সকালে দরজা নক করার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো।কে আসলো এত সকালে। হোস্টেলেও দেখি শান্তি নাই। ভাবলাম ছুটির দিন। নাক টাইনা ঘুমামু।তা না। কে যেন আসছে।
— কিশোর??(আমি)
— উউউ…(কিশোর)
— এ কিশোইররা
— কি??
— দরজা খোল।
— তুই যা।
— হালা কালকে সন্ধ্যায় আমি দরজা খুলছিলাম।আজকে তোর পালা।
— দোস্তো তুই যা।পরের বার পোষাইয়া দিমুনে।
— সরিষার বাচ্চা যাবি কিনা??!!
— উউ
(অতঃপর ধপাস। এক লাথিতে খাট থেকে মেঝেতে ফেলে দিলাম।হাহা পেনাল্টি শট,একদম পাছা বরাবর) হালায় এত্তো অলস,তারপরও উঠে না। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমিই দরজা খুললাম। দরজা খুলে দেখি রাশেদ স্যারের খাস চামচা দারোয়ান মূলা ব্যাপারী। আসল নাম মলাহার ব্যাপারী।সর্টে ডাকি মূলা। হালায় একটা বদের হাড্ডি। রাশেদ স্যারের কড়া গার্ড আর শাসনে এমনিতেই হোস্টেল লাইফ করলা ভাজা। তার সাথে মূলা ব্যাপারির চামচামি মিলে অবস্থা নিমের রসের শরবতের মত।
— কি হইছে??(আমি বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
— আজকে বিকালে আপনাদের রুমে আরেকজন লোক আসবে।(মূলা ব্যাপারি)
— মানে আমাদের সাথে থাকবে??
— হ।
— আচ্ছা আপনি যান।
মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।আবার রুমমেট। কয়টারে আর ভাগামু। গত চার সপ্তাহে দুইটা রুমমেট ভাগাইছি। আমি না কিশোরকে ব্যবহার করে ভাগাইছি। কিশোরকে তিনবেলা নিয়মিত মূলা তরকারি খাওয়াইতাম। আর সকালবেলা টয়লেটে যাইতে দিতাম না। ব্যাস।কাজ হয়ে যেত।
মূলা খাইয়া সেকেন্ড মাউথ() দিয়া বড় বড় হুংকার ছাড়তো আইমিন পাদ মারতো সাথে মূলার তরকারীর বিখ্যাত ফ্লেবার। দুইদিনে রুমমেট রুম চেন্জ করতো। আমি অবশ্য সেই দুইদিন পাশের মেসে থাকতাম। এভাবে আর কতদিন। এবারেও আবার আগের ফর্মূলা ট্রাই করমু ভাবতাছি। কিশোররে বলতেই কিশোর রাজি হয়ে গেল। বিকাল বেলা আসলো সেই রুমমেট। নাম তরিকুল। রাত থেকেই কিশোরের খাবার আইটেমে মূলা তরকারি যোগ হয়ে গেল। আর আমি পাশের রুমে শিপঠ করলাম। কিন্তু দুইদিন হতে চললো তরিকুলের রুম থেকে যাওয়ার নাম নাই। এদিকে কিশোর প্যান্ট নষ্ট করার মত অবস্থা। তরিকুলের মনে হয় গন্ডারের চামড়া।নইলে কিশোর বিখ্যাত মূলার থেরাপি দেওয়ার পরও কেউ রুমে থাকে?? পরে জানতে পারলাম। তরিকুল ভাই এযুগের বিখ্যাত লুচু বয়দের একজন। লুচ্চামির জন্য আগের হোস্টেল থেকে ছাড়পত্র নিয়া এখানে আসছে।এজন্যই তো বলি।কিশোরের মূলা থেরাপি কাজ করলো না কেন।
ও আমাদের ক্লাশেরই।আমাদেরই ডিপার্টমেন্টেরই। বাধ্য হয়ে মেনে নিলাম। কিছুদিনের মধ্যে আমাদের সাথে ওর ঘনিষ্ঠতাও বেড়ে গেল। প্রতিদিন একসাথে ক্লাশে যেতাম। তরিকুলরে মামা ডাকতাম। আর কিশোররে শালা। কিশোর আজো জানে না যে,আমি ওকে শালা ডাকি ওর বোনকে মিন করে। জানলে কি করতো আল্লাহ মালুম। যাইহোক যখন কলেজে যেতাম তখন খেয়াল করতাম তরিকুল সবসময় কালা চশমা পরতো। প্রথম প্রথম বুঝতাম নাম পরে বুঝলাম মামায় চশমার ফাক দিয়া মাইয়া দেখে। আর ক্লাশে গিয়া কোন মেয়েটা কেমন তা নিয়া গবেষনা। তারপর প্রতিদিন হোস্টেলে ফেরার পথে পাশের একটা সপিংমলে প্রায় প্রতিদিনই ঢুকতো।আর প্রতিদিনই কোন না কোন মোবাইলের শোরুমে গিয়ে মোবাইল চয়েস করতো।আর কিনবো কিনবো বলে চলে আসতো।
আমি বললাম
-মামা শুধু তো শুনি বৃষ্টি নামবে নামবে।কিন্তু মেঘই তো করে না।ঘটনা কি??(আমি)
— মানে??(তরিকুল)
— শুধু তো বলো ফোন কিনবি। কিন্তু আসলে কিনবি কবে??
— ধুর ব্যাডা,কে ফোন কিনবে??
— তাইলে??
— আরে ওই শোরুমের সেলস ওম্যান টা হেব্বি ওর সাথথে লাইন মারতে যাই।
আমি আর কিশোর হা করে আছি।ঘোর কাটেনা। চিন্তা করতেছি তরিকুইল্লা হালায় কত্তবড় লুইচ্চা। পরেরদিন আবার ও শপিংমলে ঢুকছে।মোবাইলের শোরুম পাঁচতলায়।তিন তলায় একটা শাড়ির দোকানের সামনে একটা ডলকে ঘোমটা দিয়া শাড়ি পরাইয়া রাখছে। হঠাৎ তরিকুল বললো
— কিরে ডলটার চেহারা ঘোমটা দিয়া ঢাকা কেন?? বলার দেরি সাথে সাথে গিয়া ঘোমটা উঠাইয়া ডলের চেহারা দেখে আসলো। তারপর বলে।
— দোস্তো ডলটার চেহারাটা সেইরকম।আমিতো ক্রাশ খাইছি!!!(তরিকুল) আমি আর কিশোর হা হয়ে আছি।এইটা কোন জাতের লুইচ্চা।একটা ডলরেও ছাড়েনা। এরে তো দেখতাছি লুইচ্চামিতে নু-বেইল(নোবেল) দেয়া লাগে। অতঃপর আমাদের কাছে একটা বিষয় ক্লিয়ার হলো,কেন ওকে আগের হোস্টেল থেকে তাড়াইয়া দিছিলো!!!এরকম লুইচ্চামি ওর প্রতিদিনই চলতেছিল। একদিন ক্লাশ থেকে এসে দেখি আমাদের তরিকুল মামা মুখ ভাড় করে বসে আছে।
— কিরে মুখ কালা কইরা আছোস ক্যা??(আমি)
— দোস্তো আমি প্রেমে পড়ছি!! কথাটা আমাদের কাছে অস্পষ্ট শুনালো। কিশোর বলে উঠলো!!
— গ্যাছে গ্যাছে।মেশিনডায় আবার ডিস্টার্ব করতেছে।আবার বল কি বলছোস??।(কিশোর)
— আমি প্রেমে পরছি।(তরিকুল)
— দোস্তো আমার মনে হয় কানে সমস্যা করতেছে।দাড়া পাশের রুমের হানিফের কাছ থেকে মেশিনটা আইনা লই।তারপর বলিস।
–হালা আমি সত্যিই প্রেমে পরছি।(কিশোর) আমি আর কিশোর হা কইরা তাকাইয়া আছি। আমি হঠাৎ চোখে সর্ষে ফুল দেখতেছি। মনে হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু শুইনা ফালাইছি ভুল কইরা। মরার আগে তরিকুলের মত ফেমাস লুইচ্চার প্রেমে পরার কথা দুই কানে শোনা লাগবে ভাবতে পারিনাই।
— তা কার প্রেমে পরছো??(কিশোর)
— ইতুর প্রেমে পরছি!!(তরিকুল)
— কোন ইতু???(আমি)
— আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের।(তরিকুল)
আমরা হা হয়ে আছি। পোলায় কয় কি। পরদিন কলেজে গেলাম।আমি, কিশোর আর তরিকুল পাশাপাশি বসছি। কেমিস্ট্রি ক্লাশটা আর্কিটেকচার আর ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টেরর একসাথে হয়। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমাদের তরিকুল ভাই গালে হাত দিয়ে ইতুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তখন আমি আমার ফোনে হেডফোন কানেক্ট করে ওকে বললাম গানটা শোন। গানটা ছিল”পরেনা চোখের পলক, কি তোমার রুপের ঝলক” খেয়াল করলাম তরিকুল চোখের জল মুছতেছে। পোলা ইমুশনাল হয়ে গেছে। আহারে বেচারা। অতঃপর আমি একটা টয়লেট টিস্যু এগিয়ে দিলাম।যেটা অন্যকাজে লাগাবো বলে পকেটে করে নিয়ে এসেছিলাম তারপর ক্লাশ শেষে ইতুকে গিয়ে প্রোপোজ করলো। ইতু সরাসরি না বলে দিলো। তরিকুল একবুক বেদানা(বেদনা) নিয়ে ঘরে ফিরলো। এসে দেখি কমলার খোসার কস চোখে দিয়া কাদতেছে।ভাবলাম কান্না করতে করতে মনে হয় চোখের পানি শুকিয়ে গেছে,এজন্য হয়তো এমন করতেছে। রাত আটটার সময় তরিকুলরে রুমে খুজে পাচ্ছিনা। অনেক খোজাখুজির পরও পেলাম না। রাত নয়টার সময় কিশোর টয়েলেটে যাচ্ছিলো কিন্তু দরজা আটকানো!!
— ভিতরে কোন হালায় রে??(কিশোর)
— আমি(??)
— আমি কেডা??
— তরিকুল!!
— হালা টয়লেটে ঢুকছোস কখন??
— সন্ধ্যার সময়!!(তরিকুল)
— তো বাইর হস না ক্যা?? কষা হইছে??
— নারে আমি আর টয়লেট দিয়া বাইর হমু না।(তরিকুল)
— ক্যা??(কিশোর)
— ইতু যদি আমারে একসেপ্ট না করে তাইলে আমি টয়লেট দিয়া বাইর হমু না!!(তরিকুল)
— হালার পো বহুত হাগা ধরছে!! তাড়াতাড়ি বাইর হ।তোর প্রেম কিন্তু তোর পাছায় দিমু।(কিশোর)
— না আমি ইতু একসেপ্ট না করলে মরার আগ পর্যন্ত টয়লেটেই থাকমু।(তরিকুল)
— হালার পো মেজাজ গরম করবি না।কইছি না বহুত হাগা ধরছে।(কিশোর)
–না না না না।এ হতে পারেনা।ইতুকে ছাড়া আমি টয়লেট থেকে বের হতে পারিনা!!(তরিকুল) কিশোর কোন উপায় না দেখে ইতুরে ফোন দিছে।
— হ্যালো!!(ইতু)
— ইন্দুরের বাচ্চা(নিকনেম) তুই কই??(কিশোর)
–বাসায় কেন??
— আরে তরিকুইল্লা টয়লেটে গিয়া সন্ধ্যা থেকে বসে আছে।বলে তোরে ছাড়া নাকি টয়লেট থেকে বের হইবে না।
— মানে???
— মানে টানে বাদ দিয়া কিছু কর। আমার বহুত হাগা ধরছে।তোর ব্যাপার তুই বোঝ।আমি আর চাপতে পারতেছিনা। ওরে বের কর।(কিশোর)
— আমি কি করমু??(ইতু)
— আমি কিছু জানি না বের কর ওরে!!(কিশোর) ইতুর সাধে কথা বলে বিশেষ কোনো লাভ হলো না। অবশেষে কিশোর বললো।
–দোস্তো ইতু নিচে দাড়াইয়া আছে।কি যেন বলবে!!(কিশোর)
— হাচা নি??(তরিকুল)
— হ হাচা!!(কিশোর)
তরিকুল দরজা খুইলা নিচের দিকে দৌড়। গিয়া দেখে কেউ নাই। শেষে মেজাজ খারাপ করে রুমে এসে চুপ করে বসে আসে। দুইদিন পর: হঠাৎ তীব্র পাদের গন্ধ অনুভব করে আমি আর কিশোর বাইরের দিকে দৌড়ানি দিছি। ইয়াক থু। কয়দিন জানি হাগা করেনাই।
— কিশোর কামডা কি তুই করছিস??(আমি)
–বিশ্বাস কর দোস্তো আমি না!!(কিশোর)
— তাইলে??
— মনে হয় তরিকুইল্লার কাজ। রুমে গিয়া বললাম!!
— তরিকুল এগুলা কি??
— দোস্তো যতদিন ইতু আমারে একসেপ্ট না করবে আমি আর হাগা করবো না!!(তরিকুল)
— হালা কস কি??!!(কিশোর)
— হ দোস্তো!!(তরিকুল)
— হালার পো এজন্যই তো বলি গন্ধ ক্যা?? হালক যা হাইগা আয়। নইলে কিন্তু কিলামু।(কিশোর) কিন্তু তরিকুল ওর কথায় অনড়। এদিকে দুই মিনিট পর পর তরিকুল গ্যাস ছাড়ে আর আমি আর কিশোর বাইরে দৌড়াইতাছি। বুঝতাছি না দৌড়াইতাছি নাকি ভিতর বাহির গেম খেলতাছি। শেষ উপায় না দেখে ইতুরে কল করলাম।
— ইন্দুরের বাচ্চা!! তোর প্রেমের আসিক তরিকুলেরে উঠাইয়া নে!!(আমি)
— ক্যান আবার কি করছে??(ইতু)
— এবার ও হাগাপ্রাসন করছে!!
— মানে??
— তুই একসেপ্ট না করলে ও হাগা দিবে না। প্লিজ কিছু কর।ওর পাদের জ্বালায় রুমে থাকতে পারতেছি না।
— আচ্ছা।ওরে ফোনটা দে!
কি কথা হলো জানি না,তারপর তরিকুল বড় কাজটা সেড়ে আসলো। আর আমরা ভিতর বাহির গেম থেকে মুক্তি পেলাম। পরদিন তরিকুল হাসি মুথে রুমে ফিরলো। বললো ইতু নাকি ওকে একসেপ্ট করছে!! অনেকদিন পর আবার একটা অনাকাঙ্ক্ষিত টাসকি খেয়ে চোখে সর্ষে ফুল দেখতেছি।জানিনা পরবর্তীতে আরো কত কি শোনা লাগে এই দুই কানে। তবুও ভাল যে,ইতু ওরে একসেপ্ট করছে।নইলে পরবর্তীতে তরিকুলের পাগলামি গুলা যে কি হইতো আল্লাহই ভালো জানে।