দ্য মায়ান মিরাক্যাল

দ্য মায়ান মিরাক্যাল

এটা হতে পারে একটা আত্নভ্রমণকাহিনী,হতে পারে একটা প্রবন্ধ।কিন্তু যে কাহিনী বাস্তবতার বিশ্বাসের রূপ পায়না তা গল্প হিসেবেই স্থান পায়।তাই এটি একটি গল্প।গল্পটিকে আমি বিশ্বাস করতে বলবনা আবার তাও বলবনা যে আপনি এটি বিশ্বাস করবেন না তা নয়।বিশ্বাস শুধুই মনের একটি পর্যায়।

পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ জাতি আজ পর্যন্ত এসেছে।কেউ ছিল ক্ষণস্থায়ী আবার কেউ এখনও টিকে আছে।জাতিতত্ত্বের পরিসীমা নিয়ে আমার আছে বিস্তর আগ্রহ।প্রত্যেকেই এক একটি জাতির অন্তর্ভূক্ত।যেমন আমরা বাঙালি।এরকম একটি রহস্যময় জাতি ছিল পৃথিবীতে,নাম মায়া।তাঁরা ছিল প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৬০০-২৫০ অব্দ পর্যন্ত,এখনও কেউ কেউ আছে হয়ত।লক্ষ বছর আগেই তাঁরা হয়ে উঠেছিল জ্ঞান বিজ্ঞান আর দক্ষতায় সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।তাঁদের সব কীর্তি ও অবদান ছিল নিঁখুত ও সৌন্দর্যমন্ডিত।মূলত মায়ানদের বাসস্থান ছিল মেক্সিকো তথা উত্তর আমেরিকাতে।মায়ান সভ্যতাটা হঠাত্ করেই ধ্বংস হয়ে যায়,কেউ এর কোনো কারণ খুঁজে বের করতে পারেননি।

তখন নবম শ্রেণীতে পড়তাম।খুব বেশি ভ্রমণপ্রিয় ছিলাম।তাছাড়া এতোসব রহস্যময় বস্তু চোখে না দেখলে জীবনটা বৃথা হবে ভেবে বাবাকে রাজি করিয়ে ফেললাম মেক্সিকোতে সেই মায়ান সভ্যতাটির মাইফলকের বর্তমান চিত্র দেখতে নিয়ে যাওয়াতে।আমি অবশ্য একা ছিলাম না,ছিল আমার ঘনিষ্ঠ সহচর শিফু ও তনয়।বলে রাখা ভালো যে সবাই ছিল ভ্রমণ পাগলা।তনয় খুব সাহসী আর যুক্তিবাদী।শিফু আর আমি সেই তুলনায় মহা ভীতু।যাহোক পৌছাতে প্রায় তিন দিন লাগল।বেশি থাকা যাবেনা,আব্বুর ছুটি কম।আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল মায়াদের তৈরী লক্ষ লক্ষ বছরের পুরোনো পিরামিডটা দেখার।এই পিরামিডকে বলা হয় কুকুল্কানের পিরামিড।ঠিক ৪ দিন পর পৌছালাম বিখ্যাত এবং গূঢ়ময় শহর চিচেন ইটজাতে।এটাই ছিল মায়ানদের প্রধান শহর।

“এই রে,আমি এখনই কেমন যেন রহস্যময়তার আবেশে জড়িয়ে পড়ছি!”,বলল শিফু।আমি হাসলাম।মনে মনে ভাবলাম হয়ত এখনও অনেক কিছু বাকি।এতো সুন্দর ছিল জায়গাটা যে বলার মতো না.ট্যুরিস্ট এবং প্রকৃতির প্রাগৈতিহাসিক ছন্দপতধে মুখোর ছিল পরিবেশ।ইস্ যদি পৃথিবীটাও এমন হতো!নানা ধরনের মূর্তি,ছোটো বড় মন্দির,মায়ানদের ধ্বংস হওয়া বাসস্থানগুলো দেখলে মনে যেন আধুনিক রীতিতে তৈরী হয়েছিল।অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে পৌছালাম দেবতা কুকুল্কানের সেই বিখ্যাত পিরামিডের সামনে।কী অদ্ভূত সুন্দর!বাবা জানতেন আমাদের উদ্দেশ্যের কথা তাই এক ঘন্টা সময় দিলেন ঘুরে দেখার জন্য,সাথে সতর্কও করে দিলেন।সেই উত্তেজনাটা বলার মতো না।তখনো বুঝিনি পিরামিডটা আমাদের ধ্যাণ ধারণার পুনঃবিবর্তন ঘটাবে।

তিনজনই গিয়ে উঠতে লাগলাম সিঁড়ি বেয়ে।বিশাল পিরামিড।৩৬৫ টি ধাপ।প্রত্যেকটা ধাপকে মায়ানরা একেকটি দিন হিসেবে বিবেচনা করত।ভূমি থেকে এর উচ্চতা ছিল প্রায় ৪০০ ফুট।একটু ক্লান্ত লাগছিল বটে তবে তা প্রভাব ফেলেনি।ভেতরে প্রবেশ করতেই এক আশ্চর্য রকমের আভা অনুভূত হলো।সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই ট্যুরিস্টও কমে গিয়েছে।এটা একটা উপাসনালয় ছিল।ভেতরে অসংখ্য কক্ষ।সবগুলোতেই হরেক রকমের মূর্তি আর দেয়ালে বা মেঝেতে খোদাইকৃত আলপনা ছিল।এগুলো এতো সুন্দর যে সন্দেহ হয় মানুষ এসব করেছে কিনা।নীরবতা ভেঙ্গে তনয় বলল,”আমার মনে হচ্ছে এই আলপনাগুলো একটা কোর্ডিনেট নির্দেশ করছে।তুই কী বলিস?”,সে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করল।

আমিঃ”হতে পারে।কিন্তু এখন পর্যন্ত তো কেউ এসব নিয়ে কিছু বলেনি।”

তনয়ঃ”দেখ এগুলো একটা নির্দিষ্ট দিকে পয়েন্ট করছে।”

সত্যিই আলপনাগুলো একটা বড় কক্ষের দিকে নির্দেশ করছে।তনয় আমাদের যেতে বলল।শিফু কাতর স্বরে বলে উঠল,’তোরা যা আমার কেমন যেন ভয় করছে।’

তনয়ঃ”তুমি বিড়াল।এখান থেকে যাও।এসব বাচ্চাদের নিয়ে আসাই ভুল ছিল।”

আমিও আর না করতে পারিনি।অগত্যা তাঁর সাথে যেতে লাগলাম।দেখলাম একটা বড় কক্ষের কাছে আলপনাগুলো এসে থেমে গেছে।কিন্তু ব্যাপার হলো ঐখানে একটি সাইনবোর্ড লাগানো আছে কক্ষে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।তনয়ের মতো ছেলে কি এসব মানবে?চারপাশটা ভালো করে দেখে প্রবেশ করলাম।তেমন বিশেষ কিছু চোখে পড়ছেনা।মেঝেতে দেখি একটা মধ্যম আকৃতির বৃত্ত আঁকা।তাঁর তিন দিকে তিনটা ত্রিভূজ।সেগুলোর শীর্ষবিন্দু থেকে অঙ্কিত মধ্যমা আবার বৃত্তটিকে একসাথে ছেদ করছে।মনে একটু খটকা লাগল।সবাই নীরবভাবে চারপাশটা দেখে চলেছি।শিফু হঠাত্ চেঁচিয়ে উঠল,”এই বারান্দায় দেখ”।ওদিকে তাকাতেই দেখি একটা বড় কাঁচের গোলক স্ট্যান্ডের উপর আটকানো।সূর্যের আলোটা কাঁচ ভেদ করে এসে ভেতরের বৃত্তে পড়ছে।

আমিঃ”চল তোরা।ব্যাপারটা আমার কাছে ভালো ঠেকছে না।”

শিফুও সায় দিল।কিন্তু তনয় এক চুলও নড়বেনা।সে এটার রহস্যভেদ করেই ছাড়বে,জেদটা খুব বেশি।আমাদের সে নির্দেশ করল দুটো ত্রিভূজে দাঁড়াতে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও দাঁড়ালাম।সত্যিই ভয় করছিল।এক অস্বাভাবিক ধরনের নীরব ছিল চারিপাশ,একটা মানুষও নেই ধারে কাছে।তনয় তিন নং ত্রিভূজে দাঁড়ালো।একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছি।ঘড়ির থিকে চোখ পড়তেই দেখলাম বাজে বিকেল ৭:৩০ মিনিট।কয়েক মুহূর্ত পরই প্রচন্ড ভূমিকম্প শুরু হলো,সব যেন ভেঙ্গে পড়বে।মাথাটা খুব ব্যাথা করছে।সবার চোখ বিস্ফোরিত,কী হচ্ছে এসব?একটা পাও নড়াতে পারছিনা।কেউ যেন ভেতর থেকে প্রাণটা টেনে নিয়ে যাচ্ছে।তারপর সব অন্ধকার দেখলাম।

জ্ঞান ফিরল তনয়ের ডাকে।মাথাটা এখনও ঝিম ঝিম করছে।
তনয়ঃ”এই শিফু,তোরা উঠ।চল যাই এখান থেকে।”
আমিঃ”কী হয়েছিল?”

কথা প্রায় শেষ করতে না করতেই অনেক মানুষের গলার আওয়াজ পেলাম।চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই তাঁরা কক্ষে এসে প্রবেশ করল।তাঁদের দেখে এতো বিস্মিত হলাম যে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।অনেক দীর্ঘ দেহী নেংটি পরিহিত,গায়ে আর কোনো কাপড় নেই,হাতে বল্লম,নিকশ কালো,দেহে নানা ধরনের ট্যাটু আঁকা,বিভিন্ন জায়গায় মালা আর নেকলেস পরা।কিছু চিন্তা করার আগেই তাঁরা আমাদের তুলে পিরামিডের বাহিরে নিয়ে যেতে থাকল।এই ব্যাপার থেকে উদ্ভট এবং সর্বোচ্চ বিস্ময়কর ঘটনা হলো বাহিরের চিত্রটা।এতই অবাক হয়েছি যে কারোও মুখ থেকে কোনো কথা বেরুচ্ছে না।

আমিঃ”যা দেখছি সব কি তোরাও দেখছিস?প্লিজ স্বপ্নটা ভাঙ্গা আমার।”

শিফুঃ”সবই সত্য।”

আদি মায়ান সভ্যতা,চারিদিকে এঁটেল মাটির তৈরী ছোটো ছোটো ঘর আর কার্বনের মতো কালো কালো নেংটি পরা মানুষ,ভয় মিশ্রিত চোখ,ফসলের মাঠ,দেবালয় সহ চক্ষু বিস্ফোরণ করার জন্য অনেক দৃশ্য।আমরা তাহলে আর বাস্তব জগতে নেই।যা হওয়ার ঐ মন্দিরেই হয়েছে।শিফু কাঁদো কাঁদো গলায় ফিসফিসিয়ে বলল,”কী হচ্ছে রে?আমরা কি মারা গিয়েছি?”

তনয়ঃ”দোস্ত বিশ্বাসই হচ্ছেনা কত বড় কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছি।এনজয় ইট!”

শিফুঃ”তোর কাছে সব মজা মনে হচ্ছে শালা কুত্তা?”

আমিঃ”প্লিজ তোরা থাম।বুঝ আগে কী হতে যাচ্ছে।”লোকগুলো স্পেনিশ ভাষায় কথা বলছে।

একটু পর হাজির হলাম বিশাল এক প্রাসাদের সামনে।এতো সুন্দর যে বর্তমান অনেক স্থাপত্যকলাকেও হার মানাবে।বোধহয় চিচেন ইটজার কোনো এক রাজার।ভয় পাচ্ছিলাম বটে।তাঁরা আমাদের একটা বৈঠক খানার মতো বিশাল ঘরে রেখে চলে গেল।সর্ততামিশ্রিত চোখদ্বয় চারিপাশ প্রদক্ষিণ করছিল।হঠাত্ শুনলাম একটা সাইরেনের মতো শব্দ।সাথে সাথেই ভেতর থেকে বীরের মতো সৈন্য সামন্ত নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন এক যুবক মহাপুরুষ।পুরো দেহ চিতার চামড়া দিয়ে ঢাকা,মুখে নানা ধরনের সাজ সজ্জার অলংকার,গম্ভীর চোখ মুখ।আমার মনে শঙ্কা জাগল,ঊনি নিশ্চয়ই রাজা এখন হয়ত মেরে ফেলা হতে পারে আমাদের।তিনি অবাক করে দিয়ে কাছে এসে আমাদের পায়ে মাথা নত করে ফেললেন।তিনজন একে অপরের মুখের দিকে তাকাচ্ছি।তারপর স্পেনিশ বলতে লাগলেন।তনয় ব্যাগ থেকে ৪ টা ইয়ার ফোনের মতো বস্তু বের করল।আমাদেয় দিকে আড় চোখে চেয়ে বলল,”নে,এগুলো স্পেনিশ টু বাংলা ট্র্যান্সলেটর।লুকিয়ে এনেছিলাম।”আমরা কানে লাগালাম।রাজাকেও দেয়া হলো।এই বস্তুটি আমাদের বিস্ময়ের মাত্রা অসীম থেকে অসীমতক করে দিল।ভরাট গলায় শুনতে পাই রাজা আমাদের বলছে,”হে স্বর্গের দূত আপনাদের আগমনে আমি চিরকৃতজ্ঞ।কী করতে পারি আপনাদের জন্য?”লোকটা কেন স্বর্গের দূত বলছে আমাদের?তনয় এক পা এগিয়ে বলল,”হে রাজ্যের প্রভু আমাদের ভ্রমণ করাও তোমার রাজ্যে।”এই কথা শোনার সাথে সাথে চারিদিক থেকে ঢোল ,সাঁনাই সবকিছুর শব্দে জ্ঞান হারাবার উপক্রম হলো।

তনয়ের কি মাথা পুরোই গিয়েছে?কী করছে এসব?ধরা পরলে লাশটাও তো কেউ দেখবেনা।এদিকে আব্বু যে কী করছে।উফ অসহ্য মানসিক ভয়।যাহোক কোন ভাবে এই স্বপ্নের মাত্রাকে কাভার করে পরে পালিয়ে যাবো।রাজার সাথে দেখলাম এক অতি সুন্দরী নারী।ক্লিওপেট্রাকেও হার মানাবে ওর গাঠনিক বৈশিষ্ট্য।চামড়া দ্বারা আবৃত দেহ,উঁচু ভ্রূ,উচ্চতায় আমাদের থেকে ৩ গুণ!অর্থাত্ এতো সুন্দর যে,যে কেউ বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকবে।আসলে এরা প্রকৃতিকে ঠিকই নিজের মায়ের মতো দেখে।আর বর্তমান প্রজন্ম?যাকগে ওসব,আমরা আবার ‘স্বর্গের দূত’এসব নিয়ে মাথা ঘামালে চলবেনা।

নারী। ক্লিওপেট্রাকেও হার মানাবে ওর গাঠনিক বৈশিষ্ট্য।চামড়া দ্বারা আবৃত দেহ,উঁচু ভ্রূ,উচ্চতায় আমাদের থেকে ৩ গুণ!অর্থাত্ এতো সুন্দর যে,যে কেউ বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে থাকবে।আসলে এরা প্রকৃতিকে ঠিকই নিজের মায়ের মতো দেখে।আর বর্তমান প্রজন্ম?যাকগে ওসব,আমরা আবার ‘স্বর্গের দূত’এসব নিয়ে মাথা ঘামালে চলবেনা।

আপ্যায়ন পর্ব সেরে বাহিরে এলাম।চারিদিকের প্রকৃতি এতো সুন্দর যে মনে হয় বিধাতা নিজ হাতে এদের অঢেল সম্পদ দিয়েছেন।তাছাড়া মায়ানরা ছিল সবচেয়ে সভ্য আর আধুনিক,যা ই দেখি মনে হতো আধুনিক জীবনেরই প্রযুক্তির পূর্ব রূপ।বিশাল হাতিতে চড়ে আমরা ঘুরতে বেরিয়েছি।এই রাজার নাম যতটুকু আন্দাজ করেছি তিনি হলেন দশম মায়ান সম্রাট ফিয়োস্তা।তনয় বকবক করেই চলেছে।চারিদিকের সবকিছু এতো নির্মল যে বলা সম্ভব নয়।ভয় আর বিস্ময়ের মাঝ থেকে কেমন একটা আনন্দও পাচ্ছি।কুকুল্কানের পিরামিডের সামনে আসতেই একটা সন্দেহ দূর হলো।দেখি ওখানে দল বেধে পূজা করছে লোকজন।ঐ মন্দিরটি মায়ানদের কাছে অতি পবিত্র।তাঁরা বিশ্বাস করে ঐ পিরামিডের কাঁচের গোলকটি পূর্ব পুরুষের এবং এতে জাদুকরী শক্তি আছে।তাঁদের প্রার্থনার কোনো এক সময় আমরা বিজ্ঞানের বেড়াজালে পড়ে ঐ মন্দিরে আপতিত হলে যা হওয়ার তা ই হয়।বিচিত্র পোশাক আর চালচলন আমাদের বিশেষ উপকার দিয়েছে।কতক্ষণ টিকবে জানিনা।তনয় ফিয়োস্তার সাথে কথা বলেই চলেছে নানা বিষয়ে।আমি আর শিফু চুপচাপ গম্ভীর ভাব নিয়ে সব শুনছি।রাণীর সাথে টুকটাক কথা বলেছি।অপূর্ব মায়াবী মহিলাটা।কৌতুহলবশত জিজ্ঞেস করি যে এটা কতো সাল,ঊনি বলেন যে এই যুগ দশম শতাব্দীর চতুর্থ প্রজন্ম।অর্থাত্‍ ২৪৮ খ্রিষ্টপূর্ব!

ভাবতেই গা শিউরে ওঠে যে আমরা যিশুর জন্মেরও অনেক আগে এসেছি!প্রায় রাজ্যের সব কিছুই দেখছি।বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র আর বিশ্ববিদ্যালয় যা ই বলি না কেন সবই আছে মায়ানদের।অনেক কিছু দেখার পর আবার দুপুরের খাবারের জন্য প্রাসাদে এসে পৌছালাম।আমাদের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছে।ভয়টা খুব করে বাড়ছে,শ্বাস নেয়াই যেন ভুলে গিয়েছি।বিভিন্ন রাজ্য থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমাদের দেখতে এসেছেন।নানা প্রশ্ন করছেন।খিদে পেয়েছিল খুব,খাবারের দিকে চোখ পড়তেই দেখলাম সব ধরনের গোস্ত থেকে শুরু করে ভূট্টার মদ সহ অভিজাত প্রায় সবকিছু।কিন্তু এগুলো তো গলা দিয়ে নামছে না।অনেক কৌশল করে তনয়কে দিয়ে আমাদের যাওয়ার কথা বলানোর চেষ্টা করলাম।ও ভীষণ বাকপটু।

তনয়ঃহে রাজ্যের প্রভু আমাদের তো যেতে হবে।লগ্ন যেন না পেরোয়।উপায় জানা আছে কি?

ফিয়োস্তাঃহে দূত!আপনার জ্ঞানের তুলনায় আমরা অতি ক্ষুদ্র।

কথাটা শুনে বাজ পড়ল মাথায়।কী বলছে এসব?আর কি যাওয়া হবেনা?ভীষণ ঘামছি আমরা।এসব আচরণ অন্যান্যদের সন্দেহে ফেলে দেয়।চেষ্টা করছি ঠিক থাকার।কিন্তু বিপদ যে আসন্ন ছিল এটাকে তো থামানো যায় না।শিফু মদটা একটু বেশিই খেয়ে মাতলামি শুরু করেছে!শেষ আমরা।এসব আচরণ দেখে সবাই খুব অবাক।এমন সময় রাজার এক রক্ষী ঊনাকে কানে কানে কিছু একটা বলতেই বলে উঠলেন,”ধরো ওদের ওরা ভন্ড,গুপ্তচর!”

আপাতত কিছুক্ষণের জন্য আমরা বন্দি আছি প্রাসাদের সবচেয়ে বড় জেলে।এটাকে খাঁচা বলাই ভালো।সাথে সাথেই যে মেরে ফেলেনি সেটা অনেক বড় পাওনা।ফিয়োস্তার সেনাপতি প্রথম থেকেই দেখছিলাম কালো বিড়ালের মতো আমাদের দেখছিল,আর অবশেষে তনয়ের পকেট নাইফটা দেখে মনে করে আমরা নাকি গুপ্তচর।এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণ চলছে,কী করবে আমাদের নিয়ে।খুব অসহায় লাগছে নিজেকে।শিফু কাঁদছে।

তনয়ঃ”আমরা অবশ্যই আরো একটা পথ খুঁজে পাবো পালাবার।জাস্ট একটু সময় দেয় চিন্তার প্লিজ।”
তখুনি শিফু ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

শিফুঃ”কুত্তা কোথাকার তোর জন্য আজ অবস্থা।খুব বেশি বড় ভেবেছিস নিজেকে তাই না?মেরে ফেলব তোকে আমি।”

ও পাগলের মতো আচরণ করতে শুরু করে।কোনোমতে থামালাম।আসলে আমারও ইচ্ছে করছিলো তনয়কে ছিড়ে ফেলব।ফিয়োস্তাকে অনেক বুঝানোর পরও বুঝল না।একটু পরই অনেক লোক এসে কয়েদিখানায় প্রবেশ করল।সেই সেনাপতির হাতে একটা পান্ডুলিপির মতো কিছু ছিল।প্রমাদ গুনতে লাগলাম।আমাদের একটা বড় ফাঁসিখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।হৃদপিন্ডটা বোধহয় বেরিয়ে যাবে।খুব খারাপ লাগছিল।কারো দিকে আর তাকাতে সাহস পাইনি।রাজকীয় ভাবে সেখানে প্রবেশ করলেন সম্রাট।আমাদের সামনে কীসব পড়ে শোনানো হলো।আর কোনো ইচ্ছে নেই বাস্তব বা অবাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করার।অনবরত চোখ থেকে পানি পড়ছে।মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে।নিজে মরলে সমস্যা ছিল না।আরো দুইজন নিষ্পাপও আমার কারণে মরছে।তনয় ভাঙ্গা গলায় বলল,”আমায় ক্ষমা করে দিস দোস্ত।”আগ্রহ নেই এসব শোনার।দঁড়ি পরানোর জন্য যখনই উঠে দাঁড়ালাম তখুনি মাথাটা ঘুরতে লাগল।সাথে সাথেই বিকট একটা শব্দ হলো।কেঁপে উঠল চারিপাশ।এক মুহূর্তের জন্য চাপা আতঙ্ক অনুভব হলো।কোনো জানালাও নেই দেখার জন্য।সাথে সাথেই সশব্দে দরজা খুলে এক প্রহরী চিত্কার করে একটা কিছু বলে আবার চলে গেল।না বুঝলেও আন্দাজ করলাম ভয়ংকর কিছু একটা হতে যাচ্ছে।যুদ্ধ নয়তো?তারপর দেখলাম সবাই তাড়াহুড়ো করে আতঙ্কিত চোখে আমাদের একা রেখে বাহিরে থেকে দরজা তালা দিয়ে চলে গেল।কিছুই বুঝতে পারছিনা।তনয় আর শিফু উঠে দাঁড়ালো;হয়ত পালানোর মোক্ষম সুযোগ।বারবারই এতো বড় প্রাসাদটা কেঁপে উঠছে।হাতটাও পেছনে বাঁধা আবার দরজাও লক।উফ এতো অসহ্য মানসিক যন্ত্রণা হচ্ছে।হঠাতই শুনলাম দরজায় কে যেন লক খুলছে।অবাক কান্ড!এতো দেখি ফিয়োস্তার সেই সুন্দরী স্ত্রী!কোনো কথা না বলেই ইশারা করলেন বাহিরে আসার জন্য।বেঁচে থাকার নতুন একটা বীজ মনে রোপিত হলো।তাড়াতাড়ি করে ছুরি দিয়ে বাঁধন খুলে দিলেন।আবার ইশারা করলেন ঊনার সাথে যাওয়ার জন্য।কিন্তু এই মহিলা কিসের জন্য সাহায্য করছে আমাদের?যাহোক তিনজনই ঊনার পেছনে যেতে লাগলাম।চারিদিকে দেখছি শুধু মানুষের ছুটোছুটি।কেউ কারো দিকে দেখার সুযোগ নেই।কিছু বলতেও পারছিনা।

বাহিরে আসতেই দেখি এক মহাপ্রলয়,যেন দাবানল লেগেছে!চারিদিকে আগুন আর আগুন।তাঁর থেকেও সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো আকাশে থালার মতো দেখতে কিছু একটা উড়ছে আর গোলা নিক্ষেপ করছে!স্বপ্নের থেকেও বড় স্বপ্ন।আমরা থামলাম না,সবকিছু উপেক্ষা করে দৌড়াচ্ছি।সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।আগুনের ধোঁয়া সূর্যের আলোকে ঢেকে ফেলেছে।একটু যাওয়ার পরই দেখলাম সেই পিরামিডটা।বুঝতে পারলাম এই মহিয়সীর উদ্দেশ্য।চারিদিক থেকে থালার মতো কিছু উড়ন্ত যান সব ঘিরে ফেলছে।মাথাটা খারাপ হয়ে যাবে এসব দেখে।কিন্তু অবাক করা ব্যাপার এই পিরামিডে একটু আঁচড়ও কাটছে না।ভেতরে গিয়ে আবারো ঐ কক্ষের তিনটি ত্রিভূজে দাঁড়ালাম।মেঝের বৃত্তটায় কাঁচের গোলক ভেদ করে আলো পড়তে আরেকটু বাকী।দেখলাম রাণী কিছু একটা বলতে চাচ্ছে।ভাগ্যিস ট্র্যান্সলেটরটা পকেটে ছিল।ওনাকে দিতেই খুব দ্রুত বললেন,”আমি জানি তোমরা কে,আর একমাত্র এই পিরামিডের রহস্য কেউ জানেনা আমি ছাড়া।ওরা এসে গেছে।যাও সাবধান করো ভবিষ্যতকে।”নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা এসব শুনে।আলো প্রায় পড়ে গিয়েছে,এসময় একটা কথাই শুধু কানে বাজল,”ওরা আসবে।”

জ্ঞানটা ফিরল ওখানেই।দেখি তনয় আর শিফুরও জ্ঞান ফিরেছে।এটা কি স্বপ্ন ছিল?চারিদিকটা খুব শান্ত লাগছে।পাখির ডাক শুনতে পাচ্ছি।দ্রুত বাহিরে বেরিয়ে আসলাম।দেখি সেই চির পরিচিত কবুতর গুলো উড়ছে,বাহিরে নানা ধরনের মটর গাড়ি আর আমাদের মতো মানুষ।সূর্যের লালিমাও স্পষ্ট।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম ৭ টা ৩০!তাহলে স্বপ্নই ছিল এ ভ্রমণ?কিন্তু হাতে তো এখনও শেকলের গাঢ় দাগ রয়েছে!আমরা সবাই খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম।বাবাকে বললাম কিন্তু বিশ্বাস করল না।তিনজন একসাথে তো মিথ্যা বলতে পারেনা!বুঝলাম নিজেদেরই কিছু একটা করতে হবে।দীর্ঘ গবেষণার পর নানা তথ্য ঘেটে যা জানলাম তা একটা মিরাক্যাল হিসেবেই থাকবে চিরকাল।আমরা যেদিন গিয়েছিলাম ঐখানে সেদিন ছিল খুব বিশেষ একটি দিন।আর কুকুল্কানের পিরামিডের জন্য তো বটেই।এদিন প্রতিটি গ্রহ একই সমতল কক্ষপথে অবস্থান করার ফলে সূর্যের আলো প্রতিটি গ্রহকে ছেদ করে যায়।সেই গ্রহগুলো এক সঙ্গে আলো প্রতিফলন করে যা পৃথিবীর ৮৮ ডিগ্রি কোণে আপতিত হয়।সেই আপতিত হওয়ার জায়গাটা পিরামিডের কাঁচের রহস্যময় গোলক।এই রশ্মি তড়িতচৌম্বক ক্ষেত্র তৈরী করে এবং সৃষ্টি হয় ওয়ার্মহোল(অতীত বা ভবিষ্যত গমনের সুড়ঙ্গ)।ঘটনাটা ঘটে প্রতি ৩৬৫ বছরে একবার।এই তথ্যটা জানার পেছনেও আরো কাহিনী আছে,হয়ত অন্যদিন বলব।এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের কথায় বিশ্বাস করেনি।না করাটা ভালো নাকি খারাপ জানিনা।

হয়ত আরো ৩৬৫ বছর পর আরো এক প্রজন্ম জানবে এই মায়ান মিরাক্যালের কথা।হয়ত তাঁরা ‘ওদের’পরিচয় বের করবে।বিকেলের শেষ পর্যায়ের মায়বী বাতাসে দাঁড়িয়ে অন্তরীক্ষের দিকে তাকিয়ে সবসময়ই একটা কথা মনে করি,”ওরা আসবে।”….

…………………………………………………………..সমাপ্ত……………………………………………………….

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত