আব্বা আমার বিয়ে দিবেন কি না

আব্বা আমার বিয়ে দিবেন কি না

আব্বা আমার বিয়ে দিবেন কি না? কিহ্? বিবাহ, শাদি, ম্যারিজ, নিকাহ্ সকাল সকাল কি গাঞ্জায় ফুঁকেছিস? আব্বা আমি গাঞ্জা খাইনা। কিন্তু কথা শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। অতো কথা বুঝিনা বিয়ে দিবেন কিনা বলেন। না দিবোনা। ক্যান দিবেন না? তোর রেজাল্ট যেন কি, এবার পাশ করছিস নাকি আবারো ফেল মারছিস? ফেল মারছি পাশ করবি কবে? করবোনা ক্যান? আমার ইচ্ছা মানে? আমার ইচ্ছা আমি পাশ করবোনা, ফেল মারবো আবার পরিক্ষা দিবো। আবার ফেল মারবো, একসময় রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ শেষ হবে তখন আবার নতুন করে রেজিট্রেশন করে পরিক্ষা দিয়ে ফেল করবো এটাই আমার ইচ্ছা।

ভালো রেজিস্ট্রেশনের টাকাটা নিজেই দিস। ওই আব্বা মাইন্ড করেন ক্যান সামনের বার সত্যি পাশ করুম আপনার কসম। কোথায় কোথায় যেন চাকরির ইন্টারভিউ দিলি চাকরির খবর কি? চাকরি হয় নাই বাহ্ চাকরি নাই উনি বিয়ে করার জন্য পাগল হয়েছেন। আব্বা ইচ্ছা করলেই তো চাকরি করা যায় কিন্তু আমার এইম ইন লাইফ হলো বেকার থাকা। আমার টার্গেট ই হলো বেকার থাকা, চাকরি দিলেও করতাম না। স্যান্ডেলের বাড়ি খাইবা? সকাল সকাল মস্করা করো। সরি আব্বা তবে আমি বিবাহ করিতে চাই সরি বাবা তোমার বিবাহ দিবোনা। ক্যান আব্বা? আমার ইচ্ছা, আমার টার্গেট হলো তোর বিবাহ দিমুনা তোরে আইবুড়া করে রাখুম। আব্বা আমার কথায় বুঝি মাইন্ড করছেন, বললাম তো মস্করা করেছি। আচ্ছা আগে চাকরি যোগাড় কর তারপর দেখা যাবে।

কি ভাই, কি ভাবছেন বিয়ে করার জন্য আলিফ পাগল হয়ে গেছে। মানছেনা মন কোলবালিশে পারছেনা গুরু আর এমন অবস্থা আমার? না ভাই তাহলে ভুল ভাবছেন। আসলে গার্লফ্রেন্ডের বাপে তার মেয়েকে বিবাহ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। আর তার মেয়ে আমাকে দৌঁড়ের উপর রেখেছেন। পাঁচ মিনিট পরপর ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ আলিফ কি করো? ফোন রিসিভ করে বললামঃ বাবু টয়লেটে আছি। হ্যাঁ সারাদিন বসে ওটাই করো। চাকরি তো তোমার বাথরুমে এসে দিয়ে যাবে। রাত তিনটার সময় কল দিয়ে জিজ্ঞাসা করেঃ আলিফ কি করো? বাবু ঘুমাচ্ছি হুম ঘুমাও চাকরি তো তোমার স্বপ্নে এসে দিয়ে যাবে।

চুপ করবি, রাত তিনটায় তোর দাদা চাকরি নিয়া বইসা রইছে না? কি বললা? না বাবু বসে থাকতে থাকতে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমিতো অফিসের গেটের সামনে টুলে বসে আছি অফিস খুললেই চাকরি নিয়ে বাসা ফিরবো। আমার লগে মস্করা করছ সালা ফাজিল, খাচ্চর, ডুগডুগি আলি যাই হোক চাকরি একটা খুব বেশি জরুরি। বাথরুমে গেলে বদনায় পানি থাকা যতোখানি জরুরি চাকরি ঠিক ততোখানি জরুরি।যাই হোক সেজেগুজে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আব্বাহুজুরের কাছে গেলাম টাকা নিতে চাকরির ইন্টারভিউ আছে। টাকা নিয়ে আব্বার দিকে সাদা খাম এগিয়ে দিলাম, আব্বা বললেনঃ এটা কি? আমি কি জানি, চিঠি টিঠি হবে হয়তো কে যেন দরজার সামনে রেখে গেছে।

আব্বাহুজুরকে খামটা দিয়ে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আম্মাকে বললামঃ আম্মা সারাদিন রান্নাঘরে বসে কেকা ফেরদৌসির রেসিপি রাঁধলে হবে„ বলি নিজের স্বামির কীর্তিকলাপের দিকে একটু নজর রাখেন। কি আবোল তাবোল বলিস, তোর বাবার আবার কি হলো? পাশের বাসার সেলিনা আন্টি আব্বাকে লাভ লেটার আর ফটো পাঠিয়েছে। কি ফালতু কথা বলিস? জ্বী আমি আবার খাম খুলে চিঠিটা একটু পড়েছি। চিঠিতে লিখছে, তুমি আমার জ্বীন আমি তোমার পরী চলো মিলে দুজনে সাত আসমানে উড়ি।

আমি তোমার ময়ূর তুমি আবার বক, তোমায় দেখলে দিলটা করে ধুকপুক ধ্কধ্ক আম্মা পুরো কথা না শুনে বেলন হাতে আব্বার কাছে চলে গেলেন। আমি বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। আসলে ফেসবুক থেকে পাশের বাসার আন্টির ফটো আমি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করেছি, আর চিঠিটা নিজে লিখেছি। বাসা থেকে বের হতেই সেন্টুর সাথে দেখাঃ কিরে আলিফ কই যাস? চাকরির ইন্টারভিউ। ধূরো চাকরি তো হবেনা হুদাই সময় নষ্ট আমার সাথে চল মিটিং আছে বিরিয়ানির প্যাকেট সাথে দুশটাকা পাবি।কিসের মিটিং ইলেকশন। কিসের ইলেকশন অতো জেনে কি লাভ, টাকা পেলেই হলো।

আপনি যান দেখি ইন্টারভিউ জলদি শেষ হলে যাবোনে ইন্টারভিউ রুমে যেই ব্যক্তিটি বসে আছেন তিনি প্রতিবারের মতো একজন টাকের মালিক। টাকের সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন যেন দেখলেই থাবড়া মারতে ইচ্ছা করে। টাকওয়ালা ব্যক্তি আমার ফাইল টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ আচ্ছা আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন স্যার আমি বাসার বাজার ভালো করতে পারি, টাকা মারার অভ্যেস মোটেও নেই। বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা করতে পারি। ছুটির দিন গাড়ি ধুতে পারি। এগুলো আমার শখ বলতে পারেন। চাকরি পেলে চাকরির পাশাপাশি ধরুন আপনার বাসার বাজার করা, বাচ্চাদের স্কুল পৌঁছানো নিয়ে আসা, আপনার গাড়ি ধোঁয়া করতে পারি। এতোদিন ঘুষ অফার করতে দেখেছি কিন্তু সার্ভিস অফার করতে প্রথম দেখলাম। কিন্তু আমি আনম্যারিড। স্যার আমি মালিশ ভালো করতে পারি। আপনি আসতে পারেন। স্যার প্লিজ, চাকরি না পেলে আব্বা আমার বিবাহ দিবেন না। আপনাকে আসতে বলেছি। স্যার দুমিনিট আপনার মাথা বানিয়ে দেই মানে? মানে মালিশ করে দেই আমি সাথে করে খাঁটি সরিষার তেল এনেছি।

প্যান্টের পকেট থেকে সরিষার তেলের বোতলটা বের করে স্যারের দিকে এগিয়ে গেলাম। স্যার আমাকে তার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাকে উঠতে দিলাম না। জোর করে চেয়ারের মধ্যে ঠেসে ধরলাম। বোতল খুলে তার টাকে তেল ঢেলে মালিশ শুরু করলাম। বেচারা বাঁচার জন্য চিৎকার শুরু করছেন, তার চিৎকার শুনে দারোয়ান দৌঁড়ে এসেছে। বসের টাকে তবলা বাঁজানোর দৃশ্য দেখে দারোয়ান রীতিমতো ভিড়মি খেয়েছে। কি করা উচিত বুঝতে পারছেনা। আমার দিকে আসছিলো দিলাম ধমকঃ ব্যাটা কাছে আসলে কামড়ে দিবো।

পরিস্থিতি ঠিক না, লোকজন জড়ো হচ্ছে। দেরি করা যাবেনা নাহলে ধরে গনপিটুনি দিবে। পুলিশেও দিতে পারে। আচ্ছা টাকে জোর পূর্বক মালিশের জন্য কি শাস্তি হতে পারে? আরেক পকেট থেকে দুটো ডিম বের করে স্যারের মাথায় থপাস শব্দে ভাঙ্গলাম। ডিমগুলো মনে হয় পঁচা ছিলো কেমন দুর্গন্ধ করছে। তারপর এক দৌঁড়ে বের হলাম, কেউ আটকানোর সাহস করলোনা। রিক্সাভাড়ার টাকায় তেল আর ডিম কিনেছিলাম তাই হেঁটে হেঁটে ফিরতে হচ্ছে। সেন্টু ভাইকে ফোন দিলামঃ হ্যালো সেন্টু ভাই মিটিং কোন জায়গায়? আসবি? হ্যাঁ না আসাই ভালো কেন, আর এতো গ্যান্জাম কিসের। আছেন কোথায়? আমি টেবিলের নিচে লুকায় আছি। বিরিয়ানির প্যাকেটে কে যেন মরা ইন্দুর পাইছে। এখন মারামারি লাগছে। নেতাকে লাউ দিয়ে পিডাচ্ছে লাউ দিয়ে পিডাচ্ছে কেন?

নেতার মার্কা হলো লাউ। বিরাট বিরাট সাইজের লাউ কিনে আনছে মিটিং এ। এখন পাব্লিক ওই লাউ দিয়েই নেতার পেছনের দিকে পিডাচ্ছে। কয়েকটা লাউ পিডিয়ে ভেঙ্গে ফেলছে তো আপনি লুকাচ্ছেন ক্যান, আপনার কিসের ভয়? নেতা সম্পর্কে আমার চাচা হবেন সেন্টু ভাই আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় চিৎকার শুনতে পেলাম, ফোনের ওপাশে সেন্টু ভাই চিল্লাচ্ছেনঃ পা ছাড়, ছাড় বলছি, ছেড়ে দে প্লিজ কাউকে টানা হিঁচড়ার মতো শব্দ শুনতে পেলাম। মনে হয় সেন্টু ভাইকে টেনে হিঁচড়ে বের করেছে। দশ সেকেন্ডের নিরবতার পর ফোনের ওপাশে সেন্টুর আর্তনাথ আর কোনকিছু দিয়ে পিডানোর শব্দ কানে আসতে লাগলো।

বাসায় ফেরা সম্ভব না কেননা বের হওয়ার সময় আব্বা আম্মার ঝগড়া লাগিয়ে এসেছি। তার রিয়েকশন হবে নিশ্চই। রাত আটটা পর্যন্ত ব্রিজের উপর পা দুলিয়ে বসে থাকলাম। হঠাৎ ফোনটা বাঁজতে শুরু করলোঃ হ্যালো রাত্রি বাবু কোথায় তুই? কেন? আমার সাথে দেখা কর এক্ষুনি তুই তুকারি করছো কেন? আসতে বলছি আয়। রাত্রির বাসার গেইট দিয়ে ঢোকার সাহস আমার নেই, রাত্রির বাবা পিটিয়ে হাড় ছাতু বানিয়ে ফেলবে। বাসার পাশ দিয়ে বিরাট আমগাছ, আমাগাছের ডাল রাত্রির জানালা পর্যন্ত যায়। কোন মতে গাছে উঠে জানালার সামনে গিয়ে নক করলামঃ কে? রাত্রি বাবু আমি জানালা খোল জানালা খুলে রাত্রি টাশকি খেয়ে গেলো।

তুমি এখানে কেন? তো গেইট দিয়ে যাবো নাকি তোমার বাবা পিটিয়ে কথাটা শেষ হওয়ার আগেই রাত্রির বাবার কন্ঠ শুনতে পেলামঃ গাছের উপড়ে কে রে? নিচে তাকিয়ে দেখি রাত্রির বাবা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি আবারো বললেনঃ গাছের উপড়ে কে? কেউ না আব্বা পাখি পাখি পাখি না কাউয়া সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি, নিচে নাম। না নামবোনা, নামলে আপনি মারবেন। মারবোনা নাম তুই আপনি মারবেন আমি জানি নামবি তুই? আগে আল্লাহর কিরা কন মারবেন না রাত্রি বাবা কিছু না বলে গাছের নিচ থেকে চলে গেলেন।

তাড়াতড়ি করে পালানোর জন্য গাছের অর্ধেক নেমে এসেছি এমন সময় দেখে রাত্রির আব্বা বিরাট বাঁশ নিয়ে আসছেন। উপায় না দেখে আবারো উপরের দিকে উঠতে শুরু করলাম। বেশিদূর উঠতে পারলাম না। কে যেন বাঁশ দিয়ে গুঁতো দিলো। উরিম্মা আব্বা আমি কিন্তু আপনার হবু মেয়ে জামাই, এভাবে টর্চার করা কি ঠিক হচ্ছে। তুই নাম একবার তারপর তোর জামাই হওয়ার ইচ্ছা পূরন করতেছি। কথাটা বলে আবারো বাঁশ দিয়ে গুঁতো দিলেন। উরিম্মা আব্বা আপনি আরেকবার যদি গুঁতো মারেন আমি কিন্তু থুতু দিবো থু থু ওয়াক থু থু থু নিচে থুতু ফেলা শুরু করলাম ওই থুতু দিবিনা খবরদার আমি কিন্তু ইট দিয়া ঢিল মারবো।

রাত্রিকে ডাক দিলামঃ রাত্রি তোমারে আজ পর্যন্ত যতো শোপিস, মগ গিফ্ট করছি দাও তো কেন কি করবা? নিচে তোমার আব্বারে ঢিল মারমু ছিহ্ উনি আমার বাবা হন। যাও কথা নাই তোমার সাথে বলেই দরজাটা জানালাটা বন্ধ করে দিলো আল্লাহ্ এবারের মতো আমারে বাঁচাও।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত