পিনবল

পিনবল

রাফিয়ান, সুরিমান আর্থ সেন্টারের এক সামান্য ডাটা এনালিস্ট।বেতন যতসামান্য যা পায় তাতে কোনমতে একা থাকা হয়ে যায়।প্রেমিকা লানাকে নিয়ে স্বপ্ন সেও দেখে।আশা পরবর্তী পদোন্নতির পর বিয়েটা করেই ফেলবে।বর্তমান কাজ আর্থ রিডিং।অর্থাৎ পৃথিবীর সার্বিক পরিস্থিতির বিশ্লেষন।রাফিয়ান বুঝে না এই কাজটা সুরিমান (৩য় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশুদ্ধ অঞ্চল নিয়ে গড়া একটি রাষ্ট্র) এর মত ছোট্ট দেশের করার কি দরকার? যত্তসব, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেখানে পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ কর্পুরের মত উড়ে গেছে, সেখানে এইসব করে সরকার কেন যে টাকা নস্ট করার কোনো মানেই হয়না।রাফিয়ানের কাজ বর্তমানে পৃথিবীর ঘুর্ননের মাত্রা পরিমাপ করা।আর তা লগবুকে লিখে রাখা।তাই করছিল সে।কিন্তু করতে গিয়ে বাধল বিপত্তি।ব্যাপারটা যখন ধরতে পারলো তখন আর কিচ্ছু করার নেই বললেও চলে।কি হয়েছিল আসলে?

সকাল ১০.৩০
দিনের প্রথম রিডিং: স্বাভাবিক।

মনে মনে ভাবছিল রাফিয়ান আজ সন্ধায় দেখা করবে সে লানার সাথে।অনেকদিন ওর হাতটাও ধরা হয়নি। আজ মন খুলে আলো আধারে ঘুরবে ওরা। শহরের প্রান্তে যে পার্কটা আছে তাতে চুপচাপ বসে থাকবে।আর লানা, লানা হাসবে মিস্টি করে ও চেয়ে শুধুই দেখবে।

১২:৩০
দ্বিতীয় রিডিং: স্বাভাবিকের চেয়ে এক ঘন্টা কম!
নিজের ভাবনায় এতটাই ডুবে গেল খেয়াল ই করল না।করলেও হয়ত কিছুই করার থাকত না।ফোন করল রাফিয়ান লানাকে।

‘হ্যালো লানা?’

‘হুম কেমন আছো?’

‘ভালো।শুনছ?অনেকদিন বেরুই না আজ আসবে একটু?’

‘আজ? একটু কাজ ছিল,ঠিক আছে সন্ধ্যা ৬ টায় পার্কে থাকবো।দেরি করো না কিন্তু।’

‘ঠিক আছে।বাই।’
‘বাই।সাবধানে এসো।’

১:০০
তৃতীয় রিডিং: স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ঘন্টা বেশি।

কপালটা কুচকালো রাফিয়ান।পরমুহুর্তে উড়িয়ে দিলো।হয়ত হিসাবে গরমিল।এরকম হবার কোনো কারন নেই।কখনও হয় না।কিন্তু মনে খুতখুতানিটা রয়েই গেল।

১:৩০
চতুর্থ রিডিং: স্বাভাবিকের চেয়ে ১২ ঘন্টা বেশি।
কেপে উঠলো রাফিয়ান।ভয়ে কুকরে গেলো।বুঝলো কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।অতিরিক্ত গতির কারনে মধ্যাকর্ষন বেড়ে গেছে।

২:০০ পঞ্চম রিডিং: স্বাভাবিকের চেয়ে ১২ ঘন্টা বেশি।
যাক আর বারছে না অন্তত।অবাক হয়ে গেছে সবাই।রাফিয়ান বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে।চিন্তার ঝড় বইছে মনে।এরই মধ্যে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।

৩.০০ শেষ রিডিং: স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ ঘন্টা কম।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে।দিন রাত সব উলট পালট হয়ে গেছে।রাফিয়ান বেরিয়ে গেছে লানার উদ্দেশ্যে আরো আধ ঘন্টা আগেই।ব্যপারটা ধরতে পেরে আর দেরি করে নি।পৃথিবীর যে সময় শেষ। তাই লানাকে ফোন করে দিয়েছে এক্ষুনি বেরিয়ে আসতে অন্তত শেষ বারের মত হাতটি ধরতে।

ভাবতে ভাবতে হঠাতই রাফিয়ান ধরতে পারে ব্যাপারটা।ছোট বেলায় লাটিম ঘুরাতে গিয়ে কিংবা ফুটবল খেলতে গিয়ে খেয়াল করত লাটিম ঘুরতে ঘুরতে শেষ মুহুরতে গিয়ে গতি বেড়ে যায়।আর তার কিছুক্ষন পরেই পড়ে যায়। আর ফুটবল আকাশ থেকে পড়ার সময় দ্রুত পড়ে।পৃথিবীর ও ঠিক তাই ঘটছে।আগামী দুই ঘন্টায় শুক্রের উপর আছড়ে পড়বে পৃথিবী।হিসাব করে দেখেছে ও। কারও কিছু করার নেই।ওইতো লানা দাড়িয়ে কাঁদছে।কিচ্ছু বুজতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে হাত ধরল সে লানার।গভীর মমতায় মুছে দিচ্ছিল চোখের পানি।ঠিক তখনি ঘটলো ভয়ংকর ঘটনাটা।প্রচন্ড এক ধাক্কায় মুহুর্তে পৃথিবীর শত বছরের সভ্যতা মুছে গেলো নিমিষে।সকল জীবিত প্রানী কর্পুরের মত উড়ে গেলো।প্রানের স্পন্দনই থাকলোনা অল্প কিছু গাছ ছাড়া।হয়ত টিকে থাকলো পরবর্তী বিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে।এক কথায় পৃথিবী এক লাফে তার প্রথম জীবনে ফিরে গেল।প্রচন্ড ধাক্কা কেন হল, এটাতো হবার কথা না।ও সময় মিলিয়েছিল এখুনিতো ধংস হবার কথা নয়।লানার সাথে হাত ধরে হাটাটুকু হলনা।এসব ভাবার আগেই রাফিয়ান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল।

খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আক্রোনা।আজ সে সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে।এই নিয়ে ৫৬৬ বার সে স্ক্রিনের বলটিকে পড়ে যেতে দেয়নি।বারবারই সে বল টিকে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে নির্ধারিত বৃত্তে।তার ইচ্ছে আজই সে ৬০০ করে ফেলবে।সে জানলোই না কত স্বপ্ন সে মিশিয়ে দিয়েছে এক ধাক্কায়।

তার ধাক্কায় পৃথিবী লাভ করেছে ৫৬৬ টি বুদ্ধিমান প্রানীর বিকাশ ও ধংস।

………………………………………………………………..সমাপ্ত……………………………………………………………

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত