অঙ্গারমানব

অঙ্গারমানব

সেদিন সোমবার।
আকাশ আলো খুঁজে বেড়াচ্ছিলো। এক পলকের সন্ধ্যায় একটা বিশালাকারে রুটি ভেসে এলো। সেই রুটির দিকে তাকিয়ে কিশোর ছেলের শখ হলো জোছনা দেখবে।

রাজশাহী শহরের কোনো একটা পাড়া। সারি সারি দালান। একেবারে শেষ মাথায় রায়হানদের সেমি পাকা টিনের বাড়ি। বাবা সরকারী চাকুরে। ঘরে মা থাকে আর ক্লাস সিক্স পড়ুয়া ছোট্ট বোনটি। আজ আকাশের চাঁদটা অনেক সুন্দর। সাথে জীবনটাও।

-কে আপনি? চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে পেছনে দেখলো একটা দরবেশ গোছের লোক।
-বাবা আমি মুসাফির। সামান্য কিছু কি খেতে পাবো এখানে?
-আপনি বসুন আমি আসছি।

মায়ের হাতে সাজানো রাতের খাবার নিয়ে আসলো। বৃদ্ধ নীরবে খেয়ে চলেছেন। খেয়ে হাত ধুয়ে দোয়া করলেন কি যেনো ফিসফিসিয়ে।

-তুমি রায়হান না?
-হ্যাঁ। আপনি জানলেন কিভাবে?
-জানতে চাইলে সবি জানা যায় বাবা।
-অদ্ভুত তো!
-অদ্ভুতের কিছু নেই। তুমি অনেক পরোপকারী। তোমার ভেতরের মানবিকতাকে শানাই দিও। এক সময় এর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়বে।

বলেই একটা জিনিস দিলেন রায়হানের হাতে। অনেকটা খেজুরের মতো।
-খেয়ো এটা।
-কি এটা?
-তবারুক।
-ধন্যবাদ।
-ভালো থেকো। মানুষের সেবা কোরো। যেখানেই পাবে ছুটে যাবে সাহায্যের জন্য।

বলেই মুসাফির বিদায় নিলেন। সেই অব্দি থেকে ঘুম আসছে না রায়হানের। কি এই জগতের রহস্য? খানিক মোহে কি আসলেই সুখী থাকা যায়? ভাবতে ভাবতে তন্ময় হয়ে যায় সে। সে তন্ময়ে ছেদ পড়ে। দেখে কিছু লোক পাশের বাড়ির তিতলিদের বাড়িতে ঢুকছে।
“অ্যাই কে আপনারা?” চিল্লিয়ে উঠলো।
দৌড়ে ছুটে গেলো সে।

খপ করে কে যেনো তার মুখ চেপে ধরলো পেছন থেকে। “মুমম” বলে হাচড়ে পাঁচড়ে ছোটার আপ্রাণ চেষ্টা কিশোরের।

-ঢুকা এইটারেও।
-এই কি করতেছিস তোরা?

আশেপাশে সবাই কাঁদছে। তিতলি পাশে ওর হাত ধরে রেখে ফুঁপাচ্ছে। রায়হান এইচএচসি দেবে আর তিতলি নাইনে উঠলো।

হঠাৎ বাইরে থেকে আগুন জ্বলে উঠলো। লোক গুলো চলে গেলো। মহিলারা চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিলো। একটা দুর্ঘটনা ঘটার সময় নারীরা বিশৃংখল হয়ে যায়। এবং বের হবার পথ থাকলেও ছোটাছুটি করতে থাকে ঘর ময়।

-রায়হাআআন।
-চুউপ! যেটা বলি সেটা করো। যাও মা আর বড়ো ছোটো চাচীকে বের করে নিয়ে যাও। আমি আংকেল, চাচাদের, বাবলু, জায়িফকে নিয়ে বেরুচ্ছি।

-সবাই বেরিয়েছে? তিশান কোথায়? তিতলির বাবা চিল্লিয়ে উঠলো!
-তিশান কে?
বাইরে থেকে তিতলির ছোট চাচা চিল্লিয়ে উঠলেন। “আমার তিশান!!”

আগুন ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বাড়িময়। লেলিহান শিখা উপরে উঠে গেছে। এ ঘর ওঘর ঘুরে দেখলো।

এইতো তিশান। পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। তুলে নিলো রায়হান।

হঠাৎ আগুন ঝলকে উঠলো। তিশানকে বাঁচাতে পিঠ এগিয়ে দিলো।
“আহ!” অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে এলো।

-বাবা এইতো এদিকে!
-আংকেল নেন।
না। তিশান বেরুলেও রায়হানের বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। কাঠ কড়িতে আগুন লেগে দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

“রায়হান।” চিৎকার করে কেঁদে উঠলো তিতলি। তার প্রথম না বলা ভালোবাসা। হারিয়ে গেলো আগুনে। দুই বাড়ির মানুষের কান্নার রোল পড়ে গেছে।

একদিন পর। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে…

ঝাড়ুদাররা আলোচনা করছে।
-অদ্ভুত না?
-হয়।
-ইডা ক্যামুন হইলো।

রায়হান পোড়া অবস্থায় নিজে এসেছে ঢুলতে ঢুলতে। ইমার্জেন্সি বার্ণ ইউনিটে ডাক্তাররা ভর্তি করেছে। সাড়ে আটত্রিশ ঘন্টা বেঁহুশ থাকার পর হঠাৎ জ্ঞান ফিরলো। কে যেনো চিল্লিয়ে কথা বলছে।

-আমি হাসপাতালে আসার সময় হাঁটার পথে দাঁড়াবি না।
-আপনে কে? ওয়ার্ড বয় চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো।
-আমি…

লোকটা থেমে গেলো। ওয়ার্ড বয়ের পেছনে একটা রোগী। পুরো গায়ে ব্যান্ডেজ।
-ছেড়ে দে ওকে।
-কে তুই?
-ঐদিন আগুন দিয়েছিলি?
-এই কে তুই?

রায়হান এগিয়ে এলো। খপ করে লোকটার হাত ধরলো। সাথে সাথে লোকটার মুখ বিকৃত হয়ে গেলো।
-কে তুই? চাপা চিৎকার।
রোগীর শরীরে আগুন ধরে গেলো। আশেপাশের সবাই বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়েছে।

খপ করে রায়হান লোকটার গলা টিপে ধরলো। লোকটার শরীর জ্বলে উঠলো।

তিনতলা থেকে ফেলে দিলো একহাতে রায়হান।

জনতার দিকে তাকিয়ে বললো “আমি অগ্নিমানব।”

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত