এই বাদর উঠ মা, আর একটু ঘুমাই না ওই.. কি বললি আমি তোর মা হই আরে ডাইনি বুড়ি.. তুই কখন আসলি..? -কিহহ..? আমি ডাইনি বুড়ি.. তুই বিছানায় একটু থাক আমি আসতেছি.. (বলেই বাহিরে চলে গেল) আর এখানে এক মিনিটও থাকা নিরাপদ মনে হয় না.. বলা যায় না ডাইনিটা আবার কি নিয়ে মারতে আসে বাথরুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে মনে আনন্দে গান গাচ্ছিলাম.. “মিলন হবে কতদিনে আমার মনের মানুষেরও স্বনে” বাহিরে ডাইনিটা চিল্লানী দিয়ে বলছে.. -আরে বাথরুমে গেলি কেন..? বাহিরে আয় আজ তোর এক দিন আর আমার যে কয়দিন লাগে.. তোর মিলন করাছি তুই বাহিরে আয় আমি বাহিরে যাই.. আর তুই আমাকে লাঠি পিটা কর.. আমার মিলনের প্রয়োজন নাই.. সিঙ্গেল আছি বিন্দাস আছি মিঙ্গেল মানেই প্যারার উপর প্যারা তাহলে আজ সারা দিন বাথরুমে থাকবি.. আর তোর মত গাধার সাথে কেউ মিঙ্গেল হবে এই জিবনেও না না রে,এমন করিস না.. এবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দে ক্ষমা করতে পারি.. এক শর্তে কি শর্ত?
আমাকে নিয়ে আজ সারা দিন বাহিরে ঘুরবি.. তবে,সব বিল তোর কিহহ,আমি তোকে আমার টাকায় ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবো পারবো না কি বললি..? আবার বল নাহহ..কিছু বলি নি আমি তোকে নিয়ে সারা দিন ঘুরবো,তবে টাকাটা তুই দিস (কেন যে তাকে ফাজিল মাইয়া ডারে ডাইনি বলতে গেলাম) এখন বাহির হ নাহহ, তুই যা আমি পরে আসছি ১০ মিনিটের মধ্য আসবি মনে থাকে যেন ওহ পরিচয়টা দাওয়া হয়নি.. আমি সজীব এবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি.. আর এতক্ষণ যে আমার সাথে ঝগড়া করলো.. সে আমার খালাতো বোন মিথিলা.. আমাদের বাসা খুব কাছাকাছি.. বলতে গেলে দশ মিনিটের রাস্তা.. তাই সে প্রায় প্রতিদিনই আমার বাসা আসে. শুধু আসে না আমাকে প্যারা উপর প্যারায় রাখে.. প্রত্যক ক্ষেত্রে দোষটা আমারই হয়,ওকে রাগাতে আমার ভালই লাগে.. বাথরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি ডাইনিটা আমার মোবাইলে কি যেন দেখছে এই তুই ফেবুতে কি করিস, আর এইগুলা কি বাজে পোষ্ট তুই এগুলা লেখার সময় কই পাস..? আমি আবার কি করলাম..? আর আমার মোবাইল ধরছিস কি জন্য ? কেন ধরবো না.. আমি তোর মোবাইল টিপলে কি হয়.. এখনই খালাকে গিয়ে সব বলছি আরে দাড়া..! মাকে গিয়ে কি বলবি..? তুই ফেবুতে এত মেয়ের সাথে কথা বলিস.. আর মেয়েদের পটানোর জন্য কত সুন্দর সুন্দর কথা লিখিস এগুলা সব বলে দিব।
বলে কি এই মাইয়া.. মাকে বললে তো আজ গেছি.. আমি লিখালিখি করি বাসায় কেউ জানে না.. আপাতত বিপদ থেকে বাঁচার জন্য মানিব্যাগ খালি করতে হবে, তাছাড়া বাঁচা সম্ভব নয় এই যাত্রায়… -শোন.. আমার লক্ষী খালাতো বোন.. মাকে এগুলা বলিস না.. জানিস তো আমি মাকে অনেক ভয় পাই.. যা আজ তোকে বাহিরে ঘুরাতে টাকাটা আমি নিব ঠিক তো..? হাজার বার ঠিক আর একটা শর্ত আছে..? (আল্লাহ তুমি এই মাইয়ারে অন্ধ নয় তো বোবা করে দাও, সুযোগ পেয়ে মাথা কিনতে চাচ্ছে..) -আচ্ছা, যা রাজি.. (না হয়েও উপায় নেই) তুই এখনই সব মেয়ে বন্ধুকে ব্লক করবি.. আমার সামনে (আল্লাহ বলে কি এই মাইয়া, মাইয়া গো লগে চ্যাট না করলে আমার ঘুম আসে না) হুম করছি হুম করছি মানে কি..? এখনই আমার সামনে করবি..? ঠিক আছে সত্যি সব মেয়েকে বল্ক করবো.. তবু মাকে বলিস না.. এখন যা আমি রেড়ি হয়ে আসছি আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় মনে হচ্ছে আজকের দিনটা খুব খারাপ যাবে।
তাই সকাল সকাল তার আভাস পেতে লাগলাম. অবশেষে, নিজেকে বাচানোর জন্য মিথিলা কে নিয়ে ঘুরতে বাহির হলাম পার্কের বেঞ্চে বসে আছি দুজনই.. মিথিলা কে অনেক সুন্দর লাগছে, রিক্সায় উঠার সময় আড় চোখে দেখে ছিলাম হাতে কাঁচের চুঁড়ি, খোলা চুল, চোখে কাজল.. হালকা লিপস্টিক, নীল শাড়ি, সাথে মিথিলার কাজল কালো দুটি চোখ একবার দেখলেই যে কেউ ক্রাস খাবেই মাঝে মাঝে মনে হয় মেয়েটার অপার্থিব কিছু জানতো তাই এত সুন্দর দেখতে সৃষ্টিকর্তা নিজের মনের মাধুর্য্য দিয়ে গড়েছে মিথিলা কে.. স্বর্গের হুরগুলোও যেন মিথিলার সুন্দর্য্য দেখে হিংসা করে.. অন্য দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম মিথিলার ধাক্কায় বাস্তবে ফিরে এলাম কিরে তোর তো অনেক সাহস? আমাকে বেড়াতে নিয়ে এসে অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস? কই, না তো আমি স্পষ্ট দেখলাম তুই অন্য মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছিস চল বাড়িতে চল আর তোর খবর আছে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এলো কিছু বলার চান্জই পেলাম না হুর সালার, আজ আমার কপালে যে কি আছে আল্লাহ জানে বাড়িতে ঢুকেই আমি চমকে গেলাম খালা, খালু,আব্বু বসে কথা বলছে মা পাশের রুম থেকে বাহির হয়ে বললো সজীব তোর জন্য একটা খুশির খবর আছে মনের কোতূহল থেকে মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এল কিসের খুশির খবর?
আজকেই তোর আর মিথিলার বিয়ে (পাশে দাড়িয়ে থাকা মিথিলার দিকে তাকিয়ে দেখি মহারাণী উড়ে চতুর্থ আসমানে চলে গেছে) -(নিজেকে নিজের কাছে মঙ্গল গ্রহের প্রাণী মনে হল) কিহহ? -কেন রে? তুই কি খুশি হসনি তোর মত নেই বিয়েতে মাথা লাটিমের মত ভনভন ঘুরছে মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাব.. কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম কি করবো বুঝতে পারছিনা,মা আব্বু যেহেতু বিয়ের কথায় রাজি আছে সেখানে আমি আর কি বলবো মাথার তাঁরগুলো পুরাতন সিডির ডিক্সের মত হ্যাং মেরে বসে রইলো.. মিথিলার সাথে আমার বিয়ে হলে আমাকে তো প্রতিদির তিন বেলা মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে.. এখনই, বিয়ে না করেই জিবনটাকে লবনের বস্তার বানিয়ে দিয়েছে বিয়ে পরে তো আটার বস্তা বানাবে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে নিদ্রা দেবী চোখে ভর করেছে বুঝতে পারিনি মায়ের চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙ্গলো কি রে, উঠ কত ঘুমাবি আর?
উঠছি মা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে, পোষাকগুলো পড় পোষাকগুলো হাতে নিয়ে দেখি বিয়ের পোষাক রুমের লাইটটা মিটমিট করে জ্বলছে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম রাত হয়েছে ভেবে উঠতে পারছি না কি করবো ফ্রেস হয়ে বাহিরে বেড়িয়ে দেখি আত্বীয় স্বজন দিয়ে ভরপুর বাড়িতে কখন এসেছে তারা? ঘুমেই কি বিয়েও হয়ে গেলো না কি? মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ালাম মায়ের রুমে ঢুকেই চোখ চড়ক্ষ গাছ মিথিলা কে বউয়ের সাজে সাজানো শেষ আমাকে দেখে ভাবিরা চিল্লাতে লাগলো আমি এখানে কি করি, আমার তর সইছে না, নাকি? আল্লাহ কি হচ্ছে এসব? আমি কি ভুল কোন বাড়িতে আসিনি তো? দুলাভাইয়েরা ধরে বরের পোষাক পড়ালো রাত ১২টার দিকে মিথিলার সাথে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো নিজেই নিজের রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি দরজা খোলাই আছে, রুমের কিছু মৃদু আলো আমার সামনে খেলা করছে।
প্রেম প্রেম খেলা অন্যদিন হলে ঠাস করে দরজা খুলে বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিতাম, আজ হাজার সাহসও হারিয়ে যাচ্ছে দরজা স্পর্শ করার মত সাহস পাচ্ছিলাম না মিথিলা কে যে আমার খারাপ লাগে তা নয় হয়ত বড্ড ভালবাসিও কিন্তু মেয়েটা একটু বেশী ঝগড়াটে, সারাক্ষণ ঝগড়া করার তালে থাকে আমাকে বাহিরে দারোয়ানের মত দাড়িয়ে থাকা দেখে ফাজিল ভাবিগুলো জোর করে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরে দেখি ফুলে ফুলে সাজানো বিছানার মাঝখানে মিথিলা বসে আছে.. ভয়ে ভয়ে গিয়ে মিথিলার পাশে বসলাম অনেক রাগি দুটি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো -কি রে, আসতে এত দেড়ি করলি কেন? আরও কোন মেয়ে আছে নাকি? (আল্লাহ এ কেমন মেয়ে কপালে লিখছিলা বাসর রাতেই সন্দেহ করে) -আমি তোর বয়সে অনেক বড় আর এখন তোর বিবাহিত স্বামী আমাকে তুমি করে বলবে এটা পরে ঠিক হয়ে যাবে আগে বল আসতে এত দেড়ি করলি কেন?
তোমার ঝগড়া ছাড়া কোন কাজ নেই ঝগড়াটে মাইয়া (একটু রেগে গিয়ে) -কিহহ আমি শুধু ঝগড়া করি তাই না আমি ঝগড়াটে মেয়ে দেখ তবে রে মজা (বলেই আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো যুদ্ধে জেতার জন্য এই যুদ্ধটা যে সারাজিবন মনে রাখার যুদ্ধ) মুখ ফসকে বলে ফেললাম আল্লাহ বাচাও,এই ডাইনি বউ এর হাত থেকে আগে ডাইনি, এখন ঝগড়াটে মিথিলা তার ঠোঁট দিয়ে আমার ঠোঁট বন্ধ করে দিলো আর হারিয়ে যেতে লাগলাম, অজানা কোন স্বর্গপুরে তার পরে যা হলো সেটা আর না বলাই ভালো কারন ঘড়ের কথা কাউকে বলতে নেই।