-“ব্রেকিং নিউজ”
একদল অজ্ঞাত পরিচয়ধারী রাজধানীর বিশেষ কয়টি স্থানে মানুষ জিম্মি করে বোমা স্থাপন করেছে। এখনো জানা যায় নি তারা কি উদ্দেশ্যে জিম্মি করেছে এদের।
ঘটনাটি শুরু হয় যখন ডিটেকটিভ শামীমও এজেন্টস অব ডি তে জয়েন করেন নি। কাওরান বাজারে বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে একটি ফ্লোর অর্ধেক বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। তবে এবার মানুষ ধরে ধরে জিম্মি করে এরা টাইম বম্ব ফিট করছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে যে এরা এসব করছে তা একটা দুধের বাচ্চাও আঁচ করতে পারে।
চুল, একটা সিগ্রেটের টুকরা, প্ল্যানের ছেঁড়া কাগজ ছাড়া আর কিছুই পায়নি শামীম। মাইক্রোস্কোপে বসে খুটখাট করছেন। ল্যাবে শরীফ ঢুকতেই সম্ভাষণ করলেন।
-ঘটনা শুনেছেন? শরীফ উদ্বিগ্নমুখে তাকালেন।
-হুম। শামীম গম্ভীর মুখে তাকালেন শরীফের দিকে।
-কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
-এখনো হয় নি। হলে আপনি এই শহরে বেঁচে থাকবেন না।
-কি যে বলেন না। এই পর্যন্তও কি গড়াবে? শরীফ মুখ কালো করে তাকালো শামীমের দিকে। শামীম চেয়ার ঘুরিয়ে শরীফের দিকে ফিরলেন।
-হেক্সা কম্পানীর কথা মনে আছে?
-অবশ্যই আছে।
-ওখানেরই কেউ এই কাজ করেছে।
-প্রমাণ? শরীফ অস্থির হয়ে গেছে।
-চুল আর সিগ্রেট। একই কম্পানীর ফ্যাক্টরির মানুষের দ্বারা ঘটেছে এই ঘটনা। শামীম গম্ভীর চিত্তে তাকিয়ে আছেন শরীফের দিকে।
সাঁই সাঁই করে উড়ে চলেছে রণিন। কাওরান বাজারের উপরে, আকাশটাতে খানিক চক্কর কাটলো। বিস্ফোরণে আহত ভবনের ভগ্নাবশেষ যেনো এক মৃত্যপুরীর ছোট উদাহরণ।
-সাপোর্ট?
-সুদীপ্ত বলছি স্যার।
-শরীফ ভাইয়ের কাছে কল ফরোয়ার্ড করেন।
-শরীফ স্পিকিং।
-কাওরান বাজারে।
-তাই। এক্ষুণি বের হচ্ছি। সবাই আসছে।
-ওকে।
সেইখানটায় এসে রিশাদ গাড়ি পার্ক করলো যেখানে শামীম এজেন্টস অব ডি এর একমাত্র গোয়েন্দা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আজ সদলবলে ইনভেস্টিগেলন করতে এসেছে তারা। শামীম বের হয়ে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে উকিঝুঁকি মারলেন কোনায়কানায়। শরীফ ঘুরে ঘুরে ঘেরাও করা জায়াগায় বিস্ফোরণের পরিধি দেখতে লাগলেন। গাড়িতে রিশাদসহ বাকীরা।
-অদ্ভুতেড়ে গান পাউডার। শামীম বললেন।
-আমি অবশ্য এসব বুঝি না। তবে এই চৌহদ্দিতে যা ঘটেছে তার সবটুকুই রহস্যজনক। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন শরীফ।
-বিস্ফোরণের মাত্রাটা ভয়াবহ অবশ্য। তবে বিস্ফোরক জিনিসটা অনেক ছোট ছিলো। দেখেন প্রজেকশান করে। আকাশ থেকে নেমে এসেছে রণিন।
প্রজেক্টরে স্যাটেলাইট ভিউতে রেকর্ডকৃত ভিডিওগুলো চালালো আসিফ। টাইমফ্রেমের বোমায় রেঞ্জ কম থাকলেও ধ্বংসাত্নক চিত্র দেখা গেছে।
-আমি একটু নামলাম। বলে যেই না একটু আরমিন পা নামালো অমনি হ্যাঁচকা টানে পাশের দিকে থেকে একটা হাত ওকে টেনে নিলো একটা মাইক্রোবাসে। “আরিই” করে চিল্লিয়ে উঠলো সাদিয়া।
-রেড অ্যালার্ট অল। এজেন্ট আরমিন হ্যাজ বিন কিডন্যাপড…
“সাঁইই”
-আইত্তেরি এইটা কি ছিলো।
-একটু অপেক্ষা করুন স্যার। সাপোর্ট এজেন্ট সুদীপ্ত বললো। দেখছি এটা কি।
কিছুক্ষণ পর নক করে বললো সুদীপ্ত,
-মিঃ জেটস্কেটার ওরফে এসআই সাব্বির আহমেদ অফ ঢাকা পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।
-ওহ থ্যাংকস। উনাকে কানেক্ট করে দিন আমাদের সাথে।
শরীফ আর শামীম প্রায় দৌড়ে এসেছেন। মাইক্রোবাসের দরজা অফ করে সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
-রণিন রান আফটার দেম। শরীফ বলে উঠলেন।
-ওকে শরীফ ভাই। একটু দম নিয়ে সাঁই করে বিশ ফিট উপরে উঠে গেলো রণিন। এরই মাঝখানে এজেন্ট দের সাথে কানেক্ট হয়ে গেলেন জেটস্কেটার ওরফে সাব্বির আহমেদ।
-অ্যাটেনশন অল ইউনিট। দিস ইজ জেটস্কেটার সাব্বির আহমেদ। এইমাত্র একজনকে কিডন্যাপড করা হয়েছে। আমি কিডন্যাপারদের মাইক্রো থেকে দশ গজ পেছনে আছি।
-উনি এজেন্ট অব ডি এর আরমিন, মিঃ জেটস্কেটার। একটু উপরে তাকান। রণিন নীচের দিকে ঝুঁকে আছে।
-ওহ। দ্যাট ফিউরিয়াস। আপনি কে? সাব্বির বললো।
-আমি এজেন্ট রণিন। কিপ রাণিং প্লীজ। ধরার চেষ্টা না করে কতদূর যায় একটু দেখেন।
-ওকি ডকি।
হঠাৎ করেই কিডন্যাপারদের গাড়ির স্পীড বেড়ে গেছে। এই ব্যস্ত যানজটের শহর থেকে বেরিয়ে যে রোডটা ঢাকা সিলেট মহাসড়ক নামে সেটায় জোরসে চালাচ্ছে একশ চল্লিশে। এবার হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হলো গুড়গুড় মেঘের ডাক দিয়ে।
-ধ্যাৎ। “রিপোর্টিং, আই অ্যাম ল্যান্ডিং” রণিন খেঁকিয়ে নীচের দিকে নামতে শুরু করলো।
-ডোঙ্গা উড়াবো নাকি? সাদিয়ার কপালে ভাঁজ।
-মাথা খারাপ? ডিভাইস নষ্ট হওয়ার জন্য? আসিফ মুখ কুঁচকে ফেলেছে টেবিল প্রজেক্টরের দিকে তাকিয়ে।
হঠাৎ করেই কিডন্যাপারদের গাড়িটা ঘুরে গেলো। এবার উল্টোপথে ওপাশে চলতে শুরু করলো। রাগে রিশাদ গাড়ি ঘোরাতে যাবে এইসময় একটা কার্গো ট্রাক মোড়ে চলে আসলো।
-জেটস্কেটার। আর ইউ অন? শরীফ বললো।
-ইয়েস স্যার। আমি পিছনেই আছি। সাব্বির বললো।
গাড়িটা তুমুল গতিতে চলছে। আরমিন বসে আছে। তার মুখে তুলো গুঁজে দিয়েছে। গাড়িটার স্পীড আগের থেকে একটু কমলেও জেটস্কেটার সমানে দৌড়োচ্ছে। শহরে ঢুকেই গাড়িটা বসুন্ধরার দিকে এগোলো।
-আরে সমস্যা কি?! এই জোর বৃষ্টিতে গাড়িটার পিছু নিতে তো বারোটা বেজে যাবে। শামীম চেঁচিয়ে উঠলো।
-ধ্যাৎ। রণিন আর ইউ অন? শরীফ ভ্রু কুঁচকে ফেললেন।
-জ্বি শরীফ ভাই।
-চেজ দেম নাউ!
সাঁই করে উড়ন্ত জুতোজোড়ার মালিক উড়ে চললো গাড়িটার দিকে। এদিকে জাহেদও তৈরি হয়ে গেছে গাড়িটার ভেতরের খবর জানার জন্য। মাইক্রোবাসের ডালা খুলে ছাদে চড়ে বসলো। হাতে জিয়ন গান। জিয়ন গানের মুখে থাকে ক্রলার “জিয়ন”। জিয়নের বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি ছোটো রোবোটিক স্পাই ক্যামেরা। কোনো গ্লাস জাতীয় পদার্থের উপর মারা হলে সেটি ভেদ করে ভেতরের তথ্য চালান দেয়। শ্যুট করলো একটা। কোনোরকম আওয়াজ ছাড়াই জিয়ন ক্রলারটা ভেদ করে ঢুকে গেলো গাড়িটার ভেতর।
-ও খোদা এতে দশজন বসে আছে। সাদিয়া চমকে উঠলো।
-গাড়িটা অনেক বড়ো। আরমিন বেশ আরামেই বন্দি আছে। শরীফ বললেন সামনের সীটে বসে।
গাড়িটা বসুন্ধরা শপিং এর সামনে ৩৬০ ডিগ্রি টার্ণ দিয়ে ব্রেক নিলো। একজন মুখোশ ধারী বেরিয়ে এলো। চকচকে একটা মেশিনগান হাতে। ধাঁই করে এক রাউন্ড ছাড়লো। মুহুর্তে গোটা এলাকা নরকে পরিণত হলো।
-লেডিস এন্ড জেন্টেলমেন, আমি ড. ইকবাল। ডু ইউ রিমেম্বার মি?
-হোয়াট দ্য?! রিশাদ চিৎকার করে উঠলো।
-আরিব্বাপ! নাটের গুরু! রণিন বললো।
একদিকে বৃষ্টি। অন্যদিকে ছত্রভঙ্গ জনতাকে লাউডস্পিকারে আতংকিত করে তুলছে ইকবাল। এমন সময়, গাড়িটা সবাই নেমে পড়লো। আরমিন বাদে।
এজেন্টস অব ডি এর ছেলেপেলেরা কোথায়? আমাকে দেখে নেবে বলেছিলো। দেখে নাও তোমাদের এজেন্ট আরমিনের গায়ে টাইম বম্ব ফিট করা। আমার জবাব এটা।
তারপর আরমিনকে চুলের মুঠি ধরে বের করে আনলো। ইকবালের লোকগুলো গাড়িতে ঢুকে গেলো। তারপর ইকবাল আবার বলতে শুরু করলো।
-তোমাদের জন্য উপহার। বিদায়। হাঃহাঃহাঃ
কিঁইচচচ করে টায়ার পুড়িয়ে গাড়িটা সামনের সবকিছু ভেঙ্গে চলে গেলে যমুনা ফিউচার পার্কের রাস্তাটা ধরে।
-আরে সব্বোনাশ! আর ছমিনিট আছে। শামীম ভাই প্লিজ ডু সামথিং।
-দেখছি। শামীম বলেই কাজ শুরু করে দিলো।
ততোক্ষণে পাশের একটা বাজেয়াপ্ত অব্যবহৃত ভবনে আরমিনকে নিয়ে ঢুকেছে এজেন্টরা। আরমিন রিশাদের হাত চেপে ধরেছে। আজ কেনো জানি রিশাদকেই আপন মনে হচ্ছে খুব।
-শালারা ওয়্যারিং পেঁচিয়ে ফেলেছে যাতে ডিটোনেটিং অফ না করা যায়। কাট করার জন্য একটাও পরিষ্কার না।
-এখন? দেখেন না কি করা যায়।
হলুদ তারটা চেপে ধরে প্লাস দিয়ে টেনে কেটে দিলেন। সবার মুখে প্রশান্তি। জ্যাকেটটা উঠানো হলো আরমিনের গা থেকে।
টিঁট টিঁট টিঁট।
-আরে পাঁচ মিনিট থেকে দুই মিনিট হলো কিভাবে? রিশাদ হাঁ হয়ে গেছে।
-এভ্রিবডি লিভ দিজ বিল্ডিং। বলেই শরীফ দৌড়াতে শুরু করলেন। তার দেখাদেখি সবাই। বেরিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলো দৌড়ে।
বুউউউম!
আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়লো আকাশে। ভবনটা বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকান্ডে ফেটে পড়লো।
তিন ঘন্টা পর-
এজেন্টস অব ডি এর হেডকোয়ার্টার। সবাই বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বিশাল একটা চাদরে মোড়া জিনিস। জিওসি তানভীর গম্ভীরমুখে পায়চারি করছেন। সবাই ভয়ে তটস্থ।
-আজকে বিশেষ কারণে সবাইকে ডেকেছি। পারফরম্যান্স দিন দিন ভালো হচ্ছে। তবে সদস্য সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার মাইক্রোবাসটির প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে। তাই…
বলেই ফিতা টান দিলেন। দীর্ঘকায় একটা ক্যারাভান ফুটে উঠলো চাদরের ভেতর থেকে।
“তোমাদের জন্য।”
“হিপ হিপ হুররেএএএ” বলেই যে যার মতো দৌড় লাগালো…