হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস

১৬. দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস

কত সময় আমরা ওই বাথরুমে ছিলাম, এবং মাত্র তিন টয়লেট দূরে ছিল সে, বলল রন তিক্ততার সাথে দিন নাস্তার টেবিলে, এবং আমরা ওকে জিজ্ঞাসা করতে পারতাম, এবং এখন…

মাকড়সাগুলিকে খুঁজে বের করা যথেষ্ট কঠিন ছিল। দীর্ঘক্ষণ শিক্ষকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মেয়েদের বাথরুমে চুপি চুপি ঢোকা–তার ওপর মেয়েদের এই বাথরুমটা প্রথম হামলার অকুস্থলের ঠিক পাশেই হওয়ায়–প্রায় অসম্ভব একটা কাজ।

কিন্তু ওদের প্রথম ক্লাস, ট্রান্সফিউগিরেশন-এ এমন একটা ঘটনা ঘটল, যে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো ওদের মাথা থেকে চেম্বার অব সিক্রেটস-এর চিন্তা উধাও হয়ে গেল। ক্লাস শুরু হওয়ার দশ মিনিট পর, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন যে তাদের পরীক্ষা শুরু জুনের এক তারিখে, এখন থেকে এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে।

পরীক্ষা? হাউ হাউ করে উঠল সিমাস ফিনিগান। এখনও আমাদের পরীক্ষা হবে?

হ্যারির পেছনে বিকট একটা শব্দ হলো, নেভিল লংবটমের জাদুদণ্ড পিছলে গেছে, ডেস্কের একটি পা উড়িয়ে দিয়ে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল নিজের দরে এক ঝলকে আবার পা ঠিক করে দিলেন, এবং ফিরে ভ্রুকুটি করে তাকালেন সিমাসের দিকে।

এই সময়ে স্কুল খোলা রাখার আসল পয়েন্টটাই হচ্ছে তোমরা যেন লেখাপড়া করতে পারো, তিনি বললেন কঠিন স্বরে। সেই কারণে পরীক্ষা, ঠিক সময় মতোই হবে, এবং অমি বিশ্বাস করি তোমরা সকলে কঠোরভাবে রিভিশন দিচ্ছ।

কঠোরভাবে রিভিশন! হ্যারির কাছে মনে হয়নিই যে স্কুলের এই অবস্থায় আবার পরীক্ষা হতে পারে। ক্লাসরুমের ভেতরে বিদ্রোহের গঞ্জরণ শোনা গেল, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আরো কঠোরভাবে প্রুকুটি করে তাকালেন।

প্রফেসর ডাম্বলডোরের নির্দেশ হচ্ছে স্কুল যতটা সম্ভব স্বাভাবিকভাবে চালু রাখতে হবে। বললেন তিনি। এবং সেটা, আমাকে দেখিয়ে না দিলেও চলবে, কথা হচ্ছে এ বছর তোমরা কতটুকু শিখেছ তা জানা।

হ্যারির নিচের দিকে এক জোড়া খরগোশের দিকে তাকালো, ওদেরকে তার এক জোড়া স্লিপার বানানোর কথা। এ বছর সে নতুন কি শিখল? পরীক্ষার কাজে আসবে এমন কিছুই তার মনে হলো না।

রনের চেহারা দেখে মনে হলো, এই মাত্র তাকে বলা হয়েছে নিষিদ্ধ বনে গিয়ে বাস করতে।

ভাবতে পার এটা দিয়ে আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে? হ্যারিকে জিজ্ঞাসা করল সে নিজের জাদুদণ্ডটা দেখিয়ে, ওটা এই মাত্র জোরে জোরে শিষ দিতে শুরু করেছে।

***

প্রথম পরীক্ষার তিন দিন আগে, নাস্তার টেবিলে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল অরেকটি ঘোষণা দিলেন।

সুসংবাদ আছে, তিনি বললেন এবং পুরো গ্রেট হল নিশ্চুপ হওয়ার বদলে উল্লাসে ফেটে পড়ল।

ডাম্বলডোর আবার ফিরে আসছেন। অনেকেই আনন্দে চিৎকার করে উঠল।

আপনারা স্লিথারিনের উত্তরাধিকারকে ধরতে পেরেছেন! র‍্যাভেনক্ল টেবিল থেকে তীক্ষ্ণ চিৎকার করল একটি মেয়ে।

আবার কিডিচ ম্যাচ ফিরে এসেছে। লাফিয়ে উঠল উড উত্তেজিতভাবে।

হৈচৈ থেমে গেলে, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন, প্রফেসর স্প্রাউট আমাকে জানিয়েছেন যে অবশেষে মেনড্রেকস গুলো কাটার উপযুক্ত হয়েছে। যারা পেট্রিফাইড হয়েছে, আজ রাতে তাদেরকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। আমি তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, অন্তত তাদের একজন বলতে পারবে, কি বা কে তাদেরকে আক্রমণ করেছিল। আমি আশা করছি এই ভয়াবহ বছরটা আমাদের শেষ হবে আপরাধীকে ধরার মধ্য দিয়ে।

আনন্দের যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল তুলে। হ্যারি ক্লিপ্তরিন টেবিলের দিকে চাইল, এবং ড্র্যাকো ম্যালফয়কে অনিন্দে যোগ না দিতে দেখে মোটেও অবাক হলো না। রনকে অবশ্য অনেক দিন পর খুশি খুশি দেখাচ্ছে।

আমরা যে মোনিং মার্টলকে জিজ্ঞাসা করিনি তাতে কিছু আসবে যাবে না, তাহলে! সে বলল রনকে। হারমিওনকে জাগিয়ে তুললেই সম্ভবত সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে! মনে রেখ, মাত্র তিনদিনের মধ্যে পরীক্ষা এটা জানার পর পাগল হয়ে যাবে ও। সে রিভিশন দিতে পারেনি। ভাল হয় যদি পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওকে ওইভাবেই রাখা হয়।

ঠিক সেই সময়, জিনি উইসলি এলো এবং রনের পাশে বসল। তাকে সন্ত্রস্ত এবং নার্ভাস মনে হচ্ছিল। এবং হ্যারি লক্ষ্য করল ও কোলের মধ্যে হাত মোচড়াচ্ছে।

আরো কিছু পরিজ নিয়ে রন জিজ্ঞাসা করল, কি হলো?

জিনি কিছু বলল না, শুধু গ্রিফিল্ডর টেবিলের এ পাশ ও পাশ তাকালো, চেহারায় ভীত সন্ত্রস্ত ভাব, ওকে দেখে হ্যারির যেন কাকে মনে পড়ল, কিন্তু মনে করতে পারছে না কে।

বলে ফেল, বলল রন, ওকে লক্ষ্য করছে।

হঠাৎ হ্যারির মনে পড়ল, জিনিকে কার মতো লাগছে। চেয়ারে বসে সে সামনে পেছনে দুলছে, ঠিক সেইরকম ভাবেই ডব্বি দুলেছিল যখন সে নিষিদ্ধ তথ্য দেওয়ার সময় ইতস্তত করছিল।

তোমাকে কিছু বলবার আছে আমার, জিনি বলল অস্পষ্টভাবে, সাবধানে হ্যারির দিকে না তাকিয়ে।

কি সেটা? বলল হ্যারি।

জিনিকে দেখে মনে হচ্ছে সে সঠিক শব্দটা খুঁজে পাচ্ছে না। কি? বলল রন।

মুখ খুলেছে জিনি কিন্তু কোন শব্দ বের হলো না। সামনে ঝুঁকে হ্যারি নিচু স্বরে বলল, যেন শুধু জিনি আর রনই শুনতে পায়।

এটা কি চেম্বার অব সিক্রেটস সম্পর্কে কিছু? তুমি কি কিছু দেখেছ? কেউ কি খাপছাড়া আচরণ করেছে?

জিনি একটা গভীর শ্বাস টানল, এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই পার্সি উইসলি এসে হাজির, ক্লান্ত এবং বিবর্ণ দেখাচ্ছে।

তুমি যদি শেষ করে থাক জিনি, তাহলে ওই চেয়ারে আমি বলতে চাই। আমি একেবারে ক্ষুধার্ত, এই মাত্র পেট্রল ডিউটি করে এসেছি।

জিনি লাফিয়ে উঠল যেন ওর চেয়ারে বিদ্যুৎ প্রবাহ চালিয়ে দেয়া হয়েছে, পার্সিকে দ্রুত একটা সন্ত্রস্ত দৃষ্টি দিয়ে যেন পালিয়ে গেল। পার্সি বসল এবং টেবিল থেকে একটা মগ তুলে নিল।

পার্সি! বলল রন রাগ হয়ে। ও এখনই আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে যাচ্ছিল।

সবেমাত্র চা মুখে দিয়েছে পার্সি, ওর গলায় আঁটকে গেলো।

কি ধরনের বিষয়? ও বলল, কাশতে কাশতে।

আমি এইমাত্র ওকে জিজ্ঞাসা করেছি ও অস্বাভাবিক কিছু দেখেছে কি না, এবং সে কেবল বলতে শুরু করেছিল।

ওহ–ওটা–চেম্বার অব সিক্রেটস-এর সঙ্গে ওর কোন সম্পর্ক নেই, সঙ্গে সঙ্গে বলল পার্সি।

তুমি কি ভাবে জানলে? অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল রন।

মানে, ইয়ে, তুমি যদি জানতে চাও, জিনি, ইয়ে মানে একদিন আমাকে দেখে ফেলেছিল, যখন আমি বেশ, ও কিছু না ভুলে যাও কথা হচ্ছে ও আমাকে কিছু কিছু করতে দেখে ফেলেছিল, এবং আমি, মানে, ওকে বলেছিলাম কারো কাছে কিছু না বলার জন্যে। আমি মনে করেছিলাম সে তার কথা রাখবে। এটা কিছু না, সত্যিই, আমি বরঞ্চ

হ্যারি পার্সিকে এমন ব্ৰিত হতে কখনো দেখেনি।

তুমি কি করছিলে পার্সি? রন, হেসে বলল। আমাদের বলো, আমরা হাসব না।

শুনে পার্সি হাসল।

ওই রোলগুলো এগিয়ে দাও, হ্যারি, আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।

হ্যারি জানে তাদের সাহায্য ছাড়াই আগামীকাল পুরো রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু যদি সম্ভাবনা থাকে তবে সে মার্টলের সঙ্গে কথা বলার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চায় না। এবং সুযোগ এসে গেলো, মধ্য সকালে, যখন তাদেরকে গিল্ডরয় লকহার্স্ট হিস্ট্রি অব ম্যাজিক ক্লাসে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

লকহার্ট প্রায়ই তাদেরকে নিশ্চিত করেছেন সব বিপদ কেটে গেছে, শুধু মাত্র সরাসরি ভুল প্রমাণিত হওয়ার জন্য, এখন তিনি পুরোপুরিই বিশ্বাস করেন যে এই ছাত্রদের সঙ্গে থেকে করিডোর ধরে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার আরে প্রয়োজন নেই। তার চুল রোজকার মতো মসৃণ এবং চকচকে নয়; মনে হচ্ছে সারা রাতই তিনি জেগে ছিলেন, পঞ্চম তলা পাহারা দিয়েছেন।

আমার কথা বিশ্বাস কর, তিনি বললেন ওদেরকে এক কোনে জড়ো করে, ওই পেট্রিফাইড লোকগুলোর মুখ থেকে প্রথম যে কথা বের হবে সেটা হচ্ছে হ্যাগ্রিডই আপরাধী। সত্যি বলতে কি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এখনো যে মনে করেন, এই সমস্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে তাতে আমি অবাক হচ্ছি।

আমি একমত, স্যার, বলল হ্যারি, হ্যারির কথায় হতভম্ভ রনের হাত থেকে বইগুলো পড়ে গেলো।

ধন্যবাদ, হ্যারি, বললেন লকহার্ট প্রশংসার সুরে, ওরা অপেক্ষা করছে হাফলপাফদের একটা বিরাট লাইন অতিক্রম করার জন্যে। আমি বোঝাতে যাচ্ছি, ছাত্রদের ক্লাসে আনা নেয়া করা এবং সারারাত পাহারা দেয়া ছাড়াও আমাদের শিক্ষকদের করার মতো যথেষ্ট কাজ রয়েছে…

সেটা ঠিক, বলল রন, আলোচনাটা ধরে ফেলেছে সে। আপিনি আমাদের এখানেই ছেড়ে যান না কেন, স্যার? আমাদের তো আর মাত্র একটি করিডোর যেতে হবে।

তুমি জান উইসলি আমি যা ভাবছিলাম আমি ঠিক তাই করবো, বললেন লকহার্ট। সত্যিই আমার যাওয়া উচিৎ, আমাকে পরের ক্লাসটার জন্যে তৈরি হতে হবে।

দ্রুত পায়ে চলে গেলেন তিনি।

পরের ক্লাসের জন্য তৈরি হওয়া, রন মুখ ভেংচাল ওর পেছনে। গেছেন নিজের চুল ফিটফাট করতে বা ওই রকমেরই কিছু।

অন্য গ্রিফিল্ডরদের ওরা ওদের আগে যেতে দিল, তারপর পাশের একটা পথ দিয়ে বেরিয়ে মোনিং মার্টলের বাথরুমের উদ্দেশে রওয়ানা হলো। কিন্তু ওরা যখন ওদের চমৎকার তৎপরতার জন্যে পরস্পরকে অভিনন্দন জানাবার উপক্রম…

পটার! উইসলি! তোমরা এখানে কি করছ?

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এবং তার চেহারা একেবারে সরু হয়ে গেছে।

আমরা–আমরা রন তোতলাতে শুরু করল, আমরা যাচ্ছিলাম দেখার জন্যে

হারমিওনকে, বলল হ্যারি। রন এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দুজনেই এক সঙ্গে ওর দিকে তাকাল।

আমরা অনেক দিন ধরে ওকে দেখিনি, প্রফেসর, বলে চলল হ্যারি দ্রুত, রনের পায়ে চাপ দিয়ে, এবং আমরা ভেবেছিলাম চুপি চুপি হাসপাতালে চলে যাব, এবং তাকে বলব যে, মেনড্রেক তৈরি হয়ে গেছে, ইয়ে মানে সে যেন না ঘাবড়ায়।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তখনও তাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন অপলকে, মুহূর্তের জন্যে হ্যারি ভাবল এই বুঝি বিস্ফোরণটা ঘটল, কিন্তু যখন কথা বললেন, বললেন দাঁড়কাকের মতো অদ্ভুত স্বরে।

নিশ্চয়ই, বললেন তিনি, হ্যারি অবাক হলো, প্রফেসরের ক্ষুদ্র চোখে এক ফোঁটা পানির আভাস পেলো সে। নিশ্চয়ই, আমি বুঝতে পারছি যারা…তাদের বন্ধুদের জন্যেই ব্যাপারটা সবছেয়ে কষ্টদায়ক।, পটার, নিশ্চয়ই তোমরা মিস গ্রেঞ্জারকে দেখতে যেতে পারো। আমি প্রফেসর বিনকে জানিয়ে দেবো তোমরা কোথায় গিয়েছ। মাদাষ পমফ্রেকে বলবে যে আমি অনুমতি দিয়েছি।

হ্যারি এবং রন দ্রুত পায়ে চলে গেলো, বিশ্বাস হচ্ছে না যে ওদের কোন শাস্তি হয়নি। যে কোনাটা ঘুরছে তখন শুনতে পেলো প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার নাক ঝাড়ছেন।

ওই গল্পটা, বলল রন, তুমি যত গপ্পো বানিয়েছ তার মধ্যে সবার সেরা।

তাদের এখন হাসপাতালে না যাওয়ার কোন উপায় নেই এবং মাদাম পমফ্রেকে বলা যে হারমিওনকে দেখার জন্য তাদেরকে প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের অনুমতি দিয়েছেন।

মাদাম পমফ্রে তাদের ভেতরে ঢুকতে দিলেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও।

একজন পেট্রিফাইড ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার কোন মানে হয় না, বললেন তিনি, এবং যখন তারা হারমিওনের পাশে গিয়ে বসল তখন তাদেরকে স্বীকার করতে হলো তিনি ঠিকই বলেছেন। হারমিওনের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই যে তাকে কেউ দেখতে এসেছে, এবং তার বিছানার পাশের কেবিনেটটাকে দুশ্চিন্তা না করবার জন্যে বলা ও হারমিওনকে কিছু বলা একই সমান।

ভাবছি সে কি আদৌ আক্রমণকারীকে দেখেছে? বলল রন, হারমিওনের মুক্ত হয়ে যাওয়া চেহারাটার দিকে বিষণ্ণভাবে তাকিয়ে। কারণ, হামলাকারী যদি চুপি চুপি ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে থাকে তবে কেউই কিছু জানবে না…

কিন্তু হ্যারি হারমিওনের মুখের দিকে তাকিয়ে নেই। সে ভার ডান হাত সম্পর্কে খুবই আগ্রহী। চাদরের ওপর ওটা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে, ও দেখল এক টুকরো কাগজ মুঠোর ভেতর দলা পাকানো রয়েছে।

মাদাম পমফ্রে কাছাকাছি আছে কি না দেখে নিয়ে হ্যারি ওটা রনকে দেখালো।

ওটা বের করবার চেষ্টা করো, বলল রন ফিস ফিস করে, নিজের চেয়ারটা এমনভাবে সরিয়ে বসল যেন মাদাম পমফ্রের দৃষ্টি থেকে হ্যারিকে আড়াল করা যায়।

কাজটা সহজ নয়।

হারমিওনের হাত কাগজটাকে এমনভাবে খামচে ধরেছে যে হ্যারির ভয় হলো ওটা হয়তো ছিঁড়েই যাবে। রন নজর রাখছে, আর সে টেনে বাকা করে মুচড়িয়ে অবশেষে কয়েক মিনিট পর কাগজটা মুঠো থেকে বের করতে সক্ষম হলো।

লাইব্রেরীর অনেক পুরনো একটা বই থেকে পাতাটা ছেঁড়া। হ্যারি পাতাটা সমান করল এবং রনও ঝুকল ওটা পড়ার জন্যে।

আমাদের এই ভূমিতে যত পশু এবং দানব ঘুরে বেড়ায়, তার মধ্যে সরিসৃপের রাজা হিসেবে পরিচিত বাসিলিস্ক-এর চেয়ে মারাত্মক এবং কৌতূহলোদ্দীপক আর কিছু নেই। এই সাপ, প্রকাণ্ড দানবীয় আকার ধারণ করার ক্ষমতা রাখে, এবং কয়েক শত বছর বেঁচে থাকে, এর জন্ম মুরগীর ডিম থেকে, এর জন্মের জন্যে ডিমে তা দেয় এক প্রকার ব্যাঙ। এর হত্যা করবার পদ্ধতি সত্যিই বিস্ময়কর, এর মারাত্মক এবং বিষে ভরা দাঁত ছাড়াও, বাসিলিস্কের রয়েছে খুনী দৃষ্টি, এবং যে কেউ এর চেখের রশ্মির মধ্যে পড়বে তাদের তাৎক্ষণিক মৃত্যু অবধারিত। মাকড়সারা বাসিলিস্কের কাছ থেকে পালায়, কারণ এই হচ্ছে মাকড়সার প্রাণঘাতী শত্রু, এবং বাসিলিস্ক মৃত্যু ভয়ে পালায় একমাত্র মোরগের ডাক থেকে, কারণ এটাই তার মৃত্যুর কারণ।

এর নিচে একটি মাত্র শব্দ হাতে লেখা, হ্যারি লেখাটা হারমিওনের বলে চিনতে পারল। শব্দটা হচ্ছে–পাইপস।

মনে হলো কে যেন হ্যারির মস্তিষ্কে একটা আলো জ্বেলে দিয়ে গেছে।

রন, সে শ্বাস ফেলল, এই সেই। এই হচ্ছে জবাব। চেম্বারের দানবটা হচ্ছে বাসিলিস্ক-একটা দৈত্যাকার সরিসৃপ! সে জন্যেই আমি সব যায়গায় ওই কথাগুলি শুনতে পাই এবং অন্য কেউই শুনতে পায় না। কারণ আমি পারসেলটা বুঝতে পারি…

হ্যারি ওর চার দিকের বিছানাগুলো দেখল।

বাসলিস্ক মানুষকে হত্যা করে ওদের দিকে চোখের দৃষ্টি ফেলে বা তাকিয়ে। কিন্তু কেউই মারা যায়নি–কারণ কেউই সরাসরি ওটার চোখের দিকে তাকায়নি। কলিন দেখেছে ক্যামেরার মধ্য দিয়ে। বাসিলিস্ক ক্যামেরার ভেতরের সব ফিল্ম জ্বালিয়ে দিয়েছে, কিন্তু কলিন শুধু পেট্রিফাইড হয়েছে। জাস্টিন…নিশ্চয়ই বাসিলিস্ককে দেখেছে প্রায়–মাথাহীন নিকের মধ্য দিয়ে! নিকের ওপর দিয়ে আক্রমণের পুরো শক্তি গেছে, কিন্তু তো আর দ্বিতীয়বার মরতে পারে না…এবং হারমিওন এবং ওই র‍্যাভেনক্ল প্রিফেক্ট মেয়েটার পাশে আয়না পাওয়া গিয়েছিল। হারমিওন তখন সবেমাত্র বুঝতে পেরেছে দানবটা হচ্ছে বাসিলি। বাজি ধরে বলতে পারি প্রথম যে মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে তাকেই সে সাবধান করেছে কোণাগুলির দিকে প্রথমে আয়না দিয়ে দেখতে এবং বেচারা মেয়েটা তার আয়না বের করেছিল-এবং

রনের চোয়াল স্কুলে পড়ল।

এবং মিসেস নরিস? ফিস ফিস করল রন আগ্রহের সঙ্গে।

হ্যারি গভীরভাবে চিন্তা করল, হ্যালোঈনের রাত্রির চিত্রটা মনে করবার চেষ্টা করল।

পানি,,,সে বলল ধীরে ধীরে, মোনিং মার্টলের বাথরুমের পানিতে ভেসে গিয়েছিল করিডোরের কোণাটা। বাজি ধরে বলতে পারি মিসেস নরিস শুধুমাত্র বাসিলিস্কের প্রতিচ্ছবি দেখেছিল…।

হাতের পাতাটা আবার পড়ল সে মনোযোগ দিয়ে। সে যত পড়ছে, ততই মনে হচ্ছে এটাই সঠিক।

মোরগের ডাক ওটার মৃত্যুর কারণ! সে জোরে পড়ল। হ্যাগ্রিডের মোরগগুলিকে মেরে ফেলা হয়েছিল! চেম্বার খোলার পর দূর্গ–প্রাসাদের আশে পাশে একটিও মোরগ থাকুক চায়নি থিরিনের উত্তরাধিকার! মাকড়সারা ওর সামনে থেকে পালিয়ে যায়! সব কিছু মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে!

কিন্তু বাসিলিস্ক কিভাবে বিভিন্ন যায়গায় যাচ্ছে? বলল রন। একটা বিশাল মারাত্মক সাপ…কেউ না কেউ দেখত..

হ্যারি, অবশ্য, বইয়ের পাতার নিচে হারমিওন যে ছোট্ট শব্দটি লিখেছে সেটার দিকে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করল।

পাইপস্, সে বলল। পাইপস্…রন, ওটা প্লাম্বিং বা পাইপগুলি ব্যবহার করছে। আমি দেয়ালের ভেতর থেকে ওই কথাগুলি শুনতে পাচ্ছিলাম…

হঠাৎ রন হ্যারির হাত আঁকড়ে ধরল।

চেম্বার অব সিক্রেটস্-এর ভেতরে ঢোকার পথ! সে বলল ভাঙ্গা গলায়। যদি এটা বাথরুম হয়? যদি এটা

–মোনিং মার্টলের বাথরুম হয়, বলল হ্যারি।

ওরা ওখানে বসে রইল, উত্তেজনা ওদের মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে, বিশ্বাস পর্যন্ত করতে পারছে না।

তার মানে হচ্ছে, বলল হ্যারি, স্কুলে আমিই একমাত্র পারসেলমাউথ নই। স্লিথারিনের উত্তরাধিকারও একজন। ওইভাবেই ওরা বাসিলিস্ককে নিয়ন্ত্রণ করছে।

আমরা এখন কি করব? বলল রন, ওর চোখ থেকে যেন দুতি বেরোচ্ছে। আমরা কি সোজা প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের কাছে যাবো?

চলো স্টাফ রুমে যাই, বলল হ্যারি, লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ওখানেই উনি আসবেন, দশ মিনিটের মধ্যে। বিরতির সময় প্রায় হয়ে গেছে।

ওরা দৌড়ে নিচে এলো। ক্লাস ছেড়ে অন্য করিডোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এটা কেউ দেখে ফেলুক ওটা ওরা চায় না, ওরা সোজা শূণ্য স্টাফ রুমটায় চলে গেলো। একটা বড় রুম, প্যানেল করা এবং কাঠের চেয়ারে ভর্তি। হ্যারি আর বন স্টাফ রুমের ভেতর পায়চারি করছে, উত্তেজনায় বসতেও পারছে না।

কিন্তু বিরতির বেল আর বাজল না।

পরিবর্তে, করিডোরের মধ্য দিয়ে প্রতিধ্বনিত হলো প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের কণ্ঠ, জাদুর গুণে বহুগুণে বর্ধিত।

সকল ছাত্রকে এই মুহূর্তে তাঁদের হাউজ হোস্টেলে ফিরতে হবে। সকল শিক্ষক স্টাফ রুমে আসুন, এই মুহূর্তে, প্লিজ।

হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে ঘুরে রনের মুখোমুখি অপলক তাকিয়ে থাকল।

আরেকটা হামলা নয়? এখন নয়?

আমরা কি করবো? বলল রন, আতঙ্কে হতবুদ্ধি। হোস্টেলে ফিরে যাবো?

না, বলল হ্যারি, চারদিক দেখে নিয়ে। ওর বাঁয়ে একটা নোংরা ওয়ার্ডরোব দেখতে পেলো, শিক্ষকদের আলখাল্লায় ভর্তি। এখানে। শোনা যাক কি বিষয়। তারপর আমরা ওঁদের বলতে পারবো, আমরা কি পেয়েছি।

ওরা ওটার ভেতর নিজেদের লুকিয়ে রাখল। মাথার ওপরে শত শত মানুষের স্থান বদলের শব্দ শুনতে পাচ্ছে, স্টাফ রুমের দরঝা সশব্দে খালে গেল। আলখাল্লার ছাতা ধরা ভাজের মধ্য দিয়ে ওরা দেখল, শিক্ষকরা রুমে ঢুকছেন। কেউ কেউ হতবুদ্ধি, অন্যরা একেবারে আতঙ্কিত। সবার পরে এলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

আবার হামলা হয়েছে, নিরব স্টাফ রুমে বুললেন তিনি। একজন ছাত্রকে নিয়ে গেছে দানবটা। একেবারে খোদ চেম্বারের ভেতরে।

তীক্ষ কণ্ঠে চিৎকার করলেন প্রফেসর ফ্লিটউইক। মুখে হাত চাপা দিলেন প্রফেসর স্প্রাউট। একটা চেয়ার শক্ত করে আঁকড়ে ধরলেন স্নেইপ, বললেন, এত নিশ্চিত হলেন কি ভাবে?

স্লিথারিনের উত্তরাধিকার, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছেন তিনি, একটা মেসেজ রেখে গেছে। আগেরটার ঠিক নিচে। ওর কংকাল চিরজীবনের জন্য চেম্বারের ভেতরেই পড়ে থাকবে।

কেঁদে ফেললেন প্রফেসর ফ্লিটউইক।

কে, কে ও? জিজ্ঞাসা করলেন মাদাম হুচ, দূর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি, একটা চেয়ারে যেন ডুবে গেলেন। কোন সে ছাত্র?

জিনি উইসলি, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

হ্যারি দেখল রন নিরবে ওর পাশে ওয়ার্ডরোব মেঝেতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ল।

আমাদেরকে সব ছাত্রকে কালই বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে, বললেন, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। এখানেই হোগার্ট-এর সমাপ্তি। ডাম্বলডোর সব সময়ই বলতেন…

স্টাফ রুমের দরজাটা আবার সশব্দে খুলে গেল। একটি অসতর্ক মুহূর্তের জন্য হ্যারি নিশ্চিত ছিল ডাম্বলডোরই হবেন। কিন্তু লকহার্ট ঢুকলেন এবং তিনি উৎফুল্ল।

দুঃখিত-একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম–আমি কি মিস করেছি?

তিনি হয়তো খেয়াল করছেন না যে অন্য শিক্ষকরা তার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ঘৃণার মতো এক ধরনের দৃষ্টিতে। স্নেইপ সামনে এগোলেন।

উপযুক্ত লোক, তিনি বললেন। আসল লোক। দানবটা একটি মেয়েকে নিয়ে গেছে, লকহার্ট। একেবারে চেম্বার অব সিক্রেটস-এর ভিতরে নিয়ে গেছে। অবশেষে তোমার সময় এসেছে।

ফ্যাকাসে সাদা হয়ে গেলেন লকহার্ট।

সঠিক, গিল্ডরয়, মন্তব্য করলেন প্রফেসর স্প্রাউট। গতরাতেই না তুমি বলছিলে তুমি সব সময়ই জানতে চেম্বার অব সিক্রেটস্-এর প্রবেশ পথ কোথায়?

আমি–বেশ, আমি– তোতলাচ্ছে লকহার্ট।

হা, তুমি কি আমাকে বলোনি চেম্বারের ভেতরে কি রয়েছে সেটা তুমি নিশ্চিতভাবেই জান? যোগ দিলেন প্রফেসর ফ্লিটউইক।

আ–আমি কি বলেছি আমার মনে পড়ছে না…

আমার মনে পড়ছে তুমি বলেছ, হ্যাগ্রিড গ্রেফতার হওয়ার আগে দানবটাকে আঘাত করতে না পারায় তুমি খুবই দুঃখ পেয়েছ, বললেন স্নেইপ। তুমি কি বলোনি পুরো ব্যাপারটা তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে এবং প্রথম থেকেই তোমার হাতে ছেড়ে দেয়া উচিৎ ছিল?

লকহার্ট তার সহকর্মীদের পাথরের মতো মুখের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকল।

আমি…আমি আসলে কখনো…তোমরা আমাকে ভুল বুঝেছ…

আমরা বিষয়টা তোমার হাতেই ছেড়ে দিলাম, গিন্ডরয়, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। আজকের রাতটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সকলেই যেন তোমার কাছ থেকে দূরে থাকে সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। দানবটাকে তুমি একাই মোকাবিলা করতে পারবে। অবশেষে তোমার হতেই সব দেয়া হলো।

মরিয়া হয়ে লকহার্ট চারদিকে তাকাল, তাকে উদ্ধার করার জন্যে কেউ এগিয়ে এলো না। তাকে এখন আর হ্যান্ডসাম লাগছে না। তার ঠোঁট কাঁপছে, এবং তার স্বভাবজাত পেঁতো হাসির অভাবে তাকে এখন দূর্বল এবং অপদার্থ মনে হচ্ছে।

ঠি–ঠিক আছে, তিনি বললেন। আমি–আমি আমার অফিসে থাকব, তৈ–তৈরি হতে থাকবে।

এবং তিনি রুম ত্যাগ করলেন।

ঠিক হয়েছে, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, নাক দিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস পড়ছে, এইবার ওকে আমাদের পায়ের তুলা থেকে বের করা গেল। হাউজ প্রধানরা ফিরে গিয়ে যার যার হাউজে ছাত্রদের জানাবেন ঘটনা। বলবেন, কাল সকালে প্রথম কাজ হচ্ছে হোপার্ট এক্সপ্রেস তাদেরকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। অন্য শিক্ষকগণ কি নিশ্চিত করবেন যে কোন ছাত্রই হোস্টেলের বাইরে নেই।

শিক্ষকরা একে একে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।

***

হ্যারির সারা জীবনে এটাই সম্ভবত সবচেয়ে খারাপ দিন। সে, রন ফ্রেড এবং জর্জ গ্রিফিল্ডর কমন রুমের এক কোণায় বসে রয়েছে। কেউ কারো সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। পার্সি ওখানে নেই। ও গেছে মিস্টার এবং মিসেস উইসলিকে পেঁচা পাঠিয়ে খবর দিতে, এরপর নিজেকে হোস্টেলে বন্ধ করে রেখেছে।

কোন বিকেলই এত দীর্ঘ হয়নি, গ্রিফিল্ডর টাওয়ার এত ভীড়ের মধ্যেও এত নিঃশব্দ হয়নি। সূর্যাস্ত হতে যাচ্ছে, ফ্রেড আর জর্জ আর বসে থাকতে পারছে না, উঠে গেলো শুতে যাবে বলে।

ও কিছু জানতে পেরেছিল, হ্যারি, বলল রন, স্টাফ রুমের ওয়ার্ডরোবে ঢোকার পর থেকে এই প্রথম কথা বলল রন। সে কারণেই ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা মোটেও পার্সি সম্পর্কে কোন ফালত বিষয়ে নয়। ও চেম্বার অব সিক্রেটস্ সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিল। নিশ্চয়ই সে কারণেই ওকে রন পাগলের মতো চোখ মুছল। ওতো বিশুদ্ধ রক্ত। আর কোন কারণ থাকতে পারে না।

হ্যারি দেখল সূর্য ডুবছে, রক্ত লাল, আকাশের নিচে। জীবনের সবচেয়ে খারাপ অনুভূতি এখন তার। শুধু যদি ওরা কিছু করতে পারতো। যে কোন কিছু।

হ্যারি, বলল রন, তুমি কি মনে করো কোন সম্ভাবনা আছে যে সে তুমি জান—

কি বলবে হ্যারি জানে না। ও বুঝতে পারছে না, জিনি এখনো কি ভাবে বেঁচে থাকবে।

তুমি জান? বলল রন, আমার মনে হয় আমাদের গিয়ে লকহার্টের সঙ্গে দেখা করা উচিৎ। ওকে গিয়ে বলি, আমরা যা জানি। উনি চেষ্টা করবেন চেম্বারে ঢোকার জন্য। আমরা ওকে বলি এটা কোথায় রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এবং বলি ওটার ভেতরে একটা বাসিলিঙ্ক রয়েছে।

যেহেতু হ্যারি আর কিছু চিন্তা করতে পারছিল না, এবং যেহেতু সে কিছু একটা করতে চায়, সে সম্মত হলো। তাদের চারপাশের গ্রিফিল্ডররা এত বিষাদগ্রস্ত ছিল, এবং ওদের জন্যে এত দুঃখ পাচ্ছিল যে কেউই ও রুম পার হয়ে যাওয়ার সময় এবং ছবির গর্ত দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় বাধা দিল না।

লকহর্টের অফিসে যেতে যেতে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। অফিসের ভেতরে মনে হয় অনেক কর্মকান্ড চলছে। ওরা শুনতে পাচ্ছে ঘষা, দুম–দাম এবং দ্রুত পদশব্দ শুনতে পাচ্ছে ওরা।

হ্যারি টোকা দিল এবং হঠাৎ ভেতরে সব চুপ হয়ে গেল। তারপর দরজাটা একটুখানি ফাঁক করে, লকহার্টের একটি মাত্র চোখ দেখা গেল ওর মধ্যে দিয়ে বাইরে উঁকি দিচ্ছে।

ওহ…মিস্টার পটার…মিস্টার উইসলি… বললেন তিনি, দরজাটা আরেকটু ফাঁক করে। এই মুহূর্তে আমি ব্যস্ত। যদি তাড়াতাড়ি করো…

প্রফেসর আপনার জন্যে আমাদের কিছু খবর আছে, বলল হ্যারি। আমাদের মনে হয় আপনার সাহায্যে আসবে।

ইয়ে–বেশ–মানে ভীষণভাবে– লকহার্টের চেহারার এক পাশ ওরা দেখতে পাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল ও খুব অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। আমি বলছি–বেশ–ঠিক আছে।

উনি দরজাটা খুললেন এবং ওর ভেতরে প্রবেশ করল।

ওর অফিস প্রায় সম্পূর্ণটাই খুলে ফেলা হয়েছে। মেঝেতে দুটো বড় ট্রাংক খোলা পড়ে রয়েছে। পোশাক, জেড গ্রীন, লাইলাক, মিডনাইট বালু সব তাড়াহুড়া করে ট্রাংকের ভেতরে ঢোকানো হয়েছে, আরেকটার ভেতরে আগোছালোভাবে বইগুলো হয়েছে। যে ছবিগুলো দেয়ালের শোভা ছিল ওগলো ডেস্ক-এর ওপর বাক্সের ভেতর ঢোকানো।

আপনি কি কোথাও যাচ্ছেন? হ্যারি জিজ্ঞাসা করল।

ইয়ে, মানে, হ্যাঁ, বললেন লকহার্ট, দরজার পেছন থেকে ওর একটা প্রমাণ সাইজের ছবি খুলতে খুলতে রোল করে ফেললেন ওটা। জরুরি ডাক…কিছুতেই এড়ানো গেল না…যেতেই হবে…

কিন্তু আমার বোনের ব্যাপারে কি হবে? ঝাঁঝের সঙ্গে জিজ্ঞাসা কলল রন।

খুবই দুঃখজনক, বললেন লকহার্ট গুদের চোখকে এড়িয়ে যাচ্ছে ওর চোখ, একটা ড্রয়ার টান দিয়ে খুলে ওটার ভেতরের জিনিসপত্র সব একটা ব্যাগে ঢাললেন। আমার চেয়ে বেশি দুঃখ কেউ পায়নি

আপনি হচ্ছেন ডিফেন্স এগেস্ট দ্য ডার্ক আর্টস্-এর শিক্ষক! বলল হ্যারি। আপনি এখন যেতে পারেন না। বিশেষ করে যখন এখানে সব ডার্ক কর্মকাণ্ড চলছে!

বেশ, আমাকে বলতে হচ্ছে…আমি যখন চাকরিটা নিয়েছিলাম… বিড় বিড় করে বললেন লকহার্ট, এখন কাপড় চোপড়ের ওপর ওর মোজা স্তূপ করছেন, চাকরির শর্তে কিছুই ছিল না…আশা করিনি…

আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি পালিয়ে যাচ্ছেন? বলল হ্যারি অবিশ্বাস তার কণ্ঠে। আপনার বইয়ের বর্ণনা অনুযায়ী কত কিছু আপনি করেছেন?

বই ভুল ধারণা দিতে পারে, সৌজন্যের সাথে বললেন লকহার্ট।

আপনিই তো লিখেছেন বইগুলো! চিৎকার করে উঠল হ্যারি।

মাই ডিয়ার বয়, রির ওপর রাগ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। তোমার কমনসেন্স ব্যবহার করো। লোকে যদি মনে না করত যে আমিই ওই কাজগুলো করেছি আমার বই অর্ধেকও বিক্রি হতো না। কেউই একজন কুৎসিৎ বুড়ো আমেরিকান যুদ্ধবাজের কথা পড়তে চায় না, এমনকি সে যদি একটি গ্রামকে ওয়েরউলফ-এর হাত থেকে বাঁচিয়ে থাকে, তবুও। প্রচ্ছদ তাকে ভয়ানক দেখাবে। ড্রেস–সেন্স বলতে একেবারেই কিছু নেই। এবং যে ডাইনীটা ব্যান্ডন বানশিকে দেশত্যাগী করেছে তার থুতনিতে দাড়ি আছে। আমি বলতে চাচ্ছি, বুঝতেই পারছ…

তাহলে, অন্য লোকজন যা করেছে তার কৃতিত্ব আপনি নিয়েছেন বলুন? বলল হ্যারি অবিশ্বাসে।

হ্যারি, হ্যারি, বললেন লকহার্ট, অধৈর্যের সঙ্গে মাথা দুলিয়ে, এটা ওরকম সোজা নয়। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমাকে এ সব লোককে খুঁজে বার করতে হয়েছে। জিজ্ঞাসা করতে হয়েছে ঠিক কিভাবে তারা কাজগুলো করেছে। তারপর আমাকে তাদের ওপর মেমরি চার্ম প্রয়োগ করতে হয়েছে, যেন ওরা ভুলে যায় যে ওরাই কাজগুলো করেছে। একটা বিষয় যেটা নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি, সেটা হচ্ছে আমার মেমরি চার্ম। না, অনেক কাজ করতে হয়েছে, হ্যারি। শুধু বই সাইন করা এবং পাবলিসিটি ছবিই নয়। তুমি যদি খ্যাতি চাও, তবে, তোমাকে একটা দীর্ঘ কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

ট্রাংকের ডালাগুলো জোরে লাগিয়ে তালা মেরে দিলেন লকহার্ট।

দেখা যাক, বললেন, আমার মনে হয় সব কিছুই হলো। হ্যাঁ, শুধু একটা বিষয় রয়ে গেছে।

নিজের জাদুদণ্ডটা বের করে গুদের মুখোমুখি হলেন প্রফেসর লকহার্ট।

খুবই দুঃখিত, কিন্তু তোমাদের ওপর এখন মেমরি টার্ম প্রয়োগ করতে হবে। তোমরা সবখানে আমার গোপন কথা বলে বেড়াবে সেটা হতে দিতে পারি না। তাহলে আমার একটি বইও আর বিক্রি হবে না…

ঠিক সময়মতোই হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা বের করল। লকহার্ট ওটা তুলতে তুলতে, হ্যারি চিৎকার করে উঠল,এক্সপেলিআরমাস!

এক তোড়ে লকহার্ট পেছন দিকে গিয়ে ট্রাংকের উপর পড়ল। ওর জাদুদণ্ড শূন্যে উড়ে গেলো; রন ওটা ধরে জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল।

প্রফেসর স্নেইপকে ওটা আমাদের শেখাতে দেয়া উচিৎ হয়নি, বলল ক্ষিপ্ত হ্যারি, লাথি মেরে লকহার্টের ট্রাংক একদিকে সরিয়ে দিয়ে। লকহার্ট ওর দিকে তাকাল, আবার ওকে অক্ষম বলে মনে হচ্ছে। হ্যারি তখনও ওর জাদুদণ্ড প্রফেসরের দিকে তাক করে রেখেছে।

তোমরা আমাকে কি করতে বলো? ক্ষীণ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন লকহার্ট। আমি জানি না চেম্বার অব সিক্রেটস্ কোথায়। আমার কিছুই করবার নেই।

আপনার কপাল ভাল, বলল হ্যারি জাদুদণ্ড তাক করে লকহার্টকে দাঁড় করালো। আমরা মনে করি আমরা জানি ওটা কোথায় রয়েছে। এবং ওটার ভেতরে কি আছে। চলুন যাওয়া যাক।

ওরা লকহার্টকে ওর অফিস থেকে বের করল, সবচেয়ে কাছের সিঁড়ি ধরে, আন্ধকার করিডোরে যেখানে মেসেজগুলো জ্বল জ্বল করছে, সেখান দিয়ে মোনিং মার্টলের বাথরুমে।

ওরা প্রথমে লকহার্টকে ভেতরে পাঠালো। কাঁপছে লকহার্ট, দেখে হ্যারি খুব খুশি।

সবশেষের টয়লেটে বসে ছিল মার্টল।

হ্যারিকে দেখে বলল, ওহ, তুমি। এখন আবার কি চাও?

তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে কি ভাবে মরলে তুমি, বলল হ্যারি।

সঙ্গে সঙ্গে মার্টলের পুরো চেহারা পাল্টে গেল। দেখে মনে হলো ওকে কেউ এমন হতাশামোদি প্রশ্ন করেনি।

উউউহ, সেটা ভয়ঙ্কর ছিল, তৃপ্তির সাথে বলল সে। ঠিক এখানেই ঘটেছিল ঘটনাটা। আমি ঠিক এই কিউবিকলে মরেছে। আমার এতো স্পষ্ট মনে আছে। অলিভ হর্ণবি আমাকে চশমা নিয়ে ক্ষাপতে বলে আমি এখানে এসে লুকিয়ে ছিলাম। দরজাটা বন্ধ ছিল এবং আমি কাদছিলাম, এরপর শুনলাম কেউ ভেতরে এলো। ওরা অদ্ভুত ধরনের কথা বলল। ভিন্ন একটা ভাষা বলেই আমি মনে করেছিলাম। যাই হোক, আমার কাছে যেটা আশ্চর্য মনে হলো যে একটা ছেলে কথা বলছে। সুতারাং আমি দরজার তালা খুলে দিলাম, বলার জন্যে, যে নিজের বাথরুম ব্যবহার করোগে যাও। এবং তারপর– গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মতো ফুলে গেলে মর্টিল, ওর মুখ চকচক করছে, আমি মরলাম।

কিভাবে? বলল হ্যারি।

কোন ধারণা নেই, বলল মার্টল চুপিসারে। আমার শুধু মনে আছে হলুদ এক জোড়া বিশাল চোখ দেখেছিলাম। আমার পুরো শরীর যেন এক রকম নিশ্চল হয়ে গেল, এবং তারপর আমি ভাসছি… সে স্বপ্নিল চোখে হ্যারির দিকে তাকাল। এবং তারপর আমি আবার ফিরে এলাম। অলিভ হর্ণবিকে বার বার দর্শন দেয়ার ব্যাপারে আমি দৃঢ়সংকল্প। ওহ, কিন্তু সে দুঃখিত হয়েছিল, সে আর আমার চশমা নিয়ে হাসেনি।

ঠিক কোথায় তুমি চোখ দুটো দেখেছিলে? বলল হ্যারি।

ওইখানে কোথাও, বলল মার্টল, অনির্দিষ্টভাবে ওর টয়লেঠের সামনে সিঙ্কটার দিকে দেখাল।

হ্যারি আর রন তাড়াতাড়ি ওখানে গেল। লকহার্ট দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক পেছনে, চেহারায় শুধু ভয়ের ছাপ।

দেখতে ঠিক সাধারণ সিঙ্কের মতোই। ওরা প্রতিটি ইঞ্চ পরীক্ষা করল, ভেতরে এবং বাইরে, নিচের পাইপগুলিসই। এবং তারপর হ্যারি দেখল: একট তামার ট্যাপের পাশে খোদাই করা রয়েছে একটা ক্ষুদ্র সাপ।

এই ট্যাপগুলি কখনো কাজ করে নাই, বলল মার্টল, হ্যারিকে ট্যাপ ঘোরাতে দেখে।

হ্যারি,বলল রন, কিছু বলো। পারসেলটাঙে কিছু বলো।

কিন্তু হ্যারি চিন্তা করছে, চেষ্টা করে চিন্তা করছে। একবারই সে পারসেলটাঙ বলেছিল, যখন সে একটা সত্যিকারের সাপের মুখোমুখি হয়েছিল। সে ক্ষুদ্র খোদাইটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল, ভাবতে চেষ্টা করল ওটা সত্যিই জীবিত।

খোল, বলল সে।

রনের দিকে তাকাল সে, মাথা নাড়ছে রন।

ইংরেজী হয়ে গেলো, বলল সে।

হ্যারি আবার সাপটার দিকে তাকালাম, বিশ্বাস করার চেষ্টা করল যে ওটা জীবিত। সে যদি তার মাথা নাড়ে, তাহলে মোমের আলোয় ওটাকে এমনভাবে দেখা যাচ্ছে যেন ওটা নড়ছে।

খোল, বলল সে।

সে নিজে শব্দটা শুনতে পায়নি; একটা অদ্ভুত হিস হিস শব্দ ওর কান এড়িয়ে গেছে, এবং সঙ্গে সঙ্গে সাপটা উজ্জ্বল সাদা আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ঘুরতে শুরু করল। পর মুহূর্তেই, সিঙ্কটাই নড়তে শুরু করল। বস্তুত সিঙ্কটা ডুবে গেল একেবারে দৃষ্টির বাইরে, একটা বিরাট পাইপের মুখ খুলে গেল, একটা পাইপ একজন মানুষের পক্ষে ভেতরে ঢোকার মত যথেষ্ট প্রশস্ত।

হ্যারি শুনল রনের দম আটকে গেছে এবং মুখ তুলে তাকাল আবার। কি করবে সে স্থির করে ফেলেছে।

আমি নিচে যাচ্ছি, বলল সে।

আমিও, বলল রন।

নিরবতা নেমে এলা।

বেশ, মনে হয় আমাকে আর তোমাদের প্রয়োজন পড়বে না, বললেন লকহার্ট, ওর পুরনো হাসির ছায়া আবার দেখা গেল। আমি শুধু

দরজার নবের উপর হাত রাখল সে, কিন্তু রন আর হ্যারি দুজনেই ওদের জাদুদণ্ড ওর দিকে তাক কর।

আপনাকেই আগে যেতে হবে।, দাঁত খিঁচিয়ে বলল রন।

ফ্যাকাসে মুখে জাদুদণ্ড ছাড়া লকহার্ট, পাইপের খোলা মুখটার সামনে দিকে এগিয়ে গেলো।

শোন, ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন তিনি, শোন, এতে কি উপকার হবে?

জাদুদণ্ড দিয়ে পেছনে ওঁকে মারল হ্যারি। লকহার্ট ওর পা দিল পাইপের ভেতরে।

আমি সত্যিই মনে করি না– বলতে শুরু করেছিলেন তিনি, কিন্তু রন একটা ধাক্কা দিল এবং দৃষ্টির বাইরে চলে গেলেন লকহার্ট। তাড়াতাড়ি হ্যারি ওকে অনুসরণ করল। পাইপের ভেতরে আস্তে আস্তে নিজেকে নামাল ও, এবং তারপর নিজেকে সম্পূর্ণ ছেড়ে দিল।

মনে হচ্ছে অন্তহীন, আঠাল চটচটে, অন্ধকার পথে নিচের দিকে গড়িয়ে যাওয়া। সে দেখতে পেলো বিভিন্ন দিকে আরো অনেক পাইপের শাখা। কিন্তু ওদেরটার মতো এতো প্রশস্ত একটাও না। এঁকে বেঁকে খাড়া নিচের দিকে নামছে ওদেরটা, এবং সে জানে সে স্কুলের নিচে এমনকি ভূগর্ভস্থ কারা প্রকোষ্ঠগুলির চেয়েও নিচে নেমে যাচ্ছে। পেছনে ও শুনতে পাচ্ছে রনের আওয়াজ, বাঁকগুলিতে লেগে ভোতা শব্দ করছে।

এবং ঠিক যখন সে ভাবছে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কি হতে পারে, পাইপটা সমান্তরাল হয়ে গেলো, এবং সে বাইরে বেরিয়ে এলো ভেজা এবং ভোতা আওয়াজের মধ্যে, একটা পাথরের অন্ধকার সুড়ঙ্গের স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে পড়ল সে। সুড়ঙ্গটা দাঁড়াবার মতো উঁচু। লকহার্টও একটু দূরে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন, সারা গা চটচটে এবং চুণ মাখানো, যেন একটা সাদা ভূত। হ্যারি একপাশে সরে দাঁড়াল, শোঁ শোঁ শব্দ করে রন নামল পাইপটা দিয়ে।

আমরা নিশ্চয়ই স্কুলের নিচে কয়েক মাইল, বলল হ্যারি, কালো সুড়ঙ্গটার মধ্যে ওর স্বর প্রতিধ্বনিত হলো।

লেকের নিচে সম্ভবত, বলল রন, অন্ধকার চটচটে দেয়ালগুলোর দিকে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে।

তিনজনই সামনের অতল অন্ধকারের দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।

লুমোস! বিড়বিড় করল হ্যারি এবং ওর জাদুদণ্ডের মাথটোতে আলো জ্বলে উঠল। এসো, সে বলল রন এবং লকহার্টকে এবং হাঁটতে শুরু করল তিনজন, ওদের পায়ের শব্দ ভেজা মেঝেতে জোরে জোরে স্ন্যাপ স্লাপ শব্দ করছে।

সুড়ঙ্গটা এতে অন্ধকার যে ওরা শুধূ অল্প একটু সামনে দেখতে পাচ্ছে। জাদুদণ্ডের আলোয় ওদের ছায়াগুলিকে দৈত্যাকার বলে মনে হচ্ছে।

মনে রেখো, আস্তে করে বলল হ্যারি, সাবধানে যেতে যেতে, নড়াচড়ার যে কোন আভাসেই প্রথমে চোখ বন্ধ করে ফেলবে…

কিন্তু সুড়ঙ্গটা কবরের মতোই নিরব, এবং যে অপ্রত্যাশিত শব্দ ওরা শুনতে পেলো সেটা হচ্ছে ক্রাঞ্চ, একটা মরা ইঁদুরের খুলির ওপর রনরে পা পড়েছিল। হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা নিচু করল মেঝেটা পরীক্ষা করবার জন্যে, দেখল ছোট ছোট প্রাণীর হাড় ছড়ানো সর্বত্র। জিনিকে পাওয়া গেলে কেমন দেখতে হবে এটা মনে করবার চেষ্টা করল না হ্যারি, সামনে অগ্রসর হলো, সুড়ঙ্গে একটা অন্ধকার বাঁক ধরে।

হ্যারি, ওখানে কিছু রয়েছে… বলল রন ফ্যাসফ্যাসে গলায়, হ্যারির কাধটা চেপে ধরেছে ও।

জমে গেলো ওরা। দেখছে। হ্যারি শুধু একটা বিরাট এবং বাঁকানো কিছুর কাঠামো দেখতে পেল যেন, টানেল জুড়ে শুয়ে আছে। ওটা নড়ছে না।

বোধহয় ওটা ঘুমিয়ে আছে, সে শ্বাস ফেলল, পেছনে অন্য দুজনের দিকে এক পলক তাকাল। লকহার্টের হাত চোখের উপর চাপা দেয়া। হ্যারি আবার ফিরে জিনিসটা দেখল, হৃৎপিন্ড এত দ্রুত চুলছে যে ব্যাথা করছে ওর।

খুব ধীরে ধীরে, চোখ এক চিলতে খুলে যেন কোনমতে দেখা যায়, হ্যারি সামনের দিকে এগোল, ওর জাদুদণ্ডটা উঁচু করে ধরা।

একটা দৈত্যাকার সাপের চামড়ার ওপর আলো পড়ল, প্রাণপন্ত, বিষাক্ত সবুজ, পড়ে আছে পেঁচানো এবং খালি সুড়ঙ্গ জুড়ে। যে জীবটা এই চামড়া বদল করেছে সেটা কমপক্ষে কুড়ি ফিট লম্বা।

বশ্বির আমাকে অন্ধ করে দাও, বলল রন দূর্বলভাবে।

ওদের পেছনে হঠাৎ নড়াচড়া হলো। গিল্ডরয় লকহার্টের হাটু আর ওকে বহন করতে পারছে না, দূর্বল হয়ে পড়েছে, হাটু ভেঙ্গে পড়ে গেল সে সুড়ঙ্গের মেঝেতে।

চলো ওঠো, বলল রন তীক্ষ্ণভাবে, লকহার্টের দিকে ওর দুদণ্ড তাক করল।

উঠে দাঁড়াল লকহার্ট–তারপর হঠাৎ লাফ দিল রনকে লক্ষ্য করে, মাটিতে ফেলে দিল ওকে।

হ্যারি লাফিয়ে সামনে চলে এলো, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। সোজা হয়ে পঁড়াচ্ছে লকহার্ট, হাঁপাচ্ছে, রনের জাদুদণ্ড ওর হাতে এবং ওর মুখে ফের চকচকে হাসি।

অ্যাডভেঞ্চার এখানেই খতম হচ্ছে! বলল সে, ওই চামড়াটার এক টুকরা আমি স্কুলে নিয়ে যাব, ওদেরকে বলব অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল মেয়েটাকে বাঁচানো যায়নি, এবং তোমরা দুজন ওর খণ্ড বিখণ্ড দেহ দেখে দুঃখজনকভাবে মাখা ঠিক রাখতে পারোনি। তোমাদের স্মৃতির উদ্দেশে গুড বাই বলো!

সে রনের সেলো টেপ লাগানো জাদুদণ্ডটা মাথার অনেক ওপরে তুলল, চিৎকার করে উঠল,অবলিভিয়েট!

ছোটখাট একটা বোমার শব্দ করে জাদুদণ্ডটা বিস্ফোরিত হলো। হ্যারি মাথার উপর হাত দিয়ে দৌড়াল, সাপের চামড়ার উপর পা পিছলে গেল, সুড়ঙ্গ সিলিং-এর বড় বড় চাই পড়ছে মেঝের উপর দৌড়ে ওগুলো থেকে সরে গেল হ্যারি। পর মুহূর্তে ও একা দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পেলো, ভাঙ্গ পাথরের নিরেট একটা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

রন! চিৎকার করল ও। তুমি ঠিক আছে তো? রন!

আমি এখানে! চাপা গলায় বলল রন সিলিং থেকে পড়া পাথরের দেয়ালের ওপার থেকে। আমি ঠিক আছি। কিন্তু এই গাধাটা নেই–জাদুদণ্ড ওটাকে উড়িয়ে দিয়েছে।

একটা ভোতা আওয়াজ হলো, সঙ্গে সঙ্গে জোরে ওহ!। মনে হলো বন এইমাত্র লকহার্টকে ওর পায়ের হাড়ে লাথি মারল।

এখন কি? রনের গলার স্বর মরিয়া। আমরা এর মধ্যে দিয়ে বের হতে পারব না। কয়েক যুগ লেগে যাবে…

হ্যারি সুড়ঙ্গের সিলিংটার দিকে তাকাল। বড় বড় ফাটল দেখা যাচ্ছে। এই পাথরগুলির মতো বড় কিছুকে কখনই সে ম্যাজিক দিয়ে ভাংতে চেষ্টা করেনি, এবং মনে হয় চেষ্টা করার ভাল সময়ও না এখন–যদি পুরো সুড়ঙ্গটা ভেঙ্গে পড়ে?

আরেকটা ভোতা আওয়াজ, আরেকটা ওহ! শোনা গেল ভাঙ্গা পাথরের পেছন থেকে। ওরা সময় নষ্ট করছে। কয়েক ঘন্টা ধরে জিনি চেম্বার অব সিক্রেটস্-এ রয়েছে। হ্যারি জানে এখন শুধু একটাই জিনিস করার আছে।

এখানে অপেক্ষা করো, সে রনকে বলল। লকহার্টকে নিয়ে অপেক্ষা করো। আমি সামনে যাব। যদি আমি এক ঘন্টার মধ্যে ফিরে না আসি…

একটা অর্থপূর্ণ নিরবতা নেমে এলো।

আমি চেষ্টা করে কিছু পাথর সরাই দেখি, বলল রন কণ্ঠ স্থির রাখার চেষ্টা করছে ও। যেন তুমি ভেতর দিয়ে আসতে পারো ফিরে এসে। এবং হ্যারি

কিছুক্ষণ পরেই তোমার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, বলল হ্যারি, ওর কাঁপা গলায় কিছুটা আত্মবিশ্বাস আনার চেষ্টা করল।

এবং একা সে রওয়ানা হয়ে গেলো সাপের বিশাল চামড়টির পাশ দিয়ে।

রনের পাথর সরানোর আওয়াজটা দ্রুতই মিলিয়ে গেল। সুড়ঙ্গটা বাকের পর বাক খাচ্ছে। হ্যারির শরীরের প্রতিটি স্নায়ুতে অস্বস্তিকর অনুভূতি হচ্ছে। সে চাচ্ছে সুড়ঙ্গটা শেষ হোক, আবার ভয়ও পাচ্ছে শেষ হলে কি দেখতে হবে ভেবে। এবং অবশেষে যখন আরেকটা বাঁক ঘুরল, ও দেখল একটা নিরেট দেয়াল ওর সামনে দাঁড়িয়ে, দেয়ালের ওপর পাকে জড়ানো দুটো সাপ খোদাই করা রয়েছে, ওদের চেখে বড় বড় দ্যুতি ছড়ানো পান্না বসানো।

সামনে গেলো হ্যারি, ওর গলা শুকিয়ে গেছে। এই পাথরের সাপগুলো জ্যান্ত এটা ভান করার কোন দরকার নেই, তবে ওদের চোখগুলো অদ্ভুত রকমের জ্যান্ত।

কি করতে হবে বুঝতে পেরেছে হ্যারি। গলা পরিষ্কার করে নিল, এবং পান্নার চোখ গুলো মনে হলো সামান্য কেঁপে উঠল।

খোল, বলল হ্যারি, সাপের ভাষায় হিস করে চাপা স্বরে।

সাপ দুটো বিচ্ছিন্ন হলো এবং দেয়ালটা ফেটে দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো, ভাগগুলি আস্তে করে দৃশ্যের বাইরে চলে গেলো, এবং হ্যারি, মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাঁপছে, ভেতরে হেঁটে গেলো।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত