ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার।
সেক্টর- এজেন্টস অব ডি।
কপাল চেপে ধরে বসে আছেন এজেন্ট টাইগার। তাঁর চারপাশে এজেন্টরা রুদ্ধশ্বাসে কেস ফাইলটা ভাগে ভাগ করে অ্যানালাইজ করছে। এরকম জটিলতর কেস আগে হাতে পড়েনি। পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র যুগ্ম সচিব খোদ নিজে এসে ধর্না দিয়েছেন হেডকোয়ার্টারে।
-ইউ নো দিস ইজ ভেরি কনফিডেনশিয়াল সিন্স আই ফেস আ প্রবলেম। উপদেষ্টা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন এজেন্টদের দিকে।
-আর ব্যাপারটা হলো এমন যে একজনকে জানের ঝুঁকি নিয়ে কয়েদখানা ঢুকে ভাব জমিয়ে ভেতরের সকল তথ্য বের করে আনতে হবে। বাট ইউ নো দ্য ম্যাটার ইজ ইন্ডিয়া। যুগ্ম সচিব বললেন।
-তার উপর ওখান থেকে বেরুনোর পরিকল্পনা করতে হবে নিজেকে। উপদেষ্টা বলে চলেছেন, “যদি এই গ্যাং এর সিক্রেট আমি রাজনৈতিক অঙ্গনে ফাঁস করতাম তাহলে উপর মহল আসামীকে ভারতীয় কারাগার থেকে বের করে আনতো। কিন্তু যেই কপাল সেই মাথা। পলিটিক্যাল শেল্টারে ছাড়া পেয়ে দেশে আগুন লাগাতো হারামীটা। তাই তোমরাই এখন ভরসা।”
সেই মিটিং এর আট ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। সবাই খুব অস্থির, অশান্ত হয়ে গেছে। যে কোনো একজনকে ভারতের রাষ্ট্রীয় কারাগারে ঢুকে আটক হওয়া বাংলাদেশি গ্যাংস্টার রাজীবের ব্যবসায়ের সমস্ত তথ্য চুরি করতে হবে। তাহলেই তার পুরো সাম্রাজ্যকে ধ্বসিয়ে দিতে পারবে সরকার।
-আমি যাচ্ছি। জাহেদ উঠে দাঁড়ালো।
-হোয়াট! পাগল নাকি? রিশাদ প্রায় চেঁচিয়ে উঠে বললো, “ইউ আর ওয়ান অব আওয়ার গ্রেটেস্ট স্পাই!”
-আই নো। কিন্তু আপনাদের কারো তো জেলের অভিজ্ঞতা নেই।
এরপর আর কেউ রা করলো না। অন্ততঃ ক্ষিপ্র মানব যুক্তি দেখালেও যোগ্যাতায়ও সে এগিয়ে। সবচেয়ে বড়ো দক্ষ এজেন্ট সে দেশের।
-কিন্তু প্ল্যান? রিশাদ খুব আগ্রহের সুরে বললো।
-আমি জাহেদের মনের কথা পড়ে ফেলেছি। এজেন্ট শরীফ হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো।
-দেখি বলেন তো শুনি। আরমিন মুখ শুকনো করে তাকিয়ে আছে।
-ও ওয়্যারলেস হেডফোন পরে যাবে সেখানে। পাঁচ সেট হেডফোন থাকবে। একটা রাজীবের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর থাকবে কানে। রাজীবকে কথায় ভুলিয়ে সকল কথা বের করে নেবে। আর সেই কথা আমাদের টেক এজেন্টদের আর্কাইভে চলে যাবে।
-কিন্তু জাহেদ ভাই ছাড়া পাবে কিভাবে? রণিন যেনো মঙ্গলে পা রেখেছে এমন ভঙ্গিতে কথাটা বললো।
-সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না। শরীফ হেসে ফেললেন।
-পারফেক্ট টেলিপ্যাথি। ভাই স্যালুট স্যালুট! জাহেদ বোবা হয়ে গেছে।
সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো।
সে রাতে বিশেষ ঘুম হলো না শরীফের। জাহেদের উপর ভরসা থাকলেও ভয় কাজ করছে। এমনও তো হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করতে হবে। ছোটখাটো অভিযোগে মাস ছমাস জেল খাটলে অন্য কথা।
চৌদ্দ অগাস্ট, দু হাজার চৌদ্দ। শরৎ এর মধ্যহ্নে এজেন্টস অব ডি এর ভ্যানটা তিস্তার কোনো এক পাড়ে গিয়ে থামলো। সবাই সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলো। এরপর জাহেদ অয়েলস্কিন এবং ছোট ব্যাগ প্যাক কাঁধে জড়িয়ে টুক করে নেমে পড়লো তিস্তার পানিতে।
এরপর… এরপর কি?
-রিশাদ ভাই, পাঁচশ ফিট উপরে আছি। জাহেদ ভাই বর্ডার ক্রস করছে।
-তুমি অন্তত আরো ছয় হাজার ফিট উপরে উঠে যাও। ও সেফ ক্যাম্পে ঢোকা না পর্যন্ত বর্ডারের ওপাশে চলে যাও, অবজার্ভ করো। ওভার অ্যান্ড আউট।
বিএসএফ ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি যে কতোটুকু সুক্ষভাবে ফাঁকি দিয়ে বর্ডারের ওপাশ থেকে একজন বাংলাদেশি চর ঢুকে গেছে ভারতে। খেলা শুরু হবে আসলে কালকে।
-রাজীবের দেখি বিশাল হাত। আসিফ বলে উঠলো।
-তা তো হবেই। রাজনৈতিক শেল্টার আছে। তা ছাড়া ও একটা গ্যাংস্টার। শরীফ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে প্রজেক্টর স্ক্রীণের দিকে।
রাজীবের ডান হাত বাম হাত যতোগুলো আছে সব গুলো একটি ট্রি ভিউতে আনা হয়েছে। ভারতে তার ডান হাত সলিম। রাজীবকে আসলে জেলে ঢোকানো হয়েছে শেল্টারের জন্য। যদিও বাংলাদেশ সরকার চায় রাজীব বের এনে তার ঘাঁটির ভেতরের সব ধ্বংস করে দিতে কিন্তু সলিমের সহযোগিতা রাজীব কারাগারে গিয়ে সেটাকে সেফ হাউজ বানিয়ে ফেলেছে।
-রিশাদ ভাই হি ইজ সেফ। বর্ডার ক্রস করে ফেলেছে জাহেদ ভাই।
-ওকে রিটার্ণ হোম।
কিন্তু বিপত্তি যে ওখান থেকে আসতে পারে তা এজেন্টদের কেউই বোধহয় জানতো না। ট্র্যাকিং ডিভাইসে হঠাৎ দুটো লাল বিন্দু দেখা দেয় ভারতে গোয়েন্দা “র” এর আইটি ডিপার্টমেন্টে।
-নীরা সুমান, দিস ইজ ভজন মোহনলাল স্পিকিং।
-ইয়েস স্যার, হাও ক্যান আই হেল্প ইয়ু?
-উই নিড অ্যান ইমিডিয়েট ইনসপেকশান অব ট্রেসিং টু ডিফরেন্ট আনআইডেন্টিফাইড হিউমেন অবজেক্ট রিসেন্টলি ফাউন্ড ইন আওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি।
-ওকে স্যার।
হুট করে ট্র্যাকিং ডিভাইস থেকে গায়েব হয়ে গেছে লাল বিন্দু দুটো। ভজনের মাথায় হাত। নীরা স্যাটেলাইট ভিউতে অবজেক্ট দুটোকে দেখতে পাচ্ছেনা। দুটোই একসাথে নিভে যাওয়া অস্বাভাবিক। ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামের কারসাজি। তার উপর একটা সাড়ে সাত হাজার ফিট উপরে আর একটা পানির দশ সেন্টিমিটার নিচে।
-মধুকেশ থেকে গায়েব হয়েছে। তারপর থেকে লাল বিন্দুটা আর নেই। আর উপর নিচে দুটোই বাংলাদেশ থেকে এসেছে। বাংলাদেশের কোনো ড্রোনই তো এখনো সফলভাবে উড়ে নি। তাহলে কি এটা?
-দেখেন আমি এতো কিছু বুঝিনা। আমি চাই এই বিষয়টা আপনি পুরো হ্যান্ডেল করেন। আর আপনার গায়ে কলকাতার রক্ত আছে। জায়গা গুলো আপনি ভালো বোঝেন। ভজন খুব দৃঢ় স্বরে বললেন।
নীরা অনেক পরিকল্পনা করলো। ঘেঁটে ঘুঁটে যা মাথায় এলো তাই ডিসিশান নিলো নদী বন্দরে যাবে।
-দাদা এখান থেকে আলীগড় যেতে কতক্ষণ লাগবে?
-চার ঘন্টার ট্রেন। আর বাসে গেলে ছ কি সাত অব্দি লাগতে পারে। ভটভটিতে গেল ন ঘন্টা বুজলে? ভাড়া একেবারেই কম।
অনেক ভালো দরের ফার্স্ট ক্লাসের টিকিট কেটে নিলো দুদিন আগে। তাকে যদি যেতে হয় তো অনেক কিছু প্ল্যান এগিয়ে নিতে হবে। এখন সেফ হাউজে ছক কষতে ব্যস্ত সে।
-নীরা স্পিকিং। পোর্টে আছি। ক্লারিফাই করতে শুরু করুন আমি ফুটপ্রিন্ট ডিটেক্টর অন করছি।
ক্লিক ক্লিক ক্লিক। ডিটেক্টর তার কাজ একনাগাড়ে করে যাচ্ছে। কয়েকটা সামরিক বুটের ছাপ। তার মানে এগুলো গার্ডের পায়ের ছাপ। আরেকটা পাওয়া যাচ্ছে কনভার্স সু এর। একদম তাজা দাগ বুটের। তার মানে ছঘন্টা আগে ছিলো।
-একটা বিকন পাঠান। নীরা চুইংগাম চিবোতে চিবোতে বললো।
বিকন “র” এর বহুল ব্যবহৃত ফ্লাইং অবজেক্ট ডিটেক্টর ও স্ক্যানার। অনেকটা ডোংগার মতো যেটা এজেন্টস অব ডি এর আছে। ফুট প্রিন্ট অ্যাটাচ করে দিলেই জায়াগমতো অপরাধীকে ধরে ফেলতে পারবে।
-জাহেদ বলছি। একটা লোকাল কলের দোকানে ঢুকে কল করেছে।
-আরে জামাই কি খবর? শরীফ মুচকি মুচকি হাসছে।
-আর বলবেন না বাবা, গরুগুলো খুব টায়ার্ড। পরশু রওনা দেবে।
-দেখে শুনে এসো বাবা গরুগুলো বাঁচুক মরুক পরের কথা। আগে তোমার জান বাঁচানো ফরজ একথা মনে রাখবা।
এদিকে নীরার ট্যাবে ফুটপ্রিন্ট উঠে এসেছে। তবে ভাগ্যদোষে জানা যায় নি কার ফুটপ্রিন্ট। শেষতক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তাই দেখার বিষয়।
-আরমিন লুক এট হিয়ার। জাহেদ আলীগড়ে এই জায়গায় নামবে। আর রণিন এই জায়গায় ওকে চলে আসার দিন রিসিভ করবে। রিশাদ বলে উঠলো।
-ফার ডিসট্যান্স। তাও বর্ডারের ওপারে কাজ।
এদিকে নীরা খুঁজতে খুঁজতে জাহেদের সেফ হাউজের এলাকায় চলে এসেছে। এদিক ওদিকে চেয়ে তাকালো। বৃষ্টি হয়েছে তাই পায়ের ছাপ গায়েব।
-কাকু, পাড়ায় কাউকে নতুন এসতে দেখেছেন?
-পাড়ায় তো কতো নতুন মানুছ আছা যাওয়া করে। কাকে দেখবো বল?
বহুদিনের পরিচিত মিষ্টির দোকান থেকে বেরিয়ে এলো নীরা। আশেপাশে দোকান, বাজারে খোঁজ নিলো।
চলতি পথেই ধাক্কা খেলো একজনের সাথে।
-বাব্বাহ আপনার তো হাড্ডি নয় যেনো লোহা।
-দুঃখিত দেখে শুনে পথ চলতে পারছিনা। তাই আপনাকে ধাক্কা মেরে ফেললুম।
-ও কিছু না। সমস্যা নেই।
লোকটা মোটামুটি হ্যান্ডসাম। চেহারা খুব সুন্দর। পেটানো শরীর। ট্যুর করতে বেরিয়েছে। বাংলাদেশি বোধহয়। প্রথমে দেখাতেই নীরার কেমন যেনো অনুভূতি হচ্ছে।
-আমি জাহেদ।
-আমি নীরা। ওপার থেকে এসছেন?
-হ্যাঁ। কোথায় থাকেন?
-হুগলি পৈতৃক ভিটা। কর্মস্থল দিল্লিতে। একটা আইটি ফার্মে।
একজন পঁচিশের তরুণের অনুভূতি প্রখর। যে কোনো নারীর প্রতি আকর্ষন থাকে। নীরার প্রতি জাহেদের কেমন যেনো ভালোলাগা শুরু হয়ে গেছে। গত একঘন্টায় ভাব জমিয়ে একেবারে বন্ধু হয়ে গেছে।
-ভালো লাগলো তোমার দেখা পেয়ে।
-আমারও। আশা করি আবার দেখা হবে।
আর একদিন বাকী।
এদিকে শরীফ রণিনকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ইমারজেন্সি কি করতে হবে যদি জাহেদ বিপদে পড়ে। আর ওপাশে জাহেদ প্রতিনিয়ত ছক এঁকে যাচ্ছে।
আজ সেই বহু সুপ্রতীক্ষিত দিন। ট্রেনে উঠেছে জাহেদ। সুন্দর আবহাওয়া আর নির্মল বাতাস। সে ঘুনাক্ষরে জানে না পাশের বগিতে নীরা যাচ্ছে এক অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজতে যে কিনা কালতলীতে কিছুক্ষণ আগেও ছিলো।
-স্ক্যানার তো বলছে ওটা রেলওয়ে স্টেশনের দিকে গেছে। ভজন বললো।
-তাই তো। চলুন যাওয়া যাক।
যার থাকার কথা রেললাইনের পাড় পর্যন্ত এসে মিলিয়ে গেছে। ভজন একটু বিরক্তিভরে অন্যদিকে তাকালেন।
-মিশন ক্লোজড।
-নো ওয়ে। এভাবে বন্ধ করে লাভ কি?
-এখন কি করে যাবে? আলীগড়ে গিয়ে কি করবে?
-ওটা আমার ব্যাপার।
পরদিনই আলীপুরের টিকেট কেটে চলে গেলো নীরা। সারাদিন জার্নি গিয়েছে তাই সাত পাঁচ না ভেবেই একটা সস্তা হোটেলে উঠলো। নোংরা পরিবেশ। লোভী চক্ষুগুলো তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেউ একজন টিটকারি করলো।
-ক্যায়া মাল হ্যায়?
-শালা কি বললি? হাঁই করে একটা ঘুঁষি বাগিয়ে তেড়ে গেলো সেখানে। পেছন থেকে আচমকা কে যেনো জাপটে ধরলো।
-ছেড়ে দাও।
-বিবি কো সামহালো।
নীরা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। জাহেদের উপর একটা অদ্ভুত মায়া বসে গেছে। যেখানে যায় সেখানে হাজির এই ছেলে।
-অমন করে কি দেখছো?
-তোমাকে। তোমার উপর মায়া জন্মে গেছে।
-মেয়েরা তো প্রেমে পড়ে সব সময়।
-আমি ভালোবেসে ফেলেছি জাহেদ।
ঘটনা এতো দ্রুত ঘটবে কল্পনা করতে পারেনি জাহেদ। নীরা হুট করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেছে। আলীপুরে দাদার ভিটে আছে। আর নীরার তো ব্যাংক ব্যালেন্সই। সুযোগমতো বাংলাদেশের নাগরিক তো করা যাবে।
-এটা কি করেছো জাহেদ?
-সমস্যা নাই। এখন জেলে যেতে না পারলেও ওখান থেকে কারাগারের দুরত্ব দু কিলোমিটার।
-কিলোমিটার হিসাবে কি হবে?
-বলছি।
এরপর যা বললো জাহেদ এমন পরিকল্পনায় শরীফ মুগ্ধ হয়ে গেলো।
বস্তুত এতো নিখুঁত প্ল্যান ক্ষিপ্রমানবের, যে আগামী দুদিন তাকে ভাবতে হচ্ছে না কি করতে হবে। অপরদিকে র এজেন্ট নীরার সাথে জড়িয়ে যে সে বিপদে পড়তে যাচ্ছে তা বুঝতে পারেনি সে। আজ নীরা একটা অবস্থান থেকে খুশি যে সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছে আর দুদিন পর।
ওঘর থেকে ফিরে এসে নীরা উঁকি দিলো জাহেদের রুমে।
-তুমি ঘুমোবে কয়টায়?
-এইতো খানিক পর।
-ভাল্লগছে না। ঘুম আসছে না।
জাহেদের চোখ পড়লো বাইরের দিকে। চাঁদের মিষ্টি আলো এসে পড়ছে শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে। এবার তাকালো নীরার দিকে। পাতলা গাউন পরে আছে। উঁচু সুউন্নত বুক, কোমরের জায়গাটা যেনো সাপ পেঁচিয়ে ধরেছে চিকন করে রাখার জন্য।
-অ্যাই দুষ্টু অমন করে কি দেখছো?
-তোমাকে।
-ভাল হচ্ছে না বলছি। লজ্জা লাগে মাইরি।
-চলো পুকুর ঘাটে।
প্রথম কোনো নারীর সংস্পর্শে যেনো হাজারটা মশাল জ্বলে উঠলো জাহেদের গায়ে। এতোদিনে কামনায় গা ভেজালো প্রেম বরষায়। অধরা ধরা দিলো ওষ্ঠে। এক হেঁচকায় টেনে তুলে নিয়ে গেলো বেডরুমে।
রাত সাড়ে তিনটা। হেডকোয়ার্টারে বসে ঘুমিয়ে পড়েছে এজেন্ট শরীফ। বিপ করে আওয়াজ হতেই সজাগ হলো। এদিকে জাহেদ ক্র্যাকার বের করলে কিট বক্স থেকে। মাটিতে সেট করেই জিপিএস ফ্রিকোয়েন্সিতে ম্যাচ করলো। ক্র্যাকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি নির্দেশনা অনুযায়ী মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে জায়গা মতো গর্ত করে সুড়ঙ্গ তৈরি করে। এর এক অংশ মাটি খুঁড়ে আর এক অংশ মাটি সরায়। ক্র্যাকারটা ১০ মিটার নীচ পর্যন্ত মাটি সরালো। এর পর বাঁয়ে টার্ণ নিতে নিতে আলীপুর কারাগারের ড্রেনেজ পর্যন্ত গেলো।
সেদিনকার মতো মাটি গুলোকে পাশের জলাশয়ে ফেলে ভরাট করে ফেললো জাহেদ। এই ঘন জঙ্গলে নীরা বা অন্য কেউ আসবে না।
আজ সঙ্গীত সন্ধ্যা। হবু বর কনে ফটোশুট করছে। একসাথে আনন্দ মজা করতে করতে রাত হয়ে গেলো। ওদিকে রণিন ক্যাচ অ্যান্ড রিটার্ণ টাইপের একটা উইপন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে সার। এই জিনিসটা মোটামুটি টাইম মেশিন টাইপ। একটা মিরর টানেল তৈরি করে যার ভেতর দিয়ে যে কেউ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সহজেই মাইলকে মাইল পাড়ি দিতে পারে।
-পত্নী হয়ে গেলে।
-তো?
-ইয়ে চাঁদোয়া দেখেছো? পরশু রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।
-তবে রে দুষ্টু।
নীরা বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। জাহেদ তার শোয়া থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়ালো। সন্তর্পনে বাড়ির পেছন গিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকলো যেটা ক্র্যাকার দিয়ে তৈরি করেছে। আলীপুর কারাগারে ড্রেনেজ যেখানে শেষ সেখান দিয়ে ঢুকলো সে। গর্ত থেকে বেরোতেই একটা খোলা ময়দান। রাজীব আছে বি-১৩ নামের সেকশানে। পৌঁছেই ভেন্টিলেশন সিস্টেম খুঁজলো। না পেলো না। ন্যানো ড্রিলার দিয়ে পাঁচ জায়গায় ফুটো করে খাপে খাপে পাঁচটা মাইক্রোফোন ঢুকিয়ে দিলো। এরপর ফিরে এলো ঘরে।
সুড়ঙ্গে দিয়ে উঠে আসতেই দেখলো চারিদিকে “র” এর এজেন্ট রা।
-হ্যান্ডস আপ। ভজন দাঁড়িয়ে আছে।
-হোয়াট দ্য…
-তুমি এমনটা করতে পারলে জাহেদ? ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে নীরা।
-কি আশ্চর্য আমি কি করলাম?
-তুমি একজন ডি-এজেন্ট। আমার সাথে প্রতারণা করলে? একে গ্রেপ্তার করা হোক।
-সে আর হবে না।
-মানে?!
-এই দেখো।
বলেই একটা বাটন টিপে দিলো। সেই মিরর টানেল। ঝাঁপিয়ে পড়ে গায়েব হয়ে গেলো।
বিপ বিপ বিপ।
সচকিত হয়ে জেগে উঠে রণিন দেখলো ক্যাচ অ্যান্ড রিটার্ণ উইপন ডিভাইসে ইনকামিং বিপ। রিসিভার মিরর তৈরি করে দিলো।
ধুপ!
-ওরে বাপরে! জাহেদ পড়েই নিস্তেজ হয়ে রইলো কিছুক্ষণ।
-ভাবী কই? রণিন অবাক চেয়ে রইলো।
-ইন্ডিয়ায়।
পরের ঘটনা খুব সংক্ষিপ্ত। পাঁচ মাইক্রোফোনে রাজীবের দৈনন্দিন কথোপকথন জেনে নিয়েছে এজেন্টরা মাস গত হলো। রাজীবের সকল ব্যাবসার চ্যানেল ধ্বংস করে নীরার সাহায্যে রাজীবকে বর্ডারের সাহায্যে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলে দুই দেশের বাহিনী।
-এরপর?
-মিশন নেক্সট
………………………………………………………………………(সমাপ্ত)……………………………………………………………..