হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন: দু’মুখো মানুষ

হ্যারি পটার এন্ড দি ফিলসফারস স্টোন: দু’মুখো মানুষ

১৭. দু’মুখো মানুষ

সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যাপক কুইরেল।

আপনি! অবাক হয়ে হ্যারি জিজ্ঞেস করল।

কুইরেল মুচকি হাসলেন। তার মুখ অন্য সময়ের মত এখন কাঁপছিলো না।

হ্যাঁ, আমিই। কুইরেল জবাব দিলেন। আমি নিশ্চিত ছিলাম তোমার সাথে এখানে দেখা হয়ে যাবে, মি. পটার।

আমি ভেবেছিলাম, আমি এখানে স্নেইপকে দেখতে পাব। হ্যারি বলল।

সেভেরাস? অধ্যাপক কুইরেল হাসলেন। তবে তার হাসিটাও অন্য সময়ের মত নয়। ছিল তীক্ষ্ণ ও শীতল। তারপর বললেন–হ্যাঁ, সেভেরাসকে ওই রকমই মনে হয়। তাই নয় কি? বড় বাদুরের মত তিনি ছোঁ মারতে পারেন। তাকে নিয়ে এলে ভালোই হতো। কেউ কি বিশ্বাস করতে পারবে এখানে আসবেন অধ্যাপক কুইরেল।

হ্যারি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।

কিন্তু স্নেইপই তো আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। হ্যারি বলল।

না, না, এটা ঠিক নয়। কুইরেল জবাব দিলেন–আমিই তোমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলাম। তোমার বন্ধু মিস গ্রেঞ্জার কিডিচ প্রতিযোগিতায় যখন আগুন লাগাতে যায় তখন সে হুমড়ি খেয়ে আমার গায়ের ওপর পড়ে। সে তোমার সাথে আমার আই কন্টাক্ট ভেঙে দিয়েছিল। আর কয়েকটি মুহূর্ত হাতে পেলে আমি তোমার কাছ থেকে ঝাড়ু কেড়ে নিতাম। তোমাকে বাঁচাবার জন্য স্নেইপ যদি মন্ত্র উচ্চারণ না করতেন, তাহলে সেদিনই তোমার একটা কিছু হয়ে যেত।

আপনি বলেন কি? স্নেইপ আমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন! হ্যারি বিস্ময়মাখা স্বরে প্রশ্ন করল।

অবশ্যই। কুইরেল জবাব দিলেন–তুমি কি জানোনা তোমার পরবর্তী প্রতিযোগিতায় তিনি কেন রেফারি হতে চেয়েছিলেন। বোকা একটা… তার ভাবা উচিত ছিল, যতক্ষণ ডাম্বলডোর খেলা দেখছিলেন ততক্ষণ তোমার কোন অনিষ্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অন্য সকল টিচার ভেবেছিলেন স্নেইপ গ্রিফিল্ডরকে বাধা দিতে চান। স্নোইপ নিজেকে সকলের কাছে অপ্রিয় করে তুলেছিলেন। সময় নষ্ট আর করা কেন, এত কিছুর পর আমি তোমাকে হত্যা করতে যাচ্ছি। অধ্যাপক কুইরেল তার হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁক করে কাঁপালেন, অমনি একটা রশি বাতাসে শাপের মত লাফিয়ে হ্যারিকে শক্ত করে বেঁধে ফেলো।

তুমি সব কিছুতেই নাক গলাও পটার। তোমার বেঁচে থাকাটা বিপজ্জনক। স্কুলের চারদিক ঘুরে বেড়াও। আমি জানি পাথরটা কে পাহারা দিচ্ছে দেখতে এসে তুমি সেখানে আমাকে দেখেছিলে।

তাহলে আপনিই সেই দানবটাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন? হ্যারি জানতে চাইল।

হ্যাঁ, আমিই সে দানবটাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম। অধ্যাপক কুইরেল জবাব দিলেন–তবে আমার একটু ভুল হয়ে গিয়েছিল। স্নেইপ আমাকে সন্দেহ করে দৌড়ে তিন তলায় আমাকে মোকাবিলা করার জন্য চলে এলেন। তিনি আমাকেই শুধু ব্যর্থ করে দেননি, দানবটা তোমাকেও হত্যা করতে পারেনি। শুধু তাই নয়, ওই তিন মাথা কুকুরটাও স্নেইপের পা–টা ভালো করে জখম করতে পারেনি।

কিছুক্ষণ থেমে কুইরেল বললেন–হ্যারি, একটু অপেক্ষা কর। আমি এই মজার আয়নাটা নিয়ে একটু পরীক্ষা করতে চাই।

আর ঠিক তখনই হ্যারি বুঝতে পারল কুইরেলের পেছনে যে আয়না সেটা এরিসেডের আয়না।

ফিরে এসে কুইরেল বললেন-এই আয়নাটি হল পরশমণি পাবার চাবিকাঠি।

কুইরেলের উদ্দেশ্যে হ্যারি বলল–আমি আপনাকে ও স্নেইপকে অরণ্যে দেখেছি।–হ্যারি কুইরেলকে কথায় ব্যস্ত রাখতে চায়।

তুমি ঠিকই দেখেছ। আয়নাটা দেখতে দেখতে কুইরেল বললেন তিনি সব সময় আমাকে সন্দেহ করেন। তাই তিনি দেখতে এসেছিলেন আমি কত দূর এগিয়েছি। ভোলডেমর্ট আমার পক্ষে থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন।

কুইরেল আয়নার পেছন থেকে ফিরে এসে ক্ষুধার্তের মত আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

কুইরেল বললেন–আমি পাথরটা দেখতে পাচ্ছি। আমি এটা আমার প্রভুকে উপহার দিতে যাচ্ছি। কিন্তু পাথরটা গেল কোথায়?

হ্যারি দড়ির বাঁধন শিথিল করার চেষ্টা করছিল। হ্যারি বুঝল তার এখনকার কর্তব্য হলো আয়না থেকে কুইরেলের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা।

কিন্তু স্নেইপ সব সময় আমাকে দারুণ ঘৃণা করেন। হ্যারি বলল।

হ্যাঁ, স্নেইপ তোমাকে ঘৃণা করেন। হোগার্টসে তিনি তোমার বাবার সাথেই ছিলেন। তারা একে অপরকে খুব ঘৃণা করতেন। তবে তিনি কখনই তোমার মৃত্যু চাননি।

আমি শুনলাম হ্যারি বলল–কয়েকদিন আগে আপনি ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। কারণ স্নেইপ আপনাকে হুমকি দিয়েছিলেন?

প্রথমবারের মতো কুইরেলের চেহারায় একটা ভয়ের ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠল।

কুইরেল জবাব দিলেন–কখনও কখনও প্রভুর নির্দেশ মেনে চলা আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি একজন উঁচু মাপের জাদুকর, আর আমি একজন মামুলী জাদুকর।

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, তিনি ক্লাস রুমে আপনার সাথেই থাকেন? হ্যারি জানতে চাইল।

আমি যেখানেই যাই তিনি আমার সাথে থাকেন। কুইরেল শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন। আমি যখন বিশ্বভ্রমণে বের হই তখন তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। আমি যখন তরুণ ছিলাম তখন ছিলাম বোকা। ভালো ও মন্দ সম্পর্কে আমার মনে উদ্ভট ধারণা ছিল। লর্ড ভোলডেমর্টই আমাকে বুঝিয়ে দিলেন যে আমার ধারণা কত অপরিপকু ছিল। তিনি আমাকে বোঝালেন যে ভালো বা মন্দ বলে কোন জিনিস নেই। যা আছে তা হলো শক্তি। তবে অনেকেই তা দেখতে পায় না। তারপর থেকেই আমি বিশ্বস্ততার সাথে তার সেবা করে যাচ্ছি। যদিও আমি তাকে বহুবার হতাশ করেছি। কোন ভুল তিনি সহজে ক্ষমা করেন না। আমার ভুলের জন্যই তিনি আমার সাথে কখনও কখনও কঠোর ব্যবহার করেন। আমি যখন গ্রিংগট থেকে পাথর চুরি করতে ব্যর্থ হই তখন তিনি আমার ওপর খুব অসন্তুষ্ট হন এবং আমাকে শাস্তি দেন। তারপর থেকেই তিনি আমাকে চোখে চোখে রাখা শুরু করেন। কুইরেলের কণ্ঠস্বর মিলিয়ে গেল। হ্যারির মনে পড়ল ডায়াগন এলির কথা। সে এত বোকা হল কী করে! সেই দিনই সে প্রথম অধ্যাপক কুইরেলকে দেখেছে এবং লিকি কলড্রেনে তার সাথে করমর্দন করেছে।

কুইরেলের নিঃশ্বাসে অভিশাপ।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি না পাথরটা কি আয়নার ভেতর? আমি কি আয়নাটা ভেঙে ফেলব?

হ্যারি দ্রুত ভাবছিল।

হ্যারি মনে মনে বললো–আমার এখন পৃথিবীতে সবচেয়ে কাম্য কাজ হলো–কুইরেলের আগে পরশমণিটি হস্তগত করা। আমি যদি আয়নাটা দেখি তাহলে আমি নিজেই জানতে পারব পরশমণিটা কোথায়? কুইরেলকে বুঝতে না দিয়ে আমি এ কাজটা কীভাবে করব?

কুইরেলের দৃষ্টি এড়িয়ে আয়নার কাছে যাবার জন্য হ্যারি বাঁ দিকে বাঁক নিল। হ্যারির পায়ের গোড়ালিতে দড়ি এত শক্তভাবে বাঁধা ছিল যে তার পক্ষে বাঁধনমুক্ত হওয়া কঠিন। সে বাঁধন মুক্ত করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গেল। কুইরেল এদিকে লক্ষ্য না করেই নিজে নিজে কথা বলছিলেন

এ আয়নাতে কী কাজ হয়। প্রভু, আমাকে সাহায্য কর।

সন্ত্রস্ত হয়ে হ্যারি এ প্রশ্নের উত্তর শুনতে পেল, আর উত্তরটাও ছিল কুইরেলের কণ্ঠস্বরে, ছেলেটাকে কাজে লাগাও! ছেলেটাকে কাজে লাগাও।

কুইরেল হ্যারির দিকে তাকালেন।

তারপর বললেন–পটার, এদিকে এসো।

কুইরেল হাতে তালি দিলেন। সাথে সাথে হ্যারির বাঁধন শিথিল হয়ে গেল। হ্যারি নিজের পায়ে দাঁড়াল।

এদিকে এসো। কুইরেল আবার তাকে ডাকলেন, বললেন–আয়নায় তাকিয়ে আমাকে বল কী দেখছ।

হ্যারি হেঁটে হেঁটে কুইরেলের কাছে এল।

আমাকে মিথ্যে বলতে হবে। হ্যারি মনে মনে বলল–আমি অবশ্যই দেখব, কিন্তু দেখার ব্যাপারে মিথ্যে বলব।

কুইরেল হ্যারির পেছনে এসে দাঁড়ালেন। কুইরেলের পাগড়ির বিশেষ গন্ধ হ্যারির নাকে এল। হ্যারি চোখ বন্ধ করে আয়নার সামনে দাঁড়াল এবং আবার চোখ খুলল।

আয়নাতে হ্যারি প্রথমে তার প্রতিবিম্ব দেখল। প্রথমে তার চেহারা বিবর্ণ দেখা গেলেও পর মুহূর্তেই দেখা গেল প্রতিবিম্বটা তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। প্রতিবিম্ব পকেট থেকে একটা রক্ত–রাঙা পাথর বের করল। এ দৃশ্য দেখার পর তার পকেটে সে একটা ভারী বস্তুর অস্তিত্ব অনুভব করল। অবিশ্বাস্যভাবে পাথরটা হ্যারির নাগালের ভেতর চলে এল।

কুইরেল জানতে চাইলেন–তুমি কী দেখতে পেলে?

সাহস সঞ্চয় করে হ্যারি বলল–আমি দেখলাম আমি ডাম্বলডোরের সাথে করমর্দন করছি। আমি গ্রিফিল্ডর হাউজের জন্য হাউজ কাপ জয়লাভ করেছি।

কুইরেল আবার অভিশাপ দিলেন।

কুইরেল বললেন–আমার সামনে থেকে দূর হয়ে যাও। হ্যারি একটু সরে গেল এবং পকেটে পরশমণির স্পর্শ অনুভব করল। সে কি পরশমণিটি বের করে ফেলবে?

হ্যারি পাঁচ কদমও এগোতে পারল না। কুইরেলের ঠোঁট নড়ছে না, কিন্তু তার কণ্ঠস্বরে শোনা গেল–সে মিথ্যা বলেছে। সে মিথ্যা বলেছে।

কুইরেল আবার বললেন–পটার তুমি ফিরে এসো। তুমি আসলে কী দেখেছ তা সত্যি করে বল।

কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি হলো।

আমি তার সাথে মুখোমুখি কথা বলতে চাই।–কুইরেলের সেই কণ্ঠস্বর।

প্রভু, তোমাকে আজ রাতে তত শক্তিশালী মনে হচ্ছে না।

এর জন্য আমার যথেষ্ট শক্তি আছে।

হ্যারির মনে হল সে শয়তালের জাদুর চক্রান্তে আটকে গেছে। সে তার পেশী নাড়াতে পারছে না। ভয়ে আর আতঙ্কে সে কুইরেলের দিকে তাকাল। কুইরেল তার পাগড়ি খুললেন। পাগড়িবিহীন তার মাথা অস্বাভাবিক রকম ছোট মনে হলো। পাগড়ি মাটিতে পড়ে গেল। এবার তিনি ধীরে ধীরে তার ঘাড় নাড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন

হ্যারির চিৎকার করে ওঠার কথা, কিন্তু তার মুখ দিয়ে কোন শব্দই বেরুচ্ছে না। যেখানে কুইরেলের পিঠ তার সামনে থাকার কথা, সেখানে সামনে থেকে দেখা গেল তার বিকট চেহারা। এত ভয়ঙ্কর চেহারা হ্যারি এর আগে কখনোই দেখেনি। এ চেহারাটা চর্কের মত শাদা, তীক্ষ্ণ লাল চোখ আর সাপের মত নাক দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। চেহারার দুপাশে দু রকম! দুজনের। কুইরেল আর ভোলমেট।

হ্যারি পটার। ফিসফিস শব্দ শোনা গেল।

হ্যারি পেছনে যেতে চাইল। কিন্তু তার পা চলছে না।

মুখটা বলছে–হ্যারি পটার, দেখতে পাচ্ছ আমার এখনকার রূপ। শুধু ছায়া আর ধোয়া দিয়ে অন্যের শরীর ধারণ করা যায়। ইউনিকর্নের রক্ত খেয়ে আমার শক্তি বহুগুণ বেড়ে গেছে। তুমি আগেই দেখেছ কুইরেলের রূপ ধরে, আমি অরণ্যে গিয়ে ইউনিকর্নর রক্তপান করেছি। এখন তুমি দয়া করে তোমার পকেট থেকে পরশমণিটা বের করে আমাকে দিয়ে দাও।

কুইরেল তা হলে সব জানে-এই কথা ভেবে হ্যারি পেছনে যেতে চাইল, কিন্তু তার পা চলছে না।

মুখটা হ্যারিকে বলল–বোকার মত কাজ করো না।

তোমার জীবন বাঁচাতে চাইলে আমার সাথে যোগ দাও। নতুবা তোমার বাবা–মার মতই তোমার পরিণতি হবে। তারা দুজনই মারা যাওয়ার সময় আমার অনুকম্পা চেয়েছিলেন।

মিথ্যুক। হ্যারি চিৎকার করে উঠল।

কুইরেল পেছন ফিরে হ্যারির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন যাতে ভোলডেমর্ট তাকে দেখতে পায়। শয়তানি মুখে মুচকি হাসি।

বড়ই মর্মস্পর্শী। শয়তানিমুখে উচ্চারিত হলো।

আমি সর্বদাই বীরত্বকে দাম দেই। তোমার বাবা–মাও সাহসী ছিলেন। প্রথমে আমি তোমার বাবাকে হত্যা করি। তিনি আমার সাথে সাহসের সাথে যুদ্ধ করেছেন। তোমার মায়ের মারা যাবার কথা ছিল না। তিনি তোমাকে বাঁচাবার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তার মৃত্যুকে ব্যর্থ করতে না চাইলে তুমি আমাকে পাথরটা দিয়ে দাও।

কখ্‌খনো না। হ্যারি জোর দিয়ে বলল।

হ্যারি লাফ দিয়ে আগুনের শিখার দিকে ধাবিত হল। ভোলডেমর্ট চিৎকার করে উঠল–তাকে পাকড়াও কর। পর মুহূর্তেই হ্যারি অনুভব করল যে কুইরেলের হাত তার মুষ্টির ওপরের অংশ স্পর্শ করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই হ্যারি তার কপালের কাটা দাগে তীব্র ব্যথা অনুভব করল। তার মনে হলো তার কপাল দুটুকরো হয়ে যাবে। সে তার সমগ্র সত্ত্বা দিয়ে জোরে চিক্কার দিল। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল, কুইরেল তাকে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তার ব্যথা অনেকটা কমে গেছে। কুইরেল কোথায় আছেন তা দেখার জন্য সে চারিদিকে তাকাল। কুইরেল ব্যথায় কুঁজো হয়ে তার আঙুল দেখছিলেন।

পাকড়াও কর। তাকে পাকড়াও কর। আবার ভোলডেমর্টের চিৎকার।

কুইরেল আবার উঠে হ্যারিকে মাটিতে ফেলে দিয়ে তার গলা চেপে ধরেছে। হ্যারির কপালের কাটা দাগের ব্যথা অনেক বেড়ে গেছে। তারপরও সে দেখতে পেল যে কুইরেল নিজে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

কুইরেল চিৎকার করছেন–প্রভু, আমি তাকে আর ধরে রাখতে পারছি না–আমার হাত আমার হাত…।

কুইরেল হাটু দিয়ে হ্যারিকে মাটির ওপর চেপে রাখলেও সে তার গলা ছেড়ে দিলেন এবং বিস্ময়ে বিচলিত হয়ে নিজের হাতের ব্যথার প্রতি দৃষ্টি দিলেন।

তাহলে ওকে হত্যা কর, বোকা কোথাকার। ভোলডেমর্ট চিৎকার করে বলল।

একটা কঠিন অভিশাপ দেবার জন্য কুইরেল তার হাত ওপরে ওঠালেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরেই হ্যারি তার মুখ চেপে ধরল।

আহ…

কুইরেল মাটিতে পড়ে গেলেন। হ্যারি জানতো যে মারাত্নক যন্ত্রণায় কাতর হলে কুইরেল তার কেশ স্পর্শ করতে পারবেন না। সুতরাং অভিশাপ বন্ধ রাখতে কুইরেলকে কাবু করে রাখা ছাড়া উপায় নেই।

হ্যারি লাফ দিয়ে কুইরেলকে এমন শক্তভাবে জাপটে ধরল যে কুইরেল নড়তেই পারছিলেন না, শুধু চিৎকার করছিলেন। কুইরেল হ্যারিকে ঝেড়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। হ্যারির কপালের ব্যথা আবার বাড়তে লাগল। হ্যারি কিছু দেখতে পাচ্ছিল না। কেবল কুইরেলের চিৎকার আর ভেলডেমর্টের তাকে হত্যা কর, তাকে হত্যা কর কথাগুলো শুনছে। সে অনুভব করল, কুইরেল তার বাহুবেষ্টনি থেকে মুক্ত হয়ে গেছেন। সামনে কেবল অন্ধকার আর অন্ধকার।

মাথার ওপর সোনার মত কি যেন চকচক করছে। হ্যারি সেটা ধরতে গেল। তার হাত বেশ ভারি হয়ে যাওয়ায় সে এটা ধরতে পারল না।

হ্যারি ভালো করে তাকাল। দেখল, আসলে সেটা এক জোড়া চশমা। কী আশ্চর্য ব্যাপার।

শুভ অপরাহ্ন, হ্যারি ডাম্বলডোর তাকে বললেন।

হ্যারি তার দিকে তাকাল। তারপর সবকিছু মনে পড়ল। সে বলল স্যার, পরশমণিটা অধ্যাপক কুইরেল হস্তগত করে ফেলেছেন। তাড়াতাড়ি কিছু একটা করুন।

শান্ত হও বাছা। অধ্যাপক ডাম্বলডোর বললেন–তুমি সময়ের একটু পেছনে আছ। কুইরেল পরশমণি পাননি।

তাহলে? হ্যারি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

হ্যারি শান্ত হও। ডাম্বলডোর বললেন–নতুবা মাদাম পমফ্রে আমাকে এখান থেকে বের করে দেবেন।

হ্যারি ঢোক গিলে চারদিকে তাকাল। এতক্ষণে সে বুঝল, সে এখন হাসপাতালে সাদা বিছানার ওপর শুয়ে আছে। পাশেই একটা উঁচু টেবিল। টেবিলের ওপর এত মিষ্টি রাখা আছে, দেখে মনে হবে এটা বুঝি মিষ্টির দোকান।

এই দেখ তোমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা তোমার জন্য উপহার পাঠিয়েছে। ডাম্বলডোর বললেন–পাতাল পুরীতে বন্দিদশায় তোমার আর কুইবেলের ভেতর কী ঘটেছে-এটা কেউ জানে না। সবাই জানে তুমি অসুস্থ। হাসপাতালে তোমার চিকিৎসা হচ্ছে।

কতদিন ধরে আমি এখানে আছি? হ্যারি জানতে চাইল।

তিনদিন হবে। তুমি যে সুস্থ হয়েছ এটা শুনতে পারলে রোনাল্ড উইসলি ও মিস গ্রেঞ্জার খুব স্বস্তিবোধ করবে। তোমার ব্যাপারে তারা খুব উদ্বিগ্ন।

স্যার, পরশমণি কোথায়? হ্যারি জানতে চাইল।

ডাম্বলডোর বললেন–আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি এখনও পাথরের কথা ভুলতে পারনি। অধ্যাপক কুইরেল তোমার কাছ থেকে পরশমণিটা নিতে পারেননি, কারণ আমি যথাসময়ে উপস্থিত হয়ে পড়েছিলাম। যদিও তুমি খুব ভালভাবে ওঁকে মোকাবিলা করছিলে।

তাহলে পরশমণি আপনার কাছে। হ্যারি জানতে চাইল।

আমার ভয় ছিল, আমার যেতে হয়ত দেরী হয়ে যেতে পারে। অধ্যাপক ডাম্বলডোর বললেন।

না, আপনি ঠিক সময়েই এসেছেন।

আমি তাকে বেশিক্ষণ পরশমণি থেকে দূরে রাখতে পারতাম না। হ্যারি বলল।

ডাম্বলডোর আরো বললেন–আমি পাথরের কথা বলছি না। বলছিলাম তোমার চেষ্টার কথা। এতে তোমার মৃত্যুও হতে পারত। এজন্য আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। আর পরশমণির কথা বলছ, সেটা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

ধ্বংস করা হয়েছে! হ্যারি বিস্ময়ের সাথে মন্তব্য করল–আপনার বন্ধু নিকোলাস ফ্লামেল?

তুমি তাহলে নিকোলাস সম্পর্কে জানো। ডাম্বলডোর বললেন–তুমি ঠিক কাজটাই করেছ, তাই না? আমি আর নিকোলাস আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিলাম। যা করা হয়েছে তা ঠিকই ছিল।

তার মানে নিকোলাস এবং তার স্ত্রী মারা যাবেন। তাই নয় কি?

তবে তাদের কাছে প্রচুর মৃতসঞ্জীবনী সুধা আছে। হ্যাঁ, পরবর্তীতে তাঁরা মারা যাবেন।

হ্যারির চেহারায় বিস্ময়ের ছাপ দেখে ডাম্বলভোর মুচকি হাসলেন।

ডাম্বলডোর বললেন–তোমাদের মত তরুণদের কাছে এটা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। নিকোলাস এবং পেরেনেলের কাছে এটা হবে দীর্ঘদিন পর শোবার জন্য বিছানায় যাওয়া। বড় কথা হলো সুসংগঠিত মৃত্যু হলো পরবর্তী পর্যায়ে যাবার অভিযান।

ডাম্বলডোর আরো বললেন, পরশমণি বড় কথা নয়। মানুষ এমন কিছু আকাঙ্ক্ষা করে যা বাস্তবে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।

হ্যারি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ল। ডাম্বলডোর মৃদু হেসে ওপরে ঘরের ছাদের দিকে তাকালেন।

স্যার, হ্যারি বলল–আমি ভাবছিলাম পরশমণি তো ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু ভোলডেমর্ট এবং ইউ-নো-হুর ভূমিকা কী হবে।

হ্যারি, তাকে সবসময় ভোলডেমর্ট ডাকবে। তার সঠিক নামে ডাকবে। কোন বিশেষণেরও দরকার নেই। নামের ভীতি মানুষের প্রতি বাড়িয়ে দেয়।

জী স্যার। হ্যারি বলল–ভোলডেমট ফিরে আসার চেষ্টা করছেন। তাই না? তিনি তো এখনও বিদায় হননি, হয়েছেন কী?

হ্যারি তুমি ঠিকই বলেছ। ডাম্বলডোর বললেন–ভোলডেমর্ট ফিরে আসার চেষ্টা করছে। সে যায়নি। সে কাছাকাছি কোথাও আছে। সে কারো সঙ্গে তার শরীর ভাগাভাগি করে নিতে চাচ্ছে। সে যদি সত্যি সত্যিই জীবিত না থাকে তাহলে কেউ তাকে হত্যা করতে পারবে না। সে কুইরেলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। শত্রু মিত্র কারো প্রতি সে করুণা করে না।

হ্যারি মাথা নাড়ল। তার কপালের ব্যথাটা আবার বেড়ে গেছে। তারপর ডালভোরের উদ্দেশ্যে বলল–স্যার, আপনাকে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনি কি আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবেন?

সত্য শব্দটি একটা সুন্দর ও নিষ্ঠুর শব্দ। ডাম্বলডোর মন্তব্য করলেন তাই খুবই সতর্কভাবে তোমার প্রশ্নগুলোর জবাব দেবার চেষ্টা করব। সমস্যা না হলে আমি তোমার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেব। যদি কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি কথা দিচ্ছি, আমি তোমাকে মিথ্যা বলব না।

হ্যারি শুরু করল, ভলডেমর্ট বলেছে তিনি আমার মাকে হত্যা করেছে, কারণ আমার মা আমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করেছিলেন। এখন সে আমাকে কেন হত্যা করতে চাচ্ছে?

ডাম্বলডোর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন–হ্যারি, আমি দুঃখিত। আমি তোমার এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। অর্থাৎ আজ ৰা এখন আমি তোমার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। তবে একদিন তুমি এই প্রশ্নের উত্তর পাবে। তুমি বড় হলে সব জানতে পারবে। আর আমি এটাও জানি, এই প্রশ্নের উত্তর তোমার ঘৃণা উদ্রেক করবে। বড় হলে তুমি নিজেই সব জানতে পারবে।

হ্যারি বুঝতে পারল এ বিষয়ে আর কথা বলা অবান্তর।

কিন্তু কুইরেল কেন আমাকে স্পর্শ করতে পারেননি। হ্যারির পরবর্তী প্রশ্ন।

ডাম্বলডোর জবাব দিলেন–তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে তোমার মায়ের মৃত্যু ঘটেছে। ভালোবাসা কী জিনিস-এ বিষয়ে ভোলডেমর্টের কোন ধারণা ছিল না। ভালোবাসা যে কত শক্তিশালী হতে পারে তা সে কখনোই বুঝতে পারেনি। তোমার জন্য তোমার মায়ের ভালোবাসা একটা অনন্য ঘটনার স্বীকৃতি পেয়েছে। তিনি তার ভালোবাসার কোন চিহ্ন রেখে যেতে পারেননি। তোমার জন্য তোমার মায়ের ভালোবাসা তোমাকে চিরদিনের জন্য নিরাপদ করে দিয়েছে। আর কুইরেলের ভেতর আছে–ঘৃণা, লোভ আর উচ্চাভিলাষ। তার এই দোষগুলো ভোলড়েঘর্টের কাছ থেকে পাওয়া। এ জন্যই কুইরেল তোমাকে স্পর্শ করতে পারেননি।

ডাম্বলডোর জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। এই ফাঁকে হ্যারি তার চোখের জল মুছলো।

হ্যারির বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠ স্বাভাবিক হয়ে এলে তার পরবর্তী প্রশ্ন–আপনি কি জানেন অদৃশ্য হওয়ার পোশাকটা আসলে কে পাঠিয়েছিল?

ডাম্বলডোর জবাব দিলেন–তোমার বাবা আমাকে এ পোশাকটা দিয়ে গিয়েছিলেন। আমার মনে হলো, পোশাকটা তোমার পছন্দ হবে। তোমার বাবা এই অদৃশ্য হওয়ার পোশাক পরে রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করতেন।

আমার আরো কিছু প্রশ্ন আছে।

বল।

কুইরেল বলছিলেন স্নেইপ–… হ্যারি বলল।

অধ্যাপক স্নেইপ ডাম্বলডোর জিজ্ঞেস করল!

জী স্যার… কুইরেল আমাকে জানালেন যে স্নেইপ–আমাকে ঘৃণা করেন কারণ তিনি আমার বাবাকে ঘৃণা করতেন।

হ্যাঁ, তারা দুজন দুজনকেই ঘৃণা করতেন। ডাম্বলডোর ব্যাখ্যা করলেন–তবে তাদের অপছন্দ তোমার আর ম্যালফয়ের অপছন্দের মত নয়। তোমার বাবা এমন একটা কাজ করেছিলেন, যা অধ্যাপক স্নেইপ কখনোই ক্ষমা করতে পারেননি।

সেটা কী? হ্যারি প্রশ্ন করল।

তিনি তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন। ডাম্বলডোর বললেন।

আপনি কী বলছেন? হ্যারি সবিস্ময়ে প্রশ্ন করল।

হ্যাঁ, ডাম্বলডোর স্বপ্নিল দৃষ্টিতে বললেন–মানুষের মন বড় বিচিত্র। তারা কত রকম অদ্ভুত কাজ করে। স্নেইপ কখনোই তোমার বাবার কাছে ঋণি থাকতে চাননি। আমার ধারণা, এ বছর তোমাকে রক্ষা করার জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি তোমার পিতৃঋণ শোধ করতে চান। এটা করতে পারলে তিনি তোমার বাবার স্মৃতিকে ঘৃণা করতে পারবেন।

এসব কথা শুনে হ্যারির মাথা গুলিয়ে গেল। সে কিছুই বুঝে উঠতে পারল না।

স্যার, আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে। হ্যারি বলল।

একটাই মাত্র প্রশ্ন? ডাম্বলডোর বললেন।

আয়না থেকে আমি কীভাবে পরশমণিটা পেলাম? হ্যারি জানতে চাইল।

আমি খুব আনন্দিত যে, তুমি এই প্রশ্ন করেছ। ডাম্বলডোর বললেন এটা আমার চিন্তাপ্রসূত। এছাড়া তোমার সাথে আমার অন্য রকম একটা সম্পর্ক আছে। ভেবে দেখ, মাত্র একজন লোক পাথরটা পেতে চেয়েছিল পেলও কিন্তু ব্যবহার জানে না। নতুবা এটা থেকে সোনা বানাবে অথবা অমৃত মনে করে পান করবে। হয়েছে, অনেক প্রশ্ন করেছ; আর নয়।

এরপর ডাম্বলডোর হ্যারিকে মিষ্টি খাবার আমন্ত্রণ জানালেন এবং হ্যারির মুখে একটা মিষ্টি তুলে দিলেন। ডাম্বলডোরের উত্তরটা হ্যারির কাছে হেঁয়ালিই রয়ে গেল।

***

ম্যাট্রন মাদাম পমফ্রে অত্যন্ত চমৎকার কিন্তু বড্ড কড়া মহিলা।

হ্যারি বলল–আর মাত্র পাঁচমিনিট।

অসম্ভব। মাদাম পমফ্রে বললেন।

অধ্যাপক ডাম্বলডোরকে ভেতরে আসতে দিয়েছিলেন…। হ্যারি বলল।

মাদাম পমফ্রে বললেন–হ্যাঁ, তাকে দিয়েছি, তবে অধ্যাপক ডাম্বলডোর তো হোগার্টসের প্রধান শিক্ষক। তবে হ্যারি, তোমার বিশ্রাম নেয়া প্রয়োজন।

আমি তো বিশ্রাম নিচ্ছি। দেখছেন তো আমি বিছানায় শুয়ে আছি। হ্যারি বলল।

ঠিক আছে। মাদাম পমফ্রে বললেন–মনে রেখো। তোমাকে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় দেয়া হলো।

তিনি রন ও হারমিওনকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন।

হ্যারি। রন ও হারমিওন আনন্দে চিৎকার করে উঠল। তারা বলল আমরা আর অধ্যাপক ডাম্বলডোর তোমার জন্য খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম।

পুরো স্কুলে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রন বলল–কিন্তু আসলে কী ঘটেছিল?

এটা এমন একটা সত্য ঘটনা যা গল্পের চেয়েও অদ্ভুত এবং উত্তেজনাপূর্ণ।

হ্যারি তাদেরকে সব খুলে বলল–কুইরেলের কথা, ভলডেমর্টের কথা, আয়না ও পরশমণির কথা।

রন আর হারমিওন মনোযোগ দিয়ে হ্যারির কথা শুনল। হ্যারি তাদের কুইরেলের পাগড়ির তলায় কি আছে সেটাও বলল।

হ্যারির কথা শেষ হওয়া মাত্রই রন বলে উঠল–পরশমণি তাহলে কোথায়?

আর যদি পরশমণি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তো নিকোলাস ফ্লামেলের মৃত্যু অবধারিত। হারমিওন আত্নচিৎকার করল।

হ্যারি বলল–আমিও তাই ভাবছিলাম। কিন্তু ডাম্বলডোর আমাকে বোঝালেন যে সুসংগঠিত মনের মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য অভিযান মাত্র।

তোমাদের দুজনের কী হয়েছিল? হ্যারি জানতে চাইল।

আমরা ঠিকভাবেই ফিরে এসেছি। হারমিওন বলল–রনকে নিয়ে আসতে অবশ্য কিছুটা সময় লেগেছে। অধ্যাপক ডাম্বলডোরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আমরা পেঁচার ঘরে যাওয়ার পথে প্রবেশ হলে ডাম্বলডোরকে পাই, তিনি আগেই সব জেনেছেন। তিনি বললেন–হ্যারি তার পেছনে গিয়েছে, তাই না? তারপর তিনি দ্রুত তোমার দিকে ছুটলেন।

তোমার মাধ্যমেই তিনি কাজ করতে চেয়েছিলেন কি? রন জানতে চাইল তোমাকে তোমার বাবার পোশাক আর অন্যান্য জিনিস পাঠিয়ে।

হারমিওন ক্রোধের সাথে বলল–তিনি যদি কিছু করে থাকেন–আমি বলতে চাচ্ছি–তোমার তো মৃত্যুও হতে পারত।

ঘটনা তা নয়। হ্যারি প্রতিবাদ করে উঠলো–আসলে তিনি আমাকে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন। এখানে যা কিছু ঘটেছে সবই তার জানা ছিল। আমার ধারণা–আমরা কী করতে চাচ্ছি–তাও তিনি জানতেন। তিনি আমাদেরকে বাধা না দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলেন। আমার মনে হয়, আয়নার বিষয়টা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়। আসলে আগে থেকে তিনিই সবকিছুর পরিকল্পনা করেছিলেন।

হ্যাঁ, তুমি তো ডাম্বলডোরের প্রশংসা করবেই? রন বলল-এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল ভোজ হবে। খেলাতে স্লিদারিন হাউজ জিতেছে। কিডি প্রতিযোগিতায় তুমি ছিলে না। তোমাকে ছাড়া আমরা পেছনে পড়ে গেছি, তবে আগামীকালের ভোজটা ভালো হবে।

ঠিক সেই মুহূর্তে মাদাম পমফ্রে ঘরে ঢুকেই বললেন–তোমরা পনেরো মিনিট কথা বলেছ। এবার বাইরে যাও।

রাতে ভাল ঘুমের ফলে হ্যারির সুস্থতা ফিরে এলো। হ্যারি মাদাম পমফ্রেকে বলল–আমি ভোজে যোগ দিতে চাই। আমি কি যেতে পারব?

মাদাম পমফ্রে বললেন–ভোজে যাবার জন্য অধ্যাপক ডাম্বলডোর তোমাকে ইতোমধ্যেই অনুমতি দিয়েছেন। তবে তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, সেখানে যাওয়াটা তোমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে কিনা।

তোমাকে দেখতে আর একজন এসেছেন।

খুব ভাল, কে সে? হ্যারি জিজ্ঞেস করল। দরোজা খুলে হ্যাগ্রিড ভেতরে প্রবেশ করল। তার ইয়া বড় শরীর নিয়ে যখন সে ভেতরে ঢুকলো, তার শরীরের কাছে ঘরটাই ছোট মনে হচ্ছিল। হ্যাগ্রিড হ্যারির পাশে বসলেন। হ্যারির দিকে এক নজর তাকিয়ে তিনি কাঁদতে শুরু করলেন।

এসবই আমার দোষে। হ্যাগ্রিড বললেন। আমিই তাদের ফ্লাফির কথা বলেছি। তারা ফ্লাফির কথা জানত না। তোমরা তো মারাও যেতে পারতে। আমি এসব করেছি ড্রাগনের ডিম পাবার জন্য। আমি আর পান করব না! এখন থেকে আমি সব কিছু বাদ দিয়ে মাগলদের মত জীবনযাপন করব।

হ্যাগ্রিড। হ্যারি বলল।

হ্যাগ্রিডকে অনুতপ্ত ও তার কান্না দেখে হ্যারির খুব খারাপ লাগল। হ্যাগ্রিডের দাঁড়ি বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছিল।

সে যেভাবেই হোক বের করে ফেলত। এ-ই হলো ভোলডেমর্ট। তাকে না বললেও সে সব ঠিক বের করে ফেলত।–হ্যারি যুক্তি দেখালো।

তুমি তো মারাও যেতে পারতে। হ্যাগ্রিড ফুঁপিয়ে কাঁদলেন–দয়া করে ওই নামটি আর উচ্চারণ করো না। ভলডেমর্ট হ্যারি নিচু স্বরে উচ্চারণ করলো। নামটা শুনে হ্যাগ্রিড এতটা চমকালো যে তার কান্না থেমে গেল।

হ্যারি বলল–আমি তাকে দেখেছি। এজন্যই আমি তাকে তার নাম ধরে ডাকছি। হ্যাগ্রিড, দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। বরং খুশি হোন। আমরা পরশমণিকে রক্ষা করেছি। যদিও এটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ভোলডেমর্ট তো এটা আর ব্যবহার করতে পারবে না। একটা চকোলেট ফ্রগ নিন। আমার কাছে অনেক আছে…।

হ্যাগ্রিড হাত দিয়ে নাক মুছে বললেন-এখন আমার মনে পড়েছে। হ্যারি, আমার কাছে তোমার জন্য উপহার আছে।

এটা কি আপনার সেই স্যান্ডউইচ? হ্যারি আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস

না, ডাম্বলডোর গতকাল আমাকে ছুটি দিয়েছেন। হ্যাগ্রিড বলল যেখানে আমাকে অপসারণ করার কথা–যাক তিনি তোমার জন্য এই উপহারটা দিয়েছেন।

দেখে মনে হলো চামড়ায় বাধানো একটা সুন্দর বই। হ্যারি আগ্রহের সাথে বইটা খুলল। বইয়ে ছিল জাদুকরদের অসংখ্য ছবি। প্রতিটি পৃষ্ঠায় ছিল তার বাবা ও মার ছবি। স্মিতহাসিতে তারা তাদের দিকে হাত নাড়ছেন।

***

ওই রাতে হ্যারি একাকীই তাদের বছর শেষের ভোজে গেল। মাদাম পমফ্রে তাকে আরেকবার চেক–আপের জন্য পীড়াপীড়ি করায় হ্যারির একটু দেরি হয়ে গেল। হ্যারি যখন পৌঁছল তার আগেই গ্রেট হলটা ভরে গেছে। হল ঘরটা ক্লিারিন হাউজের রঙ সবুজ দিয়ে সাজানো হয়েছে। কারণ স্লিথারিন হাউজ পর পর সাতবার হাউজ কাপ জয় করেছে। একটা ব্যানারে স্লিদারিন হাউজের প্রতীক–সাপ দেখানো হয়েছে। ওই ব্যানারটা বড় টেবিলের পেছনের দেয়ালে টাঙানো হয়েছে?

হ্যারি যখন হল ঘরে প্রবেশ করল তখন চারদিকে জোরে জোরে নানা কথাবার্তা শুনতে পেল। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল হ্যারি নিজেই। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে।

হ্যারি চুপচাপ গ্রিফিল্ডর টেবিলে রন আর হারমিওনের মাঝখানে একটা আসনে বসল। তাকে নিয়ে যে এত কথা হচ্ছে, সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে-এই নিয়ে হ্যারি মাথা ঘামাল না।

সৌভাগ্যবশতঃ একটু পরই ডাম্বলডোর এলেন, আর সাথে সাথে সব গুঞ্জন মিলিয়ে গেল।

আরেকটা বছর পার হয়ে গেল। ডাম্বলডোর বললেন–ভোজ শুরু হবার আগে আমি তোমাদেরকে কিছু কথা বলতে চাই। বছরটি কেমন ছিল। আশা করি–তোমরা যখন এখানে এসেছিল সেই সময় থেকে এখন তোমাদের জ্ঞানের পরিধি বেড়েছে। তোমাদের সামনে পুরো গ্রীষ্মকাল পড়ে আছে। সেটা তোমরা কাজে লাগাতে পার।

ডাম্বলডোর বলে চললেন–আমার মনে হয় এখন হাউজকাপ বিতরণ করা যেতে পারে। পয়েন্ট অনুযায়ী বিভিন্ন হাউজের অবস্থান তোমাদের জানিয়ে দিচ্ছি।

৩১২ পয়েন্ট নিয়ে গ্রিফিল্ডর হাউজ চতুর্থ

৩৫২ পয়েন্ট নিয়ে হাফলপাফ হাউজ তৃতীয়

৪২৬ পয়েন্ট নিয়ে ব্যাভেনক্ল হাউজ দ্বিতীয়

৪৭২ পয়েন্ট নিয়ে স্লিদারিন হাউজ প্রথম

স্লিদারিন হাউজ আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ল। হ্যারি দেখল ড্রাকো ম্যালফয় তার টেবিলে তার বাটি দিয়ে আওয়াজ করছে। দৃশ্যটা ছিল হ্যারির জন্য মনোকষ্টের।

শাবাশ। স্লিদারিন হাউজ। হাউজকে উৎসাহ দিয়ে ডাম্বলডোর বললেন–তবে সাম্প্রতিক ঘটনাকে বিবেচনায় রাখতে হবে।

ঘর আবার শান্ত হয়ে গেল। স্লিদারিনদের হাসিও কিছুটা মিলিয়ে গেল।

ডাম্বলডোর বললেন, সবশেষে আমি তোমাদেরকে কিছু বলতে চাই।

হ্যাঁ, প্রথমে রন উইসলি।… ভয়ে রনের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল।

গত কয়েক বছরের মধ্যে হোগার্টসে সবচে ভালো দাবা খেলার জন্য আমি গ্রিফিল্ডর হাউজকে পঞ্চাশ পয়েন্ট দিচ্ছি।

গ্রিফিল্ডর হাউজ ছাঁদ ফাটা হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ঘর শান্ত হলো।

দ্বিতীয় অধ্যাপক ডাম্বলডোর বললেন–আমি মিস গ্রেঞ্জারকে…। কঠিন অবস্থায় ঠাণ্ডা মাথায় অভূতপূর্ব সাহসের পরিচয় দেবার জন্য গ্রিফিল্ডর হাউজকে আমি পঞ্চাশ পয়েন্ট দিচ্ছি।

হারমিওন তার ভাঁজ করা হাতের ওপর তার মুখ গুজলো। হ্যারি নিশ্চিত যে হারমিওন আনন্দে কাঁদছে। গ্রিফিল্ডর হাউজ খুব খুশি। মোট একশ পয়েন্ট পেয়েছে।

তৃতীয়ত, হ্যারি পটার। ডাম্বলডোর বললেন। হ্যারির নাম ঘোষণার সাথে সাথে সমস্ত ঘর পিনপতন স্তব্ধ। কোথাও কোন কথা নেই। ধৈর্য ধারণ করে অভূতপূর্ব সাহস প্রদর্শন করার জন্য আমি গ্রিফিল্ডর হাউজকে ষাট পয়েন্ট দিলাম।

কান ফাটা হর্ষধ্বনি। চারদিকে হৈ-হুল্লা। আনন্দ উৎসব। গ্রিফিল্ডর হাউজের এখন পয়েন্ট হয়েছে ৪৭২। স্লিদারিন হাউজের সমান পয়েন্ট। ডাম্বলডোর যদি হ্যারিকে আরেকটা পয়েন্ট বেশি দিতেন তাহলেই গ্রিফিল্ডর হাউজ–হাউজ কাপ পেয়ে যায়।

ডাম্বলডোর তার হাত ওঠালেন। পুরো ঘর শান্ত হয়ে গেল।

ডাম্বলডোর বললেন–সাহসের রকমফের আছে, শত্রুকে মোকাবিলা করতে হলে অনেক সাহসের প্রয়োজন হয়। আবার বন্ধুকে সাহায্য করতে হলেও সাহসের প্রয়োজন হয়। এবার আমি মি, নেভিল লংবটমকে দশ পয়েন্ট দিচ্ছি। গ্রেট হলের বাইরে যদি কেউ দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি ভাবতেন ঘরের ভেতর নিশ্চয়ই একটা বিস্ফোরণ ঘটে গেছে। গ্রিফিল্ডর হাউজের আনন্দ উল্লাসের আওয়াজ ছিল এত তীব্র। নেভিলকে উৎসাহ দেয়ার জন্য হ্যারি, রন আর হারমিওন দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতে শুরু করল। আর তখন নেভিলকে সবাই বুকে জড়িয়ে ধরছে। ওকে আর দেখাই যাচ্ছে না সবার ভিড়ে।

কেউ কেউ হ্যারিকে চাপড়ে দিচ্ছে। হ্যারি, রন ও হারমিওন দাঁড়িয়ে আনন্দ করছিলো, নেভিল অভূতপূর্ব ঘটনায় হতবিহ্বল ও তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। গ্রিফিল্ডর হাউজের জন্য–নেভিল এর আগে কখনোই এত পয়েন্ট পায়নি। হ্যারি তখনও আনন্দে উদ্বেলিত। রনকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে হ্যারি ম্যালফয়ের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। ম্যালফয়কে এত হতভম্ব ও বিচলিত আর কখনোই দেখা যায়নি। মনে হচ্ছে অন্ধ হবার

অভিশাপটা তার ওপর প্রভাব ফেলেছে।

আবার ডাম্বলডোর হাত উঠিয়ে বললেন–সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চারদিকে তখনও করতালি ও হর্ষধ্বনি।

স্লিদারিন হাউজের পয়েন্ট কমে যাওয়ায় র‍্যাভেনক্ল ও হাফলপাফ হাউজও হর্ষধ্বনি করছে। তারা বললেন–পয়েন্ট পুনর্বিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাজ সজ্জাতেও কিছু পরিবর্তন করতে হবে।

ডাম্বলডোর হাতে তালি দিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই সবুজ চাদর লাল চাদরে রূপান্তরিত হলো। রূপো সোনা হয়ে গেল এবং পেছনের ব্যানারে স্লিদারিন হাউজের প্রতীক সাপের পরিবর্তে গ্রিফিল্ডর হাউজের প্রতীক সিংহ প্রতিস্থাপিত হলো। কৃত্রিম হাসি নিয়ে অধ্যাপক স্নেইপ অধ্যাপক স্ম্যাকগোনাগলের সাথে করমর্দন করলেন। একটু পর তার নজর পড়ল হ্যারির ওপর। হ্যারি অনুভব করল যে, তার প্রতি স্নেইপের মনোভাবে সামান্যতম পরিবর্তন হয়নি। এতে অবশ্য হ্যারি উদ্বিগ্ন হলো না। জীবন তার স্বাভাবিক গতিতেই চলবে।

হ্যারির জীবনে এ সন্ধ্যাটা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ। কিডিচ খেলায় জয়লাভ করা বা বড় দিনের উপহার পাওয়া বা দানবটাকে হত্যা করার তুলনায় এই সন্ধ্যাটা ছিল অনেক অনেক বেশি ভাল। এটা ছিল হ্যারির জন্য একটা অবিস্মরণীয় সন্ধ্যা।

সামনে যে পরীক্ষার ফল বেরুবে-এটা হ্যারি সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষার ফল শেষ পর্যন্ত বেরুল। বিস্ময়ের সাথে হ্যারি আর রন লক্ষ্য করল যে ভালো মার্ক পেয়েই তারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। হারমিওন অবশ্য প্রথম হয়েছে। নেভিল হার্বোলজিতে ভালো করে ওষুধ তৈরির বিষয়ে প্রাপ্ত কম নম্বরকে পুষিয়ে নিয়েছে। তাদের ধারণা ছিল যে গর্দভ ও নীচুমনা গয়েল পরীক্ষায় পাস করবে না। তাদের বিস্মিত করে সেও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। এটা ছিল লজ্জার বিষয়। তবে রন হ্যারিকে বোঝাল–জীবনে যা চাওয়া যায় তার সবই কিন্তু পাওয়া যায় না।

হঠাৎ করেই ওয়ার্ডরোবগুলো খালি হয়ে গেল। সবাই তাদের ট্রাংক ভরে ফেলেছে। এবার ফেরার পালা। তাদেরকে নৌকা দিয়ে নিয়ে যাবার জন্য হ্যাগ্রিড এসে উপস্থিত। এরপর তারা হোগার্টস এক্সপ্রেসে উঠবে। প্ল্যাটফর্মে আসতে তাদের একটু বিলম্বই হলো। তারা দুজন দুজন করে, তিনজন তিনজন করে দরোজা অতিক্রম করল। তাদের প্রতি মাগলরা কেউ তেমন লক্ষ্য করল না।

তোমাকে গ্রীষ্মকালে আমাদের বাড়িতে কিছুদিন এসে থাকতে হবে। রন বলল–আমি তোমার কাছে পেঁচা পাঠিয়ে দেব।

ধন্যবাদ। হ্যারি জবাব দিল–আমি এর জন্য অপেক্ষা করবো।

বাই হ্যারি।

সি ইউ পটার।

তুমি তো এখানেও বিখ্যাত।

আমি কোথাও যাচ্ছি না। তবে তোমার শুভ কামনা করি। হ্যারি জবাব দিল।

সে, রন আর হারমিওন একত্রে গেইট অতিক্রম করল।

মা, এই তো হ্যারি। তাকিয়ে দেখ।

চুপ করো, জিনি। কাউকে আঙ্গুল দিয়ে দেখানো অভদ্রতা। এটা ছিল গিনি উইসলি–রনের বোন।

তাদের দিকে তাকিয়ে মিসেস উইসলি মুচকি হাসলেন।

নিশ্চয়ই বছরটা ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। তিনি বললেন।

আসলেই। হ্যারি জবাব দিল–মিষ্টি আর জাম্পারের জন্য ধন্যবাদ।

এটা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। মিসেস উইসলি বললেন।

তুমি কি যাওয়ার জন্য তৈরি?

আশ্চর্যের ব্যাপার। এ তো আঙ্কল ভার্নন। হ্যারির হাতে খাঁচা–বন্দি পেঁচা দেখে গোঁফধারী আঙ্কল তার বিরক্তি প্রকাশ করতে দ্বিধা করলেন না, তার পেছনে আছেন চাচী পেতুনিয়া। এমনকি ডাডলি পর্যন্ত। হ্যারির চেহারা দেখে সে কিছুটা সন্ত্রস্ত।

আপনারা নিশ্চয়ই হ্যারির পরিবারের সদস্য? মিসেস উইসলি তাদের জিজ্ঞেস করলেন। বলতে পারেন আঙ্কল ভার্নন উত্তর দিয়ে হ্যারির উদ্দেশ্যে বললেন–

বাছা, তাড়াতাড়ি চলে এসো। আমাদের হাতে সময় নেই। আঙ্কল ভার্নন হাঁটতে শুরু করলেন।

রন আর হারমিওনের সাথে শেষ কথা বলার জন্য হ্যারি একটু দেরী করছিল।

গ্রীষ্মকালে আবার দেখা হবে।

তুমি সুন্দর ছুটি কাটাতে পারবে ভেবে আমার খুব ভালো লাগছে। হারমিওন এই বলে আঙ্কল ভার্ননের দিকে তাকালো। হারমিওনের বোধগম্য হল না–মানুষ কীভাবে দেখতে এত অপ্রীতিকর হতে পারে।

আশা করি পারব। হ্যারি জবাব দিল।

হ্যারি মনে মনে বলল–ওরা তো জানে না যে বাড়িতে জাদুবিদ্যার অনুশীলন করা আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। হ্যারি ভাবতে লাগল–গ্রীষ্মের ছুটিতে ডাডলির সাথে অনেক মজা করা যাবে।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত