টেবিল ফ্যানটা একটানা ঘুরছে সেই তখন থেকে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা মানে এই গরমে লাইট জ্বালিয়ে নিতে হবে। আর তাতেই বিপত্তি। শান্ত ক্লাস থেকে ফিরেছে সেই তিনটায়। কুয়েটের ছাত্র হিসেবে তাকে রাতদিন পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই হয়। এই যেমন একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিলো মেটাল ট্রান্সফর্মিং এর উপর। রোবোটিক ডিভাইস তৈরি করতে হবে। তো, একটা কাজ করলো সে। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে বেছে নিলো প্রতিবন্ধীদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে।
-শান্ত তুমি শিওর তো তুমি এটা করে দেখাতে পারবে?
-অবশ্যই পারবো স্যার।
-দেখো আবার জটিল করে ফেলো না।
-না স্যার পারবো করতে।
ল্যাব থেকে বেরিয়ে আসছে, এই সময় কানে এলো পেছনে হিহিহাহা…
-এই দেখ দেখ বুদ্ধুটা
-অ্যাই ওকে বুদ্ধু ডাকবিনা খবরদার।
লজ্জা পেলো শান্ত। কিছুটা লাজুক সে।
নীলু দু ব্যাচ জুনিয়র। যদি ক্যাম্পাসে কোনোদিন মেয়েদের দিকে তাকায় না তবুও নীলু ভর্তি হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত তার মনের ভেতর দাগ কেটে দিয়েছে।
তার মানে এই না যে নীলু ওকে ঘোরাবে। সমানে নীলুও ওকে পছন্দ করে। তাদের বাবা একে অন্যের বন্ধু।
-এই কি হচ্ছে?
-আরে শান্ত তুই এইরকম চেতস ক্যান?
-চেতবো না? আমার প্রজেক্ট ফাইল টান দিলা ক্যান? তুইতোকারি করবানা খবরদার !!!
-ও স্যরি স্যরি স্যার।
মইনুল ওদের ব্যাচের বখাটে ছাত্র। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আছে বলে একটু মেধাবীদের গুঁতোতে পছন্দ করে।
-ফাইল দাও!!!
-নে নে। ফোট।
-বিহেভ ভালো করবা। তোমার সাথে ক্ল্যাশ নেই। তাই বলে অন্যায়ভাবে আমাকে হ্যারাস করতে পারো না।
-আঁতেল। ভাগ।
নীলু আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়ে। মইনুল দিন দিন বেয়াড়াপনা দেখাচ্ছে। ঐতো ওদিন ও লিজাকে টিজ করেছে, কি করবে ভবিষ্যতে!
প্রজেক্ট ডে দশম দিন।
আজ সম্পূর্ণ হলো ডিভাইস এর বিল্ড আপ।
এবার তো বিশ্রামের পালা। দুদিন পর শো অফের পালা।
“সুধী ছাত্রবৃন্দ” প্রফেসর বলে চলেছেন “আজ আপনাদের সামনে ইন্সট্রুমেন্ট শো করবেন তারিক হাসান”।
মুহুর্মুহু করতালি পড়ছে। একজন প্রতিবন্ধী শিশু যার পা নেই তার পায়ে একটা ডিভাইস পড়িয়ে দেয়া হলো।
“সবাই তৈরী?”
“ক্লিক।”
“চউইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই”
-এই ডিভাইসটা এখন একটা বায়ো মেটালিক অরগানিজম তৈয়ার করবে।
সুন্দর একজোড়া ধাতব পায়ের আবরণ তৈরী হয়ে গেলো।
-বাবু একটু হাঁটো তো…
ধুপ ধুপ ধুপ ধুপ।
হাততালির পর হাততালি। দুজন আমেরিকান পর্যবেক্ষকের সামনে একটা বিস্ময়কর ডিভাইসের অ্যাসাইনমেন্ট দেখালো শান্ত।
সাকসেসফুল প্রেজেন্টেশন করে বেরিয়ে আসতেই দেখলো মইনুল নীলুর গ্রুপটাকে র্যাগ করছে।
-দেখো লিজাকে এমন করো না তো প্লিজ
-দেখো লিদাকে এমন কোরো না তো প্লিদ
-অ্যাই মইনুল কি সমস্যা তোমার?
-আরি আইন্সটাইন আইসা পড়ছে দেখি!
-ভালোয় ভালোয় বলছি ওদের বিরক্ত করা ছেড়ে দাও
-ওই চল পোলাপাইন!!! এরে পরে দেইখা নিমু…
শান্ত জুঁইয়ের দিকে হেসে বেরিয়ে এলো।
বাসায় আসার মোড়টাতে একটা গাড়ি ধেয়ে এলো। ওকে এতো জোরে ধাক্কা দিয়েছে যে ধাক্কার চোটে দশ হাত দূরে গিয়ে পড়েছে।
-ডাক্তার! আমার ছেলে হাটতে পারবে তো?
-আমি সত্যি দুঃখিত। ওর দু হাত-পা তো গেছেই, ঘাড়ও ভেঙ্গে গেছে।
-পুরোপুরি চলাফেরা কবে করতে পারবে?
-আর কখনোই সে চলা ফেরা করতে পারবে না!
নীলু ডক্টরের কথা শুনে অঝোরে কাঁদা শুরু করলো। এই কি ছিলো তার কপালে। মনের মানুষটাকে এভাবে পঙ্গু দেখতে হবে?!
প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেছে। বিছানায় শুয়ে আছে শান্ত। প্রতিদিন নীলু এসে দেখে যায়। কিন্তু শান্ত এই জীবন চায় না।
-লিজাকে প্রতিদিন ডিস্টার্ব করে মইনুল। কি করবো বলতো?
-নীলু একটা কাজ করতো।
-কি কাজ?
-বলছি।
কুয়েট প্রধান গেট। ঝাড়ুদার ঝাড়ু ফেলে ডীনের রুমের দিকে দৌড় দিয়েছে।
-স্যার অদ্ভুত জিনিস দেখলাম
-কি?
-আসেন।
মইনুল খোশগল্পে মেতে উঠেছে। শান্ত নেই তাই এখন যে কোনো মেয়েকে চান্সে টিজ করতে পারে।
-হ্যালো মইনুল। ধপ করে একটা হাত পড়লো মইনুলের কাঁধে।
-তুই কে রে?!!! আমার কাঁধে হাত রাখসোস এতো বড়ো সাহস? আরে ছাড় কইতাছি!!!
“অ্যাই”!!!! ডীন দশ হাত দূর থেকে বলছেন “তুমি ওকে ব্যাথা দিচ্ছো কেনো? কে তুমি”
ঘুরতেই দেখা গেলো ওএকটা মুখোশ পড়া লোক।
ক্যাঁচ কোঁচ করে বিশাল একটা মেটাল অবয়ব নিয়ে এসে বললো “এই ছেলেকে সাস্পেক্ট মনে হচ্ছে স্যার, আমার অ্যাক্সিডেন্টের জন্য এইই দায়ী!!!”
-কিন্তু তুমি কে?
-আমি… মুখোশ খুলে ফেললো শান্ত… এক চিলতে হাসি ফোটালো মুখে। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। “আমি যন্ত্রমানব”