হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দ্য রোগ ব্লাজার

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দ্য রোগ ব্লাজার

১০. দ্য রোগ ব্লাজার

পিক্সিগুলোর সর্বনাশা ঘটনার পর প্রফেসর লকহার্ট ক্লাসে আর কখনো জীবন্ত প্রাণী আনেননি। নিজের বই থেকে পড়ে শোনাতেন ক্লাসে, নাটকীয় ঘটনাগুলো মঞ্চস্থ করে দেখাতেন। এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে তিনি সাধারণত হ্যারিকে ডেকে নিতেন তাকে সাহায্য করার জন্য। এখন পর্যন্ত হ্যারি বাধ্য হয়েছে একজন সরল ট্রান্সসিলভ্যানিয়ান গ্রাম্য মানুষের ভূমিকায় অভিনয় করতে যাকে লকহার্ট একটি শাপ থেকে বাঁচিয়েছে, তাকে অভিনয় করতে, হয়েছে মাথায় সর্দি লাগা একজন ইয়েতির ভূমিকায় এবং একজন ভ্যাম্পায়ারের ভুমিকায় যে লকহার্টের ব্যবস্থার আগে লেটুস ছাড়া আর কিছুই খেতে পারত না।

হ্যারিকে সবলে টেনে নিয়ে ওদের ডিফেন্স এগেস্ট দ্য ডার্ক আর্টস ক্লাসে সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো, এবার সে অভিনয় করছে একটা পুরাণে বর্ণিত নেকড়েয় রূপান্তরিত মানব সন্তান বা ওয়ের–উফ এর ভূমিকায়। লকহার্টকে খুশি রাখার খুব জোরালো কারণ না থাকলে এবার হ্যারি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করত।

জোরে ডাক ছাড়তে হবে হ্যারি–ঠিক এরকম-এবং তোমরা যদি বিশ্বাস করো, আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওটার ওপর-এই ভাবে সজোরে ছুঁড়ে মারলাম মেঝেতে-এইভাবে একহাতে ওকে ঠেসে ধরলাম–অন্য হাতে আমার জাদুদণ্ডটা ওর গলায় ঢুকিয়ে দিলাম-এর পর আমার সর্বশক্তি নিয়োগ করে সাংঘাতিক রকমের জটিল হোমরফাস চার্ম বিদ্যাটা প্রয়োগ করলাম বেচারা একটা মর্মান্তিক গোঙানী ছাড়ল–হা, হ্যারি এর চেয়েও জোরে বেশ নেকড়েটার গায়ের লোমগুলো অদৃশ্য হয়ে গেলো বড় বড় দাঁতগুলো সংকুচিত হয়ে গেলো–সে আবার মানুষ হয়ে গেলো। সহজ, কিন্তু কার্যকর এবং আরেকটি গ্রাম আমাকে মনে রাখবে তাদের হিরো হিসেবে, যে ওদেরকে ওয়ের–উলফের মাসিক ভীতি থেকে বাঁচিয়েছে।

ঘন্টা বাজল, লকহার্ট উঠে দাঁড়ালেন।

বাড়ির কাজ ওয়াগগা ওয়ের–উলফকে আমি যে পরাজিত করেছি তার ওপর একটা কবিতা লিখে আনবে! যার সবচেয়ে ভাল হবে তাকে ম্যাজিক্যাল মির সাইন করা একটি কপি দেয়া হবে!

ক্লাস থেকে সবাই বের হয়ে যেতে লাগল। হ্যারি আবার ফিরে গেল রুমের পেছনে, যেখানে র আর হারমিওন ওর জন্যে অপেক্ষা করছিল।

রেডি? আস্তে করে বলল হ্যারি।

সবাই যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো, বলল হারমিওন, নার্ভাস দেখাচ্ছে ওকে, বেশ…।

সে প্রফেসর লকহার্টের ডেস্কের কাছে গেল, হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরা এক টুকরো কাগজ, হ্যারি আর রন ঠিক তার পেছনে।

ইয়ে–প্রফেসর লকহার্ট? তোতলাচ্ছে হারমিওন। আমি লাইব্রেরী থেকে এই বইটা নিতে চাচ্ছি। এই ব্যাকগ্রাউন্ড পাঠের জন্য। হাতের কাগজটা মেলে এগিয়ে ধরল সে, হাত সামান্য কাঁপছে কিন্তু মুশকিল হলো বইটা লাইব্রেরীর সংরক্ষিত অংশে রয়েছে, এর জন্যে একজন শিক্ষকের স্বাক্ষর দরকার–আমি নিশ্চিত যে এ বইটা আপনার গ্যাডিং অ্যান্ড দ্য ঘোওস বইয়ে ধীরে–কাজ করে বিষ সম্পর্কে যা লিখেছেন সেটা বুঝতে সাহায্য করবে…

আহ, গ্যাডিং অ্যান্ড দ্য গোওলস! বললেন লকহার্ট, হারমিওনের হাত থেকে কাগজের টুকরাটা নিয়ে ওর দিকে প্রশস্ত একটা দিয়ে। সম্ভবত আমার সবচেয়ে প্রিয় বই। তোমার ভাল লেগেছে?

হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, বলল হারমিওন আগ্রহের সঙ্গে। কত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে, আপনি শেষেরটাকে যেভাবে চা–ছাকনি দিয়ে ফঁদে ফেলেছেন…

বেশ, আমি নিশ্চিত যে বছরের সেরা ছাত্রীটিকে একটু বাড়তি সাহায্য করবার জন্যে কেউ কিছু মনে করবে না, উষ্ণতার সঙ্গে বললেন লকহার্ট। ময়ুরের পাখার একটা বিরাট পালক বের করলেন প্রফেসর। হ্যাঁ, সুন্দর তাই না? রনের মুখের বিতৃষ্ণার অভিব্যক্তিকে ভুল বুঝে। সাধারণত এটাকে আমি বাঁচিয়ে রাখি বই স্বাক্ষর করার জন্যে।

কাগজের টুকরোটার মধ্যে ইয়া বড় একটা স্বাক্ষর করে ওটা ফিরিয়ে দিলেন তিনি হারমিওনের হাতে।

তাহলে হ্যারি, বললেন লকহার্ট, হারমিওন কাগজের টুকরোটা ভাঁজ করে কম্পিত হাতে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিল, আমার মনে হয় আগামীকাল মওশুমের প্রথম কিডি ম্যাচ? স্লিথারিনের বিরুদ্ধে গ্রিফিল্ডর, তাই না? শুনেছি তুমি একজন ভাল প্লেয়ার। আমি নিজেও একজন সিকার ছিলাম। আমাকে জাতীয় স্কেয়াডের জন্য চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু আমি আমার কালো শক্তিগুলিকে নির্মূল করার কাজে নিজেকে উৎসর্গ করা ভাল মনে করলাম। তারপরও যদি তুমি কখনও কোন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন বোধ কর, আমাকে বলতে দ্বিধা করো না। আমার চেয়ে কম সক্ষম প্লেয়ারদের কাছে আমার দক্ষতা পৌঁছে দেয়াই আমার কাছে আনন্দের।

গলায় একটা অস্পষ্ট শব্দ করে হ্যারি দ্রুত রান আর হারমিওনের পেছন পেছন বেরিয়ে গেল।

আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না, ও বলল, ওরা তিনজন যখন কাগজে দেয়া প্রফেসরের স্বাক্ষরটা দেখছে, আমরা কি বই চাইছি সেটাও একবার দেখলেন না।

এর কারণ তিনি একটা মস্তিষ্কবিহীন জীব, বলল রন,কিন্তু আমাদের অত কিছুতে দরকার কি আমাদের যা দরকার পেয়ে গেছি।

প্রফেসর কোন মস্তিষ্কবিহীন জীব নন, প্রায় দৌড়ে লাইব্রেরীর দিকে যেতে যেতে হারমিওন বলল তীক্ষ্ণ কণ্ঠে।

তোমাকে বছরের সেরা ছাত্রী বলেছে বলে…

লাইব্রেরীর দম আটকানো নীরবতার মধ্যে ও স্বর নামালো নিজেদের। মাদাম পিন্স, লাইব্রেরীয়ান, একহারা, বিরক্তিকর একজন মহিলা যাকে দেখলেই পুষ্টিহীন কোন শকুনীর কথা মনে হয়।

মোস্তে পেতে পোশস? সন্ধিগ্ধভাবে উচ্চারণ করল সে, হারমিওনের হাত থেকে কাগজের টুকরোটা নেয়ার চেষ্টা করল, কিন্তু হারমিওন ছাড়ল না।

ভাবছিলাম নিজের কাছে রাখতে পারি কি না, এক নিশ্বাসে বলে ফেলল সে।

ওহ, দিয়ে দাও না, হারমিওনের হাত থেকে ওটা নিয়ে মাদাম পিন্সের হাতে গুঁজে দিল। আমরা তোমাকে আরেকটা অটোগ্রাফ নিয়ে দেব। দীর্ঘস্থায়ী যদি হয় তবে লকহার্ট যে কোন কিছুতে স্বাক্ষর করবেন।

মাদাম পিন্স কাগজটা আলোর সামনে ধরল, যেন নকল কি না সে পরীক্ষা করছেন, কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করে গেল কাগজটা। দৃঢ় ও সদম্ভ পদক্ষেপে উঁচু শেলফগুলোর মাঝ দিয়ে হেঁটে গেলেন। কয়েক মিনিট পর ফিরে এলেন বিরাট একটা ঝুরঝুরে বই হাতে নিয়ে। হারমিওন যত্নের সঙ্গে ওটা ব্যাগে রাখল, এরপর লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে এলো ওরা। খেয়াল রাখল হাঁটাটা যেন জোরে হয়ে যায় এবং কোন অপরাধবোধ যেন না ধরা পড়ে ওদের মধ্যে।

পাঁচ মিনিট পর, আবার তারা মোনিং মার্টল-এর কাজ–করে–না বাথরুমে ঘন হয়ে বসল। রনের আপত্তি ছিল কিন্তু হারমিওন এই বলে সেটা নাকচ করে দেয় যে, ওদেরকে কেউ যদি খোঁজ করে তবে এটাই হবে সবচেয়ে শেষ যায়গা। সুতারাং এখানে তাদের গোপনীয়তা নিশ্চিত। মোনিং মার্টল ওর কিউবিকল-এ শব্দ করে কাঁদছিল, কিন্তু তাকে উপেক্ষা করল, এবং সেও ওদেরকে।

হারমিওন সতর্কতার সঙ্গে বইটা খুলল, তিনজন ঝুঁকল বইটার দাগওয়ালা পাতার ওপর। এক নজর দেখেই বোঝা গেল কেন এটা সংরক্ষিত অংশে রাখা হয়। কোন কোন পোশনের প্রভাব এমন ভীতিকর যে ভাবা যায় না, এবং কিছু রুচিহীন ছবি রয়েছে বইটাতে, যার মধ্যে রয়েছে এজন মানুষের নাড়িভুড়ি সব বেরিয়ে আছে এবং এক ডাইনী তার মাথা থেকে কয়েকটা অতিরিক্ত হাঁত বের করে নিয়েছে।

এই যে, পলিজুস পোশনের পাতাটা পেয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল হারমিওন। মানুষ অন্য মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার মাঝপথে রয়েছে এ ধরনের ছবি দিয়ে পাতাগুলো সাজানো। হ্যারি আন্তরিকভাবেই আশা করছিল এই সব মানুষের চেহারায় যে তীব্র যন্ত্রণার ছাপ রয়েছে সেটা শিল্পীর কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

পোশনের রেসিপিটা পড়তে পড়তে হারমিওন বলল আমি যতগুলি পোশন সম্পর্কে জানি এটাই সবচেয়ে জটিল। ফিতার মতো পাখাওয়ালা মাছি, সেঁক, বহমান আগাছা এবং গিট ওয়ালা ঘাস, উপাদানের তালিকা পড়তে পড়তে বিড় বিড় করে বলল সে। অবশ্য, ওগুলো সহজেই পাওয়া সম্ভব, ছাত্রদের স্টোর কাবার্ডে ওগুলো রয়েছে, আমরা শুধু নিয়ে নিলেই হলো। উউউহ, দেখো, বাইকর্নের শিং-এর পাউডার–জানি না এটা আবার কোথায় পাবো…বুম্যাং এর টুকরো টুকরো করা চামড়া ওটা পাওয়াও মুশকিল হবে এবং আমরা যে মানুষে রূপান্তরিত হতে চাই তার একটু ছোট্ট অংশ।

কি বলতে চাও? বলল রন তীক্ষ্ণ স্বরে। কি বোঝাতে চাচ্ছে, যে মানুষে রূপন্তরিত আমরা তাদের একটু টুকরা বলতে? আমি এমন কিছুই পান করবো যেটাতে ক্রেবস-এর পায়ের আঙুলের নখ রয়েছে…

হারমিওন বলে যেতে লাগল যেন কিছুই শুনতে পায়নি।

আমাদেরকে এখনও সেটা নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে, কারণ, ওই জিনিষগুলো আমরা সবার শেষে যোগ করব…।

রন, বাক্যহারা, হ্যারির দিকে ফিরল, ওর আবার আরেক সমস্যা।

তুমি কি বুঝতে পারছ হারমিওন, যে আমাদেরকে কতটা চুরি করতে হবে? বুম্যাঙের চামড়ার টুকরো, ওটা নিশ্চয়ই ছাত্রদের কাবার্ডে পাওয়া যায় না। আমরা কি করব, স্নেইপের ব্যাক্তিগত স্টোর ভাঙব? আমি জানি না এটা কোন ভাল পরিকল্পনা কি না…।

শব্দ করে বইটা বন্ধ করল হারমিওন।

বেশ, তোমরা দুজন যদি ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতে চাও, ঠিক আছে, বলল সে। ওর গালে উজ্জ্বল গোলাপী ছাপ পড়ল, চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে উজ্জ্বল। আমি নিয়ম ভাঙতে চাই না, সেটা তোমরা জান। আমার মনে একটা জটিল পোশন তৈরি কর চেয়ে মাগল–জাতদের হুমকি দেয়া অনেক বেশি খারাপ। কিন্তু তোমরা যদি বের করতে না চাও, ব্যক্তিটি ম্যালফয় কি না, আমি সোজী মাদাম পিন্সের কাছে গিয়ে বইটা ফেরত দিয়ে আসব…।

আমার কখনও মনে হয়নি যে সে দিনটিও দেখতে হবে, যেদিন তুমি আমাদেরকে নিয়ম ভাঙার জন্যে প্ররোচনা দেবে, বলল রন। বেশ, আমরা করবো, কিন্তু পায়ের আঙুলের নখ নয়, আচ্ছা?

হারমিওনকে খুশি হলো, আবার বইটা খুলল। ওটা বানাতে কতদিন লাগতে পারে? বলল হ্যারি।

বেশ, বহমান আগাছাগুলো পূর্ণচন্দ্রের সময় তুলতে হবে এবং ফিতার মতো পাখাগুলো একুশ দিন ধরে জ্বাল দিতে হবে…সব মিলিয়ে, হুউউ আমি বলব, তা মাস খানেক তো লাগবেই, যদি আমরা সবগুলো উপাদান পাই, তবে।

এক মাস? বলল রন। এর মধ্যে ম্যালফয়, স্কুলের অর্ধেক মাগল–জাতকে আক্রমণ করতে সক্ষম হবে! আবার বিপদজনকভাবে হারমিওনের চোখ সরু হয়ে এলো, তাই দ্রুত যোগ করল সে, কিন্তু আমাদের কাছে এটাই সবচেয়ে ভাল প্ল্যান, সুতারাং আমি বলছি পুরো দমে এগিয়ে চলো।

যাই হোক, হারমিওন যখন বাথরুম থেকে ওদের বেরিয়ে যাওয়াটা নিরাপদ কি না সেটা দেখছিল, তখন রন ফিস ফিস করে হ্যারিকে বলল, যদি কাল তুমি ম্যালফয়কে ওর ঝাড়ু থেকে ফেলে দিতে পারো তবে অনেক কম ঝামেলার ব্যাপার হবে।

.

শনিবার সকালে হ্যারি বেশ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে শুয়ে শুয়ে কিডিট ম্যাচটার কথা ভাবছিল। সে নার্ভাস হচ্ছে, বিশেষত এটা ভেবে যে যদি গ্রিফিন্ডর হেরে যায় তবে উড কি বলবে, তার ওপর সোনার দরে কেনা সবচেয়ে দ্রুতগামী ঝাড়ুতে চড়া টিমকে মোকাবেলা করার চিন্তাও তাকে নার্ভাস করছে। এর আগে ব্লিথারিন টিমকে হারাবার জন্য এমন মরিয়া ভাব তার কখনও ছিল না। পেটে মোচড় দিচ্ছে, প্রায় আধঘণ্টা অভাবে শুয়ে থাকার পর বিছানা ছাড়ল, কাপড় পরল, সকাল সকাল নাস্তা খেতে গেল, ওখানে গ্রিফিল্ডর টিমের অন্যদের পেলো, লম্বা শূন্য টেবিলটায় কাছাকাছি সববসে সবাই বেশ বিচলিত এবং বেশি কথা বলছে না কেউই।

এগারোটার দিকে পুরো স্কুলটাই কিডিচ স্টেডিয়ামের দিকে যেতে শুরু করল। দিনটা গুমোট, বাতাসে আবার বজ্রপাতের আভাসও রয়েছে। হ্যারি ড্রেসিং রুমে ঢোকার সময় রন আর হারমিওন দ্রুত গিয়ে ওকে শুভেচ্ছা জানাল। টকটকে লাল গ্রিফিন্ডর জার্সি পরে নিল টিমটা, তার উডের প্রাক–ম্যাচ প্রস্তুতিমূলক আলোচনা শোনার জন্যে বসল।

আমাদের চেয়ে স্লিথারিন টিমের কাছে অনেক ভাল ঝাড়ু রয়েছে, শুরু করল উড,এটা অস্বীকার করবার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের রয়েছে ঝাড়ুতে ওদের চেয়ে ভাল প্লেয়ার। আমরা ওদের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষণ নিয়েছি, আমরা সব মওশুমেই ঝাড়ু নিয়ে উড়েছি– খুব বেশি ঠিক, বিড় বিড় করল জর্জ উইসলি। অগাস্ট থেকে আমি ঠিক মতো শুকোতেই পারিনি। এবং আমরা ওদেরকে সেই দিনটার জন্যে আফসোস করতে বাধ্য করবো যেদিনে ওই নোংরা হতচ্ছাড়া ম্যালফয় ঝাড়ু কিনে দেয়ার বিনিময়ে টিমে ওর যায়গা কিনে নিয়েছে।

আবেগে উডের বুক উঠা নামা করছে, এবার সে হ্যারির দিকে ফিরল।

হ্যারি, এখন এটা তোমাকেই দেখাতে হবে যে একজন সিকারকে ধনী বাপ থাকার চেয়েও বেশি আরো কিছু থাকতে হবে। ম্যালফয়ের আগে ওই স্নিচটা তোমাকে পেতে হবে, নাহলে পাওয়ার চেষ্টায় মরতে হবে, হ্যারি আজ আমাদের জিততেই হবে, আমাদের হবেই।

তাহলে, কোন মানসিক চাপ নয়, হ্যারি, বলল ফ্রেড ওর দিকে চোখ টিপে।

পিচে পৌঁছাতেই বিরাট একটা গর্জন ওদের স্বাগত জানাল; বেশির ভাগই উল্লাসধ্বনি, কারণ ব্যাভেনক্ল এবং হাক্লপাফ হাউজ দুটো স্লিথারিনকে পরাজিত হতে দেখতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে, অবশ্য ক্লিথারিন হাউজের সমর্থকদের বুউউউ আর হিসস ধ্বনিও শোনা গেল সমানে। কিডিচ টিচার মাদাম হুচ, ফ্লিষ্ট এবং উডকে করমর্দন করতে বললেন, ওরা সেটা করল, তবে একে অনোর দিকে বিষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এবং হাতে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে।

আমার হুইলস-এর সঙ্গে সঙ্গে, বললেন মাদাম হুচ, তিন…দুই…এক… দর্শকদের বিরাট গর্জন ওদেরকে আকাশে ওঠার জন্যে, চৌদ্দজন প্লেয়ার সাঁই করে উঠে গেলো বিষণ্ণ আকাশটার দিকে। অন্য যে কারো চেয়ে হ্যারি আরো ওপরে উঠে গেলো, চোখ কুঁচকে স্নিচটাকে খুঁজছে।

ঠিক আছে, এই যে দাগমাথা? চিৎকার করে উঠল ম্যালফয় হ্যারির নিচে থেকে খাড়া উপরে আসছে তীরবেগে, যেন ওর নতুন ঝাড়ুটার স্পীড দেখাচ্ছে।

ওর জবাব দেয়া সময় হ্যারির ছিল না। ঠিক সেই মুহূর্তে একটা ভারী কালো ব্লাজার ওর দিকে ধেয়ে আসছে; লাগতে লাগতে এটাকে এড়াতে পারল হ্যারি শেষ মুহূর্তে, এমনভাবে যে ওটা ওর চুল ঘেষে গেছে।

প্রায় লেগেছিল আর কি, হ্যারি! বলল জর্জ, ওর পাশ দিয়ে গদা হাতে যেতে যেতে, ব্লাজারটাকে একজন শ্রিম্বারিনের দিকে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য। হ্যারি দেখল জর্জ ভীষণ জোরে মেরে ব্লাজারটাকে অ্যাড্রিয়ান পাসির দিকে পাঠিয়ে দিয়েছে, কিন্তু মধ্য বাতাসে ব্লাজারটা গতি পরিবর্তন করল এবং আবার তেড়ে গেল হ্যারির দিকেই।

প্রচণ্ড বেগ তৈরি করে হ্যারি পিচের আরেক প্রান্তে ছুটে গেলো। ও শুনতে পাচ্ছে ব্লাজারটা ওর পেছন পেছন ধেয়ে আসছে। কি হচ্ছে এ সব? এরকম তো কখনও হয় না, ব্লাজারটা শুধুমাত্র একজন প্লেয়ারকেই টার্গেট করে, ওটার কাজই হচ্ছে যত বেশি সম্ভব প্লেয়ারকে ফেলা যায় সে চেষ্টা করা…

অন্য প্রান্তে ফ্রেড উইসলি ব্লাজারের জন্যে অপেক্ষা করছে। ফ্রেড গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্লাজারটাকে আঘাত করতে উদ্যত হলে হ্যারি মাথা ঝোকালো; ব্লাজারটা ওর গতিপথ থেকে সজোরে সরে গেল।

এবার হয়েছে, খুশিতে চিৎকার করে উঠল ফ্রেড, কিন্তু না, ভুল হলো ওর; ব্লজারটা আবার হ্যারির দিকে তেড়ে এলে বাধ্য হলো সে ফুল স্পীডে আকাশের দিকে উড়ে যেতে।

শুরু হলো বৃষ্টি; বড় বড় ফোটী হ্যারির মুখে পড়ছে, ওর চশমার কাঁচের উপর ছড়িয়ে পড়ছে। এরপর খেলায় কি হচ্ছে সে কিছুই টের পেলো না, এক সময় ওর কানে এলে লী জর্ডানের স্বর, খেলার ধারা বিবরণীতে বলছে, স্লিথারিন এগিয়ে আছে ষাট শূন্যতে।

স্লিথারিনদের উন্নততর ঝুড়ি সন্দেহাতীতভাবে ওদের কাজ করছে, এর মধ্যে পাগলা ব্লাজারটা যারপরনাই চেষ্টা করছে হ্যারিকে উপর থেকে ফেলে দিতে। ফ্রেড এবং জর্জ ওর দুই দিকে এতো কাছে থেকে উড়ে বেড়াচ্ছে যে সে তাদের হাত ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না এবং স্নিচটা ধরা দূরে থাকুক ওটা দেখতেই পাচ্ছে না।

কেউ একজন ব্লাজারটাকে ট্যাম্পার করেছে, ঘোঁত ঘোত করল ফ্রেড, এটা আবার হ্যারিকে আক্রমণ করতে উদ্যত হলে সর্বশক্তি দিয়ে ওটাকে মারল সে।

আমাদের এখন সময় দরকার, বলল জর্জ, বলে একই সঙ্গে উডকে সিগনালও দিল হ্যারির নাকটা ব্লাজারের হাত থেকে রক্ষাও করল।

সিগনালটা বুঝতে পারল উড। মাদাম হুচ-এর হুইল বেজে উঠল এবং হ্যারি, ফ্রেড এবং জর্জ মাটির দিকে ডাইভ দিল, তখনও ওদের চেষ্টা করতে হলো পাগলা ব্লাজারটাকে এড়ানোর জন্য।

কি হচ্ছে, বিষয়টি কি? বলল উড, যখন গ্রিফিল্ডর টিম এক সাথে হওয়ার পর। অন্য দিকে দর্শকদের মধ্যে থেকে স্নিখারিনের সমর্থকরা বিদ্রূপ করছে। আমাদেরকে একেবারে শুইয়ে দিয়েছে। ফ্রেড, জর্জ, ওই ব্লাজারটা যখন অ্যাঞ্জেলিনাকে স্কোর করার সময় রুখে দিল কোথায় ছিলে তখন তোমরা দুজন?

আমরা ওর কুড়ি ফিট ওপরে ছিলাম এবং হ্যারিকে হত্যা করা থেকে আরেকটি ব্লাজারকে রুখছিলাম, বলল জর্জ ক্ষিপ্ত হয়ে। কেউ একজন ওটার কিছু একটা করেছে যে ওটা কিছুতেই হ্যারিকে ছাড়ছে না, সারা খেলায় ওটা আর কারো পিছু নেয়নি। স্লিথারিনরা নিশ্চয়ই ওটার কিছু করেছে।

কিন্তু ব্লাজারগুলো তো আমাদের সর্বশেষ প্র্যাকটিসের পর মাদাস হুচের অফিসে তালা মারা ছিল এবং তখন ওগুলোর মধ্যে কোন সমস্যা ছিল …উদ্বেগের সাথে বলল উড়। মাদাম হুচ ওদের দিকে হেঁটে আসছেন। ওঁর কাঁধের ওপর দিয়ে হ্যারি দেখতে পাচেছু ভিখারিন টিম টিটকিরি মারছে আর ওর দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে।

শোন, বলল হ্যারি, মাদাম হুচ কাছে চলে আসছেন, তোমরা দুজন যদি সারাক্ষণ আমার চারপাশে উড়তে থাকে তাহলে একমাত্র আমার আস্তিনের ভেতর ঢুকলে তবেই আমি স্নিটাকে ধরতে পারবো, তার আগে নয়। তোমরা টীমের অন্যদের কাছে চলে যাবে বদমাশ ব্লাজারটাকে শায়েস্তা করার দায়িটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।

পাগল হয়ো না, ওটা তোমার মাথা উড়িয়ে দেবে,বলল ফ্রেড।

হ্যারি আর উইসলিদের দেখছিল উড।

অলিভার, এটা পাগলামি, রাগ হয়ে বলল আরকে স্পিনেট। তুমি একা হ্যারিকে ওই জিনিসটার ব্যবস্থা করতে দিতে পারো না। আমরা ইনকোয়ারী চাইব।

এখন যদি আমরা খেলা ছেড়ে দিই তাহলে আমাদের পয়েন্ট বাজেয়াপ্ত হবে, বলল হ্যারি। এবং একটা পাগলা ব্লিচের কারণে আমরা কিছুতেই স্নিখারিনদের কাছে হারবো না! চলো অলিভার ওদেরকে বলো আমাকে একা ছেড়ে দিতে!

এর সবটাই তোমার দোষ, রাগ করে জর্জ বলল উডকে। স্নিচটা ধরবে না হলে ধরার চেষ্টা করে মরবে–কি একটা স্টুপিড কথা!

মাদাম হুচ ওদের সঙ্গে যোগ দিলেন।

খেলা শুরু করার জন্যে তৈরি? উডের কাছে জানতে চাইলেন।

হ্যারির মুখে দৃঢ়সংকল্প দেখল উড।

বেশ, সে বলল। ফ্রেড, জর্জ তোমরা হ্যারির কথা শুনেছ–ওকে একা ছেড়ে দেবে এবং ব্লাজারটা ওকে ওর মতো করেই সামাল দিতে দাও।

এখন আরো জোরে পড়ছে বৃষ্টি। মাদাম হুচের হুইসেল বেজে উঠতেই হ্যারি জোরে বাতাসে লাখি পেছন পেছন ব্লাজারটার শব্দও শুনতে পেলো ওকে ধাওয়া করছে। উপরে উঠতেই থাকল রি। ও বৃত্ত তৈরি করল, পেঁচিয়ে উঠল, ডান–বাঁ জিগজ্যাগ করল এবং গোত্তা খেলো। সামন্য আবছা, তারপরও ওর চোখ পুরো খোলা রাখল। চশমার ওপর খোঁচা মারছে এবং যখন ও উল্টো করে ঝুলে ছিল তখন নাকে পানি ঢুকে গেল। ব্লাজারটার আরেকটা ভয়াবহ আক্রমণ এড়িয়ে গেল হ্যারি। ও দর্শকদের মধ্য থেকে অট্রহাসি শুনতে পেলো; ও জানে নিজেকে ওর বোকা দেখাতে হবে, কিন্তু বদমাশ ব্লাজারটা ভারি এবং এই কারণে ওর মতো দ্রুত দিক বদলাতে পারে না। স্টেডিয়ামের প্রান্ত ধরে রোলার কোস্টার চড়ার মতো করে যাচ্ছে হ্যারি, গ্রিফিল্ডর গোল পোস্টের দিকে বৃষ্টির রূপালি চাদরের মধ্য দিয়ে চোখ কুঁচকে দেখছে, যখন অ্যাড্রিয়ান পাসি উডকে কাটিয়ে যেতে উদ্যত হলো…

কানের কাছে একটা শিষের শব্দ শুনে হ্যারি বুঝতে পারলো ব্লাজারটা ওকে আবার মিস করেছে; ডান দিকে ঘুরে উল্টোদিকে যেতে শুরু করল।

ব্যালের জন্য ট্রেনিং নিচ্ছ, পটার? চিৎকার করল ম্যালফয়, ব্লজারটাকে ধোকা দেয়ার জন্য মধ্য আকাশে হ্যারিকে বোকা ধরনের একটা মোচড় খেতে দেখে। পালিয়ে গেলো হ্যারি, ব্লাজারটা ওর কয়েক ফিট পেছনে। এবং তারপর ম্যালফয়ের দিকে পেছন ফিরে দেখল ঘৃণায়, সে ওটাকে দেখতে পেলো, দ্য গোল্ডেন সি। ওটা ম্যালফয়ের বা কানের মাত্র কয়েক ইঞ্চি ওপরে বুলিছে, এবং ম্যালফয়, হ্যারিকে উপহাস করতে ব্যস্ত ওটা দেখতে পায়নি।

একটি যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তের জন্যে হ্যারি, মধ্য আকাশে ঝুলে থাকল, ম্যালফয়ের দিকে ধেয়ে যেতে সাহস করছে না, যদি ও মাথা তুলে স্নিচটা দেখে ফেলে।

ওয়াম!

সে মুহূর্তখানেক বেশি স্থির হয়ে ছিল। ব্লাজারটা শেষ পর্যন্ত ওকে আঘাত করল, ওর কনুইতে, হ্যারি বুঝতে পারছে ওর হাতটা ভেঙ্গে গেছে। হাতের তীব্র ব্যথায় সামান্য বিমূঢ় অবস্থা হ্যারির, ওর বৃষ্টিতে ভেজা ঝাড়ির মধ্যে একদিকে সরে গেল ও, একটা হাঁটু ওটাকে তখনও পেঁচিয়ে রেখেছে, ওর ডান হাতটা ঝুলছে পাশে সম্পূর্ণ অকেজো। ব্লাজারটা আবার ধেয়ে আসছে দ্বিতীয় আক্রমণের উদ্দেশে, এবার টার্গেট হ্যারির মুখ। বেঁকে পথ থেকে সরে গেল হ্যারি, তার অনুভূতিহীন মস্তিষ্কে তখন একটাই চিন্তা : ম্যালফয়কে ধরো।

বৃষ্টি এবং ব্যথার আচ্ছন্নতার মধ্যে সে তার নিচের চকচকে, বিদ্রূপ ভরা মুখটার উদ্দেশে ডাইভ দিল, ওর চোখ জোড়াকে ভয়ে বিস্ফোরিত হতে দেখল হ্যারি : ফ্যালফয় ভাবল হ্যারি ওকে আক্রমণ করছে।

কি যে–ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে ম্যালফয়, হ্যারির পথ থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা।

ঝাড়ু থেকে অবশিষ্ট হাতটা সরিয়ে অন্ধের মতো একটা কিছু ধরার চেষ্টা করল হ্যারি; ও টের পেলো মিচটা ঠিকই ধরেছে ও মুঠোর মধ্যে, কিন্তু ঝাড়ুটা শুধু পা দিয়ে ধরে রেখেছে, এবং সে সোজা মাটিতে পড়ছে দেখে নিচের দর্শকদের মধ্যে থেকে একটা চিৎকার উঠল, প্রাণপণে চেষ্টা করছে হ্যারি যেন অজ্ঞান না হয়।

দড়াম করে মাটিতে পড়ল সে। ঝাড়ু থেকে গড়িয়ে সরে গেলো। ওর হাতটা অদ্ভুতভাবে ঝুলে আছে। ব্যথায় বিমূঢ় সে শুনতে পাচ্ছে দূরে কারা যেন, বেশ চিৎকার করছে, শিষ দিচ্ছে। ওর ভাল হাতটার মুঠোর মধ্যে ধরা স্নিচটার দিকে নজর দিল সে।

আহা, সে বলল আবছাভাবে, আমরা জিতেছি।

এবং অজ্ঞান হয়ে গেল সে।

জ্ঞান ফিরল যখন, তখনও মুখের ওপর বৃষ্টি পড়ছে, পিচের উপরই পড়ে আছে সে, কেউ একজন ওর উপর উপুড় হয়ে আছে। ও দেখল দাঁত চকচক করছে।

ওহ না, আপনি না, গুঙিয়ে উঠল সে।

জানে না ও কি বলছে, বললেন লকহার্ট উচ্চস্বরে তাদের চারপাশে জড়ো হওয়া উদ্বিগ্ন গ্রিফিল্ডরদের উদ্দেশে। ঘাবড়াবে না হ্যারি, আমি তোমার হাত এক্ষুণি ঠিক করে দিচ্ছি।

না। বলল হ্যারি। আমি এটা এভাবেই রাখব, ধন্যবাদ…

ও চেষ্টা করল উঠে বসার জন্যে, কিন্তু ব্যথাটা অসহ্য। পরিচিত একটা ক্লিক শব্দ শুনতে পেল ও কাছেই।

আমি, এর কোন ছবি চাই না কলিন, জোরে বলল হ্যারি।

শুয়ে খাক হ্যারি, বললেন লকহার্ট সান্তনা দিয়ে। এটা একটা সহজ জাদু, আমি অসংখ্যবার ব্যবহার করেছি।

আমি কেন সোজাসুজি হাসপাতালে যেতে পারি না? দাঁত কামড়ে বলল হ্যারি।

ওর ওখানেই যাওয়া উচিৎ, প্রফেসর, বলল সারা গায়ে কাদা মাখা উড, দলের সিকার আহত হওয়া সত্ত্বেও ওর দাঁত বের করা হাসিটা বন্ধ হয়নি। খুব ভাল ধরেছ হ্যারি, সত্যি দর্শনীয়, এ পর্যন্ত এটাই তোমার সেরা।

চারদিকের জড়ো হওয়া পা গুলির মধ্য দিয়ে হ্যারি ফ্রেড এবং জর্জকে দেখতে পেলো ওই বদমাশ ব্লাজারটাকে বাক্সে ভরবার চেষ্টা করছে। ওদের বিরুদ্ধে ভাল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ওটা।

সরে দাঁড়াও, বললেন লকহার্ট নিজের সবুজ আস্তিন গোটাতে গোটাতে।

না–করেন না– বলল হ্যারি দূর্বলভাবে, কিন্তু লকহার্ট ওর জাদুদণ্ড ঘোরাচ্ছে, এক মুহূর্ত পর ওটা সোজাসুজি হ্যারির হাতের দিকে তাক করা হলো।

একটা অদ্ভুত এবং অপ্রীতিকর অনুভূতি হ্যারির কাঁধ থেকে শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ল একেবারে আঙুলের মাথা পর্যন্ত। মনে হচ্ছিল যেন ওর হাতটা ছোট হয়ে আসছে। ও সাহস করে দেখতে পারলো না, যে কি হচ্ছে। ও চোখ বন্ধ করে রাখলো। হাতের দিক থেকে মুখ ফেরানো। কিন্তু ওর সবচেয়ে খারাপ ভয়টা তখনই সত্য বলে প্রমাণিত হলো যখন ওকে ঘিরে জড়ো হওয়া লোকগুলোর নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা হলো আর পাগলের মতো ছবি তুলতে লাগল কলিন ক্রিভি। ওর হাতের আর ব্যথা নেই–কিন্তু হাত বলে যে কিছু আছে তাও তো বোঝা যাচ্ছে না।

আহ, বললেন লকহার্ট। হ্যাঁ। বেশ, এমনও কোন কোন সময় হতে পারে। কিন্তু বিবেচনার বিষয় হচ্ছে এখন আর হাড়গুলো ভাঙ্গা নয়। সেটাই মনে রাখতে হবে। তাহলে, হাবি, টলমল করে হেঁটে হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়া, মিস্টার উইসলি, মিস গ্রেপ্তার, তোমরা কি ওকে নিয়ে যাবে?-এবং মাদাম পমফ্রে তোমাকে–ইয়ে মানে একটু ঠিক ঠাক করে দিতে সক্ষম হবেন।

হ্যারি উঠে দাঁড়াল, অদ্ভুতভাবে ভারসাম্যহীন বোধ হলো ওর। দীর্ঘ একটা শ্বাস টেনে সে তার ডান দিকে তাকাল। ও যা দেখল তাতে আবার জ্ঞান হারাবার দশা হলো ওর।

ওর পোশাকের ভেতর থেকে যেটা বেরিয়ে রয়েছে সেটা মাংসের রঙের রাবারের মোটা একটা গ্লোভ। আঙুল নাড়াতে চেষ্টা করল ও, নড়ল না কিছুই।

লকহার্ট হ্যারির হাড় জোড়া লাগাননি। তিনি হাড়ই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। মাদাম পমফ্রে মোটেও খুশি হলেন না।

তোমার সোজাসুজি আমার কাছে আসা উচিৎ ছিল! ক্ষেপে গেছেন তিনি, মাত্র ধঘণ্টা আগের কর্মক্ষম হাতটির নিস্তেজ দুর্বল অবশিষ্টটা তুলে ধরলেন। আমি হাড় ঠিক করতে বা জোড়া লাগাতে পারি কিন্তু আবার নতুন করে গজানো।

আপনি পারবেন, পারবেন না? মরিয়া হয়ে বলল হ্যারি।

পারব আমি, নিশ্চয়ই, কিন্তু খুবই যন্ত্রণাদায়ক হবে ব্যাপারটা, বললেন মাদাম পমফ্রে নির্মমভাবে। হ্যারির দিকে একটা পাজামা ছুঁড়ে দিলেন। তোমাকে রাতটা থাকতে হবে…

হ্যারির বেড-এর চারপাশে ঘের দেয়া পর্দার বাইরে হারমিওন অপেক্ষা করল, রন ওকে পাজামা পরতে সাহায্য করল। হাড়হীন, রাবারের মতো হাতটাকে জামার হাতায় ঢোকাতে বেশ সময় লাগল।

এরপর আর কিভাবে লকহার্টের সমর্থনে থাকা যায়, বলো হারমিওন? পর্দার ওপাশ থেকে হ্যারির নিস্তেজ আঙুল জামার হাতার মধ্য দিয়ে টানতে টানতে বলল রন। হ্যারি যদি হাড়–বাতিল চাইত তাহলে ও তো বলত।

যে কেউই ভুল করতে পারে, বলল হারমিওন। এবং ওখানে আর ব্যথা করছে না, করছে, হ্যারি?

না, বলল হ্যারি, কিন্তু ওটা আর কিছুও করছে না।

বিছানায় হ্যারি পাশ ফিরতেই ওর ডান হাতটা উদ্দেশ্যহীনভাবে ঝাপটালো।

মাদাম পমফ্রে এবং হারমিওন পর্দাঘেরা যায়গাটায় এলো। মাদাম পমফ্রের হাতে বড় একটা বোতল তাতে লেবেল লাগানো : স্কেলে–গ্রো।

তোমাকে একটা কষ্টকর রাত পার করতে হবে, বললেন তিনি, একটা কাঁচের পাত্রে ধোয়া ওঠা তরল ঢেলে ওর হাতে ধরিয়ে দিলেন তিনি। হাড় গজানো সত্যি একটা অপ্রীতিকর কাজ।

স্কেলে–গ্রো পান করাও তাই। হ্যারির মুখ আর গলা জ্বালাতে জ্বালাতে ওটা নিচে নেমে গেলো, কাশল, থু! পু! করল ও। বিজ্জনক খেলা এবং অদক্ষ শিক্ষকদের সম্পর্কে গজরাতে গজরাতে মাদাম পমফ্রে চলে গেলেন, রন আর হারমিওন হ্যারিকে একটু পানি খাওয়াতে চেষ্টা করল।

তারপরও আমরা জিতেছি, বলল রন, দাঁত বের করে হাসল ও। ওটা একটা ক্যাচ ছিল বটে। ম্যালফয়ের চেহারা… মনে হচ্ছি খুন করতে হলেও ও তখন খুন করত!

আমি জানতে চাই ওই ব্লাজারটাকে কিভাবে জাদু করল ও, বলল হারমিওন গম্ভীর মুখে।

পলিজুস পোশন খাওয়ার পর আমরা ওকে যে প্রশ্ন করবো, এই আরেকটা তার সঙ্গে যোগ করে নিতে হবে বলল হ্যারিআবার বালিশে লুটিয়ে পড়ল ও। আশা করি এটা অন্তত এটার চেয়ে ভাল স্বাদের হবে, যেটা আমি এইমাত্র খেলাম…

যদি স্লিথারিনের কোন টুকরা থাকে তাহলে এর চেয়ে ভাল হবে? তুমি নিশ্চয়ই জোক করছ, বলল রন।

হাসপাতালের দরজাটা সেই মুহূর্তেই সজোরে খুলে গেলো। সারা গা ভেজা, নোংরা, গ্রিফিন্ডর টীমের বাকি সবাই হ্যারিকে দেখতে এসেছে।

অবিশ্বাস্য ওড়া, হ্যারি, বলল জর্জ। এই মাত্র দেখে এলাম মার্কাস ফ্রিন্ট ম্যালফয়ের উদ্দেশে চিৎকার করছে। এর মাথার ঠিক উপরে স্নিচটা ছিল কিন্তু দেখতে পায়নি বলে। ম্যালফয়কে খুব খুশি বলে মনে হলো না।

ওরা কেক, মিষ্টি আর লাউয়ের জুস নিয়ে এসেছে; হ্যারির বিছানার চারপাশে জড়ো হয়ে সবেমাত্র ওরা একটা ভাল পার্টির উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে, এমন সময় ঝড়ের গতিতে ছুটে এলেন মাদাম পমফ্রে, চিৎকার করছেন, এই ছেলেটাকে তেত্রিশটা হাড় আবার গজাতে হবে! বের হও! বের হও!

এবং হ্যারি একাকী হয়ে গেল। ওর হাতের ছুরিকাঘাতের মতো যন্ত্রণা, এখান থেকে মনোযোগ অন্য দিকে সরানোর মতো আর কিছুই রইল না।

অনেক সময় পরে পিচ কালো আঁধারে হঠাৎ করেই ঘুম ভাঙলো হ্যারির ব্যথায় চিৎকার করে উঠল : এখন তার হাত পুরোটাই স্পিন্টারে বাধা। এক মুহূর্তের জন্য স্বারি ভাবল ওই ব্যথাই ওকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে। তারপর, ভয়ের শিহরণ খেলে গেল ওর মধ্যে, যখন বুঝতে পারল কেউ একজন ওর কপাল স্পঞ্জ করছে।

সরে যাও! জোরে বলল ও, এবং তারপর, ডব্বি!

গৃহ-ডাইনীটার টেনিস বলের মতো বেরিয়ে আসা চোখ দুটো হ্যারির দিকে তাকিয়ে রয়েছে অন্ধকারে। ওর খাড়া লম্বা নাকটা বেয়ে একটা অশ্রু ফোঁটা পড়ছে।

হ্যারি পটার স্কুলে ফিরে এসেছে, ও দুঃখের সঙ্গে বলল। ডব্বি হ্যারি পটারকে সাবধান এবং সাবধান করে দিয়েছিল। আহ, স্যার আপনি কেন ডববির কথা শুনলেন না স্যার? যখন ট্রেন মিস করল তখন হ্যারি পটার বাড়ি ফিরে গেল না কেন?

হ্যারি বালিশে হেলান দিয়ে উঠে বসল, কপাল থেকে ডববির স্পঞ্জ করা হাতটা সরিয়ে দিল।

তুমি এখানে কি করছ? সে জিজ্ঞাসা করল। তুমি কিভাবে জান যে আমি ট্রেন মিস করেছি?

ডববির ঠোঁট কাঁপছে এবং হঠাৎ করেই হ্যারির একটা সন্দেহ হলো।

তাহলে, তুমি! বলল সে ধীরে ধীরে। তুমিই গেটটা দিয়ে আমাদেরকে ভেতরে যেতে বাধা দিয়েছ!

সত্যিই, তাই স্যার, বলল ডব্বি, প্রচণ্ড মাথা ঝাঁকিয়ে, কান ঝাপটাচ্ছে। লুকিয়ে থেকে ডববি হ্যারি পটারের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং গেটটা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং এর জন্যে ডব্বিকে নিজের হাত ইস্ত্রি করতে হয়েছিল। হ্যারিকে ও দশটা ব্যান্ডেজ করা লম্বা আঙুল দেখালো, কিন্তু ডব্বি পরোয়া করে না স্যার, কারণ সে মনে করেছিল হ্যারি পটার নিরাপদ হয়ে গেছে এবং ডব্বি স্বপ্নেও ভানেনি যে অন্য ভাবে হ্যারি পটার স্কুলে যাবে!

সামনে পেছনে দুলছিল ও, ওর কুৎসিৎ মাথাটা নাড়ছিল।

ডব্বি যখন জানতে পারল যে হ্যারি পটার হোগার্টর্স-এ ফিরে গেছে তখন এতো আঘাত পেয়েছে যে, তার মালিকের ডিনারই পুড়িয়ে ফেলেছিল! ডব্বি জীবনে এতো মার খায়নি, স্যার…

হ্যারি আবার তার বালিশের ওপর শুয়ে পড়ল।

আমাকে আর রনকে স্কুল থেকে প্রায় বহিস্কার করিয়ে ছেড়েছিলে তুমি, বলল হ্যারি ক্ষিপ্ত হয়ে। আমার হাড়গুলো ফিরে আসার আগে এখান থেকে পালাও, নাহলে আমি তোমাকে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারি।

ডববি দুর্বলভাবে হাসল।

হত্যা করার হুমকিতে ডব্বি অভ্যস্ত, স্যার। দিনের মধ্যে পাঁচবার ডব্বি বাসায় এ ধরনের হুমকি পায়।

পরনের নোংরা বালিশের ওয়াড়টাতে নাক মুছল, ওকে এতো বিমর্ষ দেখাচ্ছিল যে, এত কিছু সত্ত্বেও হ্যারির মনে হলো ওর রাগ উবে যাচ্ছে।

এই জিনিসটা পরে থাকো কেন, ডব্বি? জানতে চাইল হ্যারি।

এটা, স্যার? বালিশের ওয়াড়টাতে খামচি দিয়ে বলল ডব্বি। এটা হচ্ছে গৃহ-ডাইনীর দাসত্বের চিহ্ন, স্যার। ডব্বি তখনই মুক্ত হতে পারবে যখন তার প্রভুরা তাকে পরনের কাপড় দেবে, স্যার। ওই পরিবারটি খুবই সতর্ক, স্যার, যেন আমাকে কখনও একটি মোজাও দেয়া না হয়, কারণ তখন সে মুক্ত হয়ে যাবে দাসত্ব থেকে এবং চিরদিনের জন্য তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারবে।

ডব্লি ওর ফোলা চোখ দুটো মুছল এবং হঠাৎ বলল, হ্যারি পটারকে বাড়ি যেতে হবে! ডব্বি ভেবেছিল ও ব্লজারই বাধ্য করতে যথেষ্ট।

তোমার ব্লাজার? বলল হ্যারি, আবার ও রেগে যাচ্ছে। কি বলতে চাচ্ছ, তোমার ব্লাজার? তুমি ওই ব্লাজারটা তৈরি করেছ আমার মারার চেষ্টা করাবার জন্যে?

না, আপনাকে মারার জন্যে নয়, স্যার, কখনই আপনাকে মারার জন্যে নয়! বলল ডব্বি, যেন আঘাত পেয়েছে। ডবুৰি হ্যারি পটারের জীবন বাঁচাতে চায়! এখানে থাকার চেয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে, গুরুতর আহত অবস্থায়, স্যার, ডব্বি শুধু চেয়েছে হ্যারি পটার এমনভাবে আহত হয় যেন তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ওহ! ব্যস এই? রাগ হয়ে বলল হ্যারি। আমার মনে হয় না তুমি কেন আমাকে টুকরো করে বাড়ি পাঠাতে চাচ্ছে সেটা বলবে?

আহ, যদি হ্যারি পটার শুধু জানত! ডব্বি কাতরালো, ওর মলিন বালিশের এয়াড়ের উপর কয়েক ফোঁটা চোখের পানি পড়ল। তিনি যদি জানতেন, আমাদের জন্য তিনি কি, আমাদের মতো ক্ষুদ্র, দাসত্ত্বে আবদ্ধ, আমরা যারা ম্যাজিকের দুনিয়ার তলানি! ডবির মনে আছে যখন যার নাম উচ্চারণ করা যাবে না তার ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন, স্যার! আমরা যারা গৃহ–ডহিনী আমাদেরকে পরজীবী বলে গণ্য করা হতো, স্যার। অবশ্য, ডব্বি এখনও সে রকম ব্যবহারই পায়, স্যার, সে স্বীকার করল, আবার মুখটা মুছল পরনের বালিশের ওয়ার্ড দিয়ে। কিন্তু আমাদের মতো যারা তাদের অধিকাংশেরই জীবনের সামান্য উন্নতি হয়েছে, আপনি যখন যার নাম উচ্চারণ করা যাবে নার উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। হ্যারি পটার বেঁচে গেলেন এবং অন্ধকারের প্রভুর ক্ষমতা খর্ব হলো, এবং সেটা ছিল একটা নতুন প্রভাত স্যার, এবং আমরা যারা ভাবতাম অন্ধকারের দিনগুলির বুঝি আর শেষ নেই সেই আমাদের কাছে হ্যারি পটার মুক্তির আলোকবর্তিকা হিসেবে দেখা দিলেন, স্যার… এবং এখন এই হোগার্টর্স-এ ভয়ঙ্কর সব ব্যাপার স্যাপার ঘটতে থাকবে, হয়তো এখনই ঘটছে, এবং ডব্বি হ্যারি পটারকে এখানে থাকতে দিতে পারে না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির জন্য, এখন যেহেতু আরো একবার চেম্বার অফ সিক্রেটস খুলে দেয়া হয়েছে

হঠাৎ থেমে গেলো ডব্বি, ভয়ে আক্রান্ত, তারপর বিছানার পাশ থেকে হ্যারির পানির জগটা তুলে নিয়ে হঠাৎ নিজের মাথায় ভাঙল, লাফ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। এক সেকেন্ড পর আবার ফিরে এলো হামাগুড়ি দিয়ে বিছানায় উঠল, নিজের ওপর নিরজেই রাগ করে আছে, বিড় বিড় করছে, খারাপ ডব্বি, খুব খারাপ ডব্বি…

তাহলে চেম্বার অফ সিক্রেট্রক্স রয়েছে একটা? হ্যারি ফিস ফিস করে বলল। এবং–তুমি যেন কি বললে ওটা আগেও খোলা হয়েছিল? আমাকে বলো ডব্বি!

ও গৃহ-ডাইনীটার হাড্ডিসার কব্জিটা ধরে ফেলল, ওটা একটু একটু করে হ্যারির পানির জগটার দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু আমি তো আর মাগল–জাত নই আমি কি ভাবে চেম্বারের তরফ থেকে বিপদে পড়ব?

আহ, স্যার, বেচারা ডবির কাছে আর প্রশ্ন করবেন না, তেতিলাতে তোতলাতে বলল ও, অন্ধকারে ওর চোখ জোড়া বড় দেখাচ্ছে। এখানেই সব খারাপ কাজের প্ল্যান হয়, কিন্তু ওসব অন্ধকারের কর্মকান্ড যখন ঘটবে তখন হ্যারি পটারের এখানে থাকা উচিৎ নয়। বাড়ি যান, হ্যারি পটার। বাড়ি যান। এ সবের মধ্যে হ্যারি পটারের নাক গলানো ঠিক নয় স্যার, এসব খুবই বিপদজনক

কে সে ডব্বি? কে সে? বলল হ্যারি, ডবৃবির কব্দিটা শক্ত হাতে ধরে আছে যেন সে আবার নিজের মাথায় মারতে না পারে জগ দিয়ে। কে খুলেছে? কে খুলেছিল আগের বার?

ডব্বি পারবে না, স্যার, ডব্বি পারবে না, ডব্বির বলা উচিৎ নয়। তীক্ষ্ণ স্বরে বলল গৃহ-ডাইনীটা। বাড়ি যান, হ্যারি পটার, বাড়ি যান।

আমি কোথাও যাচ্ছি না! কড়াভাবে বলল হ্যারি। আমার একজন শ্রেষ্ঠ বন্ধু মাগল–জাত, চেম্বারটা যদি সত্যিই খোলা হয়ে থাকে তবে সেই হবে প্রথম শিকারদের মধ্যে অন্যতম

হ্যারি পটার বন্ধুর জন্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে! কঁকিয়ে উঠল ডব্বি, এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতিতে। এতো মহৎ! এতো সাহসী! কিন্তু তার নিজেকে বাঁচাতে হবে, তাকে করতেই হবে, হ্যারি পটার কিছুতেই

থেমে গেলো ডব্বি, ওর বাদুড়–কান দুটো কাঁপছে। হ্যারিও শুনেছে। করিডোর ধরে কেউ আসছে, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

ডববিকে যেতে হবে! শ্বাস ছেড়ে বলল ও, ভয় পেয়েছে; জোরে একট শব্দ হলো, বাতাসে হ্যারির শূন্য মুঠো। সে আবার বিছানায় পড়ে গেলো, অন্ধকার দরজার দিকে ওর চোখ পায়ের আওয়াজ কছে আসছে

পর মুহূর্তে ডাম্বলডোর ভেতরে ঢুকলেন, উলের লম্বা একটি ড্রেসিং গাউন আর নাইট–ক্যাপ পরিহিত। দেখে মনে হচ্ছে তিনি যা বহন করছেন সেটা একটি মূর্তির এক প্রান্ত। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল উপস্থিত হলেন এক সেকেন্ড পর, বহন করছেন মূর্তিটার পা। দুজনে মিলে ওটা রাখলেন বিছানার উপর।

মাদাম পমফ্রেকে ডাকুন, ফিস ফিস করে বললেন ডাম্বলডোর, এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ছুটে বেরিয়ে গেলেন দৃষ্টির বাইরে, হ্যারির বিছানা ঘেষে। হ্যারি স্থির হয়ে শুয়ে থাকল ঘুমের ভান করে। জরুরী কথাবার্তা শোনা গেল, এরপর প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে আবার দেখা গেলো, অনুসরণ করছেন মাদাম পমফ্রে, নিজের নাইটড্রেস-এর উপর একটা কার্ডিগান জড়িয়ে নিচ্ছেন। কেউ একজন দীর্ঘ শ্বাস টানল, শুনতে পেল হ্যারি।

কি হয়েছে? মাদাম পমফ্রে জিজ্ঞাসা করলেন ফিস ফিস করে, বিছানায় রাখা মূর্তিটার ওপর ঝুঁকে বললেন।

আরেকটি আক্রমণ, বললেন ডাম্বলডোর। মিনারভা ওকে সিঁড়িতে পেয়েছে, পড়ে ছিল।

ওর পাশে এক থোকা আঙ্গুর পড়ে ছিল, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। আমাদের মনে হয় ও চুপি চুপি এখানে আসছিল, হ্যারি পটারকে দেখার জন্যে।

ভীষণ এক লাফে হ্যারির পাকস্থলী যেন বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। ধীরে ধীরে খুব সাবধানতার সঙ্গে ও নিজেকে কয়েক ইঞ্চি তুলল যেন সে বিছানায় শোয়া মূর্তিটাকে দেখতে পায়। অপলক তাকিয়ে থাকা ওর চেহারার ওপর এক ফালি চাঁদের আলো এসে পড়েছে।

কলিন ক্রিভি। ওর চোখ জোড়া বিস্ফোরিত হয়ে রয়েছে এবং হাত আঁটকে রয়েছে সামনে, ক্যামেরা ধরা।

পেট্রিফায়েড মানে পাথর বানিয়ে দিয়েছে? ফিস ফিস করে বললেন মাদাম পমফ্রে।

হ্যাঁ, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, কিন্তু আমি ভেবে কেঁপে উঠছি…অ্যালবাস যদি গরম চকলেট আনার জন্যে নিচে না যেতেন, কে বলতে পারে কি হতে…

তিনজন অপলক তাকিয়ে থাকলেন কলিনের দিকে। তারপর ডাম্বলডোর ঝুঁকে কলিনের মুঠো থেকে ক্যামেরাটা ছাড়িয়ে নিলেন।

আপনি নিশ্চয়ই মনে করেন না ও তার আক্রমণকারীর ছবি তুলতে পেরেছিল? আগ্রহের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

ডাম্বলডোর জবাব দিলেন না। তিনি ক্যামেরার পেছন দিকটা খুললেন।

হা ইশ্বর! বললেন মাদাম পমফ্রে।

ক্যামেরা থেকে স্টীমের একটা তীব্র ধারা হিসস করে বেরিয়ে এলো। তিন বিছানা দূরে থেকে হ্যারিও পেলো পোড়া প্লাস্টিকের ঝাঁঝালো গন্ধ।

গলে গেছে, বললেন মাদাম পমফ্রে ভাবতে ভাবতে, সব গলে গেছে…

এর মানে কি অ্যালবাস? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল।

এর মানে, বললেন ডাম্বলডোর, এই যে দ্য চেম্বার অফ সিক্রেট সত্যিই আবার খোলা হয়েছে।

ঝট করে মুখে হাত দিলেন মাদাম পমফ্রে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তাকিয়ে রইলেন পলকহীন।

কিন্তু অ্যালবাস…নিশ্চয়ই…কে?

প্রশ্ন এটা না কে, বললেন ডাম্বলডোর, ওঁর চোখ কলিনের ওপর। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে…

এবং প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের ছায়াচ্ছন্ন চেহারার দিকে তাকিয়ে হ্যারি বুঝল, ও যতটুকু বুঝেছে প্রফেসর এর চেয়ে বেশি কিছু বোঝেননি এসবের।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত