জলিল সাহেবের স্ত্রী প্রায় তিনমাস যাবত অসুস্থ । অনেক ডাক্তার দেখালেন কাজ হয়নি । এমনকি হুজুর দরবেশ ওঝা কিছুই বাদ দেন নি । কিন্তু ওনার স্ত্রীর অবস্থা দিনকে দিন শুধু খারাপই হচ্ছে । শেষ পর্যন্ত জলিল সাহেব তাঁর এক বন্ধুর পরামর্শে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গেলেন ।
ডাক্তার সাহেব আমার স্ত্রী কে কেমন দেখলেন ? ও কি কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না ?
ভেঙে পড়বেন না জলিল সাহেব । আপনি ই যদি ভেঙে পড়েন তাহলে ওনাকে কে দেখবে ?
আমার মনেহয় উনি প্রচন্ড মানষিক আঘাত পেয়েছেন এবং সম্ভবত উনি কিছু একটা কে প্রচন্ড ভয় পাচ্ছেন । যতক্ষণ না ওনার মন থেকে ভয় দূর করা যাবে কতদিন পর্যন্ত ওনাকে সুস্থ করা সম্ভব হবে না ।
তবে এই ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী সাহায্যে করতে পারেন আপনি ।
আমি !!!!
হ্যাঁ
উনি অসুস্থ হওয়ার আগে নিশ্চয়ই এমন কিছু আপনাকে বলতেন যা কিছুটা অবাস্তব হয়তো আপনি সেগুলি গুরুত্ব দেন নি ,অথবা ওনার অস্বাভাবিক কোন আচরন ।
এই সব কেসে রোগীর পিছনের ইতিহাস না জানলে চিকিৎসা করা খুবই কঠিন ।
আপনি এক সপ্তাহ পর আসুন আর এর মাঝে অবশ্যই আপনার স্ত্রী অসুস্থ হওয়ার আগে কি কি করতেন সেগুলি লিখে নিয়ে আসবেন ।
এক সপ্তাহ পর …
আপনি এখানে লিখেছেন আপনাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা হঠাৎ ই একেবারেই হারিয়ে যার কোন হদিস পাওয়া যায় নি । এর দুই দিন পরই উনি মানুষিক ভারসম্য হারান ।
আচ্ছা মেয়েটার বয়স কেমন হবে ?
এই ধরুন বার তের হতে পারে ।
মেয়েটি হারানোর আগে কি আপনার স্ত্রী আপনাকে কিছু বলেছিলেন ??
প্লিজ একটু মনে করার চেষ্টা করুন ।
হ্যাঁ মনে পড়েছে । হঠাৎ দুপুর বেলা ও এসে বলল এই তারাতারি ব্যালকনি তে এস । আমি যাওয়ার পর আমাদের পাশের ফ্লাটের দিকে দেখিয়ে বলল , ওখানে একটা লোক দাঁড়িয়ে ছিল তাঁর মুখের দুই পাশ থেকে রক্ত ঝরছিল ।
আমি গুরুত্ব দিই নি । ভেবেছি হয়তো দেখার ভুল ।
আবার একদিন বলেছিলো চলো আমরা এই বাসাটা ছেড়েদিই । আমার এখানে থাকতে খুব ভয় করে । এরপর এক সপ্তাহ পর ওর প্রচন্ড জ্বর । জ্বরের মধ্যে প্রলাপ বকছে । সব কথা বোঝা যাচ্ছিলো না । শুধু এতটুকু বুঝেছিলাম ।
ও আমাকেও মেরে ফেলবে ঐ যে একটা কাটা পা ঝুলিয়ে রেখেছে , পা থেকে টুপ টুপ করে রক্ত পড়ছে ।
আমি গুরুত্ব দিই নি । ভেবেছি জ্বরের মধ্যে হয়ত কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছে ।
ভুলটা এখানেই হয়েছে জলিল সাহেব । আচ্ছা উনি যে ফ্লাট টা প্রথম দিন দেখিয়েছিলেন ওখানে আসলে কে থাকেন?
ঠিক বলতে পারব না । ঐ ফ্লাটে একজন ভদ্রলোক থাকেন শুনেছি । কিন্তু ওনাকে খুব কম লোকই দেখেছে । কি একটা এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যাবসা করেন । মাঝে মাঝে রাতে বড় বড় বাক্স গাড়িতে আনতেন আবার নিয়ে যেতেন ।
কেসটা আস্তে আস্তে জটিল হচ্ছে । এরমধ্যে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি । ঐ লোকটা সম্পর্কে আরও জানতে হবে । চলুন আমি আজ আপনাদের বাসায় যাব ।
২ দিন পর সকালে …
জলিল সাহেব গুড মর্নিং ।
আরে ডাক্তার সাহেব আপনি ২দিন কোথায় ছিলেন ?
জলিল সাহেব আপনার স্ত্রী সঠিক কথাই বলেছিলেন ।
মানে ,বুঝলাম না
ঐ লোকটি মানে আপনাদের পাশের ফ্লাটের রহস্যময় লোকটি একজন বিকৃতমনা সাইকো , নারী খাদক ও বলতে পারেন ।
নরখাদক শুনেছি ,নারীখাদক আবার কি ?
এরা আসলে শারীরিক ভাবে যৌন অক্ষম । নিজের অক্ষমতা এবং নারী দের উপর পূর্বের কোন আক্রোশ থেকে । এরা ভয়ংকর বিকৃতমনা খুনী তে পরিণত হয় । এরা মৃত নারীর শরীর সম্ভোগ করে তারপর । শরীর টাকে কেটে টুকরো টুকরো করে খেয়ে ফেলে ।
আপনি হয়তো জানেন না এই লোকটা আপনাদের এলাকায় আসার পর আপনাদের স্থানীয় কবরস্থান থেকে বেশ কয়েকটি অল্প বয়সী মেয়ের ডেড বডি রাতারাতি ভ্যানিস হয়ে যায় । আর আপনি বলেছিলেন না ঐ লোকটা রাতে বড় বড় বাক্স আনা নেয়া করে । ওগুলো আসলে ডেডবডির কফিন !!!
আমার মনে হয় কি জানেন আপনার বাসার মেয়েটাকে ঐ ব্যক্তি ই হত্যা করেছে । কারণ ওর বেড রুমে খাটের নিচে একটা দশ বার বছরের মেয়ের জামাকাপড় পাওয়া গেছে ।
জামাকাপড়ে সিমেনের দাগ পাওয়া গেছে । আমার ধারণা ঐ মেয়েটিকে সে হত্যা করার পর রেপ করেছিলো ।
কাপড় গুলো এখন কোথায় আছে ?
কাপড় এবং লোকটা দুজনেই বর্তমানে থানায় আছে ।
থানায় ! আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনি ডাক্তার নাকি গোয়েন্দা ?
ঠিকই ধরেছেন আমি একজন পেশাদার গোয়েন্দা । এই কেসটার জন্য আপনাদের সহযোগীতা অপরিহার্য ছিল । আপনার স্ত্রীর সাথে আমি একটু কথা বলতে চাই ।
এরপর জামিল সাহেবের স্ত্রী আস্তেআস্তে সুস্থ হয়ে যান ।
জামিল সাহেবের কাজের মেয়েটি কে আসলেই ঐ নরখাদক হত্যা করেছিলো । মেয়েটিকে হত্যা করার সময় জামিল সাহেবের স্ত্রী দেখে ফেলেন ।
আপনাদের আশেপাশেই হয়ত এমন অনেক সাইকো রা ঘুরে বেড়াচ্ছে । সময় সুযোগ বুঝে বাড়িয়ে দেবে তাঁর রক্ত পিপাসু জীব্বা ।
****************************************(সমাপ্ত)**************************************