছে গোস্ট বার্গ। একবার দ্বিতীয় বার্গের সথে জোড়া লাগার সময়, আরেকবার বিচ্ছিন্ন হবার সময়। তিন বারের বার হয়তো সত্যি ওটা ভেঙে পড়বে। জেলিগনাইটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তৃতীয় ধাক্কাটা দিয়ে দেখতে চায় রানা। যদি ধসে, রিগার সামনে বন্ধ হয়ে যাবে চ্যানেল।

.

মাসুদ রানা, তোমার সলিল সমাধি ঠেকায় কে! উল্লসিত দানবের মত রিগার ব্রিজে লাফ-ঝাপ মারছে কর্নেল বলটুয়েভ। ব্যাটাচ্ছেলের সৌভাগ্যই বলতে হবে, কফিন হিসেবে সাড়ে ছহাজার টন লোহা-লক্কড় পাচ্ছে! জোড়াও মিলেছে ভাল-ইভেনকো রুস্তভ সোভিয়েত রাশিয়ার শত্র, মাসুদ রানা ইসরায়েলের! যাও, একসাথে ঠাণ্ডা করবে!

রাডারস্কোপের কাছ থেকে ঘাড় ফিরিয়ে উন্মাদটার দিকে বোবাদৃষ্টিতে তাকাল ক্যাপটেন ট্রাভকিন।

মাঝখানে দূরত্ব কমে আসছে! আনন্দে ব্রিজের মেঝেতে পা ঠুকল কর্নেল। পরমুহূর্তে চোখ পাকিয়ে তাকাল ট্রাভকিনের দিকে। সময় ঘনিয়ে এলে আমি নিজে হুইল ধরব! ক্লিয়ারভিশন প্যানেলে মুখ চেপে ধরল সে। ঝাপসা কুয়াশার ভেতর কিউটের কাঠামো দেখা গেল। তুমি টেলিগ্রাফের চার্জে থাকবে, স্পীড কন্ট্রোল করবে, জুনায়েভকে বলল সে।

চ্যানেলটা লক্ষ করছেন? জিজ্ঞেস করল ট্রাভকিন। একেবারে সরু। জাহাজ নড়াচড়ার জায়গা পাবে কি না সন্দেহ। প্রতি মুহূর্তে পোর্ট, স্টারবোর্ড, আর স্টার্নের দিকে ঘন ঘন চোখ বুলাচ্ছে ক্যাপটেন। স্টারবোর্ডের দিকে বিশাল একটা আইসবার্গ ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে কুয়াশা থেকে, রীতিমত আতঙ্ক বোধ করছে সে। তবু তো ট্রাভকিন জানে না, ওটা একটা গোস্ট বার্গ, ভেতরটা ফাঁপা-যে-কোনো মুহূর্তে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে। হঠাৎ কাঁপা গলায় বলল সে, একটা লঞ্চ! কিউট থেকে রওনা হলো! আমাদের সামনে দিয়ে চ্যানেল ক্রস করছে!

করুক! আপনাকে ও নিয়ে ভাবতে হবে না। স্পীড বাড়ান!

কি বলছেন! সাংঘাতিক বিপদ হতে পারে! বুঝতে পারছেন, আইসবার্গার খুব কাছে চলে যাচ্ছি আমরা!

ফুল পাওয়ার! ব্রিজে যেন বজ্রপাত ঘটল। জুনায়েভের দিকে মারমুখো হয়ে এক পা এগোল বলটুয়েভ। ফুল পাওয়ার!

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত