নিখোঁজ

নিখোঁজ

এজেন্ট রিশাদের ডেস্কে একটা নতুন ফাইল দেখা যাচ্ছে। ফোকাস লাইটের আলোয় কেস ফাইলটি অদ্ভুত শাইনি একটা ভাব দেখাচ্ছে। হাতের মুঠি শক্ত করে চিবুকের ঠিক সামনে চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে। পাশে এজেন্ট রণিন বসে আছে। তাকিয়ে আছে রিশাদের দিকে।

-কি কেইস এইটা?
-একটা বড় চক্রের ব্যাপারে। সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলির মানুষগুলিকে জিম্মি করে পণ আদায় করে।
-সেকি! এই কান্ড কবে থেকে শুরু হলো?
-তাতো ঠিক জানি না। তবে ফাইল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে গত বছরখানেক ধরে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ঢাকার নামিদামী সকল শিল্পপতি পরিবারকে টার্গেট করা হচ্ছে।

রণিনকে বাইরে যেয়ে এলিট কলোনিগুলা ম্যাপিং করতে বললো। এরপর চিন্তায় ডুবে গেলো রিশাদ। জাহেদকে নিয়ে চক্কর লাগাতে হবে এসব এলাকায়।

জাদুর জুতোয় টাইট দিয়ে উঠে দাঁড়ালো রণিন। ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার এর হেলিপ্যাড এর মাঝ বরাবর দাঁড়ালো, ফাইবার গ্লাসের সাথে ব্লুটুথ হেডফোনটা ঠিকমতো সাঁটালো। একটা ভয়েস রিকগনাইজড ফোন করলো সাপোর্ট সেন্টারে-

-সাপোর্ট এজেন্ট সুদীপ্ত বলছি। বলুন কিভাবে সহযোগীতা করতে পারি।
-এজেন্ট রণিন বলছি। ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরা, বনানী, বারিধারা, আশুলিয়া সহ সব এলিট কলোনির ঠিকানা চাই।
-এক মিনিট সময় দেবেন স্যার?
-যতো পারেন সময় নেন

ব্যস্ত ভঙ্গিতে উড়ে চলেছে আশ্চর্য উড়ন্ত জুতোজোড়ার মালিক। আজকে আবহাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না। মেঘ ধেয়ে আসছে ঢাকা শহরের দিকে। মিনিট পার হতেই সাপোর্ট এজেন্ট জানালোঃ
-স্যার
-ইয়েস?
-ফাইবার গ্লাসের দিকে নজর দিন।

থ্রিডি চশমাতে একটা চওড়া মতোন ম্যাপ এসে গেলো। পাঁচশ ফিট উপর থেকে ঢাকা শহরটার বিলাসি এলাকাগুলো ম্যাপে রেড মার্কের ভেতর পড়ে গেলো।

-আই সি। দ্যাটস পারফেক্ট।

এজেন্ট জাহেদ এর নাম ডিজিএফআইতে চেনেনা এমন সামরিক গোয়েন্দা কম আছে। এর অন্য নাম ফাস্টম্যান বা গতি মানব। যে কোন আনআর্মড কমব্যাটে সে এতোই ক্ষিপ্র যে তুলনামূলকভাবে অন্যরা অসহায় তার এ গুণের কাছে।

বস্তুতঃ ডিজিএফআই দেশের আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতেই নয়, অভ্যন্তরীণ অপরাধ ইনভেষ্টিগেশনেও এখন এগিয়ে যাচ্ছে। এজেন্ট রিশাদ, জাহেদ এবং রণিনকে শুধুই জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে কাজ করতে পাঠানো হচ্ছে।
-রিশাদ ভাই ডেকেছেন?
-হ্যাঁ। একটা থ্রেট কেস ইনভেষ্টিগেশন করতে হবে। তুমি, আমি এবং রণিনকে এই টিমওয়ার্ক করতে হবে।।
-কি করতে হবে?
-আমার সাথে আসো।

রাত নয়টা। বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই। এজেন্ট রিশাদ এবং জাহেদ বেরিয়ে পড়েছে। ওদিকে রণিন বৃষ্টির কারণে হেডকোয়ার্টারে ফিরেছে। রিশাদের কাজ শুধু একটাই অপরাধী খুঁজে বের করা।

-একটা লাউঞ্জের খোঁজ পেয়েছি। ওখান থেকে কিছু নিখোঁজের খোঁজ পাচ্ছি।
-তার মানে গোড়ার খবর ওখানেই পাওয়া যাবে?
-তা তো বটেই।
-তাহলে চলুন।

গুলশানের একটা লাউঞ্জে ঢুকলো তারা। অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে কিংবা কাউচে, সোফাতে বসে আছে। একদিকে ডিজে মিউজিক। অন্যদিকে ব্যবসায়িক আলাপ চলছে। হঠাৎ একটা চাপা গোঙানোর আওয়াজ এলো পাশের অন্ধকার করিডর থেকে। একটা মেয়ে বোধহয়।

-জাহেদ টেক কভার।
-ওকে ভাই।

ধাম করে দরজাটা খুলে গেলো। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো রিশাদের। ফাইবার গ্লাস ওয়্যালেস সেট পড়ে নিলো।

-হ্যাঁ, রণিন।
-জ্বি রিশাদ ভাই।
-উড়াল দাও। সাথে একটা হেলিকপ্টার…

-এই কে আপনারা এখানে কি?
-হ্যান্ডস আপ। এজেন্টস অফ ডিজিএফআই।
-হাহাহা সে সুযোগ আর নাই। চারপাশ মাথা ঘুরে দেখো।

জাহেদ আর রিশাদ ধরা পড়ে গেছে জিম্মি চক্রের হাতে। আর এই জিম্মি চক্রের মূল হোতা তসলিম চৌধুরী।

-আপনি কি মনে করেছেন আমাদের দুজনকে বেঁধে ফেলেছেন বলে আপনি নিরাপদ?
-অবশ্যই। কারণ আমার এখানে ঢোকার সাথে সাথে তোমাদের শরীরে স্থাপিত ট্র্যাকার চিপ অকেজো হয়ে গেছে। হাহাহা।

ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার। রণিনকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। হঠাৎ করেই রিশাদ এবং জাহেদ ভাইয়ের জিপিএস ট্র্যাকারটা অকেজো হয়ে গেছে। এমনই যদি হয় তবে খুবই বিপদের কথা। তবে লাস্ট লোকেশনটা পরিপূর্ণভাবে এসেছে। এখন একটা হেলিকপ্টার নিয়ে গেলে হয়।

ঘটনাস্থলে রণিন। যে বিল্ডিং থেকে ট্র্যাকিং হয়েছিলো তার পাশেই খোলা মাঠ। ওখানে ল্যান্ড করে থাকতে বললো পাইলট কে।

রিশাদ এবং জাহেদের মুখ-হাত-পা বন্দী। একটা চৌদ্দশো বর্গফুটের ফ্ল্যাটের স্টোর রুমে তাদের বন্দী করে রাখা হয়েছে। ওদিকে তসলিম চৌধুরীর জিম্মি চক্রের সব কটি লোক আজ ব্যস্ত। কারণ আজকে কয়েকজন শিল্পপতির ছেলেমেয়েকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। কোনো অঘটন যাতে না ঘটে তার প্রটেকশনের খাতিরে এতো গভীর নিরাপত্তা। কিন্তু বিপত্তি কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয় না। জিম্মি চক্রের পরবর্তী শিপমেন্টে যে মিনি কার্গো ভ্যানটা এসে থামলো তার ঠিক ওপাশেই রণিন দাঁড়িয়ে ছিলো। কার্গোতে কিছু আছে সন্দেহে দৌড়ে এলো এপাশে।
-এজেন্ট রণিন, ডিজিএফআই। জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে জানতে চাই আপনাদের কার্গোতে কি আছে।
-হাত উপরে তোলো। তসলিম চৌধুরী গেটের বাইরে চলে এসেছে হাতে একটা .৩৩ ক্যালিবার নিয়ে।

রিশাদ আলগোছে হাতের বাঁধনটা কেটে মুখের বাঁধন কেটে দিলো। এরপর জাহেদেরটা। ক্ষিপ্রমানব ওরফে জাহেদ রিশাদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। এরপর ধাঁই করে সেকেন্ডে দরজা ভেঙে সোজা লাউঞ্জের বড়ো মহলটাতে চলে এলো।
-সবাই অস্ত্র ফেলে দিন।

এদিকে রণিন উপরে উঠে গেছে তার অলৌকিক জুতো জোড়ার কল্যাণে। প্রচন্ড গতিতে উড়ে তসলিম ও তার চক্রের যে কজন ছিলো তাদের কষে কয়টা হুক লাগালো। তসলিম হাত থেকে তার গানটা ফেলেনি। উপর মুখে কয়টা ফাঁকা গুলি চালালো। রণিন লুকিয়ে পড়লো গাড়ির আড়ালো।
-ওয়েল ওয়েল লিটল হিরো। তুমি আগে তো খুব হিরোগিরি দেখাচ্ছিলে। এখন কি হলো?
-মিঃ আপনি ভুল বুঝলেন আমাকে…বলেই রণিন সাহস করে উড়ে তসলিম চৌধুরীর উপর পড়ে সেফটি ক্যাচ অন করে দিলো।
-এইটা তোর পাওনা, হারামী…বলেই ঘুঁষিয়ে দিলো।

এদিকে রিশাদ সবাইকে মুক্ত করে ছেড়ে আনলো হেলিকপ্টারের দিকে। তসলিম ও তার সঙ্গীরা বন্দী হলো।

ডিজিএফআই হেডকোয়ার্টার। তসলিম এবং তার সঙ্গীদের জেরা হচ্ছে সেলে। এদিকে রিশাদ এর টেবিলে আরেকটি নতুন ফাইল।
-কি এটা?
-আরেকটা কেস। কাল থেকে কাজ শুরু করতে হবে। তৈরি তোমরা?
-হ্যাঁ, তৈরি।

সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো জাহেদ ও রণিন।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত