শ্বশুড় বাড়ি মধুর হাঁড়ি

শ্বশুড় বাড়ি মধুর হাঁড়ি

—- এই যে মিষ্টার , কই যাচ্ছেন আপনি?(রিয়া)
—- কেনো? অফিসে যাচ্ছি।(আমি)
—- কালকে রাতে যে তোমাকে কানের ভিতর গুতিয়ে গুতিয়ে বললাম আজকে আমার বাপের বাড়ি যাবো, সেটার কি হবে?
—- লক্ষী বউ আমার দুইদিন পরে গেলে হবেনা?
—- একটুও না। আজকেই যেতে হবে এইটা আমার শেষ কথা।

কি আর করার।অফিসের ব্যাগ,কাগজপত্র রেখে ড্রেস চেন্জ করতে গেলাম। রিয়া আমার স্ত্রী। মাত্র ৩ মাস হয়েছে আমাদের বিয়ের। নতুন জামাই বললেই চলে। তিনমাস খুব বেশি একটা দিন না। কালকে রিয়া আমাকে বলেছিলো আজকে ওইখানে ঘুরতে যাবে। ওখানে গেলে আপাতত ১০-১২ দিন থাকতে হবে। যাইহোক দুজনেই রেড়ি হয়ে রিয়াকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে। আমি রিয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। রিয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলো আর আমিও ও কে জড়িয়ে ধরলাম।

—- ওইভাবে কি দেখছিলে? (রিয়া)
—- তোমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।(আমি)
—- কেনো এতদিন কি আমাকে পচা দেখা গেছে?
—- একদম ই তা না। আমার সোনাবউ টাকে কোনো সময়ই পচা দেখা যায়না। কিন্তু সবদিনের চাইতে আজকে বেশি সুন্দর লাগছে।

—- এইভাবে জড়িয়ে ধরেই থাকবে নাকি আমরা বের হবো?
—- চলো বের হই। রিয়া আমার দিকে ঘুরে কপালের মাঝখানে একটা চুমু একে দিলো। দুইজনেই বের হলাম। বাসট্যান্ড এ গিয়ে এসি বাসের টিকেট কাটলাম আর বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
—- বাস তো চলে এসেছে। চলো উঠি আমরা। (আমি)
—- শুনো, বাসে উঠে কোনো মেয়ের দিকে তাকানো যাবেনা কিন্তু। তাহলে কিন্তু আমি ওখানেই নেমে কান্না শুরু করে দিবো। (রিয়া)
—- আরে পাগলি আমার এত সুন্দর বউটা রেখে কার দিকে তাকাবো?
—- আচ্ছা। মনে থাকে যেনো। দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ভ্রমনের পর শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পৌছলাম আমরা। মাঝ রাস্তায় দুই তিনবার ফোন করেছিলো আমার শ্বশুড় আর শাশুড়ি।বন্ধুদের সবার কাছেই শুনেছিলাম শ্বশুড় বাড়ি নাকি অনেক আদর যত্ন করে। সেই আশায় বিয়েটাও তারাতারি করে ফেলি। শ্বশুড় বাড়িতে আমার একটা আধিপত্য আছে। একমাত্র মেয়ের জামাই+ একদম নতুন জামাই।তাই একটু টাইট করে রাখতাম সবাইকে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই ,

—- রিয়া, এই রিয়া , কোথায় গেলে তুমি? (আমি)
—- এই তো আসছি । কি হয়েছে। এরকম চেচামেচি শুরু করলে কেনো?(রিয়া)
—- সকাল কয়টা বাজে? এখনও আমার খাবার আসেনাই কেনো? সেই জন্যই তো আমি শ্বশুড় বাড়ি আসতে চাইনা। ঠিকমতো মেহমানদারি করতে পারে এরা??

—- আস্তে বলো, সবাই শুনবে তো। মা-বাবা শুনলে তো রাগ করবে। কি ভাববে? আর তুমি তো মুখই ধও নাই এখনও।
—- কে কি মনে করবে সেটা বড় কথা নয়। যাও ব্রাশ আর পেস্ট নিয়ে আসো।
—- আচ্ছা তুমি বাড়িতে তো এইরকম করোনা। এখানে আসলে এমন করো কেনো?
—- আরে বোকা বউ আমার সবাইকে একটু হুমকি ধামকি দিতে হয়। না হলে যে আমি নতুন জামাই এইটার কোন মুল্য থাকবে?
—- ওহ। তবুও একটা লিমিটের মধ্যে থাইকো।
—- আচ্ছা।

দুপুর বেলা আমি আর জিবন মানে আমার একমাত্র শালা মিলে পরিকল্পনা করলাম যে আজকে পুকুর থেকে মাছ ধরবো। যথা সময়ে পুকুর থেকে মাছ ধরা শুরু করলাম।সবাই পাড়ে বসে আমার মাছ ধরা দেখছিলো।হঠাৎ ঘটলো এক অপ্রত্যশিত কান্ড। আমার লুঙ্গিটা হারিয়ে গেলো। আমি তো খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। এখন উপায়? কাউকে তো বলাও যাবেনা।

—- জাহিদ বাবা, বড় মাছ ধরেছো নাকি? ওইভাবে কি খুজছো?(শ্বশুড় আব্বা)
—- ইয়ে মানে না মানে সর্বনাশ হয়ে গেছে আব্বা।(আমি)
—- কি হলো বাবাজি। তোমার কিছু হয়েছে?
—- না বাবা আমি উঠলেই আপনারা টের পাবেন।

আমি আর কোনো উপায় না খুজে পেয়ে ওই অবস্থায় ই পাড়ে উঠলাম। সবাই আমাকে দেখে দৌড়ে পালালো। আমি মনে মনে ভাবছিলাম সবাই দৌড়ে পালায় কেনো ? নিচে তো আমার প্যান্ট পরা আছে। কিন্তু আমি যখন নিচের দিক তাকালাম তখন অবাক হয়ে গেলাম। আসলেই তো সর্বনাশ হয়েগেছে।একেবারে প্যান্ট টা ও ছিড়ে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। আবার কোনো উপায়ান্তর না দেখে এক লাফে পুকুরে নেমে পড়লাম। মান সম্মান সব বাতাসে মিশে গেলো রে। এখন আমি পুকুরে নেমে রয়েছি আর রিয়া আমার জন্য লুঙ্গি আনতে গিয়েছে। শ্বশুড় বাড়ি এখন আমার কাছে মধুর হাড়ি নয় সর্বনাশের কাড়ি।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত