ক্লাস নাইনে থাকার সময় আমার বন্ধু আবুল সিদ্ধান্ত নিল;ক্লাসের দ্বিতীয় ছাত্রী রিয়ার সাথে প্রেম করবে।আবুল অনেক অনেক চেষ্টা করেছিল রিয়ার দৃষ্টি তার উপর আনার।কিন্তু প্রতিবারই তার উপর রিয়ার দৃষ্টির বদলে পরেছিল স্কুলের এসিস্ট্যান্ট স্যারের।
স্কুলের এসিস্ট্যান্ট স্যার ছিলেন বাকি সকল স্যারের চেয়ে একটু বেশি রাগী এবং ইউনিক।ইউনিক বলার কারণ;উনি ছাত্রদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এমন অদ্ভুত অদ্ভুত পদ্ধতি বের করতে যা ছিল অবাক হওয়ার মত।
যতবার আবুল রিয়ার দৃষ্টি আকর্ষনের সময় এসিস্ট্যান্ট স্যারের দৃষ্টিতে পরেছে,ততবারই স্যার তাকে অদ্ভুত অদ্ভুত শাস্তি দিয়েছিলেন।যেমন;যেমন ডান হাতে ইট নিয়ে বাম হাত দিয়ে কান ধরে ওঠাবসা করা।তাও আবার স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীর সামনে।
এই একটা দিকে আবুল রিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল বিনোদন হিসেবে।যতবার আবুল সকলের সামনে কান ধরে ওঠাবসা করত;রিয়া ততবারই আবুল কে দেখে খিলখিল করে হাসত।
দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পরের ঘটনা।যথারীতি চতুর্থ ঘন্টার পর আজকেও টিফিনের জন্য ঘন্টা বাজলো।আমি ও আমার কিছু বন্ধু মিলে ক্লাসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।তখন কোথাথেকে আবুল আসল।আমাকে টেনে নিয়ে গেল ক্লাসের এক কোণায়।আমাকে জিজ্ঞেস করল;
-‘তর হাতের লেখা কেমন’?
-আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম;কেন?
-‘যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটা বল’;তর হাতের লেখা কেমন সুন্দর?
-আছে মুটামুটি।
-তুই এর আগে কোনো প্রেম করেছিস।
-না।
-তাহলে ত এবিষয়ে তর জ্ঞান কম।
-হ্যা।
-তারপরও তকে আমার হয়ে একটা কাজ করতে হবে।
-কী কাজ?
-একাটা চিঠি লিখতে হবে।
-চিঠি!
-হ্যা চিঠি। কাজী নজরুল ইসলাম যেভাবে প্রেমের কবিতা লিখতেন;ঠিক সেইভাবে তুই একটা চিঠি লিখবি।
-কাজী নজরুল কী কখনো প্রেমের কবিতা লিখেছিলেন?
-হয়ত কোন একসময় লিখেছেন।খুঁজ নিয়ে দেখতে দোষ কোথায়।তুই না করিসনে দুস্ত।রিয়াকে পটানোর এটাই শেষ সুযোগ।
-এই কথা বলে আবুল সেখান থেকে চলে গেল;আমার কথা না শুনে।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা আছে সেটা আমি প্রথম আমরা বন্ধু আবুলের মুখে শুনেছিলাম।রাতে চিঠি লিখার জন্য কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার বই বের করলাম।কিন্তু সেখানে কোনো প্রেমের কবিতা পেলাম না।
শেষমেশ কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা না পেয়ে,নিজে থেকে একটি প্রেমের কবিতার মত করে চিঠি লিখে ফেললাম।পরদিন স্কুলে গিয়ে দেখি;আবুল স্কুল গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখা মাত্র দৌড়ে আসল।এবং জিজ্ঞেস করল চিঠি লিখছি কিনা।আমি বইয়ের ভিতর থেকে চিঠিটা বের করে আবুলকে দিলাম। চিঠি পাওয়া মাত্র আবুল আমাকে জড়িয়ে ধরলো এবং চলে গেল।
এরপর কয়েক সাপ্তাহ স্কুলে আবুলের দেখা পাইনি।পরে এক ক্লাসমেট এর কাছ থেকে শুনলাম ;ঐ দিন আবুল দেওয়া চিঠি পড়ে রিয়া আবুলকে নিয়ে সকলের সামনে মজা করে এবং চিঠিটা ছিড়ে ফেলে।তাই আবুল এই কয়েক সপ্তাহ স্কুলে আসেনি।
এর কিছুদিন পর শুনলাম আবুল আর লেখাপড়া করবে না।সে তার বাবা সাথে কাজের জন্য দুবাই চলে গিয়েছে।আমার খুব দুঃখ হচ্ছিল;আবুলের জন্য নয়,আমার জন্য। কারণ আমার লেখা প্রথম প্রেমের কবিতা নিয়ে কেউ হাসাহাসি করল।