১২. দ্য পলিজুস পোশন
একেবারে উপরে উঠে সিঁড়ি থেকে নামল ওরা, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দরজায় নকার দিয়ে টোকা দিলেন। নিরবে খুলে গেলে দরজা এবং ওরী ভেতরে ঢুকল। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল হ্যারিকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে, ওকে একা ওখানে রেখে চলে গেলেন।
হ্যারি ঘুরে ফিরে চারদিকে দেখছে। একটা বিষয় নিশ্চিত, এ বছর এ পর্যন্ত হ্যারি যত টিচারের অফিসে গেছে, ডাম্বলডোরেরটা অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। স্কুল থেকে বহিষ্কারের ভয়ে ও যদি বুদ্ধি না হারাতো তবে এ অফিসটা ঘুরে ফিরে দেখার সুযোগ পেয়ে খুব খুশি হতো।
এটা, মজাদার সব শব্দে পূর্ণ, বিশাল একটি সুন্দর বৃত্তাকার রুম। লম্বা সরু পা–ওয়ালা একটা টেবিলের ওপর অদ্ভুত সব রূপার যন্ত্রপাতি রয়েছে, ঘুরছে শো শো শব্দে আর ধোঁয়ার ছোট ছোট কুলি ছড়াচ্ছে। দেয়ালগুলো প্রাক্তন হেডমাস্টার এবং হেডমিস্ট্রেসদের ছবি দিয়ে ভরা, সবাই নিজ নিজ ফ্রেমে আস্তে করে ভাত–ঘুম দিচ্ছে। এ ছাড়া বিশাল একটি থাবা–পী ডেস্কও রয়েছে, এবং এক শেল্ফ পেছনে একটা জীর্ণ শীর্ণ টুটা ফাটা জাদুকরের হ্যাট–সর্টিং হ্যাট।
হ্যারি ইতস্তত করল। দেয়ালের ফ্রেমে ঘুমন্ত জাদুকর এবং ডাইনীদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সে যদি আবার হ্যাটটা মাথায় পরে নিশ্চয়ই সেটা দোষের কিছু হবে না? শুধু দেখার জন্যে… নিশ্চিত করা যে ওটা তাকে সঠিক হাউজেই পাঠিয়েছে।
ডেস্কের পাশ দিয়ে ঘুরে এলো হ্যারি, শেলফ থেকে হ্যাটা তুলল, এবং ধীরে ধীরে নামাল নিচের মাথার ওপর। খুবই বড় হটটা, আগেরবার পড়বার পর যেমন হয়েছিল এবারও একেবারে ওর চোখ পর্যন্ত নেমে এলো। অপেক্ষা করছে হ্যারি, হ্যাটটার কালো ভেতরটার দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়েছে। তার কানে একটা মৃদু স্বর বলল, টুপির ভেতর মৌমাছি ঢুকেছে, হ্যারি পটার? ‘
ইয়ে, মানে হ্যাঁ, বিড়বিড় করল হ্যারি। ইয়ে–তোমাকে বিরক্ত করবার জন্যে দুঃখিত আমি জানতে চেয়েছিলাম।
তুমি ভাবছিলে আমি তোমাকে সঠিক হাউজে পাঠিয়েছি কি না, সপ্রতিভভাবে বলল হ্যাটটা। হ্যা…তোমাকে কোন হাউজে পাঠানো সত্যিই বিশেষভাবে মুশকিল ছিল। কিন্তু আগে যা বলেছিলাম আমি এখনও ওই মতই পোষণ করি– খাঁচার ভেতর হ্যারির হৃৎপিন্ডটা একটা লাফ দিল–স্নিথারিনেই তুমি ভাল করতে।
ভেতরে সেঁধিয়ে গেল যেন হ্যারির পাকস্থলী। হ্যাটটার কোণা খামচে ধরে টেনে বের করে নিল মাথার ওপর থেকে। ওটা ঝুলে আছে ওর হাতে অসহায়, নোংরা এবং রংচটা। ওটাকে আবার শেলফে রেখে দিল ও, অসুস্থ বোধ করছে সে।
তুমি ভুল করেছ, স্থির নিরব হ্যাটটাকে লক্ষ্য করে বলল ও। ওটা নড়ল না। পেছনে চলে এলো হ্যারি। একটা অদ্ভুত চাপা শব্দে ও চট করে পেছন ফিল।
রুমে সে আর এখন একা নেই। দরজার পাশের সোনালি দাড়ের ওপর বসে রয়েছে অর্ধেক পালক ওঠানো টার্কির মতো একটা হাড় জিরজিরে পাখি। হ্যারি ওটা দিকে তাকালো এবং পাখিটা অশুভ দৃষ্টিতে ফিরে তাকিয়ে থাকল, চাপা শব্দ করে। হ্যারি ভাবল ওকে খুব অসুস্থ দেখাচ্ছে। ওর চোখ দুটো খুবই নিষ্প্রভ এবং হ্যারির তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আরো কয়েকটা পালক খসে পড়ল ওর লেজ থেকে।
হ্যারি ভাবছিল এরপর শুধু বাকি রয়েছে ওর একার উপস্থিতিতে ডাম্বলডোরের পোষা পাখিটার মৃত্যু, এমন ওটাতে নিজে নিজেই আগুন ধরে গেলো।
প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেলো হ্যারি পটার, চিৎকার করে উঠল এবং ডেস্কের কাছ থেকে সরে গেলো। ব্যাকুলভাবে চারদিক দেখল যদি পানি ভর্তি কোনো গ্লাস পাওয়া যায় কোথাও, কিন্তু পেলো না ও। পাখিটা, ইতোমধ্যে একটা আগুনের গোলায় পরিণত হয়েছে; উচ্চস্বরে একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার দিল, পাখিটা পরমুহূর্তেই মেঝেতে ধিকি ধিকি জ্বলন্ত একদলা ছাই ছাড়া আর কিছুই থাকল না।
অফিসের দরজাটা খুলে গেলো। প্রফেসর ডাম্বলডোর এলেন, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে ওঁকে।
প্রফেসর, দম আঁটকে বলল হ্যারি, আপনার পাখিটা–আমি কিছুই করতে পারলাম না–নিজেই নিজেই আগুন ধরে
হ্যারির বিস্মিত দৃষ্টির সামনে মৃদু হাসলেন প্রফেসর।
সময়ও হয়ে এসেছিল, বললেন প্রফেসর। কয়েকদিন ধরেই ওকে দেখতে ভয়ঙ্কর লাগছিল, আমি ওকে বলছিলাম তাড়াতাড়ি করার জন্যে।
হ্যারির দৃষ্টির সামনে মুখ টিপে হাসলেন তিনি।
ফক্স হচ্ছে ফিনিক্স, হ্যারি। মরবার সময় এলে ফিনিক্স পাখিরা নিজেই জ্বলে যায় এবং ছাই থেকে আবার জন্ম নেয়। ওকে দেখো…।
ঠিক সময়ই হ্যারি নিচের দিকে তাকালো, দেখল একটা ক্ষুদ্র, কুঞ্চিত চামড়ার, একটা পাখি ছানা ছাইয়ের মধ্য থেকে ওর মাথা বের করছে। আগের পাখিটার মতোই এটাও কুৎসিৎ।
ওর জ্বলবার দিনে তোমাকে সেটা দেখতে হলে এটা লজ্জার ব্যাপার, বললেন ডাম্বলডোর, ডেস্কের পেছনে বসে। প্রায় সময়ই পাখিটা খুব সুন্দর দেখতে: চমৎকার লাল এবং সোনালী পালক! মুগ্ধ করার মতো আকর্ষণীয় পাখি, এই ফিনিক্স। ওরা সাংঘাতিক পরিমানের বোঝা বহন করতে পারে, ওদের চোখের পানির ঔষধি গুণ রয়েছে এবং পোষা পাখি হিশ্নে: ওরা খুবই বিশ্বস্ত হয়।
নিজের আগুনে ফকস-এর জ্বলে যাওয়ার ঘটনার আঘাতে হ্যারি ভুলেই গিয়েছিল ও সেখানে গিয়েছে কেন। কিন্তু সবই ওর মনে পড়ল যখন প্রফেসর ডাম্বলডোর ডেস্কের পেছনের চেয়ারে বসে তার হালকা–নীল দৃষ্টি দিয়ে হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
ডাম্বলডোর একটি শব্দও উচ্চারণ করার আগেই, বিকট শব্দে অফিসের দরজাটা খুলে গেলো এবং ঝড়ের বেগে ঢুকল হ্যাগ্রিড, ওর চোখে উদ্ভান্ত দৃষ্টি, উস্কোখুস্কো রুক্ষ চুলবিশিষ্ট মাথার ওপর স্থির হয়ে আছে ওর বাক্লাভাটা এবং মৃত মুরগীটা এখনও ঝুলছে ওর হাতে।
হ্যারি করেনি প্রফেসর ডাম্বলডোর! বলল হ্যাগ্রিড, ওর কণ্ঠে জরুরি ভাব। ছেলে দুটোকে পাওয়ার মুহূর্ত আগেই আমি ওর সঙ্গে কথা বলছিলাম, ও সময়ই পায়নি, স্যার…
প্রফেসর ডাম্বলডোর কিছু একটা বলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু হ্যাগ্রিড নাটকীয় ভঙ্গিতে বলেই চলল, হাতের মুরগীটা দোলাচ্ছে উত্তেজনায়, পালক ছড়িয়ে দিল সর্বত্র।
… ও হতেই পারে না, যদি করতে হয় আমি ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের সামনেও শপথ করে বলতে পারি…
হ্যাগ্রিড, আমি
…আপনি ভুল ছেলেটিকে ধরেছেন, স্যার, আমি জানি হ্যারি কখনো
হ্যাগ্রিড এবার জোরেই বললেন ডাম্বলডোর। আমি মনে করি না হ্যারি ওই ছেলেগুলোকে আক্রমন করেছে।
ওহ, বলল হ্যাগ্রিড, মৃত মুরগীটা আবার নিস্তেজভাবে ঝুলছে ওর হাতে। ঠিক আছে। তাহলে, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি, হেডমাস্টার।
বিব্রত হ্যাগ্রিড জোরে জোরে পা ফেলে বাইরে চলে গেল।
আপনি মনে করেন না প্রফেসর, যে আমিই ওটা করেছি? পুনরাবৃত্তি করল হ্যারি, যদিও তার চেহারা আবার বিষণ্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু তবুও আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।
নার্ভাস হ্যারি অপেক্ষা করছে না, ডাম্বলডোর ওকে মাপছেন, তার দীর্ঘ আঙুলের মাথাগুলো একত্র করা।
আমি তোমাকে বলতে চাই তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাও, ধীরে বললেন তিনি। যে কোন কিছু।
হ্যারি বুঝতে পারছে না কি বলবে। সে ভাবল ম্যালফয়ের চিৎকার, এরপর তোমাদের পালা মাডব্লাডস! এবং পলিজুস পোশনের কথা, মোনিং মার্টলের বাথরুমে পোশন জ্বাল দেয়া। এরপর ভাবল দুবার শোনা সেই অশরীরির কন্ঠস্বর এবং মনে করল রনের কথা: অন্যরা শুনতে পায় না যে কথা সেটা শুনতে পাওয়া কোন শুভ লক্ষণ নয়, এমনকি জাদুর দুনিয়াতেও নয়।সে আরো ভাবল, যেটা সকলেই বলাবলি করছিল এবং তার ক্রমবর্ধমান আশঙ্কার কথা যে সে কোন না কোনভাবে সালাজার স্নিথারিনের সঙ্গে সম্পর্কিত…
না, বলল হ্যারি, কোন কিছু বলবার নেই, প্রফেসর।
***
এর আগে সন্ত্রস্ত ছিল স্কুলের সবাই, জাস্টিন আর প্রায়–মাথাহীন–নিকের উপর জোড়া হামলার পর সত্যি সত্যি এক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। তবে, অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে রোকে নিকের অবস্থার জন্য বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কি ক্ষতি হতে পরে ভূতটার, একজন আরেকজনকে জিজ্ঞাসা করে, কোন সে ভয়ানক শক্তি যেটা আগেই মৃত একজনের ক্ষতি করতে পারে? ক্রিস্টমাসে বাড়ি যাওয়ার জন্য হোগার্টস এক্সপ্রেসের সিট পওয়ার আশায় আতঙ্কগ্রস্ত ছাত্রদের রীতিমত দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে গেল।
এই ভাবে চলতে থাকলে আমরাই শুধু থেকে যাবো, রন কল হ্যারি আর হারমিওনকে। আমরা, ম্যালফয়, ক্রাব এবং গয়ল। কি একটা মজার ছুটি হবে।
ক্র্যাব এবং গয়ল, সব সময় তাই করে যা ম্যালফয় করে, ছুটিতে থেকে যাওয়ার পক্ষে স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু হ্যারি খুশি যে বেশির ভাগ লোকই চলে যাচ্ছে। লোকজন করিডোরে তাকে এড়িয়ে চলে যেন এখনই সে লম্বা তীক্ষ্ণ দাঁত বের করবে, না হয়তো থুথু মেরে বিষ ছিটাবে, এটা আর বরদাশত করতে পারছে না হ্যারি। ক্লান্ত হয়ে গেছে সে আসতে যেতে তাকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া মন্তব্য, আঙুল তাক করে দেখিয়ে দেওয়া এবং চাপ শব্দ শুনতে শুনতে।
ফ্রেড এবং জর্জ অবশ্য এতে মজা পেয়ে গেছে। ওরা করিডোরে হ্যারির আগে আগে চলে যায় এবং চিৎকার করে, জায়গা ছাড়ো, স্লিথারিনের উত্তরপুরুষের জন্য, সাংঘাতিক খারাপ জাদুকর আসছে…।
পার্সি অবশ্য এ ধরনের ব্যবহার মোটেই পছন্দ করেনি।
এটা কোন হাসির ব্যাপার নয়, ঠান্ডা গলায় বলে সে।
ওহ, সামনে থেকে সরো, পার্সি, বলল ফ্রেড। হ্যারির তাড়া আছে।
ইয়েহ, সে যাচ্ছে চেম্বার অফ সিক্রেটস-এ ওর বিষদাত ওয়ালা ভূতদের সঙ্গে চা পান করতে, খলখল করে বলল জর্জ।
জিনির কাছেও ব্যাপারটা মজার বলে মনে হয়নি।
যতবার ফ্রেড হ্যারিকে উচ্চস্বরে জিজ্ঞাসা করেছে এরপর সে কাকে আক্রমণ করতে যাচ্ছে, অথবা জর্জ বড় একটা রসুনের কোয়া দিয়ে হ্যারিকে তাড়ানোর ভান করেছে, প্রতিবারই জিনি কান্না জড়িত স্বরে বলেছে, আহ, করো না তো!
হ্যারি অবশ্য মনে কিছু করে না; বরং ফ্রেঞ্জ এবং জর্জ যে ভাবে যে, হ্যারি পটার স্লিথারিনের বংশধর এই ধারণাটাই হাস্যকর এটাই তাকে অনেক স্বস্তি দেয়। কিন্তু ওদের ভাড়ামি মনে হয় ড্র্যাকো ম্যালফয়কে আরো ক্রুদ্ধ করছে, কারণ যতবার ও তাদেরকে ইয়ার্কি করতে দেখছে ততবারই সে আরো খিটখিটে হচ্ছে।
এর কারণ যে সে বলবার জন্যে ব্যর্থ হচ্ছে যে আসলে সেই, বলল বন সবজান্তার মতো। তোমরা জানো কেউ তাকে কোন কিছুতে হারিয়ে দেবে এটা সে কি রকম ঘৃণা করে, এবং ওর সব নোংরা কাজের বাহবা তুমি পেয়ে যাচ্ছ।
খুব বেশি দিনের জন্যে নয়, সন্তুষ্টির সঙ্গে বলল হারমিওন। পলিজুস পোশটা প্রায় তৈরি হয়ে গেছে। যে কোন দিন আমরা ওর কাছ থেকে সত্য উগলে নেব।
***
অবশেষে টার্ম শেষ হলো, এবং গোটা স্কুল জুড়ে তুষারের মতো গভীর নিরবতা নেমে এলো। মনমরা হওয়ার চেয়ে রির শান্তিই লাগছে, এবং তার আরো ভালো লাগছে যে, সে, হারমিওন এবং উইসলিরাই গ্রিফিল্ডর টাওয়ারে যেমন খুশি তেমন থাকতে পারবে, তার মানে হচ্ছে কাউকে বিরক্ত না করে সশব্দে এক্সপ্লোডিং স্ন্যাপ খেলতে পারবে এবং গোপনে ডুয়েলিং প্র্যাকটিস করতে পারবে। ফেড, জর্জ এবং জিনি মিস্টার অ্যান্ড মিসেস উইসলির সঙ্গে মিশরে বিলকে দেখতে চাওয়ার চেয়ে স্কুলে থেকে যাওয়াই বেছে নিয়েছে। পার্সি, যে ওদের বালসুলভ ব্যবহার পছন্দ করে না, গ্রিফিল্ডর কমন রুমে খুব বেশি সময় অতিবাহিত করত না। সে দম্ভের সাথে ইতোমধ্যেই ওদের বলে ফেলেছে যে সে ক্রিস্টমাসের সময় স্কুলে থাকছে শুধু এই কঠিন সময় শিক্ষকদের সহযোগিতা করা প্রিফেক্ট হিসেবে তার কর্তব্য বলে।
ক্রিস্টমাসের সকাল হলো, ঠান্ডা এবং তুষারের জন্য সাদা। ডরমিটরিতে শুধু হ্যারি আর রন, খুব সকালে ওদের জাগালো হারমিওন, যে তড়িঘড়ি করে এসেছে রুমে, পুরো সাজগোজ করা, হাতে দুজনের জন্য প্রেজেন্টেশন।
ওঠো, জোরে ডাকল হারমিওন, জানালার পর্দাগুলো সরিয়ে দিয়ে।
হারমিওন তোমার এখানে আসার কথা নয়, আলো থেকে চোখ আড়াল করে বলল রন।
তোমাকেও মেরি ক্রিস্টমাস, ওর দিকে প্রেজেন্টেশনটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল হারমিওন। আমি প্রায় এক ঘন্টা আগে উঠেছি, পোশটায় আরো কিছু ফিতা পাখা দিয়েছি। ওটা তৈরি হয়ে গেছে।
হ্যারি উঠে বসল, হঠাৎ, পূর্ণ সজাগ।
তুমি শিওর?
হী শিওর, বলল হারমিওন, ইঁদুর স্ক্যাবার্সটাকে সরিয়ে দিয়ে, যেন ও বিছানায় বসতে পারে। আমরা যদি কাজটা করতে চাই, তবে আমি বলি কি আজ রাতেই করা উচিৎ।
ঠিক সেই মুহূর্তে, হেডউইগ উড়ে এলো রুমের ভেতরে, ঠোঁটে খুব ছোট একটা প্যাকেট ধরা রয়েছে।
হ্যালো, বলল হ্যারি খুশি হয়ে, ও হ্যারির বিছানায় বসল, তুমি আবার আমার সঙ্গে কথা বলবে?
আদর করে হ্যারির কানটা ঠুকরে দিল পেঁচাটা, এবং হ্যারির কাছে টা ছিল বহন করে আনা প্রেজেন্টের ছেয়ে অনেক বেশি ভালো প্রেজেন্ট। বয়ে আনা প্রেজেন্টটা ডার্সলিদের তরফ থেকে এসেছে। ওর হ্যারির জন্য একটা টুথপিক পাঠিয়েছে আর লিখে পাঠিয়েছে গ্রীষ্মের ছুটিতেও ওর পক্ষে স্কুলে থাকা সম্ভব কি না।
হ্যারির অন্যান্য ক্রিস্টমাস প্রেজেন্টগুলো আরে অনেক বেশি সন্তোষজনক। হ্যাগ্রিড পাঠিয়েছে গুড়ের সন্দেশের বড় একটা টিন, হ্যারি ঠিক করেছে খাওয়ার আগে আগুনের পাশে রেখে ওটাকে নরম করে নিতে হবে। রন ওকে একটা বই দিয়েছে, নাম ফ্লাইং উইথ দ্য ক্যানন, ওর প্রিয় কিডিচ টিম সম্পর্কে আকর্ষণীয় তথ্য রয়েছে; এবং হারমিওন ওকে দিয়েছে একটা দামী ঈগল–পালকের কলম। শেষ প্রেজেন্টটা খুলল হ্যারি, মিসেস উইসলির তরফ থেকে একটা নতুন হাতে বোনা জাম্পার, এবং একটা প্লাম কেক। ওঁর কার্ডটা তুলে রাখল হ্যারি, মিস্টার উইসলির গাড়ি সম্পর্কে নতুন একটা অপরাধবোধও ফিরে এলো এর মনে, উইলেী গাছটার সঙ্গে অ্যাকসিডেন্ট করার পর থেকে গাড়িটাকে আর দেখা যায়নি, এর ওপর সে আর রন আবার নিয়ম ভঙ্গের উদ্যোগ নিয়েছে।
***
হোগার্টর্স-এর ক্রিস্টমাস ডিনার উপভোগ করবে না এমন কেউ নেই, এমন কি যারা পরে পলিজুস পোশম খাবে তারাও না।
গ্রেট হলটা দেখতে খুব চমৎকার লাগছে। ওখানে যে শুধু ডজন খানেক তুষারাবৃত ক্রিস্টমাস গাছ ছিল তাই নয়, হলি আর মিসূলৌ-এর পুরু স্ট্রিমার সিলিং থেকে নানাদিকে নেমে এসেছে। কিন্তু সিলিং থেকে জাদু করা তুষারও পড়ছে উষ্ণ এবং শুকনো। মূল গায়ক হিসেবে ওদের নিয়ে ডাম্বলডোর ওঁর প্রিয় কয়েকটি ক্রিস্টমাস গীত গাইলেন। প্রতিটি পাত্র এগনগ পানের সাথে সাথে হ্যাগ্রিড আরো জোরে জোরে গুরুগর্জনে মত্ত হলো। পার্সি খেয়াল করেনি তার প্রিফেক্ট বাজটাকে জাদু করেছে ফ্রেড, ফলে এখন ওটাতে লেখা রয়েছে পিনহেড, সবাইকে জিজ্ঞাসা করছে ওদের চাপা হাসির কারণ! হ্যারি পাত্তাও দিচ্ছে না ওর নতুন জাম্পার সম্পর্কে স্লিথারিন টেবিল থেকে উচ্চস্বরে করা ড্র্যাকো ম্যালফয়ের বিদ্রূপ গুলিকে। ভাগ্য যদি সুপ্রসন্ন থাকে তবে কয়েক ঘন্টার মধোই, ম্যালফয় তার প্রতিফল পেয়ে যাবে।
হ্যারি আর রন তাদের তৃতীয় দফার পুডিংটা শেষও করতে পারল না, তাদের রাতের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবার জন্যে হারমিওন ওদেরকে বাইরে নিয়ে এলো।
আমাদের এখন দরকার হবে যাদের রূপ আমরা ধারণ করবো তাদের একটুখানি… বলল হারমিওন যেন কিছুই হয়নি এমনিভাবে, যেন ও তাদের সুপারমার্কেটে পাঠাচ্ছে ওয়াশিং–পাউডার কিনতে। এবং স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে ভাল হয় যদি তোমরা ক্র্যাব আর গয়লের একটুখানি সংগ্রহ করতে পারো; ওরা ম্যালফয়ের সবচেয়ে ভাল বন্ধু, সে ওদের কাছে সব কথাই বলবে এবং আমাদেরকে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যখন কথা বলবো তখন সত্যিকারের ক্র্যাব আর গয়ল যেন ওখানে উপস্থিত না হতে পারে।
আমি সব চিন্তা করে রেখেছি, স্বাভাবিকভাবে বলে চলল হারমিওন, হ্যারি আর রনের হতভম্ব চেহারা উপেক্ষা করে। সে দুটো বড় বড় চকলেট কেক বের করে দেখালো। এগুলোর মধ্যে আমি সাধারণ ঘুমের ঔষধ ভরে দিয়েছি। তোমাদের শুধু নিশ্চিত করতে হবে যে ক্র্যাব আর গয়ল যেন ওদুটো পায়। তোমরা জান ওরা যে রকম লোভী, এগুলো খেতে বাধা তারা। একবার ওরা দুজন ঘুমিয়ে পড়লে, ওদের কয়েক গাছি চুল ছিঁড়ে ঝাড়ুর কাবার্ডে লুকিয়ে রেখো।
অবিশ্বাসে হ্যারি আর রন পরস্পরের দিকে তাকালো।
হারমিওন, আমার মনে হয় না।
পুরো ব্যাপারটা গুরুতরভাবে ভুল হয়ে যেতে পারে
কিন্তু হারমিওনের চোখে ইস্পাতের মতো দ্যুতি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের চোখে যে রকম দেখা যায় সে রকম।
ক্র্যাব আর গয়লের চুল না হলে পোশনটা অকেজো হয়ে যাবে, সে কঠিন কন্ঠে। তোমরা তো ম্যালফয় সম্পর্কে তদন্ত করতে চাও, চাও না?
ওহ, ঠিক আছে, ঠিক আছে, বুলল হ্যারি। কিন্তু তোমার ব্যাপার কি? তুমি কার চুল ছিড়বে?
আমারটা আমি এরই মধ্যে যোগাড় করে ফেলেছি! বলল হারমিওন আনন্দে, পকেট থেকে একটা ছোট্ট বোতল বের করল এবং ওটার ভেতরের একটিমাত্র চুলটা ওদের দেখালো। মনে আছে মিলিসেন্ট বুস্ট্রোড-এর কথা আমার সঙ্গে কুস্তি করেছিল ডুয়েলিং ক্লাবে? আমার যখন গলা টিপে ধরবার চেষ্টা করছিল তখন এটা আমার পোশাকে আটকে গিয়েছিল। এবং সে বাড়ি গেছে ক্রিস্টমাস উপলক্ষে–আমাকে শুধু স্লিথারিনদের বলতে হবে যে আমি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হারমিওম যখন পলিজুস পোশনটাকে আবার দেখতে গেলো, রন হ্যারির দিকে সর্বনাশ–হয়ে–গেছে চেহারা নিয়ে রন হ্যারির দিকে ফিরে বলল, তুমি কি কখনও এমন কোন পরিকল্পনার কথা শুনেছ যেখানে এতো বেশি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
***
কিন্তু হ্যারি আর রনের অপার বিস্ময়ে অপারেশনের প্রথম পর্বটা একেবারে হারমনি যেমন বলেছিল তেমনই সুচারুভাবে সম্পন্ন হলো। ক্রিস্টমাস চায়ের পর ওরা প্রায় শূনা এন্ট্রান্স হলটায় আবার গেল। অপেক্ষা করছে ক্র্যাব আর গয়লের জন্য, স্লিথারিন টেবিলে শুধু ওরা দুজনই রয়েছে, মিষ্টি সদ্ব্যবহারে বাস্ত। হ্যারি কেকগুলিকে রেলিং-এ রেখে দিয়েছিল। ক্র্যাব আর গয়লকে বেরিয়ে আসতে দেখে ওরা সামনের দরজার পাশে একটী বর্মের পেছনে লুকিয়ে পড়ল।
কত মাথামোটা একজন হতে পারে? রন খুশির চোটে ফিস ফিস করে বলল হ্যারিকে, হেঁ মেরে চকলেট দুটো তুলে নিল ক্র্যাব অরি গয়ল এবং ঠেসে পুরল তাদের মুখের বিশাল গহ্বরে। এক মুহূর্তের জন্য দুজনই লোভীর মতো চিবালো, মুখে বিজয়ীর হাসি। এরপর, তারে চেহারায় সামান্যতম পরিবর্তনও হলো না দুজনই হাঁটু ভেঙ্গে মেঝেতে পড়ে গেলো।
এরপর কষ্টকর ব্যাপারটা হচ্ছে ওদের দুজনকে কাবার্ডের পেছনে লুকিয়ে রাখা। ওদেরকে বালতি আর ঝাড়ুনের মাঝে নিরাপদে রাখার পর গয়লের কপাল থেকে কয়েক গাছি চুল ছিঁড়ে নিল হ্যারি, রন তুলল ক্র্যাবের কয়েকটা চুল। ওরা ওদের জুতো জোড়াও চুরি করল, কারণ ওদেরগুলো ক্র্যাব আর গয়ালের পায়ের জন্য খুবই ছোট হবে। তারপর, যদিও তখনও নিজেদের কীর্তিতে তারা হতভম্ব, দৌড়ে ছুটে গেল মোনিং মার্টলের বাথরুমে।
হারমিওন যে কড়াইয়ে পোশন জ্বাল দিচ্ছে ঘন কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে সেই কিউবিকল থেকে, ওদের পক্ষে চোখ মেলাই দায়। মুখ কাপড়ে ঢেকে হ্যারি আর রন আস্তে করে দরজায় টোকা দিল।
হারমিওন?
তালা খোলার শব্দ শোনা গেল, হারমিওন বেরিয়ে এলো, চেহারা চকচক করছে এবং চোখে মুখে উদ্বেগ। ওর পেছনে ওরা শুনতে পাচ্ছে টগবগ টগবগ শব্দ করে ফুটছে, তাঁদের মতো ঘন পোশন। টয়লেট সীটের ওপর কাঁচের তিনটি পানপাত্র রয়েছে।
পেয়েছ? দম বন্ধ করে জিজ্ঞাসা করল হারমিওন।
হ্যারি ওকে গয়লের চুল দেখালো।
চমৎকার। এবং আমি এই বাড়তি পোশাকটা লুন্দ্রি থেকে চুরি করে এনেছি, একটা ছোট ছালা তুলে ধরে হারমিও বলল। ক্র্যাব আর গয়ল হওয়ার পর তোমাদেরও বড় সাইজের দরকার হবে।
তিনজন অপলক তাকিয়ে থাকল কড়াইটার দিকে। কাছে থেকে দেখলে পোশনটাকে মনে হচ্ছে ঘন, কালো মাটির মতো, ফুটছে ধীরে ধীরে।
আমি সিওর যে সবকিছুই ঠিকঠাক করেছি, বলল হামিওন, একটু বিচলিত, মোস্তে পেতে পোশন্স এর পাতাগুলি আবার পড়তে পড়তে। মনে হচ্ছে বইটাতে লেখা রয়েছে… একবার পোশন পান করবার পর, আমরা ঠিক একঘন্টা সময় পাবো নিজ রূপে ফিরে আসবার।
এখন কি? ফিস ফিস করে বলল রন।
আমরা পোশনটাকে গ্লাস তিনটাতে ঢালব, এবং চুলগুলো দেবো।
প্রত্যেকটি গ্লাসে পোশনের বড় বড় দলা ঠাসল। তারপর, ওর হাত কাঁপছে, মিলিসেন্ট বুলস্ট্রোড়ের চুলটা বোতলটা থেকে বের করে গ্লাসে দিয়ে দিল।
ফুটন্ত কেটলির মতো হিস্স্ করে উঠল পোশনটা এবং উন্মাদের মতো ফেনা তুলল। এক সেকেন্ড পর, ওটা ফ্যাকাশে হলুদ রঙের হয়ে গেলো।
আর্ঘ–মিলিসেন্ট বুলস্ট্রেডের নির্যাস, বলল রন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওটার দিকে তাকিয়ে। বাজি ধরে বলতে পারি ওটা নিশ্চয়ই বিশ্বাদ হবে।
এখন তোমাদেরটা যোগ করো তাহলে, বলল হারমিওন।
মাঝের গ্লাসটায় হ্যারি গয়লের চুলটা ফেলে দিল, এবং রন ক্র্যাবের চুল ফেলল শেষেরটায়। দুটো গ্লাসই হিসিয়ে ফেণা তুলল: গোয়েলেরটা পুলিশের খাকি রং ধারণ করল, ক্র্যাবেরটা হলো ঘন, তমসাচ্ছন্ন বাদামী রঙের।
দাঁড়াও, বলল হ্যারি, রন আর হারমিওনকে ওদের গ্লাসের দিকে হাত বাড়াতে দেখে। আমরা সকলেই এখানে পোশন পান করবো না, একবার আমরা ক্র্যাব আগয়লে রূপান্তরিত হলে এখানে আমাদের যায়গা হবে না, আর মিলিসেন্ট বুলস্ট্রোডও কো পিচ্চি পিক্সি নয়।
ভাল কথা, বলল রন, দরজাটা খুলে। আমরা ভিন্ন ভিন্ন কিউবিকল-এ যাবো।
সাবধানে, পোশনের একটা ফোঁটাও যেন না পড়ে এমন ভাবে হ্যারি গেল মধ্যেরটায়।
রেডি? ও বলল।
রেডি, শোনা গেল রন আর হারমিওনের গলা।
এক…দুই…তিন…
নাক চেপে ধরে, দুই বড় ঢোকে পোশনটা খেয়ে ফেলল। স্বাদ পেল বেশি জ্বাল দেয়া বাধাকপির মতো।
সঙ্গে সঙ্গে ওর ভেতরটা মোচড়াতে শুরু করল, যেন ও কোন জ্যান্ত সাপ গিলে খেয়েছে–ভাজ হয়ে গেছে সে মাঝখানে, ভাবছে অসুস্থ না হয়ে পড়েছে–তারপর ওর পাকস্থলী থেকে একেবারে হাত–পায়ের আঙুলের মাথা পর্যন্ত যেন জ্বলে গেল। এরপর, মাটিতে চার হাত পায়ে সে ঘন ঘন দম ফেলতে লাগল, এরপর ভয়াবহ একটা অনুভূতি যেন গলে যাচ্ছে, সারা শরীরের চামড়া উত্তপ্ত মোমের মতো বুঁদ বুদ উঠছে এবং তার চোখ এবং হাতদুটি বড় হওয়ার আগে ওর আঙুলগুলো মোটা হতে শুরু করলো, নখগুলো চওড়া হলো, গাটগুলো ফুলে উঠল বন্টুর মতো। কাঁধ চওড়া হলো যন্ত্রণাদায়কভাবে। এবং কপালে চিন চিন অনুভূতিতে বুঝল ওর দ্রুর দিকে নেমে এসেছে চুল, গায়ের কাপড়টা ছিঁড়ে গেলো বুক চওড়া হওয়ায়, চার সাইজ ছোট জুতোর মধ্যে পা জোড়া যন্ত্রণায়…
যেমন হঠাৎ শুরু হয়েছিল, তেমনি সব থেমে গেল। পাথরের ঠাণ্ডা মেঝেতে মুখ নিচু করে পড়ে আছে হ্যারি, টয়লেটের শেষ প্রান্তে মার্টল গার্গল করছে গোমড়া মুখে। অনেক কষ্টে জুতো জোড়া ঝেড়ে ফেলে ও উঠে দাঁড়ালো। তাহলে গয়ল হওয়ার এটাই অনুভূতি। ওর বড় বড় হাত দুটো কাঁপছে, পুরনো পোশাকটা গোড়ালীর এক ফুট ওপরে ঝুলছে, খুলে ফেলল ও। বাড়তি পোশাকটা গায়ে টেনে, গয়লের নৌকার সাইজের জুতো জোড়া পরে নিল। চোখের ওপর থেকে চুল সরানোর চেষ্টা করে দেখল কপালে ছোট ছোট ঝাটার মতো খাড়া চুল। এবার মনে হলো চশমাটা ওর চোখ ঘোলা করে রেখেছে, কারণ গয়লের তো চশমার প্রয়োজন নেই। ট্রশমাটা চোখ থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করল, তোমরা দুজন ঠিক আছে তো? গয়লের নিচু ঘাস ঘাস শব্দ বের হলো মুখ থেকে।
ইয়েহ ডান দিক থেকে শোনা গেল ক্রাবের গভীর ঘোঁত শব্দের জবাব।
দরজা খুলে বেরিয়ে হ্যারি ফাটা আয়নাটার সামনে দাঁড়ালো। মণিকোটরে গভীরভাত্তে বসানো নিষ্প্রভ দুটি চোখে গয়ল তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হ্যারি কান চুলকালো। গয়ও তাই করল।
রনের দরজা খুলল। ওরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইল। ওকে স্নান এবং শকুড় দেখাচ্ছে, ক্র্যাব থেকে রনকে কিছুতেই আলাদা করা যাচ্ছে না, মাথায় বাটিছাটের চুল থেকে একেবারে গরিলাসদৃশ বাহু পর্যন্ত। এটা অবিশ্বাস্য, বলল রন, আয়নাটার সামনে গিয়ে স্ক্রাবের থ্যাবড়া নাকটায় খোঁচা দিতে দিতে। অবিশ্বাস্য।
আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ, বলল হ্যারি গয়লের মোটা কক্তিতে কেটে বসে যাওয়া ঘড়িটা খুলতে খুলতে। আমাদেরকে এখনও স্লিথারিনের কমন রুমটা খুঁজে বের করতে হবে, আশা করি অনুসরণ করার মতো কাউকে পেয়ে যাবো…
হ্যারির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল রন, বলল, তুমি জান না, চিন্তা করছে গয়ল, এটা দেখতে যে কি রকম উদ্ভট লাগে। সে হারমিওনের কিউবিকলের দরজায় চাপড় মারল, বের হও আমাদের যেতে হবে…
উচ্চ স্বরে একটা তীক্ষ্ণ কণ্ঠ জবাব দিল। আমি–আমার মনে হয় না শেষ পর্যন্ত আমি আসব। আমাকে ছাড়াই যাও তোমরা।
হারমিওন, আমরা জানি মিলিসেন্ট বুলস্ট্রোড দেখতে খারাপ, কেউ জানতে পারবে না যে এটা তুমি।
না–সত্যিই আমার মনে হয় না আমি যাব। তোমরা তাড়াতাড়ি যাও, সময় মষ্ট করছে।
হ্যারি তাকাল রনের দিকে, হতবুদ্ধি সে।
হ্য, এটা গয়লের মতো, বলল রন। যতবার টিচার ওকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ততবারই তাকে ওরকম দেখায়।
হারমিওন, তুমি কি ঠিক আছে, দরজার ওপাশ থেকে বলল হ্যারি।
ফাইন–আমি খুব ভাল আছি…যাও…
হ্যারি ওর ঘড়ির দিকে তাকালো। ওদের মূল্যবান ষাট মিনিটের পাঁচ মিনিট ইতোমধ্যেই চলে গেছে।
বেশ, তোমার সঙ্গে আমরা এখানেই আবার দেখা করবো, ঠিক আছে? বলল সে।
সাবধানে বাথরুমের দরজাটা খুলল ওরা, এদিক ওদিক দেখে নিল, সব ঠিক আছে, তারপর রওয়ানা হলো।
তোমার হাত ওভাবে দোলাবে না, বিড় বিড় করে রনকে বলল হ্যারি।
এহ?
ক্র্যাব হাত শক্ত করে রাখে…
এখন কেমন?
হা, এখন ঠিক আছে।
মার্বেল সিঁড়ি ভেঙ্গে ওরা নিচে গেলো। ওদের এখন শুধু দরকার একজন স্লিথারিন যাকে অনুসরণ করে ওরা কমন রুম পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে, কিন্তু আশে পাশে কাউকে দেখা গেল না।
কোন বুদ্ধি? হ্যারির প্রশ্ন।
শ্লিথারিনরা সব সময় ওই পথ দিয়ে নাস্তা খেতে আসে, মাটির নিচের কারা প্রকোষ্ঠগুলির পথের দিকে মাথা হেলিয়ে বলল রন। মুখের কথা শেষ করতে পারেনি রন, এমন সময় কোঁকড়ানো চুলের একটি মেয়ে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো।
মাফ করবেন, বলল রন, দ্রুত ওর কাছে গিয়ে, কমন রুমে যাওয়ার পথটা ভুলে গেছি।
মাফ করবেন, বলল মেয়েটি আড়ষ্ট ভাবে। আমাদের কমন রুম? আমি তো একজন ব্ল্যাভেনক্ল।
মেয়েটি হেঁটে চলে গেলো, ওদের দিকে ফিরে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে।
হ্যারি আর রন পাথরের ধাপ বেয়ে দ্রুত নেমে গেল, অন্ধকারে, ওদের পদক্ষেপের প্রতিধ্বনি হচ্ছে, তেমনই জোরে ক্র্যাব এবং গয়লের পা মেঝেতে পড়লে যেমন আওয়াজ হয়, এতক্ষণে ওরা বুঝতে পারছে, ব্যাপারটা ওরা যত সহজ আশা করেছিল, তত সহজ হবে না।
গোলকধাঁধার পতো প্যাসেজটা একবারে জনশূন্য। ওরা আরো ভেতরে চলে গেলো, একেবারে স্কুলের নিচে, সব সময় ঘড়ির দিকে নজর রেখেছে, কতটা সময় আর বাকি আছে। প্রায় পনরো মিনিট পর, যখন ওরা প্রায় মরিয়া হয়ে উঠেছে, হঠাৎ তারা সামনে নড়াচড়ার আভাস পেলো।
হা! বলল র উত্তেজিত ভাবে। ওদের একজন আসছে!
পাশের একটা রুম থেকে মানুষটি আসছে। তবে, তাড়াতাড়ি কাছে পৌঁছে তারা হতাশ হলো। কোন স্লিথারিন নয়, পার্সি।
তুমি এখানে কি করছ? জিজ্ঞাসা করল রন অবাক হয়ে।
পার্সির আত্মসম্মানে লাগল।
সেটা, বলল সে কঠিনভাবে, তোমার কোন বিষয় নয়। ক্র্যাবতো তাই না?
কি–ওহ, হ্যাঁ, বলল রন।
বেশ, রুমে ফিরে যাও, বলল পার্সি কঠোরভাবে। এই সময় অন্ধকার করিডোরে ঘুরে বেড়ানো নিরাপদ নয়?
তুমি তো ঘুরছ, বলল রন।
আমি, বলল পার্সি, বুক ফুলিয়ে বলল, একজন প্রিফেক্ট। আমাকে কেউই আক্রমণ করবে না।
হঠাৎ একটা কণ্ঠ প্রতিধ্বনি করে উঠল হ্যারি আর রনের পেছন থেকে। ব্র্যাকে ম্যালফয় ওদের দিকে আসছে ধীরে সুস্থে, এবং জীবনে প্রথমবারের মতো ওকে দেখে হ্যারি খুশি হলো।
এই যে তোমরা, টেনে টেনে বলল সে ওদের দিকে তাকিয়ে। এতক্ষণ কি তোমরা গ্রেট হল নোংরা করছিলে? আমি তোমাদের খুঁজছি, তোমাদেরকে একটা মজার জিনিস দেখাবো।
অপ্রস্তুত দৃষ্টিতে পার্সির দিকে তাকালো ম্যালফয়।
ক্ষেপে গেল পার্সি।
স্কুলের প্রিফেক্টকে তুমি আরো সম্মান দেখাতে চাও! সে বলল। আমি তোমার মনোভাব পছন্দ করি না।
অবজ্ঞার হাসি হেসে ম্যালফয় অনুসরণ করার জন্য হ্যারি আর রনকে ইঙ্গিত করলো। রন পার্সির কাছে প্রায় দুঃখ প্রকাশ করে ফেলেছিল আর কি, কিন্তু সময়মতো নিজেকে সামলে নিল। সে আর রন দ্রুত ম্যালফয়ের পেছনে যেতে লাগল, মোড়টা ঘুরে সে বলল,ওই পিটার উইসলি
পার্সি, সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে দিল রন।
ওই হলো, বলল ম্যালফয়। ইদানিং আমি ওকে এদিক ওদিক নিঃশব্দে ঘোরাফেরা করতে দেখেছি। এবং বাজি ধরে বলতে পারি, ও কি খুঁজছে আমি জানি। ও ভাবছে ও, সে একাই স্লিথারিনের বংশধরকে ধরে ফেলবে।
ছোট একটা অবজ্ঞার হাসি দিল ও। উত্তেজিত হ্যারি আর রন দৃষ্টি বিনিময় করল।
একটা খালি, স্যাঁতস্যাঁতে পাথরের দেয়ালের সামনে দাঁড়ালো ম্যালফয়।
নতুন পাসওয়ার্ডটা যেন কি? হ্যারিকে জিজ্ঞেস করল।
ইয়ে– বলল হ্যারি।
ওহ, হ্যাঁ–খার্টি–রক্ত! বলল ম্যালফয়, হ্যারির কথা না শুনেই দেয়ালের ভেতর লুকানো একটা পাথরের দরজা খুলে গেল। ম্যালফয় ওটার ভেতর দিয়ে গটগট করে হেঁটে চলে গেলো, এবং হ্যারি আর রন ওকে অনুসরণ করল।
স্লিথারিনের কমন রুমটা লম্বা, নিচু মাটির নিচের ঘর অসমতল পাথরের দেয়াল এবং সিলিং, গোলাকার সবুজাভ বাতি ঝুলে রয়েছে কেইনে। ওদের সামনে একটা সুনির্মিত তাকের নিচে চুল্লীতে আগুন জ্বলছে সশব্দে এবং আগুনের সামনে বাঁকা চেয়ারে কয়েকজন থিরিনকে দেখা যাচ্ছে ছায়ার মতো বসে রয়েছে।
এখানে অপেক্ষা করো, হ্যারি রনকে বলল শ্যালফয়, ওদেরকে ইশারা করলো আগুণ থেকে দূরে দুটো খালি চেয়ারে বসতে। আমি গিয়ে ওটা নিয়ে আসছি-এই মাত্র বাবা ওটা পাঠিয়েছে আমার কাছে
ম্যালফয় ওদেরকে কি দেখাতে পারে ভাবতে ভাবতে, হ্যারি আর রন বসল চেয়ারে এবং যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল।
মিনিট খানেক পরই ম্যালফয় ফিরে এলো, হাতে পত্রিকার কাটিং-এর মতো দেখতে একটা কিছু। সে ওটা একেবারে বনরে নাকের নিচে ধরল।
তোমার হাসি আসবে এটা পড়ে, বলল সে।
হ্যারি দেখল রনের চোখ আঘাতে বিস্ফোরিত হয়ে গেছে। সে দ্রুত কাটিংটা পড়ে ফেলল, জোর করে হাসল, হ্যারির হাতে তুলে দিল ওটা।
ডেইলী প্রফেট থেকে এটা কাটা হয়েছে, লেখা রয়েছে:
ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ে ইনকোয়ারি
আর্থার উইসলি, মাগলদের জিনিসের অপব্যবহার সংক্রান্ত দফতরের প্রধান, আজ তাকে, একটি মাগলগাড়ি ভাদু করার দায়ে পঞ্চাশ গ্যালিয়ন জরিমানা করা হয়েছে।
মিস্টার সুসিয়াস ম্যালফয়, হোগার্টস স্কুল অফ উইচক্র্যাফট অ্যান্ডি উইজারি–র একজন গভর্নর, যে স্কুলে জাদুকরা গাড়িটি এ বছরের শুরুতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল, আজ মিস্টার উইসলির পদত্যাগ দাবি করেছেন।
আমাদের সংবাদদাতাকে মিস্টার ম্যালফয় বলেছেন, উইসলি মন্ত্রণালয়কে কলংকিত করেছে, সে আমাদের জন্য আইন প্রণয়নে পরিস্কারভাবে অযোগ্য এবং তার হাস্যকর মাগল রক্ষা আইন তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা উচিৎ।
মন্তব্য নেয়ার জন্যে মিস্টার উইসলিকে পাওয়া যায়নি, অবশ্য তার স্ত্রী রিপোর্টারদের চলে যেতে বলেন, না হলে তিনি তাদের উপর পারিবারিক পিশাচ লেলিয়ে দেবেন।
তাহলে? কাগজের কাটিংটা তাকে হ্যারি ফেরত দিলে অধৈর্যের সঙ্গে বলল ম্যালফয়। তোমাদের মনে হয় না এটা একটা আনন্দের খবর
হা, হা, বলল হ্যারি কাষ্ঠ হাসি হেসে।
আর্থার উইসলি মাগলদের এতই ভালবাসে যে, সে তার জাদুদণ্ড দুটুকরো করে ওদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে, বলল ম্যালফয় নিদারুণ ঘৃণার সঙ্গে। ওরা, উইসলিরা যেমন ব্যবহার করে, তুমি কখনই মনে করতে পারো যে ওরা বিশুদ্ধ–রক্ত।
রন মানে ক্র্যাবের চেহারা রাগে বিকৃত হয়ে গেছে।
তোমার কি হয়েছে, ক্র্যাব? চট করে জিজ্ঞাসা করল ম্যালফয়।
পেট ব্যথা, বলল রন।
বেশ হাসপাতালে যাও এবং ওই মাডব্লাডদের আমার তরফ থেকে লাথি মেরে এসো, চাপা হাসি হেসে বলল ম্যালফয়। আমি অবাক হচ্ছি ডেইলী প্রফেট এখন পর্যন্ত এই সব আক্রমণ সম্পর্কে কিছুই লিখছে না কেন, চিন্তিত ভাবে বলল সে। আমার ধারণা ডাম্বলডোর পুরো ব্যাপারটাই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। এই সব যদি তাড়াতাড়ি না বন্ধ হয়, তাহলে তার চাকরিটি চলে যাবে। বাবা সব সময়ই বলেন এই স্কুলের সবচেয়ে খারাপ হেডমাস্টার হচ্ছেন ডাম্বলডোর। সে মাগল–জাতদের ভালবাসে। একজন ভাল হেডমাস্টার কখনই ক্রিভির মতো নোংরা পদার্থকে এখানে ভর্তি করত না।
কাল্পনিক ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে শুরু করল ম্যালফয় এবং কলিনের একটা নিষ্ঠুর কিন্তু সঠিক অনুকরণ করল: পটার, আমি কি তোমার ছবি তুলতে পারি, পটার? আমি কি তোমার অটোগ্রাফ পেতে পারি? আমি কি তোমার জুতো চাটতে পারি, প্রিজ, পটার?
হাত নিচে নামিয়ে হ্যারি আর রনের দিকে তাকালো সে।
তোমাদের দুজনের কি হয়েছে?
অনেক দেরী হয়ে গেলেও, হ্যারি আর রন জোর করে হাসল। কিন্তু ম্যালফয়কে অসন্তুষ্ট মনে হলো; বোধহয় ক্রে আর গয়ল কোন কিছু বুঝতে দেরী করে।
সেইন্ট পটার, মাডব্লাডদের বন্ধু, ধীরে ধীরে বলল ম্যালফয়। ওই আরেকজন যার কোন উপযুক্ত উইজার্ড অনুভূতি নেই, না হলে সেই গ্রেঞ্জার মাডব্লাডটার সঙ্গে গিয়ে ঘুরে বেড়াতো না। এবং লোকে ভাবে ওই হচ্ছে স্লিথারিনের বংশধর!
হ্যারি আর রন দম আঁটকে বসে থাকল। নিশ্চয়ই এক সেকেন্ড পর ম্যালফয় বলবে আসলে ওই হচ্ছে সেই বংশধর। কিন্তু বলল
আমি যদি জানতাম কে, অস্থির হয়ে বলল শ্যালফয়। অমি ওকে সাহায্য করতে পারতাম।
রনের মুখ হা হয়ে গেল ফলে ক্ৰেবের চেহারাটা স্বাভাবিকের চেয়ে নির্বোধ দেখালো। ভাগ্য ভাল, ম্যালফয় খেয়াল করেনি, এবং হ্যারি দ্রুত চিন্তা করে, বলল, এ সবের পেছনে আসলে কে রয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই তোমার ধারণা রয়েছে…
তুমি জান আমার সে ধারণা নেই, গয়ল, আর কতবার এই তোমাকে আমার বলতে হবে? তিক্তস্বরে বলল ম্যালফয়। এবং শেষ যে চেম্বার খোলা হয়েছিল, সে সম্পর্কেও বাবা আমাকে কিছু বলবেন না। অবশ্যই সেটা পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা, তার সময়ের আগের ঘটনা, কিন্তু তিনি সব কিছুই জানেন এবং তিনি বললেন ব্যাপারটা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে এবং আমি যদি এ সম্পর্কে খুব বেশি জেনে ফেলি তাহলে ব্যাপারটা সন্দেহজনক হবে। কিন্তু আমি একটা কথা জানি; শেষ যেবার চেম্বারটা খোলা হয়েছিল তখন একজন মাডব্লাড মারা গিয়েছিল। আমি বাজি ধরে বলতে পারি এবারও যে তাদের একজন মারা যাবে সেটা শুধু সময়ের ব্যাপার…আমি আশা করি যেন গ্রেঞ্জার হয়, তুপ্তির সাথে বলল সে।
রন ক্র্যাবের বিশাল মুষ্টিটা খামচে ধরে আছে। এখন যদি সে ম্যালফয়কে ঘুষি মারে তাহলে পুরো ব্যাপারটা ফেসে যাবে, দৃষ্টি দিয়ে রনকে সাবধান করল হ্যারি, ম্যালফয়কে উদ্দেশ করে বলল, শেষবার যে চেম্বার খুলেছিলে তাকে কি ধরা গিয়েছিল?
ও, হা… যেই হোক না কেন, তাকে বহিস্কার করা হয়েছিল, বলল ম্যালফয়, ওরা এখনও বোধহয় আজকাবানেই রয়েছে।
আজকাবান? বলল হ্যারি, বিভ্রান্ত।
আজকাবান–জাদুকরদের কারাগার, গয়ল, বলল ম্যালফয়, ওর দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে। সত্যি বলতে কি, তুমি যদি অরো মন্থর হও তাহলে তো পেছন দিকে যেতে থাকবে।
অস্থিরভাবে চেয়ারে নড়েচড়ে বসল সে, বলল, বাবা বলেন আমার মাথা দূরে রাখতে এবং স্নিথারিনের বংশধরকে তার কাজ করতে দিতে। তিনি বলেন স্কুলটা মাডব্লাড জঞ্জালমুক্ত হওয়ার দরকার আছে ঠিকই, কিন্তু আমাকে এর সঙ্গে জড়ানো চলবে না। অবশ্যই এই সময় বিনা চেষ্টায় তিনি অনেক তথ্যই পেয়ে যান। তোমরা জান গত সপ্তাহে জাদু মন্ত্রণালয় আমাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছিল?
গয়লের মলিন চেহারাটায় দুশ্চিন্তা ফুটিয় তোলার চেষ্টা করল হ্যারি।
হ্যা… বলল ম্যালফয়। ভাগ্যবশত, ওরা বেশি কিছু পায়নি। বাবার অবশ্য ডার্ক আর্টস-এর খুবই মূল্যবান জিনিস রয়েছে। কিন্তু ভাগ্যবশত, আমাদেরও নিজেদের সিক্রেট চেম্বার রয়েছে ড্রইং–রুম মেঝের নিচে
হো! বলল রন।
ম্যালফয় ওর দিকে তাকাল। হ্যারিও তাকাল। রন যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেল। এমনকি ওর চুলও লাল হয়ে যাচ্ছিল। বনের নাক ধীরে ধীরে লম্বা হয়ে যাচ্ছে–ওদের এক ঘন্টা শেষ হয়ে গেছে। বুন পেছন ফিরল, এবং হ্যারির দিকে সে যে সন্ত্রস্তভাবে তাকাচ্ছিল তাতে সেঁও নিশ্চয়ই।
ওরা দুজনেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
আমার পোটের জন্য ওষুধ, ঘোঁত ঘোত করল বন এবং আর কোনো সময় নষ্ট না করে ওরা দুজন শ্লিথারিনের কমন রুমটা দৌড়ে পার হলো, পাথরের দেয়ালটার ওপর আছড়ে পড়ল, এবং প্যাসেজ ধরে লাগাল দৌড়, নিশার মধ্যে আশা ম্যালফয় কিছুই যদি লক্ষ্য না করে থাকে। হ্যারি বুঝতে পারছে গলের বিশাল জুতার মধ্যে ওর পা পিছলে যাচ্ছে এবং সে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলে পোশাকটাকে তুলে ধরতে হচ্ছে; ঝড়ের গতিতে ওরা সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠে এলো এবং একেবারে অন্ধকার এনট্রেল হলের ভেতরে। যার ভেতয়ে প্রচুর চাঁপা ধুপধাপ শব্দ আসছে কাবার্ড থেকে, যেখানে ওরা ক্লেব আর গয়লকে আঁটকে রেখে গিয়েছিল। ওদের জুতা জোড়াগুলি কাবার্ডের বাইরে রেখে, মোজা পরেই আবার দৌড়াল সিঁড়ি ধরে যোনিং মার্টলের বাথরুমের দিকে।
পুরোটাই সময়ের অপচয় হয়নি কি বলো, হাপাতে হাঁপাতে বলল রন, ওদের পেছনে বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করল ও। আমি জানি এই আক্রমণগুলি কে করছে সেটা বের করতে পারিনি, কিন্তু আমি কাল ডাড়কে লিখে ম্যালফয়দের ড্রইংরুমের নিচে তল্লাশী চালাতে বলবো।
ফাটা আয়নাটায় হ্যারি নিজের চেহারাটা পরীক্ষা করে দেখল। আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে সে। চশমাটা পরে নিল, বন ধাক্কা দিচ্ছে হারমিওনের কিউবিকলের দরজায়।
বেরিয়ে এসো, হারমিওন, বলার মতো অনেক কথা জমেছে
চলে যাও! তীক্ষ্ণ চিৎকারে বলল হারমিওন।
হ্যারি আর রন পরস্পরের দিকে তাকালো।
কি হয়েছে? জিজ্ঞাসা করল রন। এর মধ্যে তুমি নিশ্চয়ই স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরে এসেছ, আমরা…
কিন্তু মোনিং মার্টল হঠাৎ কিউবিকলের দরজার মধ্যে দিয়ে উড়ে গেল। হ্যারি তাকে কখনও এতো খুশি দেখেনি।
উউউউউউহ, দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করো, বলল সে। বিভৎস!
ওরা শুনল, দরজার তালাটা সরে গেল এবং হারমিওন বেরিয়ে এলো, কাঁদছে, মাথার ওপর পোশাকটা দেয়া।
কি হলো? বলল রন অনিশ্চিতভাবে। তোমার কি এখনও মিলিসেন্ট-এর নাকটা রয়ে গেছে বা এরকম কিছু?
হারমিওন ওর পোশাকটা ফেলে দিল এবং রন পিছিয়ে সিঙ্কের কাছে চলে গেল।
ওর চেহারাটা কালো পশমে ঢাকা। চোখ জোড়া হলুদ হয়ে গছে এবং চুলের ভেতর থেকে লম্বা সূচালো কান বেরিয়ে রয়েছে।
ওটা একটা বি–বিড়ালের চুল ছিল! হাউ মাউ করে উঠল সে। মি মিলিসেন্ট বুলস্ট্রোডের নি–নিশ্চয়ই একটা বিড়াল আছে! এবং পে–পোশনটা জীবজন্তুতে রূপান্তরের জন্য ব্যবহার করা যায় না?
অহ, ওহ, বলল রন।
ভয়ানক কিছু একটা বলে তোমাকে টিজ করা হবে, আনন্দে বলল মার্টল।
ঠিক আছে, হারমিওন, বলল হ্যারি তাড়াতাড়ি। তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাব। মাদাম পমফ্রে কখনই বেশি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন না…।
বাথরুম ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্যে হারমিওনকে অনেকক্ষণ বোঝাতে হয়েছে। ওদের যাওয়ার পথে মোনিং মার্টল দ্রুত বেগে চলতে চলতে প্রাণখোলা অট্টহাসি দিতে দিতে গেল।
দাঁড়াও সবাই জানুক যে তোমার একটা লেজ গজিয়েছে!