: কীরে কী খবর তোর?
:এই তো ভালো,তোর কী খবর?
:আছি মোটামুটি,কাল রাতে তুই আমার বাসায় থাকতে পারবি?
:কেনো,কোন দরকার?
:হ্যাঁ,কাল সুপার মুন,তাই তোকে নিয়ে চাঁদ দেখবো। আর কাউকে বলবিনা কিন্ত,যে তুই কাল রাতে আমার বাসায় থাকবি..!
:কেনো ?যা ঠিক আছে কাউকে বলবো না,তুই কাল রাত দশটায় আমার বাসার নীচে এসে দাড়াস, ঠিক আছে ?
:হ্যাঁ, ঠিক আছে |
ফোনটা কেটে টেবিলের এক পাশে রেখে দিলো কেপি, এটা ওর আসল নাম না,ওর আসল নাম হলো, কিশোর পাশা (KP Imon) সংক্ষেপে কেপি (kp), ও এইবার রুয়েটে পড়ে, সামান্য লেখালেখির শখ আছে ওর,তাই নানানকিছু করতে হয় ওকে। এইতো কিছুদিন ও নেকড়ে মানব হওয়ার চেষ্টা করছে |
11/08/2013’রাত প্রায় আটটা | ডিস্কোভারী চ্যানেলে নেকড়েদের নিয়ে একটা ডকুমেন্টরী দেখাচ্ছে, নেকড়েরা কিভাবে জীবনযাপন করে সে সম্পর্কে দেখানো হচ্ছে | নেকড়ে মানব সম্পর্কেও মাঝে মাঝে দেখানো হচ্ছে | নেকড়ে মানব
হলো মানুষরুপী নেকড়ে |
মানুষ ইচ্ছা করলে নেকড়েমানব হতে পারে, কিন্ত সেটা অনেক কষ্টসাধ্য ব্যাপার ডকুমেন্টরীটা দেখার পর থেকে কেপি নেকড়েমানব হতে উঠেপড়ে লেগেছে । নেকড়েমানব হতে হলে একজন মানুষকে পাঁচটা স্তর অতিক্রম করতে হয় ।
প্রথম স্তরে পূর্ণিমার সময় চাঁদের দিকে মুখ করে থাকতে হয় প্রায় পাঁচ’ঘন্টা | তারপর সে দিত্বীয় স্তরে পৌছায় | দ্বিতীয় স্তরে তাকে একটি পশু বলি দিতে হয় এবং তার রক্ত পান
করতে হয় | তৃতীয় স্তরে তাকে প্রতিদিন একটা করে মানুষের রক্ত পান করতে হয়, এভাবে প্রায় এক মাস করার পর সে চতুর্থ স্তরে যায় | এ স্তরটা খুব কঠিন, এস্তরে তাকে নেকড়েদের সাথে তার সখ্যতা গড়তে হয়, এবং প্রতিদিন প্রায় দুই’লিটার রক্ত পান করতে হয় | কেপি এতদিন চতুর্থ স্তরে ছিলো | আর পঞ্চম স্তরে পৌছাতে হলে তাকে একটা নরবলি দিতে হবে, তাও আবার সুপার মুন এর সময় | তাই কেপি তার বন্ধু মাসুদ’কে সুপার মুন’এর সময় তার বাসায় থাকতে বলেছে |
রাত এগারোটা বেজে পঞ্চাশ, মাসুদ’কে কেপি খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ দিয়েছে | আর একটু পরেই তাকে বলি দিতে হবে, তাহলেই সে একজন পরিপূর্ণ নেকড়েমানব হতে পারবে | বন্ধুর জন্য খুব খারাপ লাগছে কেপি’র কিন্ত কী করার আছে ! পরিপূর্ণ নেকড়েমানব হতে হলে’তো একজন মানব বলি দিতেই হবে | আর মাসুদ হলো কেপি’দের ব্যাচের সবচেয়ে বোকা ছাত্র, তাই কেপি ওকেই বেছে নিয়েছে| এখন ওর শিকার ওর হাতের মুঠোয়, শুধু একটুখানি অপেক্ষা|
তারপরেই ও হয়ে যাবে একজন নেকড়েরুপী মানুষ ! আর তখন ও যখন ইচ্ছা নিজের রুপ বদল করতে পারবে এবং অদৃশ্য হতে পারবে | শুধু অপেক্ষা কিছু সময়ের..|
রাত ১২টা। বলিদান এর এটাই আসল সময়। সুপার মুন এখন ঠিক ওর মাথার উপর। আগে থেকেই সব ব্যাবস্থা করে রেখেছিলো ও। তাই রুমে গিয়ে মাসুদকে নিয়ে আসলো। কিন্তু ওর বার বার মনে হতে থাকে যে কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। এরপর ও মাসুদকে দুটো চেয়ারের উপর শুইয়ে দেয়। হঠাত ওর মনে পরে যে ওকে এই ধাপ অতিক্রম করতে হলে সারা শরীরে চাদের আলো লাগাতে হবে। আর তাই জামা কাপড় কুলে ফেলে ছাদের এক কোনায় ছুড়ে দেয় ও। এরপর নেকড়ের মত উঠে দাঁড়ায়। এইভাবে সাত মিনিট থাকতে হবে ওকে। কিন্তু ওর মনে হতে লাগলো যে বেশি চাদের আলো লাগলে ও আরও বেশি শক্তিশালি হয়ে যাবে। তাই সে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু হঠাত কচ জাতীয় একটা শব্দে ওর মোহ কেটে যায়। বুঝতে পারে, কেউ একজন ওর কন্ঠনালী কেটে দিয়েছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় কেপির। ধীরে ধীরে এক পাশে পরে যায় কেপি। দেখতে পায়, ওর আততায়ী আর কেউ নয়, যাকে সে বলি দিতে নিয়ে এসেছিলো, সেই মাসুদ। এখন সে কেপির দিকে তাকিয়ে হাসছে।
-‘তুই আর ১ মিনিট বাঁচবি। অতএব, মরার আগে সব শুনে যা। তুই কি ভাবিস, উলফম্যান হওয়ার চেষ্টা শুধু তুইই করছিলি? আমি এই চেষ্টা করছি আজকে সাত বছর ধরে। এটা আমার লাস্ট ষ্টেজ। তকে বলি দিলে আমি ওয়েরউলফ হবো না। ইনিভিসিবল উলফম্যান হয়ে যাবো। যাকে বাংলায় বলে, অদৃশ্য নেকড়ে মানব।
-‘শোন, তোকে সব খুলে বলি। তোকে বলিদান করার প্ল্যান আমার আরও দুই বছর আগে থেকেই ছিলো। কারণ তোর কোন পিছুটান নেই। তুই সম্পূর্ণ একা। বন্ধুরাও তোর খুব একটা খোঁজ খবর নেয় না। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাই আমি। আমিই সেদিন তোর বই এর ভেতরে ঐ উলফ ম্যান হওয়ার বইটা রেখে দিয়েছিলাম, যেটা আমি পেয়েছিলাম আরও সাত বছর আগে। বইটা তুই অনেক কৌতূহল নিয়েই পড়লি। তোর মত আমারও কোন পিছুটান নেই। আমিও সম্পূর্ণ একা, স্বাধীন। তাই আমি ইনভিসিবল উলফ ম্যান হওয়ার চেষ্টা করি। তুই আজকে যখন আমার খাবারে বিষ মেশালি তখনই আমি ব্যাপারটা টের পেয়ে যাই। আর তাই তুই যখন বাথরুমে গেলি তখন আমি বিষ মেশানো খাবারটা ফেলে দিয়ে তার জায়গায় ভালো খাবার রেখে দিই। মজার ব্যাপার হচ্ছে কি জানিস? তুই আজ পর্যন্ত যত জনকে শিকার করেছিস, তাদের আয়ুও তোর সাথে যোগ হয়েছে। আর এখন তোকে বলি দেয়ার ফলে তোর সমস্ত আয়ু আমার সাথে যোগ হবে।’
এইটুকু বলে মাসুদ কেপির দিকে তাকায়। নাহ! বেচারা অনেক আগেই মারা গেছে। কিন্তু তারপরও এই কথাগুলো বলায় নিজেকে একটু হাল্কা মনে হচ্ছে।
হঠাত কচ করে আবার একটা শব্দ হলো। শব্দটা ওর চেনা। একটু আগে কেপিকে মারার সময়ও এই শব্দটা হয়েছিলো। সে বুঝতে পারলো যে ওর নিজের গলাই দুই ভাগ হয়ে গেছে। মরার আগে ও আরিয়ান এর গলা শুনতে পায়,
-‘দোস্ত রাগ করিস না। তোর সমস্ত চাল আমি তোরই উপর আজ থেকে আরও ১০ বছর আগেই প্রয়োগ করে ফেলেছি। বিদায়…
মাসুদ পড়ে যাওয়ার সময় আরিয়ানকে আর দেখতে পেলো না। ওর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আরিয়ানেরই প্ল্যান ছিলো এইটা। ওকে এখন আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না, কারণ……
আরিয়ান এখন ইনভিসিবল উলফ ম্যান।