কবিরাজ মিশু

কবিরাজ মিশু

দা নিউ পাগলী মলম,লাগাবেন তো আরাম পাবেন। গলা ব্যথা,পেটে ব্যাথা,বুকে ব্যথা,চুলে ব্যথা,দাতে ব্যথা,গিড়ায় ব্যথা,শিরায় ব্যথা,মাজায় ব্যথা,আউলা ঝাউলা ব্যথা,উড়নচণ্ডী ব্যথা,প্রেমের ব্যথা,সংসারের ব্যথা,গোপণীয় ব্যথা,ইজকি বিজকি ব্যথা,সব রকমের ব্যথার জন্য আছে দা নিউ পাগলী মলম।লাগাবেন তো আরাম পাবেন। সারাজীবনের মত ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।

দাম মাত্র ২০ টাকা,২০ টাকা,২০ টাকা। আমার লেকচার শুনে আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়ে গেলো। সবাই আগ্রহ সহকারে তাকাচ্ছে।যাক,ব্যবসা বোধহয় ভালোই হবে।দিনকাল খারাপ যাচ্ছিল তাই আর কি মলম বেচা শুরু করলাম। এমনি তেও তো কবিরাজ হিসেবে আমার খ্যাতি অনেক।কিন্তু আজকাল কবিরাজি ব্যবসায় ঠাডা পড়ায় বহুত কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছিল।

তাই মলম বেচায় যোগ দিলাম।দেখা যাক,কি আছে কপালে! জুতায় ব্যথা,মুজায় ব্যথা,হাড় হাড্ডিতে ব্যথা,সব রকমের ব্যথার মহৌষধ দা নিউ পাগলী মলম! এক ভাই এগিয়ে এসে বললেন,গুরুজী আপনার মলমের উপকারিকা কি কি?  কইলাম তো ভাইজান। সব রকমের ব্যথা থেকে মুক্তি। গুরুজী,আমার না মোবাইল টিপতে টিপতে নখে প্রচণ্ড ব্যথা হয়ে গেছে।এর আরাম পাবো? অবশ্যই পাবেন। পাগলী মলমের উপকারিকা লাগালেই টের পাবেন। একবার খাবেন, আরাম পাবেন। মলম খাইতেও হবে? আরে নাহ,শুধুমাত্র ব্যথাতুর স্থানে লাগাতে হবে।দুনিয়ায় এর মত আজিব মলম এর আগে মেইড হয়নি।আপনি সন্দেহের সহিত নিতে পারেন। সন্দেহের সহিত মানে! আরে মানে হচ্ছে নিঃসন্দেহে। জি আচ্ছা গুরুজী।একটা মলম দেন দেখি।

আহ! একটা মলম বিক্রি হওয়ার পথে।খুশিতে মনটা লাফিয়ে উঠল।ব্যাগ থেকে মলম বের করে দিয়ে বললাম, ভাইজান মাত্র ২০ টাকা মূল্য।আপনার জন্য ৫ টাকা ছাড়ে দিচ্ছি।আপনি ২৫ টাকা দেন। ভাইজান অবাক হয়ে বললেন,৫ টাকা ছাড়ে কিভাবে ২৫ টাকা হয় গুরুজী?  বুঝেন নাই? বুঝাচ্ছি।আপনি মলম কিনবেন ২০ টাকায়।আমাকে ৫ টাকা ছাড় দিয়া ২৫ টাকা দিবেন। হায় আল্লাহ! এইসব কি বলে! ৫ টাকা ছাড় দিয়া তো ১৫ টাকা দেয়া উচিৎ। আবার বুঝাচ্ছি।মলমের দাম ২০ টাকা।আপনি আমাকে ৫ টাকা ছাড়ে ২৫ টাকা দিবেন।

এটা ক্যাম্নে সম্ভব? বেচবেন আপনি,ছাড় দিবেন আপনি।আমি ক্যানো ছাড় দিবো? এটা কোন সংবিধানে আছে যে,যিনি বেচবেন তাকেই সবসময় ছাড় দিতে হবে? যিনি কিনবেন তাকেও তো ছাড় দেয়া উচিৎ তাইনা? কেন কেন উচিৎ? দেখেন ভাইজান। দোকানদার ও মানুষ, কাস্টমার ও মানুষ। দুজনেই ভাত খাইয়া বাচি।দুজনেরই সংসার,বউ বাচ্চা থাকে।তাইলে শুধুমাত্র যিনি কিনবেন তিনিই কেন ছাড় পাবেন? যিনি বেচবেন তার ও তো ছাড় পাওয়া উচিৎ। বুঝাইতে পারিয়াছি?  হ্যা হ্যা বুঝেছি। এইজন্যই আপনার এত সুনাম।তাইতো বলি সবাই কবিরাজ মিশুপ্পু মিশুপ্পু কেন করে? আপনার চোখে সবাই সমান।আপনার এই সাম্যবাদ আমার খুব ভালো লেগেছে গুরুজী।এই নেন ২৫ টাকা।

কথাটা বলেই লোকটা ২৫ টাকা এগিয়ে দিলো।তারপর হাসি মুখে মলম নিয়ে উঠে গেলো। যা ভালো লাগছে নাহ উফ! প্রথম কাস্টমারের কাছেই ৫ টাকা ছাড়! ব্যবসা বোধহয় বেশ জমবে! আসেন ভাই আসেন।দা নিউ পাগলী মলম।লাগাবেন তো আরাম পাবেন। এবার আরেকজন এগিয়ে আসলো। আমাকে সালাম জানিয়ে বলল,গুরুজী আমার কঠিন সমস্যা। কি সমস্যা বাছাধন? কষাগু অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য। এর জন্য কি মলমে কাজ হবে?  না বাছাধন।তুই এক কাজ করিস,আমার আস্তানায় আজ বিকেলে একবার আসিস।আমি এমন ওষুধ দিবো, এক ডোজেই কোষ্ঠতারল্য হইয়া যাইবে। থ্যাংকস গুরুজী। আসেন ভাই আসেন দা নিউ ছাগলী মলম।লাগাবেন তো আরাম পাবেন। এক জন বলে উঠল, ছাগলী মলম? আপনি না পত্থমে বললেন পাগলী মলম? উচ্চারণ মিসটেক ভাইজান। মলম নেন না একটা।

লোকটা এগিয়ে এসে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বলল,আমার বউটার খুব দাতে ব্যথা।দুদিন যাবত ও হাড্ডি টাড্ডি খাইতে পারেনা।ওর জন্য একটা মলম নেই। নেন ভাইজান। পাগলী মলম সব ধরণের ব্যথা উপশমকারী। রাত্রে ঘুমানোর সময় দাতে লাগিয়ে ঘুমাইতে বলবেন। আচ্ছা।দাম কত? উনি তো ২৫ টাকা দিছিলো।আপনি না হয় আর ৫ টাকা ছাড় দিয়া ৩০ টাকা দেন। আচ্ছা আচ্ছা।এই নেন ৩০ টাকা। লোকটা ৩ টা দশ টাকার নোট এগিয়ে দিলো।আমি টাকা হাতে নিয়ে বললাম, ভাই এইখানে তো ৯ টাকা। কেন? আমিতো ৩ টা দশ টাকা দিছি। ভাইজান তিন তিরিক্কে কত হয়? নয়। এইখানে ৩ টা নোট।তারমানে তিন তিরিক্কে নয়। তা ক্যাম্নে হয়? তিন টা দশ টাকার নোট।তারমানে তিন দশে তিরিশ। ভাইজান একের পাশে শূন্যের দাম আছে? না।

তাইলে? তিন গুণ এক সমান তিন।আর আপনি দিছেন তিন টা নোট।অর্থাৎ তিন তিরিক্কে নয়।আর দশ টা টেকা দেন ভাই। আচ্ছা দিচ্ছি। লোকটা আরো একটা ১০ টাকার নোট বের করে দিয়ে মলম নিয়ে মাথা দুলাতে যাচ্ছে আর হিসেব করছে,তিন দশে তিরিশ হওয়ার কথা।তিন তিরিক্কে নয় তাও তো ঠিক আছে।কিছুই বুঝলাম না।এই মিশুপ্পু কবিরাজের কাছে আসলেই মগজ কেমন ধোলাই হয়ে যায় বুঝিনা।কেমন যেন ঘোরের মধ্যে নিয়ে যায়! আজব! আজব! আমি ফিচকে হাসি দিয়ে আবারো ডায়ালগ ছাড়লাম, চুলে ব্যথা,মাজায় ব্যথা,খাজায় ব্যথা,গিড়ায় ব্যথা,শিরায় ব্যথা,পায়ে ব্যথা,টায়ে ব্যথা,হাটুতে ব্যথা,গাটুতে ব্যথা,সব রকমের ব্যথার জন্য কার্যকরী মহৌষধ দা নিউ ছাগলী মলম।(ধেৎ তেরিকি খালি ছাগলী মুখে আসে ক্যান?) দা নিউ পাগলি মলম।

এরপর একজন স্মার্ট ভাই এগিয়ে আসলেন।সামনে বসতে বসতে বললেন, আমি একজন কেমিস্ট। কি কি কেমিক্যাল উপাদান আছে আপনার মলমে শুনি? খাইছে রে! এইবার তো গেছিগা।তয় কবিরাজ মিশুপ্পু রে টেক্কা দেয়া এত সোজা না।কেমিস্ট রে এইবার ঘোল খাওয়াবো।আদা দিয়ে দাদা ঘোল! হেসে বললাম, স্যার আমার মলম হচ্ছে আপনার প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী মলম। প্রাকৃতিক উপাদান? কি কি উপাদান বলেন দেখি। বাতাসের ফ্লেভার,পাদের গুড়া,আর চ্যাংটা মুরগির গু। কেমিস্ট ভ্রু কুঁচকে বললেন, বুঝলাম না।একটু ব্যাখ্যা করা যায় কি? অবশ্যই স্যার।বাতাসের ফ্লেভার নিছি।এই ধরেন স্ট্রবেরি ফ্লেভার,ভ্যানিলা ফ্লেভারের মত বাতাসের এক ধরণের ফ্লেভার থাকে।সেই ফ্লেভার টা ক্যাচ করে মলম উৎপাদন করেছি। বাতাসের ফ্লেভার থাকে! আজব তোহ! কিভাবে ক্যাচ করা যায় এই ফ্লেভার?

এইটা তো স্যার বুঝবেন না। কেন? বাতাস অদর্শনীয়।তেমনি এর ফ্লেভার টাও ক্যাচ করা অনেক মুশকিলের ব্যাপার। তাহলে আপনি ক্যাচ করলেন কিভাবে? হুহু এইটাইতো স্যার কবিরাজ মিশুপ্পুর কেরামতি। ওহ আচ্ছা আচ্ছা।দ্বিতীয় উপাদান টা কি ছিল যেন? পাদের গুড়া। হোয়াট! এটা কিভাবে সম্ভব? স্যার পাদ অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদান। কাজেই এটাকে আমরা ফেলে দিতে পারিনা।পাদ টাকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে এর গুড়াটাকে আমরা মলম বানানোর কাজে ব্যবহার করেছি। গুড! এই প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি টা জেনে নিতে হবে দেখছি। সরি স্যার।এইগুলা তো কাউকে বলার উপায় নাই। কেন? এইতো স্যার কবিরাজের কবিরাজি ব্যাপার স্যাপার।প্রকাশ করলে আর ওষুধে কাজ হবেনা। ওহ আচ্ছা তাহলে ঠিকাছে।লাস্ট উপাদান টা কি ছিল যেন? চ্যাংটা মুরগির গু স্যার। এটা কি জিনিস?

স্যার ওই যে মুরগি থাকেনা? সেই মুরগির চ্যাংটা চ্যাংটা গু নিয়েছি।সব ধরণের গু তে কাজ হবেনা।শুধুমাত্র চ্যাংটা গু তেই কাজ হবে। ছিঃ, আপ্নারা কিভাবে গু কে কাজে লাগাচ্ছেন? এটা উচিৎ না। স্যার আপনি কি ভাবছেন দেশি মুরগি বা ব্রয়লার মুরগি? এটা তো ভুল ধারণা স্যার। তাহলে? স্যার এক ধরণের ওষধি বৃক্ষের নাম মুরগিক্সদ্বকংবংতেগুল্বামং। অনেক কঠিন নাম হওয়ার কারণে সংক্ষিপ্তাকারে এই বৃক্ষকে আমি মুরগি নামে ডাকি। আর গু টা? স্যার এই বৃক্ষের গা ফেটে ফেটে এক ধরণের আঠালো পদার্থ বের হয়।কিছু কিছু পদার্থ খুব ঢেলঢেলে ধরণের তরল।আর কিছু কিছু ভালো মানের আঠালো যেটাকে গ্রাম্য ভাষায় চ্যাংটা বলা হয়।এই হচ্ছে স্যার ব্যাখ্যা।

ব্যাখ্যা শুনে কেমিস্ট বাবাজির মুখে হাসি ফুটে উঠল। বিজয়ের হাসি যেন মলম টা উনিই আবিষ্কার করেছেন! হেসে বললেন, বাহ বাহ! খুব ভালো। এই না হলে কবিরাজ? তা আপনার আস্তানা কোথায়? আমার স্ত্রী’র মাথায় সমস্যা।ওকে নিয়ে একটু আসবো। স্যার ফেসবুকে Mishu Moni নামে সার্চ দিবেন।নিক নেমে লেখা – চৈতন বিবি।এইটাই স্যার আমার আস্তানা। আচ্ছা আচ্ছা থ্যাঙ্ক কিউ থ্যাঙ্ক কিউ।আজ তবে আসি। গেলেই তো বাচি। সরি কিছু বললেন? বললাম যে একটা মলম নিয়ে গেলে আমরা বাচি আরকি।নতুন ব্যবসা তো স্যার। আচ্ছা একটা দাও দেখি।

এরপর ওনাকে একটা মলম দিলাম। স্মার্ট ভাই বিধায় টাকা নিয়ে ঝামেলা করলাম না।এমনি তেই আদা দিয়ে দাদা ঘোল খাইয়েছি! তবে উনি নিজেই একটা মলম নিয়ে ১০০ টাকা দিলেন! স্মার্ট ভাইয়ের দেখাদেখি অনেকেই মলম কিনতে উদ্বুদ্ধ হল।সবমিলিয়ে আটশ আশি টাকার মলম বিক্রি হলো আজ তবে উঠি। প্রথম দিনেই অনেক বিক্রি হয়েছে।এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা জমে ক্ষির হয়ে যাবে।আজ আর মলম বেচবো না।আবার কাল আসবো। এখন বরং ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দেই- Feeling ঝিংকু!

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত