১১. দ্য ডুয়েলিং ক্লাব
রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠল হ্যারি, শীতের সূর্যালোকে জ্বলছে ডর্মিটরি এবং হাতের হাড় আবার গজিয়েছে তবে বেশ শক্ত হয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি উঠে বসল। কলিনের বিছানার দিকে তাকাল, কিন্তু, হ্যারি আগের দিন যে পর্দার মধ্যে কাপড় বদলেছিল সেরকম পর্দা দিয়ে আড়াল করা ওটা। ওকে জেগে উঠতে দেখে মাদাম পমফ্রে এগিয়ে এলেন ব্যস্ত সমস্তভাবে ব্রেকফাস্টের ট্র হাতে। এসে হ্যারির হাত এবং আঙুল ভজ এবং বাঁকা করতে শুরু করলেন।
সব ঠিকঠাক আছে, বললেন তিনি। বাঁ হাত দিয়ে আগোছালোভাবে পরিজ খাচ্ছে হ্যারি। খাওয়া শেষ হলে তুমি যেতে পারো।
যথাসম্ভব দ্রুত কাপড় পরে নিল হ্যারি এবং রওয়ানা হয়ে গেল গ্রিফিল্ডর টাওয়ারের উদ্দেশে। রন এবং হারমিওনকে কলিন এবং ডবির কথা বলতে ইবে। কিন্তু ওরা ওখানে ছিল না। ওদেরকে খোঁজার জন্যে বেরিয়ে পড়ল হ্যারি, ভাবছে ওরা কোথায় থাকতে পারে। একটু মনে কষ্টও পেয়েছে সে, ও হাড় ফিরে পেল কি পেল না সে ব্যাপারে ওদের কোন আগ্রহ নেই।
হ্যারি যখন লাইব্রেরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছে তখন ওটার ভেতর থেকে পার্সি উইসলি বেরিয়ে এলো, এর আগের সাক্ষাতের চেয়ে তার মুড অনেক ভাল।
ওহ, হ্যালো, হ্যারি, সে বলল। সাংঘাতিক রকমের ভাল উড়েছ গতকাল, সত্যি সাংঘাতিক ভালো। হাউজ কাপের জন্য গ্রিফিল্ডর হাউজ এগিয়ে গেছে তোমরা পঞ্চাশ পয়েন্ট অর্জন করেছ!
তুমি কি রন আর হারমনিকে দেখেছ? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।
না, আমি দেখিনি, বলল পার্সি, ওর হাসি মিলিয়ে যাচ্ছে। আশা করি রন এখন অন্য আরেক মেয়ের বাথরুমে…
হ্যারি একটা কাষ্ঠ হাসি দিল, পার্সির দৃষ্টির বাইরে চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল, তারপর সোজা মোনিং মার্টলের বাথরুমের উদ্দেশে রওয়ানা হালা। রন আর হারমিওন ওখানে আবার কেন থাকবে এর পেছনে কোন যুক্তি খুঁজে পেল না সে। নিশ্চিত হয়ে নিল ফিলচ বা কোন প্রিফেক্ট ধারে কাছে নেই, দরজাটা খুলল এবং একটা তালা মারা কিউবিকলের ভেতর থেকে ওদের কণ্ঠস্বর ভেসে আসছে শুনতে পেলো হ্যারি।
আমি, বলল সে, দরজাটা বন্ধ করতে করতে। একটা ধাতব শব্দ, পানি ছিটানো এবং হাঁপানোর শব্দ ভেসে এলো কিউবি-এর ভেতর থেকে। হারমিওনের চোখ দুটো উঁকি দিচ্ছে চাবির ফুটো দিয়ে দেখতে পেল হ্যারি।
হ্যারি! বলল সে। তুমি আমাদের এমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। ভেতরে এসো তোমার হাতের অবস্থা কেমন?
চমৎকার, বলল হ্যারি, কিউবিকল-এর ভেতরে চাপাচাপি করে টুকে। একটা পুরনো লোহার বড় কড়াই টয়লেটে বসানো এবং রিমের নিচে পট পট আওয়াজ শুনে বোঝা গেল এর নিচে আগুন জ্বালানো হয়েছে। জাদুর প্রভাবে পোর্টেবল, ওয়াটারপ্রুফ আগুন জ্বালানো হচ্ছে হারমিওনের বৈশিষ্ট্য।
আমরা তোমাকে দেখতে যেতাম, কিন্তু পলিজুস পোশনটা শুরু করে দেয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি আমরা, ব্যাখ্যা করল রন, হ্যারি তখন অতিকষ্টে কিউবিকলের দরজাটায় তালা মারছে। আমরা ঠিক করেছি এটাই লুকনোর সবচেয়ে নিরাপদ যায়গা।
হ্যারি ওদের কলিন সম্পর্কে বলতে চেষ্টা করল, কিন্তু হারমিওন ওকে বাধা দিল। আমরা এরই মধ্যে জেনে গেছি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল যখন সকালে প্রফেসর ফ্লিটউইককে বলছিলেন। সে জন্যে আমরা ঠিক করেছি আমাদের এখনই শুরু করে দেয়া দরকার
যত তাড়াতাড়ি আমরা ম্যালফয়ের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারব তত ভাল, কর্কশ কন্ঠে বলল রন। তুমি জান আমি কি ভাবছি? কিডি ম্যাচটার ব্যাপারে সে এমন বদ মেজাজে ছিল যে, সে এর শোধ তুলেছে কলিনের ওপর।
এ ছাড়া আরো একটা ব্যাপার রয়েছে, বলল হ্যারি, লক্ষ্য করছে হারমিওন গেড়ো–ঘাসের আঁটি ছিঁড়ে ছিঁড়ে পোশনে ফেলছে। মধ্যরাতে ডব্বি আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।
বিস্ময়ে রন আর হারমিওন মুখ তুলে তাকাল। ডব্বি ওকে যা যা বলেছে অথবা যা বলেনি তার সবটাই হ্যারি ওদেরকে বলল। রন আর হারমিওন সবটাই শুনল বিস্ময়ে ওদের মুখ হা।
দ্য চেম্বার অফ সিক্রেটস আগেও খোলা হয়েছে? জিজ্ঞাসা কলল হরমিন।
এবার বোঝা গেল, বলল রন বিজয়ীর কন্ঠে। লুসিয়াস ম্যালফয় নিশ্চয়ই চেম্বার খুলেছিল এখানে যখন ছাত্র ছিল, এখন সে তার প্রিয় পুত্র ড্র্যাকোকে বলে দিয়েছে কি ভাবে ওটা খুলতে হয়। এটাই সম্ভব। ভালো হতো যদি ডব্বি তোমাকে বলত ওটার ভেতরে কি ধরনের দানব রয়েছে। আমি জানতে চাই ওটা স্কুলের চারদিকে নিঃশব্দে চোরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে আর কেউ কেন খেয়াল করছে না?
হয়তো ওটা নিজেকে অদৃশ্য করতে পারে, বলল হারমিওন, লোহার কড়াইয়ে জেঁক নাড়তে নাড়তে। অথবা হয়তো ওটা ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে, ভান করতে পারে একটা বর্মের অথবা অন্য কিছুর। আমি শ্যামেলিয়ন পিশাচ সম্পর্কে পড়েছি…
তুমি খুব বেশি পড়ো হারমিওন, বলল রন, জো৬কগুলির উপর মরা ফিতা পাখাগুলি ঢালতে ঢালতে। ফিতা–পাখার খালি ব্যাগটা মুচড়ে ও ঘুরে হ্যারির দিকে তাকাল।
তাহলে ডব্বি আমাদেরকে ট্রেন পেতে বাধা দিয়েছিল এবং তোমার হাত ভেঙেছে… মাখা নাড়ল ও। কি জান হ্যারি? ও যদি তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা বন্ধ না করে তবে, একদিন তোমাকে মেরেই ফেলবে।
সোমবার সকালের মধ্যেই সারা স্কুলে রটে গেল, কলিন ক্রিভি আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালে। গুজব আর সন্দেহে হঠাৎ করেই বাতাস ভারী হয়ে গেল। প্রথম বর্ষীয়রা এখন একত্রে গ্রুপে গ্রুপে ঘোরে, যেন একাকী থাকলে তাদেরকেও আক্রমণ করা হবে।
জিনি উইসলি চার্মস ক্লাসে কলিন ক্রিভির পাশে বসে, তার এখন বিক্ষিপ্ত অবস্থা, কিন্তু হ্যারির ধারণা ফ্রেড আর জর্জ ওকে ভুল পথে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। নিজের গায়ে পশম বা ওই জাতীয় কিছু চড়িয়ে একজনের পর একজন ওরা হয়তো কোন মুর্তির পেছন থেকে ওর দিকে লাফিয়ে পড়ত। তারা তখনই থামল যখন পার্সি, ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে বলল ও মিসেস উইসলির কাছে লিখে জানাবে যে জিনি দুঃস্বপ্ন দেখছে।
ইতোমধ্যে, শিক্ষকদের চোখের আড়ালে বান এবং অন্যান্য শাপ বা কালো জাদুর প্রভাব খেকে আত্মরক্ষা করতে পারে এমন জিনিষপত্রের রমরমা ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে স্কুলে। কিসের বিপদ তার : কারণ সে তো বিশুদ্ধ রক্ত এবং এই কারণে আক্রান্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই–ছাত্ররা তাকে এ কথা বলার আগেই নেভিল লংবটম কিনে ফেলল ইয়া বড় এক দুর্গন্ধযুক্ত সবুজ পেঁয়াজ, রক্তবর্গের চোখা এক ক্রিস্টাল আর গোলাপের পঁচা লেজ।
ওরা প্রথমে ফিলচকে আক্রমণ করেছে, বলল নেভিল, ওর গোল মুখে আতঙ্কগ্রস্তের ছাপ, এবং সবাই জানে আমি প্রায় স্কুইব।
***
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথামাফিক প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ক্রিস্টমাসে যারা স্কুলে থাকবে তাদের নাম সংগ্রহ করছেন। হ্যারি, রন এবং হারমিওন তালিকায় স্বাক্ষর করল; ওরা শুনেছে যে ম্যালফয়ও থাকছে, এটা ওদের কাছে খুব সন্দেহজনক বলে মনে হলো। ছুটির সময়টা উপযুক্ত হবে পলিজুস পোশন। ব্যবহার করে ওর মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্যে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, পোশন তৈরি মাত্র অর্ধেক হয়েছে। এখনও তাদের বাইকৰ্ণ শিং এবং রুম্যাং চামড়া সংগ্রহ করা হয়নি। এবং একমাত্র যে যায়গাটিতে ওরা এসব পেতে পারে সেটা হচ্ছে স্নেইপের নিজস্ব সংগ্রহ। মনে মনে হ্যারি ভেবেছে চুরি করতে গিয়ে স্নেইপের হাতে ধরা পড়ার চেয়ে সে বরং থিরিনের উপকথা–দানবের মুখোমুখি হবে।
আমাদের যেটা দরকার হবে, তা হচ্ছে সেইপের মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে দিতে হবে, বলল হারমিওন সংক্ষেপে, বৃহস্পতিবারের ডাবল পোশন ক্লাস নিকটে আসতেই, তারপর আমাদের একজন স্নেইপের অফিসে চুপি চুপি ঢুকে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সংগ্রহ করতে পারবে।
হ্যারি আর রন নার্ভাস, ওর দিকে তাকাল।
আমি ভাবছি আসল চুরিটা আমি করলেই ভাল, বলে চলল হারমিওন, যেন–কিছুই হয়নি কঠে। নতুন কোন সমস্যা তৈরি করলে তোমাদের দুজনকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হবে, কিন্তু আমার রেকর্ড ক্লিন। তোমাদের শুধু এমন একটা বিশৃংখলা তৈরি করতে হবে যেন শেইপ অন্তত মিনিট পাঁচেকের মতো ব্যস্ত থাকেন।
ক্ষীণ হাসল হ্যারি। স্নেইপের ক্লাসে ইচ্ছাক্রিতভাবে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা আর ঘুমন্ত ড্রাগনের চোখে খোঁচা দেয়া সমান নিরাপদ।
ভূগর্ভস্থ একটা বড় কারা প্রকোষ্ঠে সাধারনত পোশন ক্লাস হয়ে থাকে। বৃহস্পতিবারের ক্লাসটাও চলতে থাকল ঠিক ঠাক যেভাবে চলে। কাঠের ডেস্কগুলোর মাঝে মাঝে কুড়িটা লোহার বড় কড়াইয়ে জ্বাল দেয়া হচ্ছে, ডেস্কগুলোর ওপর পিতলের নিক্তি এবং বিভিন্ন উপাদানের পাত্র। ধোয়ার মধ্যে দিয়ে ঘুর ঘুর করছে স্নেইপ, যেন শিকার ধরার ইচ্ছা, খিটখিটে বদমেজাজী মন্তব্য করছেন গ্রিফিল্ডরদের কাজ সম্পর্কে, আর সেই সব সমর্থন করে বিদ্রূপ করছে স্লিথারিনরা। স্নেইপের প্রিয় ছাত্র ম্যালফয়ের মাছের মতো ফোলা চঞ্চল চোখ দুটি ঘুরছে রন আর হ্যারির ওপর। হ্যারি জানে এর প্রতিজবাব দিতে যদি যায় তবে অন্যায় শব্দটি উচ্চারণের চেয়ে দ্রুততর গতিতে ওদেরকে শাস্তি দেয় হবে।
হ্যারির সোয়েলিং সলুশন অনেক বেশি পাতলা হয়ে গেছে, কিন্তু তার মনোযোগ তো রয়েছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। সে হারমিওনের ইঙ্গিতের জন্য অপেক্ষা করছিল, ওর পানি পানি পোশনের দিকে চেয়ে মেইল বিপ করল বলা যায় সেটাও শুনল না হ্যারি। স্নেইপ ঘুরে নেভিলের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন তাকে হেনস্তা করার জন্যে, হারমিওন মাথা নাড়ল হ্যারির চোখে চোখ রেখে।
চোখের পলকে হ্যারি ওর লোহার কড়াইয়ের পেছনে মাথা লুকিয়ে পড়ল, পকেট থেকে বের করে আন ফ্রেডের ফিলিস্টার আতশবাজি, ওর জাদুদণ্ড দিয়ে দ্রুত ওটাকে খোঁচা দিল। আতশবাজিটা হিস হিস ফুত ফুত শুরু করল। জানে, মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় আছে হাতে, হ্যারি সোজা হয়ে বসল, লক্ষ্য স্থির করল এবং ওটা বাতাসে ছুঁড়ে দিল; টার্গেটের উপরই পড়ল ওটা, একেবারে গোয়েলের লোহার কড়াইয়ে।
বিস্ফোরিত হলো গোয়েলের পোশন, পুরো ক্লাসকে যেন গোসল করিয়ে দিল। গায়ে সোয়েলিং পোশন পড়তেই তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে উঠল সবাই। ম্যালফয়ের পড়েছে পুরো মুখে এবং ওর নাকটা বেলুনের মতো ফুলে উঠেছে এরই মধ্যে; গোঁয়েল দিশেহারার মতো এদিক ওদিক করছে, ওর হাত চোখের ওপর, চোখ দুটো ফুলে ডিনার প্লেটের সাইজের হয়ে গেছে। স্নেইপ ক্লাসে শৃংখলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, আসলে কি ঘটেছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছেন। এই হৈ হট্টগালের মধ্যে হারমিওন চুপিসারে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।
চুপ করো! চুপ করো! স্নেইপ গর্জন করে উঠলেন। যাদের গায়ে পোশন লেগেছে তারা এখানে এসো বিস্ফীতকরণ প্রতিষেধক দেবো। যখন বের করতে পারব কে এটা করল…।
ম্যালফয়কে তরমুজের মতো নাকের ভারে মাথা ঝুঁকিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে দেখে হ্যারি হাসি পেলেও ও চেষ্টা করল না হাসার। প্রায় অর্ধেক ক্লাসই স্নেইপের ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল, কেউ মুগুড়ের মতো হাতের ভারে নুজ্জ, কেউ কথা বলতে পারছে না ঠোঁট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে বলে। এরই মধ্যে হ্যারি দেখল হারমিওন ফিরে এলো, তার পোশাকের সামনের দিকটা ফুলে রয়েছে।
সবাই এক ঢোক করে প্রতিষেধক খেল এবং যাবতীয় ফোলা কমে গেলো, মেইপ গেলো গোয়েলের কড়াইয়ের কাছে এবং আতশবাজির কালো বাঁকাচোরা অংশটা তুলে আনল। হঠাৎ নেমে এলো নিরবতা।
যদি আমি কখনো বের করতে পারি কে এটা করেছে, ফিস ফিস করে বলল স্নোইপ, আমি এটা নিশ্চিত করবো যে তাকে যেন স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
হ্যারি চেহারায় এমন একটা অভিব্যক্তি আনল যেন দেখে মনে হয় সে হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। স্নেইপ সরাসরি ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে এবং দশ মিনিট পর যখন ঘণ্টা বাজল, তখন এর চেয়ে আনন্দের আর কিছুই হতে পারত না।
ও জানত যে আমিই করেছি, হ্যারি বলল রন আর হারমিওনকে, ওরা দ্রুত ফিরে যাচ্ছে মোনিং মার্টল-এর বাথরুমে। আমি বলতে পারি।
নতুন উপাদানগুলো কড়াইয়ে ছুঁড়ে ফেলল হারমিওন এবং অতি ব্যাকুলতার সঙ্গে নাড়তে লাগল।
পক্ষকালের মধ্যেই পোশনটা তৈরি হয়ে যাবে, আনন্দের সঙ্গে বলল সে।
স্নেইপ প্রমাণ করতে পারবে না যে তুমিই ওটা করেছ, হ্যারিকে আশ্বাস দিয়ে বলল রন। তাহলে ও কি করতে পারে?
স্নেইপকে তো জানি, খারাপ একটা কিছু করতেই পারে, বলল হ্যারি। ওদের পোশনটা ফুটছে, বুদবুদ উঠছে। ‘
***
এক সপ্তাহ পর, হ্যারি, রন এবং হারমিওন এনট্রেন্স হলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, নোটিশ বোর্ডের সামনে একটা জটলা দেখল ওরা। এইমাত্র পিন দিয়ে লাগানো একটা পার্চমেন্ট পড়ছে ওরা অনোযোগ দিয়ে। সিমাস ফিনিশাণ এবং ডিন থমাস ওদেরকে ডাকল, ওদের উত্তেজিত দেখাচ্ছে।
ওরা একটা দুয়েলিং ক্লাব খুলছে! বলল সিমাস। আজ রাতেই প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে! আমার কোন আপত্তি নেই ডুয়েলিং প্রশিক্ষণে, বলা তো যায় না এক সময় হয়তো এটা কাজে লেগে যেতে পারে…
কি! তুমি কি মনে করো স্লিথারিনের দানব ভুয়েল লড়তে পারে? বলল রন, তবে সেও আগ্রহ নিয়ে নোটিসটা পড়ল।
কাজে লাগতে পারে, বলল ও হ্যারি আর হারমিওনের উদ্দেশে ডিনারে যেতে যেতে।আমরা কি যাব?
হ্যারি আর হারমিওন দুজনেই এটার পক্ষে ছিল, সুতারাং রাত আটটায় ওরা তাড়াতাড়ি গ্রেট হলে উপস্থিত হলো। লম্বা ডাইনিং টেবিলগুলো অদৃশ্য হয়ে গেছে, একদিকের দেয়ালের সঙ্গে একটা সোনালি মঞ্চ দেখা যাচ্ছে, মাথার ওপর ভাসছে হাজার মোমবাতি যার আলোয় পুরো মধুটা আলোকিত। সিলিংটা আবার মখমলি কালো এবং স্কুলের বেশির ভাগটাই মনে হয় ওর নিচে ঠেসে বসে আছে, সকলেই তাদের জাদুদণ্ড নিয়ে বসে আছে, উত্তেজিত।
ভাবছি আমাদের শেখাবে কে? বলল হারমিওন, বকবক করা ভীড়ের মধ্যে সেঁধিয়ে। আমাকে একজন বলল ফ্লিটউইক যখন তরুণ ছিলেন তখন জুয়েলিং চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, হয়তো তিনিই হবেন।
যতক্ষণ পর্যন্ত না– কেবল শুরু করেছিল জারি কিন্তু কথাটা শেষ না করেই একটা গোঙানি বের হলো ওর মুখ থেকে : গিল্ডরয় লকহার্ট হেঁটে ঢুকছে স্টেজের ভেতর, চমৎকার উজ্জ্বল দেখাচ্ছে গভীর উৎকৃষ্ট পোশাকে এবং সঙ্গে রয়েছেন, আর কেউ নয় স্নেইপ, যথারীতি কালো পোশাকে।
হাত নেড়ে সবাইকে চুপ করিয়ে দিল লকহার্ট, ডাকল নবাইকে, চারদিকে জড়ো হও, চাদিকে জড়ো হও! সবাই কি আমাকে দেখতে পাচ্ছো? সবাই কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো? এক্সেলেন্ট!
এখন শোন, প্রফেসর ডাম্বলডোর আমাকে এই ছোট্ট ডুয়েলিং ক্লাস শুরু করবার জন্যে অনুমতি দিয়েছেন, তোমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে, যদি কখনও তোমাদের প্রয়োজন হয় আত্মরক্ষা করবার, যেমন আমি করেছি অসংখ্যবার পুরোটা জানতে হলে আমার লেখাগুলো পড়ো।
পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি, আমার সহকারি প্রফেসর স্নেইপ, বললেন লকহার্ট, মুখে একটা প্রশস্ত হাসি। তিনি বলেছেন যে ভুয়েলিং সম্পর্কে তিনিও সামান্য কিছু জানেন এবং শুরুর আগে একটা সংক্ষিপ্ত প্রদর্শনীর ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করতে সম্মত হয়েছেন। এখন, আমি চাই না তোমরা তরুণরা উদ্বিগ্ন হও–আমি তাকে শেষ করে দিলেও তোমরা তোমাদের পোশন শিক্ষককে ঠিকই ফিরে পাবে, অতএব ভয় পাবে না!!
হ্যারির কানে মৃদু স্বরে বলল রন,ওরা যদি পরস্পরকে শেষ করে দেয় তাহলে আরো ভালো হতো না। সেইপের উপরের ঠোঁট বেঁকে আছে। হ্যারি অবাক হয়ে ভাবছে লকহার্ট এখনও হাসছে কেন; স্নেইপ যদি ওর দিকে এই দৃষ্টিতে দেখে তাহলে সে সমস্ত শক্তি দিয়ে উল্টোদিকে দৌড় লাগাবে।
লকহার্ট এবং স্নেইপ পরস্পরের মুখোমুখি হলো এবং বো করল; অন্তত লকহার্ট করলেন, হাত অনেকখানি মোচড়ানোর মধ্য দিয়ে, অন্যদিকে মেইপ বিরক্তিকরভাবে মাথা ঝাঁকিয়েছে।এরপর তারা তাদের জাদুদণ্ড সামনে তুলে ধরল ঠিক তলোয়ারের মতো।
এই যে তোমরা দেখতে পাচ্ছে। আমরা আমাদের জাদুদণ্ড ধরে আছি, গ্রহণযোগ্য অবস্থানে, নিচুপ দর্শকদের বললেন লকহার্ট। তিন গোণার সাথে সাথে আমরা আমাদের প্রথম জাদু প্রয়োগ করবো। অবশ্য আমাদের কেউই মেরে ফেলার জন্যে জাদু প্রয়োগ করবেন না।
আমি এ ব্যাপারে বাজি ধরবো না, হ্যারি বিড় বিড় করল, ও দেখছে সেইপের দন্তব্যদন।
এক–দুই–তিন
দুজনেই তাদের দণ্ড উপরে তুলল এবং কাঁধের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনল। স্নেইপ চিৎকার করল: এক্সপেলিআর্মাস! টকটকে লাল বর্ণের আলোর একটা ঝলকানি দেখা গেল এবং লকহার্ট উড়ে গিয়ে স্টেজের পেছন দিকে গেলো, দেয়ালে আছাড় খেলো, হাত পা ছড়িয়ে মঞ্চের মেঝেতে পড়ল।
ম্যালফয় এবং কয়েকজন স্লিথারিন আনন্দে হর্ষধ্বনি করল। হারমিওন দাঁড়িয়ে গেছে, যেন নাচছে। আঙুলের ফাঁক দিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চিৎকার করে উঠল,কি মনে হচ্ছে উনি ঠিক হয়ে যাবেন?
কে পরোয়া করে? এক সঙ্গে বলল হ্যারি আর রন।
টলোমলো পায়ে লকহার্ট উঠে দাঁড়াচ্ছেন। তাঁর হাটটা পড়ে গেছে এবং ঢেউ খেলানো চুল এখন সোজা খাড়া হয়ে আছে।
বেশ, ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বললেন তিনি, দেখলে তো এই হচ্ছে ডুয়েলিং!খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মঞ্চে ফিরে এলেন তিনি। ওটা ছিল একটা নিরস্ত্রীকরণ জাদু, যেমন তোমরা দেখলে, আমি আমার জাদুদণ্ডটি হারিয়েছি আহ, এই যে, জিদুদস্তুটা ওর হাত থেকে নিয়ে ধন্যবাদ মিস ব্রাউন। হ্যাঁ, ওদেরকে এটা দেখানো চমৎকার আইডিয়া ছিল প্রফেসর মেইপ, কিন্তু আপনি আমার মন্তব্যে যদি কিছু মনে না করেন, আপনি কি করতে যাচ্ছিলেন এটা খুবই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল। অমি যদি আপনাকে থামাতে চাইতাম, সেটা খুবই সহজেই করা যেত। যাই হোক, আমি ভেবেছি ওদেরকে দেখতে দেয়াই শিক্ষণীয় হবে…
স্নেইপকে খুনীর মতো দেখাচ্ছিল। সম্ভবত লকহার্টও সেটা লক্ষ্য করেছেন, উনি বললেন, প্রদর্শনী অনেক হয়েছে! আমি এখন তোমাদের মধ্যে এসে তোমাদেরকে জোড়ায় জোড়ায় দাঁড় করিয়ে দেব। প্রফেসর স্নেইপ আপনি যদি আমাকে সাহায্য করতে চান…।
ওরা ছাত্রদের মধ্যে চলে এলেন, পার্টনার ঠিক করে দিচ্ছেন। লকহার্ট নেভিলকে জাস্টিন ফিঞ্চ ফ্লেচলির সঙ্গে দিলেন, কিন্তু হ্যারি আর রনের কাছে স্নেইপ প্রথমে পৌঁছালো।
আমার মনে হয় ড্রিম টিমকে বিচ্ছিন্ন করার সময় এসে গেছে, বক্রোক্তি করল স্নেইপ। উইসলি, তোমার পার্টনার হবে ফিনিগান। পটা–
হ্যারি অটোম্যাটিকালি হারমিওনের দিকে এগিয়ে গেল।
আমার মনে হয় না, বললেন স্নেইপ, শীতল একটা হাসি দিয়ে। মিস্টার ম্যালফয় এদিকে এসো। দেখা যাক বিখ্যাত মিস্টার পটারের সঙ্গে তোমার জমে কেমন। এবং তুমি মিস গ্রেঞ্জার–তুমি মিস বুলস্ট্রোডকে পার্টনার বানাতে পারো।
সদর্পে এগিয়ে এলো ম্যালফয়, হাসছে নির্বোধের মতো আত্মতৃপ্তির হাসি। ওর পেছনে একজন স্লিথারিন মেয়ে হাঁটছিল, যাকে দেখে হ্যারির হলিডেজ উইথ হ্যাগস-এ দেখা একটি ছবির কথা মনে পড়ল। মেয়েটি বিশালদেহী এবং চৌকো এবং তার ভারী চোয়াল আগ্রাসীর মতো বাইরে বেরিয়ে রয়েছে। হারমিওন ওকে দেখে দূর্বলভাবে হাসল কিন্তু মেয়েটি প্রতি উত্তর দিল না।
পার্টনারের মুখোমুখি হও! বললেন লকহার্ট, আবার মঞ্চে ফিরে গেছেন। এবং বো করো!
হ্যারি আর ম্যালফয় ওদের মাথা নেড়েছে কি নাড়েনি, পরস্পরের ওপর থেকে চোখ সরায়নি।
জাদুদণ্ড প্রস্তুত। চিৎকার করলেন লকহার্ট। যখন আমি তিন পর্যন্ত গুণব, তখন তোমার পার্টনারকে দণ্ডহীন করবার জন্যে জাদু প্রয়োগ করবে–শুধুমাত্র দণ্ডহীন করবার জন্যে–আমরা কোন দুর্ঘটনা চাই না। এক, দুই…তিন…
হ্যারি ওর জাদুদণ্ড কাঁধের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে আনল, কিন্তু, দুই কলার সঙ্গে সঙ্গে আগেই ম্যালফয় শুরু করে দিয়েছে; ওর জাদুর আঘাত হ্যারিকে এত জোরে লাগল যে ওর মনে হলো কেউ সসপ্যান দিয়ে মাথায় মেরেছে। হোঁচট খেলো সে, কিন্তু তারপর যেন সব কিছুই কাজ করছিল, এবং কোন সময় নষ্ট না করে হ্যারি ওর জাদুদণ্ডটা ম্যালফয়ের দিকে তাক করে চিৎকার করে উঠল, রিটাসে!
রূপালি আলোর একটা ঝলক ম্যালফয়ের পেটে আঘাত হানল এবং বেঁকে গেল সে, হাঁপানী রোগীর মতো শ্বাস নিচ্ছে, বুকে শব্দ হচ্ছে শন শন করে।
আমি বলেছি অস্ত্রহীন শুধু! সতর্ক হয়ে চিৎকার উঠলেন লকহার্ট যুদ্ধমানদের উদ্দেশে। হাটু ভেঙ্গে বসে পড়েছে ম্যলফয়; হ্যারি ওর উপর টিকলিং জাদু প্রয়োগ করেছে এবং হাসার জন্যে যে সামান্য নড়বে সেটাও সে পারছে না। হ্যারি একটু নিরস্ত হলো, একটা অস্পষ্ট অনুভূতি হলো ওর, মেঝেতে পড়ে আছে ম্যালফয় এই সময় ওর উপর জাদুর প্রয়োগ, আনস্পোর্টিং হবে, কিন্তু ওর এই ধারণা ভুল ছিল। শ্বাস নেয়ার জন্যে চেষ্টা করতেই করতেই ম্যালফয় ওর জাদুদটা তাক করল হ্যারির হাঁটু লক্ষ্য করে, দম বন্ধ হয়ে এলো, তারানতালেগ্রা! এবং পর মুহূর্তে হ্যারির পী কাঁপতে শুরু করল তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এক ধরনের অতি দ্রুত পদক্ষেপের মতো।
থামো! থামো! চেঁচিয়ে উঠলেন লকহার্ট, কিন্তু এরই মধ্যে স্নেইপ এগিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলেন।
ফাইনিট ইনকানটাটেম। জোরে বললেন স্নেইপ: হ্যারির পায়ের নাচ বন্ধ হয়ে গেলো। ম্যালফয়ও হাসি বন্ধ করল। এবং ওরা দুজনেই মুখ তুলে তাকাতে পারল।
পুরো দৃশ্যটার ওপর সবুজাভ ধোয়ার অচ্ছন্নতা। নেভিল এবং জাস্টিন দুজনেই মেঝেতে পড়ে রয়েছে, হাঁপাচ্ছে: রন ধরে আছে ফ্যাকাশে–মুখো সিমসিকে, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে ওর ভাঙ্গা জাদুদণ্ডের কীর্তির জন্যে, কিন্তু হারমিওন এবং মিলিসেন্ট বুলট্রো তখনও লড়ছে; ওরা দুজনে হেডলকে আঁটকে রয়েছে এবং হারমিওন ব্যথায় ফোপাচ্ছে। দুজনেরই জাদুদণ্ডই মেঝেতে পড়ে রয়েছে, যেন পরিত্যক্ত। সামনে ঝাঁপিয়ে পড়ে হ্যারি মিলিসেকে টেনে বিচ্ছিন্ন করল। কাজটা কঠিন; ও হ্যারির চেয়ে দেহে অনেক বড়।
ডিয়ার, ডিয়ার, বললেন লকহার্ট, ভিড়ের মধ্যে দিয়ে পথ করে যেতে যেতে, ডুয়েলের পরিণাম দেখতে দেখতে। উঠে দাঁড়াও ম্যাকমিলান… সাবধানে, মিস ফসেট… জোরে চিমটি কাট, এক সেকেন্ডে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে, বুট…
আমার মনে হয় তার চেয়ে তোমাদেরকে বৈরি সম্মোহন রোখার পদ্ধতি শেখানোই ভাল হবে, বললেন লকহার্ট, হলের মাঝখানে বিচলিত হয়ে দাঁড়িয়ে। তিনি একবার স্নেইপের দিকে তাকালেন, ওর কালো চোখ জ্বল জ্বল করছে, দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলেন স্নেইপ। এক জোড়া ভলন্টিয়ার লাগবে লংটম এবং ফিঞ্চ ফ্লেচলি, তোমরা দুজন হলে কেমন হয়?
একটা খারাপ আইডিয়া, প্রফেসর লকহার্ট, বললেন মেইপ, পরশ্রীকাতর বড় একটা উড়ন্ত বাদুড়ের মতো। সবচেয়ে সহজ সম্মোহন দিয়ে লংবটম বিপর্যয় করতে পারে। ফিঞ্চ ফ্লেচলির যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে সেটা আমাদের ম্যাচ বাক্সে করে হাসপাতালে পাঠাতে হবে। নেভিলের গোল গোলাপী মুখটা আরো গোলাপী হয়ে হেলো। ম্যালফয় এবং পটারের জোড়া হলে কেমন হয়? বললেন স্নেইপ বাকা হেসে।
চমৎকার আইডিয়া! বললেন লকহার্ট, হ্যারি আর ম্যালফয়কে হলের মাঝখানে আহ্বান করার ভঙ্গি করে। মাঝখান থেকে সরে গিয়ে অন্যরা যায়গা করে দিল।
হ্যারি শোন, বললেন লকহার্ট, ড্র্যাকো যখন তোমার দিকে ওর জাদুদ তাক করবে, তুমি এরকম করবে।
তিনি নিজের জাদণ্ড তুললেন, এবং জটিল নড়াচড়া করে একটা অ্যাকশন করার চেষ্টা করলেন এবং নিজের জাদুদণ্ডটা ফেলে দিলেন। উপস–আমার জাদুদণ্ডটা একটু বেশি উত্তেজিত, বলে লকহার্টকে দ্রুত ওটা তুলে নিতে দেখে আত্মতৃপ্তির হাসি হাসলেন স্নেইপ।
ম্যালফয়ের কাছে চলে এলেন স্নেইপ, ঝুঁকলেন এবং ওর কানে কানে কিছু বললেন ফিস ফিস করে। ম্যালফয়ও আত্মতৃপ্তির হাসি হাসল। নার্ভাস হ্যারি লকহাটের দিকে তাকিয়ে বলল, প্রফেসর, আপনি কি আমাকে বৈরি সম্মোহন রোখার পদ্ধতি আরেকবার দেখাতে পারেন?
ভয় পেয়েছে? বিড় বিড় করে বলল ম্যালফয়, যেন লকহার্ট শুনতে না পায়।
তুমি ইচ্ছেমতো ভাবতে পারো, বলল হ্যারির মুখের এক কোণ দিয়ে।
লকহার্ট হ্যারির কাঁধ জড়িয়ে ধরল। আমি যা করেছি ঠিক তাই করো, হ্যারি।
কী, আমার জাদুদটা ফেলে দিব?
কিন্তু লকহার্ট শুনছে না ওর কথা।
তিন–দুই-এক–শুরু। চিৎকার করলেন লকহার্ট।
ম্যালফয় দ্রুত ওর জাদুদণ্ড তুলে চেঁচিয়ে উঠল, সারপেনসোরশিয়া!
ওর জাদুদণ্ডের মাথাটা বিস্ফোরিত হলো। হ্যারি দেখছে, ভীতিবিহ্বল, একটা লম্বা কালো সাপ ওটা থেকে বেরিয়ে এলা, ওদের মাঝখানে ধপাস করে মেঝেতে পড়ল এবং খাড়া হয়ে ছোবল মারতে উদ্যত। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেল, পেছনে সরে গেলো সবাই, মাঝখানটা ফাঁকা হয়ে গেল।
নড়ো না, পটার, অলসভাবে বলল স্নেইপ, দৃশ্যটা উপভোগ করছেন তিনি, হ্যারি পঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে, ক্ষিপ্ত সাপটার চোখে চোখ রেখে। আমি ওটাকে দূর করছি…
আমাকে করতে দিন! চিৎকার করলেন লকহার্ট। জাদুদণ্ডটা সাপের দিকে তাক করলেন লকহার্ট, খুব জোরে শব্দ হলো; সাপটা অদৃশ্য হওয়া দূরে থাকুক, শূন্যে দশ ফিট লাফিয়ে উঠল এবং আবার মেঝেতে পড়ল ধপাস করে। আরো ক্ষিপ্ত, হিস হিস করছে, পিছলে এগিয়ে গেলো সোজা জাস্টিন ফিঞ্চ–ফ্রেচলির দিকে এবং আবার খাড়া হয়ে ছোবল মারতে উদ্যত হলো, দাঁত বের করে।
হ্যারি নিশ্চিত নয়, কি কারণে সে কাজটি করেছিল। সে যে এটা করবে স্থির করেছিল সে সম্পর্কেও সচেতন নয়। সে শুধু জানত যে তার পা তাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল যেন পায়ের নিচে চাকা লাগানো রয়েছে, এবং সে সাপটার উদ্দেশে জোরে চিৎকার করে উঠেছিল, ওকে ছেড়ে দাও! এবং অলৌকিকভাবে–ব্যাখ্যার অতীত–সাপটা মেঝের ওপর পড়ে গেল, বাগানে পানি দেয়ার মোটা কালো পাইপের মতোই নিরীহ। ওটার চোখ এখন হ্যারির ওপর। হ্যারির মনে হলো যেন ওর ভেতর থেকে কে যেন সব ভয় শুষে নিয়েছে। সে জানে এখন সাপটা কাউকে আক্রমণ করবে না, যদিও তার জানার কোন ব্যাখ্যা নেই তার কাছে।
সে জাস্টিনের দিকে তাকাল, মুখে হাসি, আশা করছে জাস্টিনকে দুশ্চিন্তামুক্ত দেখবে, অথবা বিমূঢ়, অথবা কৃতজ্ঞ–কিন্তু নিশ্চয়ই রেগে গেছে বা ভয় পেয়েছে জাস্টিন এটা সে আশা করেনি।
কি ভেবেছ কি নিয়ে খেলা করছ? সে চিৎকার করে উঠল এবং হ্যারি কিছু বলার আগেই, জাস্টিন ঘুরে দাঁড়াল এবং সবেগে হল থেকে বেরিয়ে গেল।
স্নেইপ এগিয়ে এলো, জাদুদণ্ড নাড়ল, অদশ্য হয়ে গেল সাপটা কালো ধোয়ার ছোট্ট একটু ঝলক হয়ে। স্নেইপও তাকিয়ে রয়েছেন হ্যারির দিকে অপ্রত্যাশিত দৃষ্টি: চতুর, সতর্ক এবং হিসেবি দৃষ্টি এবং হ্যারি পছন্দ করেনি সে দৃষ্টি। সে ক্ষীণভাবে সচেতন যে চারদিকে অশুভ একটা গুঞ্জন উঠছে। এরপর অনুভব করল কে যেন তার কাপড় ধরে টানছে।
চলে এসো, শুনতে পেলো রনের স্বর। চলো-এসো…
রন ওকে হলের বাইরে নিয়ে এলো, হারমিএনও তাড়াতাড়ি চলে এলো পাশে। দরজার মধ্য দিয়ে যখন তারা যাচ্ছে তখন ছাত্র ছাত্রীরা দুপাশে সরে দাঁড়াল এমনভাবে যেন কি একটা জিনিস ধরতে পাচ্ছে। যে ঘটনা ঘটছে তার কোন যোগসূত্র হ্যারির জানা নেই কিন্তু না রন, না হারমিওম ওকে টেনে গ্রিফিন্ডারের শূন্য কমন রুমে ওকে না নেয়া পর্যন্তু কিছুই ব্যাখ্যা করল না। রন হ্যারিকে একটা আরাম কেদারায় ঠেলে বসালো এবং বলল, তুমি একজন পার্সেলমাউথ। এ কুখটা আগে আমাদের বলোনি কেন?
আমি কি? বলল হ্যারি।
পার্সেলমাউথ! বলল রন। তুমি সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারে!
আমি জানি, বলল হ্যারি। ওটা ছিল মাত্র দ্বিতীয়বার, যে আমি অমন কথা বলেছি। দুর্ঘটনাই বলতে পারো, একবার চিড়িয়াখানায় আমার কাজিন ডাড়লির পেছনে আমি একটা বোয়া কন্সট্রিক্টর লেলিয়ে দিয়েছিলাম–সে এক লম্বা কাহিনী–কিন্তু ওটা আমাকে বলছিল যে সে কখনও ব্রাজিল দেখেনি। এবং আমি এক রকম ওটাকে মুক্তই করে দিয়েছি, যদিও আমি ওরকম কিছু করতে চাইনি। আমি যে জাদুকর সেটা জানবার আগের ব্যাপার ছিল সেটা…
একটা বোয়া কনসট্রিক্ট তোমাকে বলেছে যে সে ব্রাজিল দেখেনি? ক্ষীণ কণ্ঠে পুনরাবৃত্তি করল রন।
তাতে কি? বলল হ্যারি। বাজি ধরে বলতে পারি এখানে অনেক লোকই এরকম করতে পারে।
ওহ না তারা পারে না, বলল রন। এটা কোন সাধারণ গুণ নয়। হ্যারি এটা খারাপ।
কি খারাপ? বলল হ্যারি, রীতিমত রাগ হচ্ছে ওর। সকলের হয়েছেটা কি? শোন, যদি আমি ওই সাপটাকে না বলতাম জাস্টিনকে আক্রমণ করবে না
ওহ ঠিক তাই বলেছ তুমি?
কি বলতে চাচ্ছ তুমি? তুমি তো সেখানে ছিলে… তুমি শুনেছ আমার কথা।
আমি শুনেছি তুমি পারসেলটাঙ বলতে শুনেছি, বলল রন, সাপের ভাষা। তুমি যে কোন কিছু বলে থাকতে পারো। জাস্টিন যে ভয় পেয়ে গিয়েছিল তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছিল তুমি যেন সাপটাকে কিছু একটা করবার জন্যে বলছ বা এই রকমেরই কিছু। সাপটাকে দেখে গা ছম ছম করছিল, সেটা তুমি জান।
হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল হ্যারি।
আমি ভিন্ন ভাষায় কথা বলেছি? কিন্তু–আমি বুঝতে পারিনি। আমি একটি ভাষা জানি, এই কথাটা না জেনে, আমি কি করে ওই ভাষায় কথা বলতে পারি?
রন ওর মাথা দোলাল। ওকে আর হারমিওনকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ একজন মারা গেছে। হ্যারি বুঝতে পারছে না ভয়ানক হওয়ার কি আছে।
তোমরা কি আমাকে বলতে চাও একটা নোংরা সাপের ছোবল থেকে জাস্টিনের মাথাটা রক্ষা করার মধ্যে অন্যায়টা কোথায়? বলল সে। যতক্ষণ পর্যন্ত না জাস্টিনকে মাথাহীনদের দলে যোগ না দিতে হলে, আমি কিভাবে ওকে রক্ষা করেছি তাতে কি আসে যায়?
এসে যায়? অবশেষে বলল হারমিওন চাপা স্বরে, কারণ, সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারা হচ্ছে সেই কারণ যার জন্যে সালাজার স্লিথারিন ছিলেন বিখ্যাত। সে কারণেই স্লিথারিন হাউজের প্রতীক হচ্ছে সরিসৃপ।
হ্যারির মুখ হা হয়ে গেল।
ঠিক তাই, বলল রন। এবং এখন পুরো স্কুলই ভাবতে শুরু করবে তুমি হচ্ছে তার প্র.প্র.প্র–প্রপৌত্র বা এরকম কিছু…
কিন্তু আমি তা নই, বলল হ্যারি, এমন একটা ভয়ে যে তার ব্যাখ্যা তার জানা নেই।
সেটা প্রমান করা তোমার জন্যে মুশকিল হবে, বলল হারমিওন। তিনি বাস করতেন প্রায় এক হাজার বছর আগে আমরা যা জানি তা হচ্ছে তুমি হতে পারো।
***
রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেগে রইল হ্যারি। ওর বিছানার চারপাশের ঝোলানো কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল তুষারপাত শুরু হয়েছে, দেখল হ্যারি, টাওয়ারের জানালার পাশ দিয়ে পড়ছে তুষার, আর ভাবছে।
আসলেও সে কি সালাজার স্লিথারিনের উত্তর পুরুষ হতে পারে? সে তার বাবার পরিবার সম্পর্কে আসলেই কিছু জানে না। ডার্সলিরা সব সময়ই তার জাদুকর আত্মীয়দের সম্পর্কে সব ধরনের প্রশ্ন নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।
নীরবে, হ্যারি চেষ্টা করল পারসেলটাং-এ কথা বলতে। শব্দগুলো আসছে না। মনে হচ্ছে এর জন্যে তাকে হয়তো সাপের মুখোমুখি হতে হবে।
কিন্তু আমি তো গ্রিফিল্ডরে, হ্যারি ভাল। আমি যদি সিথারিন হতাম তবে নিশ্চয়ই বাছাই–হ্যাটটা আমাকে এখানে পাঠাতো না…
আহ, তার মস্তিষ্কের মধ্যে ছোট্ট একটি বিপজ্জনক স্বর বলল। কিন্তু বাছাই–হ্যাটটা তো তোমাকে স্নিথারিনেই পাঠাতে চেয়েছিল, তোমার কি মনে নেই?
হ্যারি পাশ ফিরল। কালকে হার্বলজিতে জাস্টিনের সঙ্গে দেখা করে তাকে বুঝিয়ে বলবে যে আসলে সে সাপটাকে নিবৃত্ত করছিল, প্ররোচিত নয়; যেটা (ক্রুদ্ধ হ্যারি ভাবল বালিশে উপর্যুপরি ঘুষি মারতে মারতে) যে কোন বোকাও বুঝতে পারত।
***
পরদিন সকাল, রাতে শুরু হওয়া তুষারপাত প্রবল তুষার ঝড়ে পরিণত হয়েছে। টার্মের শেষ হার্বলজি ক্লাসটা বাতিল করা হলো: প্রফেসর স্প্রাউট এখন ম্যানড্রেকস গুলোকে মোজা এবং স্কার্ফ পরাবেন, কাজটায় বেশ কৌশলের প্রয়োজন হয়, এ জন্যে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন না তিনি, বিশেষ করে এই সময় ম্যানড্রেকসগুলোর দ্রুত বেড়ে ওঠা খুব জরুরী, মিসেস নরিস এবং কলিন ক্রিভিকে সম্মোহন থেকে বাঁচিয়ে তোলার জন্যে।
গ্রিফিল্ডর কমন রুমের আগুনের পাশে বসে এসব ভেবেই ছটফট করছে হ্যারি। অন্যদিকে কুন আর হারমিওন ক্লাস বাতিলের সময়টা ব্যবহার করছে জাদু–দাবা খেলে।
ইশ্বরের দোহাই, হ্যারি, ধৈৰ্য্যচ্যুতি ঘটেছে হারমিওনের, রনের একটা হাতি ওর একটা ঘোড়াকে ফেলে দিয়ে বোর্ডের বাইরে টেনে নিয়ে গেছে। এটা যদি তোমার কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে, যাও জাস্টিনকে গিয়ে খুঁজে বের করো।
হ্যারি উঠল এবং ছবির গর্তটা দিয়ে বের হলো, জাস্টিনকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে।
দিনের বেলায় যেরকম অন্ধকার খাকে, এখন ক্যাসল-এর প্রতিটি জানালায় ঘন ধূসর তুষারের আস্তরের জন্যে তার চেয়ে অনেক বেশি অন্ধকার। কাঁপছে হ্যারি, ক্লাসরুমগুলো পার হলো, ক্লাস চলছে ওখানে, ভেতরে কি হচ্ছে দেখেও নিল এক ঝলক। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল কোন একজনের উদ্দেশে চেঁচাচ্ছেন, যে, তার বন্ধুকে বাজারে পরিণত করেছে। ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখার প্রলোভন অনেক কষ্টে দমন করলো হ্যারি, এগিয়ে গেল এই ভেবে যে, এই সময়টা জাস্টিনও কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। সবচেয়ে আগে লাইব্রেরীতে ওকে খোজার সিদ্ধাস্ত নিল।
যাদের হারবলজি ক্লাসে থাকার কথা ছিল তেমন একটা হাফপাফ গ্রুপ সত্যিই বসে আছে লাইব্রেরীর একেবারে পেছনে। কিন্তু মনে হচ্ছে না ওরা কোন কাজ করছে। বুক শেলফে বইয়ের সারির ফাঁক দিয়ে হ্যারি দেখতে পাচ্ছে ওদের মাখাগুলো এক সাথে জড়ো হয়ে আছে এবং মনে হচ্ছে গভীর মনোযোগে ওরা কোনো আলোচনায় লিপ্ত। গুদের মধ্যে জাস্টিন রয়েছে কি না, সেটা ও যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। ও হেঁটে যাচ্ছিল ওদের দিকেই, এমন সময় ওর কানে ওদের একটা কথা এলো, শোনার জন্যে দাঁড়ালো হ্যারি, অদৃশ্য বিভাগে লুকিয়ে রয়েছে সে।
সুতরাং যে ভাবেই হোক, বলল একটা শক্ত–পোক্ত ছেলে। আমি জাস্টিনকে বলেছি আমাদের ডর্মিটরিতে লুকিয়ে থাকতে। মানে, যদি পটার তাকে পরবর্তী শিকারের জন্য ঠিক করে থাকে, তবে কিছুদিনের জন্য তার অত সামনে আসা উচিৎ নয়। অবশ্যই, যেদিন সে পটারকে বলেছে যে, সে মাগল জাত সেদিন থেকেই এমন একটা কিছু হবে বলে আশঙ্কা করেছে জাস্টিন। জাস্টিন ওকে বলেছে যে সে ইটন-এ চলে যাবে। এই ধরনের বিষয় নিয়ে কেউ শ্রিম্যারিনের উত্তরাধিকারের সঙ্গে আলাপ করে না, করে? বিশেষ করে সে যদি মুক্ত সুরতে থাকে।
আর্নি, তুমি নিশ্চিতভাবে ভাবছ যে পটারই? উদ্বেগের সাথে বলল ব্লন্ড পিগটেল মাথার মেয়েটি।
হান্নাহ, শক্ত ছেলেটি বলল গাম্ভীর্যের সাথে, সে একজন পারসেলমাউথ। সবাই জানে কালোজাদুকর হওয়ার সেটাই চিহ্ন। তুমি কখনও কোন ভাল মানুষের কথা শুনেছ যে সাপের সঙ্গে কথা বলতে পারে? ওরা খোদ স্লিথারিনকে সরিসৃপ–জিহ্বা বলত।
ভারী রকমের গুঞ্জন শোনা গেল। আর্নি বলেই চলেছে, মনে আছে দেয়ালে কি লেখা ছিল? উত্তরাধিকারের শত্রুরা সাবধান! ফিলচ-এর সঙ্গে কি একটা ব্যাপার হয়েছিল পটারের। পরের ঘটনাটি আমাদের, ফিলচের বেড়াল আক্রান্ত হলো। ওই প্রথম বর্ষের ছাত্রটি কিডিং ম্যাচে কিডিচ খেলায় পটারকে বিরক্ত করছিল, ও যখন মাটিতে পড়েছিল তখন ওর ছবি তুলছিল। পরের ঘটনা আমরা জানি ক্রিভি আক্রান্ত হলো।
অথচ ওকে কত ভাল মনে হয়, বলল হান্নাহ অনির্দিষ্টভাবে। এবং ভাল কথা, সেই সে ব্যক্তি ইউ নো হু–কে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ও তো এতো খারাপ হতে পারে না, পারে?
আর্নি তার স্বর রহস্যজনকভাবে নামিয়ে আনল, হাফলোফরা সব মাথা কাছে নিয়ে গেলো, এবং হ্যারিও আরো কাছে গেলো ভাল করে শুনবার আশায়।
আসলে কেউ জানে না ও কিভাবে ইউ নো হু–র আক্রমণ থেকে বেঁচেছে। আমি বলতে চাচ্ছি, ঘটনাটা যখন ঘটেছিল তখন ও ছিল শিশু। ওকে নিশ্চয়ই ছোট ছোট টুকরায় বিস্ফোরিত করে দেয়া হয়েছিল। শুধু মাত্র একজন ক্ষমতাধর কালো–জাদুকরের পক্ষেই অমন একটা শাপ থেকে বাঁচা সম্ভব ছিল। ওর স্বর আরো নামিয়ে দিল আর্নি, এমন যে সেটা ফিসফিসের পর্যায়ে চলে এসেছে, এবং বলল, প্রথমত এই জন্যেই হয়তো ইউ নো হু তাকে মারতেও চেয়েছিল। চায়নি যে আরেকজন ডার্ক লর্ড তার প্রতিযোগী হোক। আমি ভাবছি আর কি কি ক্ষমতা পটার লুকিয়ে রেখেছে।
আর শুনতে পেলো না হ্যারি। জোরে গলা খাকারি দিয়ে ও বুকশেলফের পেছন থেকে বেরিয়ে এলো। যদি অত ক্রুদ্ধ না হতো তবে সহজেই বুঝতে পারতো, যে দৃশ্যটা ওকে স্বাগত জানিয়েছে সেটা বড় বিচিত্র। প্রত্যেকটি হাফ লপাফ ওর দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রয়েছে যে ওকে দেখে সম্মোহিত হয়ে গেছে, এবং আর্নির চেহারা থেকে রং সরে যাচ্ছে।
হ্যালো, বলল হ্যারি। আমি জাস্টিন ফিঞ্চ–ফ্লেচলিকে খুঁজছি।
হাফলপাফদের ভয়ানক ভীতিটা কনফার্ম হয়ে গেলো। ভয় পেয়ে সকলেই আর্নির দিকে তাকালো।
ওর সাথে তোমার কি প্রয়োজন? কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল আর্নি।
আমি ওকে বলতে চাই ডুয়েলিং ক্লাবে সাপটা নিয়ে আসলে কি ঘটেছিল, বলল ইয়ারি।
নিজের সাদা ঠোঁট কামড়ে ধরল আর্নি তারপর বলল, আমরা সবাই সেখানে ছিলাম। আমরা দেখেছি কি হয়েছে।
তাহলে তোমরা দেখেছ যে, ওটার সঙ্গে আমি কথা বলার পর, সাপটা পিছিয়ে পড়েছিল? বলল হ্যারি।
আমি শুধু দেখেছি, বলল আর্নি একগুঁয়ের মতো, যদিও বলার সময় কাপছিল সে, তুমি পারসেলটাং-এ কথা বলছিলে এবং সাপটাকে জাস্টিনের দিকে লেলিয়ে দিয়েছিলে।
আমি ওটাকে জাস্টিনের পেছনে লেলিয়ে দিইনি! বলল হ্যারি, রাগে ওর গলার স্বর কাঁপছে। ওটা তাকে স্পর্শ পর্যন্ত করেনি।
খুব অল্পেতে বেঁচে গেছে ও, বলল আর্নি। এবং তোমার যদি আরো কিছু করার চিন্তা থাকে, দ্রুত যোগ করল সে, তোমাকে বলা উচিৎ, আমার নয় প্রজন্মের খবর নিতে পারো তারা সবাই ডাইনী আর জাদুকর এবং আমার রক্ত আর সকলের মতোই আঁটি, সুতারাং
তোমার কি ধরনের রক্ত রয়েছে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই! ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল হ্যারি। আমি কেন মাগল–জাতদের আক্রমণ করতে যাব?
আমি শুনেছি তুমি যে মাগলদের সঙ্গে বাস করো তাদের ঘৃণা করো, তাড়াতাড়ি বলল আর্নি।
ডার্সলিদের সঙ্গে বাস করলে ওদের ঘৃণা না করা সম্ভব নয়, বলল হ্যারি, আমি দেখতে চাই তুমি একবার চেষ্টা করে দেখ।
ঘুরে ঝড়ের মতো লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেল হ্যারি, মাদাম পিন্স দেখল ওকে তিরস্কারের দৃষ্টিতে, উনি মিনা করা একটি স্পেলবুকের কভার পলিশ করছিলেন।
রাগে করিডোর ধরে অন্ধের মতো অনিশ্চিতভাবে এগিয়ে গেল সে, কোথায় যাচ্ছে খেয়াল নেই। ফল হলো এই যে, সে সোজা হেঁটে গিয়ে ধাক্কা খেল নিরেট এবং বড় কিছুর সঙ্গে, পেছন দিকে মেঝেতে পড়ে গেল হ্যারি।
উপরের দিকে তাকিয়ে বলল হ্যারি, ওহ! হ্যালো, হ্যাগ্রিড।
তুষার ঢাকা উলের বালাক্লাভায় হ্যাগ্রিডের মুখটা প্রায় সম্পূর্ণটাই ঢাকা, কিন্তু সম্ভবত আর কেউই হতেও পারে না সে ছাড়া। কারণ ওভারকোটে ঢাকা শরীরটা দিয়ে করিডোরের প্রায় সম্পূর্ণটাই জুড়ে রেখেছে। গ্লাভস পরা ওর হাত থেকে একটা মরা মুরগী বুলিছে।
আচ্ছা, হ্যারি? বলল সে, কথা বলার সুবিধের জন্যে বালাক্লাভাটা মুখ থেকে নামিয়ে, তুমি ক্লাসে নেই কেন?
বাতিল করা হয়েছে, উঠতে উঠতে বলল হ্যারি। তুমি এখানে কি করছ?
হাতে ধরা মরা মুরগীটা দেখালো হ্যাগ্রিড।
দ্বিতীয়টা মারা হলো এই টার্মে, সে ব্যাখ্যা করল। হয় শেয়াল না হয় তো রক্ত চোষা কোনো জুজুর কাজ, এবং মুরগীর খাঁচার চারদিক মন্ত্র দিয়ে সুরক্ষা করার জন্যে আমাকে হেডমাস্টারের অনুমতি নিতে হবে।
সে তার তুষারাবৃত মোটা ভ্রূর নিচ থেকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে হ্যারিকে পর্যবেক্ষণ করল।
তুমি নিশ্চিত যে তুমি ভাল আছো। তোমাকে খুব ক্ষিপ্ত এবং বিরক্ত দেখাচ্ছে।
আর্নি এবং অন্যান্য হাফলপাফরা ওর সম্পর্কে যা বলছিল, হ্যারি সেই সব হ্যাগ্রিডের কাছে বলতে পাল না।
ও কিছু নয়, বলল সে। আমার যাওয়া উচিৎ, হ্যাগ্রিড, পরের ক্লাস হচ্ছে, ট্রান্সফিগিউরেশন-এর এবং বই নিয়ে আসতে হবে।
হেঁটে চলে গেল হ্যারি, ওর মনে তখনও আর্নির কথাগুলো গেথে রয়েছে।
যখন থেকে জাস্টিন হ্যারিকে জানিয়েছে যে সে মাগল–জাত তখন থেকে সে এ রকমই কিছু একটা ঘটার আশংকা করছিল,.
সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠে হ্যারি ঘুরে আরেকটি কারভোরে এলো, জায়গাটা একেবারেই অন্ধকার; কাঁচ ভাঙ্গা একটা জানালা দিয়ে আসছে জোর হিমশীতল বাতাস, ওটাই করিডোরের মশালটা নিভিয়ে দিয়েছে। করিডোর ধরে মাত্র অর্ধেক গিয়েছে হ্যারি, হোঁচট খেয়ে অধোমুখে পড়ে গেল সে, মেঝেতে কি যেন একটা পড়ে রয়েছে।
ঘুরে চোখ সরু করে পড়ে থাকা জিনিসটা দেখার চেষ্টা করল সে। দেখে, মনে হলো ওর পাকস্থলীটা গলে গেছে।
জাস্টিন ফিঞ্চ–ফ্লেচলি পড়ে রয়েছে, ঠাণ্ডা এবং শক্ত, চেহারায় শক-এর দৃষ্টির ছাপ যেন জমে আছে, চোখ তাকিয়ে আছে অপলক সিলিং-এর দিকে, হ্যারির দেখা সবচেয়ে অদ্ভুত দৃশ্য।
প্রায় মাথা–হীন নিক, মুক্তার মতো সাদা এবং স্বচ্ছ নয় আর, বরং কালো এবং ধোঁয়াটে, স্থির হয়ে ভাসছে আড়াআড়িভাবে, মেঝের ছয় ইঞ্চির উপরে, ওর মাথার অর্ধেকটা নেই, এবং তার চেহারায় ঠিক জাস্টিনের মতোই শক-এর অভিব্যক্তি।
উঠে দাঁড়ালো হ্যারি, এত শ্বাস পড়ছে ওর পাজরার খাঁচায় হৃৎপিণ্ডটা ড্রামের মতো বাড়ি খাচ্ছে। খালি করিডোরটা একি ওদিক তাকাল ও, দেখল এক সারি মাকড়সা দ্রুত বুক হেঁটে দেহগুলোর কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একমাত্র শব্দ আসছে দুইদিকের ক্লাস রুম থেকে শিক্ষকদের ভোলা গলার স্বর।
সে দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারত, এবং এবং কেউ জানতেও পারত না যে সে সেখানে ছিল। কিন্তু সে ওদেরকে ওখানে ওভাবে ফেলে রেখে যেতে পারে না…ওর সাহায্য দরকার। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এ সবে তার কোন হাত নেই?
সে ওখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভীত–সন্ত্রস্ত, ওর ডান পাশের একটা দরজা খুলে গেল সশব্দে। পিভূস দ্য পল্টারজিস্ট ছুটে বেরিয়ে এলো দরজা দিয়ে।
আরে এ যে হ্যারি পটার! পট পট করে উঠল পিভুস, যাওয়ার সময় ধাক্কা লেগে হ্যারির চশমটা বাঁকা হয়ে গেল। কি করছ হ্যারি পটার? হ্যারি পটার অমন ওঁত পেতে রয়েছে কেন
মধ্য বাতাসে অর্ধেকটা ডিগবাজি খেয়ে থামল পিভ। উল্টো হয়ে, সে দেখল জাস্টিন এবং প্রায় মাথা–হীন নিক। ঘুরে সোজা হলো সে, জোরে নিঃশ্বাস টেনে ফুসফুস ভরে নিল এবং ওকে থামাবার আগেই চিৎকার করে উঠল;
আক্রমণ! আক্রমণ। আরেকটি আক্রমণ! কোনো মরণশীল বা ভূত কেউই নিরাপদ নয়! বাঁচতে হলে দৌড়াও! আক্রমঅঅঅণ!
ক্র্যাশ–ক্র্যাশ–ক্র্যাশ। করিডোরের দুপাশের একটার পর একটা দরজা খুলে যেতে লাগল এবং বন্যার মতো বেরিয়ে এলো মানুষ করিডোরে। কয়েকটা দীর্ঘ মুহূর্ত ধরে এমন বিশৃংখলা আর গোলমার হলো যে জাস্টিনকে প্রায় পায়ে মাড়ানোর দশা হৃয়েছিল এবং লোকজন প্রায়–মাধাহীন–নিকের ভুমিকা গ্রহণ করতে লাগল। হ্যারি দেখল দেয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে, শিক্ষকরা চিক্কার করছেন চুপ করার জন্যে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দৌড়ে এলেন, পিছু পিছু এলো তার গোটা ক্লাস, তার মধ্যে একজনের চুলে তখনও রয়েছে সাদা–কালো স্ট্রাইপ। প্রফেসর তার দণ্ড ব্যবহার করে বিকট এক শব্দ করলেন। নিরবতা ফিরে এলো। সবাইকে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। সবাই চলে যাওয়ায় যেই না জায়গাটা পরিষ্কার হয়েছে অমনি হাঁপাতে হাঁপাতে উপস্থিত হলো হাফলপাফের আর্নি।
হাতেনাতে ধরা পড়েছে! চিৎকার করল আর্নি, ওর চেহারা সম্পূর্ণ সাদা, নাটকীয়ভাবে আড়ল হ্যারির দিকে তাক করা।
এতেই হবে, ম্যাকমিলান! বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তীক্ষ্ণ কন্ঠে।
মাথার ওপর ওঠা নামা করছে পিভ, এখন দাঁত বের করে দুষ্টামির হাসি হাসছে, দৃশ্যটা পর্যবেক্ষণ করছে; পিস সবসময়ই গন্ডগোল পছন্দ করে। শিক্ষকরা যখন জাস্টিন আর নিকের ওপর ঝুঁকে দেখছে, তখন ও গান গেয়ে উঠলঃ
ওহপটার, তুমি পঁচা, ওহ কি করলে তুমি
তুমি মেরে ফেলছ ছাত্রদের, তুমি ভাবছ এটা মজার খেলা–
যথেষ্ট হয়েছে পিভস? ধমকে উঠলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, এবং পিভস সরে গেল পেছনে, হ্যারিকে জিহ্বা বের করে দেখিয়ে।
জাস্টিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন প্রফেসর ফ্লিটউইক এবং অ্যাস্ট্রনমি বিভাগের প্রফেসর সিনিস্ত্রা, কিন্তু প্রায়–মাথাহীন–নিককে নিয়ে কি করবে কেউ ভেবে পাচ্ছিল না। অবশেসে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল হালকা বাতাস থেকে একটা পাখা বানিয়ে আর্নিকে দিলেন ওটা দিয়ে বাতাস করে নিককে হালকাভাবে সিঁড়ির ওপর দিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে। আর্নি করল সেটা, নিককে কালো একটা নিরব হোভারক্র্যাফট-এর মতো বাতাস করে উড়িয়ে নিয়ে। এর ফলে সেখানে শুধু রয়ে গেলো হ্যারি আর প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।
এই পথে, পটার, বললেন তিনি।
প্রফেসর, সঙ্গে সঙ্গে বলল পটার,আমি কসম খেয়ে বলছি আমি করিনি
এটা এখন আমার হাতের বাইরে, পটার, প্রফেসরের কাঠখোট্টা জবাব।
নিরবে একটা মোড় ঘুরল ওরা এবং প্রফেসর থামলেন কুৎসিৎ দেখতে বিরাট একটা পাথরের গারগয়ল-এর সামনে।
মারবেট লেমন! বললেন তিনি। স্পষ্টত এটা একটা পাসওয়ার্ড, কারণ হঠাৎ গারগয়লটা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল, এবং লাফিয়ে একদিকে সরে গেলে এবং ওটার পেছনের দেয়াল দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলো। কি হতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে ভয়ে অস্থির হ্যারিও এসব দেখে অবাক না হয়ে পারল না। দেয়ালের পেছনে একটা ঘোরানো সিঁড়ি যেটা এসকেলেটারের মতো ধীরে ধীরে উপরে উঠছে। সে এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ওটার ভেতর পা রাখল, ভোতা শব্দ করে ওদের পেছনে দেয়ালটা বন্ধ হয়ে গেলো। ঘুরে ঘুরে উপরে উঠছে ওরা, উপরে এবং আরো উপরে, মাথা সামান্য ঘুরছে হ্যারির, অবশেষে সামনে একটা ওক কাঠের চকচকে দরজা দেখতে পেলো, প্রাচীন জীব গ্রিফনের আকৃতির নকার লাগানো দরজায়।
সে জানত কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এখানেই ডাম্বলডোর বাস করে।