১.৯ এন.পি.সেভেনটিন থেকে রওনা হয়ে
এন.পি.সেভেনটিন থেকে রওনা হয়ে কুয়াশার কিনারায় ল্যান্ড করল হেলিকপ্টার। একটা স্নো-ক্যাট অপেক্ষা করছিল, তাতে চড়ে বসল কর্নেল বলটুয়েভ। স্নো-ক্যাটের ট্র্যাকগুলো দেখতে অদ্ভুত, আর্কটিকে অল্প দূরত্ব পেরোবার কাজে ব্যবহার করা হয়। চারটে ক্যাটারপিলার ট্র্যাক, সামনের দুটোর ওপর বসানো আছে ড্রাইভারের ক্যাব। বাকি দুটো ট্র্যাকের পিছনের অংশের ভার বহন করছে।
একটার দিকে আই.আই.ফাইভে পেঁৗছুব আমরা, কমরেড কর্নেল, বলটুয়েভের পাশের সীটে বসতে বসতে বলল জুনায়েভ। তার ঘাড়েই স্নো-ক্যাট চালাবার দায়িত্ব চাপানো হয়েছে।
আমাদের হিসেব বলে প্রায় ওই একই সময়ে ইভেনকো বেঈমানটাও পৌঁছুবে ওখানে।
কুয়াশা সত্ত্বেও আই.আই.ফাইভকে খুঁজে বের করতে কোন অসুবিধে হলো না। সিকিউরিটি ডিটাচমেন্ট আগেই রওনা হয়ে। গেছে। আই.আই.ফাইভের পিছনে, পাথুরে পাহাড়ের মাথায়। একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস রোপণ করে রেখেছে তারা, ডিভাইসের অপর অংশটা রয়েছে জুনায়েভের সামনে। সেটার ওপর চোখ রেখে সোজা স্নো-ক্যাট চালাচ্ছে সে। পথ ভুল করার কোন উপায় নেই, সোজা আই.আই.ফাইভে পৌঁছে যাবে দলটা। অসুবিধে শুধু একটাই, হৃদয়হীন ঠাণ্ডা। জুনায়েভ তো কাঁপছেই, পিছনে বসা লোক দশজনও হি হি করছে। কিন্তু ঠাণ্ডাকে যার সবচেয়ে ভয়, ঘরের ভেতর সব সময় যে হিটার বা স্টোভ জ্বেলে রাখে, সেই কর্নেল বলটুয়েভ সবাইকে একেবারে তাজ্জব বানিয়ে দিল। বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসছে সে। ভাবটা, দেখো, ঠাণ্ডা আমাকে এতটুকু কাবু করতে পারেনি। ঠাণ্ডা তাকে কাবু করতে। পারছে না, এর চেয়ে বিস্ময়কর বলে মনে হলো তার হাসি। জুনায়েভের অভিজ্ঞতা বলে, সাপের পা সে দেখে থাকলেও দেখতে পারে, কিন্তু কর্নেলের হাসি দেখছে এই প্রথম।
আরও আশ্চর্য, প্রায় প্রতি মুহূর্তে হাসিটা ছড়িয়ে পড়ছে সারা। মুখে। কর্নেল নিজে স্বীকার না করলে কারও বোঝারও উপায় নেই। যে সে আসলে ঠাণ্ডার থাবা থেকে বাঁচার জন্যে এই কৌশলটা বেছে নিয়েছে। বেদম হাসলে গা গরম থাকে, কোথায় যেন শুনেছে সে। এক ঢিলে দুটো পাখি মারছে কর্নেল। গা তো গরম রাখছেই, সেই সাথে চোখে আঙুল দিয়ে জুনায়েভকে দেখিয়ে দিচ্ছে-শীত আমার কাছে নস্যি।
স্নো-র্যাম্পটাকে এড়িয়ে গেল ওরা, ওটা ব্যবহার করলে স্নোক্যাট নিয়ে সরাসরি আই.আই.ফাইভে উঠতে পারত। স্নো-ক্যাট পোলার প্যাকে রাখল ওরা, বাকি পথটুকু এগোল পায়ে হেঁটে। পাহাড়ের পিছনে পৌঁছে থামল দলটা। ক্লাইম্বিং ইকুইপমেন্ট সাথেই আছে, চূড়ায় উঠতে অসুবিধে হলো না। পাহাড়ের মাথায় উঠে কম্পাস ব্যবহার করল জুনায়েভ, দেখে নিল কোন দিকে উত্তর।
বোল্ডারের মাঝখান দিয়ে নেমে এল ওরা। খানিক দূর হেঁটে এসে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল কর্নেল। কোথাও ভুল হয়েছে। কিছু দেখা যাচ্ছে না কেন?
ভুল অবশ্যই হয়েছে। শেষবার আকাশ থেকে আই.আই.ফাইভের ফটো তোলার পর দ্বীপটা কয়েক ডিগ্রী ঘুরে গেছে। তবে ভাগ্য ভাল ওদের, খানিক খোঁজাখুঁজি করতেই আই.আই.ফাইভের ঘরগুলো দৃষ্টিগোচর হলো।
হেডকোয়ার্টার হাটের সামনে একটা ল্যাম্প জ্বলছিল, সেটা দেখেই টলতে টলতে এগিয়ে এল ওরা। দস্তানা পরা হাত দিয়ে হাতুড়ি পেটার মত আওয়াজ করল কর্নেল দরজায়। সেই সাথে হেঁড়ে গলায়, ইংরেজীতে, হুঙ্কার ছাড়ল, গেস্ট!
কেউ দরজা খুলবে তার সময় দিল না কর্নেল, নিজেই ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল। ঘরের ভেতর আলোটা আরও বেশি উজ্জ্বল, কুয়াশা থেকে এসে চোখ ধাধিয়ে গেল। কপালে হাত তুলে চোখে ছায়া ফেলল সে। তিনজন লোক রয়েছে ঘরে, তাই থাকার কথা। বাংকে বসে রাইফেল পরিষ্কার করছে একজন, মাল্টা দরজার। দিকে তাক করা। দরজার পাশে আরেকজন, তার এক হাতে। রাইফেল, আরেক হাতে ভেঁড়া কম্বলের টুকরো। বয়স্ক আরেকজন। লোক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে, হাত দুটো বুকে বাঁধা, খাড়া। শিরদাড়া।
ঢোকার ইচ্ছে থাকলে তাড়াতাড়ি, রাইফেল পরিষ্কার করতে করতে বলল রানা। তা না হলে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে। দিন। রাইফেলের মাজুল কর্নেলের বুকের দিকে উঠল। না! হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলল রানা। শুধু আপনি একা-বাকি সবাই। বাইরে অপেক্ষা করবে।
কর্নেলের পিছনে ফার মোড়া আরও লোক রয়েছে, প্রত্যেকে তার চেয়ে অন্তত এক ফুট ছোট। লোকগুলো নড়েচড়ে উঠল, ভেতরে একা ঢুকল কর্নেল। একদৃষ্টে রানার দিকে তাকিয়ে আছে। সে। এন.পি. সেভেনটিন থেকে আসছি আমরা…
দরজাটা বন্ধ করতে বলেছি আমি, শান্ত কণ্ঠে কর্নেলকে বাধা। দিল রানা।
ড. জুনায়েভকে এখানে আপনাদের দরকার হবে, বলল কর্নেল। রানাকে দেখে ধিকিধিকি জ্বলতে শুরু করেছে তার চোখ। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে আপনাদের সাবধান করতে চায় সে।
ঠিক আছে, জুনায়েভ আসতে পারে। আর কেউ নয়।
কিন্তু বাইরে ভীষণ ঠাণ্ডা…, শুরু করল কর্নেল।
কেউ আপনাদের দাওয়াত দেয়নি।
রাগের মাথায় নয়, বুদ্ধির ওপর ভর করে কাজ করছে কর্নেল। বলটুয়েভ। দেখামাত্র মাসুদ রানাকে গুলি করার ইচ্ছেটা জাগলই না মনে, বরং শঙ্কিত হয়ে উঠল রানার রাইফেল তার দিকে তাক করা রয়েছে দেখে। দরজার পাশে দাঁড়ানো নিয়াজ বাইরে যারা রয়েছে তাদের মুখের ওপর দড়াম করে বন্ধ করে দিল দরজা। ঘরের চারদিকে দ্রুত তাকিয়ে ইভেনকো আছে কিনা দেখে নিল কর্নেল। কাঠের একটা বাক্সের ওপর ড্রিলিং কোর দেখল, পাশে একটা আইস-পিক। টেবিলের ওপর ফ্লাস্ক আর কাপ। যথেষ্ট লম্বা কর্নেল, কাবার্ডের মাথায় পাশাপাশি দাঁড়ানো ভদকার বোতল দুটোও দেখল। ভিজে পারকা খুলে একটা চেয়ারের পিছনে রাখল সে। আমার নাম কলোনভ, দ্বিতীয়বার ঘরের চারদিকে চক্কর দিল তার দৃষ্টি। অনেকগুলো সোভিয়েত রিসার্চ বেসের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার, এন.পি. সেভেনটিনেরও। নিকিতা জুনায়েভ ওখানকার মেডিকেল অফিসার। আমার প্রথম জিজ্ঞাস্য, আপনারা সবাই ভাল তো?
কোন কারণ ঘটেছে ভাল না থাকার? পাল্টা প্রশ্ন করল রানা।
কুয়াশার ভেতর দিয়ে আসার সময় কিসের যেন একটা গন্ধ পেলাম, পোড়া পোড়া…
আমাদের অয়্যারলেস হাট পুড়ে গেছে, বিস্ফোরিত হলো ড. কর্ডন। কোন ম্যানিয়াকের কাজ, ইচ্ছে করে পুড়িয়ে দিয়েছে। কাজটা কার বা কাদের জানেন বলেই কি জিজ্ঞেস করছেন আমরা ভাল আছি কিনা?
মনে মনে খুশি হলো রানা, চাইছিল ঠিক এভাবেই হঠাৎ করে বলা হোক কথাগুলো। যা আশা করেছিল, কর্নেলকে নিমেষের জন্যে হলেও থতমত খেতে দেখল ও। ব্যাপারটা সিরিয়াস। এটা। স্যাবোটাজ। কাজেই গ্রীনল্যান্ডে রিপোর্ট করতে হয়েছে আমাদের। দায়ী যে-ই হোক, মাসুল তাকে দিতেই হবে। মনে মনে রানা। আশা করছে, যাবার আগে কলোনভ ওরফে কর্নেল বলটুয়েভ কিছু। একটা ইঙ্গিত বা আভাস দেবে যাতে বুঝতে পারবে ও, ওকে বন্ধু হিসেবে নিচ্ছে রাশিয়ানরা। কিন্তু লোকটার চোখ জোড়া ধিকিধিকি জ্বলছে দেখে আরও সতর্ক হবার প্রয়োজন বোধ করল ও।
আগুন ধরে গেছে, ধরতেই পারে-দুর্ঘটনা ঘটে না? তারপরই ব্যঙ্গের সাথে জিজ্ঞেস করল কর্নেল, সিগন্যাল পাঠিয়েছেন। গ্রীনল্যান্ডে? তা কিভাবে সম্ভব হলো বলবেন কি? ট্রান্সমিটারই যেখানে পুড়ে গেছে…
স্পেয়ার ট্রান্সমিটার থাকতে নেই বুঝি? হাসল রানা। বিশ্বাস না হয়, নিজেদের বেসে ফিরে গিয়ে মনিটরিং ইউনিটকে জিজ্ঞেস করুন।
অপেক্ষা করছে রানা। বোঝাই যাচ্ছে, সিগন্যালের ব্যাপারে। কর্নেলকে কিছু বলা হয়নি। খুন-খারাবির ইচ্ছা থাকলে বাতিল করে দেবে সেটা, অবশ্য সিগন্যালের কথাটা যদি বিশ্বাস করে। জানে গ্রীনল্যান্ডকে সতর্ক করার পর এখন যদি আই.আই.। ফাইভের কারও কিছু ঘটে, আমেরিকানরা রাশিয়ানদেরই দায়ী করবে, এবং প্রতিশোধ নিতে ছাড়বে না। সিগন্যালের কথা যদি বিশ্বাস না-ও করে, তবু মনে একটা দ্বিধা জাগবে কর্নেলের, ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটিয়ে বসার আগে চিন্তা-ভাবনার জন্যে সময় নেবে। এই সময়টুকু রানার দরকার।
মনিটরিং ইউনিট? হতভম্ব দেখাল কর্নেলকে।
রাইফেল হাতে উঠে দাঁড়াল রানা, দুই শত্রু মুখোমুখি হলো। ন্যাকামি রাখুন। আই.আই. ফাইভের সিগন্যাল শোনার জন্যে আড়িপাতা যন্ত্র সেই প্রথম থেকেই ব্যবহার করেছেন আপনারা। কর্নেলের সামনে দাঁড়াবার কারণ আর কিছুই নয়, লোকটার কাছ থেকে চোখ-ইশারা বা ওই ধরনের কোন সঙ্কেত আশা করছে ও।
কিন্তু কর্নেল বলটুয়েভের চোখে নগ্ন ঘৃণা আর খুনের নেশা ছাড়া আর কিছুই দেখল না রানা। কাছ থেকে দেখে পরিষ্কার হয়ে গেল, এ লোক শত্রু ছিল শত্রই আছে, বন্ধুত্বের সন্দেশ নিয়ে আসেনি।
ট্রাউজারের পকেটে হাত দুটো ভরল ড. কর্ডন, তালুর ঘাম লুকাতে চাইছে। রাশিয়ানরা দুএকজন এর আগেও আই.আই. ফাইভে এসেছে, কিন্তু এভাবে দলবেঁধে বা যুদ্ধের জন্যে তৈরি হয়ে আসেনি। ইভেনকো রুস্তভ মাত্র কয়েক গজ দূরে শুয়ে আছে, ব্যাপারটা ভুলতে পারছে না সে।
রাশিয়ানরা রেডিও-রুম পুড়িয়ে দিয়েছে শুনেই রানার সন্দেহ হয়েছিল, কোথাও কোন গোলমাল হয়েছে। কথা ছিল ইভেনকোকে পালিয়ে আসতে দেবে ওরা, তাকে নিয়ে যাতে নিরাপদে পালিয়ে আসতে পারে সেজন্যে আমেরিকানদের অগোচরে রানাকে সাহায্যও করবে। কিন্তু রেডিও-রুম পুড়িয়ে রাশিয়ানরা ঠিক উল্টো আচরণ করল। এখন কর্নেল বলটুয়েভের সামনে দাঁড়িয়ে সন্দেহটা বিশ্বাসে পরিণত হলো-ইভেনকোকে পালিয়ে যেতে দিক বা না দিক, ওকে তারা খুন করবে প্রথম সুযোগেই।
গ্রীনল্যান্ডে সিগন্যাল পাঠানোটা বুদ্ধিমানের কাজ হয়েছে। এতগুলো লোকের চোখের সামনে রানাকে একা মেরে রেখে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার সাক্ষী রাখতে না চাইলে সবাইকে মারতে হবে, প্রতি-আক্রমণের ভয়ে তা-ও সম্ভব নয়।
এ-সব প্রসঙ্গে কথা বলার জন্যে আসিনি আমি, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল কর্নেল। সঠিক জানি না, তবে আমার সন্দেহ, আমাদেরই। কোন একজন লোক আপনাদের রেডিও-রুমে আগুন ধরিয়ে থাকতে পারে।
ইনভেস্টিগেশন শুরু হলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে, বলল রানা। ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনে খবরটা পৌঁছে গেছে। আর। আপনি তো জানেন, স্যাবোটাজকে কি চোখে দেখে। আমেরিকানরা।
এমনভাবে কথা বলছেন, যেন আপনি আমেরিকান নন…, রানার দিকে খানিক ঝুঁকল কর্নেল।
আর আপনি এমনভাবে কথা বলছেন, যেন আপনি কর্নেল পয়মাল বলটুয়েভ নন! একই সুরে ব্যঙ্গ করল রানা।
আপনি আমাকে চেনেন? ধমকের সুরে জিজ্ঞেস করল কর্নেল।
আমাকেও আপনি চেনেন, দৃঢ় কণ্ঠে বলল রানা।
কেউ যাতে আতঙ্ক বোধ না করে সেজন্যে অনেক সময় মিথ্যে পরিচয় দিতে হয়, চোখ পাকিয়ে বলল কর্নেল।
আমারও সেই কথা, রানার গলায় শ্লেষ ঝরল।
জানতে পারি, আমেরিকান আর্কটিক বেসে আপনি কেন?
হাঁ হয়ে গেল রানা, কৃত্রিম বিস্ময়ে। সেকি! কে.জি.বি. কিছুই। জানায়নি আপনাকে? পুরো পাঁচ সেকেন্ড সময় দিল ও, কর্নেল যাতে আভাসে হলেও ইতিবাচক কোন জবাব দেয়। কিন্তু কোন সাড়াই পাওয়া গেল না। তারপর আবার বলল রানা, শুনেছি কে.জি.বি. নাকি দুনিয়ার সব খবরই রাখে, এখন দেখছি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়।
যে কারণেই আপনি মরতে এসে থাকেন, আমি জানতে চাই না, বলল কর্নেল। আমার কথা হলো…
তার আগে শুনুন, বাধা দিল রানা, কালকের সমস্ত কাগজে হেডিং থাকবে-রাশিয়ানরা মার্কিন ঘাঁটির ওপর হামলা চালিয়েছে।
কি আবোলতাবোল বকছেন!
কালকের কাগজ দেখতে ভুলবেন না।
অনেক বছর পর আজ এই প্রথম ঘাবড়ে গেল কর্নেল বলটুয়েভ। সত্যি যদি সিগন্যাল পাঠানো হয়ে থাকে, এখানে তার কোন রকম বাড়াবাড়ি করা চলবে না, উপলব্ধি করল সে। ফার্স্ট সেক্রেটারি পই পই করে বারণ করে দিয়েছেন, কোন রকম ইন্টারন্যাশনাল ইনসিডেন্ট যেন না ঘটে। আমি পিটার আন্তভ সম্পর্কে আপনাদেরকে সাবধান করে দিতে এসেছি। আন্তভ একজন জুনিয়র ওশেনোগ্রাফার। সে পাগল হয়ে গেছে, আমাদের একজন লোককে, বেচারা ইভেনকো রুস্তভকে, খুন করে পালিয়েছে। এদিকেই এসেছে সে, স্লেজ টীম নিয়ে। ইভেনকোকে খুন করে তার কাগজ-পত্রও সাথে করে নিয়ে এসেছে আন্তভ, নিজেকে সে ইভেনকো বলে চালাবার চেষ্টা করতে পারে…
কেন, তা সে কেন করতে যাবে?
কারণ নিজের কাগজ-পত্র ঘরে রেখে এসেছে, শান্ত গলায় বলল কর্নেল। সে জানে, আপনারা তার পরিচয়-পত্র দেখতে চাইবেন।
পাগল হয়ে গেছে বুঝলেন কিভাবে? কর্নেলের সাথে একাই। কথা বলছে রানা।
কটমট করে রানার দিকে তাকিয়ে থাকল কর্নেল। আই.আই. ফাইভের রেডিও-রুম পুড়িয়ে দিয়েছে, তার আগে খুন করেছে। ইভেনকোকে—এরপরও বুঝতে বাকি থাকে? রানার দিকে এক পা বাড়াল সে। শুনবেন, কিভাবে খুন করা হয়েছে ইভেনকোকে? প্রথমে তার বুকে আইস-পিক ঢোকানো হয়েছে, তারপর যেভাবে বেয়নেট চার্জ করে, গোটা মুখ ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছে। এখনও বুঝতে পারছেন না সে একটা ম্যানিয়াক? তিন বছর আর্কটিকে। থেকে সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে গেছে। হয়তো কাছে পিঠেই কোথাও আছে সে, খুনের নেশায় ছটফট করছে…
তাহলে এখনও এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কি মনে করে? জিজ্ঞেস করল রানা। যান, খুঁজে বের করুন।
হঠাৎ শান্ত হয়ে গেল কর্নেল। ইঙ্গিতে জুনায়েভকে দেখাল সে। ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ভারি উদ্বিগ্ন। সব শোনার পর। আপনারাও চাইবেন আমরা এখানে থেকে যাই। ড. জুনায়েভ। সম্ভবত আমার চেয়ে ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। বসতে পারি? কেউ রাজি হবার আগেই একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল, সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল অনাবিল হাসি। শুরু করো, জুনায়েভ…
আন্তভ একটা সাইকোপ্যাথ…, ভাঙা ইংরেজীতে শুরু করল জুনায়েভ।
হাত তুলল রানা। আমরা কেউ মেডিকেল কলেজের ছাত্র নই, কাজেই লেকচার শুনতে চাই না। কর্নেলকে আবার দাঁড় করাতে চায় ও। আপ্যায়ন করতে পারলাম না বলে দুঃখিত, এবার যদি সম্মানিত মেহমানরা…, ইচ্ছা করেই কথা শেষ করল না রানা।
ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল কর্নেল। দস্তানা পরা হাত দুটো ঘন ঘন মুঠো করছে আর খুলছে-প্রচণ্ড রাগের লাগাম টেনে রাখার চেষ্টা। সাবধানে, বলটু, সাবধানে, নিজেকে সতর্ক করে দিল সে। কিভাবে যেন গোটা ব্যাপারটা উল্টে গেছে: এসেছিল আমেরিকানদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে, অথচ নিজেই তাল হারিয়ে ফেলেছে। আমরা এসেছিলাম আপনাদের সাবধান করে দেয়ার জন্যে, টেবিল থেকে পারকা তুলে নিয়ে বলল সে। ভেবেছিলাম আপনাদের সহযোগিতা পাব…
সবগুলো আশাই আপনার পূরণ হয়েছে, বলল রানা। আমরা সাবধান হয়ে গেছি। আমরা সহযোগিতা করেছি, যা যা বলেছেন মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। কিন্তু এ-ও আপনাকে বুঝতে হবে যে। আমাদের নিজেদেরও কিছু কাজ আছে।
ভাবছিলাম, আপনাদের ঘরগুলো সার্চ করার প্রস্তাব দেব-আপনাদের একজন ইচ্ছে করলে আমাদের সাথে থাকতে পারেন। বলা তো যায় না, আন্তভ হয়তো একটা ঘরে লুকিয়ে আছে।
রেডিও-রুম পুড়তে দেখে আমরাই সার্চ করেছি…
রাগে ফেটে পড়ল ড. কর্ডন, তামাশা নাকি? কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভুলে যাবেন না, মি. বলটুয়েভ। ইউনাইটেড স্টেটস অভ আমেরিকার টেরিটরিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন আপনি। আপনার সাহস তো কম নয়, সার্চ করতে চান!
পারকার বোতাম লাগাতে লাগাতে কর্নেল বলল, ড. কর্ডনের কথা যেন শুনতেই পায়নি, বন্ধু হিসেবে বলছি, প্লেন না আসা পর্যন্ত বেস ছেড়ে কোথাও না গেলেই ভাল করবেন। সেটাই আপনাদের জন্যে নিরাপদ…
কি থেকে নিরাপদ? জিজ্ঞেস করল রানা।
কুয়াশার ভেতর কাউকে নড়তে দেখলে আমার লোকেরা। গুলি করবে–আন্তভ মনে করে, গম্ভীর সুরে বলল কর্নেল। ওদের আমি বলে দিয়েছি, যদি সম্ভব হয় অক্ষত অবস্থায় ধরবে। তাকে। কিন্তু ওরা যারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই ইভেনকোর বন্ধু, আন্তভের ওপর খেপে আছে। প্রত্যেকে ওরা সশস্ত্র। মাথায় ফার হুড পরল সে। জুনায়েভ, সহযোগিতা যখন। পেলামই না, এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আর লাভ নেই। রানার দিকে। ফিরল সে। চলি, মি. মাসুদ রানা। আমি জানি, আবার আমাদের দেখা হবে।
জুনায়েভকে নিয়ে দরজার কাছে পৌঁছে গেল কর্নেল।
পিছন থেকে রানা বলল, আমি তৈরি থাকব, কর্নেল বলটু।
ওরা চলে যাবার পর নিয়াজকে পাঠাল রানা, সত্যি ওরা চলে গেছে কিনা দেখে আসার জন্যে। নিয়াজ বেরিয়ে যাবার পর ড. কৰ্ডনের দিকে ফিরল ও। বেস লীডার রুমাল দিয়ে হাতের ঘাম মুছছে। ব্যাপারটা জটিল হয়ে উঠল, বলল রানা। কর্নেল পয়মাল। বলটুয়েভ স্পেশাল সিকিউরিটি সার্ভিসের লেনিনগ্রাদ চীফ, ওয়াশিংটন থেকে রওনা হবার আগে আমি ওর ফটো দেখেছি। ঘড়ি দেখল রানা। পৌনে একটা। সকাল আটটায় ইভেনকোকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ব আমরা, স্লেজে করে।
সকাল আটটায় কেন?
বাকি রাতটুকু পোলার প্যাক চষে ক্লান্ত হয়ে পড়বে ওরা সবাই। আটটার দিকে ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে। তবে আমরা রওনা হবার সময় একটা ডাইভারশন দরকার হবে।
একগাল হাসল ড. কর্ডন। একটা স্নো-ক্যাট নিয়ে চারদিকে ছুটোছুটি করব। র্যাম্প থেকে পোলার প্যাকে নেমে বেশ খানিক দূরে চলে যাব-ইভেনকো পালাচ্ছে মনে করে পিছু নেবে ওরা।
ক্লান্তিতে চোখ আপনা থেকে বুজে এল রানার। ঘুম তাড়াবার জন্যে পায়চারি শুরু করল ও। এখানে ওরা স্নো-ক্যাট নিয়ে এসেছিল, আল্লাই জানে কিভাবে। কোন ধরনের মোবাইল রাডারও ছিল সাথে। আপনি স্নো-ক্যাট নিয়ে বেরুলে সহজেই ধাওয়া করতে পারবে ওরা। এদিক থেকে আমরা পশ্চিমে রওনা হব।
ড. কর্ডন কিছু বলতে যাচ্ছিল, তাকে থামিয়ে দিয়ে আবার বলল রানা, কিন্তু আপনার কি হবে?
ধাওয়া করলেও, ওরা আমাকে ধরতে পারবে না, বলল কর্ডন। চক্কর দিয়ে এক সময় বেসে ফিরে আসব আমি, ততক্ষণে আপনারা পগার পার…
কিন্তু আপনি কি আই. আই. ফাইভের পুব দিকে এর আগে স্নো-ক্যাট চালিয়েছেন?
কি যে বলেন! তিন বছর ধরে আছি না এখানে!
পরবর্তী আধঘণ্টা খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটল। কুকুরগুলোর সাথে পাশের ঘরে ছিল বিনয়, তাকে ডেকে আনা হলো। বন্ধ ঘরের ভেতর ছিল অচেতন রডেনবার্গের সাথে কাজম্যান, তাকেও বের করে আনা হলো। রডেনবার্গের মত কাজম্যানও ইভেনকোর উপস্থিতি সম্পর্কে কিছু জানে না।
হেডকোয়ার্টার হাটে থাকতে বলা হলো ড. কর্ডন আর কাজম্যানকে, বিনয়কে নিয়ে ইভেনকোকে রেফ্রিজারেটর থেকে বের করতে গেল রানা। নামকরণটা, বলাই বাহুল্য, নিয়াজের। ভাগ্য সুপ্রসন্ন, আগের মতই ঘুমিয়ে আছে ইভেনকো। ট্র্যাপ-ডোর থেকে তাকে বের করতে হিমশিম খেয়ে গেল রানা আর বিনয়। কাঁধে তুলে নিয়ে রিসার্চ রুমে নিয়ে আসা হলো তাকে, আগে। থেকেই এখানে একটা বাংক তৈরি রাখা হয়েছে। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ড. কর্ডন, সেই সাথে চোখ খুলল ইভেনকো রুস্তভ।
এ আমি কোথায়? চোখ খুলেই জিজ্ঞেস করল ইভেনকো। প্রথমে তো এখানে আমাকে রাখা হয়নি।
বয়স হলেও, শরীর ও মন দুটোই এখনও শক্ত আছে। ভদ্রলোকের। রানা ভাবল, তা না হলে কি পালিয়ে আসার দুঃসাহস। হয়! ওর ইঙ্গিতে ড. কর্ডন পরীক্ষা করল ইভেনকোকে।
মনে মনে অস্থির হয়ে আছে রানা। হিসেবে ওর ভুলও হতে পারে। অভ্যর্থনার ধরন দেখে কর্নেল বলটুয়েভ ধাক্কা খেয়েছে। সন্দেহ নেই, কিন্তু সে ধাক্কা সামলে নিতে সকাল আটটা পর্যন্ত সময় না-ও লাগতে পারে তার। আই.আই. ফাইভে আবার যদি। সে হানা দেয়, কিছুই আশ্চর্য হবার নেই।
উনি সম্পূর্ণ সুস্থ, পরীক্ষা শেষ করে সিধে হলো ড. কর্ডন। আশ্চর্যই বলব! এরকম একটা ধকল সহ্য করার পর…
এক মুহূর্ত দেরি না করে ইন্টারোগেশন শুরু করল রানা, তার আগে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে ড. কর্ডনকে বের করে দিল ঘর থেকে। বছর তিনেক আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অনেক সেমিনারে। অংশগ্রহণ করার জন্যে রাশিয়ার বাইরে আসতে হয়েছে ইভেনকোকে, ইংরেজীটা মোটামুটি ভালই বলতে পারে।
রানার প্রথম প্রশ্ন, আপনি কি স্বেচ্ছায় চলে এসেছেন?
হ্যাঁ।
শুধু আমাকে পাঠালে আমেরিকায় আসবেন, এই শর্ত দিয়েছিলেন কেন?
নিঃশব্দে হাসলেন রুশ বিজ্ঞানী। আপনি আমার হিরো, তাই। যে লোক রাশিয়া থেকে মিগ-একত্রিশ নিয়ে যেতে পারে, তার অসাধ্য কিছু থাকতে পারে না। মনে হলো, কেউ যদি নিরাপদে আমাকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে পারে তো সে মাসুদ রানা।
আমি যদি আপনার আবদার না রাখতাম?
এক কথায় জবাব দিল ইভেনকো, আসতাম না।
সাথে করে যেটা এনেছেন, মেরিলিন চার্ট-আসল, না নকল?
হোয়াট!
আমার সন্দেহ, আমেরিকানদের বোকা বানাবার জন্যে নকল চার্ট দিয়ে আপনাকে পাঠানো হয়েছে, বলল রানা।
রাগে কাঁপতে শুরু করল ইভেনকো, এ আপনি কি বলছেন!
চার্টটা তাহলে নকল নয়? আপনার মধ্যে তাহলে কোন ছলচাতুরি নেই?
বোকার মত কিছুক্ষণ রানার দিকে তাকিয়ে থাকার পর ইভেনকো বলল, এসব কি প্রশ্ন করছেন আপনি! প্রাণের মায়া ছেড়ে দিয়ে, শুধু ওদের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে এসেছি আমি। নকল চার্ট আনলে আমেরিকানরা আমাকে আস্ত রাখবে?
কে.জি.বি. বা আর কোন প্রতিষ্ঠান আমার সম্পর্কে আপনাকে কিছু জানায়নি?
কেন জানাবে? হতভম্ব দেখাল বিজ্ঞানীকে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না…
যা বোঝার বুঝে নিল রানা, স্বেচ্ছায় পালিয়ে এসেছে। ইভেনকো। কে.জি.বি.র গোপন নির্দেশে নয়। কিন্তু চার্টটা? সেটা। নকল, না আসল?
শেষবার কিয়েভে গেছেন কবে?
গত সপ্তায়।
কোন আত্মীয়ের সাথে দেখা হয়েছে?
আমার ভাই, ইউরি রুস্তভের সাথে।
সে কি নেভীতে আছে?
না, ট্রলারে।
আপনার প্রেমিকার নাম? যে মারা গেছে?
চেহারা কঠিন হয়ে উঠল ইভেনকোর। ওর সাথে আমার বিয়ে। হতে যাচ্ছিল…
আমি তার নাম জানতে চেয়েছি, বলল রানা।
সুমাইয়া নাজিন। কিন্তু আপনি আমাকে এসব কথা জিজ্ঞেস। করছেন কেন?
দরকার আছে, শান্ত গলায় বলল রানা। আধ ঘণ্টাও হয়নি, এই ঘরে দাঁড়িয়ে ছিল কর্নেল বলটুয়েভ।
আতঙ্কে নীল হয়ে গেল ইভেনকোর চেহারা। ঘরের চারদিকে। সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকাল সে, যেন কোণঠাসা একটা ইঁদুর। কিছু। বলতে চেষ্টা করেও পারল না, ঘন ঘন ঢোক গিলল শুধু। ওয়াশিংটনে ইভেনকো রুস্তভের কোন ফটো নেই, ভদ্রলোকের। প্রতিক্রিয়া দেখে বোঝা গেল, এ লোক কর্নেল বলটুয়েভের পাঠানো কোন স্পাই অন্তত নয়।
অনুমতি না নিয়েই ঘরে ঢুকল ড, কর্ডন। বিরূপ দৃষ্টিতে রানার দিকে একবার তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। ব্র্যান্ডির বোতল থেকে গ্লাসে খানিকটা ঢালল সে, ধরিয়ে দিল ইভেনকোর হাতে। থমথমে গলায় জানাল সে, রিসার্চ রুমে কমরেডের জন্যে খাবার তৈরি হচ্ছে।
ব্র্যান্ডিটুকু খেয়েও সুস্থির হতে পারল না ইভেনকো। বাঙ্কের কিনারায় বসে বারবার শুধু মাথার চুলে আঙুল চালাচ্ছে।
ইন্টারোগেশন শেষ হলো, এরপর পায়চারি শুরু করল সে। চেয়ারে শুকাচ্ছে তার পারকা, মাঝে মধ্যেই সেটার কাছে থামল। কিন্তু একবারও ছুঁলো না। লক্ষ রাখছে, কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা। যখন বুঝল, কেউ তাকিয়ে নেই, সুযোগটা নিল। দ্রুত পারকার পকেটে হাত গলিয়ে দেখে নিল টিউবটা জায়গামত আছে কিনা। এরপর আবার বাঙ্কে ফিরে এসে বসল সে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিয়াজ, অন্য দিকে চোখ। আপনমনে হাসল সে।
বাকি রাতটুকু না ঘুমালে মারা যাবে রানা। হেডকোয়ার্টার হাটে শুতে যাচ্ছে বলে বেরিয়েছে, এই সময় সবাই ওরা আওয়াজটা শুনতে পেল।
প্লেনের আওয়াজ।
জেনারেল ফচ স্যাবোটাজ সিগন্যাল পেয়ে হারকিউলিস ওয়ান-থ্রী-জিরো ট্রান্সপোর্ট প্লেন পাঠিয়েছেন আই.আই.ফাইভে। বরফদ্বীপের মাথার ওপর ঘুরছে ওটা, যদি ল্যান্ড করার সুযোগ মেলে। আমেরিকান ট্রান্সপোর্ট প্লেনের আওয়াজ শুনতে পেল কর্নেল বলটুয়েভ। পোলার প্যাক আর আই, আই. ফাইভের সেতুবন্ধন। স্নো-র্যাম্পের কাছ থেকে কয়েকশো মিটার দূরে একটা স্নো-ক্যাটে। বসে রয়েছে সে, পাশে জুনায়েভ। ঘন ঘন পাইপ টানছে কর্নেল।
ল্যান্ডিং লাইট অন করেছে ওরা, বলল সে। পাহাড়ের মাথা। ছাড়িয়ে আরও দূরে নিঃসঙ্গ একটা ঝাপসা আলো মুহূর্তের জন্যে দেখতে পেল সে, তারপরই সেটা ঢাকা পড়ে গেল কুয়াশায়।
স্বাভাবিক, বলল জুনায়েভ। সবাই চায় নিজেদের প্লেন। নিরাপদে ল্যান্ড করুক।
আচ্ছা, এখনও তুমি মনে করো, ইভেনকো ওখানে নেই?
আমার বুদ্ধি আর কতটুকু, কর্নেল কমরেড! বিনয়ে বিগলিত হলো জুনায়েভ। আপনি থাকতে আমি কোন্ সাহসে বুদ্ধি খাটাতে। যাই!
ভেবেছিলাম আমাদের দেখে ওরা ভয় পাবে, অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে বলল কর্নেল। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। বিরক্তি, বিতৃষ্ণা, ঘৃণা-বলো, প্রত্যেকের চেহারায় এসবই তো দেখা গেছে?
মাথা ঝাঁকাল জুনায়েভ।
সম্ভবত ইভেনকো এখনও পৌঁছায়নি ওখানে, কি বলো?
জ্বী-হ্যাঁ, মানে, না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল ওরা। তারপর জুনায়েভ বলল, কিন্তু। যদি পৌঁছে থাকে? আর যদি প্লেনটা ল্যান্ড করতে পারে?
হেসে উঠল কর্নেল। তুমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছ। দেখোই না কি হয়। যে চাল চেলেছি, মাসুদ রানাকে আর পালাতে হচ্ছে না!