দু-আল-মাকানের পুত্র কান-মাকোনা এবং নুজাতের কন্যা নাসিবা ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে হেসেখেলে মানুষ হতে থাকে। তাদের স্বগীয় রূপের তুলনা মেলা ভার। নাসিবার প্রকৃতি ধীরস্থির শান্ত শতদলের মতো। কিন্তু কান-মা-কানার স্বভাব চরিত্র ভিন্ন ধাঁচের। ঘোড়ায় চড়ে শিকার, ছুটোছুটি লাফাঝাপিতে সে ওস্তাদ। কখনও বা সে তীরন্ধনুক নিয়ে চলে যায় গভীর জঙ্গলে। আবার কখনও সে তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে পড়ে—লড়াই করে সেনাপতির সঙ্গে। কুস্তি লড়ে নিগ্রোকে নিয়ে। এত সত্ত্বেও কিন্তু তার অন্তরে ভরা ছিলো কুসুমের কোমলতা। ফুলের শোভায় সে মাতাল হতো। কান পেতে শুনতো সে মধুপ গুঞ্জন। নাসিবা কাছে এলে কান মা-কানার মনে হয়, ও যেন একটি গোলাপের কুড়ি। যখন দল মেলে ফুটবে, ওর খুসবুতে মন্দির হবে বাগিচা!
নাসিবার বাবা নুজাতের স্বামী দু-আল-মাকানের কল্যাণে এখন প্রবল প্রতাপান্বিত। তার কথাতেই সবাই ওঠ-বোস করে। সেনাবাহিনীর একটা বিরাট অংশ এখন তার তীবে। অবশ্য এখনও সেনাবাহিনীর অনেকেই বৃদ্ধ উজির দানদানের অনুগত। তবু নাসিবার বাবার দৌরাত্ম্য সহ্য করতে না পেরে দানদান এখন বাগদাদ ছেড়ে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। পাশের একটা শহরে গিয়ে সে এখন সুদিনের অপেক্ষায় বসে আছে। কবে পিতৃহারা নাবালক পুত্র কান মা-কানা সাবালক হবে, কবে তাকে সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করে নুজাতের স্বামীর হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেবে—সেই দিনের প্রতীক্ষায় সে চুপ করে আছে।
নুজাতের স্বামীর ভয়ে সবাই ভীত-সন্ত্রস্ত। তার কথার উপরে কারো কথা বলার জো নাই। সে এখন দণ্ডমুণ্ডের বিধাতা। কান মা-কানা আর তার মাকে গৃহে নজরবন্দী করে রাখলো। উদ্দেশ্য-তার কন্যানসিবার সঙ্গে যাতে কান মা-কানা মেলামেশা না করতে পারে। মনের দুঃখে। মা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নিজের প্রাসাদ বন্দী দশায় দিন কাটাতে থাকে। আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করি, এই অন্যায়ের সুবিচার কর খোদা। তুমি ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নাই।
বাবার কড়া প্রহরা সত্ত্বেও কান মা-কানা কিন্তু লুকিয়ে চুরিয়ে মাঝে মাঝেই নসিবার সঙ্গে দেখা করে। কিন্তু এ ভাবেও বেশি দিন চললো না। নাসিবার বাবা মেয়েকে এমনভাবে চোখে চোখে রাখতে লাগলো যে কান মা-কানা আর কিছুতেই তার দেখা পায় না। কি করবে কিছুই ভেবে না পেয়ে সে নাসিবাকে চিঠি লিখলো :
‘প্রিয়তমা নাসিবা, তোমার আদর্শন আমি আর সইতে পারছি না। আমার আহার নিদ্রা ঘুচে গেছে। জানি না। আবার কবে দেখা হবে। তোমাকে না পেলে আমার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে চলো, আমরা এই নরক থেকে পালিয়ে চলে যাই।’
চিঠিখানা এটে একটা খোজার হাতে দিয়ে বললো, খুব সাবধান, নাসিবার হাতে দিবি। কেউ যেন টের না পায়।
খোজা বলে, আপনি কিছু ভাববেন না, হুজুর। কাক-পক্ষী জানতে পারবে না।
কিন্তু খোহাটা চিঠিখানা নিয়ে গিয়ে সোজা তুলে দেয় নসিবার বাবার হাতে। চিঠি পড়ে নসিবার বাবা ক্ৰোধে ফেটে পড়ে। এতবড় স্পর্ধা। উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে কান মা-কানাকে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সংযত করে নেয় সে। রাগে মাথা গরম করলে লাভ হবে না। কাউকে কিছু না বলে চিঠিখানা নিয়ে সে নুজাতের কাছে যায়।–দেখ, তোমার গুণধর ভাইপোর কাণ্ড দেখ।
নুজাৎ চিঠিখানা পড়ে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। কি বলবে, কি বলা উচিৎ কিছুই ভাবতে পারে না। স্বামী বলে, দেখ, নুজাৎ, মেয়ে বড় হচ্ছে। কান মা-কানার দেহে এখন যৌবন আসছে। এ-সময় নসিবার সঙ্গে তার আর মোলাকাৎ উচিৎ না। ঘি আগুন এক সঙ্গে থাকলে তার পরিণাম তো তোমার অজানা নয়, নুজাৎ। সুতরাং আজ থেকে নাসিবাকে তুমি হারেমের মধ্যে চোখে চোখে রাখবে। সে যেন কোন মতলবেই বাইরে না বেরুতে পারে—লক্ষ্য রাখবে। এরপর অবাধ মেলা-মেশার ফল যে ভালো হবে না। এতো বুঝতে পারছে। আমি ব্যবস্থা করছি। যাতে কান মা-কানা আর নুজাতের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না রাখতে পারে।
এই বলে নুজাতের স্বামী চলে গেলো। নুজাৎ বসে বসে চোখের জল ফেলতে থাকে। ভাইপো কান মা-কল্পনাকে ডেকে বলে, নাসিবার বাবা তোমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। তোমার চিঠিখানা তার হাতে পড়েছে। এ অবস্থায়, আমার আশঙ্কা, সে তোমার অনিষ্ট করতে পারে, বাবা। আমি জানি, তুমি নাসিবাকে ভালোবাসো। নাসিবা আমার মেয়ে, তাকেও আমি বাজিয়ে দেখেছি, তুমি ছাড়া আর কোনও দ্বিতীয় চিন্তা নাই। তোমার জন্যে সে তার জীবন যৌবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। যদিও তুমিই সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী—আমাদের ভাবী সুলতান, তবু তুমি এখনও সাবালক হওনি, তোমার পিসেই এখন অছি। তার হুকুমেই হুকুমৎচলছে। এখন যদি রাগের মাথায় সে একটা কিছু করেই বসে-পরে হাজার মাথা কুটলেও তার আর সুরাহা হবে না। তাই বলছি বাবা, একটু সাবধানে থাকবে। ধৈর্য ধরে আর কাটা বছর কোটাও। তারপর নিজের সালতানিয়ৎ ফিরে পাবে। তুমিই হবে তখন আমাদের ভাগ্যবিধাতা। তখন তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হবে।
কান মা-কানা বলে, কিন্তু পিসি, এখন কি তার সঙ্গে একেবারেই দেখা হবে না?
—আমি বুঝতে পারি বাবা, ভালোবাসার আদর্শন সহ্য করা শক্ত।
কান মা-কানা নুজাতের এই কথায় তেমন কিছু ভরসা পায় না। বলে, এভাবে আমি এখানে থাকতে পারবো না পিসি। এই প্রাসাদ আমার কাছে কয়েদখানা মনে হচ্ছে। আমি অন্য কোথাও অন্য কোনও দেশে চলে যাবো, যেখানে সিংহাসনের মোহ নাই। আমি সিংহাসন চাই না, সালতানিয়ৎ, চাই না, ধনদৌলত, নফর। চাকর দাসদাসী আমার প্রয়োজন নাই। আমি চাই নাসিবার ভালোবাসা। আপনি আমার সঙ্গে নাসিবাকে দিন। আমি কথা দিচ্ছি, আমরা দুজনে দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। আর কোনদিন ফিরে আসবো না। পিসে সুলতান হয়ে বসুক সিংহাসনে। আমার কোনও আপত্তি নাই।
নুজাৎ বলে, তোমার আপত্তি না থাকলেও তোমার প্রজাদের ষোলআনা। আপত্তি আছে। বাগদাদের পবিত্ব সিংহাসন তার যোগ্য উত্তরাধিকারী ছাড়া কেউই জবর দখল করে নিতে পারে। না। প্রজাদের বিশ্বাস, এই ধর্ম-সিংহাসন জোর করে অধিকার করলে সে সবংশে নির্বাংশ হবে। আর তুমি ঐ গৃহত্যাগের কথা ছাড়ো, বাবা। ওতে কোনও সুরাহা হবে না। নাসিবাকে তোমার সঙ্গে ছেড়ে দিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে পেতে গেলে তোমাকে কষ্ট করে এখানেই থাকতে হবে।
কান মা-কানা ব্যর্থ মনে ফিরে আসে। নুজাতের কোনও উপদেশই তাকে শান্ত করতে পারে না। সেই দিনই রাতের অন্ধকারে এক কালান্দার ফকিরের ছদ্মবেশে পথে বেরিয়ে পড়ে।
পুত্রের নিরুদ্দেশে কান মা-কানার মা কেঁদে কেঁদে সারা হয়। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়ে ছেলের প্রতিক্ষয় ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকে। কোথায় গেলো তার নয়নের মণি, কবে সে ফিরে আসবে। এই ভেবে ভেবে অঝোর নয়নে কাঁদতে থাকে। কাঁদে প্রাসাদের দাসদাসী নফর ভৃত্য। কাঁদে দরবারের উজির আমির ওমরাহ। কাঁদে সারা দেশবাসী। বাদশাহ উমর অল নুমানের বংশে বাতি দিতে এই একমাত্র সলতে-সেও নিরুদ্দেশ হয়ে গেলো। এখন এই ধর্ম সিংহাসনে, কার দুঃসাহস, কে বসতে পারবো!
উদ্দেশ্যবিহীনভাবে কান মা-কানা চলতে থাকে। কোথায় সে যাবে কিছুই জানে না। শুধু সারা দিন একটানা হেঁটে চলে। রাতের অন্ধকার নেমে এলে কখনও গাছতলায় কখন বা কারো বাড়ির দাওয়ায় ঘুমিয়ে রাত কটায়। সকালে উঠে আবার চলতে থাকে। এইভাবে চারদিন পরে সন্ধ্যাবেলা সে এক নদীর ধারে সুন্দর শস্য শ্যামল প্রান্তরে এসে হাজির হয়। যেদিকে তাকায় সবুজের সমারোহ। ফলে ফুলে ভরা। গাছে গাছে দোয়েল ফিঙের নোচানাচি। নদীর জলে নেমে রুজু করে নামাজ পড়ে কান মা-কানা। সঙ্গের একটুকরো বাসি রুটি খেয়ে গাছতলায় শুয়ে পড়ে।
অনেক রাতে এক সুমধুর সঙ্গীতের সুরে কান মা-কানার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অবাক হয়ে ভাবে, এই নির্জন প্রান্তরে এমন মিষ্টি গান কে গায়! উঠে দাঁড়িয়ে গানের আওয়াজ অনুধাবন করে এগিয়ে চলে। কিন্তু কোথাও কোনও জনমানবের দেখা পায় না। আরও খানিকটা এগোতে গানের কথাগুলো আরও স্পষ্ট পরিষ্কার হয়ে কানে বাজে। গায়ক কে-জানবার জন্যে তখন সে বনবাদোড় ভেঙ্গে এগিয়ে চলে। সামনে একটা পাহাড়। মনে হয়, পাহাড়ের ওপর বসে কেউ গাইছে। এই গান। পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে আসে কান মা-কানা। গলা ছেড়ে ডাকতে থাকে, কই, কে আছে, কে গাইছো গান, সাড়া দাও।
উত্তর আসে, কে ডাকছো আমায়? কে তুমি? মানুষ না জিনি? তুমি যদি জিনি হও এগিয়ে এসো। আর যদি মানুষ হয়ও, আর এক পা এগিয়ে না। ঐখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। রাতের অন্ধকারে কোথায় পা দিতে কোথায় পা দিয়ে হড়কে নিচে পড়ে যাবে। সকাল হোক তারপর দেখা হবে।
কান মা-কানা কিছুই বুঝতে পারে না। এই বিপদসঙ্কুল গিরি পর্বতের মাথায় বসে সে কেন এই সঙ্গীত গেয়ে চলেছে। নিশ্চয়ই তারও মনের দুঃখ ব্যথা কান মা-কানার মতোই অসীম। আর এক পাও না এগিয়ে সেখানেই বসে সে বাকী রাতটা কাটিয়ে দেয়।
এক সময় রাতের অন্ধকার কাটে। চারদিক ফর্স হয়ে আসে। কান মা-কানা দেখলো, একটি লোক তার দিকে এগিয়ে আসছে। পরনে তার মরুভূমির বাদাবীদের মতো সাজপোশাক। কোমরে তলোয়ার, বাহুতে ঢাল। কাছে আসতে দু’জনে দু’জনকে স্বাগত জানায়। লোকটি প্রশ্ন করে, কে তুমি? কোথা থেকে আসছে? কী জাত? তোমার বাবা-মাই বা কে? এই বয়সে অস্ত্রশস্ত্ব সঙ্গে না নিয়ে এই ভয়ঙ্কর দুৰ্গম পাহাড়ে উঠেছ কোন সাহসে?
কান মা-কানা বলে, আমার নানা শাহেনশাহ উমর অল নুমান। বাগদাদের সুলতান ছিলেন। তিনি। গত হয়েছেন। আমার বাবা সুলতান দু-আল-মাকান। তিনিও গত হয়েছেন। আমার নাম কান মা কানা। আমার পিসির মেয়ে নসিবার প্রেমের বিরহে আমি আজ বিবাগী হয়ে দেশে দেশে ঘুরছি।
বাদাবীর চোখে সন্দেহ।–তুমি যদি শাহজাদাই হবে তবে কেন তোমার এই ফকিরের বেশ? সঙ্গে কোন দেহরক্ষীনা নিয়ে এই বিদেশ বিভূঁই-এ এসেছে, কোন সাহসে?
কান মা-কানা বলে, আমি কাউকে কিছু না বলে প্রাসাদ থেকে পালিয়েছি। সঙ্গে কাকে নেব? তা হলে লোক জানাজানি হয়ে যাবে না? তুমি যদি চাও আমি যখন সুলতান হয়ে সিংহাসনে বসবো, তোমাকে আমার প্রধান দেহরক্ষী করতে পারি।
বাদাবী হো হো করে হেসে ওঠে!-তুমি এমনভাবে কথা বলছো, যেন মনে হচ্ছে দিগ্বিজয় করে ফিরছো কোনও বীরপুরুষ। তোমার তলোয়ারের এক ঘায়ে বিশটা মাথা লুটিয়ে পড়ে—এমনি তোমার হাৰ্ব্বভাব। কিন্তু ছোকরা, তুমি আমার বাহুবলের তো হদিশ জানো না। আমি যদি মনে করি, তোমাকে আমার গোলাম বানিয়ে রাখতে পারি। আর তোমার মা-বাবা যদি সত্যিই কোন শাহী পরিবারের কেউ হয়-অনেক ইনাম দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে তোমাকে।
বাদাবীর কথায় কান মা কানা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।—তার দরকার হবে না। আমার দাম আমি নিজেই শোধ করে দিতে পারি। তোমার মিষ্টি মধুর গান শুনে মনে হয়েছিলো, তোমার অন্তরটাও ঐরকম সুন্দর। কিন্তু এখন দেখছি লোকটা তুমি আদৌ সুবিধের না।
কান মা-কানার একটু শিশুসুলভ সারল্যে বাদাবী মজা পায়। বিশ্ব সংসারে কতরকম শয়তান শঠ, খল, ঠগা, প্রবঞ্চক আছে তার বিন্দু বিসর্গও খোজ রাখে না। এই অপাপবিদ্ধ শিশু। সেই জন্যেই সেই গভীর রাতে চোর ডাকাতের আস্তানা এই দুৰ্গম পাহাড়ে নিৰ্ভয়ে উঠে আসতে পেরেছে। বাদাবী ডাকাত কান মা কানাকে টুক করে কাঁধে তুলে নিয়ে পাহাড় থেকে নামতে থাকে। কান মা কানা হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করতে থাকে।-ছাড়ো ছাড়ো বলছি, বদমাইশ। আমাকে কেন কাঁধে তুললে? আমি তোমার কি করেছি?
বাদাবী বলে, আমি তোমাকে ঐ নদীর জলে ফেলে দেব। ঐ নদী গিয়ে মিশেছে। টাইগ্রীস নদীতে। তুমি ভাসতে ভাসতে টাইগ্ৰীসে চলে যাবে। টাইগ্ৰীস তোমাকে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেবে ইশ নদে। আর ইশা বয়ে নিয়ে যাবে ইউফ্রেট নদীতে। এইভাবে একদিন তুমি তোমার দেশে পৌঁছে যাবে।
এই বলে, বাদাবী কান মা কানাকে মাথার উপর তুলে ধরে। যেন মনে হয়, এই মুহূর্তে সে নদীর অতল জলে ছুঁড়ে দেবে তাকে। কান মা কানা চিৎকার করে ওঠে, বীচাও-বাঁচাও, তোমার পায়ে পড়ি। প্ৰাণে মেরো না।
বাদাবী হাসতে হাসতে ওকে নদীর ধারে মাটিতে নামিয়ে দেয়। আজ থেকে আমি তোমার বান্দা, শাহজাদা। তোমার ভালোবাসা নাসিবার নামে কসম খেয়ে বলছি, তোমার জন্যে আমি জান কবুল করবো।
কান মা কানা অবাক হয় বাদাবীর মুখের দিকে চেয়ে থাকে। লোকটার আচার আচরণ কথাবার্তা কেমন যেন সব উল্টোপাল্টা। কিছুই বুঝে উঠতে পারে না সে। শুধু বলে, তুমি আমাকে ছেড়ে দিলে?
দুজনে নদীর পাড়ে বসে পড়ে। বাদাবী তার ঝোলা থেকে যবের রুটি আর নুন বের করে কানামা কানাকে খেতে দেয়। নিজেও একটু খায়। এইভাবে তাদের বন্ধুত্বের গোড়াপত্তন হয়। কান মা কানা বলে, নাঃ, যতটা খারাপ মনে হয়েছিলো, মানুষটা তুমি ততোটা খারাপ নও। আচ্ছা! এবার বলো, তুমি কে?
—আমার নাম সাব্বা ইবন রামাহ ইবন হুমম। শাম মরুভূমিতে আমার ঘর। জাতে তাইস। আমার জীবনের কাহিনী শুনবে? সংক্ষেপে বলছি, শোনো :
আমি যখন খুব ছোট সেই সময় আমার বাবা মারা যায়। আমার চাচা তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আমাকে মানুষ করতে থাকে। চাচার এক মেয়ে ছিলো-নাজমা। আমরা দুজনে দু’জনকে খুব ভালোবাসতাম। যখন তার শাদীর বয়স হলো আমি তাকে শাদী করতে চাইলাম। কিন্তু আমার চাচা রাজি হলো না। রাজি না হওয়ার একমাত্র কারণ আমি গরীব। শাদী করে বিবিকে খাওয়াতে পারবো না এই-ই একমাত্র কারণ। আমাদের দলের প্রধান সর্দার চাচাকে বললো, শাদীর পরে খাওয়া পরার ব্যবস্থা দল থেকেই করে দেওয়া হবে। কিন্তু তাতেও চাচা রাজি হলো না। তখন সে নতুন বায়না ধরলো। শাদীর আগে তাকে পঞ্চাশটা ঘোড়া, পঞ্চাশটা উট, দশটা দাসদাসী, পঞ্চাশ বস্তা যব আর পঞ্চাশ বস্তা ভুট্টা যৌতুক দিতে হবে।
কিন্তু এত সব আমি কি করে দেব। তাই ঢাল তরোয়াল নিয়ে মরুভূমির পথে পথে তীর্থ-যাত্রীর-দলের উপর হানা দিতে লাগিলাম। ছিনতাই, রাহাজানিই এখন আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। যেন তেন প্রকারে চাচার দাবী মেটাতেই হবে। না হলে নাজমাকে আমি পাবো না। নাজমা আমার কলিজা। তাকে না পেলে বাচারও কোন অর্থ নাই আমার কাছে! সারা দিন রাহাজানি ছিনতাই করি আর রাতের বেলায় নাজমার বিরহে কাতর হয়ে মনের দুঃখে গান গাই। এই আমার জীবন।
কান মা কানা বলে, তোমার দুঃখ আর আমার দুঃখ একই। প্রেমই আমাদের পথে বের করে দিয়েছে।
এমন সময় ওরা দেখতে পায়, একজন ঘোড়সওয়ার এই দিকেই এগিয়ে আসছে। সাব্বা মুঠি করে তরোয়াল বাগিয়ে ধরে। কিন্তু না, লোকটা এক আহত আরব মুসলমান যোদ্ধা। দেহের সারা পোশাক রক্তে লাল হয়ে গেছে। কোনরকমে ঘোড়ার লাগামটা ধরে সে খুঁকছে। কাছে আসতেই গোঙানির আওয়াজ শোনা গেলো, একটু পানি-পানি দাও।
কান মা কানা এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামায়। ঘাসের উপর শুইয়ে দিয়ে মুখে একটু জল দেয়। কিন্তু ভালো করে খেতে পারে না। গাল বেয়ে পড়ে যায়। কান মা কানা জিজ্ঞেস করে, কে তুমি? কি করে এমন হলো?
লোকটা তার কামিজ খুলে দেখায়। পিঠের মাঝখানে একটা গর্ত হয়ে গেছে। হুড় হুড় করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। কান মা কানা শিউড়ে ওঠে। এ অবস্থায় কোনও মানুষ বেঁচে থাকতে পারে?—কে তোমার এমন দশা করেছে বন্ধু?
এই ঘোড়াটাই আমার কাল হলো। এরকম ঘোড়া সারা আরবে। আর দুটি নাই! যে দেখে তারই লোভ হয়। এক সময়ে সে কনস্তান্তিনোপল-এর সম্রাট আফ্রিাদুনের আস্তাবলে ছিলো। আমি ওকে চুরি করে নিয়ে আসি। সঙ্গে সঙ্গে সারা আরবে ঘোড়াটার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের সর্দার বললো, এরকম জানোয়ার আগলে রাখাও শক্ত। সকলেরই নজর পড়েছে। অন্য দলের ডাকাতরা সুযোগ পেলেই ছিনতাই করে নিয়ে যাবে। সুতরাং ঝামেলা এড়াবার জন্যেই সর্দার আমাকে বললো, আরব সীমানায় রক্ষী বাহিনীর কাছে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে এসো।
তার কথা মতো আমি সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি বললেন, তুমি যা গুণগান করছে, তার সত্যাসত্যের প্রমাণ কী? এত দাম দিয়ে কিনবো, পরে যদি দেখি একটা গাধার বাচ্চা!
সেনাপতির কথায় আমার রাগ হলো।—বেশ পরীক্ষা দিচ্ছি। আপনার আস্তাবলে সবচেয়ে তাড়তাগড়াই সেরা যে সব ঘোড়া আছে তাদের নিয়ে আসুন। আমি ছুটবো, আমাকে যদি তাদের কেউ ছুঁতে পারে, জান কবুল করে যাবো।
সেই আমার কাল হলো; আমাকে কেউ তারা ধরতে পারলো না। হাওয়ার আগে আগে উড়ে চলে আমার ঘোড়া। সৈন্যরা ক্ৰোধে ফেটে পড়লো। তাদের সেনাবাহিনীতে যা নাই তা এক ডাকাতের হাতে আছে। তীর বর্শ সড়কী ছুড়তে লাগলো। তারই কয়েকটা আমার পিঠে গেঁথে গিয়েছিলো। এ সত্ত্বেও হয়তো জানে বঁচিতাম। কিন্তু ঘোড়ার গতি আমি আর রুখতে পারলাম না! একটানা তিন দিন তিন রাত্রি সে উল্কার মতো ছুটে চললো। জানি না। এত শক্তি সে কোথায় পেলো। একমাত্র দৈব ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব না।
বৃদ্ধ নেতিয়ে পড়ে।—আমার সময় শেষ হয়েছে বন্ধু। ইচ্ছা ছিলো, মরার আগে আমার দলের সর্দারের সঙ্গে একবার দেখা হবে। কিন্তু তা আর হলো না। যাই হোক, আমার দেহটা তোমরা কবর দিয়ে দিও। আর এই ঘোড়াটা আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম। এর নাম আল-কাতুল-অল মাজনুন।
এই বলে লোকটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। কান মা কানা এবং তার সঙ্গী সাব্বা তার মর দেহটা সমাধিস্থ করে আল্লাহর কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করলো।
এই সময়ে রাত্রি প্রভাত হয়ে এলো। শাহরাজাদ গল্প থামিয়ে চুপ করে বসে রইলো।
পর দিন রজনীতে শাহরাজাদ। আবার কাহিনী শুরু করে।
কবর দেওয়া শেষ হলে কান মা কানাকে ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে সাকবা একান্ত বিশ্বস্ত অনুচরের মতো পিছনে পিছনে চলতে লাগলো। চলতে চলতে এক সময়ে এক পাহাড়ের পাদদেশে এসে থামে। বনের হরিণ শিকার করে পুডিয়ে পেটের খিদে মেটায়। হঠাৎকান মাকানা দেখলো অদূরে এক গাছতলায় কতকগুলো বান্দা বসে জটলা করছে। আর তাদের সামনে একপাল উট, ভেড়া, ছাগল আর ঘোড়া চরছে। সাব্বাকে বললো, তুমি দাঁড়াও, আমি জানোয়ার আর বান্দাগুলোকে ধরে নিয়ে আসি। ঘোড়ার পিঠে চেপে ছুটে গিয়ে লোকগুলোর মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়ে কান মা কানা। বান্দাগুলো ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, কে আছো কোথাও বাঁচাও—বাঁচাও। ডাকাত পড়েছে–
তাদের চিৎকারে পাহাড়ের ওপরের ছাউনি থেকে বেরিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে সামনে এগিয়ে এলো তিনজন সৈন্য। কান মা কানাকে লক্ষ্য করে চিৎকার করে ওঠে, এই সেই কাতুল-ব্যাটা চুরি করে পালিয়েছে। এত খুঁজেছি, কোথাও পাইনি। আজ বাছাধন যাবে কোথায়। এবার তোমার ঘোড়া চুরি করার সাধ মিটিয়ে দিচ্ছি।
কান মা কানা ফিসফিস করে কাতুলের কানে কি একটা কথা বলতেই চিহিঁ হিঁ করে সামনের দুপা ঊর্ধ্বে তুলে লোকগুলোর দিকে ছুটে যায়। কান মা কানার তলোয়ারের এক কোপে একজনের ধড় মুণ্ডু আলাদা হয়ে ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ে। বাকী থাকে দুজন। আর দুই ঘায়ে তারাও ধরাশায়ী হয়। এবার সে বান্দাগুলোর দিকে তেড়ে যায়। কিন্তু তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে করুণা ভিক্ষা করতে থাকে। কান মা কানা তখন বলে ওঠ—উঠে দাঁড়া সব। জানোয়ারগুলো খেদিয়ে নিয়ে চলে আমার সঙ্গে।
সাকবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান মা কানার লড়াই দেখছিলো। কাছে আসতে বলে, সাবাস! এই না হলে বাদশাহর ছেলে।
কিছু দূর এগোতেই দেখলো, সামনের আকাশ বাতাস অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসছে। বুঝতে পারলো কোনও ফৌজি বাহিনী এক্ষুণি এসে পড়বে। কান মা কানা সাব্বাকে বললো, দোস্ত, তুমি জানোয়ারগুলো আগলে রাখো। আমি দেখে আসি কী ব্যাপার?
সাব্বা বলে, কিন্তু ফৌজী বাহিনীর সামনে যাওয়া কি ঠিক হবে বন্ধু? ওরা দলে অনেক ভারি। আর তারা সবাই লড়াকু যোদ্ধা।
কান মা কানা বলে, হতে পারে তারা একশো। কিন্তু আমি সুলতান উমর অল নুমানের নাতি-আমি একই একশো। হয় নেবো শত প্ৰাণ, নয় দেব এক প্ৰাণ-অত ডরালে চলে?
একটু এগিয়ে আসতে কান মা কানা দেখতে পায়, শ’খানেকের অশ্ব সেনার এক বাহিনী আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বীর বিক্রমে এগিয়ে আসছে। তাদের সাজপোশাক দেখে চিনতে অসুবিধে হয় না-খ্ৰীষ্টান আফ্রিাদুনের সেনাবাহিনী। কান মা কানার সামনে এসে অর্ধবৃত্তাকারে ঘিরে দাঁড়ালো তারা। ওদের প্রধান এগিয়ে এসে বলে, কি গো সুন্দরী, ঘোড়ায় চড়ার শখ হয়েছে, বুঝি! তা যাবে কোথায়, খুকি!
কান মা কানা রাগে গরগর করতে থাকে। এখনও তার দাড়িগোঁফ ওঠেনি বলে ব্যাটারা তাকে মেয়েছেলে বলে তামাশা করছে। দাঁড়াও তামাশা করা ওদের জন্মের মতো ঘুচিয়ে দিচ্ছি। সেনাপতি মজা করে বলে, তা সুন্দরী তোমার গাল দুটো তো বেশ টুকটুকে লাল। ফুলের পাপড়ির মতো তুলতুলে নরম মনে হচ্ছে! আহা কি সুন্দর কাজল কালো হরিণীর মতো চোখ। আর সুন্দরী, তোমার ঐ পাকা আঙুরের মতো ঠোঁট দুটো দেখে আমি আর ঠিক থাকতে পারছিনে। ইচ্ছে করছে, চুষে রক্ত ঝরিয়ে দিই। আচ্ছা সুন্দরী, অমন রণ সাজে। সেজেছে কেন? এ সাজ তোমার মানায় না। তার চেয়ে এসো, আমার ঘরে তোমাকে রানী বানিয়ে রাখবো।
কান মা কানা চিৎকার করে ওঠে, ওরে শূয়ারের বাচ্চা-শূয়ার, কি বলছিস তার মানে বুঝিস। তোদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তোদের যম। এবার প্রাণ ভরে তোদের ঈশ্বরকে ডেকে নে। জীবনে আর সুযোগ হবে না। আমার মুখে দাড়ি গোঁফ ওঠেনি বলে কি ভাবছিসকৰ্ত্তীর জোর কিছু কমতি আছে। যখন এক এক কোপে এক একজনের মাথা লুটিয়ে পড়বে, তখন বুঝবি মেয়েছেলে-না মেয়েছেলের বাবা।
সেনাপতি বুঝলো, এ একেবারে বিছুটি। অত সহজে তাকে বশে আনা যাবে না। হুঙ্কার দিয়ে উঠলো, এদিকে কোথায় যাচ্ছিলে খোকা? ঠিক ঠিক জবাব দেবে। না হলে একেবারে শেষ করে দেব।
সে তার দলের একজনকে লক্ষ্য করে হুকুম করলো, ইসকো বাঁধো।
কিন্তু তার সামনে পর্যন্ত এগোতেই পারলো না সে। কান মা কানার এক কোপে দুখণ্ড হয়ে গেলো তার দেহ। আর একজন তেড়ে আসে তার দিকে। তাকেও এক কোপে ধরাশায়ী করে দেয়। তারপর আরও একজন-আরও একজন। এইভাবে পর পর পাঁচজন যখন তার শাণিত তলোয়ারের আঘাতে প্ৰাণ হারালো, সেনাপতির মনে শঙ্কা জাগে। ইশারায় বাকীদের এগোতে বারণ করে নিজেই কান মা কানার সামনে এসে দাঁড়ালো।
—তোমার অসাধারণ বীরত্ব দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। আমি কারদাস। সমগ্র রোমে আমার বীরগাথা মানুষের মুখে মুখে। এই বয়সে তোমার এই বীরত্ব দেখে আমি খুশি হয়ে তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমার যেখানে ইচ্ছা তুমি যেতে পারো।
কান মা কানা চটে আগুন, ক্ষমা? আমি তোমার ক্ষমাপ্রার্থী? এত বড় স্পর্ধা তোমার। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ক্ষমার কোন স্থান নাই! তুমি কারদাস হও আর হরিদাসই হও আমার জানিবার কোন প্রয়োজন নাই। তলোয়ারেই পরিচয় পাওয়া যাবে। আর আমার বংশ পরিচয় যদি শুনতে চাও তবে শোনো, আমার নানা সুলতান উমর অল নুমান, আমার বাবা সুলতান দু-আল-মাকান আর আমার নাম কান মা কানা। কারদাস বলে, আমি তোমার বাবার সঙ্গে অনেকবার সামনা সামনি লড়াই করেছি। তার মতো বীরের পুত্র তুমি—যোগ্য বাপের যোগ্য সন্তান। যাই হোক, তুমি তোমার বিষয় সম্পত্তি নিয়ে যেখানে ইচ্ছে চলে যাও। আমার লোক কেউ তোমাকে বাধা দেবে না।
কিন্তু লড়াই থেকে কাউকে ক্ষমা করে বা কারো ক্ষমা নিয়ে ফিরে যাওয়া তো আমাদের রীতি নয়। সুতরাং শত্রু যখন সামনে তাকে নিধন না করে, জিইয়ে রেখে তো আমি চলে যেতে পারি না। এবং তোমাকেও যেতে দিতে পারি না। খ্ৰীষ্টান বীর কারদাস মউৎ-এর জন্য প্রস্তুত হও।
কাতুল-এর কানে কানে ফিসফিস করে কি যেন বলতেই টগবগিয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেনাপতির ওপর। দুই বীরের সে কি প্রচণ্ড লড়াই। ভেড়া অথবা ষাড়ের লড়াই যারা দেখেছে তারা খানিকটা তার আঁচ করতে পারবে। পর পর কয়েকটা মারাত্মক প্যাচের মার কান মা কানা আশ্চর্য দক্ষতায় এডিয়ে গেলো। কিন্তু তার পরেই একটা মোক্ষম কোপ বসিয়ে দিলো কারদাস। কান মা কানা এ পাঁচটা ধরতে পারেনি। কিন্তু সাবাস কাতুল। সে বুঝতে পেরেছিলো তার মালিক মাৎ হয়ে পড়ছে। সেই মুহুর্তে সে আশ্চর্য কায়দায় অত বড় বিশাল বপুটা টুক করে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে যায়। কারদাসের তলোয়ার হাওয়া কেটে শাঁই করে পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর এক ইঞ্চি এদিক ওদিক হলেইক কান মা কানার কাহিনী এখানেই শেষ করতে হতো।
কাতুলের রণ-কৌশলে কারদাসের মোক্ষম মারি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পলকের মধ্যে কান মা কানার এক প্রচণ্ড কোপে কারদাস দ্বিখণ্ডিত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। এই না দেখে কারদাসবাহিনীর বাকী সৈন্যরা সব ঊর্ধ্বশ্বাসে ঘোড়া ছুটিয়ে নিমেষে হাওয়া হয়ে গেলো। মৃত সেনাপতির কামিজে তলোয়ারখানির রক্ত পুষে কোষে ভরে সাব্বাকে উদ্দেশ্য করে বললো, চলো, আজ রাতটা একটু ভালো করে মৌজ করতে হবে। চলতে চলতে পথের মাঝে একটা নিগ্রো মেয়ের সঙ্গে আলাপ হলো। মেয়েটি মরুভূমিতে এপ্রাপ্ত থেকে ওপ্রান্ত অবধি ঘুরে ঘুরে নানা বিচিত্র গল্প বলে মানুষের মনোরঞ্জন করে বেড়ায়। কান মা কানা বলে, চলো, আজ রাতটা আমাদের সঙ্গেই খাবোদাবে। আর মজার মজার গল্প বলবে!
পাহাড়ের নিচে একটা গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে খানাপিনা সেরে নিলো তিনজন। তারপর কান মা কানা নিগ্রো মেয়েটাকে বললো, এবার তোমার কিসসা বলো, শুনি।