ভার্সিটির ক্লাস সেরে রুমের দিকে ফিরছি। মনটা খারাপ। আজ ক্লাসে বেশ অপদস্থ হতে হয়েছে,তেমন কোন কারণ ছাড়াই।
না পড়া পারিনি বা স্যাররা আমার খারাপ রেজাল্ট নিয়ে আবারো বকেছেন ব্যপারটা তেমন নয়। আমি খুব ভালো করেই জানি ভালো রেজাল্ট করার মতো ছাত্র আমি কোনকালেই ছিলাম না আর ভবিষ্যৎ এ হবো ও না।
আর স্যারদের অপমান শেষ কবে গায়ে মেখেছি সেটাও মনে নেই। মন খারাপের আসল কারন হলো ক্লাস শেষে ক্লাসরুমে বসেই আমরা বন্ধুরা মিলে যে গ্রুপ স্টাডি বা সহজ বাংলায় বলতে গেলে পড়ার ছলে যে আড্ডা টা দিই সেটা নিয়ে।
প্রতিদিনের মতই আগে ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রটার কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নোটস গুলো সংগ্রহ করে নিলাম।
তারপর আজকের ক্লাসের সমস্ত পড়াগুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টা করলাম। কতকটা মাথায় ঢুকলো আর কতকটা মাথার ভেতর হয়ে কান গলে বাইরে চলে গেলো।
শুধু আমি না। আমার সাথে আরো চারজন প্রতিদিন ক্লাস শেষে বসি জিতুর কাছে। ক্লাসের টপার ও। আমাদের চারজনের ই রেজাল্ট খারাপ বলে ক্লাসটিচার নিজে উদ্যোগ নিয়ে এই গ্রুপ স্টাডির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
আমাদের আদেশ করেছেন আমরা যেন মনযোগ দিয়ে জিতুর লেকচার শুনি এবং আদব কায়দা আর পড়াশোনায় ওর মতই আদর্শ ছাত্র হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি।
কিন্তু কথায় আছে “যার নয়ে হয়না তার নব্বুই এ ও হয়না “! আর চারজনের দলের মধ্যে আমিই বোধহয় একমাত্র ছাত্র যার নব্বুই না একশতেও হবেনা।
তবুও স্যারের নির্দেশ মেনে চলি প্রতিদিন। নিজেকে তখন ভার্সিটি না প্রাইমারী স্কুলের বাচ্চা মনে হয়। সারাদিন ক্লাসের যন্ত্রনার পর এই বাড়তি যন্ত্রনা আমাদের কারুর ই ভালো লাগেনা।
আমরা নাহয় খারাপ ছাত্র। প্রতিবার রেজাল্ট খারাপ করি তাই শাস্তি পেতে হয়। আমরা এটা সহজভাবে মেনেও নিয়েছি।কিন্তু জিতু তো ভালো ছাত্র। ওর তো কোন দোষ নেই।
তবুও আমাদের গ্রুপ স্টাডির লিডার হিসেবে ওকেও থাকতে হয় ছুটির পর। বেচারা! ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্র হয়েও বিপদে পড়েছে।
স্যারের ধারনা ওর সংস্পর্শে থাকলে আমরাও ভালো হয়ে যাবো। কিন্তু উনি তো আর জানেন না যে আমাদের সাথে থাকলে উল্টো জিতুর ই খারাপ হয়ে যাবার সম্ভাবনা বেশী।
এই তো রেজাল্টের পর সপ্তাহখানেক হলো আমরা গ্রুপ স্টাডি শুরু করেছি কিন্তু গ্রুপ বা দলগত হয়ে একত্রিত হলেও স্টাডি বা পড়াশোনার ধারেকাছে যেতে পারেনি দলের কোন সদস্যই।
ওদিকে জিতুর সব পরিশ্রম মাঠে মারা যাচ্ছে। ও যখন আমাদের কোন বিষয় নিয়ে বোঝাতে আসে আমরা বিশেষ করে আমি আবোলতাবোল প্রশ্ন করে ওকে ঝামেলায় ফেলে দিই। কি করবো? পড়াশোনা ভালো লাগতে তো পড়বো।
আজ বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম। জিতু লেকচার দেবার সময় এতটাই অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে ফেলেছি যে ওর মত শান্তশিষ্ট ছেলেটাও রেগে আগুন হয়ে গেছে।
সেই আগুনের ওপর ঘি ঢালার কাজটাও আমিই করেছি। দুষ্টুমি করে ওর নতুন সাইকেলের চাকার হাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। আর সেটা ও কেমন করে যেন দেখে ফেলেছে।
ব্যাস! আমাকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিলো। সহপাঠী হয়েও অপমান করে বসলো। বুঝিয়ে দিলো যে ওর অবস্থান আমার চেয়ে কতটা উপরে। শেষমেশ এটাও বলে দিলো যে এরপর এমন কিছু করলে স্যার কে বলে দিয়ে আমার ছাত্রত্ব বাতিল করানো ব্যবস্থা করে দেবে।
কোন মানে হয়?কিসের এত দম্ভ ওর? ভালো ছাত্র ! তাই বলে কি খারাপ ছাত্রদের অপমান করে বেড়াবে?
সুযোগ পেলে ওকে বেশ ভালোভাবে ই দেখে নেবো ভাবতে ভাবতে কখন যে রুমে এসে পৌঁছেছি বুঝতেই পারিনি।
শরীর এমনিতেই ক্লান্ত তারসাথে মনখারাপ জিনিসটা যুক্ত হয়ে বিদঘুটে একটা পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে । দুপুরের খাবারটাও ঠিকমতন খেতে পারলাম না। কোনরকমে হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম।
চোখদুটো ঘুমে প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে ঠিক তক্ষুনি মনে হলো ঘরের ভেতর একটা অদ্ভুত এবং সম্পূর্ন অপরিচিত একটা শব্দ শুনতে পেলাম যেন।
প্রথমে ভাবলাম হয়তো পাশের রুমের কেউ গান শুনছে অথবা আলনায় ঝোলানো প্যান্টের পকেটে আমার মোবাইলের রিংটোন বাজছে। কিন্তু পরে মনে হলো আমার মোবাইল তো সেই কখন চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে।
শব্দটা ধীরেধীরে বাড়ছে। শব্দটা তেমন জোরালো না হলেও বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলাম । তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে পাশের রুমের দিকে এগোলাম।
কিন্তু গিয়ে দেখি ওখানে আওয়াজ করার মত কেউ নেই কারণ রুমের দরজায় তালা দেয়া।
আমার রুম থেকে বেরুনোর পর শব্দের মাত্রা কমে গেছে।তাহলে নিশ্চই বিল্ডিং এর বাইরের রাস্তা থেকে শব্দটা আসছে।
তাই যদি হয় তবে আমার রুমের জানালা দিয়ে তাকালে শব্দের উৎসটা দেখা যাবে। তড়িঘড়ি করে আবার রুমে ঢুকলাম। আর শব্দের মাত্রাটা ততক্ষণাৎ বেড়ে গেলো।
জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখি রাস্তা প্রায় ফাঁকা। দুই একটা রিকশা, ভ্যান ছাড়া তেমন কোন যানবাহন ই নেই। মাঝেমাঝে দু একটা বাস অথবা ট্রাক হুশ করে ছুটে যাচ্ছে আর খানিক দূরের মোড়ে গিয়ে হর্ন বাজিয়ে রাস্তাবদল করছে।
রাস্তার পাশে মেস থাকায় ভারী যানবাহনের বা মোটরসাইকেল এর হর্ন, রিকশা, ভ্যান, বা বাইসাইকেল এর টুংটাং শব্দ রোজই শুনতে পাই। ওতে আমাদের বোর্ডারদের অভ্যাস হয়ে গেছে।
কাজেই ঘুমে ব্যাঘাত হয়না ওসব শব্দে। কিন্তু এখন যে হালকা শব্দটা ভেসে আসছে সেটাই ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে এতক্ষণে। তাহলে কি রুমের ভেতরেই কোথাও আছে এই অপরিচিত শব্দের উৎপত্তি স্থল?
থাকলে সেটা কোথায়? এসব ভাবছি হঠাৎ চোখ চলে গেলো রুমের এক কোণায় দেয়ালের সাথে পেরেক দিয়ে লাগানো হ্যাঙ্গারের দিকে। আমার কিছু পুরনো কাপড়চোপড় আর একটা ব্যাগ
ঝুলিয়ে রেখেছি ওটায়।
মনে হলো ব্যাগের ঠিক পেছনে কিছু একটা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। দূর থেকেও সেই আলোর তেজ বেশ বোঝা যাচ্ছে। আমি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম সেটা ভালোভাবে দেখার জন্য। যত এগুচ্ছি শব্দটা তত স্পষ্ট হচ্ছে, সাথে বাড়ছে আলোর তীব্রতা । মনে হয় ঐ আলোটার কাছেই শব্দটা হচ্ছে। কাছে গিয়ে ব্যাগটা সরাতেই চোখে পড়লো একটা অদ্ভুত দৃশ্য।
ব্যাগের পেছনে হ্যাঙ্গারের পাশের দেয়ালে একটা মাঝারি আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে আর সেখান থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে একটা উজ্জ্বল হলুদাভ আলো। শব্দটাও আসছে ঐ গর্ত থেকেই।বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। ওটা কিসের গর্ত?
একবার মনে হলো সারাদিন ক্লাস করে ক্লান্ত আর অবসন্ন আমি বোধহয় হ্যালুসিনেট করছি। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হলো হ্যালুসিনেশন হলে তো আলোর তাপ বা শব্দ কোনটাই এত কাছ থেকে অনুভব করতে পারতাম না।
ঐ উজ্জ্বল আলো থেকে হালকা তাপ এসে লাগছে আমার মুখে আর শব্দটা যেন কানের একেবারে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। অনেক মানুষ একত্রিত যেন গুনগুন করে একটা মায়াবী সুর তুলছে তাদের কন্ঠে। ভেতরে ভেতরে ভয়টা আছে।তবুও সেই মায়াবী সুরটা আরো ভালো করে শোনার ইচ্ছে হচ্ছিলো। আলোকিত ঐ গহ্বর থেকে কারা যেন ডাকছে আমাকে। আমি সম্মোহিতের মত এগিয়ে যাচ্ছি তাদের ডাক শুনে। পিছনে তাকানোর সময় বা সুযোগ কোনটাই নেই আমার কাছে।
হঠাৎ আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আলোর গর্তটা বড় হতে লাগলো,বেড়ে গেলো শব্দের মাত্রা,আগের শব্দের সাথে যুক্ত হলো আরেকটা শব্দ। দ্বিতীয় শব্দটা মন দিয়ে শুনলে বোঝা যাবে একটা ঈগল তারস্বরে চেঁচাচ্ছে আর তার কাছাকাছি একটা সিংহ বিকট শব্দে বারবার গর্জন করে উঠছে। আকাশে উড়তে থাকা বড় কোন ঈগল যেন তীরবেগে উড়ে এসে ঠোকর দিচ্ছে বলশালী কোন সিংহের কেশরযুক্ত ঘাড়ে!তাই সিংহটা রাগে গজরাচ্ছে!
শব্দ যত বাড়ছে এসব অস্বাভাবিক ঘটনা যেন ততই চোখের সামনে ফুটে উঠছে।
ইতিমধ্যে আলোর গর্তটা আমার সমান বড় হয়ে গেছে। আমি প্রবল চেষ্টা করেও ওটা থেকে দূরে সরে যেতে পারছিনা। এবার ঈগল আর সিংহের ডাক তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগলো আর একটা মারাত্মক বিস্ফোরনের সাথে সাথে আমাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে ফেললো আলোকিত সেই গহ্বর! তারপর আর কিছু মনে নেই।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা সোনালী বালুকাময় মরুভূমির মাঝখানে শোয়া অবস্থায়।
কোথায় আছি বুঝতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো। উঠে বসতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু বেজায় ব্যথা করছে শরীরটা। ওঠার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি পর্যন্ত পাচ্ছিনা। তবুও মনের জোর খাটিয়ে শেষপর্যন্ত উঠে বসতে পারলাম। কিন্তু উঠেই চোখের সামনে যেটা দেখলাম সেটা কল্পনার ও অতীত।
আমি বসে আছি একটা বিশাল পিরামিড এর ঠিক সামনে। সূর্যের প্রখর দ্বীপ্তিতে সোনা দিয়ে মোড়ানো একটা বিরাট কীর্তির মত দেখাচ্ছে ওটাকে।
কিন্তু আমি এখানে এলাম কি করে?এবার ধীরেধীরে মনে পড়তে থাকলো আগের ঘটনাগুলো। আমার রুমে একটা আলোকিত গহ্বর আমাকে গ্রাস করে ফেলেছিল। সেটাই কি আমাকে এই পিরামিডের কাছে এনে ফেলেছে?
এটা কোন দুঃস্বপ্ন নয় তো?
হয়তো এই আলোর গর্ত বা শব্দ কিছুই ছিলনা। আমি হয়তো বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পড়ছি আর ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখছি এইসব আজব ঘটনা।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাতাসের ঝাপটায় একরাশ বালি এসে যখন আমার চোখের ভেতরে ঢুকে পড়লো আর চোখদুটো খচখচ করতে লাগলো তখন বুঝলাম এটা স্বপ্ন নয় বাস্তব।
গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাড়ালাম। তারপর চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখি একটা প্রানীও নেই আশেপাশে। চারদিকে ধু ধু মরুভূমি। ঘরবাড়ি তো দূরে থাক একটা ছোট ঝুপড়ি পর্যন্ত চোখে পড়ছেনা ।
শুধু পিরামিডের দিকে সোজাসুজি তাকালে ঠিক পেছনে বেশ দূরে পরপর দুটো পিরামিড আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে। আমি তাহলে কোন একটা আশ্চর্য কারনে প্রাচীন মিশর শহরে এসে পড়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
এবার আরো একটা অবাক করা কান্ড ঘটলো। স্পষ্ট শুনতে পেলাম পাশের বৃহদাকার পিরামিডের ভেতর থেকে ঘন্টার ঢং ঢং আওয়াজ আসছে।সাথে মানুষজনের হইচই এর শব্দ! আমি যতটুকু জানি বহুকাল থেকেই ফারাও রাজাদের কবর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মিশরের এই পিরামিড গুলো।
রাজাদের মৃতদেহ মমি করা দেহ সংরক্ষণ করাই পিরামিড তৈরির আসল উদ্দেশ্য।রাজাদের মমির পাশাপাশি তাদের ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছদ, বাসনকোসন এবং প্রচুর ধনরাশি জমা করা হয়েছিল পিরামিড এর ভেতরে।কিন্তু কোনরকম ঘন্টা বা অন্য কোন বাদ্যযন্ত্রের কথা তো শুনিনি কোনদিন। আর সর্বসাধারণ এর জন্য তো উন্মুক্ত নয় পিরামিড। একবার অবশ্য পেপারে পড়েছিলাম মিশরের দু একটা পিরামিডের ভেতরে খুব অল্প সময়ের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক আর দর্শনার্থী রা ঢুকতে পারেন।
ওরাই কি পিরামিডের ভেতরে বসে ঘন্টা বাজাচ্ছে?হতে পারে আজ মিশরে কোন বড় উৎসব হচ্ছে। সেটার কেন্দ্রস্থল এই পিরামিড। তাই পিরামিডের ভেতর থেকে উৎসবের আমেজ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর আমি সেটার শব্দই শুনতে পাচ্ছি।
পিরামিডের দরজাটা আমার থেকে হাতদশেক দূরে। ভেতরে কি চলছে সেটা দেখার কৌতুহল দমন করতে না পেরে আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে যেতে লাগলাম দরজা লক্ষ্য করে। ভুলে গেলাম যে আমি এমনিতেই একটা বড় বিপদের মধ্যে আছি। পিরামিডের ভেতরে ঢুকলে বিপদ আরো বাড়তে পারে!
আমি ভেতরে ঢুকতেই ঘন্টার ধ্বনি হুট করে থেমে গেলো। তারসাথে হইচই এর শব্দটাও। নিদারুণ একটা নির্জনতা আর গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি হলো নিমেষেই।
দরজা থেকে সামনের দিকে সুড়ঙ্গের মত পথ চলে গেছে একেবেকে। সেই পথ ধরে একটু এগোতেই পিছনে ভারী কোন পাথরজাতীয় একটা কিছু গড়িয়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। আতংকিত হয়ে পিছে তাকিয়ে দেখি যে দরজা দিয়ে আমি ভেতরে ঢুকেছি সেটা কোন একটা অজানা কারনে বন্ধ হয়ে গেছে। সেটার শব্দই পেয়েছি আমি।
দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভেতরে যে সামান্য আলোটুকু ঢুকছিলো সেটার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেলো। নিকষ অন্ধকারে গা ছমছমে ভাবটা বেড়ে গেলো। কিছুই দেখা যাচ্ছেনা স্পষ্ট করে। সামনে এগিয়ে যাবো না পিছিয়ে গিয়ে দরজাটা খোলার চেষ্টা করবো সেটাও বুঝতে পারছিনা।
হাত পা ভয়ে অবশ হয়ে গেছে। যদি আর বেরুতে না পারি অভিশপ্ত রাজাদের মস্ত বড় এই কবর থেকে?এখন নাহয় দিন,রাত হলেই যদি রাজাদের অশরীরী আত্মারা আমায় আক্রমণ করে?
এইরকম নানা বিদঘুটে চিন্তা দানা বাধতে থাকলো মনের ভেতর। আমি বন্দী হয়ে গেছি। কেউ জানতেও পারবেনা আমি এখানে। কোন দোষের শাস্তি পাচ্ছি জানিনা।
কেন যে এই পিরামিডের ভেতরে ঢুকেছিলাম?
এবার আরো একটা ব্যপার হলো যা আমার ভয়ের মাত্রাকে মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দিলো। আমার রুমে আবির্ভূত সেই আলোর গর্ত আমাকে গ্রাস করার সময় ঈগল আর সিংহের যে ভয়ানক ডাকটা শুনতে পেয়েছিলাম ঠিক সেই একই ডাক শুনতে পেলাম আবার।
এই পিরামিডের মধ্যে!এবং সেটা আমার কাছাকাছি কোথাও। তারসাথে যুক্ত হলো বিশালদেহী কোন চতুস্পদ প্রাণীর ভারী পায়ের থপথপ শব্দ। গোটা পিরামিড কাঁপিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে দানবীয় কোন প্রাণী!
কি ওটা?
নিকষ কালো অন্ধকারে নিজের হাত পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছিনা। এটা যে কতবড় অস্বস্তির বিষয় তা বলে বোঝানো যাবে না।
ওদিকে অজানা অচেনা প্রানীটার পায়ের থপথপ শব্দ বেড়েই চলেছে। একবারের জন্য মনে হলো আধারে জ্বলতে থাকা দুটো লাল চোখ এগিয়ে আসছে আমার ঠিক সামনে থেকে।
তারপর বিরাট কোন পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ পেলাম আর চোখদুটো ও খানিকটা সরে আমার ডানদিকে চলে গেলো।
আবার ওটার হাটার শব্দ পেলাম।আমি প্রাণীটাকে দেখিনি তবুও ওটার চারটে পা মেঝেতে পড়ামাত্র যে কাঁপন তৈরি হচ্ছে তাতে প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আলাদাভাবে বোঝা যাচ্ছে।
বেশ বুঝতে পারছি চারপেয়ে কোন দৈত্য বৃত্তাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাকে ঘিরে। পিরামিডের ভেতরটা কিছুক্ষণ পরপর থরথর করে কেঁপে উঠছে । সেইসাথে কেঁপে উঠছি আমিও,খানিকটা ভয়ে আর খানিকটা মেঝের কাঁপুনি তে। একটু পরপর যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।
আমি এখনো ঠাহর করে উঠতে পারছিনা কেনই বা আমি সুদূর বাংলাদেশ থেকে এই দেশে এসে পড়েছি আর কেনই বা পিরামিডের ভেতর বন্দী হয়েছি। এটা নিছক ভাগ্যচক্র হতে পারেনা।
একটা অতি সাধারণ ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেকে এইরকম অভাবনীয় আর অস্বাভাবিক বিপদে কে ফেলতে চাইছে?এটা কি কোন ধরনের পরীক্ষা?সেটাই যদি হয় তবে এর শেষ কোথায়?
কোনরকম সতর্কবাণী দেওয়া ছাড়াই আমাকে এই ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশে এনে অসহায় ভাবে ছেড়ে দেয়ার একটা উদ্দেশ্য আছে নিশ্চই।
অন্ধকার যে মনের মধ্যে কতটুকু বিতৃষ্ণা,কতটুকু অসহায়ত্ব সৃষ্টি করতে পারে তা এইমূহুর্তে আমিই সবচেয়ে বেশী টের পাচ্ছি।
দিনের আলো আমার কাছে মহামূল্যবান কিছু বলে মনে হচ্ছে। এক চিলতে রোদের জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছে।
শুধু অন্ধকার হলে তবুও হয়তো চলতো, কিন্তু যখন অনুভব করতে পারছি যেখানে কারুর থাকার কথা নয় সেরকম নির্জন একটা যায়গায় সম্পূর্ন অদেখা একটা প্রানী আমাকে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে তখন সময়টাও যেন স্থির হয়ে যায়।
মনে হয় অনন্তকাল ধরে আমি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীর
মত অপেক্ষা করছি আমার শাস্তির।
প্রাচীনকালে রাজরাজড়াদের আমলে কিছু কিছু অঞ্চলে গুরুতর অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ছিলো বেশ অমানবিক ।
এই পরিস্থিতে একটা শাস্তির ধরনের কথা বেশ মনে পড়ছে। নিয়মটা ছিলো এইরকম। অপরাধী কে আধুনিক কালের স্টেডিয়ামের মত দেখতে ‘কলোসিয়াম’ নামক একটা জায়গায় ছেড়ে দেয়া হতো।
তারপর তার সাথে ছেড়ে দেয়া হতো ক্ষুধার্ত সিংহকে। সেই জায়গা থেকে বেরোবার সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয়া হতো, যেন অপরাধী সিংহের নাগালের বাইরে যেতে বা পালাতে না পারে।
ক্ষুধার্ত সিংহ অল্প সময়ের মধ্যেই তার হিংস্রতম রুপ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তো অপরাধীর ওপর। বেচারা অপরাধী চরম ভীতি নিয়ে অসহায় অবস্থায় দেখতো তার দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গুলো কিভাবে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে সিংহটা।
অর্ধেক খাওয়া হতেই তাকে খাঁচায় পুরে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। যেন পরবর্তী অপরাধী কে খাওয়ার ইচ্ছেটা জিইয়ে থাকে।
যাদের দু চারটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাওয়া হতো তারা প্রচুর রক্তক্ষরণ এর ফলে কিছুক্ষনের মধ্যেই মারা পড়তো । মাঝে মাঝে পুরো মানুষটাকেই খেয়ে সাবাড় করতো সিংহ।
কলোসিয়ামের দর্শক সারি তে বসে থাকতেন স্বয়ং রাজা এবং তার প্রজারা। তারা এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে পৈশাচিক আনন্দ লাভ করতেন!
আমি নিজেকে এখন সেই অপরাধীর জায়গায় দেখতে পাচ্ছি । মনে হচ্ছে যে কোন সময় আশেপাশে ঘুরতে থাকা প্রানীর আক্রমণের শিকার হবো আমি। কেউ আমাকে বাঁচাতে আসবে না।আসবে কি করে? কেউ ই তো জানেনা যে আমি এখানে!
আচ্ছা এই প্রাণীটা কি পরিচিত কোন প্রাণী হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
আমি আলোর গর্ত আর পিরামিডের ভেতর ঢোকার সময় দুটো প্রাণীর ডাক শুনতে পেয়েছিলাম। একটা ঈগলের চিৎকার আরেকটা সিংহের গর্জন। হতে পারে আমাকে পাহারা দিয়ে বেড়াচ্ছে এই দুটো প্রাণী ই।
ডানা ঝাপটানোর শব্দটা হয়তো ঈগলের আর পদধ্বনি টা মস্ত বড় কোন সিংহের।
এবার আরেকটা ব্যপার ঘটলো। কাছেই কোথাও মানুষের কথাবার্তা শুনতে পেলাম!তারমানে আমি ছাড়াও অন্য কেউ আছে এই পিরামিডের ভেতরে?
বুকে সাহস ফিরে পেলাম। নিশ্চই প্রত্নতাত্ত্বিকদের কোন দল পিরামিড দেখতে ভেতরে ঢুকেছে।আমি বোধহয় শেষপর্যন্ত বেঁচে যাবো।
হ্যা আমার ধারনাই ঠিক। দেখলাম তিনজনের একটা দল মশাল জ্বালিয়ে আমাকে পাশ কাটিয়ে খুব দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর কি নিয়ে যেন দুর্বোধ্য ভাষায় তর্ক করছে নিজেদের মধ্যে।
মশালের আলোয় যতটুকু বোঝা গেলো তাতে মনে হলো এরা এদেশীয় কেউ নয়। প্রত্যেকের মুখেই চিন্তিত আর ভয়ার্ত ভাব ।খুব গোপনে কোন অপরাধ করতে গেলে অপরাধীর চেহারার যে অভিব্যক্তি থাকে অনেকটা সেরকম।এরা চোর ডাকাত নয়তো?
যেই হোকনা কেন এখন আমাকে বাঁচতে হলে ওদের সাহায্য নিতেই হবে। দরকার হলে পায়ে পড়বো।
কিন্তু লক্ষ্য করলাম আমার উপস্থিতি যেন গ্রাহ্যই করলো না ওরা। নাকি দেখতে পায়নি? আমিতো পথের মাঝেই দাঁড়িয়ে আছি।
আমি প্রানপণে চিৎকার করলাম কিন্তু তাদের কানে সেই আওয়াজ পৌছুলো না। উপায় না দেখে মাতালের মত ছুটলাম তাদের পিছু পিছু।
ওদের কাছে যে আলো ছিলো সেটা সামনের রাস্তাটা মোটামুটি আলোকিত করে রেখেছে। খুব বেশী দূরে যায়নি তাহলে।
সেই আলোর ভরসাতেই ছুটে চলেছি। কিন্তু ওটা যেন মরুভূমির আলেয়ার মতই আমার সাথে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে এগিয়ে চলেছে। বহু চেষ্টা করেও ওটার নাগাল পাচ্ছিনা।
ছুটতে ছুটতে একটা হলঘরের মত জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। বেশ হাপিয়ে গেছি।প্রচণ্ড পানির তেষ্টা পেয়েছে।কিন্তু এখানে পানি পাবো কোথায়?
সামনে তাকিয়ে দেখি ঘরের এক কোনায় একটা গর্তের মত জায়গায় মশালটা গুঁজে রেখেছে লোকগুলো। আরেকটু সামনে গিয়ে দেখি সারিসারি কফিন সাজানো রয়েছে পুরো ঘরজুড়ে।
এগুলোর ভেতরেই বোধহয় ফারাও রাজাদের মমি করা মৃতদেহ রয়েছে। সেগুলোর একটা কফিনের ঢাকনা খুলে কি যেন পরীক্ষা করছে তিন অভিযাত্রী।
হাতড়ে হাতড়ে দেখছে কফিনের ভেতরে কি আছে। আমি তাদের খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম কিন্তু আগেরবারের মতই আমার অস্তিত্ব কে কেউ পাত্তাই দিলোনা!
কাছে গিয়ে দাঁড়াতে একটা চোখ ধাঁধানো দৃশ্য দেখতে পেলাম! ওরা যে কফিনটা খুলেছে তার ভেতরে মমি নেই তার বদলে আছে মহামূল্যবান সব হীরা, মনি মানিক্য।কিছু সোনার অলঙ্কার আর থালাবাসন ও চোখে পড়লো।
তিনজনেই উল্লাসে ফেটে পড়েছে এত দামী সব জিনিস দেখে। চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে লাফালো কিছুক্ষণ। তারপর পাগলের মত ছুটে গিয়ে প্রত্যেকটা কফিনের ডালা খুলে খুলে দেখতে লাগলো।
হ্যা!সবগুলোতেই বিপুল ধনরত্নের সমাহার। ওদের চোখে লোভ চকচক করছে। দেখলে মনে হয় অনেকদিন পর তাদের অতি আকাঙ্ক্ষিত ধনসম্পদ পেয়েছে তারা। ওদের উল্লাস যখন থামলো ঠিক তখুনি একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটলো।
প্রথমে পিরামিডের মেঝে কেঁপে উঠলো। তারপর আগের মতই পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ পেলাম।ওরা তিনজন না বুঝলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারলাম সেই অজানা প্রানীটা এদিকেই এগিয়ে আসছে।
অবাক হয়ে দেখি হুট করে ঘরের ভেতর উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো।হাজার হাজার মশাল একসাথে জ্বালানো হলে যেমন আলো হয় তেমন। চোখ ঝলসানো আলো বুঝি একেই বলে।
আর সেই আলোতে চোখে পড়লো এমন এক অকল্পনীয় দৃশ্য যা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। তিন অভিযাত্রীর মাথার খানিকটা ওপরে মস্ত বড় দুটো ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ছে ভয়ংকর একটা প্রাণী।
ওটা মুখ দিয়ে যে শব্দটা করছে তার সাথে একইসঙ্গে ঈগলের কর্কশ ধ্বনি আর সিংহের গর্জনের মিল আছে। প্রানীটার গর্জন শুনলে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায়।
ওটার মাথা দেখতে বিকট একটা ঈগলের মাথার মতন! গলা থেকে বাকী শরীর বিশাল সিংহের মতন! শুধু সামনের পায়ের পাতা দুটো ঈগলের পায়ের পাতার মত নখরযুক্ত!
প্রানীটার চোখেমুখে ভয়ানক ক্রোধ দেখতে পেলাম। চোখদুটো যেন আগুনের লেলিহান শিখার মত জ্বলছে।
এবার প্রানীটা তিনজনের একজনকে উড়ে এসে ছোঁ মেরে উপরে তুলে নিয়ে গেলো। তারপর সজোরে আছড়ে ফেললো মেঝেতে। আর্তনাদ করার সময়টুকু পেলো না বেচারা। সাথে সাথে মারা গেলো।
ওর এই অবস্থা দেখে বাকী দুই সঙ্গী ভয়ে যে যেদিকে পারলো ছুটে গেলো। কিন্তু প্রানীটার নাগালের বাইরে যেতে পারলো না। প্রানীটা বিকট একটা চিৎকার দিয়ে প্রথমে একজনের বুক বরাবর ধারালো নখর গেঁথে দিলো। তারপর ঈগলের চঞ্চুর মত চঞ্চু দিয়ে মানুষটার হৃদপিন্ড টা ছিঁড়ে বের করে নিয়ে এলো!
শেষের লোকটা এই দৃশ্য দেখে ভয়েই আধমরা হয়ে গিয়েছিল। সে আর এগুতে পারলোনা। হাতদুটো জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গী তে প্রানীটার সামনে হাটুগেড়ে বসলো।
কিন্তু প্রানীটা ক্ষমার কি বোঝে? তাই ডান পায়ের থাবাটা উঁচিয়ে ধরে একটানে লোকটার মুন্ডুটা ধর থেকে আলাদা করে ফেললো।
তিনজন লোকের মর্মান্তিক এই মৃত্যুর অসহ্য দৃশ্য দেখতে দেখতে আমি নিজেও আমার মৃত্যুর প্রহর গুনছিলাম। ওদের পরেই তো আমার পালা। প্রানীটাকে কিভাবে বোঝাবো যে আমি ওদের দলের কেউ নই। ধনসম্পদের লোভে আমি এখানে আসিনি। আমি যে এসবের কিছুই জানতাম না। সবই নিয়তি। আজ আমি নিয়তির চক্রে পড়ে বলি হতে চলেছি।
আমি তখনো জানিনা কি অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটতে চলেছে সামনে।
আমাকে তৃতীয়বারের মত অবাক করে দিয়ে প্রানীটা এগিয়ে এসে আমার সামনে ওর ঈগলের মত মাথাটা ঝুঁকিয়ে দিলো।ওর পেছনে তিন জনের ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ কোন এক জাদুবলে অদৃশ্য হয়ে গেছে!এক ফোটা রক্ত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা!
প্রানীটা এখনো মাথা ঝুঁকিয়ে রেখেছে।ওর এই আচরণ দেখে ভয়টা কর্পূরের মত উবে গেলো। আমার কেন জানি ওর মাথাটা বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে হলো খুব। পোষা প্রানীদের মানুষ যেভাবে আদর করে ঠিক সেভাবে।
ওর মাথায় আমার কাঁপা কাঁপা হাতটা রাখতেই বিদ্যুতের একটা ঝলকের মত নিমেষেই বুঝতে পারলাম সবকিছু!
আমার এখানে আসার সমস্ত কারন পানির মতই পরিষ্কার হয়ে গেলো । আমাকে তো একদিন না একদিন আসতেই হতো এখানে। এই পিরামিডের শহরেই তো এককালে বসবাস করতাম আমি।
আমি ছিলাম মিশরের সবচেয়ে কমবয়সী ফারাও রাজা। প্রজাদের সবচেয়ে পছন্দের বালক রাজা। অথচ সামান্য একটা ভুলের কারনে দেবতারা অভিশাপ দিলো আমাকে। অনেক ক্ষমা চেয়েও কোন লাভ হলোনা।
দেবতাদের অভিশাপের প্রকোপে পড়ে মরনব্যাধিতে আক্রান্ত হলাম আমি। রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেছিলাম খুব অল্প বয়সে আর তাই বোধহয় অল্প বয়সেই মরতে হলো।
জীবিত অবস্থায় আমার অগাধ সম্পত্তি মানুষের পাশাপাশি পাহারা দিতো গ্রিফিন নামের এই প্রানীটি। আমি ওকে পোষ মানিয়েছিলাম। আদর করে নাম দিয়েছিলাম গ্রিফিনো।কতবার যে ওর পিঠে চড়ে পুরো মিশর উড়ে উড়ে ঘুরে বেরিয়েছি তার হিসেব নেই।
এতবছর হয়ে গেলো অথচ গ্রিফিনো এখনো আমাকে ভোলেনি। আমার আগের জীবনের স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দেবার জন্যই এখানে নিয়ে এসেছে।
এসে দেখেছি আমাকে মমি করার পর তার সাথে কফিনের পর কফিন ভর্তি করে যে ধনরাশি পিরামিডে রাখা হয়েছিল সব অভিভাবকের মতই আগলে রেখেছে সে।
ঐ তিনজন অভিযাত্রী তো উদাহরণ ছিলো মাত্র। এরকম আরো বহু লুটেরাকে ধ্বংস করে দিয়েছে আমার রাজ্যের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এই প্রানীটি।
এই অভিশপ্ত বালক রাজা তুতানখামেন কে সবাই ইতিহাসের পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেললেও ভুলতে পারেনি তার পোষা প্রানী গ্রিফিনো। ভাবতেই গর্বে বুকটা ভরে গেলো।
………………………………………………………….(সমাপ্ত)……………………………………………………….