আপেল পাগলী বউ

আপেল পাগলী বউ

আমার বিয়ের জন্য ৩৬ তম মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। এর আগে ৩৫ টা মেয়ে দেখা হয়েছে কিন্তু একটাও আমার পছন্দ হয়নি। আসলে পছন্দ হয়নি বললে ভুল হবে,মেয়ে গুলো রূপে গুনে সব দিক দিয়েই পারফেক্ট ছিলো। কিন্তু আমার পছন্দ হয়নি।

ঘটনা একটু খোলাশা করে বলা যাক প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে ব্যক্তিগত কিছু পছন্দের জিনিষ থাকে। যেমন,কারো ছবি আকা,কারো মুভি দেখা,কারো দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি। তেমনি আমারো পছন্দের একটা বিষয় হচ্ছে আপেল খাওয়া। ব্যপারটা হাস্যকর হলেও,ছোটবেলা থেকেই আপেল আমার খুব পছন্দ। যখন কেউ আমায় বলতো আচ্ছা রুবেল বলতো আমাদের দেশের জাতীয় ফলের নাম কি কি? আমি তখন ফট্টত করে বলে দিতাম আপেল। যাইহোক বাদদেই সেই কথা। আর বিয়ে করার সময় আমার একটা শর্ত, সেটা হলো বিয়ে যদি করতে হয় তাহলে আপেল পছন্দ করা মেয়েকেই করবো। যার ফলে এখন পর্যন্ত একটা মেয়েকেও বিয়ের পিরিতে বসাতে পারলাম না। তবে আম্মা বলেছে,আজকে যে মেয়েকে দেখতে যাচ্ছি সে নাকি আপেল খুব পছন্দ করে। তাইতো আজ খুশি মনে মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।

আমি বসে আছি মেয়ের বাড়িতে। মেয়ে যে আপেল পছন্দ করে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কেননা মেয়ের নাম হচ্ছে”সিনথিয়া আক্তার আপেলি” আমার নামও কিন্তু ” রুবেল হাসান আপেল”। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো মেয়ের বাড়ির দেয়ালে অসংখ্য আপেলের ছবি। মনে মনে বললাম “মেয়ে কালা,সাদা,লাল,নীল ,বেগুনী, হলুদ যেমনি হোকনা কেনো এ মেয়েকেই আমি বিয়ে করবোই। এতে যদি আমার যাবজ্জীবন জেলে থাকতে হয় তাও থাকব।”

আমাকে মেয়ের সাথে মেয়ের রুমে পাঠানো হলো আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য। আমি বসে আছি মেয়ের রুমে,মেয়ে আমার সামনে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। তার দুই হাতে দুইটা আপেল। মাঝে মাঝে আমার দিকে লজ্জা মাখা চোখে তাকাচ্ছে, আর কুট কুট করে ইন্দুরের বাচ্চার মতো আপেল খাচ্ছে। আমিও গভীর আগ্রহ নিয়ে তার কুট কুট করে আপেল খাওয়া দেখছি। লজ্জা ভেঙ্গে সিনথিয়া আমায় বলল আপেল খাবেন? আমি একটু ইতস্ত ভাব করে বললাম না,মা..মানে।

ধুরু এত্ত মানে মানে করছেন কেনো আপেল খান,সব ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা একটা কথা বলবো? আমি তার আপেলে কুট করে কামর দিয়ে বললাম বলুন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে? হুমমম অন্নেক (লজ্জায় মাথা নিচু করে) আমারো আপনাকে অন্নেক পছন্দ হয়েছে। জানেন আমার না খুব ইচ্ছে ছিলো যে, যে ছেলে আমার মতো আপেল পছন্দ করে তাকে বিয়ে করবো। সে যেমন-ই হোকনা কেনো। যেহেতু আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করে ফেলেছি। তাই বাবা-মা খুব খুশি হয়েছে। তারা আমাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলো। আজকে আমার বিয়ে। মনের মধ্যে অজানা এক অনুভূতি। নিজেকে কুরবানির গরুর মতো ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আহা অবশেষে আমি পাইলাম, আমার আপেল বউ পাইলাম। এত্ত খুশি আমি রাখি কই, আল্লাগো তুমি আমারে দেও একটা মই। মইয়ে চইরা যামু চান্দে, যাতে বউ মোর খুশিতে কান্দে। বউ কানলে আমি মুইছা দিমু, তার চোখের পানি তাই দেইখা ভেংচি কাটবো, রোশান ভাইর নানি।

আমি দাড়িয়ে আছি বাসর ঘরের সামনে। ঘরে ঢোকার সাহস পাচ্ছিনা। ভয় ভয়,আবার লজ্জা লাগছে। আমার এমন অবস্থা দেখে নি রা আপু বলল কিরে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো? যেতে ভয় করছে। (লজ্জায় লাল হয়ে) আহারে আমার ভয়কুমার ভাই, আবার লজ্জাও পায়। তারপর এক ধাক্কায় আপু আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দিলো। আমি নিজেকে সামাল দিতে পারলাম না, সরাসরি গিয়ে পরলাম খাটের উপরে। বউকে দেখেই আমি টাস্কি খাইলাম। কারন নতুন বউ বাসর ঘরে ঘোমটা দিয়ে থাকার কথা কিন্ত আমার বউ ঘোমটার ঘ ও দেয়নাই। হেতি সমানে ইন্দুরের মতো আপেল খাচ্ছে। তার যে বিয়ে হয়েছে সেটা মনে হয় তার খেয়াল নাই। আমি বললাম আজকে না আমাদের বাসর? তো কি হয়েছে? তুমি এভাবে আপেল খাচ্ছ কেনো? বাসর ঘরে কি আপেল খাওয়া নিষেধ নাকি? তা না, কিন্তু কোন কিন্তু নয়,আসুনতো আজকে সারারাত আমরা আপেল খেয়ে কাটিয়ে দিবো।

এই বলে সিনথিয়া আমাকে টেনে তার কাছে নিয়ে গেলো। তারপর আপেলের একটা গামলা দিলো। যা আমাকে খেতে হবে। মাইয়া বলে কি,, আপেল নাহয় খুব পছন্দ তাই বলে সারারাত আপেল খেতে হবে? এটা কেমন কথা। মনে মনে ভাবলাম একদিন-ই তো সারারাত আপেল খেতে হবে। তাই কোন কথা না বলে আপেল খাওয়া শুরু করলাম। রাতে প্রায় ৪০/৪৫ টা আপেল খেয়েছি। ফলে অবস্থা প্যারালাইজড এর রোগির চেয়েও খারাপ হলো। কিন্তু সিনথিয়ার কিছুই হলোনা। সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হলো। আমাদের দেরি করে উঠতে দেখে নি রা আপু বলল কিরে এত্ত দেরি করে উঠলি যে? (দুষ্টুমি হাসি) আপুর এমন প্রশ্ন শুনে সিনথিয়া বলল আসলে আপু সারারাত শুধু খেয়েছি,ফলে দেরি হয়েছে।

আমি পটাপট বললাম..হ্যা..হ্যা আপু আমরা সারারাত শুধু আপেল খেয়েছি। তোমরা যে কি খেয়েছো আমি জানি। হিহিহি তারপর আপু হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি সিনথিয়াকে কুনুই দিয়ে আস্তে করে গুতা দিয়ে বললাম আপুকে সরাসরি বলতে আপেল খেয়েছি, শুধু খাওয়ার কথা কেনো বললা? কেনো তাতে কি আপেলের কোন ক্ষতি হয়েছে। তোমার সাথে এ বিষয়ে কথা বলে লাভ নেই। বিয়ের আমেজ সব শেষ। বউকে নিয়ে রিকশায় করে শশুড় বাড়ি যাচ্ছি। রাস্তার আমজনতা উৎসুক দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকানোর অবশ্য একটা কারন আছে, কেননা সিনথিয়া রিকশায় বসে শুধু আপেল খাচ্ছে আর উমম উমম করছে। মনে হয় বাপের জন্মে আপেল খায়নায়।

আমার একটু রাগও হলো। বললাম আচ্ছা রাস্তার মধ্যে এভাবে আপেল না খেলে হয়না? কেনো আমি কি কারো টাকা দিয়ে খাই? না তানা, তাই বলে রিকশায় বসেও খেতে হবে? তুমি চুপ করে বসে থাকো। আমাকে চুপ থাকতে বলে সিনথিয়া সমানে আপেল খাচ্ছে। আমি মনে মনে ভাবছি,, কোন দুঃখে যে এমন মেয়ে বিয়ে করলাম। শালার আপেল ছারা কিচ্ছু বোঝেনা। আমার বউয়ের একপাশে যদি আপেল আরেক পাশে যদি আমাকে রাখা হয়। এবং তাকে যেকোনো একটা নিতে বলা হয় তাহলে,নিশ্চিত সে আমাকে বাদ দিয়ে আপেল নিবে। শশুড় বাড়ি আসছি। আমাদের দেখে তারা খুব খুশি। যাইহোক খুব ক্লান্ত হয়েছিলাম তাই একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হলাম। তখন-ই সিনথিয়া বলল চলো নাস্তা করি। আচ্ছা চলো।

ডাইনিং টেবিলে বসতেই চোখ আমার ছানাবড়া। কারন টেবিলে অনেক প্রকারের খাবারের আইটেম। সিনথিয়া যা বলল তাতে আমার মাথা খারাপ হওয়ার মতো উপক্রম। কারন খাবারের আইটেম গুলো হলো….আপেল পানির শরবত,আপেলের ভর্তা, লাচ্চা উইথ কুচি কুচি আপেল মানে লাচ্চার মধ্যে কুচি কুচি করে আপেল কেটে দেয়া,,আপেলের নুডলস,,আপেলের সালাত,, আপেলের রোস্ট,,আপেলের পোলাও,খাসির মাংষ সাথে আপেল,,ইলিশ আপেল। মনে মনে বললাম এসব খেলে আমি নির্ঘাত ঠাসস করে ফাল দিয়ে মরে যাবো। আমি বসে আছি কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছেনা।

সিনথিয়া বলল আইটেম গুলো কত্ত কিউট তাইনা?  আমি ভাবছি আপেলের আইটেম কিভাবে কিউট হয়। কিউটতো হয় ছোট ছোট বাচ্চা পোলাপাইন,যেমন আমার প্রো-পিক। কি হলো বলছোনা যে? আরে হ্যা অনেক কিউট আইটেম গুলা। তাই, আচ্ছা দাড়াও আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি। আরে না না, আমি একাই খেতে পারবো। তুমি কথা কম বলো। তরপর সিনথিয়া ইচ্ছা মতো আমায় আপেল আইটেমের যত খাবার আছে সব খাওয়ালো। খাবার এক্কেবারে গলা পর্যন্ত এসছে। ওমাগো আমার অবস্থা শোচনীয়। একটুপর শাশুড়ি আমার বলল সিনথিয়া তোদের জন্য আপেলের মিষ্টি বানিয়েছি। আচ্ছা দাও, আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।

আমি না করতে পারলাম না। সিনথিয়া একপ্রকার জোড় করে আমাকে আপেলে মিষ্টি মুখে পুরে দিলো। আমি শুধু আপেলের মিষ্টি চাবাচ্ছি। গিলছি না। গিলবো কি করে আমার গলা পর্যন্ত শুধু আপেল আইটেম। আহারে আপেল,,আমি মিষ্টি চাবাচ্ছি। যাকে বলে চাবু আইসে তার গিলু আইসেনা। আপেলের মিষ্টি মুখে থাকা অবস্থায় এক দৌড়ে টয়লেটে গেলাম। আহ কি শান্তি। টয়লেটে প্রায় ১.৩০ ঘণ্টা বসে থেকে বেরিয়ে আসলাম। যাক ততক্ষণে একটু আরাম পেলাম। মনে মনে আপেলের দুইশ গুষ্ঠি উদ্ধার করলাম। অফিসে বসে বসে কাজ করছি। দুপুর পর্যন্ত কাজ করলাম। খেয়াল করলাম অফিসের সবাই আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। আমি বুজলাম না,সবাই আমাকে দেখে কেনো হাসছে। যাইহোক বিষয়টা আমলে নিলাম না। ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। ঢুকেই অবাক, তখন বুজলাম সবাই আমাকে দেখে কেনো হাসছে। হাসার কারন হলো আমার নিকনেইম দেওয়া আপেল। আর আমার টাইলাইলে বউ আপেলের বিভিন্ন আইটেমের রান্না পোস্ট করছে।

সাথে আরেকটা স্টাটাশ “যদি কখনো আমাদের ছেলে হয় তাহলে নাম রাখবো আপেল,মেয়ে হলে রাখবো আপেলি। নামটা কিউটনা ফ্রান্স” পোস্টে শত শত হাহা রিয়াক্ট। আর কমেন্ট গুলো দেখলো মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। শালার এই ছিলো আমার কপালে। মুখ বুজে সব সহ্য করলাম কিচ্ছু বললাম না। সামনে কুরবানি ঈদ। তাই ভাবছি একটা গরু কেনা দরকার। টাকা নিয়ে বাজারে যাচ্ছি। সিনথিয়া বলল এই শোননা? হুমম বলো? না মানে বলছিকি বলদ গরু আনবা নাকি গাভী আনবা? কেনো বলদ গরু আনবো। আমি বলছিকি একটা আপেল গরু নিয়ে আসলে হয়না? মারডালা,পুকিন্নি বলে কি? আপেল গরু আবার কি। অবাক হয়ে বললাম আপেল গরু মানে? আরে আপেল কালারের গরু। আচ্ছা আনবো।

হাটে অনেক খোজাখুজি করলাম মাগার আপেল কালারের কোন গরু পেলামনা। অবশেষে হালকা আপেলের মতো কালারের একটা গরু কিনে নিয়ে গেলাম। গরু দেখে সিনথিয়া খুব খুশি। কারন গরুটা নাকি আপেল কালারের। যাইহোক বউ খুশিতো দুনিয়া খুশি। অফিস শেষ করে বাসায় যাচ্ছি। ঠিক তখন-ই সিনথিয়ার ফোন এই তুমি কোথায়? এইতো বাসায় যাচ্ছি। একটু তারাতারি আসোনা? কেনো কি হয়েছে? কুরবানিরর গরুটা জানি কেমন করছে। আচ্ছা আমি আসছি।

তারপর একটু তারাতারি চলে গেলাম বাসায়। গিয়ে দেখি গরু সমানে শুয়ে গড়াগড়ি আর হাম্বা হাম্বা করছে। আমি গরুর এমন অবস্থা দেখে বললাম সিনথিয়া গরু এমন করছে কেনো? জানিনাগো আপেল খাওয়ানোর পর থেকে শুধু এমন করছে। আপেল খাওয়ার পর মানে? আম্মা বলল আমি যেনো গরুকে ঠিক মতো খাওয়াই। তাই ভাবলাম কুড়াপানি দিয়ে কি হবে আপেল খাওয়াই,তাতে যদি মাংষ বেশি হয়।তাই কুড়াপানি খাওয়ান বাদদিয়ে গরুকে শুধু আপেল খাইয়েছি,এখন দেখছি গরু এমন করছে।

আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি, কি বলবো বুঝতে পারছিনা। তাও বললাম আরে আপেল খেয়ে গরু খুব মজা পেয়েছে তাই খুশিতে লুঙ্গী ড্যান্স দিচ্ছে,,ওরাতো ড্যান্স দিতে পারেনা তাই গড়াগড়ি করছে,আর হাম্বা হাম্বা করে অপরাধী গান গাইছে। সত্যি? হুমমম সত্যি।

তারপর সিনথিয়া দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। আমি গরুর পাশে দাড়িয়ে তার গড়াগড়ি দেখছি আর হাম্বা হাম্বা অপরাধী গান শুনছি। মনে মনে ভাবছি এবার ঈদে বোধহয় আর গরু খাওয়া হলোনা।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত