হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দেয়াল লিখন

হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য চেম্বার অব সিক্রেটস: দেয়াল লিখন

০৯. দেয়াল লিখন

এখানে কি হচ্ছে? কি হচ্ছে? কোন সন্দেহ নেই ম্যালফয়-এর চিৎকারে আকৃষ্ট হয়ে, অরগাস ফিলচ কাঁধ দিয়ে ভিড় এগিয়ে এলো। এরপর ও মিসেস নরিসকে দেখতে পেলো, ভয়ে নিজের মুখ আঁকড়ে ধরল।

আমার বেড়াল! আমার বেড়াল! মিসেস নরিসের কি হয়েছে? তীক্ষ্ণ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল ফিলচ।

ওর ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোখ জোড়া পড়ল হ্যারির ওপর।

তুমি! চিৎকার করে উঠল ও, তুমি! তুমিই আমার বিড়ালকে হত্যা করেছ! তুমি ওকে মেরে ফেলেছ! আমি তোমাকে খুন করব! আমি তোমাকে

অরগাস!

ডাম্বলডোর এসে উপস্থিত। সঙ্গে আরো কয়েকজন শিক্ষক। মুহূর্তের মধ্যে তিনি হ্যারি, রন আর হারমিওনের পাশ কাটিয়ে গিয়ে মশাল আঁটকানোর ব্র্যাকেট থেকে মিসেস নরিসকে ছাড়িয়ে নিলেন।

আমার সঙ্গে এসো অর্গাস, ফিলচকে বললেন ডাম্বলডোর। তোমরাও এসো মিস্টার পটার, মিস্টার উইসলি এবং মিস গ্রেঞ্জার।

লকহার্ট আগ্রহের সঙ্গে সামনে এসে বললেন, আমার অফিসটা সবচেয়ে কাছে, হেডমাস্টার ঠিক উপরের তলায়–প্লিজ কোন সংকোচ করবেন না

ধন্যবাদ, গিল্ডরয়, বললেন ডাম্বলডোর।

নিরব ভিড়টা দুই ভাগ হয়ে গেলো ওদেরকে যাওয়ার পথ করে দেওয়ার জন্য। লকহার্ট উত্তেজিত এবং নিজেকে খুব গুরুত্ত্বপূর্ণ ভাবছেন, ডাম্বলডোরের পেছন পেছন দ্রুত এগিয়ে গেলেন, আরো গেলেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল এবং স্নেইপ।

ওরা লকহার্টের অন্ধকার অফিসে ঢুকতেই দেয়ালে কিছু নড়াচড়ার শব্দ পেলো হ্যারি, দেখল ছবিতে যে লকহার্টগুলো রয়েছে টার কয়েকটা দ্রুত দৃষ্টির বাইরে চলে যাচ্ছে। আসল লকহার্ট মোমবাতি জ্বালিয়ে পেছনে সরে এলেন। ডেস্কের উপর বিড়ালটাকে রেখে ওকে পরীক্ষা করতে লাগলেন ডাম্বলডোর। স্নায়বিক চাপের মধ্যে চাপা উত্তেজনায় হ্যারি, রন আর হারমিওন নিজেদের মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় করল, মোমবাতির আলোর বাইরে চেয়ারে বসল। তাকিয়ে আছে ওরা ডেস্কের দিকে।

ডাম্বলডোরের আঁকা লম্বা নাকটা মিসেস নরিসের লোম থেকে বোধহয় এক ইঞ্চি দুরেও নেই। অর্ধচন্দ্রাকৃতির চশমার মধ্য দিয়ে তিনি নিবিষ্ট মনে বেড়ালটাকে পরীক্ষা করছিলেন, ওর দীর্ঘ আঙুলগুলো বেড়ালটাকে খুব আস্তে আস্তে পরখ করছিল। প্রফেসর ম্যাকগোনাগলও ঝুঁকে আছেন একেবারে কাছে, ওর চোখ দুটো সরু হয়ে আছে। ওদের পেছনে ঝুঁকে রয়েছে স্নেইপ, ওর অর্ধেকটা ছায়ার মধ্যে। মুখে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি। মনে হচ্ছে যেন না হাসার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এবং ওদের চারদিকে যেন বাতাসে ভেসে স্থির হয়ে আছেন লকহার্ট আর নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।

নিশ্চয়ই একটা শাপই ওকে হত্যা করেছে। সম্ভবত ওটা ছিল ট্রান্সমগ্রিফিয়ান টর্চার। আমি এটাকে অনেকবার ব্যবহার হতে দেখেছি, দুর্ভাগ্য যে আমি সেখানে ছিলাম না, আমি সঠিক বিপরীত শাপটা জানি যেটা ওর জীবন রক্ষা করতে পারত…

লকহার্টের মন্তব্যের সঙ্গে মিশে গেল ফিলচ-এর শুকনো যন্ত্রণাদায়ক কান্না। ডেস্কের পাশেই একটা চেয়ারে ধপ করে বসেছে সে, কিন্তু মিসেস নরিসের দিকে তাকাতে পারছে না, দুহাতের তালুতে ধরা ওর মুখ। যতই অপছন্দ করুক এই মুহূর্তে হ্যারি ফিলচ-এর জন্যে দুঃখবোধ না করে পারল না, যদিও নিজের দুরবস্থায় দুঃখবোধের চেয়ে ওটা কিছুই নয়। ডাম্বলডোর যদি ওর কথা বিশ্বাস করেন, তবে এবার হ্যারিকে অবশ্যই স্কুল থেকে বহিস্কার হতে হবে।

দম আঁটকে ডাম্বলডোর বিচিত্র সব শব্দ আউড়ে যাচ্ছেন এবং মিসেস নরিসকে ওর নিজের জাদুদণ্ডটা দিয়ে বার বার ছুঁয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। একভাবেই পড়ে রয়েছে মিসেস নরিস যেন এইমাত্র ভেতরে খড় পুরে তাকে বানানো হয়েছে।

…আমার মনে এরকমই একটা কিছু হয়েছিল ওউয়াগাডওগও-এ, বললেন লকহার্ট, সিরিজ আক্রমণ, পুরো ঘটনাটা আমার আত্মজীবনীতে রয়েছে। শহরবাসীকে বিভিন্ন রকমের মন্ত্রপুত কবচ দিয়েছিলাম ব্যাপারটা সাথে সাথে শেষ হয়ে গিয়েছিল…

দেয়ালে ঝোলানো লকহার্টের ছবিগুলো সব একমত হয়ে মাথা নাড়ছে। একজন ওর নিজের

অবশেষে ডাম্বলডোর সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।

অর্গাস, ও মরেনি, আস্তে করে বললেন তিনি।

লকহার্ট গুণছিলেন কটা হত্যা তিনি ঠেকিয়েছেন, মাঝপথে থেমে গেলেন।

মরেনি? কান্নায় গলা বুজে এলো ফিলচ-এর। আঙুলের ফাঁক দিয়ে মিসেস নরিসকে দেখল। কিন্তু ও জমে শক্ত হয়ে গেছে কেন?

ওর চিন্তা–কাজ–চলৎ শক্তি রহিত করে ওকে জাদু করা হয়েছে, বললেন ডাম্বলডোর। আহ! আমিও সে রকমই ভেবেছিলাম! বললেন লকহার্ট। কিন্তু কি ভাবে, আমি বলতে পারব না…

ওকে জিজ্ঞাসা করন! তীক্ষ্ণ চিৎকার করে বলল ফিলচ ওর কান্নাভেজা মুখটা হ্যারির দিকে ফিরিয়ে।

দ্বিতীয় বর্ষের কেউ এটা করতে পারে না, দৃঢ়ভাবে বললেন ডাম্বলডোর। এর জন্যে প্রয়োজন সবচেয়ে অগ্রসর কালো ম্যাজিক সম্পর্কে জ্ঞান

ওই করেছে, ওই করেছে! বলল ফিলচ,ওর ফোলা মুখটা লাল টকটকে হয়ে গেছে। আপনি দেখেছেন দেয়ালে ও কি লিখেছে! আমার অফিসে–ও পেয়েছে–ও জানে আমি–আমি–ফিলচের চেহারায় দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ও জানে আমি একজন স্কুইব! কথা শেষ করল ফিলচ।

আমি কখনও মিসেস নরিসকে স্পর্শ করিনি! বলল হ্যারি জোরে, সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে, ব্যাপারটা ওকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। এমনকি দেয়ালের ছবিগুলোর লকহার্টগুলো পর্যন্ত ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এবং আমি জানিও না স্কুইব কাকে বলে।

রাবিশ! দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বলল ফিলচ। ও আমার কুইকস্পেল-এর চিঠিটা ও দেখে ফেলেছে!

যদি আমি কথা বলতে পারি হেডমাস্টার মহাশয়, ছায়ার মধ্যে থেকে বলে উঠলেন স্নেইপ। এবং বিপদের আশঙ্কা সম্পর্কে হ্যারির বোধ বৃদ্ধি পেলো, ও নিশ্চিত যে স্নেইপ যাই বলুক না কেন সেটা কখনই তার পক্ষে যাবে না।

পটার এবং বন্ধুরা হয়তো ভুল সময়ে ভুল যায়গায় ছিল, বলল সে। ওর মুখে সামান্য একটা বিদ্রুপের হাসি, যেন এই ব্যাপারে ওর যথেষ্ট সন্দেই রয়েছে। কিন্তু এখানে বেশ সন্দেহজনক ব্যাপার স্যাপার ঘটেছে। ওরা উপরের করিডোরে কি করছিল? ওরা হ্যালোঈন ফিস্টে একেবারেই যায়নি, কেন?

হ্যারি, রন আর হারমিওন এক সাথে ডেথ–ডে পার্টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করল, … ওখানে শত শত ভূত ছিল ওরা সাক্ষ্য দেবে যে আমরা ওখানেই ছিলাম

কিন্তু পরে কেন ফিস্ট-এ এলে না? জিজ্ঞাসা কলল স্নেইপ, মোমের আলোয় ওর কালো চোখ জোড়া চকচক করছে। ওই করিডোরে কি করছিলে?

রন আর হারমিওন দুজনেই হ্যারির দিকে তাকালো।

কারণ–কারণ, বলল হ্যারি, ওর হৃৎপিণ্ড খুব জোরে জোরে চলছে; ভেতর থেকে কে যেন ওকে বলল যদি ও বলে যে ওকে এখান পর্যন্ত নিয়ে এসেছে এমন একটা কণ্ঠস্বর যেটা কেবল সেই শুনতে পারে আর কেউ না, তাহলে সেটা কেউই বিশ্বাস করবে না, আমরা ক্লান্ত ছিলাম এবং বিছানায় শুতে যাচ্ছিলাম, বলল হ্যারি।

রাতের খাবার না খেয়েই? জিজ্ঞাসা করল স্নেইপ, ওর কৃশ মুখটায় বিজয়ীর হাসি। আমার মনে হয় না ভূতেরা তাদের পার্টিতে জীবন্ত মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত খাবার দিয়েছে।

আমরা ক্ষুধার্ত ছিলাম না, জোরেই বলল রন, তার পেটও গুড় গুড় করে উঠল জোরে।

স্নেইপ-এর নোংরা হাসিটা আরো বড় হলো।

আমার মনে হচ্ছে পটার পুরো সত্যিটা বলছে না, বললেন স্নেইপ। আমার প্রস্তাব পুরো সত্যিটা না বলা পর্যন্ত ওর কিছু কিছু সুবিধা বাতিল করা যেতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ভাবছি ও যতক্ষণ পর্যন্ত না এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ সৎ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ওকে গ্রিফিল্ডর কিডিচ টিম থেকে প্রত্যাহার করা হোক।

সত্যি, সেভেরাস, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ধারালো কণ্ঠে, ওর কিডিচ খেলা বন্ধ করবার মতো কারণ তো আমি দেখতে পাচ্ছি না। এই বিড়ালটার মাথায় ঝাড়ু দিয়ে তো মারা হয়নি। পটার যে অন্যায় করেছে তার কোন প্রমাণ নেই।

অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে হ্যারির দিকে তাকিয়ে আছে ডাম্বলডোর। ওর ঝিকমিক করা হাল্কা–নীল দৃষ্টির সামনে হ্যারির মনে হলো ওকে যেন এক্স–রে করা হচ্ছে।

নির্দোষ, যে পর্যন্ত না প্রমাণিত হচ্ছে দোষী, সেভেরাস, বললেন ডাম্বলডোর দৃঢ়স্বরে।

ক্ষিপ্ত দেখালো স্নেইপকে। ফিলচকেও।

আমার বিড়ালকে জাদু করা হয়েছে! চিৎকার করে উঠল ফিলচ, ওর চোখ বেরিয়ে পড়েছে। আমি শাস্তি দেখতে চাই!

আমরা ওকে সুস্থ করে তুলতে পারব, অর্গাস, ধৈর্যের সঙ্গে বললেন ডাম্বলডোর। সম্প্রতি ম্যাডাম স্প্রাউট কিছু মেনড্রেক সংগ্রহ করেছেন। ওগুলো পূর্ণ মাত্রায় বড় হওয়া মাত্র একটা ওষুধ তৈরি করাবো যেটা মিসেস নরিসকে সুস্থ করে তুলবে।

আমিই বানাবো ওটা, নাক গলালেন লকহার্ট। আমি ওটা তৈরি করেছি কম সে কম একশ বার, ঘুমের মধ্যেও আমি একটা মেনেড্রক পুনর্জীবনী তৈরি করতে পারি

মাফ করবেন, বলল স্নেইপ শিতল কণ্ঠে, আমার বিশ্বাস এই স্কুলে আমিই ওই বিষয়ের শিক্ষক।

বিব্রতকর নিরবতা নেমে এলো ঘরে।

তোমরা যেতে পারো, হ্যারি, রন আর হারমিওনের উদ্দেশে বললেন ডাম্বলডোর।

দৌড় না দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলো ওরা। লকহার্টের অফিস থেকে বেরিয়ে এক তলা উপরে উঠে, ওরা একটি শূন্য ক্লাস রুমে ঢুকে নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করে দিল। বন্ধুদের মলিন মুখের দিকে চোখ কুঁচকে তাকাল হ্যারি।

তোমরা কি মনে করো ওই অশরিরীর কণ্ঠস্বর সম্পর্কে আমার সাফ সাফ বলে দেয়া উচিত ছিল?

না, বিন্দু মাত্র দ্বিধা না করে বলল রন। অন্যরা শুনতে পায় না যে স্বর সেটা শুনতে পাওয়া কোন ভাল লক্ষণ নয়, এমন কি জাদুর দুনিয়াতেও।

রনের স্বরে এমন কিছু ছিল যে হ্যারি বাধ্য হলো জিজ্ঞাসা করতে, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো, তাই না?

নিশ্চয়ই করি, রন দ্রুত বলল। কিন্তু তোমাকে মানতে হবে এটা স্বাভাবিক নয়…

আমি জানি স্বাভাবিক নয়, বলল হ্যারি। পুরো ব্যাপারটাই অস্বাভাবিক ভুতুড়ে। দেয়ালের লেখাটা যেন কি ছিল? ঘরটা খোলা হয়েছে…ওটারই বা মানে কি?

জানো, একটা পুরনো স্মৃতির ঘন্টা যেন বেজে উঠল, বলল রন ধীরে ধীরে। আমার মনে পড়ছে কে যেন একটা গল্প বলেছিল হোগার্টস-এ গোপন প্রকোষ্ঠ থাকার কথা… বোধহয় বিল বলেছিল…

আর স্কুইব মানেই বা কি? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

রনকে একটা চাপা হাসি দমন করতে দেখে বিস্মিত হলো হ্যারি।

মানে-এটা হাসির কোন ব্যাপার নয়। কিন্তু ফিলচ যেমন বলেছে..বলল রন। স্কুই হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার জন্ম জাদু পরিবারে কিন্তু তার কোন জাদুশক্তি নেই। অনেকটা মাগল–জন্মের জাদুকরের ঠিক বিপরীত, কিন্তু স্কুইব হওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক। যদি এমন হয় যে ফিলচ কুইকস্পেল কোন কোর্স থেকে জাদু শিখছে, তাহলে তামার ধারণা ও নিশ্চয়ই স্কুইব। তাহলে অনেক কিছুর ব্যাখ্যাও পাওয়া যাবে। যেমন, কেন সে ছাত্রদের এতো ঘৃণা করে। রন একটা তৃপ্তির হাসি দিল। সে খুবই বিতৃষ্ণ।

কোথাও একটা ঘড়ি বেজে উঠল মধুর সুরে।

মধ্যরাত, বলল হ্যারি। চলো স্নেইপ এসে আবার অন্য একটি ব্যাপারে ফাঁসিয়ে দেয়ার আগে শুতে যাই।

***

কয়েকদিন ধরে, স্কুলে মিসেস নরিসের উপর আক্রমণ ছাড়া অন্য কথা হয়েছে কমই। যেখানে বিড়ালটা আক্রান্ত হয়েছিল বার বার সেখানে গিয়ে, যেন আক্রমণকারী ফিরে আসতে পারে, ফিলচই ঘটনাটাকে সবার মনে তাজা রেখেছে। হ্যারি ওকে মিসেস স্কোয়ার্স-এর সর্ব কর্মে ব্যবহারযোগ্য ম্যাজিক্যাল মেস রিমুভার দিয়ে দেয়াল লিখনটাকে মুছে ফেলার জন্যে ঘষতে দেখেছে, কিন্তু কোন ফল হয়নিঃ অক্ষরগুলো এখনও চকচক করছে যেন পাথরে খোদাই করা। যখন অকুস্থল পাহারা দিচ্ছে না ফিলচ তখন চোখ লাল মুখ গোমড়া ফিলচ করিডোর ধরে হাঁটছে, কোন কারণ ছাড়াই জোরে শ্বাস ফেলার জন্য বা খুশি দেখাচ্ছের মতো অপরাধের দায়ে কোন ছাত্রের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ডিটেনশন দিয়ে দিচ্ছে।

মিসেস নরিসের দুর্ভাগ্যে জিনি উইজলি খুবই বিচলিত। রনের কথা অনুয়ায়ী সে খুব বড় বিড়াল–প্রেমী।

কিন্তু মিসেস মরিসকে তোমার সত্যিই জানার দরকার নেই, প্রন বলল জিনিকে। সত্যি বলতে কি, ওকে ছাড়া আমরা অনেক বেশি ভাল আছি, জিলির ঠোঁট কেঁপে উঠল। এই ধরনের ঘটনা হোগার্ট-এ অহরহ ঘটে না, বন ওকে আশ্বস্ত করল। কাজটি যে করেছে এই বদমাশটাকে ধরে স্কুল থেকে বের করে দিতে ওদের কোন সময়ই লাগবে না। আমি শুধু আশা করি ওকে বের করে দেয়ার আগে ও যেন ফিলচকে জাদু করে যায়। আমি শুধু ঠাট্টা করছিলাম জিনিকে ফ্যাকাশে হতে দেখে তাড়াতাড়ি বলল রন।

মিসেস নরিসের ওপর আক্রমণটা হারমিওনের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। পড়াশোনার পেছনে বেশ সময় ব্যয় করা হারমিওনের জন্য কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার ছিল না, কিন্তু এখন বলতে গেলে আর কিছুই করছে না পড়াশোনা ছাড়া। সে যে কি করছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেও হ্যারি আর রন কোন সদুত্তর পাচ্ছে না, এবং পরবর্তী বুধবারের আগে ওরা জানতেও পারল না

পোশন ক্লাসে হ্যারিকে অতিরিক্ত সময় থাকতে হচ্ছে, স্নেইপ ওকে আঁটকে দিয়েছে ডেস্ক-এর ওপর থেকে টিউবওয়ার্ম ঘষে তুলবার জন্যে। দ্রুত লাঞ্চ সেরে হ্যারি ওপরে গেল লাইব্রেরিতে রনের সঙ্গে দেখা করতে, পথে জাস্টিন ফিঞ্চ ফ্রেচলি হারলজির হাফলপাফ ছেলেটিকে ওর দিকে আসতে দেখল। হ্যারি যেই না মুখ খুলেছে হ্যালো বলার জন্যে, অমনি জাস্টিন ওকে দেখল, দেখে হঠাৎ ঘুরল এবং বিপরীত দিকে ছুটে বেরিয়ে গেল।

রনকে পেলো লাইব্রেরীর পেছন দিকে, ওর ম্যাজিকের–ইতিহাস হোম ওয়ার্ক মেপে নিচ্ছে। প্রফেসর বিন তিন ফুট লম্বা এক রচনা চেয়েছেন, ইওরোপীয় জাদুকরদের মধ্যযুগীয় সমাবেশ সম্পর্কে।

বিশ্বাস হচ্ছে না এখনও আট ইঞ্চি ঘাটতি রয়েছে… ক্ষিপ্ত হয়ে বলল রন, ওর লেখার পার্চমেন্ট শিটখানা হাত থেকে ছেড়ে দিয়ে, ওটা আবার নিজেই নিজেই গোল হয়ে গুটিয়ে গেল। আর ক্ষুদে গুদে অক্ষর দিয়ে হারমিওন কি চার ফুট সাত ইঞ্চি লিখে ফেলেছে।

ও কোথায়? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি, মাপার ফিতাটা হাতে নিয়ে নিজের হোম ওয়ার্কখানা মেলে ধরল।

ওইদিকে কোথাও রয়েছে, বইয়ের তাকগুলোকে দেখিয়ে বলল রন। আরেকটি বই খুঁজছে। আমার মনে হয় ক্রিস্টমাসের আগেই ও পুরো লাইব্রেরীটা পড়ে ফেলবে।

রনকে বুলল হ্যারি, ওকে জাস্টিন ফিঞ্চ ফ্লেচারের পালিয়ে যাওয়ার কথা।

জানি না তুমি এগুলোকে পাত্তা দাও কেন, আমার তো মনে হয় ও একটা ইডিয়ট, বলল রন লিখতে লিখতে, ওর লেখা যতটা সম্ভব বড় করতে করতে। লকহার্টের বিরাট কিছু বা মহৎ হওয়ার রাবিশ গল্পগুলো–

বুকশেলফের মধ্যে থেকে হারমিওন উদয় হলো। তাকে খুব বিরক্ত দেখাচ্ছিল এবং অবশেষে মনে হচ্ছিল সে ওদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত।

হোগার্টস : একটি ইতিহাস বইয়ের সব কপি লাইব্রেরী থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার কপিটা বাড়িতে রেখে না এলেই হতো, কিন্তু লকহার্টের সব বইয়ের জন্যে ওটা ট্রাংকে ভরতেই পারলাম না।

ওটা চাচ্ছ কেন? জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।

যে কারণে আর সবাই চাচ্ছে, বলল হারমিওন, চেম্বার অফ সিক্রেটস এর কাহিনীটা পড়তে।

ওটা কি? হ্যারির দ্রুত জিজ্ঞাসা।

এ পর্যন্তই। আমি মনে করতে পারছি না, বলল হারমিওন ঠোঁট কামড়ে, এবং আমি আর কোথাও এ কাহিনীটা পাচ্ছি না

হারমিওন, তোমার রচনাটা আমায় পড়তে দাও, মরিয়া হয়ে বলেই ফেলল রন সময় দেখতে দেখতে।

না, আমি দেব না, বলল হারমিওন, হঠাৎ যেন ও নিমর্ম হয়ে গেলো। তুমি দশ দিন সময় পেয়েছ ওটা শেষ করতে।

আমার মাত্র আর দুই ইঞ্চি দরকার, দাও না…

ঘণ্টা বেজে গেল। রন আর হারমিওন তর্ক করতে করতে ম্যাজিকের ইতিহাস ক্লাসে চলে গেলো।

ওদের রুটিনে ম্যাজিকের ইতিহাস হচ্ছে সবচেয়ে নিরস বিষয়। প্রফেসর বিনস, বিষয়টা যিনি পড়ান, তাদের একমাত্র ভূত–শিক্ষক, এবং তার ক্লাসের একমাত্র উত্তেজনা হচ্ছে ব্ল্যাকবোর্ডের মধ্য দিয়ে তার ক্লাস রুমে প্রবেশ করা। বয়সের কারণে কৃশ হয়ে যাওয়া তার সম্পর্কে অনেকেই বলেন তিনি নিজেই খেয়াল করেননি যে তিনি মারা গেছেন। একদিন স্টাফ–রুম আগুনের সামনে আরামকেদারায় নিজের শরীরটা পেছনে ফেলে তিনি চলে গিয়েছিলেন ক্লাস নিতে; এরপর থেকে তার রুটিন একদিনের জন্যেও পাল্টায়নি।

আজ ছিল সবচেয়ে একঘেয়ে। প্রফেসর বিনস তার নোট খুলে পুরনো ভ্যাকুম ক্লিনারের মতো একঘেয়ে টানা সুরে পড়ে যেতে লাগলেন যে পর্যন্ত না ক্লাসের প্রায় সকলেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে গেল, মাঝে মাঝে উঠে হয়তো কোন নাম বা তারিখ লিখে নিয়েছে তারপর আবার ঘুমে ঢুলে পড়েছে। আধঘণ্টা ধরে প্রফেসর একটানা বলে গেলেন, তারপর এমন একটা ঘটনা ঘটল যা আগে কখনই ঘটেনি। হারমিওন তার হাত উপরে তুলল।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধ কনভেনশন ১২৮৯-এর মতো একটা একঘেয়ে সাদামাটা লেকচারের মাঝপথে মুখ তুলে প্রফেসর বিন বিস্মিত হলেন।

মিস–ইয়ে–?

গ্রেঞ্জার, প্রফেসর। আমি ভাবছি আপনি যদি আমাদের চেম্বার অফ সিক্রেটস সম্পর্কে কিছু বলতে পারতেন, পরিস্কার স্বরে বলল হারমিওন।

ডিন থমাস, খোলা মুখ ঝুলিয়ে বসে যে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল, যেন ধাক্কা খেয়ে সোজা হয়ে বসল; ল্যাভেন্ডার ব্রাউনের মাথা ওর হাতের ওপর থেকে সরে গেল, এবং নেভিলের কনুই ডেস্ক থেকে পিছনে সরে গেলো।

প্রফেসর বিন চোখ পিট পিট করলেন।

আমার বিষয় হচ্ছে ম্যাজিকের ইতিহাস, শুকনো শনশনে স্বরে বললেন প্রফেসর। আমি সত্য ঘটনা নিয়ে কারবার করি, মিস গ্রেঞ্জার, উপকথা বা কল্পকাহিনী নিয়ে নয়। খুট করে চক ভাঙ্গার মতো শব্দ করে গলা পরিস্কার করে আবার বললেন, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে সার্ডিনিয়ান জাদুকরদের একটি সাবকমিটি

তোতলাতে তোতলাতে তিনি থেমে গেলেন। হারমিওনের হাত আবার শূন্যে উঠে গেছে।

মিস গ্রেঞ্জার?

প্লিজ, স্যার, উপকার কি বাস্তবে কোন ভিত্তি থাকে না?

প্রফেসর বিন এমন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন যে হ্যারি নিশ্চিত কোন ছাত্রই, জীবিত অথবা মৃত, কোন সময় তাকে এমন ভাবে বাধা দেয়নি লেকচারের সময়।

বেশ, বললেন প্রফেসর বিন ধীরে ধরি, হ্যাঁ, আমার মনে হয়, সেটা নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। এমনভাবে হারমিওনের দিকে অর্ধনমিলিত চোখে তাকালেন যেন এর আগে কোন ছাত্রকে ভালভাবে দেখেননি। যাই হোক, তুমি যে উপকথা সম্পর্কে বলছে সেটা এত চাঞ্চল্যকর যে, লুডিক্রাস-এর কাহিনীও…

এখন কিন্তু পুরো ক্লাসই প্রফেসর বিন-এর প্রতিটি শব্দ ভাল করে লক্ষ্য করছে। ওদের সকলের দিকে ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি, সব কয়টা মুখই তার দিকে ফেরানো। আগ্রহের এমন আতিশয্যে হ্যারি একেবারে হতচকিত হয়ে গেছে।

ওহ, ঠিক আছে, বললেন প্রফেসর ধীরে ধীরে, দেখা যাক…চেম্বার অফ সিক্রেটস…

তোমরা সবাই নিশ্চয়ই জান যে প্রায় এক হাজার বছর আগে হোগার্টস স্থাপন করা হয়েছিল–সঠিক তারিখটা বলা যাচ্ছে না। সেই যুগের চার শ্রেষ্ঠ জাদুকর এবং ডাইনীর দ্বারা। তাদের নামানুসারেই স্কুলের চারটি হাউজের নামকরণ করা হয়েছে : গড্রিক গ্রিফিল্ডর, হেলগা হাপলপাফ, রোয়েনা ব্ল্যাভেনক্ল এবং সালাজার স্লিথারিন। মাগলদের অনুসন্ধিৎসু চোখের অনেক দূরে তারা এই ক্যাসলটি তৈরি করেছিলেন। কারণ তখন সময়টাই ছিল এমন যে সাধারণ মানুষ জাদুকে ভিষণ ভয় পেত এবং সে সময় জাদুকর ও ডাইনীদেরকে প্রচুর নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।

তিনি থামলেন, ঝাপসা চোখ জোড়া রুমের চারদিকে বুলিয়ে নিলেন, এবং আবার বলতে শুরু করলেন, কয়েক বছর, প্রতিষ্ঠাতারা একসঙ্গে সমন্বিতভাবে শান্তিতে কাজ করলেন, শিশু কিশোর যাদের মধ্যে জাদুর প্রতিভা রয়েছে তাদের খুঁজে খুঁজে স্কুলে এনে শিক্ষিত করে তুলতেন। এরপর তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিল। স্লিথারিন এবং অন্যদের মধ্যে বিভেদ শুরু হয়ে গেল। স্লিথারিন চেয়েছিলেন স্কুলের ভর্তির প্রশ্নে ছাত্রদের বাছাই করতে হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন জাদুবিদ্যা শুধু মাত্র জাদুকর–পরিবারগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। মাগল বাবা-মার সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাটা তার পছন্দ ছিল না। তিনি মনে করতেন তারা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিছুদিন পর এ বিষয়ে থিরিন এবং গ্রিফিল্ডারের মধ্যে প্রবল বিতর্ক হয় এবং স্লিথারিন স্কুল ত্যাগ করেন।

প্রফেসর বিন আবার থামলেন, ঠোঁট চেপে ধরলেন ঠোঁট দিয়ে, ওঁকে দেখাচ্ছিল চামড়ায় ভাঁজ পরা বুড়ো কচ্ছপের মতো।

বিশ্বাসযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্র আমাদের এটুকু তথ্যই দিয়েছে, তিনি বললেন, কিন্তু এই তথ্যগুলো ঢাকা পড়ে গেছে চেম্বার অফ সিক্রেটস এর কল্প কাহিনীর আড়ালে। গল্পটা এমন যে, ক্যাসূল-এর মধ্যে স্লিথারিন একটি লুকানো প্রকোষ্ঠ তৈরি করেছিলেন, এটাই দ্য চেম্বার অফ সিক্রেট। যে বিষয়ে স্কুলের অন্য স্থপতিরা কিছুই জানতেন না।

কাহিনী অনুসারে, স্লিথারিন চেম্বার অফ সিক্রেটস বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যেন তার প্রকৃত কোন উত্তরাধিকার স্কুলে আসার আগে কেউ ওটা খুলতে না পারে। উত্তরাধিকারই কেবলমাত্র চেম্বার অফ সিক্রেট খুলতে সক্ষম হবে, ভেতরে যে ভয়ঙ্কর রয়েছে ওটাকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে এবং ওকে ব্যবহার করে স্কুল থেকে সেই সব ছাত্রদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হবে যারা জাদুবিদ্যা পড়ার যোগ্য নয়।

প্রফেসরের কথা শেষ হওয়ার পর ক্লাসরুমে নিরবতা নেমে এলো, কিন্তু প্রফেসর বিনসের ক্লাসরুমে ঘুমের কারেণ যে স্বাভাবিক নিরবতা থাকে সেটা তেমন কিছু ছিল না। একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ, সবাই তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আরো কিছু শোনার আশায়। প্রফেসর বিনকে সামান্য বিচলিত মনে হলো।

পুরো বিষয়টাই ডাহা অর্থহীন নিশ্চয়ই, তিনি বললে। স্বাভাবিকভাবে, ওরকম একটা চেম্বারের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়ার জন্য পুরো স্কুল খোঁজা হয়েছে, অনেকবার, সবচেয়ে শিক্ষিত জাদুকর এবং ডাইনীদের দ্বারা। এ রকম কোন চেম্বারের অস্তিত্ব নেই। ধোকা দিয়ে ভয় দেখানোর জন্যেই এ গল্পটির প্রচলন হয়েছিল।

হারমিওনের হাত আবার উপরে উঠল।

স্যার–চেম্বারের ভেতরের ভয়ংকর বলতে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন?

বিশ্বাস করা হয় যে ওখানে কোন একটা রাক্ষস বা পিশাচ রয়েছে, যেটাকে একমাত্র স্নিথারিনের প্রকৃত উত্তরাধিকারীই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে, প্রফেসর বিনস তার শুকনো তীক্ষ্ণ স্বরে।

ক্লাসের মধ্যে নার্ভাস দৃষ্টির বিনিময় হলো।

আমি তোমাদের বলছি, ওটার কোন অস্তিত্বই নেই, বললেন প্রফেসর বিনস, ওঁর নোটগুলো গোছাতে গোছাতে। কোন চেম্বার নেই পিশাচও নেই।

কিনতু স্যার, বলল সিমাস ফিনিগান, যদি চেম্বারটা শুধুমাত্র স্লিথারিনের আসল উত্তরাধিকারই খুলতে সক্ষম হয়, তাহলে অন্যরা সেটা খুঁজে পাবে কি?

ননসেন্স, ও ফ্লাহেরটি, বললেন প্রফেসর বিনস গুরুতর কণ্ঠে। যদি হোগার্টস-এর হেডমাস্টার এবং হেডমিস্ট্রেসগণ দীর্ঘদিন ওটা না পেয়ে থাকে

কিন্তু প্রফেসর, মাঝখানে বলল পার্বতী পাতিল,ওটা খুলতে হয়তো আপনাকে কালো জাদু প্রয়োগ করতে হতো।

একজন জাদুকর কালো জাদু প্রয়োগ করে না, তার মানে এই নয় যে সে কালো জাদু জানে না, ব্যাপারটা এমন নয় মিস পেনিফেদার, ঝট করে বললেন প্রফেসর। আমি আবার বলছি, যদি ডামবলডোরের মতো

কিন্তু স্লিথারিনের সঙ্গে তো সম্পর্ক থাকতে হবে, সেই কারণে ডাম্বলডোর হয়তো– শুরু করেছিল ডিন থমাস, কিন্তু প্রফেসর বিনস অনেক সহ্য করেছেন।

ওতেই হবে, বললেন তিনি ধারালো কণ্ঠে। এটা একটা উপ–কথা! এর কোন অস্তিত্ব নেই! স্লিথারিন যে এমন একটি গোপন ঝাড়ু–কাবার্ড বানিয়ে ছিলেন এর বিন্দুমাত্র প্রমাণ কোথাও নেই। এরকম একটি অর্থহীন গল্প বলবার জন্যে এখন আমার আফসোস হচ্ছে। আমরা এখন ফিরে যাবো, যদি তোমরা একমত হও, ইতিহাসে, একবারে নিরেট, বিশ্বাসযোগ্য এবং প্রমাণযোগ্য সত্যে।

এবং পাঁচ মিনিটের মধ্যে, ক্লাস আবার গতানুগতিক নিদ্রায় ঢলে পড়ল।

***

আমি সব সময়ই জানতাম সালাজার স্লিথারিন একজন বিকৃত বুড়ো উন্মাদ, রন বলল হ্যারি আর হারমিওনকে। ওরা ঠেলে ঠুলে যাচ্ছে করিডোরের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে, লাঞ্চের আগে বাগ–রুমে ব্যাগ রাখতে। কিন্তু আমি কখনো শুনিনি তিনিই এই বিশুদ্ধ–রক্ত ইস্যুটা শুরু করেছেন। আমাকে পয়সা দিলেও আমি তার হাউজে কখনো যাবো না। সত্যি কথা বলতে কি, বাছাই হ্যাট যদি আমার জন্যে স্লিথারিন হাউজ নির্ধারণ করত তাহলে সোজা ফিরতি ট্রেন ধরে বাড়ি চলে যেতাম…

হারমিওন মাথা নাড়ছে দ্রুত, কিন্তু হ্যারি কিছু বলল না। ওর পাকস্থলী যেন ভেতরে সেঁধিয়ে গেল, ব্যাপারটা অস্বস্তিকর।

রন এবং হারমিওনকে হ্যারি কোনদিনই বলেনি যে বাছাই হ্যাটটা ওকে সিরিয়াসলি স্নিখারিন হাউজেই পাঠাবার চেষ্টা করেছিল। এখনও সে মনে করতে পারে, যেন এই সেদিনের কথা, সেই নিচু স্বর, মাথায় হাট পড়বার পর তার কানে কানে কথা বলছিল।

তুমি বড় একটা কিছু হতে পারবে, তুমি জান, তোমার মাথায় তার সব উপাদান রয়েছে, এবং বড় হওয়ার পথে স্লিথারিন তোমাকে সাহায্য করবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই…

কিন্তু, হ্যারি, আগেই জেনেছে কালো জাদুকর বানাবার ব্যাপারে ক্লিথারিন হাউজের খ্যাতি সম্পর্কে, মরিয়া হয়ে ভেবেছে, ক্লিথারিন হাউজ নয়! এবং হ্যাটটা বলেছে, ওহ, বেশ, যদি তুমি এত নিশ্চিত হও …তাহলে গ্রিফিল্ডরই ভাল…

ভিড় তাদেরকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, কলিন ক্রিভি তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল।

হায়, হ্যারি!

হ্যালো, কলিন, বলল হ্যারি সঙ্গে সঙ্গে।

হ্যারি হ্যারি–আমাদের ক্লাসের একটি ছেলে বলছিল তুমি

ভিড় কলিনকে ঠেলে গ্রেট হলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ও এত ছোট যে এই চাপের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছে না; ওরা শুনল ও যেন চিকন স্বরে বলছে, দেখা হবে, হ্যারি! এবং হারিয়ে গেল সে।

ওর মতো একটা ছেলে তোমার সম্পর্কে কি বলছিল? হারমিওন অবাক হলো।

মনে হয়, যে, আমিই স্লিথারিনের উত্তরাধিকারী, বলল হ্যারি, ওর পাকস্থলী আরো ইঞ্চি খানেক ভেতরে সেঁধিয়ে গেল, যখন তার মনে হলো তাকে দেখে কেমন করে জাস্টিন ফিঞ্চ ফ্লেচলি দৌড়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

এখানে মানুষ যে কোন কিছুই বিশ্বাস করে, বলল রন বিরক্তিভরে।

করিডোরের ভিড় কমে এসছে, উপরের তলায় সহজেই পৌঁছে গেল ওরা।

তুমি কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে চেম্বার অফ সিক্রেটস–টা আসলেই রয়েছে? হারমিওনকে জিজ্ঞাসা করল রন।

আমি জানি না, জবাব দিল সে ভ্রূ কুঁচকে। ডাম্বলডোর মিসেস নরিসকে সুস্থ করে তুলতে পারেননি, এবং এ ঘটনাটাই আমাকে চিন্তিত করে তুলেছে যে যেই মিসেস মরিসকে আক্রমণ করে থাকুক না কেন সে হয়তো, মানে মানুষ নয়।

যেই না কথা শেষ করেছে হারমিওন মোড় ঘুরে সেই কোনাটায় এলো যেখানে মিসেস মরিসের উপর আক্রমণ হয়েছিল। ওরা থামল, যায়গাটা দেখল। দৃশ্যটা সে রাতের মতোই এক রকম, শুধু মাত্র মশালের ব্র্যাকেট থেকে কোন শক্ত হয়ে উঠা বিড়াল ঝুলছে না। দেয়ালের গায়ে লাগানো একটি শূন্য চেয়ারে রয়েছে একটি নোটিশ : চেম্বার খোলা হয়েছে।

ওখানেই পাহারা দিচ্ছে ফিলচ, বিড় বিড় করে বলল রন।

ওরা পরস্পরের দিকে চাইল। ওরা ছাড়া করিডোরটা একেবারে শূন্য।

আশপাশটা একবার দেখে নিলে নিশ্চয়ই সমস্যা হবে না, বলল হ্যারি। হাত থেকে ব্যাগটা ছেড়ে দিয়ে, চার হাত পায়ে হামাগুড়ি দিয়ে খুঁজছে ও, যদি কোন সূত্র পাওয়া যায়। আঁচড়ানোর দাগ! বলল ও। এখানে–আর এখানে

এসে এখানে দেখে যাও! বলল হারমিওন। এটা অদ্ভুত…

হ্যারি উঠে দেয়াল লিখনের পাশের জানালার কাছে গেল। হারমিওন সবচেয়ে উপরের কাঁচটার দিকে দেখাল, ওখানে প্রায় বিশটি মাকড়শা কাঁচের একটি ছোট্ট ফাটলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য দৃশ্যত লড়াই করছে। একটা লম্বা রূপালি সূতা রশির মতো ঝুলে রয়েছে, যেন ওরা সকলেই তাড়াতাড়ি বাইরে যাওয়ার জন্যে ওটা বেয়েই ওপরে উঠেছে।

তোমরা কি কখনও মাকড়শাকে এমন আচরণ করতে দেখেছ? জিজ্ঞাসা করল হারমিওন অবাক হয়ে।

না, বলল হ্যারি, তুমি দেখেছ রন? রন?

সে ওর কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে তাকাল। অনেক পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রন, এবং মনে হচ্ছে যেন দৌড় দেয়ার ইচ্ছাটা অনেক কষ্টে দমন করছে।

কি হয়েছে? বলল হ্যারি।

আমি–মাকড়শা–পছন্দ–করি–না, বলল রন কাঠ হয়ে।

আমি তো কখনও জানতে পারিনি, বলল হারমিওন রনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। অনেক সময়ই পোশন বানাবার জন্যে তুমি মাকড়শা ব্যবহার করেছ।

মৃত হলে আমার কোন সমস্যা হয় না, বলল রন, সাবধানতার সঙ্গে ও তাকাচ্ছে, তবে জানালা ছাড়া অন্য সব দিকে। ওরা যেভাবে নড়েচড়ে আমার ভাল লাগে না…।

ফিক ফিক করে হাসল হারমিওন।

এটা কোন তামাশা না, প্রচণ্ড রেগে গেছে রন। তোমার যদি জানতে ইচ্ছে করে তো বলি, আমার যখন তিন বছর, ফ্রেড আমার–আমার টেডি বিয়ারটাকে নোংরা একটা বিরাট মাকড়শা বানিয়েছিল, আমি ওর ব্রুমস্টিকটা ভেঙ্গেছিলাম বলে। তুমিও ওদের পছন্দ করবে না যদি দেখো তোমার হাতে ধরা টেডি বিয়ারটার হঠাৎ অনেকগুলো পা গজিয়ে যায় এবং…

থেমে গেল রন, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। হারমিওন অবশ্য এখনও চেষ্টা করছে না হাসার জন্যে। বিষয় পরিবর্তন করাটাই ভাল মনে করে হ্যারি বলল, মেঝের ওপর পানির কথা মনে আছে? ওমা পানি কোত্থেকে এসেছিল? কেউ মুছে ফেলেছে।

এখানে ছিল, নিজেকে সামলে নিয়ে বলল রন, ফিলচ-এর চেয়ার পেরিয়ে কয়েক পা এগিয়ে গেছে সে, আঙুল দিয়ে দেখলে,এই দরজার সমান সমান।

সে দরজার পিতলের নবের দিকে হাত বাড়াল কি যেন আগুনের হুঁকি লেগেছে এমনি করে হাতটা ফিরিয়েও আমল সঙ্গে সঙ্গে।

কি হলো? প্রশ্ন করলো হ্যারি।

এখানে যেতে পারব না, বলল রন মেজাজ খারাপ করে, এটা মেয়েদের টয়লেট।

ওহ, রন, এখন ওখানে নিশ্চয়ই কেউ নেই, বলল হারমিওন, কাছে এসে দাঁড়িয়ে। ওটাই মোনিং মার্টলের যায়গা, এসো দেখা যাক।

এবং একটা বিরাট কাজ করে না লেখাটাকে অগ্রাহ্য করে সে দরজাটা খুলে ফেলল।

ওটা ছিল হ্যারির দেখা সবচাইতে খারাপ নোংরা যাচ্ছেতাই বাথরুম। বিশাল একটা ফাটা এবং দাগভর্তি আয়নার নিচে এক সারি পাথরের ভাঙ্গা সিংক। মেঝেটা স্যাঁতস্যাঁতে এবং কয়েকটা মোমের মলিন আলোর প্রতিফলন করছে। হোল্ডারের মধ্যে মোমলো স্কুলে প্রায় শেষ হয়ে আসছে। কিউবিকলগুলোর কাঠের দরজার চলটে উঠে গেছে এবং একটা দরজা ঝুলে আছে কব্জা থেকে।

হারমিওন ঠোঁটে আঙুল রেখে ইশারা করল চুপ থাকতে এবং নিজে এগিয়ে গেলো সবচেয়ে কোনার কিউবিকলটার দিকে। ওখানে পৌঁছে জিজ্ঞাসা করল, হ্যালো, মাল, কেমন আছো তুমি?

হ্যারি আর রনও এগিয়ে গেল দেখা জন্যে। যোনিং মার্টল টয়লেটের সিসটার্ন-এর উপর ভাসছে, থুতনিতে দাগ একটা।

এটা মেয়েদের বাথরুম, রন এবং হ্যারির দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি দিয়ে বলল সে। ওরা তো মেয়ে নয়।

না, একমত হলো হারমিওন। আমি শুধু ওদের দেখাতে চেয়েছিলাম এখানে ভেতরটা কত সুন্দর।

হাত দিয়ে অনির্দিষ্টভাবে পুরনো নোংরা আয়না আর স্যাঁতস্যাঁতে মেঝে দেখাল।

ওকে জিজ্ঞাসা করো কিছু দেখেছে কি না, হারমিওনের কানে কানে বলল হ্যারি।

ওদের দিকে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মার্টল বলল, ওর কানে কি ফিসফিস করছ?

কিছু না, দ্রুত বলল হ্যারি। আমরা জানতে চেয়েছিলাম।

যদি লোকজন আমার পেছনে কথা বলা বন্ধ করত শুধু! কান্নাভেজা গলায় বলল মার্টল। আমি মৃত হলেও,জেনো আমারও আবেগ অনুভূতি রয়েছে। মার্টল কেউ তোমাকে বিব্ৰত করতে চায় না, বলল রমিওন। হ্যারি শুধু

আমাকে কেউ বিব্ৰত করতে চায় না। ভাল বলেছ! হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল মার্টল। এ যায়গায় আমার জীবন কষ্টের ছাড়া আর কিছুই ছিল না, আর এখন মানুষ আসছে আমার মৃত্যুটাকেও ধ্বংস করতে!

আমরা তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম সম্প্রতি তুমি এখানে অদ্ভূত কিছু দেখেছ কি না, তাড়াতাড়ি বলল হারমিওন, কারণ হলোঈন দিবসে তোমার দরজার ঠিক বাইরে একটা বিড়াল আক্রান্ত হয়েছিল।

তুমি কি সে রাতে কাছাকাছি কাউকে দেখেছ? জানতে চাইল হ্যারি।

আমি খেয়াল করিনি, নাটকীয়ভাবে বলল মার্টল। পিভস আমার মেজাজটা এতই খিঁচড়ে দিয়েছিল যে এখানে এসে আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। তারপর, অবশ্য আমার মনে পড়ে গেলো যে আমি–আমি

আগেই মরে গেছি, সাহায্য করল রন।

হৃদয়বিদারক কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মার্টল, বাতাসে ভেসে উঠল, অন্যদিকে ফিরল এবং মাথা নিচু করে টয়লেটের মধ্যে দিল ঝাপ, ওদের সকলের গায়ে পানি ছিটিয়ে চোখের আড়ালে চলে গেলো; ওর চাপা কান্নার আওয়াজ থেকে বোঝা যাচ্ছে টয়লেটের পাইপটা যেখানে বেঁকেছে ওখানে কোথাও ও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

হ্যারি আর রন দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু হারমিওন ক্লান্তিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, সত্যি, ওটা ছিল মার্টলের প্রায় আনন্দের…চলো যাওয়া যাক।

মার্টলের ঘড়ঘড়ে কান্নার মধ্যে হ্যারি যেই না ওদের পেছনে দরজাটা বন্ধ করেছে ওমনি একটা উচ্চস্বরে ওরা চমকে প্রায় লাফিয়ে উঠল।

রন!

সিঁড়ির মাথায় পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে পার্সি উইসলি, চক চক করছে প্রিফেক্ট ব্যজিটা, যেন বড় ধরনের কোন শক পেয়েছে চেহারাটা এমন হয়েছে ওর।

ওটা মেয়েদের বাখরুম! ঘন ঘন শ্বাস ছাড়ছে। ওখানে তোমরা কি

একটু ঘুরে ফিরে দেখছি, কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল রন। সূত্র, বুঝেছ সূত্র…

রাগে পার্সি এমন ফুলছে, এমনভাবে যে হ্যারির মনে পড়ল মিসেস উইসলির কথা।

ওখান–থেকে—সরে দাঁড়াও সে বলল, বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে ওদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ করল সে হাত ঝাপটা মেরে। ব্যাপারটা কি রকম হচ্ছে সে বিষয়ে কি তোমাদের হুশ নেই? সবাই যখন ডিনারে তখন আবার এখানে আসা…

আমরা কেন এখানে আসব না? রাগ হয়ে বলল রন, থেমে দাঁড়িয়ে জ্বলন্ত চোখে পার্সির দিকে তাকালো। শোন আমরা ওই বেড়ালটার গায়ে আঙুলের টোকাও দিইনি!

ওটাই আমি জিনিকে বলেছি, তীব্রভাবে বলল পার্সি, তবুও সে মনে করে তোমাদেরকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করাই হবে; ওকে আমি কখনো এমন বিচলিত দেখিনি, কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। তোমরা হয়তো ওর কথাই ভাবছ, আসলে ফার্স্ট ইয়ারের সব ছাত্রই এ ব্যাপারটা নিয়ে অতি উত্তেজিত

জিনির জন্য তোমার কোন মাথা ব্যথা নেই, বলল বন, ওর কান দুটো লাল হয়ে গেছে। তুমি শুধু চিন্তিত আমি তোমার হেড বয় হওয়ার সুযোগটা ভন্ডুল করে দেব।

গ্রিফিল্ডরের কাছ থেকে পাঁচ পয়েন্ট! সংক্ষেপে বলল পার্সি, ওর প্রিফেক্ট ব্যাজটায় আঙুল বুলাতে বুলাতে। আশা করব এটা তোমাকে শিক্ষা দেবে। আর কোনো গোয়েন্দাগিরি নয়, হলে আমি মাকে লিখে দেবো।

পা চালিয়ে চলে গেলো পার্সি, ওর ঘাড়ের পেছন দিকটা রনের মতোই লাল হয়ে রয়েছে।

***

সে রাতে হ্যারি, রন আর হারমিওন কমন রুমে পার্সির কাছ থেকে যথা সম্ভব দূরে বসল। তখনও মেজাজ খারাপ বনের এবং সে তার চার্মস হোমওয়ার্কটা কালি দিয়ে নষ্ট করছে। যখন ও অন্যমনস্কভাবে ওর ম্যাজিক ওয়াল্ড দিয়ে কালি মুছবার চেষ্টা করল পার্চমেন্টটাতে আগুন ধরে গেল। ওর হোমওয়ার্কটাকেই ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিল, দড়াম করে দ্য স্ট্যান্ডার্ড বুক অফ স্পেস, গ্রেড ২ বন্ধ করল রন। হ্যারিকে বিস্মিত করে হারমিওনও একই কাজ করল।

কে হতে পারে, শান্ত স্বরে বলল হারমিওন, যেন তাদের মধ্যে যে কথা হচ্ছিল সেটাই চালিয়ে যাচ্ছে সে। কে চাচ্ছে সব স্কুইব এবং মাগল–জাতদের হোগার্টস ছাড়া করতে?

ভাবতে দাও, কৃত্রিম বিভ্রান্তির ভান করে বলল। আমরা কাকে জানি যে মনে করে মাগল–জাতরা জঞ্জাল?

সে তাকাল হারমিওনের দিকে। হারমিওন তাকাল ওর দিকে, বিশ্বাস করছে না।

তুমি যদি ম্যালফয়ের কথা বলো

নিশ্চয়ই আমি ম্যালফয়ের কথা বলছি? বলল রন। তুমি শুনেছ ওর কথা : এরপর তোমাদের পালা মাডব্লাডস! বিশ্বাস করো ওই যে সেই সেটা বোঝার জন্য তোমাকে শুধু ওর ইঁদুরের মতো নেংরা চেহারাটার দিকে তাকাতে হবে

ম্যালফয়, স্নিথারিনের উত্তরাধিকার? সন্দেহের স্বরে বলল হারমিওন।

ওর পরিবারের কথাই ধরো, বই গোছাতে গোছাতে বলল হ্যারি। ওরা সকলেই স্লিথারিন হাউজে থেকেছে, সে সব সময় এ নিয়ে গর্বও করে। শুরা খুব সহজে স্লিম্যারিনের উত্তরাধিকার হতে পারে। ওর বাবা সে রকমই বেশ শয়তান।

ওদের কাছে চেম্বার অফ সিক্রেটস এর চাবিও থাকতে পারে যুগ যুগ ধরে! বলল রন। এবং পিতা থেকে পুত্রের হাতে ক্রমান্বয়ে সেটা দিয়েও যেতে পারে…

বেশ, বলল হারমিওন সতর্কতার সঙ্গে, আমার মনে হয় এটা সম্ভব হতে পারে…

কিন্তু আমরা সেটা প্রমাণ করব কিভাবে? চিন্তিত স্বরে বলল হ্যারি।

নিশ্চয়ই একটা উপায় থাকতে পারে, ধীরে ধীরে বলল হারমিওন, রুমের অন্যদিকে পার্সির দিকে দ্রুত দৃষ্টি বুলিয়ে ওর স্বর আরো নামিয়ে। অবশ্য এটা খুবই কঠিন হবে। এবং বিপদজনক, খুব বিপদজনক। আশা করছি এর জন্যে আমাদেরকে স্কুলের গোটা পঞ্চাশেক নিয়ম ভাংতে হবে।

মাস খানেকের মধ্যে, যদি তোমার মনে চায়, তুমি আমাদের ব্যাখ্যা করে বলতে পারো, পারো না? বিরক্ত হয়ে বলল রন।

বেশ, শীতল কণ্ঠে বলল হারমিওন। আমাদের যা করতে হবে, সেটা হচ্ছে থিরিন কমন রুমে ঢুকে ম্যালফয়কে কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে হবে, কিন্তু ও যেন টের না পায় আমরাই প্রশ্নগুলো করছি।

কিন্তু সেটা অসম্ভব, বলে হ্যারি এবং রন হেসে উঠল।

না, একেবারেই না, বলল হারমিওন। আমাদের শুধু দরকার হবে কিছু পরিমাণে পলিজুস পোশন।

সেটা আবার কি? এক সঙ্গে জিজ্ঞাসা করল হ্যারি আর রন।

কয়েক সপ্তাহ আগে স্নেইপ ওটার কথা ক্লাসে বলেছিল

তোমার কি মনে হয় পোশন সম্পর্কে স্নেইপের লেকচার শোনা ছাড়া আমাদের ভাল আর কিছু করার নেই? বিড় বিড় করে বলল রন।

এটা তোমাকে অন্য ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করে। ভেবে দেখো! আমরা তিন জন স্লিথারিনে রূপান্তরিত হতে পারি। কেউই জানবে না যে আমরা ছিলাম। ম্যালফয় হয়তো আমাদের কাছে যে কোনো কথাই বলবে। হয়তো ঠিক এখনই সে এ নিয়ে স্লিথারিন কমন রুমে বড়াইও করছে, যদি শুধু আমরা ওর কথা শুনতে পারতাম।

এই পলিজুস-এর ব্যাপারটা আমার কাছে একটু ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে, বলল রন ভ্রূ কুঁচকে। যদি আমরা তিনজন চিরদিনের জন্যে শ্লিথারিনের মতো দেখতে রয়ে যাই, তাহলে কি হবে?

কিছুক্ষণ পরই পোশনটার কার্যকারিতার আয়ু শেষ হয়ে যায়, অস্থিরভাবে হাত নেড়ে বলল হারমিওন, কিন্তু ওটা পাওয়াই খুব কঠিন। স্নেইপ বলেছিলেন। ওটা মোস্তে পোর্টে পেশনুস বইয়ে রয়েছে এবং অবশ্যই এটা লাইব্রেরীর সংরক্ষিত অংশে রয়েছে।

লাইব্রেরেরীর সংরক্ষিত অংশ থেকে বই বের করবার একটাই উপায় রয়েছে। একজন শিক্ষকের স্বাক্ষর করা লিখিত অনুমতি পত্র থাকতে হবে।

বইটা আমরা কেন চাচ্ছি, বলল রন, যদি না আমরা এর থেকে কোন পোশন বানানোর চেষ্টা না করি।

আমার মনে হয়, বলল হারমিওন, যদি আমরা এমন বোঝাতে পারি যে আমরা শুধু থিওরিতেই আগ্রহী তাহলে হয়তো আমাদের একটা সম্ভাবনা রয়েছে…।

ওহ, কি যে বলো, কোনো টিচারই এতে কনভিন্সড হবে না, বলল রন। যুক্তিটা সত্যিই জোরালো হতে হবে…

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত